আমার_আদরিনী আশুথিনী_হাওলাদার (ছদ্মনাম) পর্ব-১৬

আমার_আদরিনী
আশুথিনী_হাওলাদার (ছদ্মনাম)
পর্ব-১৬
ফোস করে ওঠে তিয়ানা। রেগে দাতে দাত চেপে বলল,,
__‘আমি পেত্নী? আমায় দেখলে আমার বর হার্টফেল করবে? শুনেন! আমি যদি একবার ‘হ্যা’ বলি না, আমার পিছনে ছেলেদের লাইন পরে যাবে।’
মেঘালয় হেসে ব্যাঙ্গ কন্ঠে বলল,,
__‘হ্যা তা তো প্রমান দেখতে’ই পাচ্ছি ‘লিইইটনদায়ায়া’ কি যেন কবিতা লিখছিল? ইহা মনে পরেছে।’
‘ও তিনু ও তিনু ‘
‘তুমি কেন বোঝো না ‘
‘তোমার বিরহে মরছি তিনু’
‘তুমি কেন দেখছো না’
‘কেন ভালবাসছো না’
‘ও তিনু রে ও তিনু রে ‘
‘কেন বোঝা না’
‘আমার তিনুরে’

রেগে মেঘালয়ের গলা চেপে ধরে তিয়ানা। ‘হো হো’ করে হেসে ওঠে মেঘালয়। তিয়ানার হাত ধরে গলা ছাড়িয়ে তিয়ানাকে পিছনে মুড়িয়ে তার হাত মুচড়ে ধরে মেঘালয়। তিয়ানার পিঠ মেঘালয়ের বুকে গিয়ে লাগে। ফোস ফোস করে ওঠে তিয়ানা। নিজের সমস্ত শক্তি ব্যায় করে হাত ছাড়াতে ব্যার্থ হয়ে চুপ মেরে শান্ত হয়ে যায় সে। শব্দ করে হাসে মেঘালয়। পিছন থেকে ঝুঁকে তিয়ানার দিকে তাঁকিয়ে হেসে বলল,,
__‘কি? তিনুরানী! অপস সরি! সুন্দরী ম৯হারানী ক্লিওপেট্রা এনার্জি শেষ?’
দুঃখি দুঃখি চোখে মেঘালয়কে দেখে তিয়ানা। ফুঁপাতে থাকে সে তবে কাঁন্না আসছে না। বাম ভ্রু’কুটি করে মেঘালয় বাঁকা হেসে তিয়ানার কানের কাছে মুখ নিয়ে দুষ্ট কন্ঠে ফিসফিস করে বলল,,
__‘তিনু বুঝতে পারছিস? তোর আর আমার আজ বিয়ে হয়েছে। তুই আমার বউ! আজ আমাদের বাসর রাত। বিছানা দেখ ফুল দিয়ে সাজানো। আমার না কেমন ‘বাসর বাসর’ ফিলিংস হচ্ছে।’
মেঘালয়ের বলা শব্দগুচ্ছ গুলো তিয়ানার কর্ণকুহরে পৌঁছানো মাত্র তিয়ানার ‘হেচকি’ উঠে যায়। হেসে দেয় মেঘালয়, হাসতে হাসতে তিয়ানাকে ছেড়ে বিছানায় শুয়ে পরে সে। তিয়ানা ফ্যালফ্যাল করে মেঘালয়ের হাসি মুখের দিকে চেয়ে থাকে। মেঘালয়ের হাসি দেখে তিয়ানার ‘হেচকি’ থেমে যায়। হঠাৎ মনে হলো তিয়ানার। বেশ কয়েকবছর পর আজ প্রথম মেঘালয় তার সাথে এত স্বাভাবিক ভাবে কথা বলছে। তিয়ানা তার কিশোরী বয়স থেকে দেখে আসছে মেঘালয় তার সাথে ধমক ছাড়া কথা বলত না। কেমন একটা দূরত্ব রেখে চলতো এমন যে সে কোনো ছোঁয়াছে রুগি। তার ছোঁয়া লাগলে ক্ষতি হয়ে যাবে খারুচটার।
তিয়ানাকে ফ্যালফ্যাল চোখে চেয়ে থাকতে দেখে দুষ্ট হাসে মেঘালয়। তিয়ানার হাত টান দিয়ে তার পাশে শুয়ে দেয়। মেঘালয় শোয়া থেকে উঠে হালকা তিয়ানার দিকে ঝুঁকে বাঁকা হেসে ভ্রু নাচিয়ে বলল,,
__‘শুরু করি বাসর?’
মেঘালয়ের কথায় পেঁটে মোচড় দিয়ে ওঠে তিয়ানার। আমতা আমতা করে তোতলে বলল,
__‘ম্মমমআনে?’
তিয়ানার ঘাড়ের কাছে মুখ নেয় মেঘালয়। ঠোটের কোণে দুষ্টু হাসি বিদ্দমান মান। বলল,,
__‘বিয়ে করলাম আর বাসর করবো না? তো হয় না!’
তিয়ানা কাঁদো কাঁদো মুখ করে মেঘালয়কে ঠেলে শোয়া থেকে উঠে বসে জোরে জোরে শ্বাস নিতে থাকে। মেঘালয় এর গরম নিশ্বাস তার ঘাড়ে এসে লাগছিল। নাম না জানা অনুভূতিতে শ্বাস আটকে যায় তার। পেথম কোনো পুরুষ তার এত কাছে। যে কিনা তার ‘স্বামী’। মেঘালয় কে আড়চোখে দেখে কাঁদো কাঁদো কন্ঠে বলল,,
__‘আপনি এত স্বাভাবিক ক্যামনে ভাইয়া? এ জীবনে আমি আপনারে এমন ভালো মিষ্টি মিষ্টি কথা আমার সাথে অন্তত বলতে দেখিনি। আপনার মুখের কথা গুলো হঠাৎ তেঁতো থেকে মধুতে ক্যামনে পরিনত হলো? নিশ্চয়’ই কোনো মতলব আটছেন আপনাকে বিয়ে করছি বলে। কিন্তু! বিশ্বাস করেন ভাইয়া, আমি কিচ্ছু জানিনা। আমাকে জোর করে বিয়ে দিয়েছে আমি এটাও জানতাম না বর আপনি।”
মেঘালয় চোখ কুচকে তাঁকিয়ে থাকে তিয়ানার দিকে। তিয়ানা খানিক্ষন ভেবে কনফিউজড হয়ে বলল,,
—_‘ভাইয়া! আমাকে না হয় সবাই জোড় করেছে আপনি রাজি হইছেন কেন?”
থতমত খেয়ে যায় মেঘালয় তিয়ানার থেকে দৃষ্টি সরিয়ে অন্য পাশে ফিরে চোখ বন্ধ করে শুয়ে পরে সে। তিয়ানা হতভম্ব হয়ে মেঘালয়ের দিকে চেয়ে থাকে। মেঘালয় তিয়ানার দিকে ফিরে ‘হাই’ দিয়ে বলল,,
__‘ঘুমিয়ে পর তিনু আমার খুব ঘুম পাচ্ছে।’
তিয়ানা সন্দেহ নিয়ে বলল,,
__‘কিন্তু! আমার উত্তর টা?’
কথার উত্তর দেয় না মেঘালয়। ঘুমের ভান ধরে মটকা মেরে শুয়ে থাকে। দীর্ঘশ্বাস ফেলে তিয়ানা। পলকহীন ভাবে তার পাশে ঘুমিয়ে থাকা মেঘালয়কে দেখছে সে। মনে হচ্ছে স্বপ্ন দেখছে সে যা একটু পর ভেংগে যাবে। বিশ্বাস করতে পারছে না তিয়ানা। মেঘালয় তার পাশে তার বিছানায় ঘুমিয়ে আছে। দু’জন এক ঘরে একসাথে বৈধ্য ভাবে রাত কাটাচ্ছে। অবিশ্বাস্য ঘটনা! তিয়ানা কখনো কল্পনাও করেনি যে, এই দিনটি সত্যি সত্যি তার জীবনে আসবে। মেঘালয় তার ‘স্বামী”। বুকের ভিতর তোলপাড় শুরু হয় তিয়ানার। অন্য এক অনুভুতি যার সাথে সে পরিচিত না। একটু সংকোচ একটু ভালোলাগা আরও, আরও অনেক অনেক অনুভূতি সে বুঝতে পারছে না। বুকে যন্ত্রণা হছে তার কেমন যেন জ্বলছে। শ্বাস আটকে যাচ্ছে অতি উত্তেজনায়, খুশিতে। বিরবির করে বলল তিয়ানা,,
__‘আপনি সত্যি এখন আমার ‘স্বামী?’ শুধু আমার! বিশ্বাস হচ্ছে না। আমার পেটের ভিতর কেমন গুড়ুমগুড়ুম করছে। দেখুন আমি শ্বাস নিতে পারছি না। এমন কেন এই অনুভূতি? আচ্ছা আপনারও কি এমন হচ্ছে? শুনুন আমি না সত্যি এখনো বিশ্বাস করতে পারছি না। কি করি বলুন তো? আপনার সাথে এক বিছানায় একসাথে শুতে আমার লজ্জা লাগছে। কই? আপনার তো তেমন হচ্ছে না! পুরু নাক ডেকে ঘুমাচ্ছেন আর এখানে আমি দমবন্ধকর অনুভূতিতে পিষ্ট হচ্ছি’

“__থ্যাংকস আমার মেয়ের অনুভূতিটা বোঝার জন্য।’
সিগারেটে শেষ টান দিয়ে অবশিষ্ট অংশটুকু বেলকনি থেকে বাইরে ফেলে দেয় সাদিদ। তুলিকার কথার উত্তরে তাচ্ছিল্য হাসে সে। তুলিকার দিকে ফিরে তার চোখে চোখহ রেখে বলল,,
__‘তিয়ানা আমার আর তিয়াসার মেয়ে তোমার নয়। তাছাড়া আমি তুমি নই। যে, কারো অনুভূতি বুঝবো না তার অনুভূতির মূল্যায়ন করবো না। নিজে যা ঠিক মনে করবো তাই’ই করবো। ওপাশের মানুষটা কি করে বাঁঁচবে সেদিকে লক্ষ্য রাখবো না। তোমার মতো স্বার্থপর নই আমি।’
সাদিদের প্রথম বলা বাক্য শোনা মাত্র বুকের ভিতর ‘খা’‘খা’ করে ওঠে তুলিকার। তবে পরে বলা বাক্য শুনে হাসে সে। হেসে বলল,,
__‘এমন তো না! তুমি অসুখি ছিলে। ভালো’ই তো ছিলে আমার বোনকে নিয়ে। তাহলে, বাঁচবে না কেন? দু’টো সন্তানও জন্ম দিয়েছো। তারা তো আর আকাশ থেকে পরেনি। নাকি! তুমি চিনতে’ই পারোনি তুলিকা নয় তিয়াসার সাথে ঘর করছো। এই তোমার ভালোবাসা? ‘
তুলিকার এহনো কোথায় রাগ ওঠে সাদিদের। তুলিকার দুই কাঁধ শক্ত করে চেপে ধরে নিজের কাছে টেনে হিসহিসিয়ে বলল,,
__‘আমার ভালোবাসা নিয়ে অন্তত তোমার মুখ থেকে কোনো ব্যাখা শুনতে চাই না। তুমি এবং তোমার বোন দু’জনেই বেইমান, সুবিধাবাদী, স্বার্থপর যারা শুধু আমাকে ব্যাবহার করে গিয়েছো। আই হেইট বোথ অফ ইউ।’
শান্ত কঠোর কন্ঠে উত্তর দেয় তুলিকা,,
__‘যার সাথে এক যুগ (১২ বছর) ঘর করেছো, সংসার করেছো যে তোমার সন্তানদের মা তার ব্যাপারে এসব বলতে বাঁধছে না।’
চেঁচিয়ে ওঠে সাদিদ। বলল,,
__‘না বাঁধছে না। তুমি ঠকিয়েছো আমাকে তোমার বোনও ঠকিয়েছে এবং তা খুব বাজে ভাবে। ও আমার ড্রাংক অবস্থায় সুযোগ নিয়েছে সেটাও ঠকানো।”
তুলিকাকে হালকা ধাক্কা দিয়ে ছেড়ে দেয় সাদিদ। ক্রুর হেসে বলল সে,,
__‘অবশ্য! ঠকানো তো তোমাদের রক্তে আছে। বাবা যেমন সন্তান তো তেমন’ই হবে ‘
কথা শেষে ঘর থেকে বেড়িয়ে যায় সাদিদ। তবে বেলকনিতে মূর্তি হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে তুলিকা। সাদিদের শেষের বলা বাক্য গুলো তার কানে বারবার প্রতিধ্বনি হচ্ছে।’

‘‘মেঘালয়ের ঘুমন্ত মুখের দিকে তাঁকিয়ে আছে তিয়ানা। মানুষটাকে খুব ভালোবেসে ফেলেছে সে। আলতো করে মেঘালয়ের চুলে হাত বুলিয়ে দিচ্ছে সে। ঘুমন্ত মেঘালয়কে খুব সুন্দর দেখাচ্ছে। তিয়ানার ইচ্ছে করছে মেঘালয়ের লাল টকটকে নাকটা কামড়ে দিতে। এখনোও লাল হয়ে আছে। মেঘালয়ের লুচু নাকটাও হয়তো এতো দিনে জেনে গেছে তিয়ানার তার উপর বড়’ই দূর্বলতা।”

চলবে?
(নাইস নেক্সট না বলে অন্য কিছু বলেন খুশি হবো। যেমন আজকের পর্বে আপনাদের কি কি ভালো লাগছে কোনটা খারাপ লাগছে বা আমার কোনো ভুল ত্রুটি সেসব মন্তব্য করেন তাতে আমি খুশি হবো। আর হ্যা রিচেক করিনি ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here