#আমার_বোনু
#Part_10
#Writer_NOVA
ঊষার রুমের দরজা দিয়ে উঁকি দিতেই ঘেউ ঘেউ শব্দে ভড়কে গেলো জিবরান। ছোট একটা বাদামী রঙের কুকুরের বাচ্চা লেজ নাড়িয়ে নাড়িয়ে জিবরানকে খেঁকাচ্ছে। মনে হচ্ছে ওকে বকা দিচ্ছে। জিবরান সাইড কাটিয়ে এগিয়ে আসতে নিলে কুকুরের বাচ্চাটা তেড়ে এলো। জিবরান পরলো মহা বিপদে। কপালে জোরে চাপর মেরে বললো,
— এটা আবার কোথা থেকে আমদানি হলো?
বাচ্চাটাকে ধরতে নিলে সে কয়েক কদম পিছিয়ে গেলো। তবে পূর্বের ন্যায় ঘেউ ঘেউ করা অব্যহত রেখেছে। হাত বাড়িয়ে একে আদর করে পটাতে চাইলো জিবরান। কিন্তু সে এগিয়ে এলো না।সে নাছোড়বান্দা, এই ছেলের কাছে কিছুতেই পটবে না। পূর্বের থেকে জোরে চেচিয়ে উঠলো। জিবরান দুই কানে হাত দিয়ে মুখটাকে কাঁদো কাঁদো করে বললো,
— আমি তোর কি ক্ষতি করছিরে? তুই আমার বউয়ের রুমে আমাকেই ঢুকতে দিচ্ছিস না। এটা কি কোন কথা? দেখ ভালো চাইলে সামনের থেকে সর। তোকে আমি দুটো আনাম (পুরো) কুকিজ বিস্কুট খেতে দিবো। দয়া করে তোর মুখটা বন্ধ রাখ।
কুকুর ছানাটা জিবরানের মনভুলানো কথায় পটলো না। লেজ নাড়িয়ে সে গুটি গুটি পায়ে গোল গোল করে জিবরানের আশেপাশে ঘুরতে লাগলো। এক কদমও সামনে এগুতে পারছে না জিবরান।এবার তার মেজাজ সপ্তম আসমানে চরলো। সে রেগে বললো,
— ভালো কথা বললাম ভালো লাগলো না। সামনের থেকে সর বলছি। নয়তো এমন আছাড় মারবো পেটের নাড়িভুড়ি বের হয়ে যাবে। সরলি তুই? মারবো…..
জিবরানের পুরো কথা শেষ হওয়ার আগে ঊষার থমথমে কন্ঠ শোনা গেলো।
— কাকে আছাড় মারবেন আপনি? আমার কিউট পাপ্পিকে?
জিবরান সামনে তাকিয়ে দেখলো ঊষা দুই হাত গুঁজে দূরে দাঁড়িয়ে আছে। চোখ ছোট করে তার দিকে তাকিয়ে দেখছে। জিবরান নিজের দোষ ঢাকার জন্য সামনের দাঁত বের করে মেকি হাসি দিয়ে বললো,
— কি যে বলো না তুমি? এত সুন্দর একটা কিউট বাচ্চাকে কি আমি আছাড় মারতে পারি বলো? কত কিউট দেখতে ও। আমার তো ইচ্ছে করছে ওকে কোলে তুলে সারা বাসা ঘুরতে।
কথা শেষ করে মাথা নামিয়ে নিচুস্বরে বিরবির করে উঠলো জিবরান।
— কিউট না ছাই। আমাকে দেখেই খেঁকাচ্ছে। একদিন বাগে পেলে বস্তায় ভরে পচা ডোবায় ফেলে আসবো। আমাকে তো চেনো না চান্দু। তেরি তো ব্যান্ড বাজেগা!
কুকুরের বাচ্চাটার দিকে তাকিয়ে জিবরান দাঁত কিড়মিড় করে উঠলো। পারছে না শুধু ওকে তুলে দূরে ছুঁড়ে মারতে। কুকুরের থেকে চোখ সরিয়ে ঊষার দিকে দৃষ্টি দিতেই দেখলো ঊষা এক ভ্রু উঁচু করে ওকে তীক্ষ্ণ নজরে লক্ষ্য করছে। জিবরান দুই গাল চওড়া করে একটা হাসি দিয়ে বললো।
— রিয়েলি, নাইস ডগ। ওর নাম কি?
ঊষা একবার কুকুরের বাচ্চার দিকে তাকিয়ে উত্তর দিলো,
— ওর নাম পাপ্পি।
— সুন্দর নাম। কে এনে দিলো?
— অরূপ ভাইয়ু। দোকানের সামনে দিয়ে আসার সময় আমার জন্য ভাইয়ু পছন্দ করে নিয়ে এসেছে।
— হাউ কিউত পাপ্পি।
ঊষা মুখ ঝামটা মেরে বললো,
— হুম হইছে। পাম কম মারেন।
জিবরান অবাক হওয়ার ভান করে বললো,
— আমি কোথায় পাম মারলাম?
ঊষা জিবরানের কথার উত্তর না দিয়ে পাপ্পিকে আদেশ করলো,
— পাপ্পি তোমার জায়গায় যাও।
পাপ্পি নামের কুকুর ছানাটা ঊষার কথার সাথে সাথে রুমের কোণার দিকে চলে গেলো। যাওয়ার আগে জিবরানকে দুইবার খেঁকিয়ে গেলো। জিবরান চোখ ছোট করে বিরক্তিতে কপাল কুঁচকে ফেললো। রুমের কোণায় একটা ছোট ডগ হাউস। তার ভেতরে গিয়ে চুপচাপ বসে রইলো। ঊষা ধীর পায়ে কয়েক কদম সামনে এগিয়ে গিয়ে পেছনে ফিরে জিবরানকে বললো,
— ভেতরে আসুন।
জিবরান ভেতরে ঢুকতে ঢুকতে পাপ্পির দিকে তাকিয়ে বাঁকা হাসি দিলো। যেনো বিশ্ব জয় করে ফেলছে। তারপর বাচ্চাদের মতো ভেংচি কাটলো। পাপ্পি কুই কুই শব্দ করে মুখ ঘুরিয়ে রাখলো। এসব কান্ডকারখানা ঊষা খেয়াল করে মিটমিট করে হাসতে লাগলো। আর মনে মনে বললো,
— পাগল একটা।
★
আরান গটগটিয়ে সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠতে নিলেই তার বাবা আরাভ শিকদার ডাকলেন। তিনি সোফায় বসে কিছু ফাইল ঘাটছিলো। বাবার ডাকে আরান পুনরায় সিঁড়ি ভেঙে নিচে নেমে এলো। সামনে দাঁড়িয়ে স্বাভাবিক গলায় জিজ্ঞেস করলো,
— কিছু বলবে পাপা?
আরাভ শিকদার হাত দিয়ে পাশের সোফায় বসতে আদেশ করলো। আরান ভদ্র ছেলের মতো সোফায় বসে বললো,
— কি বলবে বলো?
আরাভ শিকদার হাতের ফাইল রেখে ছেলের দিকে তাকালেন। আরান সোফায় হেলান দিয়ে চুলে চিড়ুনির মতো আঙুল চালাচ্ছে। তার বাবার দিকে তাকিয়ে নড়েচড়ে বসলো। আরাভ শিকদার নজর নামিয়ে দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো। ঠান্ডা কন্ঠে জিজ্ঞেস করলো,
— তোমার বড় ভাইয়ের সাথে কথা হয়েছে?
আরান ভ্রু কুঁচকে তার বাবার দিকে তাকালো। ভাইয়ের কথা তো সে কখনো জিজ্ঞেস করে না। হঠাৎ আজ হলো কি? মুখে বিস্মিত ভাব বজায় রেখে বললো,
— হঠাৎ ভাইয়ার কথা জিজ্ঞেস করছো যে?
— কেন জিজ্ঞেস করতে পারি না?
— না পাপা তা নয়। তুমি তো কখনো জিজ্ঞেস করো না। তাই আমি বললাম।
— আমার কথার উত্তর দাও।
আরান পা দিয়ে সামনের পাপোস খুঁটতে লাগলো। তার মনোভাব এমন সে এখন এই বিষয় কথা বলতে ইচ্ছুক নয়। লো ভয়েজে বললো,
— আমি তার খবর জানি না পাপা।
ছেলের কথা শুনে আরাভ শিকদার বাড়ি কাঁপিয়ে হুংকার ছেড়ে বললো,
— তুমি মিথ্যে বলছো আরান? আমি কি তোমায় এই শিক্ষা দিয়েছি? নিজের বাবার সাথে মিথ্যে বলতে তোমার বুক কাপে না?
আরান মাথা আরো নিচু করে ফেললো। আরাভ শিকদার ফের চেচিয়ে বললো,
— তোমরা নিজেদের কি ভাবছো? তোমাদের ধারণা আমি তোমাদের বিষয় কিছু জানি না। তোমাদের কোন খোঁজ-খবর রাখি না? পেয়েছোটা কি তোমরা? ওর এতো সাহস কি করে হয়? ও এখন মির্জাদের পেছনে লাগতে চাইছে। ওদের সাথে তোমার ভাই কি একা পারবে? ওদের পাঁচ ভাইয়ের শক্তির কাছে তোমার ভাই তো একটা ছোট্ট শিশু। আর তুমি এমন আওয়ারাগিরি করতেছো কেন? ঈশানের সাথে লাগাটা কি খুব জরুরি? ঈশান তোমার মতো দশটাকে একাই শায়েস্তা করতে পারে। তা কি তুমি জানো না? কত করে বলছি আমার ব্যবসায় হাত লাগাও। আমি বেঁচে থাকতে থাকতে নিজের দায়িত্ব নিজে বুঝে নিতে শিখো। কিন্তু তুমি তো তা কানেই নিচ্ছো না? এমনটার কারণ কি?
আরানের ভীষণ রাগ হচ্ছে। তার বাবা আজকাল কোন কারণ পেলেই এভাবে অপমান করে। এটা তো কোন কারণ নয়।রাগে তার শরীর মনে হচ্ছে ফেটে যাবে। সেই মুহুর্তে রাগের আগুনে ঘি ঢালার জন্য তার মোবাইলে একটা কল এলো। কল ধরতেই তার রাগ বহুগুণ বেড়ে গেলো। ওপর পাশ থেকে কি বললো তা শোনা গেলো না। তবে কথা শেষ হতেই আরান তার হাতের মোবাইলটাকে বাবার সামনের দেয়ালে ছুঁড়ে মারলো। মোবাইলটা কয়েক টুকরো হয়ে ছিন্নভিন্ন হয়ে গেলো। আরান চুল টেনে ধরে চেচিয়ে উঠলো,
— আমি তোকে ছাড়বো না ঈশান!
★
ক্ষীণ আলো নিয়ে এক টুকরো কুমড়ো ফালির মতো চাঁদ উঠেছে। সেই চাঁদের আলোতে মাদুর বিছিয়ে পাঁচ ভাই বসে আছে। আলোচনার বিষয় খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আদিল তার স্ত্রী অথৈ-এর বিষয় নিয়ে বাকি চার ভাইয়ের সাথে কথা বলছে। ঊষা সেদিন আদিলের জোড়াজুড়িতে সবকিছু বলে দিয়েছে। তারপর থেকে আদিল চিন্তায় আছে।
আদিল, অর্ণবের হাতে চায়ের কাপ। বাকি তিনজন থেমে থেমক কফির মগে চুমুক দিচ্ছে আর নিজেদের মতামত দিচ্ছে। তখুনি সেখানে ঊষার আগমন।
— ওহ তোমরা সবাই এখানে! আর আমি তোমাদের সারা বাড়ি খুঁজে ফেললাম।
ঊষা ছাদের দরজার সামনে দাঁড়িয়ে কথাটা বললো।তার হাতে পাপ্পি। সে এখন সবসময় পাপ্পিকে নিজের কাছে রাখে। দুই দিনের মধ্যে ঊষার সাথে পাপ্পির ভালো ভাবও জমে গেছে। অর্ণব মাথা ঘুরিয়ে বোনের দিকে নজর দিলো। শান্ত গলায় জিজ্ঞেস করলো,
— কিছু বলবি?
ঊষা মাথা নাড়িয়ে না বুঝালো। তারপর চুপচাপ এসে ঈশানের পাশ ঘেঁষে মাদুরে বসে পরলো। ঈশানকে দেখেই পাপ্পি ঘেউ ঘেউ করে উঠলো। ঈশান নাক,মুখ কুঁচকে বললো,
— এই কালুর মা, তোর এই কুত্তা আমার সামনে থেকে সরা তো।
ঊষা রাগী গলায় বললো,
— একদম ওকে কুত্তা বলবা না।
ঈশান ভেংচি কেটে সুর টেনে বললো,
— না, ওকে কুত্তা বলবো না কালুর মা। একে কালু বলে ডাকবো। তোর বাচ্চাকে কি আমি কুত্তা বলতে পারি বল?
ইশাত ঈশানের সাথে তাল মিলিয়ে বললো,
— ও তো ছেলে। তাই জরিনা বলে ডাকতে পারছি না। তাই ওর নাম আমি দিলাম কুতুবউদ্দিন। নামটা কেমন হয়েছে অরূপ?
ইশাতের নাম শুনে সবার মধ্যে হাসির রোল পরলো।অরূপ হাসতে হাসতে ঊষাকে বললো,
— সবাই তো সুন্দর সুন্দর নাম রাখছে। আমি কি রাখবো রে বোনু?
কথাটা বলেই অরূপও ইশাত, ঈশানের সাথে হাসতে লাগলো। ঊষা চেচিয়ে উঠলো।
— বড় ভাইয়ু, মেজো ভাইয়ু। এদের কিছু বলো।
আদিল কিছু বলার আগে পাপ্পি ঊষার কোল থেকে নেমে সবার সামনে গিয়ে কয়েকবার করে ঘেউ ঘেউ করে উঠলো। পাপ্পির দিকে তাকিয়ে ঈশান দুই হাত নাড়িয়ে ভয় পাওয়ার ভান করে বললো,
— ওরে বাবা ভয় পাইছি!
অরূপ ভ্রু কুঁচকে বললো,
— বোনু, দুই দিনে তো ভালোই ট্রেনিং দিয়েছিস।
ঊষা মুখ বাঁকিয়ে ভাব নিয়ে বললো,
— হুম দেখতে হবে তো কার কুকুর ছানা।
ঊষা হাত বাড়াতেই পাপ্পি ওর কোলে ঝাপিয়ে পরলো। তারপর মন দিয়ে ওর গায়ে হাত বুলাতে লাগলো। আদরের পরশ পেয়ে পাপ্পি চুপটি করে রইলো। আদিল জিজ্ঞেস করলো,
— তোর দুই ভাবী কি করে বোনু?
ঊষা পাপ্পিকে আদর করতে করতে উত্তর দিলো,
— বড় ভাবী কিচেনে কাজ করছে। আর মেজো ভাবী কি করে জানি না। আমি তার রুমে যায়নি।
অর্ণব হাতের কাপটা সাইড দিয়ে রেখে জিজ্ঞেস করলো,
— আর অনল?
ঊষা এক পলক বড় ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে বললো,
— ওকে তো দেখলাম না। মনে হয় মেজো ভাবীর কাছে ছিলো।
আদিল নরম গলায় জিজ্ঞেস করলো,
— অথৈ তোকে অনেক কষ্ট দিয়েছে তাই না?
ঊষা আদিলের মুখপানে তাকিয়ে রইলো। তারপর একটু হাসার চেষ্টা করে বললো,
— কই না তো! এই সময় এমন একটু-আধটু হয়।
আদিল ফের বললো,
—ওর হয়ে আমি মাফ চাইছি।
ঊষা আৎকে উঠলো। তার ভাইকে জোর গলায় বললো,
— ছিঃ ছিঃ কি বলো এসব? এখানে মাফ চাওয়ার প্রশ্ন আসছে কেনো? প্রেগ্ন্যাসির সময় এমনটা হওয়া স্বাভাবিক।
আদিল নিজের জায়গা থেকে উঠে এসে ঊষার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বললো,
— আমাদের বোনুটা কত বড় হয়ে গেছে।
সবাই এক দৃষ্টিতে ঊষার দিকে তাকালো। কেনো জানি ঊষার আজ ভাইদের দৃষ্টিতে নিজেকে অপরাধী অপরাধী মনে হচ্ছে। তাই দ্রুত চোখ নামিয়ে ফেললো।
~~~ জীবনে হঠাৎ করে আসা মানুষগুলো হঠাৎ করে হারিয়ে যায়💘।
#চলবে
আইডিতে রেস্ট্রিকশন পরছে। যার কারণে ২৪ ঘন্টা পোস্ট, রিয়েক্ট, কমেন্টে ব্লক ছিলো। তাই গতকাল গল্প দিতে পারিনি।