আমার_আদরিনী আশুথিনী_হাওলাদার (ছদ্মনাম) পর্ব-২২

আমার_আদরিনী
আশুথিনী_হাওলাদার (ছদ্মনাম)
পর্ব-২২
মৌমিতার কোলে মাথা দিয়ে শুয়ে আছে মেঘালয়। মৌমিতা ছেলের চুলে হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। মেঘালয় হাত বাড়িয়ে মৌমিতাকে আলতো জড়িয়ে ধরে বলল,,,
__‘থ্যাংকস! আম্মু তিনুকে আমার করে দেয়ার জন্য।’
মুচকি হাসি মৌমিতা। কিছুটা জোড়ে মেঘালয়ের চুলে টান দেয়। মেঘালয় ব্যাথাতুর স্বরে বলল,,
__‘উফ! আম্মু লাগছে। ‘
হেসে বলল মৌমিতা,,
__‘তোর মনে মনে এসব ছিল বলিসনি কেন?’
মেঘালয় মায়ের কোলে মুখ লুকিয়ে বলল,,
__‘তখন সময় আসেনি।’
__‘যদি! সাদিদ ভাই প্রস্তাব দিলো। আমি শুধু ভাবছিলাম তোকে বলবো কি করে। পরে শুনি ডুবে ডুবে জল খাচ্ছিস বহুদিন।’
কথা শেষে খিলখিল করে হেসে দেয় মৌমিতা। সাথে যোগ দেয় মেঘালয়। মৌমিতা হাসি বন্ধ করে বলল,,
__‘জানিস তিনু কে আমি আমার কাছেই রাখতে চেয়েছিলাম। আর আমার কাছে রাখার উপায় ছিল তিনুকে তোর বউ করা। কিন্তু! তুলি বা সাদিদ ভাইকে বলার সাহস পায়নি তাছাড়া তুই মানবি কিনা সেটাও তো জানতাম না। ‘
ফটাফট বলল মেঘালয়,,
__‘এখন তো জেনেছো। বিয়েও হয়েছে এখন আমার বউকে আমার কাছে এনে দাও।”
চোখহ ছোটো ছোটো করে ফেলে মৌমিতা পরক্ষণে হেসে ছেলের গালে আলতো থাপ্পড় মেরে বলল,,
__‘বউ পাগল একটা। ‘
শব্দ করে হাসে ওঠে মেঘালয়।

তিয়ানা আনমনে অবন্তীর বাইকের সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। তার কি করা উচিত বুঝতে পারছে না। মেঘালয়কে প্রশ্ন করলেও মেঘালয় তাকে আশানুরূপ উত্তর দিচ্ছে না। কি করা উচিত তার? তিয়ানার পাশে এসে দাঁড়ায় অবন্তী। কিছুক্ষণ তাকে পর্যবেক্ষণ করে বলল,,
__‘তিনু? মন খারাপ?
অবন্তীর দিকে তাঁকিয়ে মলিন হেসে অশান্ত কন্ঠে বলল তিয়ানা,,
__‘নাহ! ঠিক আছি। ‘
খানিক থেমে বলল তিয়ানা,,
__‘আমার বিয়ে হয়ে গেছে অন্তী।’
অবন্তী বিস্ময় নিয়ে বলল,,
__‘হোয়াট?”
তিয়ানা মাথা ঝাঁকিয়ে বলল,
__‘ইয়াহ! বিয়ে হয়ে গেছে।”
__‘কবে? কখন? কার সাথে? ”
তিয়ানায় মৃদু হেসে আস্তে ধীরে প্রশ্ন কর বলছি,
__‘আজ এক সপ্তাহ হলো বিয়ে হয়েছে। সেদিন তোর সাথে কথা শেষে বাড়ি গিয়ে শুনলাম আমার নাকি বিয়ে। বাসর ঘরে গিয়ে দেখলাম আমার বর আর কেউ না মেঘ ভাইয়া। সবচেয়ে মজার ব্যাপার কি জানিস বিয়ের পরের দিন মেঘ ভাইয়ার কাছ থেকে জানতি পারি “সে অল্রেডি রিলেশনে আছেন। তার প্রেমিকা আছে যার নাম আদরিনী।”
শেষের কথা গুলো বলতে গিয়ে গলা ধরে আসে তিয়ানার। চোখের কোণের জল মুছে মুচকি হাসে।’
অবন্তী বিস্মিত দৃষ্টি নিয়ে তিয়ানার দিকে তাঁকিয়ে থাকে এভাবে। দু’জনে’ই চুপ থাকে কিছুক্ষণ। অবন্তী নিরবতা ভেংগে বলল,,
__‘এখন কি করবি?’
তাচ্ছিল্য হেসে বলল তিয়ানা,,
__‘অন্য সব টিপিকাল বউদের মতো স্বামীকে মানানোর চেষ্টা করবো। যদি মানে!”
তিয়ানার কথা শেষের সাথে সাথে তিলাত এসে দাঁড়ায় তাদের সামনে। তিলাত অবন্তীকে আড়চোখে এক পলক দেখেহে গলা খাকাড়ি দিয়ে বলল,,,
__‘তিনু চল। তোকে নিতে আসছি।”
তিয়ানা বিস্মিত স্বরে প্রশ্ন করল,
__‘আমাকে?”
তিলাত হাসার চেষ্টা করে বলল,,
__‘হ্যা! আম্মু বলল তুই আজ বাইক নিয়ে আসিসনি। তাই ভাবলাম তোকে নিয়ে যাই।”
তিয়ানা অবাক কন্ঠে বলল,,
__‘আজ সূর্য কোন দিক থেকে উঠলো?’
তিলাতের কপালে হাত দিয়ে বলল,,
__‘ দেখি! দেখি! তোর জ্বর টর এলো কিনা?”
অবন্তী হেসে বলল,,
__‘তিনু ভাইয়ার সাথে মজা করছিস কেন?’
অবন্তীর ভাইয়া ডাকে মেজাজ চটে যায় তিলাতের। ফোস করে বলল,,
__‘দেব একটা। বড় ভাইয়ের সাথে এভাবে কথা বলে। চল বাড়ি চল।
অবন্তীর দিকে তাঁকিয়ে তাকে মৃদু স্বরে,
__‘আসছি’
বলে তিয়ানার হাত ধরে টেনে গাড়ির কাছে নিয়ে যায় তিলাত।”

তিয়ানার বাড়ি ফরে নিজ ঘরে গিয়ে দেখে মেঘালয় তার বিছানা দখল করে শুয়ে আছে। তিয়ানা কটমট করে বলল,,
__‘আপনি আজ আমাদের বাড়িতে কি করছেন?’
হেসে শোয়া থেকে উঠে আসন পেতে বসে হাতের আংগুল ফুটাতে ফুটাতে বলল,,
__‘আর বলিস না বউ কে মিস করছিলাম। তাই বউয়ের কাছে চলে এলাম। ছেলেদের এই এক দোষ বুঝলি একবার বিয়ে হলে বউ ছাড়া চলে না। আমার চলছে তাই চলে এলাম।”
কপাল কুচকে ফেলে তিয়ানা। সাথে থাকা ব্যাগ পড়ার টেবিলের উপর রেখে। পা চেয়ারের উপর তুলে জুতো খুলতে খুলতে বলল,,
__‘বউ তো বোন। আপনার প্রেমিকা কই? তার কাছে যান।’
ফটাফট উত্তর দেয় মেঘালয়,,
__‘প্রেমিকা বিজি মানুষ। তাছাড়া অপশনাল হিসেবে বউ যখন আছে’ই,,,
ভ্রু কুচকে ফেলে তিয়ানা। তাকে কি বুঝালো মেঘালয়? সে ঐচ্ছিক? রাগী স্বরে বলল তিয়ানা,,
__‘ভাইয়া আপনি ঠিক কি চান? বউ নাকি প্রেমিকা?
থেমে মেঘালয়ের কাছে গিয়ে বলল,,
__‘ আমি অন্য সব মেয়েদের মতো নই যে নিজে সেক্রিফাইস করবো। আমার অধিকার আমি বুঝে নেব।’
বাঁকা হাসে মেঘালয়,,
__‘তাই? আমি আমার প্রেমিকাকে ছাড়ছি না তিনু। দেখি তুই কি করতে পারিস। সব তোর বাপ আর আমার বাপের জন্য হয়েছে তারা আমাকে জোর করেছে।’
এক কথা বার বার সহ্য হচ্ছে না তিয়ানার রেগে বলল,,
__‘সেটা আপনার আর তাদের ব্যাপার আমার নয়? আপনি ছোটো বাচ্চা না যে জোর করে বিয়ে দিয়ে দেবে কেউ। আর হ্যা! আমি যতটুকু জানি মেঘালয় চৌধুরীকে জোর করে কোনো কাজ করানো ক্ষমতা কোনো মানুষের অন্তত নেই।’
নিজেকে শান্ত করে তিয়ানা। ধরে আসা স্বরে বলল,,
__‘আমি এসব নিতে পারছি না মেঘ ভাইয়া। হয় তুমি আমাকে রাখো নয়তো তোমার প্রেমিকাকে। এমনিতে আমি খুব ডিপ্রেসড আছি। এই বিয়ে বিয়ে খেলা নিয়ে অতিরিক্ত চাপ নিতে চাচ্ছি না। ”
কথা শেষে ওয়াশ্রুমে গিয়ে শব্দ করে ওয়াস্রুমের দরজা আটকে দেয় তিয়ানা। মেঘালয় আহমক হয়ে চেয়ে আছে। এত এত কথা তাকে তিয়ানা শুনালো? রিয়াল্লি? বিয়ে হতে না হতে এতো সাহস বেড়ে গেল?

সোফায় বসে চা খাচ্ছিল সাদিদ। তুলিকা তার সোজাসুজি কাউচে এসে বসলো। কিচ্ছুক্ষণ হাসঅফাস করে বলল,,
__‘একটা কথা ছিল।’
সাদিদ পেপারের কাগজ হাতে নিয়ে বলল,,
__‘বলো?’
তুলিকা আমতা আমতা করে বলল,,
__‘বলছিলাম। তিনুকে এভাবে জোর করে বিয়ে দেয়াটা কি ঠিক হলো?’
কপাল কুচকে ফেলে সাদিদ। নিউস পেপার থেকে চোখ সরিয়ে তুলিকার দিকে তাঁকিয়ে বলল,,
__‘মানে?’
__‘আসলে তিনু হয়তো এই বিয়েতে খুশি না। ‘
সাদিদ ভ্রু কুচকে শান্ত কন্ঠে অরশ্ন করলো,,
__‘তিয়া তোমাকে কিছু বলেছে?
__‘না! বলেনি কিন্তু ওর মুখ দেখে বোঝা যাচ্ছে। ইদানিং তিনু খুব আনমনা থাকছে। তিনু তো এমন নয়।”
__‘ যখন তিয়া নিজে থেকে কিছু বলেনি। তখন তোমাকে আগ বাড়িয়ে কিছু ভাবতে হবে না। তেমন কিছু না।’
মেজাজ চটে যায় তুলিকার। ধীর কন্ঠে বলল,,
__‘তিয়ানা আমার মেয়ে সাদিদ। আমাকে ভাবতে হবে।’
সাদিদ তাচ্ছিল্য হেসে বলল,,
__‘উমহুম! ভুল। তোমার মেয়ে নয় তোমার বোন আর আমার মেয়ে। ”
কথাটা মনে হলো তুলিকার বুকে গিয়ে বাঁধলো মনে হলো। কাঁপা স্বরে বলল,,
__‘সাদিদ! আমার মেয়ে হয় তিয়ানা। কোলে পিঠে করে বড় করেছি। জন্ম না দেই মানুষ তো করেছি।
তুলিকার কথার প্রতি উত্তরে কিছু মা বলে সোফা থেকে উঠে চলে যায় সাদিদ। তুলিকা পাথর হয়ে বসে থাকে। আজ তিয়ানা তার নিজের সন্তান হওয়া সত্যেও জোর গলায় বলতে পারছে না সে। ইচ্ছে করলো তুলিকার চিৎকার করে সাদিদকে বলতে,,
__‘তিয়ানা শুধু তোমার মেয়ে নয় সাদিদ। আমারও মেয়ে আমার নিজের পেটের সন্তান। যাকে আমি গর্ভে ধারণ করেছি। যাকে দশ মাস দশ দিন পেটে রেখে সকল কষ্ট, যন্ত্রণা সহ্য করে জন্ম দিয়েছি। তিয়ানার প্রতি তোমার যতটা অধিকার ঠিক তার সমান অধিকার আমারও। কারণ আমি ‘ওর’ মা। নিজের মা! যে তাকে জন্ম দিয়েছে।”

চলবে?
(কাল আমার মন খারাপ ছিল। লেখার ইচ্ছে পাচ্ছিলাম না তাই দেইনি। আজও ছিল না কিন্তু আপনাদের আশায় রাখতে ইচ্ছে করলো না তাই দিলাম। যখহন আপনাদের অপেক্ষার কথা ভেবে ইচ্ছে না থাকা সত্তেও দিলাম। তো আপনারাও একটু ভালো ভালো মন্তব্য কইরেন)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here