আমার_গল্পে_তুমি ২৬_পর্ব

আমার_গল্পে_তুমি ২৬_পর্ব
#সুমাইয়া_সুলতানা_সুমী(writer)

,
ইয়ানা ভয়ে ভয়ে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে আর ওর সামনেই আর্দ্র চোখ লাল করে ইয়ানার দিকে তাকিয়ে আছে ভালো করে ঘুম হয়নি তাই জন্য চোখ লাল টকটকে হয়ে আছে, মাথার চুল বেঁয়ে টপটপ করে পানি পরছে,, ইয়ানা তখন ভেবেছিলো যে মজা করে পানি দিলে আর্দ্র কিছু বলতে পারবে না কেননা অনিক অন্তরা ওর সাথেই আছে, কিন্তু ইয়ানার ভাবনাকে ভুল প্রমাণিত করে ওকে এখানে ফাঁসিয়ে দিয়ে দুজনই পালিয়েছে,, ইয়ানাও অবশ্য পালাতে চেয়েছিলো কিন্তু আর্দ্র আর পালাতে দিলো কই পালানোর আগেই ওকে ধরে ফেলেছ।

হাউ ডেয়ার ইউ, তোমার সাহস হলো কি করে আমার গায়ে পানি দেওয়ার।

ইয়ানা ভয়ে কিছু বলতে পারছে না, অবশ্য অন্য সময় হলে আর্দ্রর সাথে তর্ক করে ও জিতে যেতো কিন্তু এখন দোষ তো ওর তাই কিছু বলতে পারছে না ,,, কি হলো কথা না বলে এভাবে চুপ করে আছো কেনো ইডিয়ট।

দ,,দেখুন আপনি আমার সাথে এভাবে কথা বলতে পারেন না, আমি কি এমন করেছি যে আপনি আমায় এভাবে বকা দিচ্ছেন।

হুমম তুমি কি করেছো?? ওকে ওয়েট, এই বলে আর্দ্র গায়ের থেকে কাথাটা সরায়ে বিছানা থেকে নেমে ইয়ানার কাছে গেলো তারপর টুপ করে ইয়ানাকে কোলে তুলে নিলো,, ইয়ানা বুঝতে পারছেনা আর্দ্র ঠিক কি করতে চাইছে, আর্দ্র ইয়ানা কে কোলো নিয়েই ওয়াশরুমের দিকে গেলো তারপর ইয়ানাকে শাওয়ার এর নিচে নামিয়ে শাওয়ার অন করে দিলো এদিকে ইয়ানা তো রাগে ফেঁটে যাচ্ছে দাঁড় কিড়মিড় করে বলল,, এটা কি করলেন আপনি আমি তো ভিজে গেলাম,, আর ইউ ম্যাড??

আমি কি এমন করলাম যে তুমি এভাবে রাগ করছো,, আর্দ্র ইয়ানার বলা কথাটা ওকেই ফিরিয়ে দিলো।

আপনি এখনো জিগাস করছেন যে আপনি কি করেছেন?? দেখতে পাচ্ছেন না কি করেছেন সকাল সকাল আমায় এভাবে ভিজিয়ে দিলেন কেনো??

এই একি প্রশ্ন আমারও সকাল সকাল তুমি আমায় ভিজিয়ে দিলে কেনো?? আর আমি যখন তোমায় কথাটা বললাম উল্টে তুমি কি বললে যে তুমি কি এমন করেছো যে আমি এভাবে বকা দিলাম,, শোনো এরপর থেকে আর্দ্র চৌধুরীর সাথে পাঙ্গা নিতে আসলে ভেবে চিন্তে আসবে বুঝলে খুকি,, কথাটা বলে আর্দ্র নিজের মুখ থেকে পানি নিয়ে ইয়ানার মুখে দিয়ে চলে গেলো।

ইইই ওনি নিজেকে কি ভাবে কে জানে একে তো আমায় ডাকাতি করে বিয়ে করেছে তার উপর এতো বড়বড় ডায়লগ, ওকে মিস্টার আর্দ্র চৌধুরী আমিও এই টা মনে রাখবো তবে আমিও মনে রাখবেন আপনি ইয়ানার সাথে পাঙ্গা নিয়েছেন এর ফল আপনাকে হাড়ে হাড়ে বুঝিয়ে দেবো।
,,,,,,,
দুটো রুমে যে কি করছে কে জানে তখন ওভাবে মেয়েটাকে রুমে একা ফেলে আসা ঠিক হয়নি বলো??

আরে এতো চিন্তা করছো কেনো আমার ভাই কি বাঘ নাকি যে ইয়ানা কে খেয়ে ফেলবে, কিচ্ছু হবে না তুমি এতো চিন্তা না করে খাও তো৷, তখনি আর্দ্র হাত দিয়ে চুল ঝাড়তে ঝাড়তে নিচে আসলো,,, সেকিরে এটুকু সময়ের মধ্যে সবকিছু করে আবার গোসল ও করে ফেললি??

হোয়াট?? পাগলের মতো কি সব বলছিস, কি করবো আমি??

কেনো বাসর।

কিহ এসব ভুলভাল চিন্তা মাথা থেকে সরায়ে ভালো হ, ভাবি আপনার গুনধর বরকে সামলে রাখুন কথাটা বলতে বলতে,,
ডাইনিং টেবিলের চেয়ার টেনে বসতে যাওয়ার আগেই ইয়ানা দৌড়ে এসে বসে পড়ল।, এটা কি হলো??

যা হবার তাই হলো চেয়ার ফাঁকা ছিলো তাই বসে পড়লাম সিম্পল।

একে তো আমি,,, আরে ভাই আমার এতো রাগ করলে হয় নাকি বউ হয় তো তোর যা ওর পাশের চেয়ার টাই বসে পড়।

আর্দ্র রাগি একটা লুক দিয়ে ইয়ানার পাশের চেয়ারে বসে পড়ল,, ইয়ানা এমন একটা ভাব করল যেনো আর্দ্র কে ও চেনেই না, তখনি ওখানে কবির আসলো কবির কে দেখে ইয়ানা মাথার কাপড়টা আর একটু টেনে দাঁড়িয়ে পড়ল কবির এসে চেয়ারে বসে বলল,, আরে ইয়ানা তুমি আবার দাঁড়িয়ে পড়লে কেনো বসো বসো,, আর তুমি এটা ভেবো না যে আমরা তোমার উপর রেগে আছি আসোলে আমার ছোট ছেলেটা ওমনি তুমি কিছু মনে করোনা অনিক আমাকে সব বলেছে।

এক মিনিট,, ভাইয়া তোমাকে কি বলেছে বাবা?? এই তুই বাবাকে কি বলেছিস?? আর্দ্র কথায় অনিক আর্দ্রর দিকে তাকিয়ে ঠোঁট ফুলায়ে কিছু না জানার ভান করে বলল কই কিছুই না তো।

উল্টা পাল্টা বাবা কে কি বলেছি তুই?? -তোকে ওতো শত জানতে হবে না আমরা সব জানি আর ইয়ানাকে আমাদের অনেক পছন্দ হয়েছে তুই বস মা, তুই বললাম বলে আবার রাগ করেছিস নাকি?

এমা না না আন্টি রাগ করবো কেনো।

আন্টি?? কে আন্টি? খবরদার যদি আবার আন্টি বলিস মা বলবি এখন থেকে বুঝলি, ।
,,হুম এখন তো তোমরা মেয়ে পেয়ে গেছো আর আমাকে ভুলেই গেছো, পাশের চেয়ার থেকে মন খারাপ এর অভিনয় করে বলল অন্তরা।

তুই চুপ কর পাকা মেয়ে, আমি কাউকেই ভুলি নাই আজ থেকে আমার দুটো ছেলে দুটো মেয়ে।

এ বাবা তাহলে তো আমাদের বর আমাদের ভাই হয়ে গেলো,, অন্তরা কথায় সবাই হেসে দিলো তখনি চোখ ডলতে ডলতে উপর থেকে পরশ নামলো।

এই তো আমার দাদু ভাই চলে এসেছে, তা ঘুম কেমন হলো??

অনেক ভালো, জানো তো দাদুন আজকে না আমি একটা স্বপ্ন দেখেছি,।

তাই?? তা কি স্বপ্ন দেখেছো তুমি?

আমি স্বপ্ন দেখেছি যে চাচ্চু আর কিউটিপাই বক্সিং বক্সিং খেলছে দুজনের মাথায় হেলমেট হাতে ওই বক্সিং খেলার মোটা গ্লাভস তারপর ঘন্টা বাজতেই ঢিসুম ঢিসুম শুরু হয়ে গেলো অনেকক্ষণ মারামারি হওয়ার পর কিউটিপাই চাচ্চুর মুখে জোরে একটা ঘুষি দিয়েছে আর চাচ্চুর সামনের দুটো দাঁত ভেঙ্গে নিচে পড়ে গেছে। পরশের স্বপ্নের কথা শুনে সবার হাসি পেলেও আর্দ্রর ভয়ে কেউ হাসলো না তবে ইয়ানা হাসি আর চেপে রাখতে পারলো না হুহা করে হেসে দিলো, পাশে বাবা আছে খেয়াল হতেই জিব্বায় একটা কাঁমড় দিয়ে মুখ চেপে হাসতে লাগল।

আর্দ্র রেগে বলল,,এই ইডিয়ট মেয়ে একদম হাসবে না আর এই চাম্প এসব কি বাজে স্বপ্ন দেখো আজ থেকে তোমার টিভি দেখা অফ, টিভিতে কিসব উল্টা পাল্টা দেখবে তারপর রাতে সেসব স্বপ্নে দেখবে, এই ভাইয়া তুই না ওর বাবা বোঝা ওকে।

কি বোঝাবো আমার ছেলে ভুল কি বলেছে ও যা দেখেছে তাই বলেছে,, এখন তুই যদি খেলায় হেরে যাস তাহলে ও কি বলবে বল।

যেমন বাবা তার তেমন ছেলে।
,,,,
আর্দ্র অফিস যাবার জন্য রেডি হচ্ছে ইয়ানা আজকে আর অফিসে যাবে না তবে বাড়ির সবাই ওকে অফিসে যেতে নিষেধ করেছিলো , কি দরকার এখন অফিসে যাওয়ার তবে ইয়ানা বলেছে যে ও অফিসে যাবেই কেননা ও চাই না অন্য কারোর টাকা ও ওর মাকে দেয় ইয়ানা বলেছে যে মাস শেষে ও যেই টাকাটা পাবে সেটা ও ওর মায়ের হাতে তুলে দিবে, ইয়ানার এই কথায় আর কেউ দ্বিমত পোষণ করেনি আর্দ্র ও বলেছে যে ইয়ানা ঠিকি বলেছে প্রতিটা মেয়েরই নিজের পায়ে দাঁড়ানো উচিত সারা জিবন কেনো অপরের ভরসায় থাকবে।

শুনুন আজকে আপনি আমার সাথে আমাদের বাসায় যাবেন তারপর মাকে বলবেন যে আমার এখানে কোনো দোষ ছিলো না সব দোষ আপনার, কাল থেকে আম্মু আমার সাথে কথা বলেনি ফোন দিলেও রিসিভ করছে না।

কেনো বলবো??একটু ভেবে,,ওকে ওমমম বলতে পারি তবে আমার একটা শর্ত আছে,, কোর্ট গায়ে দিতে দিতে বলল আর্দ্র।

কি শর্ত??

শর্তটা হলো তোমাকে আমায়,, আর্দ্র ইয়ানার দিকে এগোতে এগোতে বলল তোমাকে আমায়,,, আপনাকে আমায় কি?? আর্দ্র ইয়ানার আরো কাছে চলে গেলো ইয়ানা পিছাতে পিছাতে একদম দরজার সাথে লেগে গেলো,, দ,,দেখুন আপনি এমনটা করতে পারেন না এভাবে একটা অবলা মেয়েকে একলা পেয়ে সুযোগ নেওয়া ঠিক নাহ।

কিহ তুমি অবলা?? আর কিসের সুযোগ এর কথা বলছো ইডিয়ট সব সময় এক লাইন বেশি ভাবো, আমি বলতে চেয়েছি যে তোমাকে আমায় সরি বলতে হবে তারপর আমি আন্টিকে সব কথা বলবো।

কিহ?? আমি সরি বলবো তাও আবার আপনাকে কেনো কোন দুঃখে আর কিসের জন্য?? উল্টে সরি তো আপনি বলবেন আমায় কেননা আপনার জন্যই আম্মু আমার সাথে কথা বলছে না।

আমি ওতো শত জানি না তুমি আমায় সরি বলবে তারপর আমি তোমার মাকে সব বলবো রাজি থাকলে বলো নয়ত আমি গেলাম বাই।

এই না না আপনি যাবেন না প্লিজ,, পিছন থেকে আর্দ্র হাত ধরে বলল ইয়ানা। , যাবো না বলছো কি করতে চাইছো তুমি হমম এভাবে হাত ধরেছো কেনো??

এই লোকটার মাথায় সব সময়ে উল্টা পাল্টা চিন্তা ঘোরে কখন কি করে আমায় ফাঁসিয়ে দেবে কে জানে,, ওতো কিছু না ভেবে সরিটা বরং বলেই দিই আর এখানো তেমন কেউ নেই,,, শুনুন।

হুম বলো।
—সরি।
–মিনমিন করে কি বলো বুঝি নাহ জোরে বলো।
— সরি,, একটু জোরে।
–আরে কিহ বলো বুঝি না জোরে বলো।
–এবার ইয়ানা রেগে আর্দ্রর কানের কাছে গিয়ে জোরে বলল, সরি সরি সরি।
–আহ আস্তে বলো কানের পর্দ ফেঁটে গেলো গলা তো নয় যেনো মাইক, শুনেছি আমি, আর হ্যাঁ বিকেলের দিকে রেডি হয়ে থাকবে আমি এসে নিয়ে যাবো ওকে এবার খুশি??
–হুম অনেক খুশি।
— কিহ বললে??
–আবারো কানের কাছে গিয়ে বলবো নাকি??
–নাহ থাক তোমার যে গলা না জানি আমি আবার কানে কালা না হয়ে যায়, ওকে থাকো আমি গেলাম।
–আর্দ্রর যাওয়ার পানে তাকিয়ে আনমনেই হেসে উঠল ইয়ানা।

চলবে,,,,??

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here