আমার_আদরিনী আশুথিনী_হাওলাদার (ছদ্মনাম) পর্ব-২৫

আমার_আদরিনী
আশুথিনী_হাওলাদার (ছদ্মনাম)
পর্ব-২৫
লাল টুকটুকে শাড়ি পড়ে মুখে বিশ্বজয়ের হাসি নিয়ে মেঘালয়ের ঘরের মাঝ বরারবর দাঁড়িয়ে আছে তিয়ানা। পাশে থাকা কাউচে হেলান দিয়ে কপালে এক হাত রেখে বসে আছে মেঘালয়। তিয়ানা সেদিকে তাঁকিয়ে কিটকিটিয়ে হেসে দেয়। মেঘালয় ভ্রু কুচকে তাঁকিয়ে আছে তার দিকে। তিয়ানা হেসে মেঘালয় বরাবর বিছানায় আসন পেতে বসে, মিচকে হেসে বলল,,
__‘কেমন দিলাম?’
মেঘালয় থমথমে কন্ঠে বলল,,
__‘এখানে আসার জন্য উঠে পরে লেগেছিস কেন?’
তিয়ানা ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বলল,,
__‘জামাইর পরকীয়া দূর করার জন্য।’
চোখ পাকিয়ে তাঁকায় মেঘালয়। রাগী স্বরে বলল,,
__‘হোয়াট! পরকীয়া? আমি পরকিয়া করছি?’
__‘অবশ্যই! এটা পরকীয়া। বউ কে লুকিয়ে অন্য মেয়ে নিয়ে ঘুরলে সেটা পর%কিয়া’ই।’
পায়ে ধুম করে শব্দ করে সোফা থেকে উঠে দাঁড়ায় মেঘালয়। খাটের কাছে এসে হালকা ঝুঁকে ধমকে বলে উঠলো,,
__‘বৃষ্টি আমার গার্লফ্রেন্ড। আর সেটা তোকে বিয়ে করার আগে থেকে।’
তিয়ানা কপাল কুঁচকে প্রশ্ন করলো,,
__‘কতদিন?’
মেঘালয় চার টা আংগুল তুলে বলল,,
__‘চার! চার বছর। আমি পরকীয়া করছি না। তুই আমাদের মধ্যে ঢুকে পরেছিস। সেটার তোর বাপ আর আমার বাপের জন্য।
তিয়ানা বিরক্তি নিয়ে বলল,,
—_‘ধুরো! খালি এক কথা। আমার বাপ আর তোর বাপের জন্য। তো! তাতে আমি কি করবো? আমার তো হাত নেই। আর প্রেম করছেন ভালো কথা। এখন ভুলে যাবেন ব্যাস তাহলে’ই হলো। ‘
__‘ভুলে যাবো মানে? তুই ভুলে যাবি! তুই এক্ষুনি যাবি আমার ঘর থেকে। কাল আমার বাড়ি থেকে।’
মেঘালয়কে সম্পুর্ন অগ্রাহ্য করে বিছানার এক পাশে শুয়ে পরে তিয়ানা। শুয়ে নিজ হাতের আংগুল টানতে টানতে ব্যাঙ্গ করে বলল,,
__‘তুই যাবি! কেন? আমি যকেন যাবো? আমাকে কি নিরহ মনে হয়? আমি যাবো না। এটা আমার বরের ঘর। এখানে আমি থাকবো আমার অধিকার এটা। আপনি আপনার ওই গার্লফ্রেন্ড টারফ্রেন্ড কে ভুলে যান।’
মেঘালয়কে কথা গুলো শুনিয়ে চোখহ বন্ধ করে ঘুমিয়ে পরে তিয়ানা। মেঘালয় হতবাক হয়ে চেয়ে আছে তিয়ানার মুখের দিলে। সে হাসবে না কাঁদবে ঠিক বুঝতে পারছে না। এই মেয়ে তার বাপের মতো’ই হিটলার। কি ভাবলো আর কি ঘটছে। মেঘালয় দুঃখি দুঃখি মুখে সোফায় বসে পরে। আজ সে মায়ের কল পেয়ে ‘ও’ বাড়ি গিয়ে দেখলো তিয়ানা শাড়ি, চুড়ি পরে ফিটফাট বউ সেজে বসে আছে। কি হলো ব্যাপারটা বোঝার আগে’ই তার ঘাড়ে চেপে এ বাড়িতে চলে এলো। রিয়াল্লি? মেঘালয় চৌধুরীকে ঘোল খাওয়াচ্ছে এই টুকু পুচকে মেয়ে। যাকে সে জন্মাতে দেখেছে। তার কোলে উঠে পটি, হিসু করে তাকে ভাসিয়ে দিয়েছে। সেই মেয়ে কিনা এখন বউ হয়ে নাচাচ্ছে তাকে। এটাও হয়? এই পুচকে মেয়েকে সে ছোটো বেলায় কাঁধে করে নিয়ে ঘুরেছে আর সেই মেয়ে বড় হয়ে তার কাঁধে আঠার মতো চরে নৃত্য করছে। কি আর করবে? সহ্য করছে। ঘরের লাইট অফ করে সোফাতে শুয়ে পরে মেঘালয়। ভুলেও বিছানার দিকে ফিরে তাঁকায় না সে। দেখা যাবে নিজের কন্ট্রোল’ই হারিয়ে ফেলল। তিয়ানার ছোটো থেকে’ই ঘুমালে দিন দুনিয়ার হুস থাকে না। সাথে জামা কাপড়েরও ঠিক ঠিকানা থাকে না। আজ তো আবার ঘটা করে শাড়ি পরেছে।

“বিছানায় বালিসের সাথে হেলান দিয়ে বই পরছে অভীক। পাশে এসে বসে মৌমিতা। অভীক বই বন্ধ করর বলল,,
__‘কাজ শেষ?’
মৌমিতা মুচকি হেসে বলল,,
__‘হ্যা!’
অভীক হেসে বলল,,
__‘আমাদের বউমার কি খবর?’
__‘খাইয়ে দাইয়ে ছেলের ঘরে রেখে আসলাম।’
অভীক হাসতে হাসতে বলল,,
__‘ভাগ্য করে ছেলের বউ পেলাম। আজ মনে হলো তার এখন শশুড় বাড়িতে থাকা দরকার। আজ’ই চলে আসলো। ‘
অভীকের হাসির সাথে তাল মিলিয়ে হাসে মৌমিতা।
হাসি থামিয়ে বলল মৌমিতা,
__‘দেখো! আমাদের তিনু-মেঘ ওরা খুব সুখি হবে।’
অভীক তাল মিলিয়ে বলল,
__‘হ্যা ইনশাআল্লাহ! শুধু সাদিদ আর তুলির ব্যাপারটা যদি সব ঠিকঠাক হতো।’
মৌমিতার চোখ ছলছল করে ওঠে। চোখে জল চলে আসে তার। ধরা গলায় বলল,,
__‘তুলির ভাগ্যটা এতো খারাপ কেন হলো বলোতো? সাদিদ ভাই কি পারতো না সব ভুলে ওকে মেনে নিতে?’
অভীক চোখের চশমা খুলে পাঞ্জাবির কোনা দিয়ে মুচতে মুচতে বলল,,
__‘সাদিদের সাথে কথা বলেছি আমি। কিন্তু! সে তো সে। নিজে যা বোঝে সেটাই করে। বুড়ো হয়ে গেল শালা তারপরও ত্যাড়ামি গেল না।’
বলে হাসা শুরু করে সাদিদ। মৌমিতা কিছু না বলে চোখের জল মুছে উঠে আলমারি খুলে ব্লাংকেট নামায়। আজ একটু বেশি শীত পরেছে। অভীক সেদিকে তাঁকিয়ে বলল,,
__‘এটা আবার নামাচ্ছো কেন? আছে তো একটা। ‘
মৌমিতা ব্লাংকেট বিছানায় রেখে বলল,,
__‘ওটা পাতলা। আজ বেশি শীত শীত লাগছে।’
একটু থেমে কিছু একটা ভেবে বলে উঠলো মৌমিতা,,
__‘আমাকে ভাবাচ্ছে অভীক। সাদিদ ভাইকে না আবার পরে আফসোস করতে হয়। বয়স তো কম হলো না আমাদের তার বুঝতে বুঝতে আবার না বেশি দেরী হয়ে যায়। তুলির শরীরটা আজকে ভালো ঠেকছিল না।’
অভীক অবাক হয়ে প্রশ্ন করলো,
__‘মানে?’
মৌমিতা ঘুমানোর জন্য বিছানা গুছাতে গুছাতে বলল,
__‘তুলির শরীর ইদানিং ভালো যাচ্ছে না। সে ব্যাপারে হয়তো সাদিদ ভাই কিছু জানেও না। বয়স তো আর কম হলো না ৫২ পেরিয়ে গেল বলে। তার উপর আবার মনের শান্তি বড় শান্তি। মনের শান্তীটা ঠিক কি সেটা তো আমার বান্ধুবি এ জীবনে বুঝলোও না আর পেলোও না।’

বেলকনিতে থাকা দোলনায় মোবাইল হাতে বসে আছে তিলাত। ডায়েলে অবন্তীর ফোন নম্বর। যা সে আজ তিয়ানার ফোন থেকে চুরে করেছে। ফোন করবে কি করবে না। ভেবে পাচ্ছে না দু’মোনায় আছে সে। রাত প্রায় একটা বাজে এত রাতে কল দিলে যদি তাকে খারাপ ভাবে। তিলাতের ভারি দুঃখ লাগে মনে। তার বিয়েটাও যদি মেঘ-তিনুর মতো হঠাৎ করে এভাবে হয়ে যেত। আর ভাবতে পারছে না তিলাত। যদি খারাপ ভাবে তো ভাব্বে! তাই বলে এমন যন্ত্রণা নিয়ে থাকা যায় না। আল্লাহর নাম নিয়ে কল দেয় সে।
রিং হচ্ছে তার সাথে বুকে ধুকপুক শুরু হয়ে যায় তিলাতের। এটা আবার মহা জ্বালা মেয়েদের মতো হাত- পা কাঁপা শুরু হয় তার। কল রিসিভ হওয়ার আগে কেঁটে দেয় সে। কল কেঁটে বড় করে শ্বাস নেয় সে। তার দ্বারা এসব কল টল প্রেম ট্রেম কিচ্ছু হবে না। আঠাইস বছরের যুবক হয়ে কিনা আট বছরের ছোটো মেয়েকে নিজের মনের কথা বলতে পারছে না সে। কি লজ্জাকর ব্যাপার। মা’কেও জানাতে পারছে না। নিজ মনেই বলে সে,
__‘তোর মরে যাওয়া উচিত তিলাত। তুই পুরুষ জাতির মান ডুবাবি।’
দুঃখি মনে বেলকনি থেকে রুমে এসে বিছানায় সোজা হয়ে শুয়ে পরে সে। বিছানায় শোয়ার পর’ই হঠাৎ তার মনে হলো। তার বোন বাড়িতে নেই শশুড় বাড়ি চলে গিয়েছে। এই বাড়িতে আর থাকবে না। দু’জন সারাক্ষণ ঝগড়াও করতে পারবে না । আর কেউ ভুল করে তাকে ফাসিয়ে দিয়ে মায়ের বকুনি খাওয়াবে না। এই বাড়িতে মাঝে মাঝে আসবে বেড়াতে। বুকের ভিতর কেমন ব্যাথা অনুভব হয় তিলাতের। কেমন অজানা যন্ত্রণা শুরু হয় তার। ইচ্ছে করছে দৌড়ে ও বাড়ি চলে যেতে। আজ মায়ের কথাও মনে পরছে তার। মা সব সময় বলতো,
__‘তাত’ বাবা আমি না থাকলে বনুকে দেখে রাখিস কেমন?’
মা নেই! মা মারা গেছে বহুবছর হলো কিন্তু কখনো তিলাতের মায়ের অভাব মনে হয়নি। কারন, তার আম্মু কখনো তাকে সেটা বুঝতেও দেয়নি। আজ বোনটা চলে যাওয়ার সাথে সাথে মায়ের কথাও বড্ড মনে পরছে তার। আচ্ছা! আজ বোন চলে যাওয়ার সময় আম্মুর(তুলিকা) চোখে মুখে যে ব্যাথা অনুভব করছিল ঠিক ততোটা কষ্ট কি আর মায়েরও হতো? কখনো কখনো তিলাতের মনে হয় মা কেন গেল তাদের ছেড়ে। পরক্ষণে মনে হয় মা(তিয়াসা) মারা না গেলে তো আম্মু (তুলিকা) আব্বু কখনো এক হতে পারতো না। আজ খুব কাঁদতে ইচ্ছে করছে তিলাতের। আচ্ছা! সব ভাইদের কি? বোনের বিদায়ে এমন কষ্ট অনুভব হয়? এতো! এতো যন্ত্রণা দায়ক। কই? তারাতো দু’জন সারাক্ষণ ঝগড়া করে দিন কাটাতো দু’জন দু’জনকে সহ্য করতে পারতো না এমন। তাহলে, এতো ভালোবাসা কোথায় লুকানো ছিল?

“বিছানায় হাত পা গুটিয়ে থম মেরে বসে আছে তুলিকা। সাদিদ ঘরে এসে তুলিকাকে এভাবে বসে থাকতে দেখে কাছে এগিয়ে এসে বলল,,
__‘মন খারাপ?’
আনমনে উত্তর দিলো তুলিকা,,
__‘আমার মেয়েটা বড্ড তারাতাড়ি বড় হয়ে গেল। তাই না?’
কিছু বলে না সাদিদ। সত্যি’ই মেয়েটা বড় হয়ে গেল। আর হয়তো বাবা -মেয়ে মিলে যখন তখন লং ড্রাইভেও বের হওয়া হবে না।
তুলিকাকে উদ্দেশ্য করে বলল সাদিদ,,
__‘তোমাকে দেখলে মনে হয় না তিলাত, তিয়ানা তোমার নিজের সন্তান না।’
সাদিদের কথার উত্তরে মৃদু হাসে তুলিকা।
সাদিদ তুলিকার পাশে বসে বলল,,
__‘আমার মাঝে মাঝে তোমাদের দু’বোনের জন্য আফসোস হয় তুলি।’
সাদিদের এহনো কথায় ভ্রু কুচকে তার দিকে তাঁকায় তুলিকা। তা দেখে সাদিদ মৃদু হাসলো তবে কিছু বলল না। বলতে ইচ্ছে করলো না তার। আর না তুলিকাকে জালাতে ইচ্ছে করলো আজ। তাই চুপচাপ শুয়ে ঘুমানোর চেষ্টা করলো সে।

চলবে?
(আজ কেউ ছোটো ছোটো বলবে না আজ পুরুউ ১২০০+ দিয়েছি। তবে গল্প ততোটা আগাইনি আস্তে আস্তে আগাবে ইনশাআল্লাহ)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here