আমার_গল্পে_তুমি ১৯_পর্ব

আমার_গল্পে_তুমি ১৯_পর্ব
#সুমাইয়া_সুলতানা_সুমী(writer)

,
কথায় বলে সম্পর্কের মাঝে তৃতীয় জন আসলে সম্পর্ক ভেঙে যায় তবে কিছু কিছু সময় সম্পর্কের মধ্যে তৃতীয় কেউ আসলে মনের না বলা অনুভূতি গুলো বেরিয়ে আসে , ইয়ানার ক্ষেএে ও তাই হয়েছে তখনকার কথাগুলো গুলো মনে করে বিছানায় শুয়ে মিটমিট করে হাসছে ইয়ানা। বিছানা থেকে নেমে আয়নার সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে নিজেই নিজেকে বলল ,, এই কি হ্যাঁ এমন করে হাসছিস কেনো?? প্রেমে পরেছিস?? আচ্ছা সত্যি কি আমি প্রেমে পড়েছি তাও আবার ওই গাম্বাট রাগী লোক টার এও সম্ভব?? না না আমি এমন টা কখনোই করতে পারি না ওই লোকটাকে কীভাবে আমার ভালো লাগতে পারে ,, তবে ওনি তখন ওভাবে আমার পক্ষে কথা বলায় কেমন যেনো লাগছে মনে হচ্ছে আমি এবার সত্যি সত্যি ওনার প্রেমে পড়ে যাবো , ইয়ানা তখন কার ঘটনা মনে করতে লাগল।

—- কি হচ্ছে এখানে?? আর ইয়ানা তুমি এখনো বাড়ি যাওনি কেনো?? রাত হয়ে যাচ্ছে তো।
—-বাড়িই তো যাচ্ছিলাম কিন্তু আপনার বান্ধবীর জন্য আর যেতে পারলাম কই।
—মানে?? ইয়ানা কি বলছে লিজা।
—দেখ না আর্দ্র আমি শুধু ওকে বলেছি আমাকে একটু হেল্প করতে কিন্তু ও আমায় কতগুলো কথা শুনিয়ে দিলো, , আচ্ছা তুই বল আমি তো একটা মেয়ে এই এতোবড় ব্যাগ আমি নিতে পারি?? ওকে শুধু একটু বলেছি আমাকে সাহায্য করতে আর ও উল্টে আমায় অপমান করলো, , এ কেমন টিচার রেখেছিস পরশের জন্য যায় নিজের কোনো শিক্ষা নেই সে কি করে পরশকে ভালো কিছু শিক্ষা দেবে বল।
—-লিজার কথা শুনে ইয়ানার মন চাচ্ছিলো মুখের উপর সব সত্যি কথা গুলো বলে দিতে কীভাবে একের পর এক মিথ্যা বলে মিস্টার আর্দ্রর কাছে ভালো সাজছে ,, তবে না আমায় শান্ত থাকতে হবে আগে দেখি মিস্টার আর্দ্র কি করে সব ক্ষেএে ধর্য ধারণ করতে হয়।
—সেকি ইয়ানা এটা তোমার কেমন ব্যাবহার আমার জানা মতে তুমি তো এমন নও আর লিজা তো শুধু তোমার কাছে একটু সাহায্য চেয়েছে আর তুমি ওকে অপমান করলে এটা মোটেও ঠিক নয়।
—সব সময় এক পক্ষের কথা শুনে বিচার করা ঠিক নয় মিস্টার আর্দ্র আমি এতোক্ষণ চুপ ছিলাম বলে ওনার বলা কথাগুলো সত্যি এটা কিন্তু নয়৷ আর ওনি যদি সত্যি আমার কাছে সাহায্য চাইতো তবে আমি নিশ্চয়ই ওনাকে সাহায্য করতাম কিন্তু ওনি তা করেননি উল্টে আমাকে হুকুম করেছে যেনো আমি এই বাড়িতে কাজ করি ,, এখন হয়ত আপনি আমার বলা কথাগুলো বিশ্বাস করবেন না কেননা আমি তো এবাড়ির কেউ নয় আর লিজা ম্যাম আপনার বন্ধু আপনি ওনার কথায় বিশ্বাস করবেন।

—- আমি কখনই মিথ্যাকে সমর্থন করি না সেটা তুমি ভালো করেই জানো আর লিজা যদি এমনটা করে থাকে তাহলে অবশ্যই ওকে তোমার কাছে মাফ চাইতে হবে ,, লিজা মিস ইয়ানা যা বলল তাকি সত্যি?? কি হলো চুপ করে আছিস কেনো বল।

—- এই মেয়েটার জন্য আর্দ্রর কাছে খারাপ হওয়া যাবে না নিজেকে আর্দ্রর সামনে ভালো প্রমাণ করতেই হবে ,, আ ,,আসলে আমি আমার ব্যাবহারের জন্য সত্যি অনেক লজ্জিত ,, সরি।

—ইট’স ওকে যে নিজের ভুল বুঝতে পারে তাকে ক্ষমা করে দেওয়া উচিত , , ওকে আমি আসি তাহলে।

,,,,বর্তমান,,,,

–কিরে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে ওভাবে একা একা হাসছিস কেনো??
— ক,,কই আম্মু আমি হাসছি কই এমনিতেই চুল আচঁড়ায়।
–আচ্ছা আয় এখানে বস, , এখন বলত সোহাগ কে তোর কেমন লাগে।
—ভালোই তো দেখতে শুনতে ভালো আর ব্যাবহার ও ভালো কেনো বলোত??
–নাহ কিছু না এমনিতেই তোর পছন্দ হয়েছে এটাই অনেক , আচ্ছা এখন তাহলে শুয়ে পড় অনেক রাত হয়েছে বেশি রাত জাগা ঠিক নয়।
—ওকে আম্মু।
,,,,,,,,
—আমার মুখে কি হাসার মতো কিছু আছে?? ওভাবে আড়ে আড়ে তাকিয়ে মিটমিট করে হাসছো কেনো??

—-এইরে ওনি কি দেখে ফেললো নাকি ,, ক, কই নাতো আমি আপনার দিকে তাকিয়ে হাসবো কেনো আমি তো এমনি।

—এমনি কি হুমম?? তোমার কিন্তু কাজের প্রতি তেমন মন দেখছি না তোমার ব্যাপারটা কি, বলোত কথাটা বলে আর্দ্র চেয়ার থেকে দাঁড়িয়ে ইয়ানার দিকে যেতে লাগল আর ইয়ানাও ভয়ে পিছাতে লাগল পিছাতে পিছাতে দরজার সাথে লেগে গেলো।

—আপনি এভাবে আমার দিকে আগাচ্ছেন কেনো??

–তুমি পিছিয়ে যাচ্ছো তাই ,, আর তুমি এভাবে পিছাচ্চো কেনো?? কথাগুলো বলতে বলতে আর্দ্র আরো ইয়ানার দিকে এগিয়ে গেলো আর্দ্র আর ইয়ানার মধ্যে এখন মাএ এক হাত ফাঁকা তখনি বাইরে থেকে কেউ দরজায় ধাক্কা দিলো আর ইয়ানা তাল সামলাতে না পেরে সোজা গিয়ে আর্দ্রর গায়ের উপর পড়ল ইয়ানার দু হাত আর্দ্রর কাঁধে আর ভুল বসত ইয়ানার ঠোঁট গিয়ে আর্দ্রর ঠোঁটে ছোঁয়া লাগে।

—এই ইডিয়ট দেখে দরজা খুলতে পারো না এরপর থেকে দেখে শুনে দরজা খুলবে যাও এখন।

—-সরি স্যার।

—মিস ইয়ানা তুমিও এখন যেতে পারো ,, আর্দ্র গিয়ে চেয়ারে বসল, আর ওদিকে ইয়ানা চোখগুলো বড় বড় করে এখনো সেই জায়গায় দাঁড়িয়ে আছে ,, আর্দ্র কি বলছে সেটা যেনো ও শুনতেই পাইনি।

—মিস ইয়ানা তোমাকে কি যাওয়ার জন্য কার্ড দেওয়া লাগবে?? দাঁতে দাঁত চেপে জোরে বলল আর্দ্র।

— জ ,,, জি হ্যাঁ হ্যাঁ আমি যাচ্ছি , কোনো মতে ওখান থেকে পালিয়ে এলো ইয়ানা, নিজের ডেস্কে এসে তখনকার ঘটনা টা ভাবতে লাগল ,, ছিঃ ওনি কি ভাববে শেষ মেষ কিনা ওনার সাথে আমার লিপকিস হয়ে গেলো ওহ নো এতো দিন যাও আমার ঘুম হতো এখন তাও হবে না৷ আচ্ছা হঠাৎ করে আমার এতো লজ্জা লাগছে কেনো,, কি জানি অফিসে থাকা কালিন ইয়ানা লজ্জাই আর আর্দ্রর সামনে যায়নি যাও বা গেছে তবে ওনার দিকে তাকাইনি পুরো টা সময় নিচের দিকে তাকিয়ে ছিলো আর আর্দ্র এমন ভাবে আছে যেনো কিছুই হয়নি ।

সন্ধ্যায় ,,,,

— আরে ইয়ানা তুমি এসো পড়েছো কিন্তু আজকে তো পরশ বাসায় নেই।

— কেনো আপু চাম্প কোথায় গেছে??

— পরশ আজকে একটু আমার মায়ের বাসায় গেছে, , আমার ভাই এসে ওকে নিয়ে গেছে।

— ওহ তাহলে তো আজকে আর পড়ানো নেই আমি তাহলে আসি এখন।

— আরে কই যাচ্ছো কোথায়ও যাওয়া হবে না বসো আমার কাছে আর শোনো কালকে সকাল সকাল আমাদের বাসায় চলে আসবা ওকে।

— সেকি কেনো আপু কালকে তো শুক্রবার ছুটির দিন তাহলে আবার আমি আসবো কেনো??

— আরে কালকে পরশের জন্মদিন তাই বাড়িতে অনুষ্ঠান আছে তুৃমি সকাল সকাল চলে আসবা বুঝেছো, তুমি হলে পরশের একমাএ কিউটিপাই তুমি সকাল সকাল চলে আসবা নইলে কিন্তু তোমার চাম্প অনেক রাগ করবে বুঝেছো।
— ওকে আপু।

–লিজা সিঁড়ি দিয়ে নিচে নামতে নামতে দেখল ইয়ানা অন্তরার সাথে বসে গল্প করছে,, এই মেয়েটাকে তো আমার প্রথম থেকেই পছন্দ নয় এসব মেয়েরা বড় লোকের ছেলে দেখলেই হামলে পড়ে কেমন বাড়ির সবাইকে হাত করে নিয়েছে তবে আর্দ্র শুধুই আমার ওকে আমি কিছুতেই হারাতে পারবো না, আমি শিওর এই মেয়েটা আর্দ্রকে পছন্দ করে ,, লিজা সিঁড়িতে দাঁড়িয়ে কথাগুলো ভাবছিলো তখনি আর্দ্র আর অনিক অফিস থেকে আসল আর্দ্র কে দেখেই লিজা পায়ে হাত দিয়ে সিঁড়িতে বসে চিৎকার করতে লাগল,,, আহ আমার পা মনে হয় একেবারে ভেঙ্গে গেছে আহ আমি তো হাঁটতেই পারছি না।

–আরে লিজা ম্যাম কি হলো আপনার।

ইয়ানাকে এগিয়ে আসতে দেখে লিজা রাগে ফুসতে লাগল তবুও জোর করে ওখানেই বসে থাকল,, আরে আমার হাত ধরুন আমি আপনাকে উঠতে সাহায্য করছি।

নাহ তুমি পারবে না আহ অনেক বেথ্যা করছে আর্দ্র প্লিজ হেল্প মি।

দেখি কি হয়েছে?? আর্দ্র গিয়ে লিজার হাত ধরে ওকে দাঁড় করালো তারপর লিজা আর্দ্রর হাতটা চেপে ধরে আর্দ্রর সাথে হেঁটে যেতে যেতে ইয়ানার দিকে তাকিয়ে বাঁকা হাসি দিলো ,, ইয়ানা ভ্রু কুঁচকে লিজার দিকে তাকিয়ে আছে কেননা ওহ ঠিকই বুঝতে পেরেছ এটা লিজার নাটক ইয়ানা রেগে মুখটা ফুলায়ে তাকিয়ে থাকল।
,,,,,,
সবাই টেবিলে খেতে বসেছে লিজা গিয়ে আর্দ্রর পাশের চেয়ারে বসে পড়েছে আর্দ্রর মা আর বাবা আগেই খেয়ে ঔষুধ খেয়ে রুমে চলে গেছে ইয়ানা এখনো যায়নি অন্তরা যেতে দেয়নি বলেছে খেয়ে যেতে।
আরে আপু তোমাকে যেতে হবে না তুমি বসো আমি রান্নাঘর থেকে তরকারি আনছি,, এই বলে ইয়ানা রান্নাঘরে চলে গেলো তারপর তরকারির বাটিতে একটা আঙুল চুবিয়ে দেখলো ওটা তেমন গরম নাহ প্রায় ঠান্ডা হয়ে গেছে তখনি ইয়ানার মাথায় একটা বুদ্ধি আসলো,, তখন আর্দ্রর লিজার হাত ধরাটা কেমন যেনো ভালো লাগছে না ইয়ানার এটা জেলাসি নাকি অন্যকিছু সেটাও বুঝতেছে ইয়ানা ওর শুধু রাগ হচ্ছে আর্দ্র লিজার হাত কেনো ধরবে,, ইয়ানা তরকারির বাটি থেকে কিছুটা ঝোল পায়ের উপর ফেলে দিয়ে ফ্লোরে বসে কান্না করতে লাগল।

আহ আমার পা ইস মনে হয় ফুসকা পড়ে গেছে আহ অনেক জ্বলছে এখন কি করবো,, পা ধরে ইয়ানা কান্নার নাটক করতে লাগল।

আরে মিস ইয়ানার আবার কি হলো তোমরা থাকো আমি দেখে আসছি,, আর্দ্র গিয়ে দেখল ইয়ানা ফ্লোরে বসে আছে। কি হয়েছে এভাবে ফ্লোরে বসে আছো কেনো??

দেখুননা পায়ে তরকারিটা পড়ে গেছে অনেক গরম আহ পায়ে মনে হয় ফুসকা পড়ে গেছে উফ অনেক জ্বলছে।

কই দেখি,, আর্দ্র দেখলো সত্যি ইয়ানার পায়ে তরকারি আর্দ্র নিচু হয়ে ইয়ানাকে কোলে তুলে নিয়ে ডয়িং রুমে গেলো,, লিজা ডাইনিং টেবিলে বসে রাগি চোখে ইয়ানার দিকে তাকিয়ে ছিলো ইয়ানা লিজাকে দেখে আর্দ্রর গলাটা জরিয়ে ধরল, তাই দেখে লিজা তো রেগে মেগে খাবার টেবিল থেকে উঠে চলে গেছে,, আর্দ্র ইয়ানাকে সোফায় বসিয়ে দিয়ে ওর পা পরিষ্কার করে দিয়ে ওখানে মলম লাগাচ্ছে আর এদিকে ইয়ানা হুদাই গালে হাত দিয়ে বসে আছে কেননা ওর তো পায়ে লাগেইনি।

অন্তরা আস্তে করে চেয়ার থেকে উঠে রান্নাঘরে গিয়ে তরকারির বাটিতে হাত দিয়ে দেখলো ওটা ঠান্ডা তেমন গরম না কিছু একটা ভেবে অন্তরা নিজের মনেই হেসে উঠল।

চলবে,,,,,???

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here