#আমি_সেই_চারুলতা
#Shuvra_Ahmed_প্রিয়া
(দ্বিতীয় খন্ড) -২৫
________________________
সূর্য প্রায় পশ্চিমে ঢলে পড়েছে তবে এখনো অন্ধকার হয়ে যায়নি। চারিদিকে আলো আধারি ভাব বিরাজমান। প্রকৃতি এক অদ্ভুতুড়ে মায়াময় পরিবেশ সৃষ্টি করেছে। তার এই মায়াময় পরিবেশে ডুপ্লেক্স বাড়ির ছাদে দাঁড়িয়ে আছেন মায়াদেবী। অসম্ভব সুন্দর এই পরিবেশ সম্ভবত মায়াদেবীর জন্যই। আকাশে সন্ধ্যাতারাটি জ্বলজ্বল করছে। যেকেউ দেখলেই তাকে অন্যান্য সকল সাধারণ তারা থেকে আলাদা করতে পারবে। এর ভিন্নতার কারণ হলো এর আকার এবং উজ্জ্বলতা। এই মহাজাগতিক বস্তুটিই কি প্রাণকে নতুন ভাবে জীবন দেয়? বাঁচতে শেখায়? মায়াদেবী অদ্ভুত চোখে চেয়ে আছেন সেই সন্ধ্যাতারাটির দিকে। কি অপরূপ দেখতে এটিকে। এই বস্তুটি পৃথিবীর বাইরে অবস্থিত আর সে পৃথিবীর বাইরের একটি বস্তুকে খালি চোখে দেখছে। ব্যাপারটা ভাবতেই সম্পূর্ণ শরীরে একপ্রকার শিহরণ বয়ে যাচ্ছে। আচ্ছা কখনো কি কেউ ভেবেছে এইসব চাঁদ, সূর্য, তারা এইসব পৃথিবীর বাইরের মহাজাগতিক বস্তু। এইগুলো আমরা খালি চোখেই পৃথিবীতে দেখি। ভাবলে কি তার অনুভূতি টাও মায়াদেবীর মতোই হবে?
★
চারুর এখনো বিশ্বাস হতে চায় না সাজিদ তাকে জেল থেকে পালাতে সাহায্য করছে। শুধু তাই নয়, চারুকে নিজের বাড়িতে সে আশ্রয় অবধি দিয়েছে। এইটাই সম্ভবত এখন সবচেয়ে সুরক্ষিত স্থান চারুর জন্য। ওর মনে হয়েছিলো, সাজিদ কোনোভাবেই আইন ভেঙে চারুকে মুক্তি দেবেনা। হিমেল আর সীমা দিলেও সাজিদ দেবেনা কিন্তু ঘটনা ঘটে গেলো সম্পূর্ণ উল্টো। হিমেল আর সীমাই নিরুত্তাপ উদাসীন ছিলো কিন্তু চারুকে অতি কৌশলে জেল থেকে মুক্ত করে এনেছে সাজিদ। রাতের অন্ধকারে সকলের অগোচরে সাজিদ কারাগারের দরজা খুলে দিয়েছিলো। চারুকে লুকিয়ে নিয়েছিলো জিপে। গল্পের আসল লেখিকা স্নেহা ইসলাম প্রিয়া। পুলিশের জিপ খুবই সুন্দর ভাবে কোনো বাধা ছাড়াই অতিক্রম করেছিলো একের পর এক পথ তারপরই সে এসেছিলো এখানে। এখনো যেনো বিশ্বাস হতে চায়না। সাজিদ না থাকলে আজ হয়তো ওর আর কোনো অস্তিত্ব থাকতো না। তাছাড়া এমনিতেও তো ওর কোনো অস্তিত্ব নেই। নাজিমুদ্দিন সম্পূর্ণ অস্তিত্বই বিনষ্ট করে দিয়েছে ওর। নাহ! নাজিমুদ্দিন না, সুবহান। কি অদ্ভুত! এতদিন যে লোকটাকে নিজের বাবা জানলো তার আসল নামটাই কি না তার অজ্ঞাত ছিলো। সাজিদ কখন চারুর পাশে এসে দাঁড়িয়েছে সেটা খেয়ালই করেনি সে।
– কি করছেন চারুলতা?
হঠাৎই কারোর কণ্ঠস্বরে চমকে উঠলো চারু। নিজের বাঁ পাশে তাকাতেই আবিষ্কার করলো সাজিদকে।
– আপনি?
– হ্যাঁ। আপনার সাথে দেখা করতে এলাম। কেমন আছেন?
– আলহামদুলিল্লাহ।
– যদি কিছু মনে না করেন একটা প্রশ্ন করি? সত্যি উত্তর দেবেন কিন্তু। অনেকদিন যাবতই প্রশ্নটা আমার মাথায় ঘুরছে কিন্তু আপনি আমাকে সঠিক উত্তর দিচ্ছেন না।
– কি প্রশ্ন?
– নাজিমুদ্দিনের কলিজা কি করেছিলেন? মানে আপনি তো হামিদকে কথা দিয়েছিলেন সেটা খাবেন না। আপনি কি আপনার কথা রেখেছিলেন? আর যদি রেখেও থাকেন তবে কলিজাটার কি হলো? নাজিমুদ্দিনের কলিজাও পাওয়া যায়নি।
– হামিদ খেয়ে ফেলেছে।
– চারুলতা আমি সত্যিটা জানতে চাই। আমি জানি হামিদ এইটা খায়নি। হামিদ কিভাবে এইটা খেতে পারে? আপনি বারবার আমাকে এই আজগুবি উত্তরটা কেনো দিচ্ছেন?
– আমি সত্যি বলছি।
– না আপনি সত্যি বলছেন না।
– আমি একটা প্রশ্ন করি?
– না।
প্রশ্ন করার অনুমতি না পেয়ে চারু কিছুটা মন খারাপ করলো। উত্তর দেক বা না দেক অন্তত প্রশ্নটা তো শুনতে পারতো। সাজিদ জানে চারুর প্রশ্নটা কি তাই সে চাইছে না চারু এই প্রশ্নটা করুক। এইটার উত্তর এখনো দেওয়ার জন্য প্রস্তুত নয় সে।
– চারুলতা!
– হুম।
– আপনাকে আত্মসমর্পণের ষ্টুপিড আইডিয়াটা কে দিয়েছিলো বলুন তো।
– বলবো না।
– কেনো বলবেন না? আপনি কি জানেন আজ আপনার যে অবস্থা সেটা শুধুমাত্র সেই ব্যক্তিটির জন্য। আমি নিশ্চিত সেটা হামিদ। আপনার খু*নের সঙ্গী একমাত্র হামিদই ছিলো। নাকি আপনি আমার কাছে কিছু লুকাচ্ছেন। সাথে আরো কেউও ছিলো।
– এমন কাজে সাহায্য করার মতো আমার আর কেউ নেই। এই দুনিয়ায় আমার আপন বলতে শুধু আমার ভাই-ই আছে। সে ছাড়া এমন ঝুকিপূর্ণ কাজ আমার জন্য আর কেউই করবেনা।
চারুর কথাটা যথেষ্ট যুক্তিসঙ্গত কিন্তু সাজিদের মন সেটা মানতে চাইছেনা। যদি হামিদ এমন বুদ্ধি না দেয় তবে কে দিলো আর হামিদই বা কেনো ওকে এমন বুদ্ধি দেবে?
– বলুন না আপনাকে কে বলেছে এইটা করতে?
– বলবো না।
সাজিদ আশা ছেড়ে দিলো। প্রথম দিন থেকেই দেখে আসছে এই মেয়ে প্রচন্ড জেদী। ওকে দিয়ে জোর করে কিছু বলানো যাবেনা। এমন সময়েই ছাদে আগমন ঘটলো পুতুলের। সে খুবই সুন্দর করে শাড়ি পড়েছে। মেয়েলি পোশাক খুবই কম পড়ে সাজিদের মেয়ে কিন্তু আজ হঠাৎ তার শাড়ি পড়ার কারণ ধরতে পারলো না সাজিদ।
– তুমি এখানে কি করো মাম্মাম?
– আন্টি আমাকে শাড়ি পড়তে শিখিয়েছে তাই আমি শাড়ি পরে আন্টিকে দেখাতে এলাম। দেখো তো পাপা আমাকে কেমন লাগে?
সাজিদের চোয়াল শক্ত হয়ে এলো। এই বাসায় শুধু ওর মা আর ওর মেয়ে থাকে। দুজনকেই কড়াকড়ি ভাবে নিষেধ করে দিয়েছে চারুর সাথে দেখা করতে। অবশ্য সেটাই স্বাভাবিক। যে মানুষ অন্য আরেকজন মানুষের কলিজা খেতে পারে তাকে কিভাবে বিশ্বাস করবে? তার সাথে কিভাবে চলতে দেবে নিজের আপনজনদের? এই ঝুঁকি অন্তত সাজিদ নিতে পারেনা।
– মাম্মাম তোমাকে বলেছি না তুমি আন্টির সাথে দেখা করবে না?
– কেনো করবো না? আন্টি তো খুব ভালো। আন্টি কত সুন্দর গান করে, কত সুন্দর করে কথা বলে, আমাকে কত আদর করে।
– আমি মানা করেছি তো মাম্মাম। আন্টি খুবই বিজি থাকে। তুমি আসলে সে বিরক্ত হয়। তুমি আর কখনো আন্টির কাছে আসবেনা।
– আন্টি আমি তোমার সাথে দেখা করতে এলে তুমি বিরক্ত হও?
চারু কিছু না বলে আকাশের পানে চেয়ে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললো। গ্রামে সবাই বলে মানুষ মা*রা গেলে নাকি আকাশের তারা হয়ে যায়। চারুরও খুব করে বিশ্বাস করতে ইচ্ছে হয় এইটা। অন্তত নিজেকে এতিম তো মনে হবেনা। মনে হবে ওর আপনজনেরা ওর আশেপাশেই আছে। আকাশের দিকে তাকালেই তাদের দেখা যাবে। চারুর উত্তরটা সাজিদই দিলো,
– হ্যাঁ আন্টি বিরক্ত হয়। তুমি আর কখনো ছাদে আসবে না।
পুতুল আর কিছু বললো না। কিছুটা মন খারাপ করে নিচে নেমে গেলো। এই বাড়িতে আসার পর নিজেকে খুব একা মনে হয় চারুর। সাজিদ কঠোর ভাবে নিষিদ্ধ করে দিয়েছে চারুকে বাড়ির কারোর সাথে কথা না বলতে। চারুর ঘোরাঘুরির সীমা ছাদ অবধিই। খাবারের সময়েও একটা মেয়ে এসে খাবার দিয়ে যায়। আবার পরের বেলার খাবার দিয়ে আগের প্লেট নিয়ে যায়। এইটা হওয়াই বোধহয় স্বাভাবিক। এই বাঙালি সমাজের কাছে চারুর কাজটা জঘন্য, ঘৃন্যও বটে। একজন মানুষ অন্যজনের কলিজা খেতে পারে এর চেয়ে জঘন্য আর কিছু হয়না। কোনো স্বাভাবিক মানুষই সেটা মানতে পারবেনা এমনকি এই ঘটনাটা কয়েকবছর আগে অন্যকারোর সাথে ঘটলে চারুও সম্ভবত এইটা মানতে পারতো না। পুতুল যাওয়ার পরে চারু গগন পানে চেয়ে সাজিদকে প্রশ্ন করলো,
– আমাকে নিয়ে যদি এতই সমস্যা তবে আমাকে নিয়ে এলেন কেনো এখানে?
চারু প্রশ্নটা করে ফেলেছে তবে সাজিদ এখনো সে প্রশ্নের উত্তর দিতে প্রস্তুত নয়। গল্পের আসল লেখিকা স্নেহা ইসলাম প্রিয়া। শুধুমাত্র ছোট করে বললো,
– আপনার প্রতি আমি কৃতজ্ঞ চারুলতা। সেই কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতেই আপনাকে আমি ছাড়িয়ে এনেছি যাতে আপনি আপনার প্রতিশোধ সম্পন্ন করতে পারেন।
– কৃতজ্ঞতা?
– হ্যাঁ কৃতজ্ঞতা। আপনি দয়া করে আমাকে এ সম্পর্কে কিছু জিজ্ঞেস করবেন না। সময় হলে এর অর্থ আমি নিজেই আপনাকে বলবো। আপনাকে আমি শুধু দুইভাবে সাহায্য করে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করবো। প্রথমত, হামিদকে এসবের মাঝে টানবো না আর দ্বিতীয়ত, আপনাকে আপনার প্রতিশোধ সম্পন্ন করতে সাহায্য করবো। কিন্তু, আপনাকে শাস্তি পেতে হবে চারুলতা। আপনি অন্যায় করেছেন এবং শাস্তিই আপনার প্রাপ্য।
– আপনি কিভাবে আমার কাছে কৃতজ্ঞ? আপনার সাথে তো আমার কিছুদিন আগেই দেখা হলো। এর মাঝে কৃতজ্ঞ হওয়ার মতো কিছু তো আমি করিনি।
– আমাকে দয়া করে কিছু জিজ্ঞেস করবেন না চারুলতা কিন্তু আপনি যা করেছেন আমি অনেক বছর চেষ্টা করেও সেটা পারিনি।
চারু অবাকের পর অবাক হয়ে চলেছে। সাজিদ কিভাবে ওর কাছে কৃতজ্ঞ? এখন আবার কিসের রহস্য?
বিঃদ্রঃ শুরু হয়ে গেলো আপনাদের ভালোবাসার এই গল্পটির দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ। দ্বিতীয় পরিচ্ছেদে তেমন রহস্য থাকছেনা। প্রথম দিকটা সাধারণ রোমান্টিক উপন্যাস হলেও শেষে গিয়ে একেবারে সকল রহস্যের জট খুলবে। এবং মাঝখানে থাকছে কিছু মূল্যবান তথ্য। রমজানের মধ্যে কষ্ট করে গল্পটা লেখার জন্য একটা রিয়েক্ট আর একটা গঠনমূলক মন্তব্য কি আমি পেতে পারি? সকলকে ধন্যবাদ, হ্যাপি রিডিং।
#স্নেহা_ইসলাম_প্রিয়া
(কার্টেসি ছাড়া কপি নিষেধ)
To Be Continued….