আমার_আদরিনী
আশুথিনী_হাওলাদার (ছদ্মনাম)
পর্ব-২০
সারাদিন অবন্তীর সাথে কাঁটায় তিয়ানা। অবন্তীকে তার বাসায় ছেড়ে ফেরার পথে মেঘালয়কে রেস্টুরেন্টে ঢুকতে দেখে বাইক থামায় তিয়ানা। ভ্রু’কুটি করে ফেলে তিয়ানা কাহিনী কি! মেঘালয়ে এই সময় হস্পিটাল না থেকে রেস্টুরেন্টে কি করছে? সাথে আবার মেয়েও আছে। ঠোঁট কামড়ে ধরে তিয়ানা। কাহিনী গড়বড় লাগছে তার। বাইকে বসেই উঁকি ঝুঁকি মেরে মেয়েটার চেহারা দেখার চেষ্টা করে সে। সন্দেহ নিয়ে বাইক পার্ক করে মেঘালয়ের পিছু নেয় সে। মেঘালয়ের পিছনের টেবিলে বসে তিয়ানা। মেয়েটাকে স্পষ্ট দেখা গেলেও মেঘালয়কে দেখা যায় না। মেঘালয়ও তাকে দেখবে না। মেয়েটাকে চেনা লাগছে না তিয়ানার। কখনো দেখেওনি সে। আচ্ছা! এটা আবার সেই মেয়েটা নাতো? মেঘালয়ের গার্লফ্রেন্ড। বুকের মোচড় দেয় তিয়ানার। তাহলে কি? মেঘালয় তাকে সত্যি’ই বলেছিল। মেঘালয়ের গার্লফ্রেন্ড আছে যার নাম ‘আদরিনী’। ভাবতে’ই তিয়ানার বুকে যন্ত্রণা শুরু হয়। অজানা ভয়ে বুক ধুকপুক করছে তার। মেঘালয়কে পেয়েও কি সে হারিয়ে ফেলবে? পিছন থেকে উঁকি দেয় তিয়ানা। মেঘালয় মেয়েটির হাত ধরেছে। বুকের ভিতর ঝাঁ ঝাঁ করে ওঠে তিয়ানার। চোখ জ্বালা করছে এই বুঝি জল গড়িতে পরবে। উঠে দাঁড়ায় তিয়ানা। দ্বিতীয় বার পিছনে না তাঁকিয়ে রেস্টুরেন্ট থেকে বেড়িয়ে যায় সে। রেস্টুরেন্ট থেকে বেড়িয়ে দ্রুত হেটে বাইকের কাছে যায় সে। বড় বড় শ্বাস ফেলে হেলমেট পরে বাইক স্টার্ট দেয়।
অফিস থেকে তারাতাড়ি বাড়ি ফেরে সাদিদ। ফ্রেস হয়ে দেখে তুলিকা বেলকনিতে দাঁড়িয়ে আছে। তুলিকার পাশে এসে দাঁড়ায় সাদিদ। গলা খাকাড়ি দিয়ে বলল,,
__‘তোমার সাথে কথা ছিল।’
সাদিদের দিকে না তাঁকিয়ে ভাবশালীন ভাবে বলল তুলিকা,,
__‘বলো।’
__‘আই এম সরি! ‘
তাচ্ছিল্য হাসে তুলিকা। পূর্ন দৃষ্টিতে সাদিদকে দেখে সে। শান্ত কন্ঠে প্রশ্ন করলো,
__‘সরি কেন?’
__‘তোমার ফেমিলি। আই মিন তোমার বাবা তুলে আমার বলা উচিত হয়নি তুলি।’
__‘ভুল কিছু বলনি!’
তুলিকার নির্বাক রুপ পছন্দ হয় না সাদিদের। রাগ উঠে যায় তার। রেগে গিয়ে ধমকে বলল,
__‘আমি সরি বললাম তো তুলি।’
হাসে তুলিকা হেসে বলল,,
__‘ অযথা রেগে যাচ্ছো সাদ।’
তুলিকার থেকে দৃষ্টি সরিয়ে ফেলে সাদিদ। নিজের কে শান্ত করে সে। তুলিকার হাত ধরে শান্ত স্বরে বলল,,
__‘আমাদের গল্পটা অন্য রকম হতে পারতো তুলি।’
থমকায় তুলিকা ঠোঁট কেঁপে ওঠে তার। শীতল দৃষ্টিতে সাদিদের পানে চায় সে। সাদিদ তাকে’ই দেখছিল দু’জনের দৃষ্টি মিলন হয়। ভাবে তুলিকা! হ্যা! তাদের গল্প অন্য রকম হতে পারতো। কিন্তু! সে সব শেষ করে দিয়েছে। নিজেকে ধরে রাখতে পারেনা তুলিকা। সাদিদকে জাপটে জড়িয়ে ধরে চোখের জল ছেড়ে দেয়। খুব খুব কাঁন্না পাচ্ছে তার। সাদিদও তার প্রিয়তমা কে নিজের থেকে দূরে সরায় না নিজের সাথে জড়িয়ে ধরে রাখে তাকে।
‘কবরের পাশে আসন পেতে বসে আছে তিয়ানা। হাতে কিছু গোলাপ ফুল। অতি যত্নে কবরের উপরের আগাছা গুলো তুলে সেখানে ফুল গুলো রাখে সে। মনের মধ্যে ঝড় বয়ে যাচ্ছে তার। আবেগ নিয়ে কবরের হাত বুলায় সে। খানিক বাদে কবর কেঁদে দিয়ে কবর জড়িয়ে ধরে সে। ফুঁপাতে ফুঁপাতে বলে উঠলো সে,,
__‘হাই হেইট ইউ মা! আই হেইট ইউ! দেখো বহু বছর আগে তুমি যে অন্যায়টা করেছিলে। আজ ঠিক সেটা আমার সাথে ঘটছে। আল্লাহ ছেড়ে দেন কিন্তু ছাড় দেন না। দেখো প্রমান পাচ্ছো তো তুমি। দেখো আজ আমি তোমার’ই মতো মেঘের জীবনে থার্ড পারসন। মেঘ অন্য কাউকে ভালোবাসে মা। আমাকে ভালোবাসে না হয়তো আমি তোমার মেয়ে তাই। আমি তোমার মেয়ে বলে হয়তো ‘ও’ আমাকে সহ্য করতে পারে না। কিন্তু! ভাইয়াও তো তোমার সন্তান মা। তাহলে ভাইয়া কেন ‘ওর’ বেষ্ট ফ্রেন্ড বলো? আমি কেন সত্যিটা জানলাম বলো? কেন জানলাম আমি তোমার মেয়ে। আমি আম্মুর মেয়ে নই। আমি মানতে পারছি না। এই যে আমি তোমার কাছে আসি তোমাকে ছুঁই কথা বলি তোমার মধ্যে মা মা অনুভূতি পাই না। বরং আমি আম্মুর শরীর থেকে ‘মা’ ‘মা’ গন্ধটা পাই। মনে হয়, আমি আমার নিজের মাকে’ই জড়িয়ে আছি। আমি কেনো আম্মুর মেয়ে হলাম না? আমি আম্মুর মেয়ে হলে কি মেঘ আমাকে ভালোবাসতো? দেখো? কাল আমাদের বিয়ে হয়েছে আর আজ! আজ’ই মেঘ ওর প্রেমিকাকে নিয়ে ঘুরছে। একজন স্ত্রী হয়ে কি করে মানবো সেটা।’
‘চোখের জল মুছে ওঠে দাঁড়ায় তিয়ান। কবর স্থান থেকে বেড়িয়ে যায় সে। পিছু ফিরে কবরের দিকে তাঁকিয়ে বলল,
__‘আই হেইট ইউ মা! তোমার সন্তান হয়ে আমি খুব’ই লজ্জিতো। সেদিন তোমার বদলে আমার মৃত্যু হলে হয়তো খুব ভালো হতো।’
‘‘বেশ রাত করে বাড়ি ফেরে মেঘালয়। তিয়ানার ঘরে এসে দেখহে তিয়ানা পড়ছে। ভ্রু’কুটি করে মেঘালয়। ব্যাঙ্গকরে বলল,,
__‘তুইও পড়িস?’
মেঘালয়ের কন্ঠস্বর কানে যাওয়া মাত্র বিরক্তি নিয়ে তার দিকে তাঁকায় তিয়ানা। সেই সাথে বিরক্তি নিয়ে বলল,,
__‘মানে? আমি কি পড়ি না?’
হাতের ঘড়ি খুলে ড্রেসিং টেবিলের উপর রেখে টাই খুলতে খুলতে বলল মেঘালয়,,
__‘হ্যা তা তো রেজাল্টে’ই বলে দেয়।’
তিয়ানা কিছুটা মেজাজ নিয়ে বলল,
__‘ইহা! রেজাল্টের বুঝায় তাই আমি ঢাবির স্টুডেন্ট।’
__‘আসছে আমার ঢাবির স্টুডেন্ট। নিজ গ্রুপ থেকে তো পারিসনি চান্স পেতে। চান্স পেতে বিভাগ পরিবর্তন করতে হয়েছে।’
__‘পেয়েছি তো! সেই অনেক আমার জন্য। আমার আপনার মতো ব্রিলিয়ান্ট হওয়ার দরকার নেই। বাই দ্যা ওয়ে! আপনি আমার ঘরে কি করছেন?’
মেঘালয় সটান হয়ে বিছানায় শুয়ে পরে ‘হাই’ তুলে বলল,,
__‘বউয়ের ঘর’ই তো এখন আমার ঘর।’
তিয়ানা চেয়ার থেকে উঠে তেড়ে মেঘালয়ের কাছে গিয়ে হাত উঁচিয়ে বলল,,
__‘কে বউ? কার বউ? আমি কারো বউ না। আপনাকে আমাদের বাড়িতে’ই বা কে আসতে বলেছে? নিজের বাড়ি যান।’
মেঘালয় তিয়ানার হাত ধরে টেনে বিছানায় ফেলে তার উপরে উঠে কানের কাছে মুখ নিয়ে বলল,,
__‘তোর বাপ বলছে। বিয়ের পর নাকি জামাই কে তিনদিন শশুড় ঘরে থাকতে হয়। আর কে? কার বউ? সেটা এক্ষুনি বুঝিয়ে দিচ্ছি।’
বলে তিয়ানার কানে ঠোঁট ছোঁয়ায় মেঘালয়। মেঘালয়ের হঠাৎ আক্রমণে হতভম্ব হয়ে যায় তিয়ানা। সে সাথে তার স্পর্শ কেঁপে ওঠে তিয়ানা। মেঘালয়কে হাত দিয়ে ঠেলতে ঠেলতে বলে,
__‘আপনি দিনদিন খুব নির্লজ্জ হয়ে যাচ্ছেন মেঘা ভাইয়া। আমি বোন হই আপনার।’
বাঁকা হাসে মেঘ। আচমকা তিয়ানার ঘাড়ে কামড়ে দিয়ে বলল,
__‘বোন এখন বউ হয়ে গেছে।’
মেঘালয়ের এহনো কান্ডে তিয়ানার সারা শরীর শিউরে ওঠে। অতি কষ্টে ঢোক গিলে বলল,,
__‘কি করছে মেঘ ভাইয়া?’
মেঘালয় তিয়ানার গালে চুম্বন করে বলল,,
__‘বউয়ের সাথে রোম্যান্স।’
তিয়ান অসহায় কন্ঠে বলল,,
__‘আমি কিন্তু মরে যাবো? ‘
হাসে মেঘালয় হেসে বলল,
__‘আচ্ছা! মেরে’ই ফেলছি আমি।’
তিয়ানা কাঁদো কাঁদো মুখ নিয়ে মেঘালয়কে দেখেতে থাকে। তিয়ানার প্রতিক্রিয়া দেখে হো হো করে হেসে দেয় মেঘালয়। তিয়ানা কিছু বুঝতে না পেরে আহমক হয়ে ড্যাব ড্যাব করে চেয়ে থাকে। মেঘালয় হাসি থাময়ে তিয়ানার নাক টেনে বলল,
__‘তোকে খেয়ে ফেলতে ইচ্ছে করছে তিনু।’
মেঘালয়ের কথার উত্তরে মুখ ফুটে কিছু না বলতে পারলেও মনে মনে বলল তিয়ানা,,
__‘খান না। না করছে কে? খেয়ে ফেলুন তো তারাতাড়ি তারপর আমিও দেখবো কি করে আমাকে ছেরে আপনার ওই প্রেমিকা শয়তানির কাছে যান।’
মেঘালয় দুষ্ট হেসে তিয়ানার ঠোঁটের কাছে এগয়ে যায়। তিয়ানা চোখ বন্ধ করে ফেলে। মেঘালয় দুষ্টু চোখে তিয়ানার বন্ধ চোখের দিকে চেয়ে বলল,
__‘জানিস তিনু। তুই জন্মানোর পর যেদিন একদিনের তোকে প্রথম কোলে নিয়েছিলাম। কোলে নেয়া মাত্র তুই আমার কোলে পটি করে দিয়েছিস।’
তিয়ানা হতবাক হয়ে চোখ খুলে ফেলে। মেঘালয় এমন একটা মুহূর্তে এসব? মানে লোকটা তাকে! চোখ কটমট করে মেঘালয়কে দেখে তিয়ানা। হাসে মেঘালয় তার ঠোঁট তিয়ানার ঠোঁট ছুই ছুই। কাল বিলম্ব না করে তিয়ানার ঠোঁটে ঠুস করে চুমু খেয়ে ফেলে সে। মেঘালয়ের এহনো কান্ডে হতবুদ্ধি হয়ে যায় তিয়ানা। ঠোঁট ছেড়ে তিয়ানার নাকে কামড় দিয়ে বলল,,
__‘ ভাবতে পারছিস বিষয়টা তিনু। তুই হিসু টিসু না পুরু পটিতে চলে গিয়েছিলি। আজ সেই তিনুরানী নাকি আমার বউ। তার সাথে নাকি আমি এখন রোম্যান্স করছি। হায়! কপাল!’
চলবে?
নাইস নেক্সট না বলে অন্য কিছু বলেন খুশি হবো। যেমন আজকের পর্বে আপনাদের কি কি ভালো লাগছে কোনটা খারাপ লাগছে বা আমার কোনো ভুল ত্রুটি সেসব মন্তব্য করেন তাতে আমি খুশি হবো। আর হ্যা রিচেক করিনি ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। ভালো রেসপন্স আসলে ভালো মন্তব্য করলে লেখার আগ্রহ বাড়ে।