#আমার_বোনু
#Part_11
#Writer_NOVA
— আমার কিছু কথা আছে?
জিবরানের কথায় পুরো খাবার টেবিল থমথমে পরিবেশে পরিণত হলো। সাত জোড়া চোখ এসে পরলো জিবরানের সিরিয়াস ভঙ্গির মুখমণ্ডলের ওপর। হুট করে ভোর সকালে আগমন ঘটেছে জিবরানের। সাধারণত খুব প্রয়োজন ছাড়া জিবরান মির্জা কুঠিরে এত সকালে আসে না। তার একটা গুরুত্বপূর্ণ কথা বলার আছে। তাই তার হঠাৎ আগমণ। খাবার টেবিলই কথা বলার উপযুক্ত সময়। তাই সে তার বক্তব্য পেশ করতে এটা বেছে নিয়েছে।
অর্ণব ছুরি দিয়ে পাউরুটিতে জেম লাগাতে লাগাতে জিজ্ঞেস করলো,
— কি কথা শালাবাবু?
আদিল জুসের জগ থেকে গ্লাসে জুস ঢেলে নিলো। তারপর জুসের গ্লাসটা ঊষার দিকে ঠেলে দিয়ে আদেশের সুরে বললো,
— জলদী শেষ করবি বোনু।
ঈশান তার সামনের জুসের গ্লাস থেকে এক চুমুক দিয়ে কপাল কুঁচকে জিবরানকে বললো,
— সিরিয়াস কিছু?
জিবরান মাথা নাড়ালো। যার মানে সিরিয়াস কিছুই। ঊষা কিছু বুঝতে না পেরে চুপচাপ সবার দিকে নজর দিতে লাগলো। অর্ণব চোখ উঠিয়ে জিনিয়ার দিকে তাকালো। জিনিয়া ইশারায় বুঝালো সে কিছু জানে না। অরূপ জেলি পাউরুটিটা ঊষার দিকে বাড়িয়ে দিলো। ঊষা ছোট করে একটা কামড় দিয়ে খেতে লাগলো। অরূপ বাকিটুকুতে বিশাল এক কামড় বসিয়ে খেতে খেতে জিবরানকে বললো,
— কি কথা বলবি বলে ফেল।
জিবরান কিছুটা দম টেনে নিলো। কথাটা সে কিভাবে শুরু করবে তাই বুঝতে পারছে না। কিন্তু কথাটা তার জন্য ভীষণ জরুরি। কিছুটা সাহস কুড়িয়ে বললো,
— আমি ঊষাকে অনুষ্ঠান করে উঠিয়ে নিতে চাই। আমাদের বিয়েটা যেভাবেই হোক হয়েছে তো। এখন আমি আমার বউকে নিতে চাই।
ঊষার বুকটা ধক করে উঠলো। জিবরানের কথার সাথে সাথে পাঁচ ভাইয়ের মুখ কালো হয়ে গেলো।কেউই ফিরতি কোন উত্তর দিলো না। বোনকে বিয়ে যেহেতু দিয়েছে বিদায় তো দিতেই হবে। একদিন আগে হোক কিংবা পরে। ঊষার চিৎকার করে কাঁদতে ইচ্ছে করছে। সে তার ভাইদের ছেড়ে কোথাও থাকে না। কিন্তু এখন বিয়ে যেহেতু হয়েছে পরের ঘরে তে যেতেই হবে। ভেতর থেকে আসা ডুকরে কান্নাগুলো গলায় এসে দলা পেকে রইলো। যার ফলে ঊষা কাঁদতে পারছে না। ইশাত একবার বড় দুই ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে বললো,
— এতো তাড়াতাড়ি?
জিবরান এক পলক ঊষাকে দেখে বললো,
— হ্যাঁ তাড়াতাড়ি। অনেক ভেবে আমি এই সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আম্মু বেশিরভাগ সময় অসুস্থ থাকে। তার দেখভালের জন্য একটা নিজের মানুষ লাগে। আমার স্ত্রী আমার মায়ের যত্ন নিবে। তাছাড়া আমি খবর পেয়েছি ও ফিরে আসছে।
“ও ফিরে আসছে” এতটুকু শুনেই সবার খাওয়া বন্ধ হয়ে গেলো। চমকে জিবরানের দিকে তাকালো। জিবরান মাথা নাড়িয়ে বুঝালো ওরা যা শুনেছে তা ঠিকই শুনেছে।
অর্ণব খাবার শেষ না করে উঠে পরলো। জিনিয়া দ্রুত তার সামনে এসে বললো,
— একি তুমি খাবার ছেড়ে উঠলে কেন?
অর্ণব গম্ভীর কন্ঠে উত্তর দিলো,
— আমার খাওয়া হয়ে গেছে।
অর্ণব দ্রুত পায়ে সিড়ি বেয়ে উপরে উঠে গেলো।আদিলও চেয়ার ছেড়ে উঠে গেলো। জিবরানকে উদ্দেশ্য করে বললো,
— তোমার মা কে নিয়ে এসো। যা কথা হবার সব আন্টির সামনেই হবে।
জিবরান মাথা হেলিয়ে সম্মতি জানালো। আদিলও বড় ভাইকে অনুসরণ করে গটগট পায়ে উপরে চলে গেলো। ইশাত, অরূপ চিন্তিত ভঙ্গিতে খাবার নাড়াচাড়া করছে। তা দেখে জিনিয়া বললো,
— কি হলো তোমরা খাচ্ছো না কেন?
ইশাত দীর্ঘশ্বাস টেনে বললো,
— তোমার ভাই যে কথা শুনিয়েছে তাতে আর গলা দিয়ে খাবার নামবে না।
অরূপ কিছু সময় থুম মেরে রইলো। তারপর ইশাতের কথা বলা শেষ হতেই সে বললো,
— তোমার ভাই যে কথা বলেছে ভাবী তাতে তো সবেমাত্র আমাদের খাওয়া বন্ধ হয়েছে। এবার দেখবে রাতের ঘুমও বাতিল হবে।
জিনিয়া বললো,
— কেমন কথা বলো এসব? বোন বিয়ে দিয়েছো এখন কি সংসার করবে না? তার তো একটা নিজস্ব সংসার হবে। তাকেও তো সবকিছু গুছিয়ে নিতে হবে। এমনটা ভেবো না নিজের ভাইয়ের বউ বলে বলছি। ঊষা আমার ভাইয়ের বউ হওয়ার আগে আমার ননদ।
ভাইদের কথা শুনে ঊষার চোখ বেয়ে পানি গড়িয়ে পরছে। তা সবার অগোচরে মুছে ফেললো। “ভাইদের ছেড়ে যেতে হবে” এতটুকু শুনলেই তার বুক ফেটে কান্না আসছে। ঈশান গভীর ধ্যানে মগ্ন। এমনি সে একটু আরানের সাথে ঝামেলায় আছে। তার মধ্যে আবার নতুন চিন্তা এসে ভীড় করেছে। তবে ঈশানের দৃষ্টি এখন জিবরানের মধ্যে আবদ্ধ। জিবরান তার সিদ্ধান্তে অটল। সে এবার তার বউকে নিয়েই যাবে। তাই চুপচাপ খাবার খাচ্ছে। আর গভীর মনোযোগ দিয়ে কিছু একটা ভাবছে।
★
জিবরান মির্জা বাড়িতে বহু আগের থেকে আসা-যাওয়া করে। জিনিয়া ও অর্ণবের প্রেমের সম্পর্ক ছিলো। সেই সুবাদে জিনিয়া প্রায় এই বাড়িতে আসতো।মাঝে মাঝে রান্না করে দিয়ে যেতো। তখন জিবরান কলেজের ছাত্র। বোনের সাথে সেও আসতো। দ্বিতীয়বার যেবার এসেছিলো সেবারই ঊষাকে দেখেছিলো। এলোমেলো চুলে এক কিশোরী সারা বাড়ি ছোটাছুটি করছে। আর ছোট তিন ভাই তার পিছনে তেলের বোতল নিয়ে ঘুরছে। সে কিছুতেই বেনুনী করবে না। আর ভাইদের কি তোড়জোড় বোনের চুলে তেল দেয়ার।সেই এলোমেলো কেশের কিশলরীকে দেখে জিবরানের মনে প্রথম প্রেমের ঘন্টা বেজে গিয়েছিল। সদ্য কলেজে যাওয়া এক কিশোরের মনে দাগ কেটেছিলো ঊষা। সে মনে মনে পণ করে রেখেছিলো যে কোনকিছুর বিনিময়ে এই মেয়েকে তার অর্ধাঙ্গিনী করবে। এরপর থেকে নানা বাহানায় প্রায় সে মির্জা কুঠিরে আসতো।
প্রায় যাওয়া-আসা করতে করতে ইশাত, ঈশান ও অরূপের সাথে ভালো বন্ধুত্ব গড়ে উঠলো। তবে ঈশানের সাথে খাতিরটা বেশি ছিলো। বন্ধুত্ব হওয়ায় তার যেনো জিবরানের জন্য আরো ভালো হলো। যেকোনো সময় মির্জাদের বাসায় আসতে পারতো। জিবরান চমৎকার মানসিকতার ছেলে। যে কারো সাথে ভাব জমাতে সে দারুণ পটু। এক সময় ঊষার সাথেও তার বেশ ভাব জমে গেলো। তারপর অর্ণব আর জিনিয়ার পারিবারিক ভাবে বিয়ে হয়ে গেলো। এখন আর জিবরানের মির্জা বাড়িতে আসার বাঁধা কোথায়? ধীরে ধীরে কেটে গেলো কয়েক বছর। অনলের জন্ম হলো। অনল বড়ও হতে লাগলো। এর মধ্যে ঊষার মনে জিবরানের জন্য ভালোবাসার পরিমাণটাও বাড়তে লাগলো। ঊষাও কিন্তু জিবরানের প্রতি আসক্ত হতে লাগলো। জিবরান এমন একটা ছেলে তার প্রতি আসক্ত না হয়ে কোন মেয়ে থাকতে পারবেই না।
মাস খানিক আগে জিবরান ঠিক করেছিলো ঘটা করে ঊষাকে বিয়ের প্রপোজাল দিবে। কিন্তু এরমধ্যে ঘটলো এক অঘটন। এক ছেলে ঊষার জন্য পাগলামি শুরু করলো। সে ঊষাকে দেখেছিলো এক জন্মদিনের ফাংশনে। কথাটা জিবরান জানার পর সরাসরি অর্ণব, আদিলকে ঊষাকে বিয়ের কথা বলে। এমনকি একদিনের মধ্যেই। একদিকে ঐ ছেলেটার পাগলামি আরেকদিকে জিবরানের পাগলামিতে পাঁচ ভাইয়ের অবস্থা খারাপ। অবশেষে পাঁচ ভাই আলোচনা করে জিবরানকেই ঊষার জন্য নির্বাচন করলো। কারণ জিবরান সবদিক দিয়ে পারফেক্ট। একদিনের মধ্যে একদম ঘরোয়াভাবে ওদের বিয়েটা হয়ে যায়। কথা ছিলো এখন সাধারণভাবে খেজুর দিয়ে বিয়ে হবে।তারপর বড় করে অনুষ্ঠান করে সবাইকে জানাবে। যতদিন অব্দি বড় অনুষ্ঠান করে ঊষাকে উঠিয়ে না দেওয়া হয় ততদিন ঊষা মির্জা বাড়িতে থাকবে৷ ঊষা এই বিয়েতে রাজী ছিলো না তা নয়। তবে সে এখন বিয়ে করতে সম্মতি দেয়নি। ভাইদের মুখের ওপর কথাও বলতে পারেনি। বিয়ের পর জিবরানের সাথে এই কারণে অনেক রাগারাগি করেছে। জিবরান প্রতিত্তোরে কিছু বলেনি। চুপচাপ গায়েব হয়ে তার গুরত্বটা বুঝিয়ে দিয়েছে।
ঐ ছেলেকে মির্জারা পাচ ভাই মিলে এক প্রকার পরিবারের চাপে ফেলে বিদেশে যেতে বাধ্য করেছে। কিন্তু জিবরান খবর পেয়েছে ছেলেটা নাকি এই মাসেই ফিরে আসবে। তাই সে দ্রুত ঊষাকে নিজের কাছে নিয়ে যেতে চায়। ঊষাকে সে হারাতে চায় না।
~~~ ভালোবাসা অনেক দামী জিনিস ভাই,
যারতার কাছে এটা আশা করতে নাই💞।
#চলবে
অতীত ক্লিয়ার করে দিলাম।রি-চেইক দেইনি। ভুল-ত্রুটি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। আমি বহুত প্যারায় আছি।গল্প লিখতে আমার অনেক কষ্ট লাগে। টেনেটুনে এতটুকু লিখতে পারি তাই অনেক😴।