আমার বোনু পর্ব-২৮

0
2186

#আমার_বোনু
#Part_28
#Writer_NOVA

উজ্জ্বল, ঝলমলে রিসোর্টের সামনে এসে মির্জাদের গাড়ি থামলো। আদরের বোনের জন্মদিন বলে কথা। সন্ধ্যার পার্টির জন্য বিশাল রিসোর্ট বুক করা হয়েছে। একে একে গাড়ি থেকে সবাই নামলো। ঊষা সবার শেষে নামলো। ওর সাদা গাউনের পেছন দিকটা ধরে দাঁড়ালো জিবরান। তা দেখে ঈশান টিপ্পনী কেটে বললো,

— আহা কি মনোরম দৃশ্য! বউয়ের যত্ন এভাবেই করতে হয়। বেঁচে থাকো বৎস। তোমার ছোট সমন্ধি দোয়া করে দিলো।

কথার মাঝে ঈশান এক হাতে দোয়া করার মতো উঠিয়ে নিলো। সবাই হো হো করে হেসে উঠলো। ঊষা মুখ টিপে হাসলো। জিবরান চোখ গরম করে বললো,

— এই দিন, দিন না দোস্ত। আমাদের দিনও আসবে।

ঈশান ভেংচি কাটলো। তখুনি পাপ্পি ঘেউ ঘেউ করে উঠলো। ইশাত চোখ, মুখ কুঁচকে বললো,
— এটা কোথা থেকে এলো?

অনল হাসিমুখে বললো,
— আমি নিয়ে এসেছি। ভালো করেছি না বলো চাচ্চু?

জিবরান মুখ গোমড়া করে বললো,
— এটা কে কি আবার নিয়ে আসতে হয়?

ঊষা সরু চোখে জিবরানের দিকে তাকালো৷পাপ্পি ঘেউ ঘেউ করে প্রতিবাদ জানালল। জিবরান মুখ কাচুমাচু করে বললো,

— না না ঠিক আছে। তোমাকে কিছু বলিনি পাপ্পি।

জিনিয়া শাড়ির আঁচল সামনে টেনে বিরক্তি গলায় বললো,
— এখানে আর কতখন দাড়িয়ে থাকবো? ভেতরে চলো।

অর্ণব, আদিল ভেতর দিক থেকে এসে পরলো। আদিল ব্যস্ত হয়ে বললো,
— তোমরা ভেতরে চলো। জিবরান ওদেরকে ভেতরে নিয়ে যাও। ঊষাকে নিয়ে আমরা আসছি।

অথৈ, নুহা, জিনিয়া সামনে এগিয়ে গেলো। জিবরান অনলকে কোলে তুলে সামনে হাঁটতে থাকলো। ঊষাকে নিয়ে পাঁচ ভাই এগুতে থাকলো। অর্ণব, আদিল বোনের দুই হাত ধরে রেখেছে। অর্ণবের পাশে অরূপ। আদিলের পাশে ঈশান। ইশাতের দায়িত্ব হলো ঊষার পেছনের লম্বা গাউনটা ধরে রাখার।

ইশাত মুখটাকে ইনোসেন্ট করে বললো,
— আমাকে কি এই দায়িত্ব দিতে হলো? এখন আমি মেয়ে পটাবো কি করে?

অরূপ মুখ দিয়ে চুকচুক শব্দ করে হাই তুলতে তুলতে বললো,
— প্রেস্টিজ পামচার। বেচারা!

তৎক্ষনাৎ তারিন পেছন থেকে দৌড়ে এসে ইশাতের পাশে দাঁড়িয়ে চেচিয়ে বললো,
— ইসু বেবী, মে হু না তোমহারি সাথ, ডরনি ক্যা বাত।

অর্ণব মুখ টিপে হেসে বললো,
— নে তোর নায়িকা চলে আসছে।

ঈশান কপাল কুঁচকে তারিনের দিকে তাকিয়ে বললো,
— এটারে আবার কে দাওয়াত দিছে🤔?

তারিন রেগে চেচিয়ে বললো,
— বান্ধবীর জন্মদিনে আবার দাওয়াত লাগে নাকি?

— হ্যাঁ বিনা দাওয়াতে চলে আসা যায়।

কথাটা বলেই অরূপ ঠোঁট চেপে হেসে উঠলো। আদিল সবাইকে তাড়া দিয়ে বললো,
— তাড়াতাড়ি চল।

তারিন ইশাতের দিক থেকে সরে ঊষার সামনে এসে দাঁড়ালো। ঊষা কপাল কুঁচকে জিজ্ঞেস করলো,
— কি? ভালো কথা, তুই আমার জন্য গিফট আনিসনি?

তারিন একটা ভাব নিয়ে বললো,
— খালি হাতে ডেং ডেং করে চলে আসছি। আবার কিসের গিফট। খেয়েদেয়ে বাসায় যামুগা।

ইশাত মুখ বাঁকিয়ে বললো,
— ছিঃ ছিঃ জরিনার মা। তোর বান্ধবী এমন কাইষ্ঠা। একে বিনা দাওয়াতে খেতে আসছে৷ আবার নাকি গিফট দিবে না। ওরে বিরিয়ানি হাফ প্লেট দিবো।

তারিন চোখ উল্টে ইশাতকে খাইয়া ফালামু লুক দিলো।তারপর ঊষার দিকে ছোট একটা বাক্স এগিয়ে দিলো। ঊষা মুখে প্রশ্নবোধক চিহ্ন একে জিজ্ঞেস করলো,

— কি?

তারিনের নির্লিপ্ত উত্তর,
— খুলে দেখ।

অরূপ এক হাত পকেটে গুঁজে বললো,
— হুম দেখ তোর বিনা দাওয়াতী বান্ধবী কি দিয়েছে।

ঊষা রেপার পেপারে মুড়াবো বাক্সটা খুলতেই দেখতে পেলো ছোট বাচ্চার ঘড়ি। ঈশান হো হো করে হেসে উঠলো। তারপর পেটে হাত রেখে হাসতে হাসতে বললো,

— কালুর মা এটাই তোর জন্য ঠিক আছে।

ঊষা চোখ রাঙিয়ে তারিনের দিকে তাকিয়ে বললো,
— এটা কি?

তারিন ওর হাত থেকে ছোঁ মেরে ঘড়িটা নিয়ে ঊষার হাতে পরিয়ে দিলো। তারপর উচ্ছাস কন্ঠে বললো,
— এই বাটনে টিপ দে বান্ধুপি!

ঊষা ওর কথামতো সেই বাটনে চাপ দিতেই লাল,নীল, হলুদ বাতি জ্বলে উঠলো। ইশাত এসব দেখে হাসতে হাসতে নিচে বসে পরেছে। অর্ণব, আদিল মুচকি হাসছে৷ ঊষা ফোঁস করে নিঃশ্বাস ছেড়ে তারিনের দিকে রাগী চোখে তাকালো। তারিনের সামনের পাটি দাঁত দেখিয়ে সামনের দিকে দিলো ভোঁদৌড়। তাকে আর পায় কে! ঊষা এখন ওকে হাতের সামনে পেলে আলুভর্তা করবে।

আরাভ শিকদার রিসোর্টে এসেছে অনেক সময় ধরে। রুমাল দিয়ে কপালের ঘাম মুছে যাচ্ছে। খুব ব্যাতিব্যস্ত হয়ে কাউকে কলে ট্রাই করে যাচ্ছে। কিন্তু সে কল না উঠায় তার ঘাম বেয়ে নেয়েধেয়ে অবস্থা। হঠাৎ পেছন থেকে অর্ণব বলে উঠলো,

— আরে বিশিষ্ট শিল্পপতি আরাভ শিকদার যে!

আরাভ শিকদার মাথা ঘুরিয়ে তাকালো। অর্ণবকে দেখে এক টুকরো হাসি বিলিয়ে দিলো। অর্ণব হ্যান্ডশেক করার জন্য হাতটা বারিয়ে দিতেই আরাভ শিকদার ওর হাত লুফে নিলো। পকেটে মোবাইল রেখে শুকনো হাসি দিয়ে বললো,

— তা কেমন আছেন মির্জা সাহেব?

— এই তো আলহামদুলিল্লাহ। তা আপনার পরিবারের সবাই এসেছে তো?

— না আমি একা এসেছি। আমার ওয়াইফের শরীরে কন্ডিশন ততটা ভালো না। ছেলেটাও সকাল থেকে গায়েব। কোথায় গেছে কে জানে৷ আপনাদের ইনভাইটেশনে না যোগ দিয়ে পারলাম না। তাই এত কাজ থাকতেও চলে এলাম।

অর্ণব খুশিতে গদগদ হয়ে বললো,
— আপনি আসেছেন তাতে খুব খুশি হয়েছি। আচ্ছা, তাহলে থাকেন। আমার আরো গেস্ট চলে এসেছে। তাদের সাথে কুশলাদি সেরে আসি।

অর্ণব চলে গেলো। আরাভ শিকদার হাফ ছাড়লেন। তার মোবাইল রিং হচ্ছে। সেটা ধরেই বাজখাঁই গলায় হালকা চেচিয়ে উঠলেন,

— কোথায় মরেছো? এখনও উপস্থিত হওনি কেন? তোমার কাজ যাতে অসুবিধা না হয় তার জন্য আমি আরানকে সরিয়ে দিয়েছি। ওকে আমাদের বাংলোয় আটকে রেখে এসেছি। কিন্তু তোমার কোন রেসপন্স নেই।

মোবাইলের অপর পাশের ব্যাক্তিটা আরাভ শিকদারের কয়েক হাত পেছনে ছিলো। সে বলে উঠলো,

— পেছনে তাকান শিকদার সাহেব।

আরাভ শিকদার বিস্ময় নিয়ে পেছনে তাকাতেই আঠাশের কোঠায় থাকা এক প্রাণোচ্ছল যুবককে দেখতে পেলো৷

— আদি!

বহু বছর পর সেই চিরচেনা ডাক শুনে এক মুহূর্তে থমকে দাঁড়ালো আদিল৷ এতো করুন সুরে তাকে কে ডাকলো? প্রথমেই তার অদিতির কথা মাথায় এলো। কিন্তু অদিতি এখানে আসবে কি করে? আদিল মনের ভুল ভেবে সামনে এগিয়ে যেতে নিলে আবারো শুনতে পেলো,

— আদি একটু দাঁড়াও প্লিজ।

না এবার সে ভুল শুনেনি। চোখ খিচে পেছন দিকে তাকালো। পিটপিট করে চোখ খুলে সে বাকরুদ্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো৷ তার সামনে স্বয়ং অদিতি দাড়িয়ে আছে। সে অবিশ্বাস্য দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো।এতবছর পর নিজের প্রথম ভালোবাসার মানুষটাকে দেখে আদিলের কি রিয়েকশন দেওয়া উচিত তা সে বুঝতে পারছে না। সাথে হুট করে হারিয়ে যাওয়ার জন্য চাপা অভিযোগও ঘিরে ধরলো।তবুও তার মুখ ফসকে বের হলো,

— অদিতি তুমি!

—————-

ঈশান এদিক সেদিক তাকিয়ে নুহাকে খুঁজে যাচ্ছে। কিন্তু এই মেয়ের কোন খবরই নেই। হঠাৎ খুঁজতে খুজতে উত্তর দিকের নিরিবিলি পরিবেশে চলে গেলো। নুহা দুই হাত বুকে গুঁজে এক দৃষ্টিতে সামনে তাকিয়ে আছে। ঈশান গলা খাকরি দিয়ে বললো,

— কি করছো নুহা?

নুহা এক পলক পাশ ফিরে ঈশানকে দেখে দীর্ঘ শ্বাস ছাড়লো। ঈশানের কাছে মনে হলো এই দীর্ঘশ্বাসে অনেক চাপা কষ্ট লুকিয়ে আছে। লো ভয়েজে নুহা বললো,

— এতো হট্টগোল ভালো লাগছিলো না।

— তোমার সম্পর্কে কিন্তু তেমন কিছু জানালে না আমাকে।

— কি বলবো বলুন!

— তোমার পরিবার, তোমার পড়াশোনা।

নুহা তাচ্ছিল্যের হাসি হাসলো৷ নিজের জীবনকে তাচ্ছিল্যে জানালো। শান্ত গলায় বললো,
— আর পরিবার, পড়াশোনা৷ বাবা মারা গিয়েছেন ছোট বেলায়। মায়ের আরেক বিয়ে হয়েছে। মায়ের দ্বিতীয় স্বামী বিয়ের আগে বলেছিলো আমার যাবতীয় ভারোণ-পোষণ দিয়ে আমাকে নিজের মেয়ের মতো বড় করবে। প্রথম বছর ভালোই চললো। দ্বিতীয় বছরের মাঝামাঝি আমার সৎ ভাই আসার পর থেকে শুরু হলো তার অমানবিক নির্যাতন। ক্লাশ এইটে ওঠার পর পড়াশোনা বন্ধ হয়ে গেলো। মা বললেন নিজের সবকিছু নিজে করতে। আসলে তিনি আমার অত্যাচার সহ্য করতে পারছিলেন না। কি করবো, কোথায় যাবো বুঝতে পারছিলাম না। এদিকে দিনকে দিন সৎ বাবার অত্যাচার বাড়তে লাগলো। তুচ্ছ বিষয় নিয়ে উনি আমার সাথে খারাপ ব্যবহার করতেন৷ গায়েও হাত তুলতেন। আমার এক দূর সম্পর্কের ফুপু আমায় নিয়ে গেলেন সেখান থেকে। তার স্বামী-সন্তান কেউ ছিলো না। তার কাছে বছর তিন থাকার পর সেও মারা গেলেন। এরপর নিজের হাল নিজে ধরলাম। পড়াশোনা না করায় ভালো কোন চাকুরী করতে পারবো না। তাই ধান্দাবাজিতে ঢুকলাম। নিত্যদিন কত মানুষরূপী অমানুষগুলোর কুনজর থেকে যে নিজেকে রক্ষা করতে হয়েছে। নয়তো শকুনগুলো তো খুবলে খুবলে খেয়ে নিতো।

নুহা শব্দ করে কেঁদে উঠলো। ঈশান থুম মেরে দাঁড়িয়ে রইলো। জীবন কত কঠিন। তার বড় দুই ভাই না থাকলে হয়তো তার সাথেও ভয়ানক কিছু হতে পারতো। আল্লাহর কাছে এর জন্য লাখ লাখ শুকরিয়া জানালো৷ নুহার দিকে তাকিয়ে মনে মনে বললো,

— কাঁদো নুহা কাঁদো। আজকেই তোমার শেষ কান্না। আমি কথা দিচ্ছি আজকের পর থেকে তোমায় কাঁদতে দিবো না। তোমাকে আমার মনের রাজ্যের রাণী করে রাখবো।

ঊষা চোখ লাল করে জিবরানের দিকে তাকালো। জিবরান ওর পাশে বসে পেছন দিক দিয়ে হাত দিয়ে ঊষার কোমড়ে খোঁচাচ্ছে। এমনভাবে জিবরানের হাত রাখা যে কেউ বুঝতে পারবে না সে কি করছে৷ যার যার কাজে সে ব্যস্ত। জিনিয়া, অথৈ পাশের ডিভানে বসে রাজ্যের গল্প জুড়ে দিয়েছে। অনল, পাপ্পির সাথে খেলছে। তারিন ইশাতের বাহু ধরে টানাটানি করছে কাপল পিক তুলবে বলে। কিন্তু ইশাত তাতে রাহি নয়। পূর্ব দিকে অরূপ দাঁড়িয়ে রাহীর সাথে কথা বলছে। অর্ণব, আদিলকে আশেপাশে দেখা যাচ্ছে না। আচমকা ঊষার চোখ পরলো দক্ষিণ দিকে। সেখানে পিয়াস আহত চোখে ওর দিকে তাকিয়ে আছে। ঊষা ওর দিকে তাকাতেই চোখাচোখি হয়ে গেলো। পিয়াস একটা শুকনো হাসি দিয়ে সেখান থেকে সরে গেলো।পিয়াসকেও দাওয়াত করা হয়েছে। হঠাৎ ঊষার মুখ কালো হয়ে যাওয়ায় জিবরান জিজ্ঞেস করলো,

— কি হয়েছে ঊষারাণী?

— কিছু না।

ঊষা মুখ কালো করে উত্তর দিলো। জিবরান আর কিছু জিজ্ঞেস করলো না। আজ তাদের সবার পরনে সাদা। ঊষার পরনে সাদা গাউন।মাথায় সাদা পাথরের তাজের কারণে রাণী রাণী লাগছে৷ জিবরানের ঊষারাণী। অথৈ, জিনিয়া সাদা শাড়ি।ঊষার পাঁচ ভাই ও জিবরান সাদা কোর্ট-প্যান্ট। নুহা সাদা গোল ড্রেস পরেছে। কম-বেশি সবার পরনে সাদা রং আছে৷

অর্ণব মাইক হাতে নিয়ে স্টেজে উঠে গেলো। সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করে বললো,

— লেডিস্ এন্ড জেন্টেলম্যান এখন আমাদের বোনু কেক কাটবে। তাই আপনারা সুষ্ঠুভাবে শৃঙ্খলার সহিত বসে তা উপভোগ করুন। ধন্যবাদ!

ঊষা উঠে দাঁড়ালো। এনাউন্সমেন্ট শুনে বাকি চার ভাই দৌড়ে স্টেজের দিকে ছুটে এলো। অরূপ, আদিল হাত বাড়িয়ে দিলো বোনের দিকে। ঊষা দুই ভাইয়ের হাত ধরে স্টেজে উঠলো। বিশাল বড় কেকের সামনে দাঁড়ালো। পাঁচ ভাই আর স্বামীর হাত ধরে কেক কাটলো। সাথে সাথে করতালিতে মুখরিত হয়ে গেলো পরিবেশ। ঊষা একে একে সব ভাইকে কেক খাইয়ে দিলো।

———-

তারিন, নুহা, রাহী ধীর পায়ে হেটে এসে অথৈ ও জিনিয়ার পাশে দাঁড়ালো। সবার মুখে প্রশান্তির হাসি।পিয়াস এক কর্ণারে দাঁড়িয়ে হাসিমুখে হাততালি দিচ্ছে। তাকেও অনেক খুশি দেখাচ্ছে। অদিতি ভাইয়ের পাশে দাঁড়িয়ে আড়ালে চোখ মুছলো। কতদিন পর তার আদিকে দেখছে। কিন্তু তার আদি আর তার নেই। আদিল এক টুকরো কেক এনে অথৈকে খাইয়ে দিলো৷ তা দেখে অদিতির চোখ ছলছল করে উঠলো। আদিল একবার অদিতির দিকে তাকিয়ে সরে গেলো। মাসফি বোনকে দেখে চিন্তিত গলায় বললো,

— কি হয়েছে অদিতি?

— কিছু না ভাইয়া।

— খারাপ লাগছে?

— হ্যাঁ ভাইয়া। চলো আমরা চলে যাই।

— তুই বলেছিলি আদিলকে দেখলে তুই ঠিক থাকবি। তাই তোকে এখানে এনেছি।

অদিতি কোন উত্তর দিলো না। ফ্যালফ্যাল করে মাসফির দিকে তাকিয়ে রইলো। এদিকে মাসফি সেই দুপুর থেকে আরানকে কলে ট্রাই করে যাচ্ছে। কিন্তু আরানের মোবাইল সুইচ অফ বলছে। অদিতি মাসফিকে সব খুলে বলেছে। আরাভ শিকদারের কুকীর্তি থেকে শুরু করে তার আর আদিল সম্পর্কের কথা। তাই মাসফি পুরো প্ল্যান ভেস্তে দিয়েছে। সে এখন বোনকে নিয়ে নিউইয়র্ক চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আদিলের সামনে অদিতিকে আনতে চাইনি। কিন্তু অদিতি জেদ করে চলে এসেছে।

জিবরান একটা বিশাল ফুলের তোড়া নিয়ে ঊষার সামনে হাঁটু গেড়ে বসে বললো,

— আমার মনের রাজ্যের রাণী, শুভ জন্মদিন!

ঊষা খুশিতে চোখ, মুখ ঢেকে তার উচ্ছাস প্রকাশ করলো। রাহী কনুই দিয়ে অরূপকে খোঁচা মেরে বললো,

— দেখছো কি রোমান্টিক!

অরূপ দাঁত কিড়মিড় করে বললো,
— তুমি কি চাইছো এখানে আমি তোমার সাথে রোমান্টিক কার্যক্রম শুরু করি?

রাহী মুখ কুঁচকে বললো,
— ছিঃ কি অসভ্য মার্কা কথাবার্তা।

অরূপ হো হো করে হেসে উঠলো। একে একে বাকি সবাইকে ঊষা কেক খাইয়ে দিলো। কেক কাটার পর্ব শেষ। এখন খাবারের পব চলবে। পাঁচ ভাই ব্যস্ত হয়ে গেলো কাজে। জিবরানও কাজে সাহায্য করতে চলে গেলো। ঊষার এই কলহলে বিরক্তি লাগছিলো। হঠাৎ একটা বাচ্চা মেয়ে এসে বললো,

— আপু আপনাকে না একজন ঐ দালানের পেছনে যেতে বলেছে।

এতটুকু কথা বলে পিচ্চি মেয়ে ছুট লাগালো। ঊষা কোন কথা জিজ্ঞেস করার অবসর পেলো না। ঊষা দ্বিধাদ্বন্দ নিয়ে পিছনের দিকে গিয়ে একটু দাঁড়ালো। তখুনি সে তার পেছনে কারো অস্তিত্ব পেলো। পেছন ঘুরে দেখার আগে সেই আগুন্তক ঊষার মুখে ক্লোরোফোমের স্প্রে ছুঁড়ে মারলো। ঊষা ঢলে পরার আগে সে তার বুকে ঊষার মাথা চেপে বিরবির করে বললো,

— সরি মির্জা সাহেব। আমি আমার জিনিস নিয়ে যাচ্ছি। পারলে নিজের বোনকে আমার থেকে খুঁজে নিয়েন।

আগুন্তক ঊষাকে পাঁজা কোলে তুলে পেছনের গেইট দিয়ে বের হয়ে গেলো। আগের থেকে সব ব্যবস্থা করা ছিলো। তার মিনিট দশকের মধ্যে ঊষাকে তার ভাইরা খুঁজতে আরম্ভ করলো। মুহুর্তের মধ্যে পুরো রিসোর্টে ছেয়ে গেলো ঊষার নিখোঁজের কথা।

~~~~ খারাপ সময়ে আমাদের সাথে যারা থাকে তারাই আমাদের প্রকৃত আপনজন।🌹

#চলবে

রিচেইক দেওয়া হয়নি। ভুল-ত্রুটি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন😊।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here