আমার_আদরিনী আশুথিনী_হাওলাদার (ছদ্মনাম) পর্ব-২৩

আমার_আদরিনী
আশুথিনী_হাওলাদার (ছদ্মনাম)
পর্ব-২৩
‘অতীত’
সাদিদ-তিয়াসার বিয়ের পর বহুবছর দেশে ফেরেনি তুলিকা। প্রায় ১১ বছর পর নিজ মায়ের মৃত্যু সংবাদ পেয়ে দেশে পা রাখে সে। আপনজন বলতে নানা আর মা ছিল। নানা মারা যান বছর ছয় আগে এরপর মা। নিজের বলতে কেউ ছিল না তুলিকার। শূন্য ঘর আর এত এত স্মৃতি। সাথে সাদিদ সবসময় চোখের সামনে। সাদিদের সামনে নিজেকে স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করলেও সাদিদের তীক্ষ্ণ দৃষ্টি থেকে নিজে আড়াল করতে পারেনা তুলিকা। তুলিকার ফেরার পর তিয়াসা খুব হীনমন্যতায় ছিল। বোনের কাছে ক্ষমা চাওয়ার মুখ তার ছিল না আর না বোনকে নিজের ভালোবাসা ফিরিয়ে দেয়ার। কারন ততোদিনে সে এক সন্তানের মা। সাদিদ তাকে যত’ই না মানুক এটা তো সত্যি সে সাদিদের বউ। তুলিকা অবশ্য বোনের সাথে স্বাভাবিক ভাবে’ই কথাতা বলেছে এমন যে কিছুই হয়নি। তিলাত কে নিজের কাছে টেনে নিয়েছে। তুলিকাকে দেখে পুরনো ক্ষত গুলো তাজা হয়ে ওঠে সাদিদের। প্রায় আট বছর পর সে আবার বারে যায়। এবং মাত্রাতিরিক্ত ড্রিংক করে শুধু ড্রিংক করে না তুলিকাকে ফোন করে কথা শুনাতে থাকে। বেশি ড্রিংক করে ফোলে সাদিদ উঠে দাঁড়াতে পর্যন্ত পারে না। বারের ম্যানেজার সাদিদের থেকে ফোন নিয়ে তুলিকাকে সবটা জানায়। কল পেয়ে ছুটে যায় তুলিকা। সাদিদকে ওই অবস্থায় দেখে নিজেকে শেষ করে ফেলতে ইচ্ছে করে তার। হাত ধরে সে সাদিদের। সাদিদ তুলিকার হাত খামচে ধরে। নিজের কাছে টেনে তুলিকার থুতুনি আংগুল দিয়ে চেপে ধরে বলল,,
__‘আই হেইট ইউ।’
এই তিনটি শব্দ কানে যাওয়া মাত্র তুলিকার বুকে যন্ত্রণা শুরু হয়। চোখ থেকে টুপ করে কয়েক ফোটা জল গড়িয়ে পরে। সাসিদ নিজের আংগুলের মাথায় জল গুলো নিয়ে তাচ্ছিল্য হেসে বলল,,
__‘ছলনাময়ী! ছলনাময়ীদের কাঁন্নাও পায়? মায়া কাঁন্না!
কথাটা কানে যাওয়া মাত্র তুলিকার মনে হলো কেউ তার বুকে পাথর রেখে দিয়েছে। খুব কষ্ট হয় তার নিশ্বাস আঁটকে যায়। কাঁন্নারা দলা পাঁকিয়ে বেড়িয়ে আসতে চায় ভিতর থেকে। কাঁন্না আঁটকাতে ঢোক গিলে তুলিকা গলায় জ্বলে ওঠে।নিজেকে সামলে ধরা গলায় বলল,,
__‘উঠন! বাড়ি যেতে হবে।’
তুলিকা ঠেলে দূরে সরিয়ে দেয় সাদিদ। রাগী স্বরে চেচিয়ে বলল,,
__‘কার বাড়ি? কীসের বাড়ি? ওই বাড়িতে আমি শান্তি পাইনা। এখানে পাই! এই যে এটা, এটা আমার বাড়ি। তুমি ফিরে আসছো কেন? আমার পুড়ে ছায় হয়ে যাওয়া জীবন কে আরো শেষ করে দিতে? আই হেইট ইউ! আই হেইট ইউ!” ঠকিয়েছো তুমি তোমার বোন সবই সবাই ঠকিয়েছো। আই হেইট বোথ অফ ইউ ।”
সাদিদের চেচানোতে আসে পাশের সবাই তাদের দিকে তাঁকায়। সাদিদ তাতে কোনো ভ্রুক্ষেপ না করে নিজ মনে ড্রিংক করতে থাকে। তুলিকা ড্রিংকের বোতল কেঁড়ে নেতে চায়। সাদিদ রক্ত চুক্ষ নিয়ে তাঁকায় তুলিকার দিকে। হালকা ভয় পেলেও পাত্তা দেয়না তুলিকা ড্রিংকের বোতল সাদিদের হাত থেকে কেঁড়ে নেয় সে। বারের বিল মিটিয়ে সাদিদ কে নিয়ে বাইরে আসে। বাইরে তুমুল বৃষ্টি হচ্ছে। সাদিদ নিজের হাত তুলিকার থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে বারের ভিতরে যেতে নেয়। তুলিকা তাকে ধরে বৃষ্টি মাথাতে নিয়ে’ই রহনা দেয় বাড়ির পথে । ফেরার পথে দু’জনে বৃষ্টিতে ভিজে যায়। তুলিকা বাড়ি ফিরে সাদিদকে নিজের ঘরে রেখে তিয়াসার ঘরের দরজায় টোকা দেয়। তিয়াসা মাথা ব্যাথার কারনে ঘুমের ওষুধ খেয়ে ঘুমিয়ে পরে অনেক আগে’ই। বিরক্ত হয় তুলিকা কিছুক্ষণ দরজায় টোকা দিতে থাকে। তিয়াসার সারা না পেয়ে বিরক্তি নিয়ে ড্রয়ং রুমের দোফায় বসে পরে সে। কি করবে বুঝতে পারছে না তুলিকা। সাদিদ নিজের মধ্যে নেই। বৃষ্টিতে ভেজার ফলে শরীরের কাপড়ও ভিজে চুপেচুপে হয়ে আছে। কিছুক্ষণ থম মেরে সোফায় বসে থাকে তুলিকা। মানুষটা তার নেই। বোনের স্বামী হয়। বোনের স্বামীকে কি করে চেইঞ্জ করাবে সে? যার স্বামী সে তো মরার মতো ঘুমচ্ছে। রাগ হচ্ছে তুলিকার। নিজের রাগকে দমন করে সাদিদের ঘরে যায় তুলিকা। মানুষটাকে তো সে ভালোবাসে কি করে এভাবে ভেজা কাপড়ে ফেলে রাখবে। যদি! জ্বর হয় তার উপর আবার সাদিদের শরীরে টাইফয়েডের জীবানু আছে। এর আগের বারের কথা ভেবেই কেঁপে ওঠে তুলিকা। সেবার জ্বর হয়ে বেশ কিছুদিন হস্পিটালাইজড হতে হয় সাদিদকে।

তুলিকা ঘরে গিয়ে দেখে সাদিদ ভেজা শরীরে বিছানায় সোজা হয়ে হাত-ছড়িয়ে শুয়ে আছে। রাগ হয় তার রাগে ফোস ফোস করতে করতে নিজে মনে বকে, তাকে ঝামেলায় ফেলে নবাবজাদা ঘুমচ্ছে। তুলিকা কোমড়ে আঁচল গুজে খাটে উঠে সাদিদের শার্টের বুতাম খুলতে নেয়। চোখ বন্ধ অবস্থায় তুলিকার হাত খামছে ধরে সাদিদ। তুলিকা ভ্রু কুচকে সাদিদের মুখ পাণে তাঁকায়। সাদিদ চোখ খুলে তুলিকাকে দেখে ফিচলে হাসে৷ তুলিকা আহমক হয়ে চেয়ে থাকে। সাদিদ তাকে দেখে হাসছে। রিয়াল্লি? নেশায় ভালো মতই’ ধরেছে তাহলে। মৃদু দীর্ঘশ্বাস ফেলে সাদিদের হাত সরিয়ে বুতাম খুলতে নেয় সে। সাদিদ আবারও হাত ধরে তুলিকার। তুলিকা বিরক্তি নিয়ে সাদিদের দিকে তাঁকায়। সাদিদ হো হো করে হেসে দেয়। সাসিদের হাসি দেখে বুকের ভিতর কেমন কেমন খা খা করে ওঠে তুলিকার। অনেক দিনের তৃষ্ণার্ত লাগছে নিজেকে। এই হাসিটা, এই মানুষটাকে না দেখে সে এত বছর ভীনদেশে পরে ছিল। চোলহ থেকে জল গড়িয়ে পরে তার। পরক্ষনে চোখ মুছে নিজেকে সামলে বলল,
__‘এসব কোন ধরনের পাগলামি সাদিদ? শার্ট খুলতে দাও অনেক্ক্ষণ যাবত ভেজা শরীরে আছো।’
সাদিদ বাচ্চাদের মতো মিনমিন করে বলল,,
__‘হ্যা খুলতে দেই আর তুমি আমার ইজ্জত লুটু।”
সাদিদের এহনো কথায় থতমত খেয়ে যায় তুলিকা। খাট থেকে নেমে উঠে দাঁড়িয়ে বলল,,
__‘তোমার অনেক নেশা হয়ে গিয়েছে। আগে নেশা কাঁটাতে হবে।
তুলিকার কোমড় থেকে শাড়ির আঁচল খুলে আঁকড়ে ধরে সাদিদ। সাদিদের এমন কান্ডে হতভম্ব হয়ে যায় তুলিকা।
ভয়ে ভয়ে বলল,
__‘কি করছো? ‘
জোরে হেসে দেয় সাদিদ। নেশাতুর কন্ঠে বলল,
__‘খাবো! তোমাকে খাবো।’
কেঁপে ওঠে তুলিকা। সাদিদের থেকে শাড়ির আঁচল ছাড়াতে নেয়। সাদিদ শাড়ির আঁচল আঁকড়ে ধরে টেনে তুলিকাকে বিছানায় ফেলে তার উপরে উঠে যায়। ভয় পেয়ে যায় তুলিকা। ভয়ে ভয়ে বলল,,
__‘সাদিদ ছাড়ো।’
সাদিদ নেশার ঘোরে বলল,,
__‘না।’
অসহায় কন্ঠে বলল তুলিকা,,
__‘প্লিজ সাদিদ ভুল হয়ে যাবে। ‘
শোনে না সাদিদ। তুলিকার ঘাড়ে মুখ ডুবায় চুল সরিয়ে ঠোঁট ছোয়ায়। শিউরে ওঠে তুলিকার ইচ্ছে করছে সাদিদের এই পাগলামোকে সায় জানিয়ে নিজেকে বিলিয়ে দিতে। কিন্তু না! সে বেইমান হতে পারবে না।
সাদিদকে নিজের থেকে সরাতে চায় সে। তবে সাদিদের পুরুষ শক্তির সাথে পেরে উঠছে না সে। না পেরে অনুনয় করে বলল,,
__‘ভুল হচ্ছে সাদিদ! তুমি নেশার ঘোরে আছো।’
__‘হুম!’
কঠর কন্ঠে বলে তুলিকা,
__‘ছাড়ো আমাকে সাদিদ।’
সাদিদ খিল কখিল করে হেসে উঠে বাচ্চা স্বরে বলল,,
__‘ছাড়বো না! তোমাকে আদর করবো।’
নিজেকে মানাতে পারছে না তুলিকা। আর না সাদিদ কে থামাতে পারছে। তিয়াসাকে কি জবাব দেবে সে? সকাল হলে সাদিদ নিজেও সবটা ভুলে যাবে। তখন, সাদিদ যদি বলে,, সে সাদিদের নেশার ঘোরে সুযোগ নিয়েছে। এমনি সাদিদ তাকে ঘৃনা করে। ঘৃনাটা হয়তো আরও বেড়ে যাবে। সাদিদ কে ঠেলে উঠতে নেয় তুলিকা। কিন্তু সাদিদ আঁকড়ে ধরে তাকে। শত চেষ্টা করেও সাদিদ কে আঁটকাতে পারেনা তুলিকা। পূর্নতা পেয়ে যায় তাদের ভালোবাসা তবে অবৈধ ভাবে। তাদের সম্পর্কের ১৩ বছর পর। দু’জন ভালোবাসার মানুষ শারীরিক ভাবে এক হয়। ভোরে সাদিদ ঘুমোনো মাত্র তুলিকা শরীরে শাড়ি পেঁচিয়ে নিজ ঘরে চলে যায়।

চলবে?

(রিচেক করেনি বানানে ভুল থাকতে পারে। এক্সুয়াল্লি আমি একটু ঝামেলায় আছি। হোস্টেলে উঠবো তাই সব গুছ গাছ করতে হচ্ছে। তাই গল্প দিতেও দেরী হচ্ছে বা দেয়া হচ্ছে না। তারপর কিছু পারসোনাল প্রবলেমে আছি। যাক মন্তব্য আশা করছি। আর মেবি আমার মনে হচ্ছে আমি তাল ঘোল পাঁকিয়ে যাচ্ছি গল্পে😑😑😑)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here