#বোনু
#সিজন_০২
#Part_07
#Writer_NOVA
দুইদিন পর….
বিকেল বেলায় সোফায় বসে কাজ করছে মেহরাব।শরীরটা ভালো লাগছিলো না বলে অফিস থেকে চলে এসেছে। তখনি সদর দরজায় কলিং বেল বেজে উঠলো। লিমা কাকি(মেহরাবদের কাজের মহিলা) গিয়ে দরজা খুলে দিলো।
মেহরাবঃ কে এসেছে লিমা কাকি?
লিমাঃ দেখো মেহরাব বাবা কেডাই আইছে?
মেহরাবঃ বলবে তো কে?
লিমা কাকি সরে যেতেই মেহরাব ভূত দেখার মতো চমকে উঠলো। নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছে না।ওর সামনে রাজ,জান ও আরুহি দাঁড়িয়ে আছে। মেহরাব নিজের গায়ে চিমটি কাটলো।
মেহরাবঃ আমি কি জেগে জেগে স্বপ্ন দেখছি না তো?
নিবরাজঃ একদম না।
মেহরাবঃ দৌড়ে গিয়ে নিবরাজকে জরিয়ে ধরলো।কত বছর পর প্রাণপ্রিয় বন্ধুকে দেখলো।
নিবরাজঃ আরে আস্তে ধর।আমিতো শুটকি হয়ে যাবো।তোর যাতায় আমি গেলেই যাবো।
মেহরাবঃ কবে এসেছিস?একটা কলও করিসনি।নিউইয়র্কে থেকে বড়লোক হয়ে গেছিস।
নিবরাজঃ তোকে সারপ্রাইজ দিবো বলে বলিনি।গত দুই দিন ধরে কলেজের কাজে অনেক বিজি ছিলাম।তাই আসতে পারিনি।
মেহরাবঃ দুই দিন হয়ে গেছে। কি খবর তোর জান?
আইজানঃ আলহামদুলিল্লাহ ভালো। তোর?
মেহরাবঃ আলহামদুলিল্লাহ আমিও ভালো আছি।উনি কে?তাকে তো চিনলাম না।(আরুহিকে দিকে তাকিয়ে)
নিবরাজঃ আমার খালাতো বোন। আশরাফ আহমেদের মেয়ে।
মেহরাবঃ ওহ আরুহি।সেই অনেক আগে ওর বাবার কোম্পানিতে একদিন দেখেছিলাম।কেমন আছো?
আরুহিঃ জ্বী ভালো আপনি?
মেহরাবঃ শরীরটা বেশি ভালো না।কিন্তু এই দুই হারামীকে দেখে ভালো হয়ে গেছি।দাঁড়িয়ে আছিস কেন? বস তোরা।
ওদের কথা শুনে লুবনা মির্জা নিচে নেমে এলেন।লুবনা মির্জাকে দেখে দুই ভাই সালাম দিয়ে কুশল জিজ্ঞেস করলো।
লুবনাঃ তোমাদের মা-বাবা কেমন আছে? নিবরাজ তোমার বাবার শরীরটা নাকি ভালো না।বর্তমানে অবস্থা কেমন?
নিবরাজঃ আল্লাহর রহমতে সবাই ভালো আছে।পাপার শরীরটাও আগের থেকে ভালো।
লুবনাঃ তোমরা কথা বলো আমি নাস্তার ব্যবস্থা করছি।ওকে তো চিনলাম না।
(আরুহিকে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে)
মেহরাবঃ মাম্মি, আশরাফ আঙ্কেলের মেয়ে।
লুবনাঃ কোন আশরাফ আঙ্কেল?
মেহরাবঃ বাপির সাথে যে কন্ট্রাকগুলোতে ডিল করে।
লুবনাঃ এবার চিনেছি।রোজনী ভাবীর ছোট বোন জামাই।এতো ঘুরিয়ে প্যঁচিয়ে না বলে এভাবে বললেই পারতি।
আরুহিঃ আসসালামু আলাইকুম আন্টি। ভালো আছেন?
লুবনাঃ আলাইকুমস সালাম।ভালো আছি মা। তুমি ভালো আছো?
আরুহিঃ জ্বী আন্টি।
লুবনাঃ তোমরা বসো আমি আসছি।
আইজানঃ আপনাকে ব্যস্ত হতে হবে না।
লুবনাঃ সো কি কথা!! ৩ বছর পর আমাদের বাড়ি আসলে আর আমি খালি মুখে যেতে দিবো ভাবেছো।
লুবনা মির্জা তড়িঘড়ি করে কিচেনে চলে গেলেন।
নিবরাজঃ তা দোস্ত কি অবস্থা?
মেহরাবঃ আলহামদুলিল্লাহ ভালো।
আইজানঃ তোর গার্লফ্রেন্ড নীলার খবর কি?
মেহরাবঃ বেশি ভালো না।
নিবরাজঃ কেন কি হয়েছে?
মেহরাবঃ মনে হয় ব্রেকআপ হয়ে যাবে। কে জানি অন্য একটা মেয়ের সাথে আমার ছবি এডিট করে ওর কাছে পাঠিয়েছে। সেটা দেখে আমার সাথে তুমুল ঝগড়া করেছে।
আইজানঃ কে করেছে?
মেহরাবঃ জানি না।ধরতে পারলে তার একদিন কি আমার একদিন।
নিবরাজঃ মন খারাপ করিস না।বোঝানোর চেষ্টা কর।
মেহরাবঃ সেটাই করতে হবে।
মিহুঃ হুলো বিড়াল আমার কেডস জুতো জোড়া দেখেছিস?
☘️☘️☘️
সিঁড়ি দিয়ে নামতে নামতে মিহু কথাটা বললো।মিহুর গলা পেয়ে রাজ ওর দিকে তাকালো। নিবরাজ পুরো অবাক।আগের থেকে মিহুকে আরো বেশি সুন্দর লাগে।চেহারাটা বেশ মিষ্টি দেখতে।আগের মিহু আর এখনকার মিহু আকাশ-পাতাল পার্থক্য।রাজকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে আরুহির কিছুটা খোটকা লাগলো।
আরুহিঃ এই মেয়েটা এখানে কি করে? যেখানে যাই এই বিচ্ছিরি মেয়েটাকে সহ্য করতে হয়।স্কুলে থাকতে তো আমাদের দুজনের লেগেই যেতো।এক স্কুলে পড়েছি। সবসময় আমার কাজে ব্যাঘাত ঘটাতে। কিন্তু রাজ ভাইয়া এভাবে তাকিয়ে আছে কেন ওর দিকে?
রাজ ভাইয়া ওকে পছন্দ করে না তো?যার কারণে আমাকে পাত্তা দেয় না।আমি কতভাবে বুঝাই আমি তাকে ভালোবাসি।সে বুঝতেই চায় না।আর এই মেয়েটাকে রাজ ভাইয়া — ও নো।আমি আর ভাবতে ও সহ্য করতে পারছি না। ওকে আমার একটুও সহ্য হয় না।সেখানে আমার রাজের সাথে ওকে দেখবো, প্রশ্নই ওঠে না।(মনে মনে)
মেহরাবঃ বিচ্ছু দেখ কে এসেছে?
মিহুঃ কে এসেছে রে ভাইয়ু?
মিহু সামনে তাকিয়েই চমকে উঠলো। নিবরাজকে দেখে ও পুরো শর্কড।সারা শরীর কাঁপতে প্লাস ঘামতে লাগলো।শুকনো ঢোক গিলে এদিক সেদিক তাকাতে লাগলো।
মিহুঃ নিবরাজ চিলি মসলা,নেংটি ইঁদুর, শাকচুন্নী। তিনটা এখানে কি করে? নিউইয়র্ক থেকে কবে এলো এরা দুজন?
মেহরাবঃ কিরে কথা বলছিস না কেন?
মিহুঃ সবাই ভালো আছেন?
সবাইকে কাঁপা কাঁপা কন্ঠে কথাটা জিজ্ঞেস করলো মিহু।আরুহি ভেংচি কেটে অন্য দিকে ঘুরে রইলো।আইজান চোখ দুটো ছোট ছোট করে মিহুর দিকে তাকিয়ে আছে। নিবরাজ মুখ গোমরা করে নিচের দিকে তাকিয়ে রইলো।
আইজানঃ জ্বি ভালো আছি।তুমি ভালো আছো এনাকোন্ডা?(দাঁতে দাঁত চেপে)
মিহুঃ হ্যাঁ,নেংটি ইঁদুর।
আইজানঃ 🤬🤬
নিবরাজ চোখ লাল করে মিহুর দিকে তাকালো। রাজের চাহনিতে মিহুর হাত-পা কাঁপা শুরু হয়ে গেছে। কোন কথা না বলে সিঁড়ি দিয়ে দৌড়ে নিজের রুমে গিয়ে দরজা আটকিয়ে হাঁপাতে লাগলো। শুধু রাজ ছাড়া বাকি তিনজন হা করে মিহুর যাওয়ার পানে তাকিয়ে রইলো। মিহু কেন এমন করলো তা তাদের জানা নেই।
মিহুঃ নিবরাজ চিলি মসলা চলে এসেছে। ও নো আমি এখন কি করবো? আমিতো ওদের খান কলেজে ভর্তি হয়ে গেছি।কয়েকদিন পর নবীন বরণ অনুষ্ঠান। ভেবেছিলাম ওরা দুজন নেই কোন সমস্যা হবে না আমার।কি হবে এবার? ৩ বছর আগে আমার জন্য এক্সিডেন্ট হয়েছে। দেশ ছারলো আমার কারণে। নিশ্চয়ই আমার ওপর খুব রেগে আছে। আমাকে হাতে পেলে মোয়া বানাবে।ঐ আরুহি শাঁকচুন্নি আমাদের বাসায় কি করে? ও তো নিবরাজের খালাতো বোন। আমিতো ভুলেই গিয়েছিলাম।যত্তসব, অসহ্যকর মেয়ে। স্কুলে সবসময় আমার সাথে লেগে থাকতো।স্যারদের কাছে আমার নামে নালিশ করতো।সে সব কথা এখন বাদ দেই।আল্লাহ নিবরাজ চিলি মসলার হাত থেকে বাচিও আমাকে।এই ছোট্ট, অবুঝ, নাবালিকা,মাসুম বাচ্চাটার মুখের দিকে তাকিয়ো।
☘️☘️☘️
মিহু ও আরুহি একই স্কুলে পড়তো।মিহুর দুই ক্লাস উপরে আরুহি। তারপরেও সবসময় দুজনের সাথে দুজনের ঝগড়া লেগে যেত।কেউ কাউকে দেখতে পারতো না। স্যারদের কাছে একে অপরের নামে সারাক্ষণ নালিশ করতো।এক কথায় কেউ কাউকে সহ্য করতে পারতো না। আরুহি নিচের ক্লাশের মেয়েদের সবসময় হেনেস্তা করতো।মিহু সেগুলোর প্রতিবাদ করলেই দুজনের লেগে যেত।তবে এভাবে আরুহি মেয়েটা ভালো।শুধু মিহুর সাথে বণে না।
ড্রয়িং রুমে……
নিবরাজঃ আমরা যেই কাজে এসেছি সেটাই তো হলো না।কাজ সেরে বাসায় যেতে হবে তো।
মেহরাবঃ কি কাজ?
আইজানঃ আরুহি!!
আরুহিঃ ও হ্যাঁ,আমার মনে ছিলো না।
আরুহি ব্যাগ থেকে একটা রঙিন কার্ড বের করে মেহরাবের হাতে দিলো।
মেহরাবঃ কিসের কার্ড?
আরুহিঃ আমার ভাইয়ের জন্মদিনের।আগামী পরশু আমার একমাত্র ভাই আহানের জন্মদিন। জন্মদিন উপলক্ষে বাড়িতে বেশ বড় করে পার্টির আয়োজন করা হয়েছে। আপনাদের পরিবারের সবাইকে যেতে হবে।আমার বাবা আপনার বাবার কাছে কার্ড পৌঁছে দিয়েছে।তারপরেও আমি বাসায় এসে দিয়ে গেলাম।আমার বিশ্বাস আপনারা সপরিবারে বিকাল বেলা হাজির হবেন।
মেহরাবঃ চেষ্টা করবো।
আইজানঃ চেষ্টা নয়,তোদের অবশ্যই যেতে হবে।
নিবরাজঃ সাথে মিহুকেও নিয়ে যাবি।যদি ওকে না নেস তাহলে তোর খবর আছে।
মেহরাবের কানের কাছে গিয়ে নিচুস্বরে কথাটা বললো নিবরাজ।মেহরাবও আস্তে করে উত্তর দিলো।
মেহরাবঃ শালা,এক্সিডেন্ট করে ১০ দিন হসপিটালে থেকেও তোর শিক্ষা হয়নি।আবার আমার বোনকে নিয়ে পড়েছিস।
নিবরাজঃ কি করবো বল? ওই তো আমার সব।হাজার চেষ্টা করেও নিজেকে সরাতে পারি না।আর হ্যাঁ,আমি তোর শালা নই।বোন জামাই বলে ডাকবি আমায়।(এক চোখ মেরে)
আইজানঃ তোরা কি ফিসফিস করছিস?
নিবরাজঃ কিছু না।চল উঠতে হবে।
মেহরাবঃ উঠবি মানে।রাতের খাবার খেয়ে কিছুতেই যেতে পারবি না।
আইজানঃ আরেকদিন। আজ উঠি।
তিনজন চলে গেল। ওদেরকে হাজার চেষ্টা করেও মেহরাব ও তার মা রাখতে পারলো না।
☘️☘️☘️
জন্মদিনের অনুষ্ঠানে……..
মিহু ও মেহরাব বিকেল বেলায় আরুহিদের বাসায় চলে এসেছে। মিহু কিছুতেই আসতে চায়নি।তাও দুইটা কারণে। ১/ রাজকে খুব ভয় পাচ্ছে।
২/ আরুহিকে ওর পছন্দ নয়।মেহরাব জোর করেই ওকে নিয়ে এসেছে। পার্টি রাতে।এখন সবাই ডেকারশনের কাজে ব্যস্ত। মিহুর পরনে হালকা খোয়রী কালার থ্রি পিস। রাতের জন্য আলাদা ড্রেস নিয়ে এসেছে। দো-তালায় আনমনে হাঁট ছিলো। হঠাৎ করে একটা রুমের থেকে একটা হাত এসে মিহুকে টেনে নিয়ে দরজা আটকে দিলো।আর মিহুর দুই হাত দেয়ালে চেপে ধরলো। এত তাড়াতাড়ি সবকিছু ঘটে যাওয়ায় মিহু কিছু বুঝলো না।তবে সামনে থাকা ব্যাক্তিটাকে দেখে ঘামতে লাগলো।
নিবরাজঃ কি ভেবেছিলে? আমাকে কষ্ট দিয়ে ভালো থাকবে? কিছুতেই না। তোমাকেও আমাকে ভালোবাসতে হবে।আমাকে খারাপ হতে বাধ্য করো না।তাহলে কিন্তু আমি ভয়ংকর হয়ে যাবো।
মিহু কিছু বলছে না।ভয়ে মনে হচ্ছে আত্মা শুকিয়ে কাঠ হয়ে যাচ্ছে। কোন মতে নিজেকে সামলালো মিহু।
মিহুঃ আমি সেদিন ইচ্ছে করে কিছু করতে চায়নি।যাস্ট এক্সিডেন্টলি হয়ে গেছে। প্লিজ মাফ করে
দিন🥺।(কাঁদো কাঁদো কন্ঠে)
নিবরাজঃ উহু, মাফ আমি করবো না।
মিহুঃ প্লিজ আমাকে ছেড়ে দিন।আমার খুব অস্বস্তি লাগছে। আপনি দূরে সরুন।
নিবরাজঃ তুমি আমাকে ভয় পাচ্ছো।আমার বিশ্বাস হচ্ছে না।(কপাল কুঁচকে)
নিবরাজ, মিহুকে ছেড়ে দিয়ে কানের কাছে মুখ নিয়ে আস্তে করে বললো।
নিবরাজঃ তুমি আমার First & Last Love. আমি তোমার কাছ থেকে আমার ভালোবাসা আদায় করেই ছারবো।তুমি শুধু দেখতে থাকো।
এক মুহুর্তেও না দাঁড়িয়ে নিবরাজ বের হয়ে গেল।মিহু এখন ওর জায়গায় বরফ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। ওর কানে রাজের কথাগুলো বারে বারে বারি খাচ্ছে।
মিহুঃ আমাকে ভয় পাইয়ে দিয়ে ছিলো।কখন যে চিলির মতো ঝাল থাকে আর কখন যে মিছরির মতো মিষ্টি থাকে কিছুই বুঝি না।
নিবরাজঃ কি বললে তুমি?
মিহুঃ আপনি না মাত্র বের হয়ে গেলেন?(অবাক হয়ে)
নিবরাজ মিহুর কথাগুলো বাইরে থেকে শুনতে পেয়েছে। তাই এখন ওকে আরেকটু ভয় দেখানোর জন্য ধীরে ধীরে ওর কাছে আসতে লাগলো।এক পা এক পা করে রাজ মিহুর দিকে এগিয়ে আসছে।হঠাৎ মিহু ওর সমস্ত শক্তি দিয়ে নিবরাজকে জোরে একটা ধাক্কা মারলো।রাজ টাল সামলাতে না পেরে ওর হাত লাগলো পাশে থাকা একটা টি-টেবিলের কোণার সাথে।কোণার দিকের কিছু অংশ ভাঙা ছিলো।যেটা অবশ্য দেখা যায় না। সেখানে লেগে রাজের হাত অনেকটা কেটে গেল।মিহু সামনে এগিয়ে এসে কাটা হাতে জোরে চাপ দিয়ে দরজা দিয়ে ছুটে পালালো। নিবরাজ তো রেগে পুরো ফায়ার।পুরো হাতটা রক্তে লাল হয়ে আছে। পরবর্তীতে আইজান এসে হাতে ব্যান্ডেজ করে দিয়েছে। আগামীকাল নবীন বরণ অনুষ্ঠান। কালই মিহুর খবর নিয়ে ফেলবে রাজ।সব রাগ আগামীকালের জন্য পুষে রাখলো সে।
#চলবে