#আমার_প্রিয়_তুমি
#মেহজাবিন_তানিয়া
পর্ব-১৫
২৯.
গ্ৰাম থেকে অনেকটা দূরে বন টাইপের জঙ্গলে ভিতর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে নদী। সেই নদী কাছ ঘেঁষে দাঁড়িয়ে আছে পরিত্যক্ত একটা বিল্ডিং। বাহির থেকে দেখলে মনে হবে এখানে ভুত-প্রেতের অভাব হবে না। এখানে আসা মানেই সেচ্ছায় ভুতকে নিজের ঘারে আমন্ত্রণ করা। মানুষ এখানে একদমই আসে না বললেই চলে।
এমন ভুতের বাড়িতে একটা রুমে তাহুকে আটকে রাখা হয়েছে। তাহু যদি চোখ খোলে দেখতো তাহলে মনে হয় এখানেই ইন্নানিল্লাহ হতো। যদিও এক বার চোখ খুলেছিল কিন্তু কিছু বুঝার আগেই পুনরায় জ্ঞান হারায়।
সাত ঘণ্টা হয়ে গেছে তাহুর খোঁজ খবর পায়নি এখনো কেউ। রাকিবও আর বের হয়নি ঐ বাসা থেকে।তাহুর জ্ঞান ফিরার অপেক্ষা করছে।
এদিকে তানভি পাগল হয়ে গেছে সবার সাথে চিল্লাচিল্লি করছে খুঁজতে এতো টাইম কেন লাগবে । ঢাকা থেকে এসেই প্রথমে পুলিশ স্টেশনে যায় সেখানে গিয়ে এক প্রকার ঝড় উঠিয়ে দেয় । কেন তারা আগে থেকে খুজা শুরু করেনি যখন তাহুর বাবা এসেছিলো।
পুলিশ স্টেশন থেকে বের হয়ে ওর ব্যক্তিগত ভাবে ওর কিছু বিশ্বস্ত লোক লাগিয়ে দেয় খুজার জন্য।
হাওলাদার সাহেব ভাবতেই পারেনি তার নাতি যে এ মেয়ের জন্য এতো পাগল হয়েছে । আসছে পর থেকে দেখছে তার নাতি কি পরিমানে অস্থির হয়ে আছে।দেখে তার ভালোই লাগছে । তারও পছন্দ এই মেয়েকে কিন্তু তবে এটা ঠিক তাহুকে কখনো নাতির জন্য ভাবেনি। তবে নাতি যেহেতু মন দিয়ে ফেলছে তাহলে তো আর প্রশ্নই আসে না এখানে না করার। কিন্তু মেয়েটা কোথায় আছে। আল্লাহ সহায়ক হোক। না হলে নাতিকে সামলানো কঠিন হয়ে পরবে।
তানভি গাড়ি নিয়ে বের হয়েছে খুঁজতে । গ্ৰামে অলিগলি খুঁজতে খুঁজতে গ্ৰামের বাহিরে চলে আসে। হঠাৎ ওর ফোন বেজে ওঠে। দেখে ওর বিশ্বস্ত লোক ফোন দিয়েছে। দ্রুত ব্রেক করে ফোন রিসিভ করে।
সাথে সাথে ঐ পাশ থেকে বলতে শুরু করে স্যার রাকিব মাত্র একটা ফার্মেসীতে ঢোকলো। কথাটা শুনে যেন তানভির কলিজাটা ঠান্ডা হলো। বললো ওর উপর নজর রাখো কোনো ক্রমেই জেনো হাত ছাড়া না হয় না হলে কিন্তু তোমাকে খুন করে ফেলবো আমি। আর লোকেশন দেও আমাকে বলেই ওর সব লোকেও লোকেশন ট্র্যাক করে সেখানে যেতে বললো।
৩০.
হসপিটালের কেবিনে শুয়ে আছে তাহরিমা। কিছুক্ষণ আগেই তাহরিমাকে হসপিটালে আনা হয়েছে। ওর হাত ধরে বসে আছে তানভি। আজ যদি ঠিক সময় না যেত তাহলে কি হতো ভাবতেই শরীর কেঁপে উঠলো।
তানভির বিশ্বস্ত লোক যখন রাকিবকে ফলো করে , দেখে রাকিব ফার্মেসী থেকে এন্টিসেপটিক ক্রিম ,গজ, কিছু ব্যথার ঔষধ নিয়ে অটোতে উঠে এবং গ্ৰাম থেকে বাহিরের রাস্তা ধরে। তানভিও লোকেশন ট্র্যাক করে সেই পথেই এগিয়ে যায়।
রাকিব এই সময় কখনো বের হতো না কিন্তু বাধ্য হয়ে বের হতে হয়। কারণ রাত নয়টার আগেই তাহুর জ্ঞান ফিরে । প্রথমে কিছু বুঝতে পারে না তাহু কোথায় আছে ,কার সাথে আছে বা কি অবস্থায় আছে । কিন্তু যখন আস্তে আস্তে হুস আসে তখন ওর মনে পরে শিলা এক্সিডেন্টের কথা । এক্সিডেন্টের কথা মনে পরতেই তাহু বিচলিত হয়ে যায় এবং চারপাশের অবস্থা বুঝার চেষ্টা করে । যখন খেল করে দেখে ও একটা পুরাতন ভাঙ্গাচুরা রুমে ও বসে আছে তখনই চিৎকার দিয়ে উঠে। ওর চিৎকার শুনেই রাকিব বাহির থেকে দৌড়ে আসে। রাকিবকে দেখেই তাহু ভয়ে আরো জোরে চিল্লাচিল্লি শুরু করে।
রাকিব ওর চিৎকার শুনে চেয়ারে আরাম করে বসে আর বলে তুমি যতই চিৎকার করো না কেন তোমার আওয়াজ কেউ শুনতে পাবে না। তোমার বাবাকে তো আর কম বুঝালাম না কিন্তু বুঝলো আর কই এখন দেখ মেয়ের টেনশনে হসপিটালের বেডে পরে আছে। সবাই জানে তুমি আমার সাথে ভেগে আসছো এখন আপসে রাজি হয়ে যাও বিয়েতে নাহলে বিয়ে ছাড়া তোমাকে আমার বিছানায় নিবো।
তাহু পাথরের মত দাঁড়িয়ে আছে কারণ ওর বাবার কথা ছাড়া আর কোনো কথাই ওর কানে যায় নাই । ওর বাবা হসপিটালে ভাবতেই রাকিবের দিকে কঠিন চোখে তাকালো। এই সয়তানটার জন্য ওর বাবা আজ হসপিটালে । তখনই দরজা দিয়ে এক লোক কিছু পেকেট নিয়ে ঢুকে। তাই রাকিব পিছন ফিরে তাকায় আর তাহু এই সুযোগটা নেয় হাতের কাছে একটা কাঠের টুকরা পেয়ে সেটা দিয়ে বারি দিতে যায় কিন্তু দূরভাগ্যবসত বারিটা সামনে থাকা লোকটার মাথায় পরে এবং লোকটা মাটিতে ছিটকে পরে। সাথে সাথে তাহু রাকিবকে আবার মারতে গেলে রাকিব ওকে ধাক্কা দিয়ে ভাঙ্গা কাঠের টেবিলের উপর ফেলে দেয় আর তাহুর হাত এবং মাথা ফেটে রক্ত বের হতে থাকে। এমনেই তাহুর সারাদিন না খাওয়া তার উপর শরীর থেকে রক্ত বের হওয়াতে পুনরায় জ্ঞান হারায়। তাই তাহুকে ঐ অবস্থায় রেখে রাকিব ফার্মেসীতে আসে ঔষধ নিতে।
রাকিব যখন পুরাতন বিল্ডিংটার কাছে পৌঁছায় তখন ও বুঝতে পারে ওকে কেউ ফলো করছে । তাই ও অন্য কৌশল অবলম্বন করে । ও জানে এখন যদি এখানে থাকে তাহলে মারা পরবে তাই সুযোগের অপেক্ষায় থাকে সেখান থেকে পালাবার । তাই ওর হাতে থাকা আলোটা অফ করে দেয় এবং চুপচাপ কিছুক্ষন দাঁড়িয়ে থাকে তারপর হঠাৎই পাশের নদীর দিকে দৌড় লাগায় তখনই তানভি চলে আসে এবং বলে তুমি ওর পিছু নাও আমি এই দিক দেখতেছি দেখো ও যেন পালাতে না পারে ।বলার সাথে সাথে রাকিবের পিছু নেয় লোকটা । আর তানভি বাড়ির ভিতরে চলে যায়।
বাড়ির শেষের দিকে একটা রুমে তাহুলকে রক্তাক্ত অবস্থায় পরে থাকতে দেখে ওর দুনিয়া ঘুরে যায় । কিন্তু সাথে সাথে তাহুকে কোলে তুলে নেয় এবং হসপিটালে নিয়ে যায়।
চলবে………….