আমার_আদরিনী আশুথিনী_হাওলাদার (ছদ্মনাম) পর্ব-৩৬

আমার_আদরিনী
আশুথিনী_হাওলাদার (ছদ্মনাম)
পর্ব-৩৬
তিয়ানার এমন কথায় রাগে শরীর জ্বলে ওঠে মেঘালয়ের। মানে? তিয়ানার কী তার ক্যারেক্টর নিয়ে কথা বলছে?
__‘কী বলতে চাচ্ছিস তুই?’
মেঘালয়ের অগোচরে হাসে তিয়ানা। টোপ গিলেছে তাহলে মেঘালয়। কিছুটা ঠাট্টার স্বরে বলে ওঠে তিয়ানা,
__‘কী বলতে চাচ্ছি বুঝছেন নিশ্চয়ই। ওকে আবার বলছি। আপনার প্রেমিকার সাথে কী আমার অগোচরে এখানে রুমডেটও হতো?’
মেঘালয় আহমক হয়ে যায়। সে ড্রেস গুলো তিয়ানার জন্য কিনে রেখেছিল আর এই মেয়ে কিনা উলটা পালটা বুঝে তার ফুলের মতো পবিত্র চরিত্রে দাগ লাগামোর চেষ্টা করছে।’
রাগে দাতে দাত চেপে উত্তর দেয় মেঘালয়,
__‘ইয়াহ! আমার তো একটা না দশটা গার্লফ্রেন্ড আছে তাদের নিয়ে আমি এখানে এসে রুম ডেট করি। শুনেছিস এখন ঘুমা।’
তিয়ানা রাগী চোখে কিচ্ছু মেঘালয়ের দিকে চেয়ে থেকে বিছানা থেকে উঠে হনহন করে রুম থেকে বেড়িয়ে পাশের ঘরে গিয়ে শব্দ করে দরজা আঁটকে দেয়। তিয়ানার কান্ডে মেঘালয় ‘হা’ হিয়ে যায়। নিজের মাথার চুল খামছে ধরে সে। ভেবে পাচ্ছে না এই বলদ মেয়েটাকে মানাবে কি করে। যেটা বোঝার সেটা বোঝে না নিজের মতো আউল ফাউল বুঝে বসে থাকে ছাগল একটা ।
‘‘ তিয়ানার পরের দিন সকাল শুরুর হয় ঘুমন্ত মেঘালয়ের গায়ে এক বালতি পানি ফেলে। ঘুমের মধ্যে পানি শরীরে পরায় চমকে ঘুম থেকে উঠে যায় মেঘালয়। তিয়ানা খাটের পাশে এক হাতে বালতি অন্য হাত কোমড়ে রেখে শয়তান হেসে দেখে মেঘালয়কে। ধপ করে রাগ ওঠে যায় মেঘালয়ের। শীতের সকালে শরীরে ঠান্ডা পানি পরা যে কতটা বিরক্তিকর। ভ্রু কুচকে তিয়ানাকে জিজ্ঞেস করে মেঘালয়,
__‘এটা কি করলি? এখন আমিও বাথরুম এক বালতি ঠান্ডা পানি এনে তোর মাথায় ঢালি?’
তিয়ানা মেকি হেসে পেটে হাত রেখে ইশারায় মেঘালয়কে দেখিয়ে বলে,
__‘দেখি ঢালুন তো। শীতের সকালে কনকনে ঠান্ডা পানি আমার মাথায় ঢাললে আপনার বাঁচ্চার’ই ক্ষতি হবে।’
মেঘালয় দাত কিড়মিড়িয়ে বলে,,
__‘ ব্লাকমেইল করছিস?’
__‘বলতে পারেন সেটা’ই’
দু’হাত মেলে আলসে দিয়ে বলে তিয়ানা,
__‘এখন যান তো খাবার রেডি করুন গিয়ে বাবুর খিদে পেয়েছে।’
মেঘালয় দাত কিড়মিড় করে কটমট চোখে দেখতে থাকে তিয়ানাকে। তিয়ানা ডান হাত তুলে বাতাস করার মতো করে ঘর থেকে বেরোতে বেরোতে গলায় সুর তোলে,
__‘ফান্দে পড়িয়া মেঘালয় চিপায় আঁটকেছেরে,,,,’
মেঘালয়ের ইচ্ছে করলো ফ্লোরে থাকা বালতিটা তুলে তিয়ানার মাথায় মারতে। তিয়ানা ভেবে বালতি টাকে মারে মেঘালয়। ব্যাচারা বালতি মেঘালয়ের রোশে পরে নিজের জীবন ত্যাগ করে। মানে ভেংগে চৌচির অবস্থা হয়। তিয়ানাজে গাইল দিতে দিতে বাথ্রুমে গিয়ে ধরাম করে দরজা আঁটকে দেয় মেঘালয়। তিয়ানা ঘরে বাইড়ে থেকে উঁকি ঝুঁকি মেরে পরিস্থিতি বোঝার চেষ্টা করে কিটকিটিয়ে হেসে দেয়। এবার বুঝবে ‘মেঘালয় চৌধুরী’। মিসেস তিয়ানা চৌধুরী ঠিক কি! সবে তো শুরু। নিজ মনে কথা গুলো বলে কিটকিটিয়ে হাসে তিয়ানা। হাসতে হাসতে আবার সুর তোলে,
__‘ফান্দে পড়িয়া মেঘালয় চিপায় আঁটকেছেরে,,,’

পার্কের বেঞ্চিতে চোখ -মুখ শক্ত করে বসে আছে তিলাত। তার পাশে অসহায় মুখ করে বসা অবন্তী। কিছুক্ষণ আগে আসতে দেরী হওয়ায় মেঘালয়ের উপরের সব ঝাল বেচারা অবন্তির উপর ঝাড়লো। অবন্তী ভয়ে ভয়ে বলে,
__‘আমার কী দোষ? মেঘ ভাইয়ার রাগ আমার উপর দেখাচ্ছো কেন?’
আশে পাশে তাঁকিয়ে তিলাত নিজে শান্ত করে। অবন্তীর হাত নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে বলে,
__‘আমি মেঘকে সহ্য করতে পারছি না অন্তী।
__‘মেঘ ভাইয়া তো তোমার বেস্টফ্রেন্ড।’
ভাবুক হয় তিলাত। হ্যা! মেঘ তার বেস্টফ্রেন্ড জানজিগার বন্ধু তারা। কিন্তু মেঘ কি করলো? তার বোনকে বিয়ে করে নিয়ে এতটা যন্ত্রণা দিলো। এক প্রকার মানসিক টর্চার সেটা কোন ভাই সহ্য করবে? তার মতে পৃথিবীতে এমন কোনো ভাই নেই যে, নিজের বোনের কষ্ট সহ্য করতে পারে। আর না সেই মানুষটাকে ক্ষমা করতে পারে যে বোনকে কষ্ট দেয়। তিলাত জানতো, মেঘালয় প্রচন্ড ভালোবাসে তিয়ানাকে। তাই সে বিয়েতেও মত দিয়েছিল। মেঘের মতো কাউকে তার বোন স্বামী হিসেবে পেকে বোন ভালো থাকবে। সেই বন্ধু’ই কিনা তার বোনকে এতটা কষ্ট দিলো। তিলাত যখন’ই মেঘালয়ের সাথে সব ঠিক করে নিতে চায় তখন তার মস্তিষ্কে হানা দেয় মেঘালয়ের বলা সেই অসহ্য কথাটা,
_‘তাহলে, ডিভোর্স হওয়াটাই বেটার’ এই শব্দ গুলো কিছুতে ভুলতে পারছে না তিলাত। যখন’ই মনে পরে তার মন চায় মেঘালয়কে জানে মেরে দিতে। তিলাত ভেবে নিয়েছে সে কিছুইতে’ই তার বোনকে মেঘালয়ের কাছে রাখবে না। নেহাত সে মেঘালয়ের ফ্লাটটা কোথায় জানে না। তাই এভাবে হাত পা গুটিয়ে বসে আছে।
__‘তোমার এটা মনে হচ্ছে না, তিয়ানাকে মেঘালয় ভাইয়া এতটা ভালবাসা সত্যেও এমন একটা কাজ কেন করলো?’
অবন্তীর কথায় সম্বিত ফিরে পায় তিলাত। ভ্রু কুওচকে বলে উঠে,
__‘মানে?’
__‘তুমি তো বললে, মেঘয় ভাইয়া নাকি তিয়ানাকে ভালোবাসতো। সেই ছোট্টো বেলা থেকে এবং সবটা তুমি জানতে। তবে তোমার মনে হচ্ছে না মেঘালয় ভাইয়া গত কয়েক মাসে যা করেছে তার কিছু একটা রিজন আছে। নাহলে, তিনি তিয়ানাকে এতোটা ভালোবাসা সত্যেই এমনটা কেন করবেন? কী লাভ? যদি বলো, বৃষ্টি নামের প্রেমিকার জম্য কিন্তু! তুমি তো ছোটো থেকে মেঘ ভাইয়ার সাথে বড় হয়েছো। তোমরা ফ্রেন্ড! এত বছরে একবারও কি জানতে পারোনি বৃষ্টির কথা। বা তোমা মনে হচ্ছে না? হঠাৎ কোথা থেকে এই ‘বৃষ্টি’ ক্যারেক্টর উধাও হলো?

ডাইনিং টেবিলের চেয়ারে আসন পেতে বসে আছে তিয়ানা। মেঘালয় পাশে কিচেনে খাবার তৈরী করছে। মেঘালয়ের রাগের সীমা ভেবে মনে মনে পৌচাশিক হাসে তিয়ানা। আহা! কি শান্তিটাই না লাগছে তার মনে, প্রানে, দেহে। ডক্টর মেঘালয় চৌধুরী কিনা বউয়ের জন্য কিচেনে গিয়ে খাবার রান্না করছে। এ যেনো স্বপ্ন! তিয়ানার একবার ইচ্ছে করলো এই দৃশ্য ফোনে ক্যাপচার করে রাখবে। পরে ভাবলো না, দরকার নেই দেখা যাবে হিতে বিপরীত হলো। এমনিতে সে সকাল থেকে অনেক ক্ষেপিয়েছে মেঘালয়িকে আরও ক্ষেপে গেলে তাকে তুলে আছাড় মারবে।
কিচেন থেকে খাবার তৈরী করে নিয়ে এসে ডাইনিং এ রাখে মেঘালয়। তিয়ানা একবার আড় চোখে দেখে মেঘালয়কে টি-শার্ট এর উপর কিচেন এপ্রোন পরে আছে মেঘালয় সাথে মাথায় টুপি। তা দেখে মুখ লটকায় তিয়ানা। মনে বিড়বিড়ায়, ঢং দেখে বাঁচি না। বলে ভেংচি কাটে তিয়ানা। মেঘালয় তিয়ানাকে দেখছিল। তিয়ানার হঠাৎ ভেংচিতে ভ্রু কুটি করে সে। তিয়ানা গলার ঝেঁড়ে বলল,
__‘খাবার কী টেবিল চেয়ারে খাবে?’
ভ্রু কুটি করে মেঘালয়। তিয়ানা মেকি হেসে বলে,
__‘স্রাভ করবে কে?
শোনা মতো চোখহ দিয়ে তিয়ানাকে নাই করে দেয়ার মতো করে তাঁকায় মেঘালয়। তিয়ানা ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে থাকে। মেঘালয় মুখে কিছু না বলে, খাবার সার্ভ করে দেয়। তিয়ানা মনে মনে হাসে, আহা! মেঘালয় তাকে খাবার সার্ভ করে দিচ্ছে। অবিশ্বাস্য! তিয়ানা এক হাত নিজের পেটে রেখে বলে, বাবু অল ক্রেডিট গোস টো ইউ’ এক মাত্র তোর জন্য’ই তোর এই খারুস বাপ কে টাইট দিতে পারছি। সোনা বেবি আমার।’ মেঘালয় তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তিয়ানার গতি বিধি লক্ষ্য করে। তিয়ানা আড় চোখে মেঘালয়ের চুপসে যাওয়া মুখের দিকে চেয়ে খেতে আবার মিনমিনিয়ে সুর তোলে।
__‘ফান্দে পড়িয়া মেঘালয় চিপাই আঁটকেছেরে,,,,,’

চলবে?
রিচেক করা হয়নি
(অনেকে’ই বলছেন মেঘকে শাস্তি দিচ্ছে না কেন? এয়া সসেয়া কত কি? আচ্ছা! বাস্তব জীবনে কত জন অকে শাস্তি দিতে পারছে সমাজ? প্রেগন্যান্ট বউওকে রেখে কত পুরুষ আর একটা বিয়ে করে চলেও গেছে সেখানে মেঘ কি কষ্ট দিছে? আবার বলেন তিয়ানা চলে যায় না কেন? কই যাবে? মানে সব গল্পের মতো এটাও করবো নায়ক নাইকারে কষ্ট দিছে,, তাই নাইকা নায়ককরে রেখে হারিয়ে গেছে অনেক বছর পর বাচ্চা সমেত ফিরে আসছে এমন? আমি প্রথম থেকে’ই গল্পটা অন্য রকম করতে চাইছি সব থেকে আলাদা। এখানে ভাবলে দেখা যাবে মেঘ শুধু বাড়াবাড়ি টা করছে শুধু ডিভোর্স এর কথা বলে। বাকি যে গুলো করছে যাস্ট তিয়ানাকে জিলাস ফিল করানোর জন্য। আবার বলেন তিয়ানাকে মেঘ কি শাস্তি দেবে? মেঘ তো ওকে মানেই না। আমি মেঘালয় চরিত্রটাই এমন করতে চাইছি ঘাড়ত্যারা, যে নিজেই সাইয়েন সাহ! সে নিজে যআ ঠিক করবে সে সেটাই করবে এমন। তাতে যা কিছু হয়ে যাকে ঘাড়ত্যারা বলে । আমি মেঘ চরিত্রটা তৈরি করেছি এমন।এই যে মেঘকে তিয়ানা মানে না। বা খোচা মেরে মেরে কথস বলছে এটায় কি মেঘের খারাপ লাগে না? বউ কে বাচ্চা কে ভালোবাসে বলে’ই সে বউ কে নিজের কাছে এনে জোড় করে রাখছে। বাকি ঘটনা গল্পে হবে। আর গল্প তো শেষ হয়নি কাহিনী বাকি। তবে আমি দুঃখিত আমার অম্য গল্পের মতো নাইকাকে দূরে সরাতে পারবো না। যা হবে কাছে থেকে’ই হবে রাগ অভিমান ঘৃনা সব কাছে থেকে হবে। আমি এই গল্পের প্লটে কিছুটা বাস্তবিক ছায়া রাখার চেষ্টা করেছি ঠিক কতটা পেরেছি তা জানি নআ। আর হ্যা গল্পে গল্প ভাবুন প্লিজ। পারসোনাল এট্যাক করবেন না।😊)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here