আমার_আদরিনী আশুথিনী_হাওলাদার (ছদ্মনাম) পর্ব-২৮

আমার_আদরিনী
আশুথিনী_হাওলাদার (ছদ্মনাম)
পর্ব-২৮
তিয়ানা সোজাসুজি সোফায় বসে আছে মেঘালয়। চোখের দৃষ্টি কঠর হাত রাগে মুষ্টিবদ্ধ করা। রাতে ঘরে না পেয়ে তখন’ই তিয়ানার খোজে এই বাড়িতে এসেছে সে। মেঘালয় তার দিকে কঠর দৃষ্টি নিয়ে তাঁকালেও সেদিকে পাত্তা দেয় না তিয়ানা। নিজের মতো নেল কাটার দিয়ে হাতে পায়ের নখ কেঁটে যাচ্ছে সে। এমন ভাব তার আসে পাশে সে ছাড়া আর কেউ নেই। তিয়ানার এমন আচরণে মেঘালয়ের রাগ হচ্ছে। বসে না থকতে পেরে উঠে দাঁড়িয়ে তিয়ানার কাছে গিয়ে ওঁর হাত ধরে টেনে সোফা থেকে উঠিয়ে রুমে নিয়ে গিয়ে দরজা আঁটকে দেয়। মেঘালয়ের হঠাৎ আচরণে কিছুটা বিস্মিত হয় তিয়ানা। বিস্মিত কন্ঠে প্রশ্ন করলো,
__‘এসব কি মেঘ ভাইয়া?’
রাগে মেঘালয়ের মাথার রগ টগবগ করছিল তার মধ্যে তিয়ানার তাকে ভাইয়া ডাকা যেন আরও রাগিয়ে দেয় তাকে। আসে পাশে তাঁকিয়ে বেড সাইডের টেবিলে থাকা টেবিল ল্যাম্প তুলে রেগে আচার মারে মেঘালয়। তিয়ামা হতভম্ব হয়ে যায় এহনো কান্ডে। ভয়ে ঢোক গিলে চোরা চোখে তাঁকিয়ে দুঃখি স্বরে বলল,,
__‘আমার স্বাদের মাটির হারিকেন ল্যাম্প’
মেঘালয় ভ্রু’কুটি করে তাঁকায়। সেটা দেখে মুখে হাত দিয়ে চুপ হয়ে যায় তিয়ানা। মেঘালয় রাগি রাগি কন্ঠে ধমকে উঠে বলল,,
__‘এই বাড়িতে কি করছিস।’
তিয়ানা মুখ থেকে হাত সরিয়ে। ধীর স্বরে বলল,
__‘আমার বাড়ি আমি আসবো না?’
__’‘না আসবি না। আসার আগে আমার পারমিশন নিয়েছিস?’
তিয়ানা কপাল কুচকে প্রশ্ন করল,
__‘আপনার পারমিশন কেন নিব?’
তিয়ানার হাতের বাহু ধরে চিবিয়ে চিবিয়ে ধমকে বলে মেঘালয়,
__‘আই অ্যাম ইউর হাসবেন্ড।’
হেসে দেয় তিয়ানা। তিয়ানার হাসি দেখে ভ্রু কুচকে ফেলে মেঘালয়। তিয়ানা হাসতে হাসতে মেঘালয়ের হাত থেকে নিজের হাত ছাড়িয়ে বিছানায় বসে পরে। খানিক্ষন পর হাসি থামিয়ে বলে উঠলো,
__‘রিয়াল্লি? আপনি আমার হাসবেন্ড? আপনি তো আমাদের বিয়েটা’কেই মানেন না। তাহলে হাসবেন্ড কি করে হন?’
জিহ্ব দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে বলে তিয়ানা,
__‘আমি আপনার বাড়ি ছেড়ে এসেছি। আমি কখনো’ই ফিরবো না। আপনি আপনার গার্ল্ফ্রেন্ড কে বিয়ে করতে পারেন। ‘
তিয়ানার এহনো কথায় হতবাক হয়ে যায় মেঘালয়। হাসি পাচ্ছে তার প্রচন্ড। সাথে তীব্র রাগ। রেগে বলল,
__‘তুই আমার বউ তিনু। আমি একবারও বলেনি বিয়ে মানি না শুধু এটা বলেছি আমি আমার গার্লফ্রেন্ডকে ছাড়তে পারবো না। বিকজ আই লাভ হার। তাছাড়া, তোর আর আমার মধ্যে সব হয়ে গেছে। গত এক মাসে বেশ কয়েকবার কাছাকাছি এসেছি আমরা। তাই আমি তোকে ছাড়তে পারবো না।”
মেঘালয়ের বলা প্রতিটা কথায় বুকের ভিতর তীব্র যন্ত্রণা শুরু হয় তিয়ানার। ধম বন্ধ হয়ে যাবার মতো অনুভূতি হয় তার। মনে হলো সে শ্বাস ফিরাতে পারছে না। বুকের তীব্রতর যন্ত্রণার সাথে মস্তিষ্কে একটা কথা ঘোর পাক খাচ্ছে তিয়ানার। আচ্ছা! তার সাথে ফিজিক্যাল্লি ইনভলভ হওয়ার ফলে কি মেঘালয় তাকে দায়বদ্ধতা ভাবছে? তাকে না ছেড়ে নিজের দায়িত্ব পালন করছে?

অফিস থেকে বাড়ি ফেরার পর থেকে তুলিকাকে আনমনা, চিন্তিতো, দুঃখিত দেখছে সাদিদ। কি হয়েছে জানতে ইচ্ছে করলেও প্রশ্ন করা হয়ে ওঠেনি তার। শশুড় বাড়িতে যাওয়ার এক মাস পর মেয়ে বাড়িতে এলো। মেয়ের সাথেও দু’টো কথা বলা হয়নি তার। মেয়ে ঘর থেকে’ই বের হয়নি। মা মেয়ে দুজনের’ই হঠাৎ চুপ হয়ে যাওয়া ভাবাচ্ছে সাদিদকে। খাওয়া দাওয়া শেষ ঘরে এসেছে অনেক্ষন রাত প্রায় দেড়টা বাজে কিন্তু তুলিকা বেলকনিতে গিয়ে সেই যে বসেছে ঘরে আসার নাম নেই। তুলিকার হঠাৎ চিন্তা, নিরবতা কারন কি? ঘুমনোর জন্য বিছানায় শুয়েছিল সাদিদ। তুলিকা ঘরে না ফেরায় শোয়া থেকে উঠে বেলকনিতে যায় সে। বাইরে আজ একটু বেশি’ই শীত পরেছে। আর সেই শীতের মধ্যে কি না গায়ে কিছু না জড়িয়ে বেলকনিতে বসে আছে তুলিকা৷ তুলিকার এসব কান্ডে মনে মনে বেশ রাগ হয় সাদিদের তবে বরাবরের মতো নিজের মনের ভাব নিজের মনে’ই দমিয়ে রেখে খাটের উপর থেকে তুলিকার চাদর তুলে নেয় সে। বেলকনিতে গিয়ে পিছন থেকে তুলিকার গায়ে চাদর জড়িতে দেয় সে। প্রচন্ড শীতের মধ্যেও তুলিকার আজ শীত লাগছে না। সাদিদের উপস্থিতিও সে টের পায়নি আর না শরীরে চাদর জড়ানো। তার মাথায় শুধু নিজের মেয়ের ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তা। পাশের ঘরে মেয়ে আর মেয়ের জামাই আছে কথা কাটাকাটির শব্দও শোনা যাচ্ছে। ভাবাচ্ছে তাকে, মেয়ের সংসারটা টিকবে তো? টিকলেও কি তার মতো করে’ই জীবন কাঁটাতে হবে তার সন্তানকে!
সাদিদের ডাকে সস্মিত ফিরে পায় তুলিকা। পাশে সাদিদ দাঁড়িয়ে আছে টের পায়নি সে। তার শরীরে চাদর জড়ানো দেখে এক পলক তাঁকায় সাদিদের দিকে। বুঝতে বাকি নেই সাদিদ দিয়েছে। কিছু বলে না তুলিকা। বলতে ইচ্ছে করছে না তার। সাদিদের থেকে দৃষ্টি সরিয়ে বাইরে দেখে সে। বাইরে রাতের অন্ধকার সাথে কুয়াশাকে কালো ধোঁয়ার মতো লাগছে। তুলিকার নিরবতা দেখে সাদিদ গলা খাকাড়ি দিয়ে বলল,
__‘এই শীতে এখানে দাঁড়িয়ে আছো কেন? শরীর অসুস্থ করার চিন্তা ভাবনা করছো নাকি?’
মৃদু হাসে তুলিকা। বলল,
__‘মনের অসুক’ই তো বড় অসুক। শরীরের অসুক হলে ওষুধ দিয়ে ছাড়ানো যাবে মনের টা কি করে ছাড়াবো?’
তুলিকার প্রশ্নের উত্তর দেয় না সাদিদ। উত্তর নেই তার কাছে৷ কি বলবে সে? তুমি তোমার শাস্তি পাচ্ছো! কিন্তু, কি করে বলবে সে? গত ২১ বছর ধরে তো শাস্তি দিয়ে আসছে আর কত?
তুলিকা সাদিদের দৃষ্টিতে দৃষ্টি মিলিয়ে শান্ত কন্ঠে পপ্রশ্ম করল,
__‘এত দিন, এত বছর ধরে এত ভাবে শাস্তি দিয়েও আমার শাস্তি মওকুফ হয়নি তাইনা?’
সাদিদ বুঝতে না পেরে বলল,,
__‘মানে?’
তাচ্ছিল্য হাসে তুলিকা। বলল,,
__‘শুধু মাত্র আমাকে শাস্তি দিতে মেঘ রাজি না সত্যেও তুমি আমার মেয়েকে মেঘের সাথে জোড় করে বিয়ে দিলে? আমাকে শাস্তি দেয়ার এতো নেশা তোমার?’
হতভম্ব হয়ে যায় সাদিদ। মাথা ফাঁকা ফাঁকা লাগলো তার। জোর করে মানে? মেঘের সম্মতি নিয়ে’ই তো বিয়ে হয়েছে। সাদিদের বুকে ধক করে ওঠে। আমতা করে বিস্ময় নিয়ে প্রশ্ন করল,
__‘ম্মমানে কি বলছ? মেঘ তো রাজি ছিল?’
হাউমাউ করে কেঁদে দেয় তিয়ানা। নিজে এতদিন ধরে সব কষ্ট সহ্য করলেও আজ নিজের সন্তানকে এভাবে দেখে ঠিক থাকতে পারছে না সে। এত বছর তুলিকার এমন কাঁন্না দেখে ভয় পেয়ে যায় সাদিদ। সে ভুল কিছু করে বসলো না তো। তুলিকা রেলিং ধরে ফ্লোরে বসে পরে। সাদিদও তার পাশে বসে। তুলিকার গাল দু’হাতে ধরে কাঁপা কাঁপা কন্ঠে প্রশ্ন করলো সাদিদ,,
__‘কি হয়েছে তুলি? বলো? আমার ভয় হচ্ছে। আমার মেয়ের সাথে খারাপ কিছু হয়নি তো।’
ততক্ষণে কাঁন্না থেমে যায় তুলিকার। ফুঁপাচ্ছে সে! গালে গড়িয়ে পরা জল গুলো হাতের আংগুল দিয়ে মুছে দিয়ে জিজ্ঞেসা দৃষ্টি নিয়ে তুলিকার চোখের দিকে তাঁকায় সে।
তুলিকা সাদিদের চোখে চোখ রেখে বলল,,
__‘আমাদের মেয়ে ভাল নেই সাদিদ। বড় ভুল হয়ে গিয়েছে। তিনুকে ভাকোবাসে না মেঘ। মেঘ অন্য কাউকে ভালোবাসে।’
কথা গুলো শুনে হতবুদ্ধি হয়ে যায় সাদিদ। মুখ থেকে টু শব্দ বের হয় না তার। হতবাক হয়ে স্ত্রীর মুখের দিকে চেয়ে থাকে সে। তারা দুজনে’ই নিজ মনে ভাবছে, তাদের আদরের সন্তানের জীবনটা তাদের মতো হবে না তো!

চলবে?

(এত দিন আমার চাচাতো বোনের বিয়ে ছিল। কাল তাকে তুলে নিছে আজ বৌভাত ছিল আপু শশুড় বাড়ি যশোর অনেক দূর আমাদের এখান থেকে ৭ ঘন্টার পথ। আমাদের বাসা থেকে শুধু আমি’ই যায়নি মা সহ সবাই গেছে। আমি এত জার্নি করতে পারিনা আর দু’দিন গল্প দেয়া হয়নি এই দুই কারনে থেকে গিয়েছি। আজ দিলাম গল্প। বিয়ের ঝামেলাও শেষ। অবশ্য শেষ না আপু আর তার হাসবেন্ড কালকে আসবেন বেড়াতে। সামনে আরও দু এক দিন ঝামেলা আছে বিয়ের। রিচেক করা হয়নি)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here