আমার_গল্পে_তুমি ২০_পর্ব
#সুমাইয়া_সুলতানা_সুমী(writer)
,
পুরো বাড়ি ফুল দিয়ে সাজানো হচ্ছে , অন্তরা গাড়ি পাঠিয়ে ইয়ানার মাকে বলে ইয়ানাকে সেই সকালেই নিয়ে এসেছে বাড়ি সাজানোর জন্য লোক আনা হয়েছে তাদের সাথে ইয়ানাও যোগ দিয়েছে, গলার সাথে ফুলের মালা সহ হাতে অনেক গুলো ফুল , দেখে যেনো মনে হচ্ছে কোনো ফুল রাজ্যের ফুল কুমারি ,, আরে ওখানে তো ফুল দেওয়াই হয়নি এই লোকগুলো না শুধু কাজে ফাঁকি দেওয়ার ধান্দা সন্ধ্যাই পার্টি আর এখনো এদের সাজানো হলোই না ,, কথা গুলো বলে ইয়ানা সিঁড়ির দিকে গেলো পুরো সিঁড়ির উপর থেকে নিচে অবধি ফুল দিয়ে সাজানোর জন্য।
কাজের সময় এই বাড়িতে কাউকেই পাওয়া যায় না, সকালে কেউ আমার রুমে কফি টাও দেয়নি আজব ,, মাথাটা ধরেছে এখন এক কাপ কফি হলে ভালো হতো , ভাবি কে বলতে হবে,, কথাগুলি বলতে বলতে আর্দ্র নিচে নামছিলো তখনি সামনে ইয়ানার সাথে দেখা হয়ে গেলো ,, কি ব্যাপার এমন কার্টুন সেজে ঘুরে বেড়াচ্ছো কেনো??
খুশির ঠেলায় হয়েছে?? নিজে তো কাজ করবেই না আবার অন্য কেউ কাজ করলে শুধু উল্টা পাল্টা বলে, আর্দ্র কে পাত্তা না দিয়ে ইয়ানা নিজের কাজ করতে লাগল সিঁড়ির একদিয়ে হয়ে গেছে তাই অন্য পাশে যেতে গেলে আর্দ্রও নিচে নামতে গেলো কিন্তু পারলো না কেননা দুজনেই সামনাসামনি হয়ে গেছে ইয়ানা যেদিকে যাচ্ছে আর্দ্র ও সেদিকে যাচ্ছে ।
–কি হচ্ছে টা কি সরো সামনে থেকে নিচে নামবো আমি।
—তো যাননা আপনাকে নিষেধ করেছে কে আপনিই তো আমার সামনে দাঁড়িয়ে আছেন সরুন তো আমার এখনো অনেক কাজ বাকি , ভাব নিয়ে বলল ইয়ানা৷
–ইডিয়ট , ,
— কিহ আমি ইডিয়ট?? কত্তো বড় সাহস আমাকে ইডিয়ট বলল নেহাত ওনি আমার বস আর আপুর একমাত্র দেবর তাই জন্য কিছু বললাম না নয়ত ,, নাহ থাক ওনাকে নিয়ে ভেবে সময় নষ্ট না করে নিজের কাজ করি।
আর্দ্র অন্তরার কাছে কফি চেয়ে উপরে চলে গেছে আর বলে গেছে যাতে কাউকে দিয়ে কফিটা করে ওর রুমে দিয়ে আসতে অন্তরাকে কফি বানাতে নিষেধ করেছ কেননা অন্তরার এখন প্রায় সাত মাস চলছে , তাই অন্তরা ইয়ানাকে বলল আর্দ্রর কফিটা বানাতে ইয়ানা তো জানে না যে আর্দ্র কফিতে চিনি খাইনা তাই ইয়ানা ভুল বসত কফিতে চিনি দিয়ে ফেলেছে তারপর কফিটা আর্দ্র কে দিতে যাবে তখনি ওখানে লিজা এসে বলল ,, এটা নিশ্চয়ই আর্দ্রর কফি রাইট?
— জি এটা ওনার কফিই।
— ওকে তাহলে তুমি কফিটা আমায় দিয়ে দাও আমি গিয়ে আর্দ্র কে কফিটা দিয়ে আসব, তুমি বরং অন্য কাজ করো।
— তাহলে তো ভালোই হয় এই নিন আপনিই বরং কফিটা মিস্টার আর্দ্র কে দিয়ে আসেন। লিজা ইয়ানার থেকে কফিটা নিয়ে বাঁকা হেসে আর্দ্র কে দিতে গেলো গিয়ে দেখল আর্দ্র ওর রুমে বিন ব্যাগে এর উপর বসে ল্যাপটপ কোলের উপর নিয়ে কাজ করছে লিজা গিয়ে আর্দ্র কে বলল,, এই নে তোর স্পেশাল কফি।
—আর্দ্র লিজার থেকে কফিটা নিয়ে মুখে দিয়েই চোখটা বন্ধ করে আবার খুলে বলল , কফিটা কে বানিয়েছে?? লিজা ভেবেছে কফিটা অনেক ভালো হয়েছে তাই হাসি হাসি মুখ করে অনেক ভাব নিয়ে বলল, কেনো আমি বানিয়েছি অনেক ভালো হয়েছে তাই না?? আসলে প্রথম প্রথম যে এতোটা ভালো হবে ভাবিনি।
–লিজার কথা শুনে আর্দ্র কফিটা টি টেবিলের উপর জোরে শব্দ করে রেখে বলল,, ফাস্ট টাইম তাই কিছু বললাম না , কফিটা বানানোর আগে তোর ভাবির থেকে জানা উচিত ছিলো আমি চিনি খাইনা আর তুই যে কফিটা বানিয়েছিস সেটা তে এতো পরিমান চিনি দেওয়া যেন মনে হচ্ছে এটা কফি নয় চিনির শরবত, ওকে পরবর্তী তে যেনো এমনটা না হয় এখন যেতে পারিস।
— লিজা রাগে ফুঁসসে ও ভাবছে ইয়ানা ইচ্ছে করে এটা করেছে যাতে আর্দ্র লিজাকে রাগ করে,। পরশকে কোলে নিয়ে ওর মামা আকাশ আর্দ্রদের বাড়িতে আসল,, হ্যালো মিস কিউটিপাই আমি কি আপনাকে কাজে সাহায্য করতে পারি??
— পরশের দেওয়া নামে অন্যকেউ ডাকায় ইয়ানা পিছনে তাকিয়ে দেখলো পরশকে কোলে নিয়ে একটা ছেলে দাঁড়িয়ে আছে বয়স আর্দ্রর কাছাকাছি তবে ওনার থেকে ছোটই হবে,,, আপনি??
— আমি হলাম আপনার চাম্প এর একটা মাএ মামা আর আমি আপনাকে কিউটিপাই বলে ডেকেছি বলে রাগ করবেন না প্লিজ পরশের থেকে আপনার এই নামটা জেনেছি ও বলেছে আপনি নাকি অনেক কিউট আর ভালো এখন তো দেখছি সত্যিই তাই। আকাশের সাথে ইয়ানার অনেক ভাব হয়ে গেলো তারপর দুজনে মিলে বাকি কাজগুলোও সেরে নিলো বিকেলের দিকে ইয়ানা অন্তরাকে বলে বাড়ি চলে গেলো বলল সন্ধ্যার সময় একেবারে রেডি হয়ে আসবে অন্তরাও ওকে আর নিষেধ করলো না।
,,,,,সন্ধ্যায়,,,,
সবাই রেডি হয়ে ডয়িং রুমে চলে এসেছে পরশ কেকের সামনে দাঁড়িয়ে পরশ আজকে সুট পরেছে অনেক মিষ্টি লাগছে দেখছে লিজা এতো পরিমাণ মেকাপ দিয়েছে মুখে যেনো ওর মুখের মেকাপ ওঠিয়ে পরোটা বানালে অন্তত বিশজন মানুষ কে সেই পরোটা একটা একটা করে খাওয়ানো যাবে সবাই নিজের কাজে ব্যাস্ত তখন আকাশ দরজার দিকে তাকায়ে আনমনেই বলে উঠল ওয়াও সো বিউটি ফুল, আকাশের কথা শুনে পরশও দরজার দিকে তাকিয়ে বলল বিউটিফুল কিউটিপাই আর্দ্র হাতে ঘড়ি পরতে পরতে সিঁড়ি দিয়ে নামছিলো তখনি বেখেয়ালে ওর চোখ দরজার দিকে পরল দেখলো কালো শাড়ি পরিহিতা এক আগুন সুন্দরী রমনী তার শাড়ির কুঁচি ঠিক করতে ব্যাস্ত আর্দ্র না চাইতেও ওর চোখ দরজায় দাঁড়ানো ইয়ানার দিকে আটকে গেলো ,, ওদিকে ইয়ানা শাড়ি পড়ে হাঁটতে পারেনা আম্মু শাড়িটা পরিয়ে দিয়েছে অনেক কষ্টে এতোপথ আসলেও এখন জায়গায় এসে কুঁচি পায়ের সাথে জড়িয়ে গেছে তাই ও দরজায় দাঁড়িয়েই শাড়ির কুঁচি ঠিক করতেছে।
লিজার কথায় আর্দ্রর হুশ ফিরলো ,, বল না আর্দ্র আমায় কেমন লাগছে?? আর্দ্র ইয়ানার দিকে তাকিয়ে আনমনে বলে উঠল, অপূর্ব যেনো পরী রাজ্যের কোনো অপ্সরা ভুল করে জমিনে নেমে এসেছে।
আর্দ্রর কথায় লিজা খুশি হয়ে বলল৷ সত্যি বলছিস আর্দ্র??,, কিসের সত্যি আর হ্যাঁ তোকে তেমন ভালো লাগছে না মেকাপটা আর একটু কম করলে ভালো লাগত এখন চল চাম্প এর কাছে যাওয়া যাক,,,লিজা মন খারাপ করে আর্দ্রর পিছনে চলে গেলো পুরো অনুষ্ঠান টা খুব ভালো ভাবেই মিটে গেলো, পার্টি শেষ হতে হতে প্রায় রাত দশটা বেজে গেছে সবাই খাওয়া শেষ করে বিদায় নিয়ে বাড়িতে চলে যাচ্ছে ইয়ানা আকাশের সাথে কথা বলছিলো তখন ও বলল আমি একটু আসছি আপুসহ বাকিদের থেকে বিদায় নিয়ে আসি এই বলে ইয়ানা অন্তরার কাছে যেতে গিয়ে শুনতে পাই।
–কি হচ্ছে কি আর্দ্র তুমি এমন করছো কেনো একে তো এতো রাত মেয়েটা একা যাবে কি করে তুমি গিয়ে দিয়ে আসলে কি এমন হবে।
–সরি ভাবি আমি পারবো না রোজ রোজ ওই মেয়েকে আমিই কেনো দিয়ে আসবো আমি কি ওর ড্রাইভার নাকি??
–হ্যাঁ ভাবি আর্দ্র তো ঠিকি বলেছে ওই মেয়ে কে যে ওকে দিয়ে আসতে হবে আর ও একা এসেছে একাই যেতে পারবে আর্দ্র এখন যাবে না।
–লিজা কিছু মনে করো না তোমাকে কষ্ট দিতে চাই না তবুও কথাটা বলতে বাধ্য হচ্ছি তুমি বাইরের মানুষ বাইরেই থাকো আমি আর্দ্রর ভাবি আমি আর্দ্রর সাথে কথা বলছি তুমি আমাদের কথার ভিতর নাক না গলালেই আমি খুশি হবো, অন্তরার কথা শুনে লিজা লজ্জায় চুপ করে থাকলো, আর বাইরে থেকে ইয়ানা কথা গুলো শুনে রেগে ওর চোখে পানি চলে আসলো,,, ওনি কি ভাবে কি নিজেকে আমার কাউকে লাগবে না আমি একায় চলে যেতে পারবো কথাটা নিজে নিজে বলেই ইয়ানা বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেলো , ওদিকে আর্দ্রদের কথা বলার মাঝেই আকাশ এসে বলল।
–আপু আর্দ্র ভাই এর যদি সম্যসা হয় তাহলে আমি গিয়ে মিস ইয়ানা কে দিয়ে আসি??
–তাহলে তো অনেক ভালো হয় ভাই তুই বরং যা গিয়ে মেয়েটাকে দিয়ে আয় অনেক রাত হয়েছে,, আড় চোখে আর্দ্রর দিকে তাকিয়ে বলল অন্তরা।
—ইয়ানাকে আকাশ দিয়ে আসবে শুনে আর্দ্র কেনো যেনো অনেক রাগ হলো তাই ও বলল,, কাউকে যেতে হবে না এতোদিন যখন আমিই ওকে দিয়ে আসছি আজকেও আমিই দিয়ে আসবো,, কথাটা বলে গটগট করে বেরিয়ে গেলো আর্দ্র ।
–সেই কাজটাই করবে শুধু শুধু এতোটা পেঁচালো ওই যে বলে না গাধা সেটাই খাই মাঝখানে শুধু হাদলায়,, বিরবির করে কথাটা বলে নিজেই হেসে ফেলল অন্তরা,, আকাশ তো হা করে দাঁড়িয়ে আছে কি হলো বেচারা কিছুই বুঝলো না, আর ওদিকে লিজা রাগে ফুঁসসে কিছু একটা করতেই হবে যে করেই হোক ওই মেয়েকে আর্দ্রর কাছ থেকে দূরে সরাতে হবে।
চলবে,,,,,,??