#আমি_তোমাকে_ভালোবাসি
#লেখনীতে_সুরঞ্জীতা_সুর
#একাদশ_পর্ব
১৭.
চা বাগানের ভেতরে মাঝারি সাইজের বাংলো। সেই বাংলোর বসার ঘরে বসে সবাই গল্প করছে। সবাইকে অনেক আনন্দিত দেখাচ্ছে। হঠাৎ করে চন্দ্রার বুকের ভেতরটা মোচড় দিয়ে উঠলো। সে বুঝতে পারলো না কেন তার এমন লাগছে। এটা কোনো অসুখের লক্ষণও নয় তাও সে বুঝতে পারছে। তার মনে হচ্ছে তার খুব কাছের কেউ হঠাৎ করে চলে যাচ্ছে। তারপর পরই চন্দ্রার বারসাতের কথা মনে পড়লো। সে কোথায় আছে এখন? হয়তো টিউশনি করে মেসে ফিরছে। চন্দ্রা কী একটা কল করবে ওকে? সবার মাঝখান থেকে উঠে যেতে ও কেমন লাগছে। কিন্তু মনও যে কু ডাক ডাকছে সেই কখন থেকে। না ওকে উঠতেই হবে। বারসাতকে কল না করলে চন্দ্রা শান্তি পাবে না। চন্দ্রা ড্রয়িংরুম থেকে উঠে ওর রুমের বারান্দায় এসে বারসাতকে অনেক বার কল করলো সে ধরলো না। এবার চন্দ্রার টেনশন আরোও বেড়ে গেলো। কি হলো ছেলেটার? আমার ফোন ধরছে না কেন?খারাপ কিছু হয়নি তো। আল্লাহ এবার তো আমার টেনশনে কিছু হয়ে যাবে। চন্দ্রা শান্ত হতে চেষ্টা করলো। না কিছু হয়নি। ভালো আছে সে। হয়তো হাতে কাজ তাই ফোন ধরছে না। প্রায়ই তো সে ফোন ধরে না। কিছুক্ষণ পর কল ব্যাক করবে ও নিজেই। নিজেকে এতোটুকু বুঝিয়ে চন্দ্রা নিচে যাবার জন্য পা বাড়ালো।বাড়িতে অনেক মানুষ এসেছে। চন্দ্রার বাবার বন্ধু আহসান সাহেব উনার স্ত্রী রিমা আন্টি,ছেলে রাশেদ আহমেদ আর মেয়ে নীলা। উনারা এতো মজার মানুষ। চন্দ্রার ওদের খুবই পছন্দ হয়েছে। যদিও উনার ছেলেটা একটু গম্ভীর। কথা খুব বেশি একটা বলে না। তবে উনার ভাগের কথা উনার বাবা, মা আর বোন বলে পুষিয়ে নিচ্ছে।
রাত সাড়ে নয়টা নাগাদ বারসাতের মোবাইল থেকে চন্দ্রার কাছে কল আসে। চন্দ্রার শরীর কেঁপে উঠলো।মনে হচ্ছে ফোনটা কানে নিলেই সে খারাপ কিছু শুনবে।এমন মনে হবার কারণ কী চন্দ্রা বুঝতে পারছে না? তারপরও সে জোর করে মনের বিরুদ্ধে গিয়ে বসার ঘরের সবার সামনে থেকে উঠে বারান্দায় গিয়ে ফোন কানে তুললো। সে মনে মনে ঠিক করলো বারসাতকে আজ সে কঠিন কিছু কথা বলবে।
তাই ফোন তুলে সাথে সাথে বলা শুরু করলো, তুমি কী ঠিক করে রেখছো যে আমাকে সবসময় টেনশনে রাখবে।তুমি খুব ভালো করেই জানো তুমি ফোন বা উঠালে আমার কী অবস্থা হয়। তারপরও তুমি প্রায়ই এই কাজটা করো।কেন করো বলতো? শোনো তুমি যদি মনে করে থাকো যে তুমি আমাকে টেনশনে মেরে ফেলবে আর নতুন করে আবার বিয়ে করবে তাহলে তুমি ভুল ভাবছো। আমার সে রকম কিছুই হবে না। আমিও মরবো না আর তোমাকেও ছাড়বো না।
চন্দ্রা দম নিতে থামলো। সে অবাক হলো ওপাশে কারো কন্ঠ না শুনে।
বারসাতকে উদিগ্ন গলায় ডাকলো, বারসাত, কথা বলছো না কেন? তুমি কোথায় আছো? এতো মানুষের কথা শোনা যাচ্ছে কেন? হ্যালো, হ্যালো।
এতোক্ষণে ওপাশ থেকে গলা শোনা গেল,কিন্তু এটা বারসাতের কন্ঠ নয়।
অচেনা মানুষটি বললো,আপু এই ফোনের মালিকে কী আপনি চিনেন?
আপনি কে? আর বারসাতের ফোন আপনার কাছে এলো কীভাবে?
অচেনা মানুষটি বুঝতে পারছে না কীভাবে এতো ভয়ংকর একটা কথা বলবে অপর পাশের মানুষটাকে। ফোন করার ৫ সেকেন্ডের মধ্যে বুঝতে পেরেছি এই মানুষটির খুব কাছের কেউ তার সাথের মানুষটি। কিন্তু তাকে তো বলতেই হবে।
এসব ভাবতে ভাবতে চন্দ্রা বলে উঠলো, কী ব্যাপার কথা বলছেন না কেন?
না আসলে আপনাকে একটা কথা বলার ছিলো। কীভাবে বলবো বুঝতে পারছি না?
কীভাবে বলবেন মানে? মুখ দিয়ে বলবেন। দেখুন আমার মেজাজ খুবই খারাপ তাড়াতাড়ি বারসাতের কাছে দিন। ও করছেটা কী? আমি এদিকে টেনশনে মরছি।
না এবার তাকে বলতেই হবে। সে খুবই ধীর কন্ঠে বললো,
আসলে আপু আপনি যার কথা বলছেন তার সাথে একটা দূর্ঘটনা হয়েছে। তিনি কথা বলার মতো অবস্থায় নেই। তাকে হাসপাতালে নিতে হবে। আপনি যেখানে আছেন তাড়াতাড়ি চলে আসুন। উনার ফোনের ইমারজেন্সি কন্টাক্টে আপনার নম্বরটা আগে পেলাম তাই আপনাকে ফোন করেছি।
কিন্তু ওপাশ থেকে কোনো আওয়াজ শোনা যাচ্ছে না। একদম নিঃশব্দ।
হ্যালো আপু,শুনতে পাচ্ছেন। প্লিজ কথা বলুন। হ্যালো।আপু রেসপন্স করুন। আমাদের হাতে বেশি সময় নেই। ওনাকে তাড়াতাড়ি হাসপাতালে নিতে হবে। না হলে ভালোমন্দ কিছু হয়ে যেতে পারে।
চন্দ্রার পুরো দুনিয়া অন্ধকার হয়ে যাচ্ছে। সে কথা বলার শক্তি হারিয়ে ফেলেছে। ফোনের ওপাশের ছেলেটার কী কোনো দয়ামায়া নেই? সে অবলীলায় এসব কী বলে যাচ্ছে? নিশ্চয় মজা করছে। বারসাত ফোন দিতে সাহস পাচ্ছে না তাই সে ভেবেছে এসব বললে চন্দ্রা যখন কান্না করবে তখন সে কথা বলবে তখন চন্দ্রা সব ভূলে গিয়ে বারসাতকে কিছু বলবে না। চন্দ্রা মনেপ্রাণে চাইছে তার মনে করা কথা গুলোই যাতে সত্যি হয়। চন্দ্রার ঘোর কাটলো ছেলেটার কন্ঠ শোনে।
আপু কথা বলুন প্লিজ। আপনি শুনতে পাচ্ছেন।
চন্দ্রা নিজেকে সামলে বললো,আপনি মজা করছেন তাই না? ওর কিচ্ছু হয়নি। আর কিছু হতেও পারে না। আপনি ওকে ফোনটা দিন প্লিজ।আমি ওকে বকবো না কেন ও আমার ফোন ধরেনি সেজন্য। সত্যি বলছি। প্লিজ এই বিশ্রী মজাটা বন্ধ করুন। আমার দম বন্ধ হয়ে যাচ্ছে।
ছেলেটি অসহায় গলায় বললো,আপু বিশ্বাস করুন এটা যদি মজা হতো আমার চেয়ে খুশি কেউ হতো না।কিন্তু এইটাই ঠিক উনি অনেক বড়ো দূর্ঘটনার শিকার।
চন্দ্রা কাঁপা কাঁপা গলায় বললো, কী হয়েছে ওর?
উনি রাস্তার পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন একটা কনস্ট্রাকশন বিল্ডিংয়ের নিচ দিয়ে। তখন উনার ওপর বিল্ডিং থেকে ইট পড়ে মাথায় যার জন্য মাথার একপাশ থেঁতলে গেছে। অনেক ব্লিডিং হচ্ছে। এই মুহূর্তে হাসপাতালে নিতে হবে। আমি রাস্তার পাশ দিয়ে যাচ্ছিলাম তখন দেখতে পেলাম। উনার পকেটে হাত দিয়ে এই ফোনটা পেলাম। উনার ফোনের প্রথমে আপনার নম্বরটা পেলাম তাই কল করলাম। আপনি কোথায় আছেন তাড়াতাড়ি চলে আসুন। ওনার ফ্যামেলিকেও ফোন দিয়ে জানান। আমি এখন দিতে পারবো না। কারন যত দেরি হবে উনার বাঁচার চান্স ততোই কম।
ও কী সত্যিই বেঁচে আছে? নাকি আমাকে মিথ্যে সান্ত্বনা দিচ্ছেন?
না আপু আমি মিথ্যে বলছি না।
আপনারা ওকে হাসপাতালে নিয়ে যান আমি ওর বাড়ির লোককে জানাচ্ছি। ওরা চলে আসবে। কোন হাসপাতালে নিয়ে যাবেন? ভালোটাতে নিয়ে যান প্লিজ।
আপু ঢাকা মেডিক্যালে নিয়ে যাচ্ছি আপাদত।ওইটাই ভালো হবে।আপনি চলে আসুন তাড়াতাড়ি।
লীলা তাচ্ছিল্যের একটা হাসি দিয়ে বললো,আমি তো ভাই আসতে পারবো না। কারণ ওর থেকে যে আমি অনেক দূরে। প্রায় ৩৬০ কিমি।
ওপাশ থেকে ছেলেটা বুঝতে পারলো মেয়েটাকে সে কোন মুহূর্তে কতোবড় খারাপ সংবাদ দিয়েছে। সে যে চাইলে এখানে এতো তাড়াতাড়ি আসতে পারবে না। কতটা অসহায়ত্বের মধ্যে আছে মেয়েটা। নিজের অজান্তেই তার একটা দীর্ঘনিশ্বাস ফেললো।
বললো,আচ্ছা আপু আপনি উনার বাড়ির লোকজনদের খবর দিন। আর ঢাকায় উনার কোনো বন্ধু থাকলে তাকে বলুন হাসপাতালে চলে আসতে। আমি রাখি তাহলে?
আচ্ছা শুনুন।
জি বলুন
ওর ফোনটা আপনার কাছে রাখুন। যেকোনো সময় কাজে লাগতে পারে।
জি আপু আমি আছি যতক্ষণ না পর্যন্ত কেউ আসে। আর আমি আমার নম্বরটাও দিয়ে দিচ্ছি। উনার ফোন যেকোনো সময় বন্ধ হয়ে যেতে পারে। আর আমাকে ক্ষমা করবেন আমি এতো বাজে একটা খবর আপনাকে দিলাম। আই এম সো সরি।
ভাইয়া ও বেঁচে আছে তো? নাকি আপনি মিথ্যে বলছেন? আমি ওকে ছাড়া বাঁচবো না। না বেঁচে থাকলে বলে দিন আমিও ওর কাছে চলে যাই। আমি সহ্য করতে পারবো না এতো কষ্ট।
ছিঃ আপু এভাবে বলতে হয় না। উনি বেঁচে আছেন। আমার এখানে মিথ্যে বলে কী লাভ বলুন? তার চেয়ে বরং আপনি উনার জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া করুন। যাতে উনি সুস্থ হয়ে উঠেন। আর যত তাড়াতাড়ি সম্ভব এখানে চলে আসুন। এসে দেখবেন উনি সুস্থ। রাখি তাহলে। আর এসব অলক্ষুণে কথা বলবেন না। আল্লাহ হাফেজ।
বলেই ছেলেটি ফোন কেটে দিলো।
লীলা বিছানা আধশোয়া হয়ে আছে।তার শরীরটা বিশেষ ভাল যাচ্ছে না। বারসাত মারা গেছে আজ সাতদিন। সাতটা দিন চন্দ্রার কাছে সাত জন্মের মতো দীর্ঘ মনে হয়েছে। অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে সে মারা যায়। চন্দ্রা ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছে। বেঁচে থাকাটা তার কাছে বিষের মতো লাগছে। সে আত্মহত্যা করতে পারেনি কারণ আত্মহত্যা যে মহাপাপ। আত্মহত্যা করলে পরকালে সে যে বারসাতকে পাবে না। মৃত্যুর আগে অবস্থায় বারসাতকে না পেলেও সে চায় মৃত্যুর পর যাতে সে যাতে বারসাতকে পায়। সেদিন চন্দ্রা বারান্দায় অজ্ঞান হয়ে গিয়েছিল তার ভাবী রাতে খেতে আসার সময় তাকে ঘরে এনে সবাইকে ডাক দেয়। জ্ঞান ফেরার পর চন্দ্রা তার ভাবীকে ধরে কেঁদে উঠে। সবাই অবাক হলো যখন জানতে পারে সে রিলেশনশিপে ছিলো এবং সেই ছেলেটা এখন মৃত্যুর সাথে লড়ছে। চন্দ্রা কাঁদতে কাঁদতে তার বাবার কাছে আবদার করে তাকে বারসাতের কাছে নিয়ে যেতে। চন্দ্রার বাবা মেয়ের অবস্থা দেখে আর না করতে পারে নি। তখনই তারা সিলেট থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা দেয়। বারসাতকে তখন শহরের সবচেয়ে বড় হাসপাতালে নিয়ে আসা হয় অবস্থার অবনতির জন্য।মাথায় আঘাত পাওয়ার ফলে সে কোমায় চলে যায়। আইসিইউ তে রাখা হয়। পুরো একটা দিন মৃত্যুর সাথে লড়ে বারসাত চলে যায় আর রেখে যায় অসহায় একটি মেয়েকে যে তাকে সর্বোচ্চ দিয়ে ভালোবাসাতো। সে কী একটা বারও ভেবেছিল মেয়েটির কী অবস্থায় থাকবে তাকে ছাড়া?
চন্দ্রা পুরো কথা শেষ করলো। তার দৃষ্টি আকাশের দিকে। আজ অমাবস্যার রাত। আকাশে চাঁদ নেই। ঘুটঘুটে অন্ধকারে সে আকাশের দিকে তাকিয়ে কী খুঁজছে রাশেদের জানা নেই। আজ সে রাশেদকে সবকিছু বলে দিয়েছে বিয়ে থেকে শুরু করে সবকিছু। রাশেদ জানতো বিয়ে হয়েছিল কিন্তু কীভাবে, কোন পরিস্থিতিতে হয়েছিল সেটা হয়তো জানতো না।
বেশ কিছুক্ষণ পর রাশেদ পাশ থেকে বললো, কষ্ট হচ্ছে চন্দ্রা? কান্না করতে ইচ্ছে করছে?
চন্দ্রা মৃদু হেসে বললো, না। এখন আর কান্না আসে না। শুধু মনে হলে বুকের ভেতর কী যেন একটা দলা পাকিয়ে উঠে আসে? নামতেই চায় না।
রাশেদের নিজের অজান্তে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললো। তারপর চন্দ্রাকে বললো, অনেক রাত হয়েছে নিচে চলো।
রাশেদ।
বলো?
সেদিনের সবকিছু আপনার হয়তো মনে আছে। তবে আপনি তা নিজের মতো করে দেখেছেন। কিন্তু আজকে আমি আমার দিকটা আপনার কাছে তুলে ধরলাম। কারন মনে হয়েছে এটা বলা দরকার। বারসাত আমার জীবনের কতটুকু অংশ জুড়ে ছিল সেটা হয়তোবা আমি আপনাকে বোঝাতে পেরেছি। তাই একবারে প্রথম থেকে আমার জন্য সবকিছু মেনে নেওয়া সহজ ছিল না। আপনি কী আমার কথা বুঝতে পেরেছেন?
হ্যাঁ বুঝেছি।
রাশেদ চন্দ্রাকে কিছুক্ষণ পর বললো, চন্দ্রা?
হুম।
বারসাতের সাথে তোমার পরিচয় কীভাবে?
একজন কমন ফ্রেন্ডের মাধ্যমে দেখা হয়েছিল। তাছাড়া এমন কোন ইন্টারেস্টিং গল্প ছিল না আমাদের প্রথম দেখার। খুব সাধারন গল্প। পরিচয়, টুকটাক কথা তারপর সেই টুকটাক কথা থেকে ঘন্টার পর ঘন্টা কথা।
ও আচ্ছা।
রাশেদের আজও মনে আছে চন্দ্রাদের বাসায় ঘটা সব ঘটনা। রাশেদের পুরো পরিবার বেড়াতে গিয়েছিল চন্দ্রার বাসায় ঈদের ছুটিতে। রাশেদ বরাবরই ঘরকুনো স্বভাবের। খুব একটা ঘুরতে টুরতে যেত না। তাছাড়া মেডিকেলের স্টুডেন্ট ছিল। পড়াশোনার চাপ বরাবরই বেশি। যদিও সে চন্দ্রাদের বাড়িতে ছোট বেলায় গেছিলো কিন্তু বড় হওয়ায় পর যাওয়া হয়নি। সেবারই বড় হওয়ার পর প্রথম এসেছিল। চাকরি পাওয়ার পর কয়েকদিন ঈদের ছুটি ছিল। যখন শুনলো বাবা, মা, নীলা চা বাগানে যাবে ঘুরতে আর বাগানের ভেতর বাংলোতে থাকবে যে কয়দিন থাকবে তারও আগ্রহ হয় যাওয়ার। তাই একবার বলাতেই সে রাজি হয়ে যায়। চা বাগানের ভেতর মাঝারি সাইজের একতলা একটা বাংলো। চারদিকে যেন কেউ সবুজ রংয়ের চাদর বিছিয়ে দিয়েছে। রাশেদের জন্য বরাদ্দকৃত ঘরটির জানালা দিয়ে তাকালে দেখা যায় আকাশের বুকে সগৌরবে দাঁড়িয়ে আছে সবুজে ঘেরা চা বাগান। নতুন জায়গাতে সে কখনোই ফ্রি হতে পারে না কারো সাথে। তাই খুব একটা কথা না বলায় সবাই ধরে নিল রাশেদ খুবই গম্ভীর। খুব একটা বেশি কথা বলে না। ঈদের পরের দিন রাতে খাওয়ার সময় চন্দ্রার ভাবীর ছোট একটা চিৎকার শোনা গেল চন্দ্রার ঘর থেকে। সবাই সেখানে ছুটে যাওয়ার পর সবই শুনতে পেল। রাশেদও শুনতে পেল। দরজার পাশ থেকে ঘরের ভেতর দেখলো চন্দ্রা কাঁদছে। বাচ্চাদের মতে বাবার কাছে আবদার করে বললো তাকে ঢাকায় নিয়ে আসতে। সেদিনই রাতে রওনা দেয়া হয়। বারসাতকে আনা হয়েছিল রাশেদের হাসপাতালে। ভোর রাতে চন্দ্রা যখন বারসাতের হাত ধরে বসেছিল সে কী জানতো কেবিনের ওপার থেকে রাশেদ নামের কেউ একজন গভীর আগ্রহে বারসাতের প্রতি তার ভালোবাসার গভীরতা মাপছিলো। ডাক্তারের সাথে চন্দ্রার কথোপকথন মনযোগ দিয়ে শুনছিলো আর নিজের জীবনের কারো সাথে তুলনা করছিল। না জানে নি। কারন চন্দ্রা তার নিজের জগৎ নিয়ে ব্যস্ত ছিল। অথবা তারা দুইজনই কী জানতো জীবন নামক নাটকে তারা একে অপরের সাথে সবচেয়ে পবিত্র সম্পর্কে বাধা পড়বে?
চলবে…….