আমি কাউকে বলিনি সে নাম
তামান্না জেনিফার
পর্ব ২৬+২৭
_________________________
সকাল থেকেই বুকের ভেতরে কেমন যেন চাপ চাপ ব্যথা হচ্ছে গাজী মিয়ার ৷ ব্যথাটা টানা অনেকক্ষন থাকছে না , বরং একটু পর থেমে যাচ্ছে ৷ কিছুক্ষন পরপর মাথা ঘাঁড় ঘামে ভিজে যাচ্ছে ৷ তার ইচ্ছে করছে একটু শুয়ে থাকতে , কিন্তু শুতে গেলেই শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে ৷ বসে থাকলে বরং নিঃশ্বাস নিতে একটু আরাম পাওয়া যাচ্ছে ৷ বেশ খানিকক্ষন বসে থাকার পর তার মনে হলো হয়তো গোসল করলে শরীরটা ভালো লাগবে ৷ কষ্ট করেই কলপাড় পর্যন্ত গেলেন তিনি ৷ কিন্তু চাপকলে পানি উঠানোর চেষ্টা করতেই মনে হলো বুকের মধ্যে কিসে যেন খুব জোরে টান লাগলো ! বুক চেপে ধরে বসে খুব আস্তেই ডাক দিলেন “বউমা … নাদের ….” ডাক শুনে লাকী দৌড়ে এলো এই ভাবতে ভাবতে ” বাব তো কলপাড়ে তাকে ডাকার কথা না ! পড়ে টরে গেলো না কী ! ”
টিউবওয়েলটা ধরে বসে ছিলেন গাজী মিয়া ৷ মুখ , কপাল কেমন যেন কালচে হয়ে গেছে ৷ লাকীকে দেখে একটু লজ্জিত গলায় বললেন “একটু পানি উঠায়ে দিবা বউ মা ?”
লাকী পানি উঠিয়ে দেবার পর তিনি খেয়াল করলেন নিজে নিজে মগে পানি উঠিয়ে গায়ে ঢালতে পারছেন না ৷ লাকী শ্বশুরের অবস্থা দেখে ভয় পেয়ে যায় …. কিন্তু গাজী মিয়া শান্ত গলায় বলে “আমার কিছু হয় নাই , তুমি একটু বাপটার মাথায় পানি ঢাইলা দেও মা ৷”
গোসল হতে হতেই গাজী মিয়া বুঝলেন তার কথা জড়িয়ে আসছে …. বুকের ব্যথাটা আরও বেড়েছে ৷ লাকীর সাহায্য নিয়েই ঘরে আসলেন তিনি ৷ হাতের ইশারায় চলে যেতে বললেন ৷ লাকীও বুঝছিল অবস্থা সুবিধার না বেশি …. সে ও দৌড়ালো সবাইকে জানাতে ৷
গাজী মিয়ার চোখের সামনে একটা পর্দা নেমে এসেছে , সবকিছু ঘোলা ঘোলা লাগছে ৷ হঠাৎ দেখলেন কে যেন তার পায়ের কাছে বসে সর্তা দিয়ে শুপারী কাটছে ৷ খুব মনোযোগ দিয়ে দেখলেন সে আর কেউ না , তার বউ , তার সন্তানদের মা ৷ তিনি জড়িয়ে যাওয়া স্বর নিয়েই বললেন
—বউ …. তুমি এইখানে ! তুমি ভালো আছো বউ ?
—আমি মহা সুখে আছি ৷ সবই ভালো , খালি আপনের কথা খুব মনে পড়ে ৷
—আমি তো কোনদিনও তোমারে সুখ দেই নাই বউ , খালি কষ্টই দিয়া গেছি ৷
—হ কষ্ট দিছেন , আমার আসলে কষ্ট পাইয়া পাইয়া অভ্যাস হইয়া গেছে ৷ এখন সুখে আছি , তাই আরাম পাই না !
—আমি কী করলে তোমার ভালো লাগবে বউ ? আমারে কও …
—আমার আপনেরে লাগবে ৷ আপনেরে খুব মনে পড়ে ৷ আমি আপনেরে নিতে আসছি ৷ আমার লগে চলেন ৷ এই যে আমি হাত বাড়াইলাম , আমার হাত ধইরা চইলা আসেন ৷
গাজী মিয়া হাত বাড়িয়ে দেয় বউয়ের দিকে ৷ ঠাণ্ডা শীতল সে হাতটা স্পর্ষ করতেই তার নিজেকে খুব হালকা মনে হয় ৷ এই মুহুর্তে তার আর বুক ব্যথা করছে না , চোখের সামনের পর্দাটাও সরে গেছে ৷ এই মুহূর্তে তার মনে হচ্ছে তিনি একটা পালকের মত হাল্কা হয়ে গেছেন ….
********
দৌড়াদৌড়ি করে সবাইকে নিয়ে শ্বশুরের ঘরে ঢুকে লাকী দেখলো , অদ্ভুতভাবে শুয়ে আছেন তিনি ৷ হাতটা সামনের দিকে বাড়ানো , চোখ দুটো খোলা , স্থির….. মনে হচ্ছে কাউকে ধরতে চাচ্ছেন তিনি….
নিপা পায়ে পায়ে এগিয়ে যায় বাবার কাছে ৷ বাবার গায়ে হাত রেখে চিৎকার করে কেঁদে ওঠে সে “ইয়া আল্লাহ ! আমারে তুমি এতীম বানাইলা !”
সবাই লাশের কাছে যাচ্ছে , শুধু লাকী দরজা ধরে বসে পড়েছে ৷ একটু আগেই মানুষটাকে নিজের হাতে গোসল করিয়েছে সে , গামছা খুঁজে পাচ্ছিলো না জন্য নিজের শাড়ির আঁচল দিয়ে মাথা মুছিয়ে দিয়েছে ৷ মৃত্যু কী এত হঠাৎ আসে ! কোন খবর না দিয়ে ….. এতক্ষন পর ডুকরে কেঁদে ওঠে লাকী ! এতক্ষন পর বোধহয় সে বোঝে একটু আগেই তাকে মা ডাকা মানুষটা চিরতরে চোখ বুজেছে ….
গাজী মিয়ার জানাজায় আশে পাশের গ্রাম ভেঙে মানুষ এলো ৷ অথচ মাইকিংও করা হয়নি ৷ অনেকদিন আগে কথায় কথায় তিনি নাদের মিয়াকে বলেছিলেন “আমি মরলে মাইকিং করিস না বাপ ৷ খালি মসজিদের মাইকে জানাজার সময় কইয়া দিস ৷” নাদের মিয়া সেই পুরোনো কথা ভেবেই মাইকিং করেনি ৷ তবুও লোকে লোকারন্য অবস্থা ৷ এত মানুষ কিভাবে খবর পেলো কে জানে ৷ গাজী মিয়া গ্রামের গন্যমান্য একজন মানুষ ছিলেন ৷ নানাভাবে নানান সময় তিনি অনেকের উপকার করেছেন ৷ অথচ বেশিরভাগই কেউ জানতো না ৷ সবাই তাকে ভয় করতো , সমীহ করতো …. আজ তাকে খাঁটিয়ায় শোয়া দেখে সবাই একে একে বলতে থাকে কার মেয়ের বিয়ে দিতে সাহায্য করেছিলেন তিনি , কার মায়ের ঔষধ যোগার করে দিয়েছিলেন , কার সন্তানের চাকরির ব্যবস্থা করেছিলেন……
গাজী মিয়াকে কবর দেওয়া হয় তার স্ত্রীর কবরের পাশেই ৷ কবর দেবার ঠিক আগ মুহুর্তে নাসির পৌছে তার বউ বাচ্চা নিয়ে ৷ কাঁদতে কাঁদতে বলেন “আল্লায় তাও বাপেরে শেষ দেখা দেখতে দিল , এই জন্যেই আল্লাহর কাছে হাজার শোকর …”
কবর হয়ে যাবার পর বড় ছেলে হিসেবে উপস্থিত সবার কাছে বাবার হয়ে ক্ষমা প্রার্থনা করে ৷ কারও কাছে তার বাবার ঋণ আছে কী না জানতে চায় ৷ বলতে বলতে কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে সে ৷ মায়ের মৃত্যুতে সে কষ্ট পেয়েছিল ভীষণ , তবে বাবার এই অকস্মাৎ চলে যাওয়ায় সে যেন পুরোপুরিই ভেঙ্গে পড়েছে ৷ একটু উঠে দাঁড়াবার মত শক্তিও তার নাই ৷ খড়কুটোর মত মনে হয় নিজেকে … যেন জীবন নামের নদীতে এবার তাকে একাই ভাসতে হবে ! মাথার উপর আর কারো ছায়া থাকলো না ৷ পথ হারালেও কেউ এসে পথ দেখাবে না , ভুল হলেও শুধরে দেবার কেউ থাকবে না ! জীবনটা যেন এক পলকেই কঠিন থেকে কঠিনতর হয়ে গেলো ! এই ভারী জীবনের ভার বহনের শক্তিও আর সে পাচ্ছে না ….
বাবা নামের বটবৃক্ষ চলে যাবার পর এখন তাদের তিন ভাইবোনের একটাই পরিচয় “এতীম” …
২৭.
একটা মৃত্যু অনেক কিছু বদলে দেয় ৷ একটা মৃত্যু অনেক কিছু নীরবেই শিখিয়ে যায় ৷ চোখের সামনে আপনজনের মৃত্যু জীবনের চরম শিক্ষাটা সযতনে দিয়ে যায় ৷ গাজী মিয়ার মৃত্যুর প্রাথমিক ধাক্কায় সবাই অনেক বেশিই ভেঙ্গে পড়েছে ৷ জহুরা আর লাকীর উপর দায়িত্বের চাপ যেন সবচেয়ে বেশি ৷ নিপা সারাদিন ঘর থেকে বের হয় না , দুধের বাচ্চাটা দুধের জন্য কাঁদে ফিরেও তাঁকায় না ৷ কেউ কিছু বললে হয় চুপ থাকে না হয় খুব খারাপভাবে উত্তর দেয় ৷ তারপর আবার চুপচাপ থাকে …. ওকে দেখলে মনে হয় নদীতে ভাঁটা চলছে ! দূর দূরান্ত পর্যন্ত পানি দেখা যাচ্ছে না , তবে পানি যে ছিল কখনও সেই ভিজে যাওয়া স্তরটা ঠিক দেখা যাচ্ছে ৷ নাদের মিয়া সারাদিন ঘরে শুয়ে থাকে ৷ সময়ে অসময়ে ছেলে দুটোকে বুকে চেপে ধরে থাকে ৷ ওরা দুরন্ত শিশু , বাবার এই আগলে ধরায় বিরক্ত হয় ৷ ওদের খেলার দিকে মন , বাবার মনের শূন্যতা তারা বোঝে না ! নাসির মিয়ার ছুটি শেষ হয়ে গেছে , তবুও ঢাকায় ফিরতে ইচ্ছে করে না ৷ বাবা মায়ের কবরের পাশে বসে থাকে সারাদিন ৷ গভীর রাতে শিশুর মত কাঁদে , জহুরা নীরবে দেখে সব কিছু …. কতই আর সামলায় সে ! যে সামলায় তারও তো সামলেই থাকতে হয় ….
সবকিছু ধৈর্যের বাইরে চলে যাচ্ছে দিনে দিনে ৷ প্রতিদিনই কেউ না কেউ আসছেন ৷ দূর সম্পর্কের আত্মীয় , লতায় পাতায় আত্মীয় কেউই বাদ যাচ্ছেন না ৷ এসব অতিথিকে সমাদর করতে হচ্ছে ৷ মরা বাড়িতে বসে চোখের পানি ফেলার অবসর লাকী আর জহুরা পাচ্ছে না ৷ জহুরা সারা জীবন শহরে থেকেছে ৷ গ্রামের বাড়ির এই এত কাজের সাথে সে পরিচিত না ৷ হাঁফিয়ে উঠেছে সে ৷ এদিকে স্বামীর শহরে ফেরার কোন লক্ষণই নেই ৷ গ্রামের বাচ্চাদের সাথে মিশে জুনি প্রতিদিনই নতুন নতুন শব্দ শিখে আসছে , নতুন নতুন গালিও শিখছে ৷ মা রাগ হলে নতুন শেখা গালিগুলো উগরে দিচ্ছে একের পর এক !
চিন্তায় জহুরার হাত পাঁ কাঁপে ! এই কী গ্রামের পরিবেশ … এত যত্নে নিজের হাতে গড়া তার পুতুলটা “কুপতার বাসছা” বলছে ! আবার তার এই ভুল উচ্চারণ শুনে হেসে গড়িয়ে পড়ছে লাকীর ছেলেরা ….
শ্বশুর শাশুড়ির সাথে কোনদিনও থাকেনি সে ৷ তাই বলে তাদের মৃত্যুতে খারাপ লাগছে না তা তো নয় ! কিন্তু অনেকদিন তো হলো , দশ দিনের ছুটিতে এসে আঠারো দিন পার হয়ে গেল ৷ নাসির তো কোন সরকারী চাকরি করে না ৷ এত দেরী করলে আদৌ চাকরিটা থাকবে কী না সেটাই হলো কথা !
তার এতদিনের গুছানো সংসার যেন এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে ৷ কাল গভীর রাতে স্বামীকে কাছে টানতে গেলে সে ফিরিয়ে দিয়ে বলেছে “আমি বোধহয় আর ঢাকা ফিরবো না ৷ এখানেই ভাইয়ের সাথে ব্যবসা বাণিজ্য কিছু করবো ! ”
সারাজীবন শহরে থাকা একজন মানুষের জন্য হঠাৎ করে গ্রামে থেকে যাওয়ার এই সিদ্ধান্তে পাশের মানুষটার জীবনে কত বড় প্রভাব ফেলে তা শুধু ভুক্তভোগীরাই বুঝবে ৷
রাত ছাড়া আজকাল নাসির মিয়াকে পাওয়া যায় না ৷ বাবা মায়ের কবরের কাছে বসাটাও কমিয়েছে ৷ নতুন ব্যবসা দাঁড় করানোর চেষ্টায় সারাদিন বাইরে বাইরে ঘোরে ৷ ফিরতে ফিরতে গভীর রাত ৷ সারাদিন ধরে জহুরা মনে মনে কথা সাজিয়েছে ৷ আজ সে স্বামীর সাথে কথা বলবেই …
—ঢাকায় ফিরবা কবে কিছু ভাবলা ?
—তোমারে না সেদিন বললাম , ঢাকায় আর ফিরবো না ৷ একটা ব্যবসা করবো এখানেই ৷ নিজেদের তো কম নাই , অযথা অন্যের গোলামী কেন করব ?
—ব্যবসা করার মূলধন কই পাইবা ?
—জমি বিক্রি করবো
—তোমার জমি কই যে বিক্রি করবা ?
—মূর্খের মত কথা বলো না তো ! বাবার জমিই আমার জমি ৷ সেটা থেকেই বিক্রি করবো ৷
—ভুল বললা জুনির বাবা ৷ বাবার জমি তোমার জমি না ৷ বাবার জমিতে তোমার যেমন অংশ আছে , নিপা আর ভাইজানেরও আছে ৷ তাদের সাথে কথা বলছো তুমি ? একা একা কিভাবে এই সিদ্ধান্ত নিলা ? তোমাকে যারা এসব পরামর্শ দিচ্ছে তারা তোমার আপন না শুধু এটুকু মাথায় রেখো ৷
—তারা জানে না , জানবে ৷ না জানায়ে বেঁচবো এমন তো না ৷ জমি ভাগ করে নিজের অংশ থেকে বেঁচবো ৷
—যে জমি তুমি কেনোনি , সেই জমি বেঁচার কথা ভাবতে তোমার লজ্জা করতেছে না ?
—আমার লজ্জা শরম আমি নিজেই দেখবো ৷ তোমাকে এসব ভাবতে হবে না ৷
—জুনি গালি শিখছে এখানে এসে
—শিখুক , জীবনে গালি শেখারও প্রয়োজন আছে !
জহুরা স্তব্ধ হয়ে যায় ! এতদিনের চেনা মানুষটাকে হঠাৎই অচেন মনে হয় ! নিঃশব্দে পাশ ফিরে শুঁয়ে পড়ে সে ৷ খুব কাছাকাছি থাকা দুটো হৃদয়ে দূরত্ব আসছে … জহুরা বোঝে পাশবালিশে থাকা মানুষটি এখন যোজন যোজন দূরে ৷
********
সেই যে নিপা এসেছিল , আর বাড়ি ফেরেনি ৷ এরমধ্যে কয়েকবার ইমরান তাকে নিতে এসেছে , সে যায়নি ৷ শেষেরবার বলে দিয়েছে সুমাইয়া ঐ বাড়িতে থাকলে সে ফিরবে না ৷ ইমরান হতবাক হয়ে জিজ্ঞেস করেছে “সে যাবে কোথায় ! ” নিপা অবলীলায় উত্তর দিয়েছে “তারে বাড়ি বানায়ে দেও , কাজের লোক দেও , মাসে মাসে টেকা পয়সা দেও … আমার আপত্তি নাই ৷ শুধু চোখের সামনে থেকে তারে দূরে সরাও ! ”
ইমরান রাগ করে চলে গিয়েছে ৷ সবাই অবাক হয়েছে নিপার কথায় ৷ নিপাকে সবাই ধিক্কার দিয়েছে ৷ কিন্তু কারও কথাই নিপার কানে ঢোকে না …. ওর কানে শুধু একটা বাক্যই বাজে “বাচ্চাটাকে বাঁচাতেই হবে ম্যাডাম , এতে মা না বাঁচলে নাই ৷ আপনারা বাচ্চাটাকে সুস্থভাবে আমার কোলে এনে দিন ….”
জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষনেও কান দুটো সচলই ছিল ৷ ডাক্তার বোধহয় বলেছিল দুজনকে বাঁচাতে পারবে না তারা ৷ আশেপাশে কেউই ছিল না , ছিল শুধু “সুমাইয়া” ….
যার কানে সারাক্ষন ঐ বাক্যগুলো বাজে তার কানে মানুষের ধিক্কার পৌছে না ৷ নিপা আরও শক্ত হয় প্রতি মুহূর্তে ৷ ইমরানের ছেলের মা সে , তাদের বংশ প্রদীপকে সেই জন্ম দিয়েছে ৷ নিজের অধিকার সে ছাড়বে না ৷ এতে লোকে তাকে খারাপ বলছে তো বলুক ! লোকের কথায় তার কাঁচকলা যায় আসে…
চলবে–