আমার_গল্পে_তুমি ৩১_পর্ব
#সুমাইয়া_সুলতানা_সুমী(writer)
,
দেখতে দেখতে আরো একমাস পাড় হয়ে গেলো অন্তরার এখন নয় মাস চলছে পেট আগে থেকে আর একটু বড় হয়েছে,, আজকে বাড়িতে শুধু ইয়ানা ছাড়া আর কেউ নেই কেননা অনিক আর আর্দ্র অফিসে গিয়েছে পরশকে আকাশ এসে নিয়ে গিয়েছে আর আশা আর কবির কোনো এক আত্মীয় বাড়িতে গিয়েছে, রোজা এখন আর্দ্রর অফিসে চাকরি করছে আর্দ্র বলেছে চাকরির সাথে সাথে মাস্টার্স টাও করতে যাতে মাস্টার্স টা কম্পিলিট করলে আরো ভালো একটা পোস্টে জব করতে পারবে তখন ও ওর বাবা মায়ের সামনে গিয়ে দাঁড়ালে ওর মা বাবাও বুঝতে পারবে যে তারা কত বড় ভুল করতে যাচ্ছিলো,, তাই ইয়ানা যেখানে ভর্তি হয়েছে রোজাও সেই ইউনিভার্সিটি তে ভর্তি হয়েছে,,, অন্তরা বাসায় একা থাকবে বলে ইয়ানা আজকে অফিসে যায়নি অন্তরার কাছে রয়েছে।
শোনো না ইয়ানা আমার না খুব আচার খেতে মন চাচ্ছে, ছাঁদে আচার রোদে দেওয়া আছে তুমি একটু গিয়ে আনবে প্লিজ।
এভাবে বলছো কেনো আপু আমি এখনি আনছি তুমি এই জুসটা খেতে লাগো আর হ্যাঁ বিছানা থেকে একদম নামবে না বলছি আমি না আসা অবধি ঠিক আছে??
ওকে ভাই ঠিক আছে তুমি যাও শোনো চালতার আচার আর আমের আচারটা আনবে ঠিক আছে??
ওকে আপু তুমি থাকো আমি এখুনি আনছি,,, ইয়ানা রুম থেকে বেরিয়ে ছাদের দিকে চলে গেলো অন্তরা বিছানায় বসে জুসটা খাচ্ছিলো কিন্তু অর্ধেক খেয়ে আর খাইতে মন চাচ্ছিলো না তাই টি টেবিলের উপর রাখতে গেলো কিন্তু টেবিলটা দূরে ছিলো তাও কোনো রকমে রাখতে গিয়ে গ্লাস টা ফ্লোরে পরে ভেঙে গেলো,,৷ যাহ গ্লাসটা তো ভেঙে গেলো আমি কি নেমে ওগুলো পরিষ্কার করব?? না থাক ইয়ানা আমায় নামতে নিষেধ করেছে ও না অবধি নামা যাবে না,, কিন্তু এই জানালাটা বন্ধ করলে ভালো হতো রোদটা মুখে লাগছে,, অন্তরা অনেক ভেবে চিন্তে আস্তে করে নিচে নেমে হেঁটে গিয়ে জানালার পর্দা ফেলে জানালাটা বন্ধ করে দিলো তারপর আবার আস্তে আস্তে বিছানার দিকে আসতে গেলেই অসাবধানতায় নিচে পরে থাকা জুসে স্লিপ কেটে নিচে পরে গেলো যদিও চিৎ হয়ে পরেছে তবুও পেটে অনেকটা বেথ্যা পেয়েছে।
ওফফ অনেকটা দেরি হয়ে গেলো না জানি আপু একা একা কি করছে, , পাশের বাসার কাকি টা তো ছাড়তেই চাইছিলো না বকবক শুরু করেছে তো করেছেই আমি বুঝিনা এক ছাদ থেকে অন্য ছাদে কীভাবে গল্প করে মানুষ, ইয়ানা একা একা বকবক করতে করতে রুমে চলে আসল,, আপু এই নাও তোমার আচা,,,,ইয়ানা সামনে তাকিয়ে দেখলো অন্তরা মেঝেতে পরে আছে আর পায়ে কাছে রক্ত, আসলে গ্লাসে পা কেটে গেছে তাই রক্ত বের হয়েছে অনেকটা, অন্তরা মেঝেতে পরে কান্না করছে উঠতে পারছে না তার উপর পেটেও প্রচন্ত বেথ্যা করছে, অন্তরার এমন অবস্থা থেকে ইয়ানা যেনো হতভম্ব হয়ে গেছে,, হাতের আচারের বয়ম টা হাত থেকে পরে ভেঙে গেলো,, ইয়ানা দৌড়ে অন্তরার কাছে যেতে গেলে মেঝেতে থাকা কাঁচের টুকরো তে লেগে পা কেটে গেলো তবুও কোনো রকমে অন্তরার কাছে যেতে গেলে আচারের তেলে পা স্লিপ করে সোজা গিয়ে খাটের উপর পড়ল,, খাটের উপর পড়লে সম্যাসা হতো না কিন্তু ইয়ানা খাটের স্টান এর উপর পরেছে ও পেটে অনেক বেথ্যা পেয়েছে, একেতে পা কেটে রক্ত ঝড়ছে তারপর পেটে আঘাত লাগায় যেনো নিশ্বাস বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম, একেই হয়ত বলে বিপদের উপর বিপদ।
তবুও ইয়ানা কোনো রকমে উঠে অন্তরার কাছে গেলো,, আপু তোমার কিছু হবে না আর আমাদের পিচ্চির ও কিছু হবে না, আমি আছি তো আমি দেখছি তুমি আল্লাহ আল্লাহ করো।
ইয়ানা আমার খুব কষ্ট হচ্ছে আর পারছি না, আর তুমি কি করবে তোমার ও তো পা কেটে রক্ত বের হচ্ছে, মাথায় ও কেটে গেছে, আবার পেটেও অনেকটা আঘাত পেয়েছো তোমারও তো ডাক্তারের কাছে যাওয়া উচিত, আআআআ,, ( ভাঙা ভাঙা সরে কথাগুলো বলল অন্তরা)
তুমি চিন্তা করো না আপু আমি দেখছি,, ইয়ানার পেটেও অনেক বেথ্যা করছে,, মেঝেতে রক্তে লাল হয়ে গেছে, ইয়ানার ভয় হচ্ছে অন্তরার এই অবস্থায় এতো রক্ত বের হওয়া ঠিক না,, ইয়ানা নিজের বেথ্যাকে উপেক্ষা করে অন্তরাকে মেঝে থেকে উঠায়ে বিছায়ে শুয়ালো তারপর ফোন নিয়ে আর্দ্র কে কল দিলো, কিন্তু আর্দ্র মিটিং এ থাকায় ফোন ধরতে পারলো না, ইয়ানা অনেকবার কল দিলো কিন্তু ফোন বেজে বেজে কেটে গেলো ধরলো না,, তারপর ইয়ানা অনিক কে কল দিলো কিন্তু অনিকও আর্দ্রর সাথেই মিটিং এ ছিলো তাই ও ধরতে পারলো না,, ইয়ানা কবির আশাকেও কল দিলো কিন্তু ওনারাও ধরলো না কেননা ওরা সবার সাথে বসে গল্প করছিলো তাই ঠিক পাইনি।
ওফ কেউ ফোন ধরছে না কেনো সবাই করছে টা কি, এখন আমি কি করবো আল্লাহ সাহায্য করো, ইয়ানা আবারও অন্তরার কাছে গেলো।
,,,,,
রোজা দুপুরে লাঞ্চ টাইম এ ভাবলো বাড়ি গিয়ে ইয়ানা আর অন্তরার সাথে খাবে তাই অফিস থেকে বাড়ি চলে এসেছে, এসে কলিং বেল চাপল,
আপু তুমি চিন্তা করো না কেউ হয়ত এসেছে তুমি এখানে একটু অপেক্ষা করো আমি দেখছি কে আসলে, ইয়ানা পেটে হাট দিয়ে খোঁড়াতে খোঁড়াতে নিচে গেলো, ইয়ানা যেই দিক এসেছে সারা মেঝেতে রক্ত লেগে আছে, ও কোনো রকমে খোঁড়াতে খোঁড়াতে গিয়ে দরজা খুলে দেখল রোজা দাঁড়িয়ে আছে, রোজাকে দেখে যেনো ও একটু হলেও আশার আলো দেখতে পেলো,, একি ইয়ানা কি হয়েছে তোর আর এতো রক্ত কেনো?? পেটেও তো রক্ত লেগে আছে কি হয়েছে তোর বল আমায়,, ইয়ানাকে ধরে আতংকিত গলায় বলল রোজা।
রোজা ওসব পরে হবে, আপু কে আর বেবিকে বাঁচাতে হবে তুই যলদি আপুর কাছে যা আমি গাড়ির ব্যাবস্হা করে আসছি।
কিন্তু তোর এই অবস্থা হলো কি করে, আর আপুর কি হয়েছে??
ইয়ানা রোজাকে সব বলল, কিন্তু ইয়ানা তোকেও তো ডাক্তার দেখাতে হবে,, ওসব পরে হবে রোজা তুই আগে আপুর কাছে যা আমি বাইরে থেকে গাড়ি ঠিক করে আসছি,, ইয়ানার জোরাজুরিতে রোজা উপরে অন্তরার কাছে গেলো তারপর ইয়ানা কোনো রকমে বাইরে গিয়ে একটা ট্যাক্সি ঠিক করে আনলো তারপর দুজনে মিলে অন্তরাকে ধরে কোনো রকমে ট্যাক্সি তে বসায়ে হসপিটাল এ নিয়ে গেলো।
,,,,,,,,,
অন্তরাকে ওটি তে নিয়ে গেছে এখনি নাকি সিজার করা লাগবে, রোজা অনেক বলেও ইয়ানাকে ভর্তি করতে পারিনি, ইয়ানার অবস্থাও খারাপ পা থেকে রক্ত পড়তে পড়তে শুকায় গেছে,পা অনেকটা কেঁটে গেছে কাঁচের সাথে লেগে,, কপালেও ফুলে গেছে আর পেটের বেথ্যা তো আছেই, পেটে খানিকটা কেটেও গেছে,, এমন করছিস কেনো ইয়ানা প্লিজ চল আমার সাথে তোর চেকাপ করানোটা প্রয়োজন পেটে অনেক জোরে আঘাত লেগেছে আল্লাহ না করুক যদি কোনো সম্যসা হয়,। আর পায়েও মেডিসিন লাগাতে হবে নয়ত ইনফেকশন হতে পারে।
না রোজা যতক্ষণ না ডাক্তার এসে বলবে আপু আর বেবি ভালো আছে ততক্ষণ আমি নিজের কোনো পরিচর্যা করবো না, কোথাও না কোথাও আপুর এই অবস্থার জন্য আমিই দায়ী,, আমি যদি তখন ছাঁদে না যেতাম তাহলে এমন হতো না।
তুই কেনো নিজেকে দোষী ভাবছিস ইয়ানা, এটা একটা এক্সিডেন্ট এখানে তোর কোনো হাত নেই তাই শুধু শুধু নিজেকে দোষ দেওয়া বন্ধ কর,,, ওদের কথা বলার মাঝে একটা নার্স এসে বলল যে পেশেন্ট এর রক্ত লাগবে কেননা অনেকটা রক্ত ঝড়ে গেছে, নার্সের কাছ থেকে রক্তের গ্রুপ জেনে ইয়ানা বলল,, আমি রক্ত দেবো আমার ও এই একি গ্রুপ।
আপনি শিওর তো যে আপনিই রক্ত দিবেন, কেননা আপনাকে দেখে তো মনে হচ্ছে আপনাকেই এখন রক্ত দেওয়া প্রয়োজন।
এসব কি বলছিস ইয়ানা, তুই কেনো রক্ত দিবি তোর এই অবস্থায় রক্ত দেওয়া ঠিক হবে না।
না রোজা রক্ত তো আমিই দেবো, নার্স আপনি চলুন,, ইয়ানা রোজার মানা করা সত্ত্বেও নার্স এর সাথে চলে গেলো,, রক্ত দেওয়ার পর ইয়ানা অনেকটা দুর্বল হয়ে পড়েছে ঠিক মতো দাঁড়াতেও পারছে না মাথার মধ্যে ঘুরছে, রোজা ইয়ানাকে একটা চেয়ারে বসায়ে দিয়ে বলল ও আর্দ্র আর অনিককে ফোন করে আসছে,, প্রায় অনেকটা সময় পর আর্দ্র আর অনিক তড়িঘড়ি করে দৌড়ে হসপিটাল এ আসলো ইয়ানা আর্দ্রকে দেখে কোনো রকমে দাঁড়িয়ে আর্দ্র কাছে গিয়ে কিছু বলতে যেতেই আর্দ্র ঠাস করে ওকে একটা চড় মেড়ে দিলো।
সব সময় তুমি এক লাইন বেশি বুঝো তাই না?? কি মনে করো যে তুমি যা করবে সেটাই ঠিক? আমার সাথে যা করো ঠিক আছে কিন্তু তুমি আমার ফ্যামিলির কারো সাথে খারাপ ব্যবহার করতে পারো না,, তোমাকে আমি রেখে গেছি ভাবির খেয়াল রাখার জন্য কিন্তু তুমি সেটাও পারলে না, আসলে কি পারো তুমি?? আজকে তোমার জন্য ভাবির এই অবস্থা, আজকে যদি ভাবির কিছু হয় তোমাকে তো আমি ছাড়বো না, জীবনেও ক্ষমা করবো না তোমায়,একটা বার কল পযন্ত করোনি আমায়, রোজা না কল দিলে তো জানতেই পারতাম না,,, ভাইয়া চল দেখি ডাক্তার কি বলে তুই ভেঙে পরিস না আয় আমার সাথে,, আর্দ্র অনিক কে নিয়ে চলে গেলো।
পুরোটা সময় ইয়ানা ছলছল চোখে অবাক হয়ে আর্দ্রর দিকে তাকিয়ে ছিলো একটা টু শব্দ ও করেনি,, রোজা ওখানে ছিলো না একটু ওয়াশরুমে গিয়েছিলো,, ইয়ানা পিছনের দিকে তাকিয়ে একবার ওটির দিকে তাকিয়ে আবার আর্দ্রর দিকে তাকিয়ে পেটে হাত রেখে খোঁড়াতে খোঁড়াতে চলে গেলো।
চলবে,,,,,??