আমার প্রিয় তুমি পর্ব-১৮

0
1337

#আমার_প্রিয়_তুমি
#মেহজাবিন_তানিয়া
পর্ব-১৮

৩৫.

তাহুকে ঘিরে দাঁড়িয়ে আছে গ্ৰামের অনেকে । তারা একেক জনে একেক কথা বলছে । বিশেষ করে সবাই ওর চরিত্র নিয়ে কথা বলছে। কেউ কেউ বলছে এই মাইয়া গ্ৰামে রাখুন যাইবো না তাইলে গ্ৰামের অন্য মাইয়ারাও খারাপ হইয়া যাইবো , এরে গ্ৰাম থেকে চুনকালি দিয়া বাইর কইরা দেউক।কেউ কেউ বলছে চুল কাইটা নেড়া কইরা দেউক । আর এদের সবাইকে উষ্কানি দিচ্ছে চেয়ারম্যান।

বাবার লাশের সামনে বসে যখন তাহু কান্নায় ভেঙ্গে পরে তখন মেঘ আর তানভি এগিয়ে আসে । ভাইকে পাশে পেয়ে কান্না যেনো আরো বেরে যায় ।
‘ভাইয়া দেখো বাবা কেমন করে শুয়ে আছে । এতো ডাকতেছি শুনতেছে না ভাইয়া প্লিজ বাবাকে উঠতে বলো , আমার সাথে কথা বলতে বলো । বাবা তো শুনে গেলো না আমার কথা,জেনে তো গেলো না আমি ভেগে যাই নাই। ভাইয়া তুমি তো বিশ্বাস করো আমি কারো সাথে ভেগে যাই নাই।

মেঘ কিছুতেই বোনের কান্না থামাতে পারছে না । সে তো জানে তার এমন কাজ কখনো করবে না । এক দিকে মা-দাদি আর অন্য দিকে বোন । ওর নিজেরও কান্নারা সব চোখ দিয়ে বয়ে চলছে। কিন্তু মন খোলে মা,দাদি,বোনের মতো কান্না করতে পারে না কারণ সে যে ছেলে ,কে এমন নিয়ম বানিয়েছে ছেলেরা কাঁদতে পারবে না কিন্তু তারও তো কষ্ট হয় সেও তো মানুষ ।

____________

বাসার সব ছেলেরা চলে যায় জানাজায় শরিক হতে । তাহুর দাদিকে ও আটকানো যায় না ছেলের লাশের সাথে তিনিও পিছন পিছন চলে যান । তা দেখে তাহুর মাও শাশুড়ির পিছন নেয় সাথে অন্য আত্মীয়রাও যান। শুধু বাসার উঠানে থেকে যায় তাহু । কেউ আর গেলো করে না যে তাবু একা ।

আর এরই সুযোগ নেয় চেয়ারম্যান এবং গ্ৰামের কিছু নিম্ম মন – মানসিকতার মানুষ। ওকে নানা ভাবে অপদস্থ করতে থাকে ।
চেয়ারম্যানের ইশারায় একজন গিয়ে কাঁচি নিয়ে আসে চুল কাটার জন্য । তা দেখে আঁতকে উঠে তাহু ।
দু’জন মহিলা এসে তাহুর হাত ধরে যাতে চুল কাটতে বাধা দিতে না পারে।

আমি কিছু করি নাই ছেরে দিন আমাকে । দোহাই লাগে আমার চুল কাটবেন না আমি সত্যি কিছু করি নাই । কান্না করতে করতে গলা বসে যায় কিন্তু কারো মনে একটুও দয়া হয় না ।

৩৬.

নাসিম উদ্দিনকে দাফন করা হয়ে গেলে যে যার মত চলে যায়। তানভি খেয়াল করে দেখে কবরস্থানের বাহিরে তাহুর মা ও দাদি দাঁড়িয়ে আছে কিন্তু তাহু নেই । তাই ওর দাদু হাওলাদার সাহেবকে বলে সেখান থেকে তারাতাড়ি বের হয়ে তাহুদের বাসায় চলে আসে।

কিন্তু এসে যা দেখলো তা দেখার জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিলো না ‌।
দুটা মহিলা তাহুর হাত ধরে রাখছে মুখ-চোখ কালি মেখে দিছে। আর তাহু অনুভূতি শূন্য হয়ে বসে আছে। এক দিনে আর কত সহ্য করা যায় !

চেয়ারম্যান ছেলের সাথে প্লানিং করে আসছে । রাকিব আর বউ হিসেবে চায় না তাহুকে । ওর ক্ষোভ প্রকাশ করার জন্য এখন তাহুকে চাই। তাই কোনো মতে গ্ৰাম থেকে বের করতে পারলে রাকিব ধরে নিয়ে যাবে এবং কিছুদিন তাহুকে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করে ছেরে দিবে তখন নিজের চরিত্রের দাগ দূর করার জন্য হলেও তাহু আত্মহত্যা পথ বেছে নিবে । এতে করে দুই বাপ-ছেলের অপমানের প্রতিশোধ নেয়া হবে আর কোনো প্রমান ও থাকবে না ।
তাই চেয়ারম্যান সুযোগটা কাজে লাগাতে আসে।
কিন্তু তানভি-এর জন্য তা পারে না ।

তানভি দৌড়ে এসে তাহুকে সবার কাছে থেকে ছাড়িয়ে নেয় ।
আপনাদের সাহস কি করে হয় ওর সাথে এই ব্যবহার করার । একেক জনকে খুন করে ফেলবো যদি আর একবার ওর গায়ে হাত দেন তো।

ঐ মিয়া ঐ তোমার এতো জলে কে হা….এই নষ্টা মাইয়ারে গ্ৰামে রাখুন যাইবো না । আজ রাকিবের লগে এমন করছে কাইল আবার অন্য পোলার লগে যাইবো ।
এই মাইয়া এই হানে থাকলে সমাজ নষ্ট হইয়া যাইবো।আর এই মাইয়ারে কে বিয়া করবো জাইনা শুইনা । তাই বেশি নাক গলাইও না আমাগো কাম আমাগো করবার দেও। তুমি আজ আইছো কাইল চইলা যাইবা ।তাই তোমার কাম তুমি করো যাও। চেয়ারম্যান বলে উঠলো।

আপনার ছেলের ভাগ্য ভালো যে আমার হাতে পরেনি তাহলে দ্বিতীয় বার আর ছেরে দেবার মতো ভুল করতাম না । আগে যদি জানতাম ঐ কুত্তাটা এমন করবে তাহলে এর আগে আর ছেরে দিতাম না একদম জানে মেরে দিতাম।

তাহু জেনো কাঠের পুতুল হয়ে গেছে যে দিকে নাড়াচ্ছে সে দিকেই নড়চ্ছে । ঠিক এই মুহূর্তে মরণ হলে মনে হয় ভালো হতো । সব সমস্যার সমাধান হয়ে যেতো।

চলবে………..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here