আমার_আদরিনী আশুথিনী_হাওলাদার (ছদ্মনাম) পর্ব-২১

আমার_আদরিনী
আশুথিনী_হাওলাদার (ছদ্মনাম)
পর্ব-২১
__‘ ভাবতে পারছিস বিষয়টা তিনু। তুই হিসু টিসু না পুরু পটিতে চলে গিয়েছিলি। আজ সেই তিনুরানী নাকি আমার বউ। তার সাথে নাকি আমি এখন রোম্যান্স করছি। হায়! কপাল!’
কটমট করে তাঁকায় তিয়ানা। ফুঁসে ওঠে সে! মেঘালয়কে ঠেলে নিজের থেকে সরিয়ে শোয়া থেকে উঠে বসে সে। তিয়ানাকে রাগে ফোঁস ফোঁস করতে দেখে হো হো করে হেসে দেয় মেঘালয়। তাতে তিয়ানা আরও রেগে যায়। রেগে গিয়ে মেঘালয়ে পিঠে মারতে থাকে। মেঘালয় হেসে তিয়ানার হাত আঁকড়ে ধরে। তিয়ানা দমে না গিয়ে মেঘালয়ের নাকে কামড় দেয়। মেঘালয় ব্যাথায় ‘উহ’ করে ওঠে তিয়ানা সেদিকে পাত্তা না দিয়ে মেঘালয়ের থেকে নিজের হাত ছাড়িয়ে গাল ফুলিয়ে বসে থাকে। মেঘালয় নাকে হাত বুলিয়ে বলল,
__‘রাক্ষুসি একটা! আহ! আমার নাক। তোর মতো রাক্ষুসি বউ কারো কপালে জুটেনি হয়তো। আমি’ই এক পিস যার ভাগ্যেএমন একটা রাক্ষুসি জুটেছে।’
মেঘালয়ের কথাকে পাত্তা না দিয়ে সিরিয়াস কন্ঠে বলে উঠলো তিয়ানা,,
__‘আপনার কি সত্যি’ই প্রেমিকা আছে? ‘
নাক থেকে হাত সরিয়ে পূর্ন দৃষ্টিতে তিয়ানার দিকে তাঁকায় মেঘালয়। কিছু একটা ভেবে সিরিয়াস ভাবে বলল,,
__‘হ্যা!’
থমকায় তিয়ানা বিস্মিত চোখে মেঘালয়কে দেখে সে। তবে বেশিক্ষন তাঁকিয়ে থাকতে পারে না। বিছানা থেকে উঠে ঘর থেকে বেড়িয়ে যায়। মেঘালয় তিয়ানার যাওয়ার পানে তাঁকিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলে চোখ বন্ধ করে শুয়ে পরে। নিজ মনে বলল সে,,
__‘আই এম সরি তিনু। তোকে কষ্ট দেয়ার জন্য কিন্তু এটা দরকার। যেদিন সত্যি’টা সামনে আসবে সেদিন পৃথিবীর সব থেকে সুখি মানুষ হবি তোরা তিন জন তুই এবং তারা ও হ্যা শুধু তোরা তিনজন না আরও একজন আছে। ‘
ভেবে হালকা হাসে মেঘালয়। সে শুধু চাচ্ছে এসবে তিয়ানা অতিষ্ঠ হয়ে যাবে আর সেটা যেদিন সাদিদের কানে যাবে ঠিক তখন,, সেটা সিক্রেট। হেসে পাশে থাকা কোলবালিশ জড়িয়ে ধরে ঘুমোনোর চেষ্টা করে মেঘালয়।

“অবন্তীর বাড়ির সামনে গিয়ে ঘুরঘুর করছে তিলাত। কখনো ফুটপাতে বসে নখ খুঁটছে বা উঠে রাস্তার এ মাথা থেকে ও মাথা পায়চারি করছে। মাথায় কিছু খেলছে না তিলাতের। তার মন শুধু একটা কথা’ই বলছে, ‘তোর অবন্তীকেই চাই তিলাত। ইউ ফেল ইন লাভ উইথ হিম।’
খানিক্ষন পায়চারি করে অবন্তীদের ফ্লাটের দিকে তাঁকিয়ে উঁকিঝুকি মারে সে। তবে অবন্তীর দেখা নেই। রেগে পা দিয়ে রাস্তায় বাড়ি মারে তিলাত কিন্তু ব্যাথাটা সে’ই ই পায়। পা ধরে ফুটপাতে বসে পরে। এখন নিজের উপর নিজের রাগ হচ্ছে তিলাতের। এর চেয়ে আগে’ই তো ভালো লাগতো। এক সাথে কয়েকটা প্রেম, টাইমপাস। জীবন বিন্দাস ছিল! এখন বুড়ো বয়সে প্রেমে পরে বাচ্চা বাচ্চা ছেলেদের মতো থাকো দাঁড়িয়ে। ভাংগা স্বরে গান ধরে তিলাত,,
__‘অন্তী তুই অপরাধী রে’
‘তোর ইনোসেন্ট চেহারা দেখিয়ে তোর প্রেমে ফেললি রে’
‘এখন কই লুকাইলিরে’ তুই অপরাধী রে’
নিজের কাকের মতো ক্যা ক্যা করা কন্ঠের উপর বিরক্ত হয় তিলাত। গান বাদ দিয়ে মেঘালয়কে ফোন দেয় সে। ফোন ধরে গাইল দেয়া শুরু করে মেঘালয়,,,
__‘শালার ঘরে শালা আমার ঘুমের উপর তোদের গুষ্টির এত কীসের শত্রুতা?’
মেঘালয়ের গালি তে বিরক্ত হয় তিলাত। যাকে বলে চরম বিরক্ত। কিন্তু মেঘালয়কে তার এখন দরকার তাই তাকে না চটানই ভালো। তাই নিজের চরম বিরক্তিকে দমন করে মিষ্টি কন্ঠে দাতে দাতে চেপে বলল,,
__‘আমি জানি! জানি আমি! তোর শালা আমি। বারবার বলতে হবে না। কাল থেকে শুনতে শুনতে কান পোঁচে গেল আমার।’
তিলাতের মিষ্টি বুলিকে সম্পুর্ন অগ্রাহ্য করে বলে উঠলো মেঘালয়,,
__‘কি চাই?’
__‘আই এম ইন লাভ’
বিস্ময়ে চিল্লিয়ে ওঠে বলে মেঘালয়,,
__‘হোয়াট? ইউ ফেল ইন লাভ?’
দুঃখি কন্ঠে উত্তর দেয় তিলাত,,
__‘ইহা! আই এম ইন লাভ।’
ফটাফট বলে উঠলো মেঘালয়,
__‘আই ডোন্ট বিলভ দিস।’
__‘আমি সত্যি বলছি মেঘ।’
মেঘালয় আহমক হয়ে প্রশ্ন করে,,
__‘মেয়েটা কে?’
__‘অবন্তী।’
মেঘাকয় দ্বিগুণ চিল্লিয়ে বলল,
__‘হোয়াট শেষ অব্দি বোনের বান্ধুবির প্রেমে পরলি ছাগল।’
তাকে ‘ছাগল’ বলাটা পছন্দ হয় না তিলাতের। তাই ফুঁসে ওঠে বলল,
__‘তাহলে তুইও ছাগল। আমার মতো তুইও তো বন্ধু বোনের প্রেমে পরেছিস। তার বেলায়?’

ছাদের রেলিং এ দু’হাতে ভর দিয়ে বসে আছে তিয়ানা। হঠাৎ করে তার জীবনটা উলটপালট হয়ে গেল। ভালই তো ছিল তার নিজের জগত। সেখানে কেন সে নিজের জীবনের সত্যিটা জানতে পারলো? তার আম্মু তার নিজের আম্মু না। এটা কি করে মানবে সে? যাবে ছোটো বেলা আম্মু জেনে এসেছে সে নাকি তার মা’ই না। আর জিনি মা সে কবরে শুয়ে আছেন অন্যের জীবন ধ্বংস করে। আর যাকে ভালোবাসলো সে নাকি অন্য কাউকে ভালোবাসে। ‘হু! হু!’ করে কেঁদে দেয় তিয়ানা। কিছু ভালো লাগছে না তার। কোথায় একটা চলে যেতে ইচ্ছে করছে। পাশে কারো উপস্থিতি টের অএয়ে চোখের জল মুছে তিয়ানা। পিছন ফরে তুলিকাকে দেখে মলিন হেসে বলল,,
__‘কিছু বলবে আম্মু?’
মেয়ের দিকে ভালো করে তাকায় তুলিকা। নেয়েটা দিম দিন কেমন শুকিয়ে যাচ্ছে। খায় না ঠিক মতো কেমন একটা গুটিয়ে ফেলছে নিজেকে। যে মেয়েটা বাড়ি মাতয়ে রাখে সে এখন প্রয়োজন ছাড়া কারো সাথে কথাও বলছে না। মেয়ের এক গালে হাত রেখে বলে,,
__‘ কি হয়েছে বলতো?’
__‘কি হবে কিছু না।’
সন্দেহ নিয়ে বলে তুলিকা,,
__‘কিছু একটা হয়েছে। নাহলে, আমার মেয়ে এভাবে চুপ থাকতে পারে না।’
মায়ের চোখ চোখ রেখে মলিন হেসে বলল তিয়ানা,,
__‘তোমার মেয়ে?’
হঠাৎ তিয়ানার এমন কথা বুকে ধক করে ওঠে তুলিকা। নিজের মনের ওঠা ঝড় কে দমিয়ে। অনেকটা আত্মবিশ্বাসের সাথে হেসে বলে উঠে,,
__‘হ্যা আমার মেয়ে। এখন বলতো কি হয়েছে এমন চুপচাপ কেন তুই? মেঘ একা ঘরে ‘ও’ কি ভাবছে বলতো?’
মায়ের কথায় কিছুটা রাগ নিয়ে বলে তিয়ানা,,
__‘তোমার মেঘ কি কখনো এই বাড়িতে একা থাকেনি আম্মু?’
__‘কিন্তু! তখনের থাকা আর এখনের থাকা এক নয়। এখন সে এই বাড়ির নতুন জামাই। তোর বর হয়!’
__‘আমি বর হতে বলেনি আম্মু।’
ধমকে ওঠে তুলিকা,,
__‘তিনু!! এসব কোন ধরনের কথা। আগে যে সম্পর্কই থাকুক না কেন! এখন মেঘ তোমার স্বামী। তাই তাকে তার যোগ্য সম্মান দিয়ে কথা বলবে।’
রাগ নিয়ে বলে উঠে তিয়ানা,,
__‘তাকে স্বামী হতে কেউ বলেনি আম্মু। তোমরা আমাকে বিয়েতে জোর করেছো। এমন কি মেঘ ভাইয়া কেও তোমরা জোর করেছো।’
তিয়ানার শেষের কথাটা শোনা মাত্র ভ্রু কুচকে ফেলে তুলিকা। বলল,
__‘মানে?’
কথা ঘুড়ায় তিয়ানা। আমতা আমতা করে বলল,,
__‘কিছু না।’
একটু থেমে বলল,,
__‘এটা সত্যি আম্মু। তুমি আমার চেয়ে মেঘ ভাইয়াকে বেশি ভালোবাসো’
হাসে তুলিকা। হেসে তিয়ানার দু’গালে হাত রেখে বলল,,
__‘প্রথমত নিজের স্বামীকে ‘ভাই’ বলতে নেই। জানি অভ্যেস! কিন্তু! অভ্যেস তো বদলাতে হবে।’
থেমে তিয়ানার কপালে ঠোঁট ছুয়ে বলল,,
__‘তুই তো আমার নাড়ি ছেরা ধন! তোর থেকে আর কাউকে ভালবাসতে পারি?’
মায়ের চোখের দিকে তাকিয়ে বলল তিয়ানা,,
__‘সত্যি কি তাই? নাড়ি ছেড়ে ধন?’
থমকায় তুলিকা সেই সাথে অবাক চোখে তিয়ানাকে দেখে। তিয়ানার ঠোঁটের কোণে অদ্ভুত এক যন্ত্রণাময় হাসির রেখা। অজানা ভয়ে বুক কেঁপে ওঠে তুলিকা। তিয়ানার গাল থেকে হাত সরিয়ে নেয় সে। তুলিকার হাতের দিকে একবার তাকিয়ে তাকে পাশ কাটিয়ে ছাদ থেকে চলে যায় তিয়ানা। তবে থমকে দাঁড়িয়ে থাকে তুলিকা। মেয়ের বলা শেষ কথার মানে খোজার চেষ্টা তার। ‘

চলবে?

( যারা ‘তিমেঘের’ কাহিনিতে গুরুত্ব দিচ্ছেন না তাদের বলছি সব রহস্যের জট মেঘেএ মধ্যে তাই সেদিকে দেখবেন। আর হ্যা এবার কিছু সাদিদ তুলির কাহিনি বাদ থাকবে ‘তিমেঘ’ আর তিলাত অবন্তীর কাহিনী চলবে কিছুদিন। যারা বড় দিতে বলেন তাদের বলছি আমি প্রতি দিন 1k+ ওয়ার্ড লিখি। মন্তব্য করবেন তাতে আগ্রহ বাড়ে। অবশ্যই নাইস নেক্সট বললবেন না। আজ আমি চরম বিরক্ত তাই আর রিচেক করা হয়নি)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here