আমার_আদরিনী আশুথিনী_হাওলাদার (ছদ্মনাম) পর্ব-১৮

আমার_আদরিনী
আশুথিনী_হাওলাদার (ছদ্মনাম)
পর্ব-১৮
সাদিদ কিচেনের সামনে এসে ঘুরঘুর করছে। তবে তুলিকার সেদিকে মন নেই। নিজের মনে কাজ করছে সে। কাল রাত থেকে তুলিকা সাদিদের সাথে কোনো কথা বলেনি। তার বলতে ইচ্ছে হয়নি। সে যে ভুল করেছে তার শাস্তি সে গত ৩২ বছর ধরে পেয়ে এসেছে। তিন যুগের কাছাকাছি সময় ধরে। তারপরও তার শাস্তি শেষ হয়নি। ইদানিং হাপিয়ে উঠেছে তুলিকা। গত ৩২ বছরে সুখ ঠিক কি জিনিস সে বুঝতে পারেনি। জীবনের অর্ধেকের বেশি সময় অবহেলা পেয়ে পেয়ে কাঁটিয়ে দিয়েছে সে। সেদিন কি করতো তুলিকা? নিজের বোনকে মরতে দিতো? বোনের লাশ ঢেংগিয়ে নিজের ভালোবাসার মানুষকে বিয়ে করে ড্যাং ড্যাং করতে করতে শশুর বাড়ি যেত সে। তিয়াসা নিজের বোনের সুখ দেখতে পারিনি তাই বলে সেও নিজের বোনকে মরতে দিয়ে চলে আসতো? মায়ের পেঁটে একসাথে ভাগাভাগি করে বড় হয়েছে দু’জন। যার সাথে তার জন্মের আগে থেকে সম্পর্ক যে বোন তার অস্তিত্ব থেকে তার সঙ্গি ছিল সেই বোনকে সে মরতে দিতো? অতীত ভাবতে গিয়ে চোখ ঝাঁপসা হয়ে আসে তুলিকার। মাতৃহৃদয় কেঁপে ওটঠে তার। নিজ সন্তানকে অব্দি নিজের সন্তান বলে কখনো বলতে পারিনি সে। একবারও কি সাদিদ তাকে বোঝার চেষ্টা করেছে। সে কতটা কষ্ট পেয়েছে, তার কেমন লেগেছে নিজের ভালোবাসার মানুষকে অন্যের হাতে তুলে দিতে বা নিজের বোনের স্বার্থপরতায়। একবারও কি জানার চেষ্টা করে লোকটা। আজ সব দোষ তার। তাচ্ছিল্য হাসে তুলিকা।
__‘আন্টি মা’
মেঘালয়ের ডাকে সম্বিত ফিরে পায় তুলিকা। মুচকি হেসে মেঘালয়কে দেখে বলল,
__‘উঠে গেছিস? ডাইনিং বস, আমি খাবার দিচ্ছি।
মৃদু হেসে বলল মেঘালয়,,
__‘আমি এখন খাবো না হস্পিটাল থেকে ইমার্জেন্সি কল এসেছে যেতে হবে।’
তুলিকা আঁতকে উঠে বলল,,
__‘সেকি! না খেয়ে যাবি মানে? হস্পিটাললে গিয়ে কখন না কখন খাস ঠিক নেই। তাছাড়া, নতুন জামাই প্রথম দিন শশুড়বাড়িতে না খেয়ে যাবি? লোকে কি বলবে?’
মেঘালয় তুলিকার কথা শুনে আহমক হয়ে কিছুক্ষন চেয়ে থাকে। পরে হেসে বলে উঠলো,,
__‘বিয়ে হয়েছে এককদিনও হয়নি এর মধ্যেই পর করে দিয়েছো? বাড়ির ছেলে থেকে সোঁজা নতুন জামাইতে চলে গেলাম।’
মেঘালয়ের সাথে তাল মিলিয়ে হাসে তুলিকা। কিচেন থেকে খাবার নিয়ে বের হয়ে মেঘালয়ের গালে হাত রেখে বলল,,
__‘তা কেন হবে? আমারতো দু’টো ছেলে। কিন্তু তুই আমার একমাত্র মেয়ের জামাইও তো বল! একটা মাত্র মেয়ে আমার। মেয়ের জামাই নিয়ে সব শাশুড়ীদের অনেক সখ আহ্লাদ থাকে আমারও আছে আর সেসব তোকে সহ্য করতে হবে। এখন আয়! খেতে বস বেশিক্ষন সময় লাগবে না।”
তুলিকার চোখের দিকে তাঁকায় মেঘালয়। তার চোখ ছলছল করে ওঠে। মৃদু হেসে বলল,,
__‘বসছি।’
এই মানুষটিকে নিজের মায়ের থেকে কোনো অংশে কম দেখে না মেঘালয়। তুলিকা তার আর একটা মা। তুলিকার মতো মানুষ নিজের ২৮ বছরের জীবনেও দ্বিতীয়টি দেখিনি সে। নিজের ভালোবাসার মানুষকে অব্দি সেক্রিফাইস করেছে। নিজের সন্তানকে অব্দি ত্যাগ করে অন্যের শূন্য কোলে পূর্নতা দিয়েছে। কিন্তু এতো ভালো হয়েও নিজে অসুখি।

তিয়ানা এক ভাবে’ই হাত- পা গুটিয়ে বসে আছে। কি করবে কিছুই বুঝতে পারছে না সে। দম আঁটকে যাওয়ার মতো কাঁন্না আসছে তার।
খাওয়া শেষে ঘরে আসে মেঘালয়। তিয়ানাকে থম মেরে বসে থাকতে দেখে। ভ্রু কুচকে প্রশ্ম করলো,,
__‘কি ব্যাপার? ফ্রেস না হয়ে কীসের ধ্যান করছিস?’
মেঘালয়ের প্রশ্নের উত্তর দেয়না তিয়ানা। দিতে ইচ্ছে করছে না তার। তিয়ানাকে চুপ হয়ে থাকতে দেখে মেঘালয় তিয়ানার পাশে গা ঘেঁষে বসে। হালকা কেঁপে ওঠে তিয়ানা তবে নিজের স্থান পরিবর্তন করে না। আর না নিজের ভাবভঙ্গি। মেঘালয়ের শরীর থেকে মিষ্টি একটা স্মল আসছে যা তিয়ানার খুব পছন্দের। অবশ্য সেটা পারফিউমের ঘ্রান তবুও এই ঘ্রান তার মনকে তোলপাড় করে দেয়। ইচ্ছে করে মেঘালয়কে ঝাঁপটে জড়িয়ে ধরতে। তবে আগে সাহস হয়নি। মেঘালয়ের থাপ্পড়ের ভয়ে আর আজ অধিকার থাকা সত্যেও পারছে না কারন মানুষটি তার না। কোনো মেয়ে কি সহ্য করতে পারে নিজের স্বামীর মুখ থেকে অন্য কাউকে ভালোবাসে কথাটি শুনতে। সে যদি! আবার নিজের ভালোবাসার মানুষ হয়।
মেঘালয় উঁকিঝুঁকি মেরে ভাবগতি বোঝার চেষ্টা করে তিয়ানার। কিন্তু না! মহারানী খুব’ই মনোক্ষুণ্ণ হয়ে ধ্যাঁন করছেন। আলতো হাসে মেঘালয়। পিছন থেকে হাত বাড়িয়ে শাড়ির উপর দিয়ে তিয়ানার পেঁটে হাত রেখে তার দিকে টেঁনে আনে। মেঘালয়ের ঠান্ডা হাত পাতলা শাড়ি ভেদ করে তার শরীরে লাগে। হঠাৎ মেঘালয়ের এহনো কান্ডে শিউড়ে ওঠে তিয়ানা। তিয়ানাকে নিজের কাছে ঘনিষ্ঠ ভাবে টেনে তার কাঁধে থুতুনি রাখে মেঘালয়। মেঘালয়ের নিশ্বাস তিয়ানার শরীর আছড়ে পরে। নিশ্বাসের গত অস্বাভাবিক বেড়ে যায় তিয়ানার। মেঘালয় তিয়ানার কাঁধে থুতুনি রেখের ট্যারা চোখে তিয়ানার মুখের দিকে তাঁকিয়ে শান্ত কন্ঠে তবে ভালোবেসে বলে উঠলো,,
__‘ও আমার ভাবনা কুমারী কিছু জিজ্ঞেস করছি আমি।’

মেঘালয়ের এমন কন্ঠস্বর শুনে কেঁপে উঠে তিয়ানা।নিজেকে সামলে, নিজের অনুভূতিকে দমিয়ে প্রশ্ন করলো তিয়ানা,
__‘আপনার কি! সত্যি সত্যি প্রমিকা আছে?’
তিয়ানার প্রশ্ন হেসে দেয় মেঘালয়। তিয়ানার ঘাড়ে নাক ডুবায় সে। কেঁপে ওঠে তিয়ানা শাড়ি খামছে ধরে সে। বুকের ভিতর কেমন ধুকপুক করে ওঠে তার। শুকনো ঢোক গিলে তোতলে বলল,,
__‘ক্কী ক্কক্রছেন?
__‘আমার বউয়ের সাথে রোম্যান্স।’
‘বউ’ শব্দটি কানে যাওয়া মাত্র বুকে ধক করে ওঠে তিয়ানার। মেঘালয় ছোটো করে ঠোঁট ছোয়ায় তিয়ানার ঘাঁড়ে। শিউড়ে ওঠে তিয়ানা। চোখহ বন্ধ করে নেয় সে। মেঘালয়ে নাক টেনে শ্বাস নিয়ে বলল,,
__‘তিনু তোর শরীর থেকে এতো সুন্দর স্মল আসছে কেন বলতো? তোকে খেয়ে ফেলতে ইচ্ছে করছে আমার। খাবো?’
আর নিতে পারছে না তিয়ানা। এবার মনে হচ্ছে অনুভুতিতে সে মরে যাবে। মেঘালয়ের থেকে দূরে সরে যেতে চায় সে। তবে পারে না মেঘলয় তাকে জড়িয়ে নেয় নিজের সাথে। বিপাকে পরে তিয়ানা! কাঁপা স্বরে বলল,,
__‘ছাড়ুন আমাকে।”
__‘কেন? ছাড়বো কেন? আমার বউ কে আমি ধরেছি তোর কি? তুই চুপ থাক!
আহমক হয়ে যায় তিয়ানা। কি বলছে আধপাগলটা বউটা কে? সে তো! দাতে দাত চেঁপে কিড়মিড় করে বলে উঠলো তিয়ানা,,
__‘বউটা আমি! তাই আমার’ই সব।’
ভাবসালিন ভাবে উত্তর দেয় মেঘালয়,
__‘ওহ আচ্ছা! হ্যা বউ তো তুই। তো! আমি কি করবো? এখন তুই আমার বউ বলে কি আমি আমার বউ কে আদর করবো না? বউয়ের সাথে রোম্যান্স করবো না?
এবার লজ্জা লাগে তিয়ানার ঠোঁট কাটা লোকটার কথা শুনে। রেগে বলল তিয়ানা,,
__‘কীসব বলছেন! লজ্জা করছে না আপনার?
মেঘালয় অবাক হওয়ার ভান ধরে বলল,,
__‘নিজের বউয়ের কাছে আবার লজ্জা কীসের? এতো লজ্জা নিয়ে থাকলে কোনো দিন ‘আব্বু’ ডাক শোনা হবে না আমার। ‘
থতমত খেয়ে যায় তিয়ানার। মেঘালয়ের এমন পাগলামি কথার উত্তর কি হতে পারে জানা নেই তার।

গত এক সপ্তাহ ধরে তিলাত নিজের অনুভূতিকে দমিয়ে রাখার চেষ্টা করেছে কিন্তু সে ব্যার্থ। ভেবেছিল অন্য সব ভালোলাগার মতো’ই অবন্তীও তার ভালোলাগা কিন্তু না সে অবন্তীর জন্য জেনুইন কিছু ফিল করে যা ভালোবাসা। জীবনে আজ অব্দি অনেক প্রেম করেছে সে কিন্তু এমন দমবন্ধ হয়ে যাওয়ার অনুভূতি কারো প্রতি অনুভব হয়নি তার। নিজেকে আঁটকানো সম্ভব হচ্ছে না তিলাতের। তার অবন্তীকে চাই। বোনের বিয়ে যখন মিটে গেছে তখন মা’কে বলে অবন্তীর বাড়িতে বিয়ের জন্য প্রস্তাব পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে তিলাত। এবার আর প্রেম নয় সোজা বিয়ে পিড়িতে। বউ করে ঘরে তুলবে অবন্তীকে। তার পর না হয় বিয়ের পর চুটিয়ে প্রেম করবে দু’জন।

চলবে?
(নাইস নেক্সট না বলে অন্য কিছু বলেন খুশি হবো। যেমন আজকের পর্বে আপনাদের কি কি ভালো লাগছে কোনটা খারাপ লাগছে বা আমার কোনো ভুল ত্রুটি সেসব মন্তব্য করেন তাতে আমি খুশি হবো। আর হ্যা রিচেক করিনি ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। ভালো রেসপন্স আসলে ভালো মন্তব্য করলে লেখার আগ্রহ বাড়ে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here