#আমি_সেই_চারুলতা
#Shuvra_Ahmed_Priya
#পর্বঃ১৬(খ)
_______________________
অবচেতন অবস্থায় হাসপাতালের বেডে পড়ে আছে শাওন। তার পাশেই বসে রয়েছেন ছোট জমিদার সাহেব। খুবই সহজ সরল নিরীহ প্রকৃতির লোক তিনি। কোনো ঝামেলার সামনে পিছনে নেই। সহজেই লোকের কথার দ্বারা প্রভাবিত হয়ে যান তিনি। তার খুবই আদরের শাওন। আজ সাতদিন যাবত ঘুম পাড়িয়ে রেখেছে ডাক্তার তাকে। উঠলেই ছেলেটা কেমন পাগলামি শুরু করে দেয়। ইশ! কি মায়াবী মুখ তার। এমন কেনো হলো কে জানে? আজও ছোট জমিদার সাহেবের শাওনের জন্মের দিনটির কথা মনে আছে। জমিদার গিন্নি যখন শিহাবকে জন্ম দেন তার বয়স তখন সবেমাত্র পনেরো। কম বয়সে বাচ্চা জন্ম দেওয়ায় মরতে মরতে বেঁচে যান তিনি কিন্তু তার পরবর্তীতে সন্তান জন্মদানে সমস্যা দেখা যায়। অনেকবার চেষ্টা করেও বাচ্চা হচ্ছিলো না। বাসার সবাই খুব করে শিহাবের পর আরেকটা সন্তান চাইছিলো। এমন সময়েই জানা যায় শাওনের গর্ভে আসার সংবাদটি। সবাই একেবারে খুশিতে আত্মহারা হয়ে গিয়েছিলো। নয় বছর পর জমিদারের দ্বিতীয় সন্তান হিসেবে শাওন জন্ম নিলো। সকলের আদর ভালোবাসায় বেড়ে উঠতে লাগলো সে। জমিদার গিন্নি আর কখনো সন্তান জন্ম দিতে পারেননি কিন্তু বাসার সকলে শাওন আর শিহাবকে নিয়েই সন্তুষ্ট ছিলো৷ বংশের দুই প্রদীপ তো আছেই। আর কি চাই? আর আজ সেই আদরের শাওনের কি অবস্থা। অবস্থা শোচনীয় শিহাবেরও। কোনো কাজেই আজকাল মনোযোগ দিতে পারেনা সে। ঘন্টার পর ঘন্টা এসে ভাইয়ের পাশে বসে থাকে। শাওন তো শিহাবেরও খুব আদরের। হাসপাতালের কেবিনে প্রবেশ করলো শিহাব।
– কাকা তুমি এখানে?
– শাওনরে দেখতে আইছিলাম।
– কেমন আছে ও? জ্ঞান ফিরেছে?
– ফিরছিলো। কয়েকঘন্টা পর আবার ঘুম পাড়ায়া দিছে।
– এভাবে বারবার ঘুম পাড়িয়ে দিলে তো সমস্যা।
– কি জানি? ওত কিছু আমি জানি না। ডাক্তারেরা যে কি করে কে জানে।
– চিন্তা করো না। এইটা খুবই ভালো হাসপাতাল। তুমি দেখো শাওন নিশ্চয়ই খুব তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে উঠবে।
– তোর হাতে কি হইছে?
– আরে আর বলো না। পরশু মা আর বাবা এসেছিলো। ভাবলাম নিজে কিছু রান্না করে খাওয়াই। সবজি কাটতে গিয়ে হাতই কেটে ফেললাম।
– কি যে করস না তুই। এমনে একা একা একটা ফ্ল্যাটে পইড়া থাকস। কাউরে সাথে নিলেও তো পারস।
– কাকে নিবো?
– এক কাম কর, মিলিরেই নিয়া যা। ভাই বইন একসাথে থাকবি। তোরও কিছু সাহায্য হইলো আর মিলিও কাজকাম কিছু শিখলো। বয়স তো কম হইলো না বিয়া দিতে হইবো এহন।
শিহাব ছোট একটা শ্বাস ফেললো। ওর ছোট চাচার বুদ্ধি কম সেটা মোটামুটি সবাই জানে কিন্তু তাই বলে এভাবে ওর সাথে থাকতে বলবে এটা শিহাব আশা করেনি। মিলি বড় হয়েছে এখন। যতই আলাদা রুম হোক, এভাবে এক ফ্ল্যাটে তো আর থাকা যায়না। তিনি হয়তো এত কিছু ভাবেননি। এখনো ছোটবেলার মতোই সব ভেবে যাচ্ছে। ছোট বেলায় ওরা সব ভাই বোনেরা কত একসাথে ঘুমিয়েছে তার ইয়াত্তা নেই।
★★★
চারু চোখ খুলতেই দেখতে পেলো হামিদ ওর কাছেই বসে আছে। চারুর যেনো ব্যাপারটা বিশ্বাস হতে চাইছেনা। হামিদ আসলেই এসেছে নাকি এইটা স্বপ্ন? যদি স্বপ্ন হয় তো এই স্বপ্ন কখনো না ভাঙুক। না স্বপ্ন না এইতো হামিদ ওকে ডেকে চলেছে তারমানে হামিদ সত্যিই এসেছে। এতদিন পর ভাইকে দেখে চোখ থেকে একফোঁটা অশ্রু গড়িয়ে পড়লো চারুর। কোনোমতে একবার উচ্চারণ করলো,
– আমাকে এখান থেকে নিয়ে যাও। ওরা আমাকে মেরে ফেলবে। আমাকে নিয়ে যাও এখান থেকে।
– কি হইছে চারু? কে মাইরা ফেলবো? আমারে বল কি হইছে?
– আমাকে নিয়ে যাও এখান থেকে।
– হ নিয়া যামু। তোরে নিতেই তো আসছি। কিন্তু কে তোরে মারতে চায়?
– পরে বলবো সব আমাকে নিয়ে যাও।
হামিদের কেমন নিজেকে দিশেহারা লাগছে। এখানে কি হচ্ছে কিছুই তার বোধগম্য হলোনা তবুও সে চারুর কথা মেনে এখান থেকে সরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলো। চারু হাটাচলার অবস্থায় নেই। সবচেয়ে ভালো হবে ওকে কোলে তুলে নেওয়া। কোলে তুলে নিতেই আরো একবার অবাক হলো সে। সাস্থ্য নিয়ে যেই চারুকে একসময় বারংবার খেপাতো সে এখন সেই চারুর একেবারে ওজন নেই বললেই চলে। ও চলে যাওয়ার পর কি হয়েছিলো চারুর সাথে? শেফালী কিছু করেছে কি? হামিদ মনেমনে পণ করলো শেফালী যদি বিন্দুমাত্র চারুর ক্ষতি হয় এমন কিছুর সাথে জড়িত থাকে তাহলে একেবারে খুন করে ফেলবে সে তাকে। এইটুকু একটা মেয়েকে যে কষ্ট দেবে তার বেঁচে থাকার কোনো অধিকার নেই। সে যেই হোক! শেফালী, নাজিমুদ্দিন কিংবা চারুর তথাকথিত সেই বর।
হামিদ চারুকে নিয়ে লোকালয়ের মধ্যে একটা জায়গা খুজছে। গ্রাম থেকে বের হওয়ার শর্টকাট পথ ছিলো এই জঙ্গলের ভিতরের রাস্তা। সেখান দিয়েই শহরে যেতে চাইছিলো হামিদ কিন্তু রাস্তায় সে এভাবে চারুকে পেয়ে যাবে এইটা সে কল্পনাই করেনি। নিজের মনেই ভেবে নিয়েছিলো সে বোধহয় আর চারুকে খুজে পাবেনা কিন্তু হাল ছেড়ে দেয়নি একেবারে। বেশ কিছুটা রাস্তা যাওয়ার পরেই একটা ছোট কুড়েঘর দেখলো। হামিদ জানেনা সেখানে যাওয়া ঠিক হবে কি না কিন্তু এখন উপায় নেই। হামিদ গিয়ে সেই দরজায় কড়া নাড়লো। অনেকক্ষণ কড়া নাড়ার পর দরজা খুলে বেড়িয়ে এলেন এক বৃদ্ধা মহিলা। তিনি চারুকে দেখে বিষ্ময় নিয়ে হামিদের দিকে তাকালেন।
– আমি আর আমার বইন খুব বিপদের মধ্যে আছি। একটু দয়া কইরা আমাদের সাহায্য করেন।
বৃদ্ধা ভ্রু কুচকে গভীর দৃষ্টিতে একবার চারু আর হামিদের দিকে তাকালেন। তিনি বোঝার চেষ্টা করছেন হামিদ সত্য বলছে কি না। চারুর মলিন মুখটা দেখে তার মনে হলো আসলেই বোধহয় সে বিপদে আছে তবে হামিদের মুখে রয়েছে দ্বিধা। থাকারই কথা, সে তো জানেই না কি হয়েছে। শুধুমাত্র চারুর কথা মেনেই তাকে লোকালয়ে নিয়ে এসেছে সে।
– ওর কি হইছে?
হামিদ বুঝতে পারছেনা এখন কি উত্তর দেওয়া উচিত। হামিদ নিজেই জানেনা চারুর কি হয়েছে এই বৃদ্ধার প্রশ্নের কি উত্তর দেবে সে?
– আহো তোমরা আগে ভিতরে আহো।
বৃদ্ধার অনুমতি পেয়ে হামিদ চটজলদি ভিতরে চলে গেলো। বাসায় বৃদ্ধা ছাড়া আর কাউকে দেখা গেলো না। অর্থাৎ, সে এখানে একাই থাকে। আসবাব বলতে শুধু একটা চৌকি আর জামাকাপড় রাখার একটা আলনা। ঘরে বিশেষ কিছু নেই বলেই হয়তো তিনি এত সহজে হামিদ আর চারুকে ঘরে ঢোকার অনুমতি দিলেন।
– ওরে এই চৌকিতে শুয়িয়ে দাও।
হামিদ বৃদ্ধার কথা মেনে নিলো। চারুর মুখমন্ডলে আঘাতের চিহ্ন স্পষ্ট। হামিদ নিজের চোখ বন্ধ করে নিলো। এ অবস্থায় চারুকে দেখা সহ্য হচ্ছেনা তার। মনোরমা ওকে বলেছিলো চারুর খেয়াল রাখতে কিন্তু ও পারেনি। একজন ভাই হিসেবে চরমভাবে ব্যর্থ প্রমানিত হলো সে।
– ও তোমার বইন?
হামিদ হ্যাঁ বোধক মাথা নাড়লো।
– তোমাগো দুইজনার চেহারায় তো অনেক মিল আছে দেহা যায়।
হামিদ কিছু বললো না। ছোট বেলা থেকেই এই কথা অনেকবার শুনেছে সে। হামিদ আর চারু দুজনের চেহারাই নাজিমুদ্দিনের মতো। ওদের দুজনকে যেই দেখতো সেই বলে দিতে পারতো ওরা নাজিমুদ্দিনের ছেলে মেয়ে।
– কি হইছে ওর? এই অবস্থা ক্যামনে হইলো?
– আমার জন্য সব হইছে।
– তোমার জন্য মানে?
– আমি যদি ওরে রাইখা শহরে চইলা না যাইতাম তাইলে আজ এমন হইতো না।
বৃদ্ধা আর কথা বাড়ালেন না। হামিদ বুঝতে পারছেনা ঠিক কি হয়েছে। রাত প্রায় তিনটা বেজে গেছে ইতিমধ্যে। সম্পূর্ণ দেশ এখন ঘুমন্ত অবস্থায় আছে। একটা পিনপতন আওয়াজ অবধি শোনা যাচ্ছে। এমন সময় হামিদ শুনতে পেলো একটা জিপ গাড়ির আওয়াজ। হামিদের মনে পড়ে গেলো চারু বলছিলো কেউ একজন ওকে মেরে ফেলবে। তবে কি এত রাতে এই গ্রামে কোনো জিপ গাড়ি চারুর জন্যই এখানে এসেছিলো? কিন্তু চারুকে মেরে কার কি লাভ? হামিদের মাথা সম্পূর্ণ শূন্য হয়ে যাচ্ছে তবে জিপগাড়িতে কে সেটা দেখা প্রয়োজন। হামিদ উঠে যেতে চাইলো কিন্তু তাকে আটকে নিলো বৃদ্ধা,
– কই যাও?
– বাইরে গাড়ির আওয়াজ পাওয়া যাইতাছে আমার মনে হয় ওইহানে কিছু আছে।
– যাইয়ো না। বড় বড় নেতারা মাঝে মাঝে খুন কইরা নদীতে লাশ ভাসায়া রাইখা যায়। কেউ যদি দেহে তো তারেও মাইরা ফেলে।
– আপনে কিভাবে জানলেন?
– আমি একদিন দেখছিলাম। ভাগ্য ভালা ওরা আমারে দেখে নাই।
হামিদ আর কিছু বললোনা। এখন এসব ঝামেলাতে না জড়ানোই ভালো। ভালোয় ভালোয় চারুকে এইখান থেকে উদ্ধার করে নিয়ে যেতে হবে। হামিদ সারারাত জেগেই রইলো। বৃদ্ধাকে কয়েকবার ঘুমাতে বললেও সে ঘুমালেন না। হামিদের সাথেই জেগে রইলেন। কথায় কথায় হামিদ জানতে পারলো বৃদ্ধার দুই মেয়ে এক ছেলে। সবাই বিয়ে করে নিয়েছে। দুই মেয়ে থাকে শশুড় বাড়ি আর ছেলে শহর একটা মেয়েকে বিয়ে করে এখন শহরেই থাকে। মা কে প্রতিমাসে বাজার করে দেওয়ার জন্য একজন লোক রেখে দিয়েছে। আবার মাঝে মাঝে কিছু টাকাও পাঠায়। বৃদ্ধা কিছুই বলেন না। ছেলে রেগে গিয়ে টাকা দেওয়া বন্ধ করলে তাকে না খেয়ে মরতে হবে। এখানে অসুস্থ হলে সেবা করারও কেউ নেই। ছেলের বউ আজ অবধি দেখেননি তিনি। ছেলে নিজেই পছন্দ করেছে তবে ছেলের বউ চায়না বৃদ্ধা তাদের সাথে থাকুক। হামিদ একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললো। আজ মনোরমা ওদের কাছে নেই। হামিদ যে মনেমনে কতবার মনোরমাকে খোঁজে সে হিসেব নেই আর এই বৃদ্ধার ছেলে কি না তার জান্নাতকে এভাবে একা ফেলে দিয়ে গেছে। আসলে যাদের নেই তারাই বোঝে আর যাদের আছে তারা কখনোই মূল্য দেয়না। মনোরমা যদি হামিদের কাছে থাকতো তাহলে সে মাথায় করে রাখতো ওর মা কে। হামিদের চোখ হঠাৎই গেলো চারুর দিকে। মনোরমার মতো চেহারা নয় তার কিন্তু তাও চারুকে দেখলে মায়ের মতোই অনুভূতি আসে। মনোরমার শেষ স্মৃতি চারু। মনোরমাকে তো আগলে রাখতে পারেনি কিন্তু চারুকে সে তার জীবন দিয়ে হলেও বাঁচাবে। চারুর মাঝেই মনে হচ্ছে যেনো মনোরমাকে খুজে পেয়েছে হামিদ।
★
চারু ঘুমিয়ে ছিলো নাকি অজ্ঞান ছিলো সেটা বলা গেলো না তবে চারু চোখ খুললো ভোর পাঁচটায়। সূর্য এখনো উদয় হয়নি। হালকা একটু আলো দেখা যাচ্ছে চারপাশে। চারু ঘুম থেকে উঠে হামিদের দিকে একবার তাকালো।
– এহন কেমন লাগতাছে?
– ভালো না। আমাকে কোথায় এনেছো? তোমার বাড়িতে? ওরা এখনই আমাকে নিয়ে যাবে এখান থেকে।
– কে নিয়া যাইবো?
– ওই মুখোশ পড়া বস টা।
– কোন বস?
– আমি জানি না। ওরা আমাকে মেরে ফেলবে। আমাকে তোমার বাড়ি থেকে সরাও।
– শান্ত হ চারু। আমরা এহন অন্য বাসায় আছি। আমার বাড়ি যাই নাই।
চারু চুপ করে গেলো। সে এখন অন্য বাড়িতে আছে সেটাই অনেক। হামিদ চারুকে আর কোনো প্রশ্ন করলো না। চারুর অবস্থা এখন খুব একটা ভালো না। ধীরে ধীরে সব জানা যাবে। বৃদ্ধা চারুকে বললেন গোসল করে আসতে। তার অবস্থা খুব একটা ভালো না। শরীরের বিভিন্ন জায়গায় মাটি লেগে আছে। সে চারুকে তার মেয়ের একটা শাড়ি দিলেন। জামা দিলে সমস্যা হতো মাপ নিয়ে কিন্তু শাড়ির ক্ষেত্রে এমন কোনো সমস্যা হয়না। চারু কিছু না বলে চুপচাপ কলঘর থেকে গোসল করে নিলো। গোসল করার সময় পানি ঢালায় শরীরের প্রতিটা আঘাত যেনো তাজা হয়ে উঠছিলো। চারু বহু কষ্টে গোসল সম্পন্ন করে বেড়িয়ে এলো। নিজেকে বেশ হালকা মনে হচ্ছে। মানুষের জীবনে পয়সার মতো দুটো অধ্যায় থাকে। একটা ভালো অন্যটা খারাপ। ঠিক দিন রাতের মতো। চারুরও বোধহয় কষ্টের সময়টা কেটে গিয়ে সুখের সময় এলো। কিন্তু তার এখনো অনেককিছু জানার আছে, কে জানে সেসব জানার পর আদেও সে সুখী হবে কি না। চারু উঠোনে গিয়ে বসলো। তার পাশে এসে বসলো হামিদও। চারু কিছুই বললো না। তার এখনো বিশ্বাস হতে চায়না সত্যিই হামিদ তার সাথে আছে।
– সূর্য উদয় দেখবি চারু?
চারু একবার হামিদের দিকে তাকিয়ে আরেকবার আকাশের দিকে তাকালো। ভোরের সূর্য উঠছে। সবাই তো কেবল সমুদ্র আর পাহাড় থেকেই সূর্যদয় দেখে কিন্তু এই গ্রামে সূর্যদয় দেখার সৌভাগ্য কয়জনের? মনে হচ্ছে যেনো তালগাছের পেছন থেকে সূর্য উকি দিচ্ছে। এমন সময়েই শোনা গেলো হামিদের কণ্ঠ,
– আমি চইলা যাওয়ার পর কি হইছে সেটা আমি জানতে চাইলাম না। আমি জানি তুইই সময় কইরা বলবি কিন্তু এখন এই সূর্য ওঠা দেখ। যেমন রাতের অন্ধকার ছাপিয়ে সূর্য উঠলো তেমনি এই সূর্যটার মতো তোর জীবনের অন্ধকারও দূর হইলো। অতীতে কি হইছিলো সেটা ভুইলা যা, নতুন সূর্যের সাথে নিজের জীবনটাও সুন্দর কইরা নতুনভাবে সাজায়া নে।
– তুমি সেদিন আসোনি কেনো? আমি অনেক অপেক্ষা করেছিলাম কিন্তু তুমি আর কখনো আসোনি।
চারুর গলা ধরে এলো। হামিদ বুঝতে পারছেনা তার ঠিক কি বলা উচিত।
– এখন আইসা পড়ছিনা? এহন সব ঠিক হইয়া যাইবো দেখিস। আমি যহন শহরে যাই তখন দেখলাম গ্রামে সবকিছুর দাম যেমন সস্তা শহরে তেমন বেশি। এইহানে একজনের টেনেটুনে চলতেই পাঁচ হাজার টাকার বেশি লাগে আর আমার চাকরি মাত্র দুই হাজারের। ভাবলাম প্রথম প্রথম একটু কষ্ট হইলেও বেশি কাজ কইরা ভালো একটা পর্যায়ে যামু। একমাসের মতো দিন রাইত পরিশ্রম করলাম। ম্যানেজারের বিশ্বাস অর্জন করলাম। আমার চেয়ে বড় পদের একটা শ্রমিক কাম ছাইড়া দেওয়ার পর ম্যানেজার আমারে ওই পদে লাগায়া দিলো। বেতন সাত হাজার টাকা। একমাসেই সাত হাজার বেতন হইবো সেটা আমি ভাবিই নাই। যহন তোরে আনতে যামু তহন আমার গাড়ির সাথে একটা ট্রাকের ধাক্কা লাগলো তারপর আর কিছু মনে নাই। চোখ খুইলা দেখি আমি হাসপাতালে। পরে শুনলাম এক্সিডেন্ট করছি পাঁচ মাস শেষ হইয়া গেছে। আর একদিনও অপেক্ষা করিনাই। ওইদিনই গেছিলাম গ্রামে কিন্তু তোরে পাই নাই। হাজার বার চাওয়ার পরেও তোর ঠিকানা আমারে কেউ দেয় নাই। অনেক খুজছি বিশ্বাস কর।
চারু আর কিছু বললোনা। হামিদেরও বা কি দোষ? যা হয়েছে সব ভাগ্যে ছিলো। ভাগ্যটা এত খারাপ না হলেও পারতো।
– তুমি আগের চেয়ে মোটা হয়ে গেছো।
– আর কইস না শহরের সব কিছু ভেজাল। প্রথম প্রথম কিছু খাইতে পারতাম না। কতবার যে পেট খারাপ হইছে আমার নিজেরই হিসাব নাই। তারপর যহন খাইতে শিখলাম তখন থেইকা পেট ফুইলা ঢোল হইয়া গেছে।
হামিদ নিজের পেটে হাত বুলাতে বুলাতে বলল কথাটা। হামিদের কথা বলার ভঙ্গিতে হেসে ফেললো চারু।
– হাসিস না। বাইরের খাওন খাইয়া এই অবস্থা। নিজে রানলে অখাদ্য হয় আর বাইরে খাইলে পেট ফুইলা ঢোল হয়।
– তুমি নাকি বিয়ে করেছো? ভাবি রান্না জানেনা?
– হুম জানে কিন্তু মজা হয় না। এক মিনিট, তুই কেমনে জানলি আমি বিয়া করছি?
চারু উত্তর দেয়না। উত্তর দিতে ইচ্ছে করেনা। চারু উত্তর দিলোনা বিধায় হামিদও জোর করে কিছু জিজ্ঞেস করলোনা।
– ভাবির নাম কি?
– ফাতেমা।
– পুরো নাম কি?
– ফাতেমা জাহান হিয়া।
– এত তাড়াতাড়ি বিয়ে করে নিলে যে?
– ম্যানেজারের বইন ফাতেমা। আমি যহন কোমায় ছিলাম তখন আমার চিকিৎসার সব খরচ ম্যানেজারই দিছে। সে যহন কইলো তার বইনরে বিয়া করতে তহন আর মানা করতে পারিনাই। তাছাড়া ফাতেমারে বিয়া করার পর চাকরিও স্থায়ী হইয়া গেছে একপ্রকার। দুই একদিন কামে না যাইলে জবাবদিহি করতে হয় না।
চারু আর কথা বাড়ালো না। হামিদকে জানালো তার উপর কেউ একজন নজর রাখছে। ওখানে গেলে সবাই জানতে পেরে যাবে চারু কোথায়। হামিদকে কিছুটা চিন্তিত দেখালো। বৃদ্ধার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে সে চারুকে একটা বোরকা কিনে দিলো। আর কেউ জিজ্ঞেস করলে বলবে ও ফাতেমার দাদি। আপাতত নতুন ঘর না পাওয়া অবধি এভাবেই থাকার সিদ্ধান্ত নিলো হামিদ। নতুন ঘর নিতে খুব বেশ সমস্যা হবে বলে মনে হয়না। ফাতেমার ভাই ঠিক করে দিতে পারে। তবে সমস্যা হলো ফাতেমা। বেশ বোকা একটা মেয়ে। সাধারণত বোকারা হয় বেশ সহজ সরল নিরীহ কিন্তু ফাতেমা একেবারে উল্টো অর্থাৎ সে বোকা হলেও কিছু হিংসুটে ধরনের মেয়ে। কারোর ভালো সহ্য হয়না তার। হামিদ চারুকে বিয়ে বাসায় যেতেই একজন শ্যামলা মতো মেয়ে দরজা খুলে দিলো। চারুকে দেখেই ভ্রু কুচকে তাকালো সে।
– উনি কে?
– চারু।
– আপনে তো কইছিলেন আপনার ছোট বইন তাইলে ওনারে এমন বৃদ্ধ লাগে ক্যান?
চারু মুখের উপর থেকে পর্দাটা সরিয়ে দিলো। ফাতেমা একবার তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে চারুর দিকে তাকিয়ে ঘরে চলে গেলেন। কোনো আন্তরিকতা নেই। এমন একটা ভাব যেনো চারুর এখানে আসা সাধারণ একটা ব্যাপার।
বিঃদ্রঃ সবাই বলেন আমি দেরি করে গল্প দেই। এইটা আমার অপরাধ। মানছি এইটা অপরাধ কিন্তু থ্রিলার গল্প লেখা আর সাধারণ গল্প লেখার মাঝে বেশ অনেক পার্থক্য। থ্রিলার লিখতে হলে মাথায় অনেক চাপ পড়ে। প্রতিদিন লেখাও সম্ভব হয় না। আমি না হয় অপরাধী মানলাম। কিন্তু ইচ্ছাকৃত অপরাধ তো করিনা কিন্তু আপনারা যে গল্প পড়ে রেসপন্স করেননা সেটার কি হবে? গল্প পড়ে চুপিচুপি চলে যান। এইটাও একটা বড় অপরাধ। আপনাদের রেসপন্সই তো আমার লেখার প্রাণ। সবার কাছে রেসপন্স আশা করছি। পাঁচ মিনিটও লাগেনা কিন্তু গল্প লিখতে আমার পাঁচ ঘন্টা লেগে যায়। রিচেক হয়নি। হ্যাপি রিডিং।
#স্নেহা_ইসলাম_প্রিয়া
(কার্টেসি ছাড়া কপি নিষেধ)
To Be Continued….