আমার_আদরিনী
আশুথিনী_হাওলাদার (ছদ্মনাম)
পর্ব-১৯
অফিসে আসলেও কাজে মনোযোগ দিতে পারছে না সাদিদ। খারাপ লাগছে তার, কাল রাতে তুলিকাকে তার বাবা তুলে খুঁচিয়ে কথা বলা উচিত হয়নি। কিন্তু! কি করতো সে? রাগ উঠে গিয়েছিল। তারও কষ্ট হয় তুলিকাকে অবহেলা করতে। কিন্তু যতবার সে ভালোবেসে তুলিকার কাছে যেতে চেয়েছে ততোবার তার মস্তিষ্ক তাকে জানান দিয়েছে তুলিকা তাকে ঠকিয়েছে। তাদের ভালোবাসাকে ঠকিয়েছে তার বিশ্বাস ভেঙ্গেছে নিজের বোনের কথা ভাবতে গিয়ে তাকে ঠঁকিয়েছে। কি করে ভুলবে সে? সেইদিনটর কথা? যেদিন, সে তুলিকাকে তার বউ সেজে না দেখে তিয়াসাকে দেখেছিল। অতীতে ডুব দেয় সাদিদ।
‘অতীত’
বিয়ের সব নিয়ম কানুন শেষ করে তিয়াসাকে সাদিদের ঘরে নিয়ে আসা হয়। সাদিদ আগে থেকে ঘরে বসে অপেক্ষা করছিল তার নতুন বউকে কনে সাজে কেমন লাগছে সেটা দেখার জন্য। বিয়ের পর এখন অব্দি একবারও তুলিকাকে দেখেনি সে। বাসর ঘরে মন ভরে দেখার জন্য। তিয়াসা ঘরে আসা মাত্র সাদিদ ঘরের দরজায় খিল দিয়ে তাকে জাপটে ধরে। শেষ অব্দি সে নিজের ভালোবাসাকে বউ করে নিজের করে আনতে পেরেছে। পৃথিবীর সবচেয়ে সুখি মানুষ মনে হচ্ছিলো নিজেকে। কিন্তু, জড়িয়ে ধরা তুলিকাকে ছুয়ে অপরিচিত লাগছে তার। ভ্রু কুচকে ফেলে সাদিদ। এক ঝটকায় তিয়াসাকে নিজের থেকে ছাড়িয়ে মুখের ঘোমটা তুলে সে। ঘোমটা আড়ালে তিয়াসাকে দেখে রেগে যায় সাদিদ। সাথে অবাক হয় সে তুলিকার জায়গায় তিয়াসা কেন? মাথার রগ টগবগ করে ওঠে তার। তিয়াসাকে এক ঝঁটকায় দূরে ছুড়ে মারে নিজের থেকে। রাগে গিয়ে ধমকে প্রশ্ন করলো,,
__‘তুমি এখানে কেন? তুলি কোথায়?’
ভয় পেয়ে যায় তিয়াসা। আবেগের বশে বিয়ে করে আসলেও এবার সাদিদকে কীভাবে সামলাবে সে? ভয়ে ভয়ে বলল,,
__‘কী বলছো তুমি? আমি’ই তো তুলি।’
রাগ উঠে যায় সাদিদের নিজেকে সামলে শান্ত কন্ঠে বলল,,
__‘তোমরা দু’বোন কি আবার মজা শুরু করলে আমার সাথে! তিয়াসা তুলি কোথায়? তুলিকে বের হয়ে আসতে বলো। সব সময় মজা করলেও আজ এসবে আমি খুব বিরক্ত হচ্ছি।
সাদিদের শান্ত স্বর শুনে হাত-পা ঠান্ডা হয়ে যায় তিয়াসার। ভয়ে কেঁপে উঠে সে বলল,,
__‘তিয়াসা এখানে আসবে কি করে আমি তো তুলি।’
রাগ কন্ট্রোল করতে পারেনা সাদিদ। পাশে থাকা টেবিল ল্যাম্প তুলে আঁছড়ে মারে। রাগি স্বরে বলল সাদিদ,
__‘তুলি কোথায় তিয়াসা?’
ভয়ে ভয়ে উত্তর দেয় তিয়াসা,
__‘ও’ চলে গেছে।’
ভ্রুকুটি করে ফেলে সাদিদ। প্রশ্ন করলো,
__‘মানে?’
__‘ম্মমানে তুলি তোমাকে বিয়ে করতে চায় না তাই চলে গেছে?’
রাগে শরীর কাঁপছে সাদিদের। তুলিকাকে হারানোর অজানা ভয় অনুভব হচ্ছে তার। চিল্লিয়ে ওঠে সাদিদ,,
__‘সব সত্যি বলো তিয়াসা। তুমি এখানে কি করছো? তুলি কোথায়? সব সত্যি বলবে। তুমি আমাকে খুব ভালো করে চিনো তিয়াসা। ফল ভালো হবে না। আবার বলছি সত্যি বলো তুলি কোথায়?
ভয়ে ঢোক গিলে তিয়াসা। ভয়ে পেয়েকেঁদে ফেলে সে এখন নিজের প্রতি আফসোস হচ্ছে এমনটা করার জন্য। সাদিদ কোনো দিন মানবে না তাকে। ভয় পেয়ে সব বলে দেয় সাদিদকে,,
__‘তুলি আমেরিকা চলে গেছে আমার জন্য। কারন আমি তোমাকে ভালোবাসি।’
বুকে মুচড়ে উঠে সাদিদের। সব কিছু অন্ধকার লাগছে তার। ধঁরে আসা কন্ঠে প্রশ্ন করলো,
__‘কখনো গেছে?’
__‘আমাদের বিয়ের কিছুক্ষন আগে’
আরও কিছু বলে তিয়াসা তবে সাদিদের কানে সেসব যায় না। তার মস্তিষ্কে বার বার একটা শব্দ রিপিট হচ্ছে ‘আমাদের বিয়ের কিছুক্ষন আগে’।
সেদিন রাতে সাদিদ একেরপর এক কল করে তুলিকার ফোনে কিন্তু বন্ধ। এরপর কখনো সে তুলিকার সাথে যোগাযোগ করতে পারেনি বহুবছরে। শুধু তার একটা প্রশ্ন করার ছিল তুলিকাকে, ‘আমাকে কেন ঠকালে?’
কিন্তু তুলিকার নাগাল সে বহুবছরে পায়নি। তবে তিয়াসাকেও সে মেনে নেয়নি। বড়লোক বাবার সন্তান হওয়ায় টাকা-পয়সার অভাব ছিল না সাদিদের। তাই সর্বক্ষণ বাড়ে পড়ে থাকতো। কখনো বাড়ি ফিরতো বা কখনো না। এভাবে কেঁটে যায় তিন বছরের অধীক সময়। সাদিদের কোনো পরিবর্তন ছিল না। অফিসে যেত কাজ করতো বাকি সময় বাড়ে মদ গিলে কাঁটাতো। তিয়াসাও ততোদিনে বুঝতে পারে আবেগে বশে নিজেকে সহ তিনটে জীবন নষ্ট করেছে সে। তবে তার কিছু করার ছিল না। সেও তুলিকার সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেছে কিন্তু তুলিকাকে পাওয়া যায়না। হয়তো বোনের প্রতি অভিমান বা ঘৃনায় তুলিকা নিজেকে ধরা দেয়নি। প্রতিদিনকার মতো’ই ড্রিংক করে বাড়ি ফেরে সাদিদ। সেদিন তিয়াসা বোনের কথা ভেবে তুলিকার পুরোনো শাড়ি পরেছিল যা সাদিদ তুলিকাকে উপহার দিয়েছিল। বিয়ের তিন বছরেরও অধিক সময় পর সাদিদ নেশা করা অবস্থায় তিয়াসাকে তুলিকা ভেবে নিজের কাছে টেনে নিয়েছিল। স্বামীর একটু ভালোবাসা, স্পর্শ পাওয়ার লোভে সাদিদকে বাঁধা দেয়না তিয়াসা।
তার ফল সরুফ তিলাতের জন্ম। তিয়াসাকে অবহেলা করলেও নিজের সন্তানকে অবহেলা করতে পারেনা সাদিদ। মেনে নেয় তিলাতকে তবে সেদিনের পর তিয়াসাকে নিজের আশেপাশে আসতে দিতো না সাদিদ। এমন কি! নিজের ঘর তিয়াসাকে ছেড়ে দিয়ে সে নিজে অন্য ঘরে থাকা শুরু করে।”
শার্ট, জিন্স পরে ডাইনিং টেবিলে আসন পেতে বসে খাচ্ছে তিয়ানা। তিলাত এসে তার মাথায় মেরে বলে,,
__‘কাল না তোর বিয়ে হলো। কই একটু নতুন বউ! নতুন বউ! ভাব নিয়ে থাকবি না তা নিজের রুপে ফিরে এলি।’
বিরক্তি নিয়ে বলে উঠলো তিয়ানা,,
__‘তুইও তো নতুন শ্যালোক হইছোস তো যা না তোর জামাইবাবুর ঠ্যাং ধরে ঝুঁইলা পর।’
__‘একটা থাপ্পড় মারবো। বেয়াদপ! বড় ভাইয়ের সাথে কীভাবে কথা বলতে হয় জানিস না।’
__‘আমি তোর সাথে কথা বলতে চাচ্ছিনা ভাইয়া। তুই সর আমার সামনে থেকে। আমি খুব ভালো করে জানি তুই আর মেঘ ভাইয়া মিলে আমায় ফাসিয়েছোস।’
তিলাত মুখে হাত দিয়ে। তাচ্ছিল্য স্বরে বলল,
__‘ছি! তিনু ছি! নিজের বরকে কেউ ভাইয়া বলে?’
তিয়ানা অবাক হওয়ার ভান ধরে বলে,
__‘কে বর? ওই খারুচটা কে আমি জীবনে আমার জামাই হিসেবে মানবো না। ‘ওকে’ আমি ডিলিট করে দেব।’
তিলাত চোখ মুখ কুচকে প্রশ্ন করলো,
__‚হোয়াট! ডিলিট করে দিবি মানে?’
তিয়ানা কোনো উত্তর না দিয়ে খাবার প্লেট ঠাস করে টেবিলের উপর রেখে জগ তুলে পানি খেয়ে বাইকের চাবি আংগুলে ঘুরোতে ঘুরোতে তিলাতকে কোনো পাত্তা না দিয়ে মেইন ডোর থেকে বেড়িয়ে যায়।
তিলাত মাথায় হাত দিয়ে সোফায় বসে পরে। বিড়বিড় করে বলল,,
__‘তোর কপালে দুঃখ আছে জামাই বাবু।’
ক্যাম্পাসের এক পাশে বেঞ্চি তে মন খারাপ করে বসে আছে অবন্তী। তিয়ানা কাল তাকে কিছু না বলে চলে গেল কিচ্ছুটি বলল না। সে সারা রাত আশায় ছিল এই বুঝি তিয়ানা তাকে ফোন করবে। কিন্তু! দীর্ঘশ্বাস ফেলে অবন্তী। তিয়ানা হয়তো তার কথা বিশ্বাস করেনি । বিশ্বাস করার কথাও না।
__‘কি ভাবুকরানী কি করছিস এখানে একা একা?’
ভাবনার মধ্যে হঠাৎ তিয়ানার কন্ঠস্বর শুনে পাশে তাঁকায় অবন্তী। তিয়ানা ঠোঁটে হাসি নিয়ে তার দিকে চেয়ে আছে। অবন্তীকে অবাক করে তিয়ানা তার কাঁধ জড়িতে ধরে বলল,,
__‘যা হইছে ভুলে যা অন্তী। সব আগের মতো করেনে।’
চোখে জল চলে আসে অবন্তীর হেসে বলল,,
__‘তুই আমাকে ক্ষমা করেছিস?’
হেসে বলল তিয়ানা,,
__‘না তোকে কেন ক্ষমা করবো? ভার্সিটির শুরু থেকে তোর চামচা গুলোকে নিয়ে আমায় অনেক জ্বালিয়েছিস। সেটা আমি ভুলিনায়।
হাসে অবন্তী তার সাথে তাল মিলিয়ে তিয়ানাও হাসে অনেক বছর বুকের মধ্যের বন্ধু হারানোর যন্ত্রণাটা সরলো দু’জনের।
পিছন থেকে রাবিন বলে উঠলো,,
__‘তোকে বলেছিলাম তিনু আমাদের চামচা বলবি না। আমরা ফ্রেন্ডস।’
তিয়ানা কপাল কুচকে পিছনে ফিরে বলল,,
__‘হাজার বার বলবো তোরা চামচা। কি করবি তুই?’
রবিন হেসে বলল,
__‘না আজ আর কিছু বলবো না। তোদের মধ্যের মান-অভিমান শেষ হলো তাতেই খুশি।’
চলবে?
(নাইস নেক্সট না বলে অন্য কিছু বলেন খুশি হবো। যেমন আজকের পর্বে আপনাদের কি কি ভালো লাগছে কোনটা খারাপ লাগছে বা আমার কোনো ভুল ত্রুটি সেসব মন্তব্য করেন তাতে আমি খুশি হবো। আর হ্যা রিচেক করিনি ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। ভালো রেসপন্স আসলে ভালো মন্তব্য করলে লেখার আগ্রহ বাড়ে। অনেকে বলেন বড় দিতে কিন্তু এই এক হাজার ওয়ার্ড লিখতেই আমার প্রায় তিন ঘন্টা লেগে যায়)