আমার প্রিয় তুমি পর্ব-৪

0
1867

#আমার_প্রিয়_তুমি
#মেহজাবিন_তানিয়া
পর্ব-৪

৭.

চার-চারটা ছেলের সামনে কান ধরে দাঁড়িয়ে আছি তাও সামান্য তিনটা পেয়ারা খাওয়ার অপরাধে প্রেষ্টিস এর বারোটা বেজে তেরোটা গলায় ঝুলে গেছে। আমি মাথা নিচু করে আছি এতোটা লজ্জায় কখনো পরি নাই । যতোই হোক আমারও একটা সাম্মান আছে! এখন আমার মেহুকে উরা-দোরা পেটাতে মন চাইতেছে কেন সে পেয়ারা গুলো তুলতে যাবে আর কেনোই বা এখন কান ধরে দাঁড়িয়ে থাকতে হবে।

তাদের মধ্যে একজন বলে উঠল এই যে পিচ্ছিরা অন্যের গাছে পেয়ারা চুরি তাও চুরির মতো এতো বড় অপরাধ করছো তোমাদের তো আরো শাস্তির দরকার এই সামান্য কান ধরায় তো কাজ হবে না । বলো আর কি শাস্তি দেয়া যায় । ঠিক তখনই পেছন থেকে গম্ভীর কণ্ঠে একজন বলে উঠল এই ছেরে দে । বলে দে আর কখনো যেনো না করে।

কথা শুনে আমি মাথাটা চট করে উঠিয়ে দেখি প্রায় ছয় ফুটের একজন মানুষ । তার সামনে নিজেকে কেমন লিলিপুট লাগছে । দেখি অদ্ভুত ভাবে তাকিয়ে আছে।আমি তারাতারি চোখ সরিয়ে নিলাম। না হলে আমি এখানেই ফিট খেতাম আল্লাহ বাঁচিয়েছে।

নিজের চিন্তায় এতোই বিভোর ছিলাম যে কখন ছেলেটা আমার সামনে এসে দাঁড়িয়েছে টেরই পাইনি। ছেলেটা কিছু বলতে যাবে তখনই পেছন থেকে একটা মেয়ে বলে উঠলো – গ্ৰামের এইসব মেয়ে গুলো খুব চালাক হয় এদেরকে এমনি এমনি ছেরে দিও না তাজরিয়ান বেবি , এদের আরো শাস্তি দেও। যাতে আর কখনো চুরি করার সাহস না করে।

ওহ এটাই তাহলে হাওলাদার সাহেবের বড় নাতি নাম শুনেছি অনেক । কিন্তু মেয়েটা কি বললো কথাটা শুনেই কান্না চলে আসলো এইসব মেয়ে বলতে কি বুঝিয়েছে ? আমরা গ্ৰামের মেয়েরা কি খুব খারাপ ? মানতেছি আমরা ওনাদের মতো এতো স্মার্ট না । তাই বলে কি আমরা খারাপ হয়ে গেছি। উপরে তাকিয়ে দেখি ছেলেটা আমার দিকে তাকিয়ে আছে। তাকানোর সাথে সাথে আমার চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পরলো।

তখনই তাজরিয়ান হাওলাদার পিছনে তাকিয়ে মেয়েটাকে দিলো এক রাম ধমক । ধমক শুনেই আমরা সব কটা মেয়ে কেঁপে উঠি। এই অনন্যা গ্ৰামের মেয়েরা কি মানুষ না নাকি, এইসব কেমন কথা হা আর তোমাকে না বলছি আমার আসে পাশে যেনো না দেখি তাহলে কেন পিছন পিছন চলে আসো যতসব Disgusting people. কথাটা বলেই আমাদের চলে যেতে বলে কিন্তু তার আগে ওনিই চলে গেলেন আমাদের সামনে থেকে।

আমরাও চলে আসতে নিলাম কিন্তু অনন্যা নামের মেয়েটার দিকে তাকিয়ে দেখি আমাদের দিকে এমন করে তাকিয়ে আছে যেনো চোখ দিয়ে খুন করে ফেলবে। হুহ তাতে আমাদের কি । আমারাও চলে গেলাম সেখান থেকে যে যার বাড়ির উদ্দেশ্যে।

৮.

এই তাজরিয়ান দারা হঠাৎ এমন রেগে গেলি কেন ? তো কি করব এই অনন্যা মেয়েটারে দেখলেই গা জ্বলে উঠে তার মধ্যে সারাক্ষন পেছন পেছন ঘুরতেই থাকবে। কেমন কথা গুলো বললো দেখলি না মাঝের মেয়েটা কান্না করে দিছে ওর ফালতু কথা শুনে।

বুঝলাম না মেয়েটা কান্না করছে তাতে তোর এতো খারাপ লাগছে কেন। নাকি অন্য কিছু বস…… হুম।
কথাটা শুনে বন্ধুদের দিকে ভয়ংকর চোখে তাকালো তাজরিয়ান।
আরে এমন করে তাকাস কেন আমরা তো মজা করলাম। আচ্ছা বাদ দে এইসব কথা চল আশেপাশে একটু ঘুরে দেখি।
তখনি এক কাজের লোক এসে বললো ছোট সাহেব আপনেরে দাদাজান ডাকে।হুম যাও তুমি আমি আসছি বলেই বন্ধুদের ঘুরতে বলে চলে গেলো দাদার সাথে দেখা করতে।

হাওলাদার সাহেব নিজের রুমে ইজিচেয়ারে বসে চোখ বুজে আছে । আসবো দাদু কথা শুনে চোখ খুলে দরজায় তাকালেন ।
আসো দাদু দরজায় দাঁড়িয়ে কেন ভিতরে আসো।
তাজরিয়ান গিয়ে দাদুর পাশে বসলো। হাওলাদার সাহেব নাতির দিকে তাকালেন , নাতি তার হিরো থেকে কম না তা থেকেও বেশি উওম তার personally. তাকালেই বুকটা গর্বে ভরে উঠে। তাজরিয়ানকে দেখলেই তার নিজের যৌবনের কথা মনে পরে। নাতির মধ্যে যে তারই প্রতিছবি দেখতে পান।
দাদু কিছু বলবে হঠাৎ ডাকলে যে। ও হে ! দেখো তো তুমি আসছ পর থেকে ঠিক মত কথাই হলো না। তা কেমন লাগছে গ্ৰামে ,ওখানের পরিবেশ আর এখানের পরিবেশ তো সম্পূর্ণ আলাদা।
নাহ দাদু আমার কোনো অসুবিধা হচ্ছে না , I am absolutely fine দাদু।
যাক তোমার যে ভালো লাগছে এটাই অনেক। তা কাল তোমায় নিয়ে আমাদের স্কুলে যেতে চেয়েছিলাম সাথে যাবে নাকি ?
কেনো দাদু ?
এই তো স্কুলে মিলাদ ও মাহফিলের আয়োজন করে প্রতি বছর। তাই প্রতি বছরের মতো এবারও আমাকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে । ভাবলাম এবার তোমরা আছো তোমাদেরও নিয়ে যাই কি বলো।
ওকে দাদু আমার তো আর কোনো কাজ নাই তো যাওয়া যাবে।
তুমি তাহলে রেষ্ট করো আমি আসি বলেই তাজরিয়ান উঠে গেলো।

চলবে……

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here