আমার_আদরিনী আশুথিনী_হাওলাদার (ছদ্মনাম) পর্ব-১৪

#আমার_আদরিনী
আশুথিনী_হাওলাদার (ছদ্মনাম)
পর্ব-১৪
বিস্মিত কন্ঠে প্রশ্ন করে তিয়ানা,
__‘আজ কি মাম্মাম?
__‘তোমার বিয়ে।’
__‘হোয়াট?’
বিস্মিত হয় তিয়ানা। তার বিয়ে সে নিজে’ই জানে না। দাতে দাত চেপে রাগ নিয়ে বলল,
__‘এসব মজার কোনো মানে হয় না পাপা। আমি আমার ঘরে যাচ্ছি। মাম্মাম আমাকে কেউ না ডাকবে না। একা থাকতে চাচ্ছি।’
কথা শেষ করে নিজ ঘরে দিকে যায় তিয়ানা। তার যাওয়ার দিকে তাঁকিয়ে তিলাত বলল,,
__‘আজ তোর বিয়ে এটা সত্যি তিনু।’
থেমে যায় তিয়ানা। রাগে শরীর জ্বলে ওঠে তার। রাত বিরাতে এসব কি ধরনের ফাইজলামি হচ্ছে তার সাথে।পাশে থাকা ফুলদানির টপ ফেলে দেয় রাগে। চেঁচিয়ে বলল,,
__‘হচ্ছে কি এসব? আমি এসব নিতে পারছি না ভাইয়া। কীসের বিয়ে? কার সাথে বিয়ে? আমি সবে অনার্স সেকেন্ড ইয়ায়ের স্টুডেন্ট আমার পুরু লাইফ পরে আছে। আমার একটা ক্যারিয়ার আছে।’
গম্ভীর মুখে বলল সাদিদ,
__‘বিয়ের পরও ক্যারিয়ার নিয়ে ভাবা যাবে।’
তিয়ানার মাথায় দ্বিগুণ রাগ উঠে যায়। দরজার অন্য পাশে থাকা ফুলদানি তুলেও ছুড়ে মারে ফ্লোরে। তবে বাসার সবাই তাতে নিশ্চুপ যেন কিছু হয়নি। এমন ভাব বিরাজমান সবার মধ্যে। তাতে দ্বিগুন রাগ বেড়ে যায় তিয়ানার। রেগে বলল,
__‘হচ্ছে কি এসব? মাম্মিম হচ্ছে কি এটা? (মৌমিতাকে উদ্দেশ্য করে)
__‘বাবার কথায় রাজি হয়ে যাও তিয়ানা। তোমার ভালোর জন্য বলছেন তিনি।’
রাগে কাঁন্না চলে আসে তিয়ানার সবাই তাকে একই কথা বলে যাচ্ছে। আসেপাশে তাঁকায় তিয়ানা। না মেঘালয়ের দেখা নেই। এখন কি করবে সে? নিজের পাপার উপর রাগ হয় তিয়ানর। যেখানে সে নিজের মনের কথা পাপা কে জানালো। জেনেও কেন এমনটা করছে পাপা। অসহায় চোখে অভীকের দিকে চেয়ে বলল,
__‘ পাপ্পি সবার মতো তুমিও বলবে মেনে নিতে? মাম্মিমকে যেখানে তার পড়াশুনা শেষের পর বিয়ে করেছো। সেখানে আমার সাথে কেন এসব হচ্ছে?
অভীক শান্ত কন্ঠে উত্তর দেয়,,
__‘যা হচ্ছে মেনে নাও। আমরা তোমার খারাপ চাই না। তুমি খুশি হবে, সুখি হবে।’
অভীকের উত্তরে আশাহত হয় তিয়ানা। তুলিকার দিকে চেয়ে বলল,
__‘আম্মু এখন তুমিও বলবে যা হচ্ছে মেনে নিতে?’
উত্তরের আশা না করে বলল তিয়ানা,,
__‘ওকে ফাইন আমিও বলছি আমি কোনো বিয়ে টিয়ে করবো না। এটা আমার লাইফ। আর আমার লাইফ আমি কীভাবে লিড করবো সম্পুর্ন আমার ব্যাপার। আমি এডাল্ট পারসন। দরকার হলে আমি বাড়ি ছাড়বো। তাই বলছি এই কাজি টাজি বিদায় করো।’
নিজের ঘরে চলে যায় তিয়ানা। সাদিদ তার উদ্দেশ্য করে বলল,
__‘তাহলে আমিও তোমায় ত্যাজ্য সন্তান করবো। আমি তাদের কথা দিয়েছি। সাদিদ রহমান নিজের কথার খেলাপ করে না।’
থমকে যায় তিয়ানা মাথা ঘুরে উঠে তার। সামন্য এক বিয়ের জন্য পাপা তাকে ত্যাজ্য সন্তান করার কথা অব্দি বলল। মুখ ফুটে টু শব্দ বের করে না তিয়ানা। মুর্তির মতো দাঁড়িয়ে থাকে। পিছন ফিরেও সাদিদকে দেখে না। সাদিদ ঠান্ডা স্বরে তুলিকা বলল,
__‘তিয়ানা কে রেডি করে নিয়ে এসো।’

‘নিজ ঘরে ফুলে সাজানো বিছানায় বসে আছে তিয়ানা। কিছুক্ষণ আগে তার বিয়ে হয়েছে। কে সে? কী নাম কিচ্ছু জানে না সে। কাজি তখন বললেও কানে নেয়নি সে। তার চোখ শুধু মেঘালয়কে খুজে বেড়িয়েছে। পাশে বসা লোকটাকে দেখার বিন্দু মাত্র আগ্রহ বা ইচ্ছে তার জাগেনি। যেখানে সে নিজের পছন্দে সব কিছু করেছে তার লাইফের। সেখানে নিজের লাইফ পার্টনার সে নিজে বেছে নিতে পারছে না। কারো সাথে এক বিন্দু কথাও সে বলেনি। শুধু একটা শব্দ ‘কবুল’ বলা ছাড়া।
দরজা খোলার শব্দে কেঁপে ওঠে তিয়ানা। তবে নিজের অবস্থান পাল্টায় না। আর না চোখহ তুলে মানুষটিকে দেখে। দেখে কি হবে? যাকে চেনে না জানে না কি করে তাকে মেনে নেবে সে মেঘালয়কে ভুলে। কান্না পায় তিয়ানার।
__‘তোরা বাপ-মেয়ে মিলে আমার বাপকে ফুসলিয়ে আমার বিরুদ্ধে শরজন্তটা করলি কি করে?’
কষ্ট মরে যাই মরে যাই অবস্থা তিয়ানার। এরমধ্যে হঠাৎ মেঘালয়ের কন্ঠস্বর শুনে বেকুব হয়ে যায় তিয়ানা। চোখ তুলে সামনের লোকটিকে দেখে মুখ ‘হা’ হয়ে যায় তিয়ানার। মেঘালয় তার দিকে বাম ভ্রু কুচকে বিরক্তি নিয়ে তাঁকিয়ে। কয়েকবার চোখ পিটপিট করে তাকায় তিয়ানা। মেঘালয়ের বিরহে ভুল দেখছে না তো। ভালো করে চোখ ডলে তাঁকিয়ে দেখে ভুল না সয়ং মেঘালয় তার সম্মুখে বিয়ের শেরওয়ানি পরে মাথা পাগড়ি পরে দাঁড়ানো। বিস্ময়ে কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে যায় তিয়ানা।
মেঘালয় মাথার পাগড়ি খুলে বিছানায় ছুড়ে মেরে বলল,
__‘ট্যাচু হয়ে আছিস কেন? আমায় জীবনে দেখিসনি? নাকি আমার নতুন রুপ বের হইছে?’
থতমত খেয়ে যায় তিয়ানা। আমতা আমতা করে বলল,
__‘তুমি সত্যি মেঘভাইয়া?’
__‘নাহ! তোর বর।’
__‘আমি কি স্বপ্নে দেখছি ভাইয়া?’
মেঘালয় তিয়ানার কপালে টোক্কা দিয়ে বলল,
__‘শুধু স্বপ্ন না দিবা স্বপ্ন দেখছিস।’
হতবিহ্বল হয়ে যায় তিয়ানা। কি হচ্ছে এসব? কথা শেষ করে বিছানায় আরাম করে বসে মেঘালয়। বিছানার উপর পা তুলে পায়ের কেডস খুলতে থাকে সে। ততক্ষনে তিয়ানা বিস্মিত ভাব কাঁটিয়ে হতবম্ব কন্ঠে চেচিয়ে বলল,
__‘ভাইয়া আপনি আমার ঘরে ক্যান? আমার জামাই কই?’
তিয়ানার চিৎকারে বিরক্ত হয় মেঘালয়। বিছানায় সোজা টানটান হয়ে শুয়ে বলল,
__‘তোর সামনে।’
আহমক হয়ে যায় তিয়ানা। বলল,
__‘মানে?’
__‘বলদ! আমায় দেখে বর বর লাগে না? নাকি বরের রোল প্লে করতে হবে? বাসর ঘরে রোম্যান্স করে।’
থতমত খেয়ে যায় তিয়ানা। হতবাক হয়ে বলল,,
__‘ভাইয়া আপনি আমার জামাই?’
ডান হাতের তালু দিয়ে কপাল টাকায় মেঘালয়। বলল,
__‘এই জন্যই তোকে আমি বিয়ে করতে চায়নি। বউ যদি কথায় কথায় ‘ভাইয়া ভাইয়া’ করে তাহলে বউ বউ ফিলিংস না পেয়ে বোন বোন ফিলিংস পেতে হবে। আমার বোন না বউ চাই। আমার বাপ যে ক্যান বুঝলো না।’
মেঘালয়ের বকা আমলে নেয় না তিয়ানা। সে মুখে হাত দিয়ে হতবাক হয়ে মেঘালয়ের দিকে চেয়ে আছে। কি থেকে কি হয়ে গেল মাথায় ঢুকছে না তার। মেঘালয়ের সাথে’ই যখন তার বিয়ে তাকে কেন জানানো হয়নি?
মেঘালয়ে তার দিকে তিয়ানাকে একদৃষ্টিতে চেয়ে থাকতে দেখে তিয়ানার মাথায় থাপ্পড় মেরে বলল,,
__‘এই উজবুক’
রাগ হয় তিয়ানার রেগে বলল,
__‘ভাইয়ায়ায়ায়া’
মেঘালয় আবার মারে তাকে। চোখহ পাঁকিয়ে তাঁকায় তিয়ানা। তাকে পাত্তা না দিয়ে বলল মেঘালয়,,
__‘যতবার ভাইয়া ডাকবি ততোবার মার খাবি। আমি নিজের বউয়ের মুখ থেকে ভাইয়া ডাক শুনতে পারবো না। এতো ভদ্রলোক আমি নই।
মেঘালয়ের মুখ থেকে ‘বউ’ শব্দটা শুনে শিউরে ওঠে তিয়ানা। মেঘালয়ের দিক থেকে চোখ সরিয়ে আশেপাশে তাঁকায় হঠাৎ লজ্জা লাগছে তার। মেঘালয় শোয়া থেকে হালকা উঠে তিয়ানাকে পর্যবেক্ষণ করে বলল,,
__‘তিনু তুই কি লজ্জা পাচ্ছিস?’
মেঘালয়ের ঠোঁট কাঁটা প্রশ্নে লজ্জা উড়ে যায় তিয়ানার। মুখ কাচুমাচু করে ফেলে সে। মেঘালয় বলল,
__‘এভাবে বসে না থেকে স্বামী সেবা কর। আমার পা টিপে দে তো।
দুঃখি কন্ঠে বলল মেঘালয়,,
__‘ কোনো দিন তো বোন হিসেবে এক গ্লাস পানি গড়িয়েও দিসনি। এখন কপালে কে আছে কে জানে? এখন তো বোন থেকে সোজা বউতে চলে গেছোস। তোরা বাপ-মেয়ে মিলে আমার বাপ কে নিশ্চয়ই কোনো কালো জাদু করে আমায় ফাসাইছোস।

চলবে?
(দুইদিন দেইনায় তাই আজ দুটো পর্ব দিলাম অবশ্য একটু দেরী হলো। আর হ্যা বিয়েটা মেঘালয়ের সাথে’ই ছিল 😊😊😊 তাছাড়া এক আপু বোনাস পার্ট চাইছিল। তাই দিলাম। আরোও আগেই দিতাম কিন্তু লেখা শুরু করার পর থেকেই এক জনের পর একজন কল দিচ্ছিল আমার আত্মিয়রা আম্মুর সাথে কথা বলার জন্য। তাই দেরী হইছে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here