আমার_গল্পে_তুমি ৩৭_পর্ব

আমার_গল্পে_তুমি ৩৭_পর্ব
#সুমাইয়া_সুলতানা_সুমী(writer)

,
আর্দ্র মুখটা পেঁচার মতো করে নিজ মনে ডাইভিং করছে আর ওর পাশে ইয়ানা বসে আছে, বসে আছে বললে ভুল হবে রীতিমতো লাফালাফি করছে তবে ও একা নয় সাথে আরো লোকজন আছে,, অনেক অপেক্ষার পর অবশেষে সেই দিনটা চলেই আসলো, গ্রামে অবশ্য নম্বরের শুরুতেই শীত পড়া শুরু হয়ে যায়, আর ওরা যাচ্ছে ডিসেম্বর এর মাঝামাঝিতে মানে এখন গ্রামে একদম জাঁকিয়ে শীত পড়েছে ,, এক গাড়িতে পরিবারের গুরুজনেরা আর অপর গাড়িতে হল্লা পাটি মানে হলো আর্দ্র ইয়ানা, আকাশ, রোজা অনিক, অন্তরা পরশ অবশ্য কবির আর আশার কাছে,, গাড়ির মধ্যে ওতটাও শীত পড়ছে না তবুও আকাশ আর অনিক মাথায় মাফলার আর গায়ে মোটা জ্যাকেট পড়ে বসে আছে, আর এতো পরিমাণে লাফালাফি করছে যে শীত তো দূর গরমে মন চাচ্ছে ঘন্টা দুয়েক শাওয়ার নিতে।

আহ ভাইয়া তুইও কি পরশের মতো ছোট হয়ে গেলি নাকি এতো চেঁচাচ্ছিস কেনো আর এতো লাফালাফিরই বা কি আছে, দুই বাচ্চার বাবা হয়েও এখনো বুদ্ধি হলো না,, তোর চেয়ে তো আমার চাম্পই বেশি বুদ্ধিমান।

তো কি তোর মতো হোপ করে বসে থাকবো নাকি, তুই যেনো দেখতে জোয়ান হলেও মনটা বুড়া কিন্তু আমরা তো আর তা নয় কি বলো সালাবাবু।

একদম ঠিক ভাইয়া, কিন্তু কেমন যেনো গরম গরম লাগছে , শুনেছি গ্রামে নাকি সেই শীত তবে এতো গরম লাগছে কেনো??

গরম তো লাগবেই গাধার মতো এতো সাত সকালেই শীতের জামা কাপড় গায়ে দিলে তো গরম লাগবেই,,

ঠিকি বলেছো রোজা আমার ভাই আর বরটা যেনো একদম পাগল হয়ে গেছে, এমন ভাব করছে যেনো আমরা লন্ডন যাচ্ছি , আর অনিক একটু চুপচাপ বসো তো দেখছো মেয়েটা ঘুমিয়েছে তবুও চেঁচাচ্ছো, কেনো একটু চুপ থাকা যাচ্ছে নাহ??

আরে আপু তু,,,,, ইয়ানা কিছু বলবে তখনি দেখলো আর্দ্র রেগে চোখ বড় করে ওর দিকে তাকিয়ে আছে,, এভাবে তাকানোর কি আছে হুম আমি কি আপনাকে ভয় পাই নাকি?? আর আমি কোনো খারাপ কিছু করছি নাকি আমিতো,, আর হ্যাঁ আমি কিন্তু আমার নানি বাড়ি যাচ্ছি ওখানে একদম বরগিরী করবেন না, আর বকাও দেবেন না বলে দিলাম।

আর্দ্র ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে একটা ডোন্ট কেয়ার লুক দিয়ে ডাইভিং এ মন দিলো,,, গাড়ি এপারে এসে পাকা রাস্তা পাড় করে এখন কাঁচা রাস্তায় ঢুকেছে,, দুপাশে কৃষকের ক্ষেত আর মাঝ খান দিয়ে মাটির রাস্তা,, এটাকে রাস্তা বললে ভুল হবে ঘোড়ার গাড়ি, গরুর গাড়ি আর মহিষ এর গাড়ি যেয়ে যেয়ে রাস্তাটা আর রাস্তা নেই পুরাই পাস্তা হয়ে গেছে,,, ওরে আল্লাহ,, এটা কি রাস্তা গো ইয়ানা কমর তো গেলো।

অনিক ভাইয়া আমার না এখন জেমস এর একটা গান মনে পড়ছে কি গান বলতো?? ,
৷ ,,,,,, ঝাকানাকা ঝাকানাকা দেহ দোলা না,,
,,,,,,, মন বলে মন বলে দেহ ঝাকা না,,
,,,,, মীরা বাই হেইলা দুইলা হেইলা দুইলা গরবর নাচাই,,
,,ঝাকানাকা ঝাকানাকা দেহ দোলা না,, মন বলে মন বলে মন বলে দেহ ঝাকা না।

একদম ঠিক কথা বলছো সালাবাবু এই রাস্তার সাথে এই গানই যায়,, এতো ভাঙ্গা রাস্তা আমি বাপের জন্মে দেখি নাই গায়ের সব কিছু নড়ে যাচ্ছে , মনে হচ্ছে বুকের বাল্ব ও নড়ে কিডনীর কাছে চলে গেছে।

না না অনিক ভাই আমার তো অন্য গান মনে পড়ছে,, চিকনা কমর আমার চিকনা কমর চিকনা কমরের কি জ্বালা, ও আর্দ্র ভাই আপনি আস্তে গরুরু গাড়ি চালান,, এই না না এটা তো কার গাড়ি, তাহলে এখানে গরুর গাড়ি নয় কার গাড়ি হবে।

তোমরা যে যাই বলো না কেনো আমার তো হেব্বি লাগছে আহ কতদিন পর গ্রামে আসলাম সেই রকম লাগছে,,, চোখ বন্ধ করে একটা শ্বাস নিয়ে বলল ইয়ানা।

স্টপ,,, তোমরা সবাই একটু চুপ করবে?? সেই কখন থেকে কানের কাছে বকবক করেই যাচ্ছো গাড়িতে ওঠা থেকেই শুরু হয়েছে বকবক এখনো থামার নামে কোনো খোঁজই নাই, , রেগে জোরে বলল আর্দ্র।

আর্দ্রর চিৎকারে সবার হালুয়া টাইট সবাই একদম ফুল স্টপ হয়ে গেলো,, আরে তোমরা ভয় পেয়ো না আমার ভাই ছোট বেলা থেকেই এমন করে,, খুব আদরের তো তাই, আমি দেখছি,, তা আর্দ্র ভাই আমার হঠাৎ করে গাড়ি থামালি কেনো?? কি হয়েছে আর এমন রাগ করছিস কেনো কতদিন পর সবাই বেড়াতে যাচ্ছি তাও আবার গ্রামে সবার মধ্যে অনেক এন্যার্জি বেশি বেশি হয়ে গেছে বুঝলি।

ওহ রিয়েলি?? তাহলে তো ভালো এক কাজ করো সবাই গাড়ি থেকে নামো তোমরা বরং হেঁটেই যাও কেননা তোমাদের তো অনেক এন্যার্জি হয়েছে,, আর তাছাড়া হেঁটেই যেতে হবে কেননা গাড়ি আমি এমনি এমনি বন্ধ করেনি বেচারা একাই বন্ধ হয়ে গেছে,, যে রাস্তা আর যে ধূলা গাড়ির অবস্থা খারাপ।

আ্যাঁ??? আর্দ্রর কথা শুনে সবাই একসাথে জোরে বলে উঠলো।

আ্যাঁ নয় হ্যাঁ,, ঠিক হয়েছে এখন বুঝবে মজা।
,,,,,,,,
হেই তোমার গরুর গাড়িতে আমি যাবো না টিকটক টিকটক আর তো পারিনা অনিক ভাইয়া এরপর কি হবে বলেন তো?? ইয়ানা নিজের হাত উপরে তুলে ঘোরাতে ঘোরাতে বলল।

আমি তো জানিনা মাই ডিয়ার শালিকা ,, তবে আমি শেষ এখন মনে হচ্ছে জ্যাকেট এর সাথে কম্বল আনার ও ঠিক ছিলো এতো শীত পরবে আমি জীবনেও ভাবিনি ,, ইয়ানা তোমার নানার বাসা আর কত দূর আর এতো শীত কেনো একেবারে হাড় কাঁপানো শীত, মনে হচ্ছে ওখানে পৌছানোর আগেই জমে বরফ হয়ে যাবো।

আসলে ওরা সবাই গরুর গাড়িতে করে যাচ্ছে কেননা তখন ওদের গাড়ি নষ্ট হওয়ার পর সবাই গাড়ি থেকে নেমে গাড়ির কাছে দাঁড়িয়ে ছিলো,, ওদের গাড়ি পিছনে ছিলো তাই আগের গাড়িতে ওদের বাবা মা ছিলো ওনারা আগে আগে চলে গেছে,, ওরা দাঁড়িয়ে থাকার মাঝেই ইয়ানার এক চাচাত কাকু গরুর নিয়ে বাড়ি ফিরছিল ওনি জমি থেকে কাটা ধান যার জমি তার বাড়িতে দিয়ে ওনার নিজের বাড়ি ফিরছিলো তখনি মাঝ রাস্তায় ইয়ানাদের সাথে দেখা হয়ে গেলো আর ওরা সবাই এখন গরুর গাড়ি করেই ইয়ানার নানু বাসায় যাচ্ছে ,, এতে সবাই মজা পেলেও আর্দ্রর একটুও মজা লাগছে না উল্টে ও রেগে মুখটা বাংলার পাঁচের মতো করে রেখেছে এক হাতে জুতা ধরে অন্য হাত দিয়ে পায়ের কাছের জিন্স অনেকটা গুছিয়ে রেখে বসে আছে।

কি হলো আপনি মুখটা ওমন করে রেখেছেন কেনো?? দেখুন সবাই কত ইনজয় করছে আপনি এমন চুপ করে বসে আছেন কেনো??

তো কি করবো তোমাদের মতো লাফ ঝাপ করবো বাদরে মতো, সব গুলা ইডিয়ট কোনো কমন সেন্স নেই যত্তসব আর কি রাস্তা আর এটা কি গাড়ি?? এই জন্যই আমি আসতেই চাইনি কিন্তু কে শোনে কার কথা।

আরে কুল কুল এতো রাগ করছেন কেনো?? গ্রামে এতো শীত পরছে তবুও আপনার মাথা এতো গরম হয়ে আছে কেনো?? আচ্ছা আপনার তো গাড়িতে যেতে মন চাচ্ছে না তাইতো ওকে ঠিক আছে তাহলে আপনি বরং হেঁটেই আসেন,,, এই বলে ইয়ানা আর্দ্র কে ধাক্কা দিয়ে গরুর গাড়ি থেকে নামিয়ে দিলো।

এই ইডিয়ট মেয়ে এটা কি করলে তুমি?? ,, রেগে বলল আর্দ্র

আপনিই তো বললেন আপনার এই গাড়িতে যেতে ভালো লাগছে না তাই আপনি বরং হেঁটেই আসুন,, আর হ্যাঁ চিন্তা করবেন না গাড়ি আস্তে আস্তে চলবে তাই আপনি হারিয়ে যাবেন না,, ইয়ানার এহেন কাজে সবাই হা হয়ে গেছে,, ওদিকে আর্দ্র রেগে জুতা হাতে করে হেঁটে হেঁটে আসছে। ইয়ানা এক ধ্যানে আর্দ্রের দিকে তাকিয়ে আছে,, চুল গুলা এলোমেলো উপর থেকে শার্টের কয়েকটা বোতাম খোলা শার্টের উপরে জ্যাকেট এর চেনটা খোলা থাকায় দেখা যাচ্ছে, রেগে আছে জন্য মুখটা গোমরা করে রেখেছে, ঠান্ডার জন্য নাকটা লাল হয়ে আছে,, ফর্সা মুখে লাল নাক অনেক কিউট লাগছে,, ইস এই কিউট ছেলেটা আমার বর হায়, মে মাজাওয়া, এই ছেলেটা এত্তো হট কেনো,, মনে মনে বলল ইয়ানা।

চলবে,,,,,???

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here