আমার_আদরিনী আশুথিনী_হাওলাদার (ছদ্মনাম) পর্ব-২৭

আমার_আদরিনী
আশুথিনী_হাওলাদার (ছদ্মনাম)
পর্ব-২৭
অবন্তীকে নিয়ে দিয়াবাড়ি ঘুরতে আসে তিলাত। গত একমাসে তার অবন্তীর সাথে বেশ ভালো একটা বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে উঠেছে। আজ তিলাত অবন্তীকে প্রপোজ করে নিজের মনে কথা জানাতে চাচ্ছে সে। পাশাপাশি হাটছে দু’জন। গোলাওই শাড়ি পড়া অবন্তীকে বেশ সুন্দর লাগছে। চোখ ফিরাতে ইচ্ছে করছে না তিলাতের। আড়৷ চোখে এক পলক অবন্তীকে দেখে গলা খাকাড়ি দিয়ে বলল তিলাত,,,,
__‘তোমাকে খুব সুন্দর লাগছে। ‘
তিলাতের প্রশংসায় লজ্জা পায় অবন্তী। মুচকি হেসে বলল্,
__‘ধন্যবাদ।’
তিলা হঠাৎ করে গরম লাগতে শুরু করে। নার্ভাস লাগে আমতা আমতা করে জিজ্ঞেস করলো,
__‘তোমাকে একটা কথা বলি অবন্তী!’
__‘জী বলুন।’
খুব করে চাচ্ছে তিলাত মুখ ফুটে যে ‘আমি তোমাকে ভাকোবাসি অবন্তী’ কিন্তু বলতে চেয়েও বলতে পারেনা সে। নিজেকে খুব নার্ভাস লাগছে। গলা শুকিয়ে যাচ্ছে কেমন। বার কয়েক বড়ড় শ্বাস নিয়ে বলল,
__‘আমি তোমাকে ভালোবাসি অন্তী’ আই নিড ইউ’
বিস্মিত ভাবে চেয়ে থাকে অবন্তী। কখনো সে বুঝতে অয়ারিনি তিলাত এসব ভাবছে তাকে নিয়ে। বুকের ভিতর হঠাৎ করে ঝড় শুরু হয় তার। কিছু বলতে নেয় অবন্তী তাকে বলতে না দিয়ে তিলাত অস্থির কন্ঠে বলল,,
__‘আমি জানি তুমি কি বলবে। এটাই তো আমার তোমাকে পছন্দ না। আমাকে খারাপ ভাববে। আসলে ভাবার কথা আমি তো অনেক রিলিশন করেছি তাই আমাকে বিশ্বাস না করা’ই যায়।
অবন্তী ধমকে বলল,,
__‘থামেন তো! আমি কি একবারও বলছি সেটা? আপনি আমাকে কিছু বলতে’ই দিচ্ছেন না।’
অবন্তীর ধমকে থতমত খেয়ে যায় তিলাত। চুপ হয়ে থাকে সে। অবন্তী মৃদু লজ্জা হেসে বলল,,
__‘আমি কখনো কল্পনাও করিনি আপনি আমাকে নিয়ে কিছু ভাবেন। ‘
থেমে কাঁপা কন্ঠে বলল,,
__‘আপনি আপনার পরিবার নিয়ে আমাদের বাসায় আসতে পারেন।’
কথা শেষ করে তিলাতের সামনে আর দাঁড়ায় না অবন্তী। দৌঁড়ে তিলাতের নাগালের বাইরে চলে যায়। তিলাত সেদিকে তাঁকিয়ে আহমক হয়ে চেয়ে থাকে। অবন্তী কি ব্বোঝানে চেয়ে সেটা বুঝতে’ই হাসি দেয় তিলাত। হেসে নিজের মাথার চুকে হাত বুলায়। আজ তার খুব খুশি লাগছে। এত দিন পর সে নিজের মনের কথা জানাতে পেরেছে অবন্তীকে। এবার শুধু ঘরে বউ করে আনার পালা। কিন্তু! মা’কে কি করে জানাবে সে? সে তো মায়ের কাছে বলতে’ই পারবে না। এই এক মাস ধরে অনেক ট্রাই করছে সে তুলিকাকে অবন্তীর ব্যাপারে জানানোর জন্য। তবে সে ব্যার্থ! ভয়ে পেট দিয়ে কোনো কথাই বের হয়নি তার। মেঘালয় এটা নিয়ে খুব মজাও করেছে তার সাথে। শালার জামাইবাবু কি করে বুঝবে। কুছু না করে’ই তো তার রাস্তা কিলিয়ার হয়ে গেছে। শুধু সে মাইনকা চিলায় পরে আছে।

‘সকাল থেকে চুপচাপ আছে তিয়ানা। কারো সাথে তেমন একটা কথা না বলে মেঘালয়দের বাড়িতে নিজের আগের বরাদ্দ করা ঘরে গিয়ে খিল আঁটকে বসে থাকে। মৌমিতা কারন জানতে চাইলেও কিছু বলেনি তাকে তিয়ানা। বলতে ইচ্ছে হয়নি। কি বলবে সে? এটা যে তোমার ছেলে আমাকে ভালোবাসে না মাম্মি। তোমার তাকে আমার সাথে বিয়ে করিয়ে ভুল করেছো। সকাল থেজে এক ভাবে ফ্লোরে বসে আছে তিয়ানা। ঠিক কি করা উচিত সেটা নিয়ে ভাবছে সে। মেঘালয়কে কি সে মুক্তি দেবে? গত এক মাস ধরে মেঘালয়ের আচরণে তার প্রতি যে ভালবাসাটা সে অনুভব করলো তা সব মিথ্যে? সব! আর কিছু ভাবতে পারেনা তিয়ানা। নিজ ঘর থেকে বেড়িয়ে বাড়ি থেকেও চলে যায় সে। এই বাড়িতে এক মুহূর্ত থাকলে সে দম আঁটকে মারা যাবে।
“রান্না করছিল তুলিকা। হঠাৎ তাকে কেউ পিছন থেকে জড়িয়ে ধরায় চমকে গিয়ে ঘাবড়ে যায় সে। পিছন ফিরে তিয়ানাকে কান্নারত অবস্থায় দেখে বুক কেঁপে ওঠে তার। দু’হাত বাড়িয়ে মেয়ের গাল অব্দি গড়িয়ে পরা চোখের জল মুছে জিজ্ঞেস করলো,,
__‘আম্মা কি হইছে কাঁদতেছো কেন?’
তিয়ানা কিছুনা বলে মা’কে জড়িয়ে ধরে থাকে। অজানা আতংকে বুক কাঁপছে তুলিকার। তার মেয়ের কি হলো হঠাৎ করে। দু’হাত ধরে তিয়ানাকে জড়িয়ে ধরে চুলে বিলি কেঁটে বলল,,
__‘কি হইছে আম্মা? মেঘ কিছু বলছে?’
ফুঁপাতে ফুঁপাতে উত্তর দেয় তিয়ানা,,
__‘মেঘ ভাইয়া আমায় চায় না আম্মু। সে অন্য কাউকে ভালবাসে।’
মেয়েকে নিজের থেকে ছাড়িয়ে নেয় তুলিকা। তিয়ানাকে ঘরে নিয়ে বিস্মিত কন্ঠে জিজ্ঞেস করে,,
__‘মেঘ নিজে তোকে বলেছে?’
__‘হ্যা’
হতভম্ব হয়ে যায় তুলিকা। ধপ করে ফ্লোরে বসে পরে সে। মা’কে রভাবে নির্বাক হয়ে যেতে দেখে চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পরে তিয়ানার। আচ্ছা! এই মানুষটা তার নিজের মা হলে কি এমন ক্ষতি হতো? আজ তার কতটা কষ্ট পেল। কেন যেন মনে হচ্ছে তিয়াসা নয় তুলিকা’ই তার মা। তিয়ানা ফ্লোরে মায়ের পাশে বসে মায়ের কোলে মাথা রেখে শব্দ করে কেঁদে দেয়। কাঁদতে কাঁদতে বলল,,
__‘আমি মেঘ ভাইয়াকে খুব ভালবাসি আম্মু। উনি কেন ভালোবাসলো না আমাকে।”
তুলিকা পাথর হয়ে নির্বাক দৃষ্টিতে মেয়ের দিকে চেয়ে থাকে। ভাবছে সে, তার মেয়েও কি তার’ই ভাগ্য পেলো!’
মেয়েকে কোল থেকে তুলে, মেয়ের দু’গালে হাত রেখে ধরে আসা গলায় কেঁপে ওঠা ঠোঁটে বলল,,
__‘ সুখ পাবি কি করে? মায়ের ভাগ্য যে পেয়েছিস!’
মায়ের বলা কথায় থমকায় তিয়ানা। আম্মু কি তার নিজের মা তিয়াসার ভাগ্যের কথা বলল? ”
তিয়ানার খুব বলতে ইচ্ছে করলো,
__‘আমি কেন আমার মায়ের ভাগ্য পেলাম আম্মু।
আমি তো ক্ষতি করিনি কারো। আমি তো নিজে থেকে মেঘের জীবনেও ঢুকে পরিনি। তাহলে কেন? বাবা মাতের কর্মফল সন্তান ভোগ করে। আমি তো কারো খারাপ করিনি আম্মু। কিন্তু কিছু বলতে পারে না তিয়ানা। শুধু মায়ের দিকে এক দৃষ্টিতে তাঁকিয়ে থেকে মায়ের নির্বাক হয়ে যাওয়া মুখটা দেখলো। আচ্ছা! নিজের মা না হওয়া সত্যেও কি করে আম্মু তাদেরকে এতো ভালোবাসছে?

তিয়ানাকে সকালে কথা গুলো শুনিয়ে গেলেও। একটুকুওও শান্তি পায়নি মেঘালয়। মনে হলো সে তিয়ানাকে খুব বেশি আঘাত করে ফেলছে। তিয়ানা হয়তো খুব কষ্ট পেয়েছে। রাত করে বাড়ি ফেরে সে। তিয়ানার সম্মুখীন হতে ভয় হচ্ছিলো তার। মেয়েটা হয়তো কেঁদে কেঁটে চোখ মুখ ফুলিয়ে ফেলেছে। মায়ের (মৌমিতা) কাছেও হয়তো তার নামে বানয়ে বানিয়ে নালিশ করা হয়ে গিয়েছে এতক্ষণে। ঘরে এসে তিয়ানাকে না দেখে খুব অবাক হয় সে। সাথে মেজাজও বিগড়ে যায় তার। প্রতিদিন ঘরে ফিরে প্রথমে তিয়ানার হাসি মুখখানা দেখার অভ্যাস হয়ে গিয়েছে তার। প্রতিদিন তো ঘরে বসে তার জন্য অপেক্ষা করে মেয়েটা আজ কি হলো? কিছু একটা ভেবে মুচকি হাসে মেঘালয়। আজ তো তিনুরানী ক্ষেপে আছে তার উপর। হয়তো নিজের ঘরে গিয়ে খিল আঁটকে ঘুমিয়ে আছে তার উপর রাগ করে। কালকে’ই সে ওই রুমে তালা দেবে। কিছু একটা হলে’ই নিজের ঘরে গিয়ে খিল আঁটকানো বের করবে সে। মেয়েটা এত বোকা কেন? কেন বোঝে না মেয়েটা! সে তাকে’ই ভালোবাসে।

চলবে?
(আমার আপুর বিয়ে ১৭ তারিখ কালকে গায়ে হলুদ অনেক ঝামেলা । কালকেও দেয়ার চেষ্টা করবো গল্প। আর দেরী হচ্ছে কজ বোঝেন তো বিয়ে বাড়ি তাই।
আর হ্যা অনেকে বলছেন গল্প এক জায়গায় আটকে আছে তাদের জন্য বলছি এই জন্যই গল্পে লিপ নিয়েছি আর এখন নতুন কিছু আসতে চলছে গল্পে। এক্টু হিন্ড দিচ্ছি এতদিন মেঘ জালিয়েছে। এরপর তিয়ানা জালাবে। আর হ্যা রিচেক করিনি)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here