আমার ভিনদেশি তারা পর্ব -৩৮

0
1783

Story – আমার ভিনদেশি তারা
Writer – Nirjara Neera
পর্ব নং – ৩৮
———————————————–
আমি লিওর সামনে থেকে সস ওয়ালা প্লেট একটু সরিয়ে রাখলাম। সে সাথে সসের বোতলও। লিও এখন ও চোখ মুখ খিচে অন্যদিকে তাকিয়ে আছে। প্রাণ যাবে তবু পানি খাবে না। চেহারায় বোঝা যাচ্ছে ঝালে তার প্রাণ ওষ্টাগত। আমি কাতর স্বরে আরেক বার চেষ্টা করলাম।
“লি-লিও পানি টুকু খেয়ে নাও প্লিজ!”
লিও ফোস করে শুধু নিঃশ্বাস ফেলল। কিন্তু পানি নেওয়ার কোনো লক্ষন তার মধ্যে দেখা গেল না। আমি কি করবো বুঝতে না পেরে সস গুলো সামনে থেকে সরিয়ে কিচেনে নিয়ে আসলাম। তারপর অল্প ফ্রুট কাস্টার্ড নিয়ে আসলাম এই ভেবে যে মিষ্টি খেলে ঝাল কিছুটা হলেও কমবে। সেই মুহুর্তে ভুলে গেলাম মার্থা হাউজে আমি সামান্য একজন কর্মচারী। আর লিও আমার কাস্টমার। আমি যা করছি তা অনেক টা নিয়ম বহির্ভূত। সেটা হয়ত মাথায় ছিল না।
কাস্টার্ডের পেয়ালা টা লিওর সামনে দিয়ে বললাম
“এগুলো নাও। ঝাল চলে যাবে!”
ও না নিলে আমি এক চামচ নিয়ে ওর মুখে দিতে যাব ঠিক তখন পাশ থেকে ডাক এলো। এটা ফ্রান্সিস। সে ভ্রু কুচকে আমার দিকে এগিয়ে এল। এভাবে দেখে সে জিজ্ঞেস করলো
“কি করছো এসব!”
আমি একটু হতচকিত হয়ে গেলাম। কি বলবো খুজে পেলাম না। বোবার মত শুধু ফ্রান্সিসের দিকে তাকিয়ে রইলাম। সে আমাকে ধমকে উঠলো
“টামিনা! আমি তোমাকে কিছু জিজ্ঞেস করেছি। আনা ব্রেকে আছে। ওই চারটা টেবিলে অর্ডার নেবার জন্য কেউ নেই। আমি একজন হিমশিম খাচ্ছি। আর তুমি?”
চামচ টা রেখে একটু হাসার চেষ্টা করলাম। বললাম
“তে-তেমন কিছু না ফ্রান্সিস। উ-উনার একটু ঝাল লেগেছিলো তাই কাস্টার্ড এনে দিয়েছি!”
ফ্রান্সিস বাঁকা চোখে তাকালো
“সত্যি তো? নাকি মিস মার্থা কে ডাকবো! বল?
আমি কিছু বলার আগে ঝট করে লিও দাড়িয়ে গেল। তারপর ফ্রান্সিসের মুখোমুখি দাড়িয়ে বলতে লাগল
“কি বললে তুমি? কাকে ডাকবে?”
লিও কে উঠতে দেখে আমি ভিড়মি খেলাম। আর ফ্রান্সিস ও হকচকিয়ে গেল। সে ভাবে নি একজন সাধারন কাস্টমার এভাবে তার কথার বিরুদ্ধে হুট করে দাড়িয়ে যাবে। বিস্মিত চোখে আমার কাঁধে হাত রেখে হা করে আমার দিকে তাকিয়ে বলল
“এই সব কি টামিনা? কে এ?”
আবারো আমি জবাব দিতে যাব তার আগে লিও বলে উঠল
“তুমি ওর সাথে এভাবে কথা বলছো কেন? কি ধরনের ব্যবহার এটা?”
এমনিতে ঝালে তার চোখ মুখ খিচে ছিল। এখন এমন অবস্থা হল যেন অনেকটা আগুনে পোড়া টকটকে লাল কয়লার মত। ফ্রান্সিস অবাক হয়ে বললো
“আশ্চর্য্য! আমি টামিনার সাথে কেমন করে কথা বলবো সেটা তোমার কাছ থেকে কেন জানবো?”
লিও দাঁত মুখ খিচে আরো কিছু বলতে যাবে তার আগে আমি লিওর হাত ধরে ফেললাম। বললাম
“লিও ফ্রান্সিস আমাকে কাজের জন্যই বলছে। ওর দোষ নেই। প্লিজ তুমি বসো!”
“এ বাজে হাউজে তুমি কাজ করছো কেন? এক্ষুনি চল তুমি আমার সাথে! আর কাজ করবেনা এখানে।”
লিওর কথা কলিজায় ধপ করে লাগলো। তার হাত টা আরেকটু শক্ত করে ধরে বললাম
“লিও প্লিজ একটু বস! আমি আসছি এক্ষুনি!”
লিও বসলো না। শক্ত হয়ে দাড়িয়ে অন্য দিকে মুখ ফিরিয়ে রইলো। যেন উঠতি বয়সী অভিমানী কিশোর। সে বললো
“বসবো না। চলো এখান থেকে।”
“যাবো লিও। আরেকটু প্লিজ। তুমি বস এখানে আর এটা নাও।”
লিও কে জোর করে ধরে চেয়ারে বসালাম। তারপর কাস্টার্ড টুকু এগিয়ে দিলাম।
ফ্রান্সিস তীক্ষ্ণ চোখে তাকিয়ে আমাকে ইশারা করে চলে গেল।
লিও বসলো কিন্তু কাস্টার্ড নেওয়ার মধ্যে কোনো আগ্রহ দেখলাম না। কিন্তু এখানে যদি আর পাঁচ মিনিট বসে থাকি তাহলে ফ্রান্সিস নির্ঘাত এ কথা টা ডিনের কানে তুলবে। একদিনে দুটো অভিযোগ! এটার পর নিশ্চয় আমাকে বের করে দিবে। তারপর হোস্টেল থেকেও বের করে দিবে, না খেয়ে পথে পথে ঘুরবো, রাস্তায় ঘুমাবো…
ভাবতেই শিউরে উঠলাম। অগত্য লিও কে ছেড়ে উঠতে হল। আনা চলে গিয়েছে। তাই কিছুটা কাজ বাড়তিও করতে হচ্ছে।
.
সমস্ত কাজ শেষে যখন আমার ডিউটি শেষ হল তখন ড্রেস চেঞ্জ করে লিওর কাছে আসলাম। মার্থা হাউজ প্রায় কাস্টমার শূণ্য। দু-এক জন আছে। তারা বেড়িয়ে যাবে যাবে এরকম। কিন্তু লিও…? সে এখনো ঠায় ধরে বসে আছে। ফোন টা টেবিলে রেখে একমনে চাকার মত ঘুরাচ্ছে। আমি যেতেই ঘুরানো বন্ধ করলো। তাকিয়ে দেখলাম কাস্টার্ডের পেয়ালা খালি। তার মানে সে কাস্টার্ড খেয়েছে। মনে মনে খুশি হলাম। কিন্তু প্রকাশ করলাম না। ওকে ডাকলাম
“লিও!”
লিও তাকালো না। শুধু সিট থেকে উঠে বাইরের দিকে হাটা দিল। আমি পিছন থেকে ডাকলাম
“লিও দাড়াও প্লিজ!”
দৌড়ে গেলাম পিছু পিছু। মনে হচ্ছে ঝড়ের আগের থমথমে পরিবেশ টা। লিও ততক্ষণে মার্থা হাউজ ছেড়ে রাস্তায় এসে উঠেছে। খুব দ্রুত পা চালিয়ে হাটছে। আমার পক্ষে ওর সাথে তাল মিলানো একটু কঠিন হয়ে পড়লো। ওর পিছু পিছু হাটতে হাটতে বললাম
“লিও আমার কথা শোন। আমি তোমাকে জানাতে চেয়েছিলাম!”
এটা ডাহা মিথ্যা কথা। আমি কখনোই ওকে জানাতে চাই নি। এর জন্য মনে মনে জিব কেটে তওবা করে নিলাম।
.
বেশ খানিকক্ষন ধরে লিওর পিছু পিছু হাটতে হাটতে হয়রান গিয়েছি। থেমে গেলাম আমি। হাটুতে ভর দিয়ে একটু জিরিয়ে লিও কে ডাকলাম।
“লিও!”
কিন্তু সে সাড়া দিল না। মনে মনে রাগ হল খুব। চারদিকে তাকালাম। হোস্টেলের পথে না হেটে ওর পিছু পিছু চলে এসেছি। বেশ অচেনা জায়গা বলে মনে হচ্ছে। দিন হলে অবশ্যই চিনতাম। কিন্তু রাত হওয়ায় বুঝতে পারছিনা। রাস্তার দ্বারে ল্যাম্পপোস্টের একটু দূরে এক ঝাক ফণিমনসার ঝোপ। ঝোপ টা দেখে মাথায় দুষ্ট বুদ্ধি চাপলো। আস্তে করে কয়েক পা পাশে এগিয়ে ঝোপের পিছনে দাড়ালাম। নিচে নরম সবুজ ঘাস। সু গুলো খুলে আমি ঘাসের উপর বসে পড়লাম। কাটাওয়ালা ফণিমনসা গুলো প্রায় কোমড় ছুই ছুই সমান লম্বা। তাই আমাকে লুকাতে ফণিমনসা গুলো বেশ সাহায্য করছে। আর পাশে রয়েছে ওক গাছ সাড়ি সাড়ি। সেই ওক গাছের ডাল থেকে একটা পেঁচা বড় বড় চোখ নিয়ে আমার দিকে ভুতের ন্যায় তাকিয়ে আছে। ভয়ে ওদিক থেকে দৃষ্টি সরিয়ে লিওর দিকে তাকালাম। সে এখনো সোজা হেটে যাচ্ছে। এখনও বোধ হয় বুঝতে পারে নি যে আমি তার পিছে নেই। বেশ আগ্রহ ভরে লিওর দিকে তাকালাম। সে কি আমাকে খুজবে নাকি খুজবে না সে ব্যাপারে কিছুটা এক্সাইটেড ছিলাম। কিন্তু জানতাম না একটু দূরেই আমার জন্য বিপদ ওত পেতে আছে।
.
বেশ কিছুদুর পর্যন্ত এগিয়ে লিও হঠাৎ থমকে দাড়ালো। তারপর পিছনে তাকিয়েই যেন ভড়কে গেল। তারপর পিছনে কয়েক পা এগিয়ে এসে আমাকে ডাকলো।
“মিইইরা?”
আমি ঝোপের পিছন থেকে শুনছিলাম। মনে মনে বেশ আনন্দ হচ্ছিলো। এতক্ষন আমাকে নাকে দড়ি দিয়ে ঘুরিয়েছে। আর এখন নিজে ঘুরো।
লিও দৌড়ে আবার পিছনে চলে আসতে লাগলো। সাথে আমাকে ডাকতেও লাগলো
“মিইইরা!”
এবার তার কন্ঠে উৎকন্ঠা। বেশ মজাই লাগছে। ভাবলাম আরেকটু দেখি। লিও ডাকতে ডাকতে আমার সামনে চলে এলো। আমি নিজেকে আরেকটু গুটিয়ে নিলাম। যাতে নিজেকে দেখা না যায়।
বেশ হাপাচ্ছে লিও। চোখে মুখে এক রাশ দুশ্চিন্তা। এবার একটু জোরেই বলল
“মিইইরা! তুমি কি আমার সাথে মজা করছো? এরকম বেহুদা মজা আমার একদম পছন্দ হচ্ছে না। বেড়িয়ে আসো বলছি! মিইইরা!”
কিছুক্ষনের জন্য মনে হল লিওর হাতে ধরা খেয়েই যাবো বুঝি। নাহ্! লিও আরেকটু সেদিকে গেল। আমি আগ বাড়িয়ে দেখলাম। সে এখনো ডাকছে। আমার মনে হল আর লুকিয়ে থাকা উচিত না। যথেষ্ট হয়েছে।
এ ভেবে ঝোপ থেকে বেড়িয়ে লিও কে ডাক দিতে যাবো ঠিক সে সময় খুব বিশ্রী গন্ধ ওয়ালা একটা মোটা হাত আমার মুখ চেপে ধরলো। চমকে উঠলাম আমি। অপর হাতে আমার পেট চেপে ধরে আছে। আমি নাড়া চাড়াও করতে পারছি না। আওয়াজ ও করতে পারছি না। অথচ লিও কে স্পষ্ট আমি দেখতে পাচ্ছি। সে এখনো আমাকে ডাকছে অথচ আমি সাড়া দিতে পারছিনা।
আতঙ্কে আমার পুরো শরীর নীল হয়ে আসছে। বলতে পারছি না “কে তুমি? আমাকে ছাড়ো! আমাকে যেতে দাও! লিও আমাকে ডাকছে!”
লোকটি টেনে আমাকে ওক গাছ গুলোর আড়ালে নিয়ে যেতে লাগলো। আমি নিজেকে ছাড়াবার প্রাণপন চেষ্টা করছিলাম। কিন্তু এমন অসুরের মত শক্তির সাথে পেরে উঠছিলাম না। ভয়ে কান্না চলে আসছিলো। মনে মনে চাইছিলাম লিও যেন আবার এদিক টা আসে আর আমি যেন বেঁচে যায়। না হলে আমি মরেই যাবো।
লোকটি আমাকে টেনে নিয়ে যাচ্ছে কোথায়? এখান থেকে চেঁচালেও তো কেউ শুনতে পাবে না।
এটা কি আমার জীবনের শেষ দিন? আমার সাথে কি খুব খারাপ কিছু হতে যাচ্ছে?
ধপাস করে লোকটি আমাকে মাটিতে ফেলে দিলো। নিচে নিশ্চয় কংকর জাতীয় কিছু ছিলো। আমি প্রচন্ড ব্যাথা পেলাম। কিন্তু চিৎকারের সুযোগ টা পেলাম ও না। সামনে তাকিয়ে দেখলাম ষন্ডা মার্কা একটা লোক আমার মুখ চেপে ধরে আছে। শরীর থেকে একটা বিশ্রী গন্ধ বেড়িয়ে আসছে। আমার দিকে তাকিয়ে নোংরা দাত দেখিয়ে বিভৎস হাসি হেসে কিছু বললো। আমি বুঝলাম না। কিন্তু ভয়ে আমার শরীর কুকড়ে এলো। হাত পা ছুড়ে লোকটিকে সরানোর চেষ্টা করছিলাম। কিন্তু আমার দেয়া আঘাত লোকটি গ্রাহ্যই করলো না। এরপর সে আমার স্কার্ফ একটানে খুলে ফেলল। ওটা কোনো পিন দিয়ে আটকানো ছিল না। তাই সহজে খুলে বিভৎস লোকটির হাতে চলে এলো। তা দিয়ে লোকটি আমার মুখ বাঁধতে লাগলো। মুখ বাধার সময় ওর হাত একটু আলগা হয়ে আসায় আমি জোরে একটা চিৎকার দিলাম। কিন্তু পরক্ষনেই লোকটি ভীষন জোরে আমার গালে থাপ্পড় মারলো। এত জোরে থাপ্পড় খেয়ে ব্যাথায় আমার শরীর ককিয়ে উঠলো। মনে হচ্ছে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে আমার গালে। লোকটি স্কার্ফ আমার মুখে গুজে দিয়ে বেধে ফেলল। আমি কাঁদতে শুরু করলাম। গোঙাতে গোঙাতে অনুরোধ করছিলাম আমাকে ছেড়ে দিতে। আমি তার মেয়ে বয়সি হব।
কিন্তু হয়ত আমার ভাবনা গুলো, মিনতি গুলো তার কান পর্যন্ত পৌছাচ্ছিল ও না। সে বিশ্রী ভাবে আমাকে ছুতে লাগলো। এমন ভাবে ছুতে লাগলো যে নিজের উপরই ঘিন ঘিন করতে লাগলো। এরপর লোকটি একহাতে আমার গলা চেপে ধরে রেখে নিজের বেল্ট খুলে ফেললো। আমি শুধু নিঃশব্দে চোখের পানি ফেলছিলাম। মনে হচ্ছিলো মরেই যাবো। এক সেকেন্ডের জন্যও আমার মনে হয় নি আমি এখান থেকে উদ্ধার পাবো। গলা ফাটিয়ে শুধু আল্লাহ কে ডাকতে ইচ্ছা করছিলো। ধোয়াসা ধোয়াসা চারদিক টা। আমি হার মেনে নিচ্ছিলাম।
ঠিক সে সময় ধপাস করে লোকটি আমার গায়ের উপর পড়লো। আমি গলা ফাটিয়ে চিৎকার দিয়ে উঠলাম। কিন্তু সেই চিৎকারের আওয়াজ বাইরে সামান্য গোঙানি ছাড়া আর কিছু হলো না। নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আসছে আমার। লোকটার মুখ এখনো আমার কাধের মধ্যে।
তবে আমার হাত দুটো আলগা হয়ে এলো।
“মিইইরা!”
লি-লিওর কন্ঠ! আমার কাঁপা কাপা হাতে যেন শক্তি ফিরে এলো। ধাক্কা দিতে লাগলাম লোকটিকে।
কিন্তু তার আগেই লোকটিকে যেন আমার উপর থেকে সরিয়ে দেওয়া হল।
“মিইইরা!”
আমি তখনো হাপাচ্ছি। লিও আমার সামনে সেই দেবদূতের মত দাড়িয়ে আছে। আমার বিশ্বাস হচ্ছে না। এখনো ঘোরের মধ্যে আছি। হাত টা একটু উপরে তুললাম। বেশি তুলতে পারলাম না। সব শক্তি যেন ষন্ডা মার্কা লোকটি শুষে নিয়েছে।
লিও আমাকে ডাকলো
“মিইইরা!”
কিছু বলতে চাইছিলাম। পারছিলাম না। লিও হাতের মুটোয় লম্বা বাশের ন্যায় কিছু একটা ধরে ছিলো। যেটা দিয়ে বদ লোকটা কে আঘাত করেছিলো। সেটা ছুড়ে ফেলে আমার দিকে এগিয়ে এলো। আমি এখনো জোরে জোরে নিঃশ্বাস নিচ্ছি। লিও আমার মাথা টা তুলে বুকের কাছে চেপে ধরে স্কার্ফ টা খুলে দিতে লাগলো। ওর বুকে মাথা টা রাখতেই একটা ঝিন ঝিন শব্দ হতে লাগলো। এখনো বিশ্বাস হচ্ছে না আমি নিরাপদ। দুহাতে ওর গেঞ্জি টা ধরলাম। লিও আমার মুখ থেকে স্কার্ফ খুলে দিতেই আমি আবছা ভাবে ডাকলাম
“লি-লিও!”
আমার মুখ টা সে হাতের মুটোয় নিল। আমি ওর দিকে তাকালাম। ওর উৎকন্ঠিত চেহারা দেখে একটা অদ্ভুদ প্রশান্তি তে অন্তরে ছেয়ে গেল।
লিও আমার চোখের দিকে তাকালো। তার দৃষ্টি আমার অন্তর কে ফালা ফালা করে দিচ্ছিলো। গাল বেয়ে কয়েকটা উষ্ণ অশ্রুর ফোটা বেয়ে যেতে লাগলো। চোখের পাতা টিপ টিপ করে লিও ফিসফিসিয়ে বলল
“Are you okay mira?”
মাথা নাড়িয়ে কান্না জড়িত কন্ঠে বললাম
“I-I a-am not ok Leo. I am not ok!”
নিজেকে আর থামাতে পারলাম না। ঝুপ করে লিওকে জড়িয়ে ফুপিয়ে কান্না শুরু করে দিলাম। দু হাতে প্রাণপনে ওকে আকড়ে ধরলাম। যেন বুক ছিড়ে ভিতরে প্রবেশ করলেও আমার শান্তি হবেনা।
আমার ধাক্কায় লিও পড়ে যেতে থাকলেও নিজেকে সামলে নিল। এরপর সেখানে মাটিতে বসে দুহাতে আমাকে টেনে নিল। আমি ওর ঘাড়ে মুখ ডুবিয়ে চোখের পানি, নাকের পানি এক করে দিচ্ছিলাম। তাতে ওর ঘাড়ের অনেকাংশ ভিজে যাচ্ছিলো। কিন্তু আমি ভ্রুক্ষেপ করছিলাম না। শুধু ওর গলা জড়িয়ে আরো শক্ত করে নিজের সাথে চেপে ধরছিলাম যেন এর কোন শেষ নেই। আজই পৃথিবীর শেষ দিন।
.
লিও আমাকে টেনে কোলে তুলে নিল। তারপর নিজের সাথে চেপে ধরে চুপচাপ বসে ছিল। ও ভাবে বসে ছিলাম অনেকক্ষণ। যতক্ষণ আমার মন ভরে কাঁদতে ইচ্ছা হলো ততক্ষণ কাঁদলাম। মনে হচ্ছিলো ওর স্পর্শ কখনোই আমাকে ছেড়ে না যাক। কখনোই না যাক।
.
(চলবে)
.
দেরি হওয়ার জন্য দুঃখিত :'( অনেক তাড়াহুড়ো করে লিখে দিচ্ছি। জানিনা কেমন হয়ছে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here