#আমার_আদরিনী
#আশুথিনী_হাওলাদার (ছদ্মনাম)
পর্ব-১৩
__‘মেঘ ভাইয়া পাপা’
সাদিদের মুখের হাসি থেমে গিয়ে থমথমে ভাব চলে আসে। কিছু না বলে ড্রাইভ করতে থাকে সে। তিয়ানা বাবার থমথমে ভাব দেখে ঘাবড়ে যায়। ভয় হচ্ছে তার কি এরপর কি হবে? চিন্তা হয় তিয়ানার পাপ্পা কে বলে সে ভুল করলো না তো? কিন্তু সে তো সব সিক্রেট সব গুরুত্বপূর্ণ কথা পাপার সাথে শেয়ার করে। তাছাড়া এটা তো তার লাইফের সবেচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সিক্রেট। দাত দিয়ে নখ খোটে তিয়ানা এটা তার বদ অভ্যাস বলা চলে।
কোনো বিষয় চিন্তা হলে নখ খাওয়া তার অভ্যাস। এবং এই অভ্যেসের জন্য তাকে তুলিকা ও মেঘালয়ের অনেক মার খেতে হয়েছে ছোটো বেলায়। যেখানে তার ভাইয়া পাপা তাকে কিছু বলত না। সেখানে মেঘালয় সবসময় এক অদৃশ্য অধিকার খাটায় তার উপর। ভয়ে পেটে গুরুমগুরুম করছে তিয়ানার। ভয়ে ভয়ে ডাকলো,,
__‘পাপা’
সাদিদ কোনো উত্তর না দিয়ে ড্রাইভ করতে ব্যাস্ত। নিরাশ হয় তিয়ানা। অসহয় কন্ঠে বলল,,
__‘আই আম সরি পাপা।”
__‘আমি রিয়েলাইজ করছি এটা খুব খারাপ হয়েছে। কিন্তু! কিন্তু আমি বুঝতে পারিনি কি করে আমার মনে মেঘ ভাইয়াকে নিয়ে এমন ফিলিংস আসছে। আমি তো তাকে এক প্রকার সহ্য করতে পারতাম না পাপা। সেখানে ‘ভালোবেসে’ ফেলেটা আমার কাছে খুব আনস্পেকটেড আর লজ্জাকর ব্যাপার। আমি নিজে খুব হীনমন্যতায় ভুগছি পাপা। এখন যদি তুমিও,,,
থেমে যায় তিয়ানা। গলা আঁটকে আসে তার। কান্নারা গলা ভেদ করে বের হয়ে আসতে চাচ্ছে। কান্না আটকানোর জন্য ঢোক গিলে তিয়ানা। গলা জ্বলে উঠে তার। চোখ থেকে টুপ করে এক ফোটা জল গড়িয়ে পরে নিজেকে অসহয় লাগছে তার। এমন আজব ফিলিংস কেন হলো তার? তাও মেঘলয়ের জন্য। আরও তো কত ছেলে ছিল হ্যান্ডসাম, ব্রিলিয়ান্ট কই? তাদের জন্য তো কোনো ফিলিংস আসেনি তার মনে। মেঘালয়ের বেলা’ই কেন হলো এটা? খুব কি ক্ষতি হতো? যদি এটা না হতো। আজ তার পাপা যখন মেনে নিতে পারেনি। মেঘালয় কখনো জানলেও মেনে নেবে না। উলটো তাকে মেরে দেবে।
এক সপ্তাহ যাবত পরিবারের কারো সাথে কথা বলা বাদ দিয়েছে তিয়ানা। বিশেষ করে মেঘালয়ের সাথে কথা পর্যন্ত বলে না সে এবং তার মুখোমুখিও হয় না। সেই ঘটনার পর সাদিদ তাকে আর কিছু বলেনি। বরং তার সাথে কথা বলা কমিয়ে দিয়েছে। যা তিয়ানার জন্য খুব দুঃখজনক। পাপা তার বেস্ট ফ্রেন্ড সেখানে যদি পাপাই তার সাথে কথা না বলে। তবে তার বাড়িতে থেকে কি লাভ? তাই বাড়িতেও খুব একটা থাকে না সে। দিনের বেশির ভাগ সময় ভার্সিটিতে কাঁটায় সে। ভার্সিটির পাশের লেকে পা ডুবিয়ে বসে আছে তিয়ানা। আজকাল মন ভালো থাকে না তার। সব ছেড়েছুড়ে অন্য কোথাও একটা চলে যেতে ইচ্ছে করছে। কষ্ট হয় দুঃখ হয় তার। পাপাও বুঝলো না তাকে। তার অনুভূতি কে। সে কখনো মুখ ফুটে মেঘালয়কে তার অনুভূতির কথা জানাতে পারবে না। কারণ, সে জানে মেঘলয় তাকে শুধু এবং শুধু মাত্র বোন ভাবে। বুকের ভিতরে যন্ত্রনা হয় তিয়ানার। মনে হচ্ছে বুক পুড়ে যাচ্ছে একটু পানি দরকার সেখানে। কেঁদে দেয় তিয়ানা হঠাৎ পাশে কারো উপস্থিতি পেয়ে তাঁকায়। অবন্তীকে পাশে বসতে দেখে কপাল কুচকায় তিয়ানা। তবে কিছু না বলে লেকের পানি দেখতে থাকে। তিয়ানা রাগ না করায় অবাক হয় অবন্তী। একটু বেশি’ই অবাক হয়। সেই ঘটনার পর তিয়ানা তাকে সহ্য করতে পারতো না। আজ পাশে বসায় তিয়ানা তাকে কিছু বলল না। অবাক করা বিষয়। তিয়ানাকে ভালো করে লক্ষ করে অবন্তী চোখমুখ ফুলে গেছে কেমন। গোপনে দীর্ঘশ্বাস ফেলে অবন্তী। তিয়ানাকে উদ্দেশ্য করে বলল,,
__‘তোর পাশে বসলাম। তার জন্য আমাকে বকবি না?’
__‘না’ ( গম্ভীর স্বরে উত্তর দেয় তিয়ানা)
__‘তোর মন খারাপ? ‘
__‘তেমন কিছু না।’
মৃদু হাসে অবন্তী। হেসে বলল,
__‘আমার কাছ থেকে লুকাচ্ছিস? তোর মুখ দেখেই আমি তোর মনের কথা বুঝতে পারি।’
হালকা হাসে তিয়ানা। অবন্তীর দিকে ফিরে তার চোখে চোখ রেখে প্রশ্ন করে,,
__‘একটা প্রশ্নের উত্তর দিবি?’
__‘কি? বল?’
__‘আমার সাথে ওমনটা করছিলি কেন? আমার সাথে বেইমানি করছিস কেন? তুই তো আমার বন্ধু ছিলি। কী করে পারলি সেটা করতে?
চোখের কোনে জল আসে অবন্তীর। গলা ধরে আসে তার। নিজেকে সামলে বলল,
__‘আমি ভাবতে পারিনি তিনু এমন কিছু হবে। বিশ্বাস কর আমি তোর সাথে বেইমানি করিনি। তুই তো আমার আমার বেস্টফ্রেন্ড। আমার জান! তোর সাথে কি করে আমি বেইমানি করবো। বল? আমি তা স্বপ্নেও ভাবতে পারি না কখনো।’
তিন বছর পর আজ তিয়ানার খুব ইচ্ছে করলো। অবন্তীর থেকে আসল কারন জানতে। একটা সুযোগ তাকে দিতে।
চোখের কোণের জল মুছে বলল অবন্তী,,
__‘তুই তো জানিস শুভ ভাইয়া আমার মামাতো ভাই। সে যখন বলল, তোকে ভালোবেসে । সেটা তোকে জানাতে চায়। প্রথমে আমি তার কথা গুরুত্ব দেয়নি কিন্তু শুভ ভাইয়া প্রায় আমাদের বাড়িতে আসত। আমাকে অনেক রিকুয়েষ্ট করতো। আমি ভাবতাম ভাইয়া হয়তো ফ্লাটিং করছে কিন্তু ভাইয়া সিরিয়াস ছিল এমন কি তোর জন্য সুইসাইড অব্দি করতে যাচ্ছিল। ছোটো ছিলাম বুঝতে পারিনি সেটা একটা চাল ছিল। ভাইয়ার কথা মেনে নেই। তবে শর্ত ছিল তুই যদি ভাইয়া প্রপোজ এক্সপেট না করিস তাহলে আমার কিছু করার নেই। ভাইয়া একটা হোটেলে রুম বুকিং করে। রুমটাকে সাজিয়ে নাকি কেক কেঁটে তোকে সারপ্রাইজ দেবে। তাই তোকে ওই হোটেল নিয়ে এসেছিলাম। তোকে রুমে দিয়ে আসার পর আমার ফোনে কল আসে আমার ভাইয়া নাকি এক্সিডেন্ট করছে। আমি কি করব বুঝতে পারছিলাম না। ভাইয়ার এক্সিডেন্টের কথা শুনে আমি ছুটে হস্পিটালে চলে যাই। আমি কখনো বুঝতে পারিনি শুভ ভাইয়া এতো নিচে নামবে। সেদিন তোর কাছে ফেরার আমার কোনো উপায় ছিল না তিনু। সেদিন হস্পিটালে আমি পৌঁছানোর আগে আমার ভাইয়া মারা গিয়েছিল।”
কথা শেষ করে কাঁদতে থাকে অবন্তী। সব শুনে নির্বাক হয়ে যায় তিয়ানা।
সেদিনের কথা ভাবলে আজও ভয়ে কেঁপে ওঠে তিয়ানা। অবন্তী তাকে রুমে শুভর সাথে একা রেখে যাওয়ার পর আর ফেরেনি। সে যখন শুভর করা প্রপোজ এক্সেপ্ট না করে তাকে ফিরয়ে দেয়। তখন সুযোগ পেয়ে শুভ তাকে মলেস্ট করার চেষ্টা করে। ঠিক সময় তিলাত চলে আসায় সে যাত্রায় তিয়ামা বেঁচে যায়। তিলাতের ফ্রেন্ড নাকি তিয়ানাকে হোটেলে যেতে দেখে তাকে জানিয়েছিল। সেদিন শুভকে মেরে প্রায় আধমরা করে ফেলেছিল তিলাত। সেদিনের পর ভয়ে একটা ট্রমার মধ্যে চলে যায় তিয়ানা। সতেরো বছর বয়সে ওমন একটা বাজে ঘটনা তার কিশোরী মনে খুব বাজে ভাবে দাগ কাটে। তবে সেসময়ে তিলাত তাকে আগলে নেয়। এমনকি আজ অব্দি ওই ঘটনার কথা কেউ জানতে পারেনি। তিলাত কাউকে জানতে দেয়নি আর না তিয়ানাকে জানাতে দিয়েছে।
অবন্তীকে কিছু না বলে উঠে চলে যায় তিয়ানা। তিয়ানার যাওয়ার দিকে ব্যাথিত দৃষ্টিতে তাঁকিয়ে ভারি শ্বাস ফেলে অবন্তী।
রাত আটটা প্রায়। সারাদিন বাইরে কাঁটিয়ে বাড়ি ফিরছে তিয়ানা। বাইক পার্ক করে বাড়িতে ঢুকে দেখে বাড়ি বিয়ের বাড়ির মতো সাজানো। বেশ অবাক হয় তিয়ানা। ড্রয়িং রুমে গিয়ে বাড়ির সবাইকে এক জোট হয়ে বসে থাকতে দেখে আরও একবার অবাক হয় তিয়ানা। বিস্মিত কন্ঠে মা’কে প্রশ্ন করলো,,
__‘আজ কি মাম্মাম?’
__‘তোমার বিয়ে’
চলবে?
(প্রথম কিছু কথা কিলিয়ার করি। অবন্তীকে আমি প্রথমে ভিলেন বানাতে চাইছিলাম। যেখানে নায়ক নিয়ে কাড়াকাড়ি চলবে এবং ফার্স্ট পর্বে তেমন সিন ছিল। পরে ভাবলাম সেটা কমন প্লট হয়ে যাবে তাই অবন্তীকে ফ্রেন্ডড বানিয়ে দিলাম। দ্বিতীয় চাইছিলাম তিয়ানা কে তুলিকার মেয়ে বানাবো কিন্তু মনে হলো ওটা ভালো লাগবেনা তাই বাদ দিলাম। পরে শুভর চরিত্রে অবন্তীর ভাইকে দিতে চাইছিলাম। পরে ভাবলাম ব্যাচারা মরেই তো গেছে শুধু শুধু ফাসিয়ে দেব। তাই বাদ দিলাম। আর তিয়ানাকে বাঁচানোটা তিলাতের আগে ভাবছিলাম মেঘালয়কে দেব। পরে ভাবলাম মেঘালয় তিয়ানার নায়ক বলে শুধু ওকে’ই টানবো কেন? ভাই আছে কি করতে? সব যদি নায়ক করে। এখানে ভাই বোনকে বাঁচাবে তাতে আরও সুন্দর হবে মাধুর্য বাড়বে তাই তিলাতকে দিলাম। সব শেষে ভাবছিলাম মেঘালয়কে নিয়ে একটা রাগি রাগি সিন দেব কেন এত দিন তার থেকে লুকিয়ে তিয়ানা। কিন্তু তা ভালো লাগলো না তাই বিয়েতে গেলাম। এখন ভাব্বার বিষয় বিয়ে কার সাথে? আর মেঘালয় তিয়ানার বিয়ে জানলে কি রিয়াক্ট করবে। )
(শেষে আমার কিছু কথা। অনেকে গল্প পড়ার সময় ভাবে ‘লেখনি’ কি ভাবছিল? এই গল্প লেখার আগে ঠিক কেমন কেমন কাহিনি সাজিয়ে ছিল লেখনী। তাই তাদের কৌতুহল দূর করার জন্য আমি কেমন কেমন গল্পটা ভাবছিলাম বলে দিলাম। আর শেষে অবশ্যই অবশ্যই ভালো ভালো মন্তব্য চাচ্ছি। এই যে আমি এত অসুস্থ হওয়া সত্যেও গল্প দিচ্ছি এতটুকু তো আশা করা যায় কি যায় না?)