আমার_আদরিনী আশুথিনী_হাওলাদার (ছদ্মনাম) পর্ব-৩৭

আমার_আদরিনী
আশুথিনী_হাওলাদার (ছদ্মনাম)
পর্ব-৩৭
খাওয়া শেষে বিছানায় আঁধ শোয়া হয়ে বসে আছে তিয়ানা। মেঘালয় তিয়ানার প্রয়োজন জিনিস খাটের পাশে এনে রেখে দিয়ে হস্পিটালে যাওয়ার জন্য তৈরী হতে থাকে। তিয়ানা সেদিকে চোখহ ছোটো ছোটো করে চেয়ে আছে। মেঘালয় তার দিকে তাঁকাতে মুখ লটকায় সেটা দেখে খলখলিয়ে হেসে দেয় মেঘালয়। তিয়ানা রাগি রাগি চোখ দেখে হাসি বন্ধ করে মেঘালয়। ড্রেসিং টেবিলের উপর থেকে পারফিউম তুলে শরীরে মাখে। তিয়ানা মুখ লটকিয়ে ভ্রু কুচকে বলে,
__‘এত এত হিরো হয়ে ঠিক কোথায় যাচ্ছেন বলুন তো? হস্পিটালে তো? নাকি আপনার ওই প্রেমিকা ‘আদরিনীইইইইই’ তার সাথে ডেটে যাচ্ছেন।’
মেঘালয় দুষ্টি হেসে তিয়ানার কাছে এসে দু’হাত বাড়য়ে তিয়ানার গালে রেখে তিয়ানা মুখ কাছে টেনে এনে কপালে ঠোঁট ছুয়ে দুষ্টি হেসে বলে,,
__‘হ্যা! গার্ল্ফ্রেন্ডের সাথে ডেটে যাচ্ছি। যাবি তুই? তুই চাইলে নেয়া যায় তোকে। আফটার অল বউ বলে কথা।’
তিয়ানা কিচ্ছুক্ষন শান্ত চোখে মেঘালয়কে দেখে। মেঘালয়ের হাত গাল থেকে সরিয়ে নেয়। বিছানা থেকে নেমে ঘরের বাইরে যেতে যেতে বলল,,
__‘শুধু শুধু আমাকে আঁটকে রেখে দিয়েছেন। আমাকে আঁটকে রেখে কী লাভ বুঝতেছি না। ডিভোর্স পেপারে সাইন করে দিলে মিটতো। আপনি আপনার প্রেমিকাকেও বিয়ে করতে পারতেন।’
দীর্ঘশ্বাস ফেলে মেঘালয়। কী চাচ্ছে আর কি হলো। তিয়ানাটা কি মজাও বুঝবে না। এত বোকা কেন মেয়েটা? সব কী বলে বুঝাতে হয়। রেডি হয়ে ড্রয়িং এ আসে মেঘালয়। তিবে ড্রয়িং এসে ভ্রু কুচকে ফেলে সে। তিয়ানা তার ফোন হাতে থম মেরে সোফায় বসে আছে। মেঘালয়ের উপস্থিতি পেয়ে তার দিকে তাঁকায়। তিয়ানার চোখে জল। মেঘালয়ের নুকে মোচড় দিয়ে উঠে। সে তারাহুরো করে তিয়ানার কাছে গিয়ে। তিয়ানাকে ধরে অস্থির কন্ঠে জিজ্ঞেস করে,,
__‘তিনু কাঁদছিস কেন? কোথাও লাগছে? পেটে ব্যাথা করছে।’
তাচ্ছিল্য হাসে তিয়ানা। হাত বাড়িয়ে ফোন মেঘালয়ের দিকে এগিয়ে দেয়। ভ্রু কুচকে ফোন নিয়ে দেখে স্কিনে বৃষ্টির নাম। বৃষ্টি কল দিয়েছে। সেটা দেখে তিয়ানার এমন রিয়াক্ট। মেঘালয় কল রিসিভ না করে কেঁটে দিয়ে ফোন জিন্সের পকেটে রেখে অসহায় চোখে তাঁকায়। তিয়ানা মেঘালয়কে উপেক্ষা করে পাশ কাঁটিয়ে যেতে নেয়। মেঘালয় তিয়ানার হাত ধরে আঁটকে দিয়ে তিয়ানাকে টেনে নিজের কাছে নিয়ে এসে হাত বাড়িয়ে তার চোখের জল মুছে দেয়। তিয়ানার গালে হাত দিয়ে বলল,
__‘তুই এত বোকা কেন তিনু?
তিয়ানা গাল থেকে মেঘালয়ের হাত সরিয়ে কাঁন্না ভেজা কন্ঠে প্রশ্ন করে,
__‘মানে!’
দীর্ঘশ্বাস ফেলে মেঘালয়। ডান হাতের মধ্যমা আর বুড়ো আংগুল তুলে কপালে স্লাট করে বলল,,
__‘সব বলে দিতে হবে তোকে? বাঁচ্চার মা হয়ে যাচ্ছিস তবে বুদ্ধি খুললো না। একদিনও দেখেছিস বৃষ্টির সাথে আমাকে কথা বলতে? ‘
তিয়ানা মাথা নাড়িয়ে ‘না’ বুঝালো। তিবে কিছু একটা মনে পড়ার মতো করে বলল,
__‘কিন্তু! ডেটে যেতে দেখেছি। ‘
মৃদু হাসে মেঘালয়।
__‘ ডেটে?’।
__‘দু’দিন দেখেছি।’
মুখ গোমড়া করে উত্তর দেয় তিয়ানা। মেঘালয় হেসে তিয়ানাকে কাছে টেনে এনে গাঢ় ভাবে জড়িয়ে ধরে বলল,
__‘তাতে বুঝি গেলি বৃষ্টি আমার গার্ল্ফ্রেন্ড? ‘
তিয়ানা কপাল কুচকে বলে,
__‘আপনি বলেছেন।’
__‘কী বলেছি?’
__‘ওই মেয়েটা আপনার গার্ল্ফ্রেন্ড।’
খলখলিয়ে হাসে মেঘালয়। হাসি থামিয়ে বলল,
__‘তিনু! তুই কি জেলাস?’
ভ্রু কুটি করে ফেলে তিয়ানা। তিয়ানার গাল টিপে দিয়ে দুষ্টু হেসে প্রশ্ন করলো মেঘালয়,
__‘ ভালোবাসিস আমাকে?’
থতমত খেয়ে যায় তিয়ানা। আমতা আমততা করে বলে,
__‘নায়াআ! আপনাকে ভালবাসার কোনো ইচ্ছে আমার নেই।’
মেঘালয়ের থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে বেড রুমে চলে যেতে নেয় তিয়ানা। মেঘালয় পিছন থেকে গলা উঁচু করে হাক ছেড়ে বলল,
__‘বাট! আই লাভ ইউ তিনু।’
পা থেমে যায় তিয়ানার। বুকের ভিতর কেমন ধড়ফড় করে ওঠে তার। মাত্র মেঘালয়ের বলা শব্দ গুলো বারবার প্রতিধ্বনি হয়ে তার কানে এসে লাগছে। তিয়ানাকে থিম মেরে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে শব্দ হীন হাসে মেঘালয়। ফোন হাতে নয়ে হাত ঘড়িতে একবার সময় দেখে সদর দরজা থেকে বেড়িয়ে ফ্লাট লক জরে নিজ গন্তব্যে যায় সে।

ড্রয়িং রুমের সোফায় আসন পেতে থম মেরে বসে আছে তিয়ানা। মাথা হ্যাং হয়ে গেছে তার। বারবার ঘরে ফিরে মাথায় মেঘালয়ের বলা ‘আই লাভ ইউ’ শব্দটা আসছে। আচ্ছা! মেঘালয় কি সত্যিই এটা বলছে? নিজের কান কে বিশ্বাস হচ্ছে না তিয়ানার। এটা সত্যই সত্য! মেঘালয় তাকে ভালোবাসি বলছে। চোখের কোণে জল চলে আসে তিয়ানার। খুব কাঁন্না পাচ্ছে তার। গলাও শুকিয়ে আসছে। মেঘালয় সত্যি সত্যি বলল এটা? ডান হাত নিজে পেটে রেখে নিজ মনে প্রশ্ন করলো তিয়ানা,
__‘বাবু তোর বাবা কী সত্যি বলল তখন? নাকি আমি ভুল শুনেছি।
সারাটা দিন নাওয়া খাওয়া ছেড়ে এক ধ্যানে বসে থাকে তিয়ানা। সম্বিত ফেরে বিকেলে মেঘালয়ের আগমনে। ফ্লাটের দরজা খুলে ভিতরে এসে তিয়ানাকে সকালের জামা কাপড় পড়া অবস্থায় এক ভাবে বসে থাকতে দেখে ভ্রু কুটি করে মেঘালয়। দরজা লক করে সোফায় তিয়ানার পাশে বসে। তিয়ানার গাল, গলা চেক করে দেখে জ্বর টর হলো কিনা। তিয়ানা মেঘালয়ের দিকে এক ধ্যানে চেয়ে থাকে। মেঘালয়ের ভাবুক স্বরে জিজ্ঞেস করলো,
__‘এভাবে বসে আছিস কেন? সাওয়ার নিসনি? সাওয়ার না নে ড্রেস তো চেইঞ্জ করতি।’
তিয়ানা কোনো উত্তর না দিয়ে মেঘালয়কে দেখতে থাকে। মেঘালয় তিয়ানার কোনো উত্তর না শুনে হতাস হয়ে উঠে ডাইনিং গিয়ে দেখে খাবার যেমন রেখে গিয়েছিল তেমন রাখা। রাগ উঠে যায় তার তিয়ানার কাছে এসে জিজ্ঞেস করে,
__‘খাসনি কেন?’
__‘ইচ্ছে করছে না। ‘
বলে উঠে বেড রুমে চলে যায় তিয়ানা। রাগ হলেও প্রকাশ করে না মেঘালয়। ফ্রেস হয়ে খাবার নিয়ে ঘরে যায় মেঘালয়। দেখে তিয়ানা গুটি শুটে মেরে শুয়ে আছে। খাবারটা বেড টেবিলের উপর রেখে তিয়ানাকে টেনে তুলে মেঘালয়। জোড় করে খাইয়ে দেয়। খেয়ে দেয়ে কিছু না বলে ঘুনিয়ে যায় তিয়ানা। তিয়ানার অদ্ভুত ব্যাবহারে ভাবনায় পরে যায় তিয়ানা। ফোন বের করে মৌমিতার নম্বর ফোন লাগায় সে। কল রিসিভ করে ধমকে প্রশ্ন করে মৌমিতা,
__’কি চাই?’
মায়ের ধমকে হতভম্ব হয়ে যায় মেঘালয়। আমতা আমতা করে বলল,
__‘আম্মু?’
__‘কি দরকার?’
__‘এভাবে বলছো কেন?’
মৌমিতা ধরা গলায় বলল,
__‘তোমার সাথে আর কীভাবে কথা বলবো।’
মেঘালয় অসহায় কন্ঠে প্রশ্ন করে,
__‘এখনো রেগে আছো?’
__‘তাহলে কী আমার রাগ না করে বসে থাকার কথা?’
মেঘালয় হতাস স্বরে বলে,
__‘সব কিছুর জন্য আ’ম সরি আম্মু।’
__‘তিনুটা খুব কষ্ট পেয়েছে মেঘ।’
ঘুমন্ত তিয়ানাকে এক পলক দেখে উত্তর দিলো মেঘালয়,
__‘কষ্ট পেয়েছে বলে’ই সত্যিটা জানতে পেরেছে। ‘
মৌমিতা কঠোর কন্ঠস্বরে উত্তর দেয়,
__‘তুমি খুব খারাপ করেছো মেঘ।’
মৃদু হাসে মেঘালয়। বলল,
__‘খারাপ করার কারনে’ই তুমি সবটা নিজ ইচ্ছেতে স্বীকার করলে আম্মু।’
থতমত খেয়ে যায় মৌমিতা। কথার পিঠে উত্তর দেয় না সে। মায়ের চুপ হয়ে যাওয়া দেখে হাসে মেঘালয়। হেসে বলল,
__‘ আমি খারাপ না করলে তিয়ানা, আংকেল তিলাত কখনো সত্যিটা জানতো না। তুনি এবং আন্টিম্মু সমান অপরাধী আম্মু। আমাদের সবাইকে ঠকিয়েছো তোমরা।
মৌমিতা কে কিছু বলতে না দিয়ে ফোন কেঁটে দেয় মেঘালয়। কল কাঁটার পর মনে পড়লো তার তিয়ানার জন্য কল দিলো সেটা’ই তো জানা হলো না। দ্বিতীয় বার মৌমিতা কে কল দিতে ইচ্ছে করে না মেঘালয়ের। তাই বৃষ্টিকে কল দেয় সে। বৃষ্টির থেকে’ই তিয়ানার এই মুড সুইং এর ব্যাপারে জানবে সে। মেয়েটা ঠিক মতো খাচ্ছে দাচ্ছেও না। তবে অবশ্য ঘর থেকে বেড়িয়ে নাহলে, পাগলিটা ঘুম থেকে জেগে তাকে বৃষ্টির সাথে কথা বলতে দেখলে থাকে চিবিয়ে খাবে। ভেবে খিলখিল করে হেসে দেয় মেঘালয়। তিয়ানাকে জেলাস ফিল করাতে তার মজা লাগছে। বোকা মেয়েটা এটাও ভুলে গেছে বৃষ্টি তার স্কুল লাইফের ফ্রেন্ড। ছোটো বেলায় যার গলা ধরে সব সময় ঝুঁলে থাকতো। আজ তাকে’ই নিজের না হওয়া সতীন ভেবে বসে আছে।

চলবে?
(রিচেক করিনি)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here