আমার_আদরিনী আশুথিনী_হাওলাদার (ছদ্মনাম) পর্ব-১৭

আমার_আদরিনী
আশুথিনী_হাওলাদার (ছদ্মনাম)
পর্ব-১৭
সকালের সূর্যের আলোতে ঘুম ভেংগে যায় মেঘালয়ের। চোখ খুলে দেখে তিয়ানা তার সাথে লেগে গুটিসুটি মেরে শুয়ে ঘুমিয়ে আছে। মৃদু হাসে মেঘালয়! কত-কাল ধরে সে এই দিনটির অপেক্ষায় ছিল। আজ বহুবছর পর তার অপেক্ষার অবসান ঘটলো। আজ তিয়ানা তার কাছে, তার সাথে আছে এবং ঘুম ভেংগে সে তিয়ানার মুখটি প্রথমে দেখতে পেলো। তিয়ানাকে এক পলক দেখে ফ্রেস হতে যায় মেঘালয়। ফ্রেস হয়ে এসে ট্রাউজার আর টি শার্ট পরে আয়নায় নিজেকে দেখে কিছু একটা ভেবে পাঞ্জাবি বের করে পরে নেয়। কয়েক ঘন্টা আগেও, সে এই বাড়ির অন্য সদস্যদের মতো থাকলেও আজ সে নতুন জামাই। তাই! নতুন জামাই ভাবটা ধরে রাখার জন্য’ই পাঞ্জাবি পরে সে। আয়নায় নিজেকে দেখে হেসে ওঠে মেঘালয়। গতকালও সে তিলাতের মতো এ বাড়ির ছেলে ছিল কিন্তু আজ সম্পর্ক ঘুরে জামাইতে পরিনত হলো। আয়নায় নিজেকে দেখে খাটে শোয়া তিয়ানার দিকে তাকায় মেঘালয়। ততক্ষনে তিয়ানা ঘুম থেকে উঠে মেঘালয়ে কে দেখে ‘হা’ করে চেয়ে ছিল। তিয়ানার এমন দৃষ্টিতে ‘ভ্রুকুটি’ করে মেঘালয়। ঠোঁটের কোণে বাঁকা হাসি টেনে বিছানার কাছে এগিয়ে গিয়ে তিয়ানার দিকে ঝুঁকে তার চোখে চোখ রাখে। সদ্য গোসল করে আসা মেঘলয়কে স্নিগ্ধ লাগছে। সাথে মাতাল করা মেঘালয়ের শরীরের নিজস্ব স্মল। মেঘালয়ের তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে ভরকে যায় তিয়ানা। মেঘালয় হাত বাড়িয়ে তিয়ানার থুতুনিতে টোকা দিয়ে মুখ বন্ধ করে দেয়। থতমত খায় তিয়ানা। দুষ্ট হাসে মেঘালয়, বলল,,
__‘আমি জানি আমি দেখতে সুন্দর, হ্যান্ডসাম। ‘হা’ করে চেয়ে থাকতে হবে না আমার ‘আদরিনী’ আছে। আমার দিকে ‘হা’ করে তাঁকিয়ে থাকার। তোর জন্য সীট খালি নেই। ‘
কপাল কুচকে ফেলে তিয়ানা। ‘ আদরিনী মানে?’ তিয়ানাকে কনফিউজড করে এটিটিউড নিয়ে আয়নার সামনে গিয়ে চুলে চিরুনি করে মেঘালয়। তিয়ানা শাড়ি ঠিক করে তড়িঘড়ি খেয়ে খাট থেকে নেমে মেঘালয়ের সামনে গিয়ে কোমড়ে হাত দিয়ে দাঁড়ায়। তিয়ানাকে এভাবে দাঁড়াতে ভ্রু কুচকে ফেলে মেঘালয়। বিরক্তি নিয়ে বলল,,
__‘হোয়াট?’
__‘হোয়াট মানে? আপনি তখন কি বললেন?’
ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বলল মেঘালয়,,
__‘কি বললাম?’
রাগ নিয়ে বলল তিয়ানা,,
__‘আদরিনী মানে? কে সে?’
হাত ঘড়ি পরতে পরতে উত্তর দেয় মেঘালয়,
__‘আমার গার্লফ্রেন্ডের কথা বলছি।’
থমকে যায় তিয়ানা। সিরিয়াস কন্ঠে বলল,
__‘মানে?’
মেঘালয় বিরক্তি নিয়ে বলল,,
__‘মানে সিম্পল! আমার গার্লফ্রেন্ড যাকে বাংলায় বলে প্রেমিকা। বুঝছিস?’
মেঘালয়ের বলা কথায় গলা শুকিয়ে যায় তিয়ানার। হাত-পা কেমন শীতল হয়ে আসে তার জিহ্বা দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে বলল,,
__‘সত্যি বলছেন?’
__‘হুম’
থমকানো কন্ঠে ধীরে প্রশ্ন করে তিয়ানা,
__‘তাহলে কাল আমায় বিয়ে করলেন কেন?’
বাঁকা হাসে মেঘালয়। পাঞ্জাবির পকেটে হাত দিয়ে টান টান দাঁড়িয়ে ত্যাড়া কন্ঠে বলল,,
__‘তোর বাপ আর আমার বাপ জোর করেছে আমাকে। ‘
গলা ধরে আসে তিয়ানার। নিজেকে শান্ত রেখে বলল,
__‘জোর করলো আর মেনে নিলেন? আপনি কি ছোটো বাঁচ্চা যে করলো আর মেনে নিতে হবে।,
কিছু বলেনা মেঘালয় ঠোঁটের কোণে বাঁকা হাসি রেখে চেয়ে থাকলো তিয়ানার ফ্যাঁকাসে হয়ে যাওয়া মুখপানে।
নিজ মনে বলে তিয়ানা,
__‘এখন কি হবে?’
__‘কি হবে? ঘরে তুই থাকবি বাইরে আমার গার্লফ্রেন্ড।’
রেগে যায় তিয়ানা। চেঁচিয়ে বলল,
__‘কি বলছেন কি আপনি?’
শান্ত কন্ঠে বলল মেঘালয়,,
__‘যা বলছি ঠিক বলছি। তুই তো বললি তোকে জোর করে বিয়ে দেয়া হয়েছে এন্ড যার সাথে বিয়ে তাকেও জানতি না। আমাকেও জোর করা হয়েছে সো তোর যদি ইচ্ছে হয় তুই আমার সাথে থাকবি। না হলে না।’
থমকে যায় তিয়ানা। মেঘালয় এক পলক তিয়ানাকে দেখে ঘর থেকে বেড়িয়ে যায়। যাওয়ার আগে একবার পিছু ফিরে বলল,,
__‘ওও হ্যা’ আমি কিন্তু আমার গার্ল্ফ্রেন্ডকে বিয়ে অবশ্য’ই করবো।’

‘অভীককে সমানে গুতিয়ে যাচ্ছে মৌমিতা ঘুম থেকে তোলার জন্য। তবে তার সেদিকে মন নেই সে চোখহ খেঁচে বন্ধ করে আছে। আজ যাই হয়ে যাক ঘুমবে’ই সে। বিরক্ত হয় মৌমিতা। বলল,,
__‘তুমি উঠবে নাকি? ঘরে আজ খাওয়া বন্ধ হবে তোমার?’
মৌমিতার কথা শেষ করতে দেরী অভীকের ঘুম থেকে উঠে বসতে নয়। সেটা দেখে কুটিল হাসে মৌমিতা। আলমারি থেকে জুয়েলারি বক্স বের করে। অভীকের সামনে এনে রেখে বলল,,
__‘দেখোতো এই হারটা তিনুর জন্য কিনেছি মানাবে না?’
অভীক বিরক্ত হয়ে বলল,
__‘তুমি এটা দেখাতে আমার সাঁধের ঘুম ভাংগালে’
খুশি গদোগদো হয়ে বলল মৌমিতা,,
__‘হ্যা! আর দেখো এই শাড়িটা অনেক সুন্দর না? আমাদের তিনুকে ভালো লাগবে না?
মৌমিতার কান্ডে হতাস অভীক। কিছুক্ষন আহমকের মতো নিজের প্রিয়তমা স্ত্রীর দিকে চেয়ে থেকে। শাড়ি দেখায় মন দিলো। শাড়ি নেড়েচেরে বলল,,
__‘হ্যা সুন্দর!
কিন্তু এসব কিনলে কখন?’
__‘কাল হস্পিটাল থেকে ফেরার পথে।’
অবাক হয় অভীক। বলল,
__‘আগে তো অনেক কিছু কিনেছো।
হেসে বলল মৌমিতা,
__‘তাতে কি! তিনু আমার একটা মাত্র ছেলে একটা মাত্র বউ। ওর জন্য কিনবো না তো কার জন্য কিনবো? তিনু তো শুধু আমার মেঘের বউ না। বউ হওয়ার আগে আমার মেয়ে।
মৃদু হাসি অভীক। মৌমিতার মেয়ের খুব সখহ ছিল। মেঘালয় হওয়ার পর। যখন, মৌমিতা দ্বিতীয় বার কনসিভ করে বেবিটা পেটে’ই মারা যায়। ডাক্তার বলে দেয় দ্বিতীয় বার আর সিজার করা যাবে না তাই বেবি না নেয়াই ভালো। নিলে যেকোনো একজনকে বাঁচানো যাবে। তারপর আর অভীক সাহস করেনি তবে মৌমিতা বেশ পিড়াপিড়ি করতো কিন্তু অভীককে টলাতে পারিনি। তারপর যখন তিয়ানা হলো। সেই থেকে তিয়ানা তাদের চোখের মনি।
মুচকি হেসে পিছন থেকে মৌমিতার কোমড় জড়িয়ে কাছে টেনে ধরে তার ঘাড়ে ঠোঁট ছোয়ায় অভীক। কেঁপে ওঠে মৌমিতা। মেকী রাগ নিয়ে বলল,,
__‘করছো কি তুমি? দরজা খোলা আছে। বুড়ো বয়সে ভীমরতি হয়েছে তোমার।’
শব্দ করে হেসে ওঠে অভীক বলল,
__‘দরজা খোলা তাতে কি? বাসায় তো কেউ নেই ছেলে তো তার শশুড় বাড়ি।’
অভীকের থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে উঠে দাঁড়ায় মৌমিতা। জুয়েলারি বক্স হাতে নিয়ে বলল,
__‘ছেলে নেই বাড়িতে কিন্তু রুমাতো আছে। রুমা যদি এসে পরে? আমি নিচে যাচ্ছি ফ্রেস হয়ে খাবার টেবিলে আসো। আর হ্যা! রুমার আজ স্কুল আছে। হস্পিটালে যাওয়ার সময় ওকে ছেড়ে যাবে।’
মৌমিতার যাওয়ার দিকে অসহায় চোখেহে তাঁকিয়ে থাকে অভীক। বউটা তাকে পাত্তা’ই দিচ্ছে না। বিয়ে করে বাঘ থেকে বিড়াল হয়ে গেল সে।

বিছানায় হাত-পা গুটিয়ে বসে আছে তিয়ানা। ফ্রেস হয়নি এখন অব্দি। হাত-পা কেমন অসার হয়ে গেছে তার। গত রাতে সে খুশি ছিল। তার বিয়ে মেঘালয়ের সাথে হওয়ায়। আজ ভাবছে কেন হলো বিয়েটা? এখন কি করবে সে? মেঘালয় কে সে রগেরগে চিনে। মেঘালয় যখন একবার বলছে সে তার প্রেমিকাকে বিয়ে করবে তো করবে। তিয়ানা চাইলেও আঁটকাতে পারবে না। বুকের ভিতর তোলপাড় হচ্ছে তিয়ানার। মাথা খালি খালি লাগছে। কি করবে বুঝতে পারছে না সে। কি করা উচিত তার? নিজের জায়গা ছেড়ে দেবে? তাছাড়া উপায় নেই। মেঘালয় কে সে অন্য কারো সাথে মেনে নিতে পারলেও ভাগ করতে পারবে না। সে তো ভেবে’ই নিয়েছিল মেঘালয় তার হবে না। সেটা সম্ভব না। আর আজ যখন বিয়ে হলো তখন জানলো মেঘালয় অন্য কাউকে ভালোবাসে। বিয়ের আগে জানলে কি এমন ক্ষতি হতো? জানলেও বা কি করতো সে? তিয়ানা তো জানতো’ই না তার বিয়ে মেঘালয়ের সাথে হচ্ছে। কোনো মেয়ে স্বামীকে ভাগ করতে পারেনা। আর না সতীন নিয়ে সংসার করতে চায়। তাহলে কি করবে সে? মেঘালয়কে ডিভোর্স দেবে?

চলবে?
(নাইস নেক্সট না বলে অন্য কিছু বলেন খুশি হবো। যেমন আজকের পর্বে আপনাদের কি কি ভালো লাগছে কোনটা খারাপ লাগছে বা আমার কোনো ভুল ত্রুটি সেসব মন্তব্য করেন তাতে আমি খুশি হবো। আর হ্যা রিচেক করিনি ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here