আমার_আদরিনী আশুথিনী_হাওলাদার (ছদ্মনাম) পর্ব-৭

আমার_আদরিনী
আশুথিনী_হাওলাদার (ছদ্মনাম)
পর্ব-৭
প্রায় বায়ান্ন বছর আগে কাহিনীর শুরু। তুলিকা-তিয়াসা জমজ দু’বোন। তাদের যে রাতে জন্ম হয় সে রাতে তাদের বাবা আজমল মিয়া দীর্ঘদিনের পরকীয়া সঙ্গি নিজের আপন চাচাতো ভাইয়ের স্ত্রীকে বিয়ে করে ঘরে তুলেন । তুলিকা-তিয়াসার মা মিসেস তাকলিমা বেগম সেদিন টা টু কোনো শব্দ না করে নিজের ঘর ছেড়ে দেন নতুন দম্পতি কে। এ ঘটনা জানাজানি হলে গ্রামের সবাই আজমল মিয়াকে এক ঘরে করে দেয়া হয়। তাকলিমা বেগমের বাবা তখন জীবিত থাকায় নিজের মেয়েকে সেখানে এক মুহূর্তও না রেখে জমজ দুই নাতনি সহ শহরে নিজ বাড়িতে নিয়ে যান। তাকলিমা বেগমও বাবার ইচ্ছে কে মান্য করে বাবার সাথে নিজ গৃহে চলে যান, প্রায় পাঁচ বছরের সংসার জীবনের মায়া কাঁটিয়ে। আজমল মিয়া কে ভালোবেসে বিয়ে করেন তিনি। তাই শহুরে বড় লোক বাবার একমাত্র মেয়ে হয়েও গরিব আজমল মিয়াকে ভালবেসে নিজের রাজকীয় জীবন ছেড়ে তার কুঠিরে এসে ওঠেন। মিসেসতাকলিমা বেগমের বাবা মি.তৌকির আহমেদ নিজের মেয়ের ভালবাসা কে সম্মান করে তাকে আজমল মিয়ার সাথে বিবাহ দেন। তবে তার এখন বেশ আফসোস হয় সেই সিদ্ধান্তে। বাবা মায়ের এক মাত্র সন্তান হওয়ায় বাবার সব সম্পত্তির মালিক মিসেস তাকলিমা বেগম হন। জমজ দুই মেয়ে, বাবা, মা কে নিয়ে কাটিয়ে দেন নিজের বাকি জীবন। তুলিকা-তিয়াসা বড় হয়। তিয়াসা, তুলিকা মৌমিতা তিনজন ছিল এক আত্মা এক প্রান শুধু আলাদা তিন শরীর। যাকে বলে জানে জিগার দোস্ত। যখন তারা ইন্টার প্রথম বর্ষে স্টুডেন্ট তখন তাদের পরিচয় হয় সাদিদের সাথে। মৌমিতার টিউটর ছিল অভীক আর অভীকের বন্ধু ছিল সাদিদ। উচ্চমাধ্যমিকের গন্ডি পার করে অভীক এডমিশন নেয় মেডিকেলে আর সাদিদ ঢাবিতে সিএসসি নিয়ে পড়ে। অভীক আর মৌমিতার প্রেমের সূত্র ধরে তাদের প্রায়’ই দেখা হতো। সেখান থেকেই নতুন করে প্রনয় হয় তুলিকা সাদিদের। উচ্চমাধ্যমিক শেষে মৌমিতার সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করে অভীক কানাডা চলে যায়। তবে তাদের সব ঠিক ছিল। পরিবার কে জানিয়ে তাদের বিয়েও ঠিক হয়। কিন্তু বাঁধ সাধে তিয়াসা সে সাদিদকে মাঝখান থেকে ভালবেসে ফেলে। তুলিকা সাদিদের বিয়ের দিন সে সুইসাইড করতে যায়। তুলিকা জানতে পেরে বোনকে বাঁধা দেয়। বোনের জীবন রক্ষার্থে নিজ ভালবাসা, নিজ সুখ ত্যাগ করে তার স্থানে তিয়াসা কে বিয়ের পীড়িতে বসায় সে। দু’জন এক রকম দেখতে হওয়ায় সমস্যা হয় না। তারা দু’জন ছাড়াও তাদের নানা মি.তৌকির আহমেদ সবটা জানতেন। রাজি হন না তিনি। তুলিকা নানা কে দিব্যি দিয়ে রাজি করায়। সে রাতে নিজেও ফ্লাইট ধরে আমেরিকা চলে যায় তুলিকা। নিজের ভালোবাসাকে বোনের সাথে দেখতে পারতো না সে। না সাদিদের চোখে তার জন্য ঘৃনা দেখতে পারতো। তারপর কেটে যায় বারো বছর।
“__আম্মু
তিলাতের ডাকে ভাবনা থেকে বের হয় তুলিকা। চোখের কোনের জল মুছে বেলকনি থেকে বের হয়ে ঘরে যায়। দরজার সামনে ছেলেকে দাঁড়ানো দেখে মৃদু হেসে বলে,,
__কিছু বলবে?
তুলিকার মন খারাপ থাকলে বা তাদের উপর রেগে থাকলে তুমি করে সম্মোধন করে তাদের। দীর্ঘশ্বাস ফেকে তিলাত। আম্মুর চোখের দিকে তাকাতে পারেনা তিলাত। আহত সে, কষ্ট হয় তার মায়ের চোখের কোনে চিক চিক করা জল টুকু দেখে। ইচ্ছে করছে আম্মু’কে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে। কিন্তু ছেলেদের নাকি কাঁদতে নেই তাই সে কাঁদতে পারছে না। ভিতরে কান্নাটাকে গিলে বলে,,
__বসার ঘরে অভীক আংকেল এসেছে।
__তুমি যাও আমি আসছি
মাথা নাড়িয়ে নিজ ঘরে গিয়ে খিল আঁটকে দেয় তিলাত। মাথা জিমজিম করছে একটু ঘুমাতে পারলে ভাল হবে। কিন্তু তা সম্ভব না খানিক বাদে মেঘালয় আসবে। তারপর মৌমিতা। প্রতিবছর এই দিনটা এই নিয়ম ধরে’ই চলে আসছে৷ ছোটোবেলা থেকে দেখে আসছে সে। আজকের দিনে প্রথমে অভীক আংকেল তাদের বাড়িতে চলে আসে। তার পিছু ধরে মেঘালয় , সবশেষে মৌমিতা আন্টি গম্ভীর মুখে এসে হাজির হবেন। হাসে তিলাত, হাসি থামিয়ে নিজের হাত কামড়ে ধরে ফুপিয়ে ওঠে। তাদের পরিবারটাও তো একটা সত্যি কারের সুখি পরিবার হতে পারতো। সব দোষ তার গর্ভধারিনীর। যদি তিনি আজ বেঁচেও থাকতেন তাহলেও কখনো এ পরিবারে সুখ থাকতো না। আর না এখন আছে। সব দোষ এই একজনের। দু’টো মানুষ বেঁচে থেকেও মৃত্যু তার জন্য। দু’জন দু’জনকে পাগলের মতো ভালবেসেও আলাদা। এক সাথে থেকেও মনের দুরত্ব হাজার হাজার মআইল।

“‘বাইকের পিছনের অংশ ধরে বসে আছে তিয়ানা। ভুলেও মেঘালয়কে টাচ করে না। টাচ করলেই দেখা যাবে জ্বলে উঠবে। তাকে কাছে ঘেষতেও না করবে আবার তাকে বাইকে করে নিয়েও যাবে। মুখ ভেংচে দেয় তিয়ানা। যেতে চায় কে তার বাইকে। আজব লোক সারাক্ষন হামকি ধমকি দেয় আমার কাছ ঘেষবিন না। তারপর নিজেই আসে যতসব। লুকিং গ্লাসে তিয়ানাকে দেখে মুচকি হাসে মেঘালয়। বাড়ি সামনে বাইক থামানোর পর নিজ ঘরে যায় তিয়ানা। এক নজর তিয়ানার যাওয়ার দিকে তাঁকিয়ে গ্যারেজের ভিতরে বাইক পার্ক করে তিয়ানার ঘরে উঁকি দিয়ে তাকে দেখে ঠোঁট কামড়ে হেসে তিলাতের ঘরে চলে যায় মেঘালয়।
ঘরে গিয়ে দরজা আঁটকে শুয়ে পরে তিয়ানা। বুকের মধ্যে ঢিপঢিপ করছে। এতক্ষন সে মেঘালয়ের সাথে এক বাইকে এক সাথে ছিল। ভাবতেই শিউরে উঠে তিয়ানা। লজ্জা মিশ্রিত হাসি হেসে বালিসে মুখ লুকায়। ইদানীং মেঘালয়ের সাথে কথা বলতে তার দিকে তাকাতে লজ্জা লাগে তিয়ানার। অদ্ভুত অনুভূতি হয় তার। এ অনুভূতির ভবিষ্যৎ কি জানে না সে। সামনে কি হবে সেটারও ধারনা নেই তার। মেঘালয় কে কখনো জানাতে পারবে কিনা সেটাও জানে না সে। মেঘালয়ের রিয়াকশন কি হবে সেটাও জানে না সে। শুধু জানে সে ভালবেসে ফেলছে মেঘালয় কে। তার জাত শত্রুকে।

__এভাবে আর কত দিন যাবে?
খাবার রেডি করছিল তুলিকা। মৌমিতার প্রশ্নে অবাক হয় তুলিকা। বিস্মিত কন্ঠে বলে,,
__কী যাবে? কিসের কথার বলছিস?
হাসে মৌমিতা হেসে বলে,,
__আমার থেকে লুকাচ্ছিস? বুঝতে পারছিস না কি জিজ্ঞেস করছি? নাকি, না বোঝার ভান ধরছিস?
চোখ নামিয়ে নেয় তুলিকা। মৃদু হেসে বলে,
__যেভাবে গত বিশ বছর গেছে।
__কেন মেনে নিচ্ছিস?
__আমি আমার শাস্তি পাচ্ছি।
__আর কত?
__যত দিন সাদিদ চাইবে ( তুলিকার উত্তর)
পলকহীন ভাবে তুলিকাকে দেখে মৌমিতা। রাগ হয় তার। সাদিদের উপর না তুলিকার উপর সারাজীবন অন্যের জন্যই ভেবে গেল মেয়েটা। কি দরকার ছিল সেদিন এভাবে বিয়ের আসর থেকে পালিয়ে যাওয়ার। কি দরকারছিল তিয়াসাকে নিজের জায়গাটা ছেড়ে দেয়ার। আবার কি দরকার ছিল বারো বছর পর ফিরে আসার। নিজের প্রান প্রিয় বান্ধুবিদের এই পরিনতি মেনে নিতে পারেনা মৌমিতা। কি দরকার ছিল তিয়াসার বোনের ভালোবাসা জেনেও সাদিদের দিকে হাত বাড়ানোর। সেই তো যার সংসার যার ভালোবাসা শেষ সব তার’ই হলো। সেখানে তোর কোনো অস্তিত্ব নেই তিয়াসা। কি দরকার ছিল এটা করার।

চলবে?
(ধীরে ধীরে সাদিদ আর তুলিকার অতীত সামনে আনতে চাইছিলাম। তবে আপনাদের কৌতুহলে আজকের পর্বেই অর্ধেক টা জানালাম। বাকিটা আস্তে ধীরে। আর হ্যা মন্তব্য চাই। না হলে আর দেবোই না গল্প😒😒😒 দুই এক লাইন বলবেন যা কিছু 😒)
(আজ এত লিখি এত লিখি তাররও লেখা শেষ হচ্ছেনা মন্তব্য আশা করছি। আমার আজ গল্প দেয়ার ইচ্ছে ছিল না। অনিচ্ছায় দিয়েছি তাই হয়তো ততোটা ভাল হয়নি। আবার বলছি মন্তব্য আশা করছি দু’রক লাইন। )

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here