#আমার_আদরিনী
আশুথিনী_হাওলাদার (ছদ্মনাম)
পর্ব -৬
“বাইক পার্ক করে ডিপার্টমেন্টে যেতে নেয় তিয়ানা। অবন্তী তার সাঙ্গোপাঙ্গ নিয়ে তার পথ আটকে দাঁড়ায় তিয়ানার। ভ্রু কুচকায় তিয়ানা, জিন্স প্যান্টের পকেটে হাত দিয়ে টান হয়ে দাঁড়িয়ে ভ্রু নাচিয়ে প্রশ্ন করে,,,
__হোয়াট?
অবন্তী মিষ্টি হেসে বলে,
__কেমন আছিস?
তিয়ানা গলা কাত করে বাঁকা চোখে অবন্তীর দিকে তাঁকায় ভুতের মুখে রাম নাম। তাকে জিজ্ঞেস করছে কেমন আছে? সেটা কে? অবন্তী! নিচের ঠোঁট কামড়ে কিছু একটা ভেবে প্রশ্ন করে,,,
__কি কাজ? তুই জিজ্ঞেস করছিস, আমি কেমন আছি? সূর্য কোন দিকে উঠলো।
অবন্তী মৃদু হেসে আমতা আমতা করে বলল,
__কয়েক দিন ভার্সিটিতে আসিসনি তাই ভাবলাম,,
থামিয়ে দেয় তিয়ানা। ক্রুর হেসে বলে,,
__কেন? কি ভাবছিস? উপরে চলে গেলাম কি না।
চোখ ছল ছল করে ওঠে অবন্তীর। বিরক্ত হয় তিয়ানা, রাগ হয়। সাথে মনের ভিতর কোথাও জ্বালা শুরু হয়। নিজেকে সামলে নেয় সে। কঠিন তবে শান্ত কন্ঠে বলে,,
__তোর এই চামচা দের নিয়ে সর।
ফুসে ওঠে রাবিন, তেড়ে গিয়ে বলে,
__মুখ সামলে কথা বল। চামচা কিসের আমরা ফ্রেন্ডস।
বাঁকা হাসে তিয়ানা। হাহ! ফ্রেন্ডস! চোখে জ্বল আসে তিয়ানার। চোখের জল লুকাতে আশেপাশে তাকিয়ে রবিনের উদ্যেশ্যে বলে,
__তো, তোর এই ফ্রেন্ডস নিয়া আমার সামনে থেকে ফোট। ফালতু কোথাকার
বাঁকা চোখে একবার অবন্তীর নিচু মুখের দিকে তাঁকিয়ে জ্বলে ভরা চোখ দুটো দেখে পাশ কাটিয়ে চলে যায়। এসবে তার কিছু আসে যায় না। না এই কান্নায়। যখন সে ভাবে ফ্রেন্ডস বলতে কিছু হয় না। ভাইয়া আর মেঘলয় ভাইয়াকে দেখলে তার মনের চিত্র টা পাল্টে যায়। তখন মনে হয় এই তো হয়। চোখের কোনের জল মুছে হালকা হেসে ক্লাসে চলে যায় তিয়ানা। একবার পিছু ফিরে তাঁকালে সে দেখতে পেতো কেউ চাতক দৃষ্টিতে তার দিকে যাওয়ার পথে তাকিয়ে আছে।”
“বেডরুমের সোফায় বসে নিউস পেপার পড়ছে সাদিদ। তুলিকা চা এনে তার সামনে রাখে। তুলিকাকে এক নজর দেখে গম্ভীর মুখে চায়ের কাপ তুলে নেয়ভ সাদিদ। দীর্ঘশ্বাস ফেলে তুলিকা, কান্না পায় তার। বয়স হয়েছে আগের মতো সেই শক্ত মনটা আর নেই। এখন আর এই অবহেলা গুলো সে সহ্য করতে পারছে না। বিশ বছর ধরে সব সহ্য করে আসছে সে। আর কত? বুক ভারি হয়ে উঠে তার। উঠে রুম লাগাওয়া বেলকনিতে চলে যায় তুলিকা। আজ বড্ড অতীত মনে পরছে। খুব কি ক্ষতি হতো? যদি নিজের জায়গাটা ছেড়ে সে না যেতো। আজকাল নিজের উপর করুনা হয় তুলিকার।
__কী অতীত নিয়ে ভাবছো? নিজেকে ঘৃনা হচ্ছে না?
কানের কাছে হঠাৎ শান্ত তবে কঠর কন্ঠের শব্দ গুলো শুনে চমকে উঠে তুলিকা। শব্দ করে হেসে উঠে সাদিদ। কষ্ট হয় তুলিকার। বড্ড কষ্ট হয়, বেলকনি থেকে চলে যেতে নেয় সে। পিছন থেকে তার হাত খামছে ধরে সাদিদ। ফুপিয়ে ওঠে তুলিকা। ক্রুর হাসে সাদিদ, বলে
__কষ্ট হচ্ছে? আমারও হইছিল যখন তোমার জন্য আমি আমার ভালবাসা হারিয়ে ছিলাম। সেই বারোটা বছরও আমি কষ্ট পেয়েছি । বারো বছর মানে বোঝো? এক যুগ আমি ধুকে ধুকে মরেছি শুধু তোমার জন্য। তার দ্বিগুণ শাস্তি তুমি পাবে।
তুলিকার হাত ছেড়ে ঘর থেকে বেড়িয়ে যায় সাদিদ। কাউচে বসে পরে তুলিকা। কষ্ট হচ্ছে তার খুব কষ্ট হচ্ছে সেই সাথে আফসোস হচ্ছে।
‘ড্রইং রুমের সোফার থম মেরে বসে আছে তিলাত। নিজের মায়ের জন্য ঘৃনা, কষ্ট দুটোই হচ্ছে তার। সাদিদের বলা সব কথা সে শুনে ফেলেছে। মা’কে এই অবস্থায় দেখে কষ্ট হচ্ছে তার। সেই সাথে নিজের উপর রাগ হচ্ছে তার। আম্মুকে জোর করে নিজের কাছে রেখে সে কোনো ভুল করলো না তো? তার আব্বু আজও আজও আম্মুকে ঘৃনা করে। বিশ বছরে একটুও পাল্টাইনি তার আব্বুর রাগ। এত বছর তার আম্মু তাদের সাথে ভাল থাকার অভিনয় করে এসেছে। চোখ দু’টো লাল হয়ে যায় তিলাতের। বুকের ভিতর জ্বালা করছে। আম্মুর জন্য বড্ড কষ্ট হচ্ছে।”
“মৌমিতা কে জড়িয়ে শুয়ে পরে অভীক। কিছুটা লজ্জা লাগে তার। উঠে নিতে চায়, তাকে উঠতে দেখে হেসে উঠে অভীক। মৌমিতা কে নিজার কিছুটা কাছে টেনে কানের সাথে মুখ লাগিয়ে ফিসফিস করে বলে,,
__বুড়ি হয়ে গেলে তারপরও এত লজ্জা।
ফুসে ওঠে মৌমিতা, অভীকের হাত কোমড় থেকে সরিয়ে বলে,
__এত রোমান্টিক হতে হবে না। আমি ভুলিনি আপনি আমাকে ফেলে গিয়েছিলেনন। পাঁচ বছর ধরে কষ্ট পেয়েছি।
‘হাত দিয়ে কপাল চাপড়ে অভীক। ত্রিশ বছর ধরে একটা খোটা শুনে আসছে সে। হতাস কন্ঠে বলে উঠে অভীক,,
__ত্রীশ বছর হয়ে গেল। তবুও তোমার এই খোটা টা গেল না।
কাঁথা ভাজ করতে করতে উত্তর দেয় মৌমিতা,,
__আগামী ত্রিশ বছরেও ভুলবো না আমি। আজ সেই দিন যেদিন আপনি আমার সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করে চলে গিয়েছিলেন। তাই প্রতি বছরের মতো আজকের জন্য আপনার সাথে আমার সম্পর্ক ছিন্ন। বলে কাঁথা ভাজ করে রেখে ঘর থেকে বেরিয়ে যায় মৌমিতা। অসহায় চোখে মৌমিতার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থাকে অভীক। প্রতিবছরের মতো আজকেও তার কপালে বাড়িতে খাবার জুটবে না। তাই রেডি হয়ে ঘর থেকে বের হয় প্রিয় বন্ধু সাদিদের বাড়ির উদ্যেশ্য। খেতে তো হবে! নিজের অবস্থা দেখে করুনা হচ্ছে তার। সব বাঘ সমতুল্য পুরুষই নিজেরর বউয়ের কাছে বিড়াল। আহা! কোথায় গেল সেই দিন যখন সে টিচার বউ তার ছাত্রী । এক ধমকে চুপ হয়ে যাওয়া সেই মেয়ে আজ তাকে নাকে দড়ি দিয়ে নাচাচ্ছে। হায়রে জীবন, হায়রে বউ জাতি ধইন্য তোমরা।”
তিয়ানার ভার্সিটির সামনে এসে বাইকা পার্ক করে মেঘালয়। পকেট থেকে ফোন বের করে তিয়ানা কে কল করে।
ক্লাস শেষে বের হয় তিয়ানা। হঠাৎ মেঘালয়ের কল দেখে অবাক হয় সে। আজকে সূর্য হয়তো পশ্চিম দিক দিয়েই উঠছে। অদ্ভুত অঅদ্ভুত ঘটনা ঘটছে তার সাথে। যে মনের ভুলেও ফোন দেয় না আজ তার ফোন। বাহ! ফোন রিসিভ করে কানে ধরতেই ধমক। এত দেরী কেন? ফোন ধরতে। মনে মনে বিরক্ত হলেও ভয়ে কিছু বলে না তিয়ানা। মিনমিন করে প্রশ্ন করে,,
__আপনি হঠাৎ ফোন করলেন কেন?
দাতে দাত চেপে উত্তর দেয় মেঘালয়,,
__তোর সাথে প্রেম করতে।
__নাউজুবিল্লাহ (তিয়ানার উত্তর)
কথা কানে নেয় না মেঘালয়। ব্যাস্ত কন্ঠে বলে,,
__ক্যাম্পাস থেকে বের হ। রাস্তার আছি আমি এক সাথে বাড়ি যাবো। আর হ্যা বাইকে চিন্তা করতে হবে না। পাশের বাসার রাশেদ কে বলছি ও নিয়ে যাবে। ও ক্যাম্পাসেই আছে। বাইকের চাবি ওকে দিয়ে আয়।
কথা শেষ করে তাকে কিছু বলতে না দিয়ে ফোন কেঁটে দেয় মেঘালয়। রাগ ওঠে তার। তবে যার উপর রাগ হচ্ছে মানুষটা মেঘালয়। তাকে কিছু বলার সাহস তার নেই।
চলবে?
(একটা কথা এই গল্পের প্রতিটি চরিত্রই৷ এক এক একটা গল্প। সব জুটি’ই তাদের দিক থেকে নায়ক নাইকা। তবে প্রতিটি গল্পের দুজন মেইন চরিত্র থাকে তারা হলো মেঘালয় আর তিয়ানা। কিন্তু এই গল্পের সবাই ই নিজের চরিত্র নিজ গল্পের দিক থেকে লিড)
( প্লিজ প্লিজ গল্প সম্পর্কে দু’এক লাইন মন্তব্য করবেন। এটা আশা করছি। আর হ্যা , নএক্সট নাইস না বললে খুশি হবো আর গল্পের চরিত্র গুলো সম্পর্কে মন্তব্য করবেন)