আমি সেই চারুলতা পর্ব-৩২

0
1827

[১৮+ এলার্ট। পর্বটা অপ্রাপ্ত বয়স্ক ও অপ্রাপ্ত মনষ্কদের জন্য নয়! রোজা রাখা অবস্থায় পর্বটা পড়বেন না।]

#আমি_সেই_চারুলতা
#Shuvra_Priya (স্নেহা)
#পর্বঃ৩২
_______________________

সূর্য একেবারে মাথার উপর বিরাজমান অবস্থায় রয়েছে। গরমে নাজেহাল অবস্থা সকলের। সকলেই শুধু এই গরম কাটিয়ে একটু ঠান্ডা আবহাওয়া চায়, একটু প্রশান্তি চায়, কিন্তু প্রকৃতিকে দুষিত করার অপরাধে প্রকৃতির সকল তেজ সকল রাগ এসে পড়ছে মানুষের উপর। ঘরে সিলিং ফ্যান শব্দ করে চলছে। বাতাসটাও কেমন যেনো ভ্যাপসা গরম। এই গরমেও অদ্ভুত এক প্রশান্তি ঘিরে ধরেছে চারুকে। ভিতরটা প্রচন্ডরকম ঠাণ্ডা লাগছে। চারু গোসল করে একটা লাল শাড়ি পড়ে নিলো। আজ হামিদ গ্রামে গিয়েছে। নাজিমুদ্দিন আসবে এখানে। তাকে শেষ করেই নিজের বদলার আরো একধাপ পূরণ করবে চারুলতা। এমন নরপিশা*চদের বেঁচে থাকার কোনো অধিকার নেই। আজ আবারও র*ক্তগঙ্গা বইবে! এইখানে লাল রঙের শাড়ি পড়াটা অনিবার্য!
চারু এগিয়ে গেলো রান্নাঘরের দিকে। খুব যত্নে রান্না করলো নাজিমুদ্দিনের পছন্দের বিরিয়ানি। জীবনের শেষ খাওয়াটা হবে তার পছন্দের, সেই খাবারে মাংসটাও হবে তারই পছন্দের মানুষের। জঘন্য পাপের জঘন্য শা*স্তি হবে আজ। নির্দিষ্ট সময় হামিদ নাজিমুদ্দিনকে নিয়ে এলো। চারুও নিজের পছন্দমতো পরিবেশন করলো নিজের জন্মদাতার পছন্দের বিরিয়ানি। নাজিমুদ্দিনের বিরিয়ানি খাওয়ার দৃশ্য ছিলো চারুর জন্য খুবই সুখকর একটি দৃশ্য। নাজিমুদ্দিন সেদিন আঙুল চেটে খেয়েছিলো সেই বিরিয়ানি। প্রিয়তমা স্ত্রীর মাংসের বিরিয়ানি!

বিরিয়ানি নাজিমুদ্দিনের সবচেয়ে পছন্দের খাবার তার উপর আজ হামিদ তাকে বেশ দামি ম*দ পরিবেশন করেছে। নেশা চড়ে গেছে নাজিমুদ্দিনের। মাঝে মাঝেই ম*দ খাওয়া হয় তার কিন্তু এত টাকাপয়সা থাকার পরেও নাজিমুদ্দিন কখনো দামি ম*দ কিনে খান না। বেশ সাশ্রয়ী মানুষ সে। মাতাল অবস্থায় বিরিয়ানি খাওয়ার পর সেটার স্বাদও বেড়ে গেছে বহুগুণ! মাংসের মধ্যেও হয়তো কিছুই বিশেষত্ব আছে। প্রতিবার খাবার মুখে নেওয়ার পরেই অদ্ভুত এক শিহরণ গ্রাস করছে নাজিমুদ্দিনকে। বিরিয়ানি খাওয়ার সময় তার অনুভূত হতে থাকে নারীর সাথে মিলনের সময়কার উত্তেজনা। মদের নেশা কি? হতেও পারে। আগে তো কখনো এমন অনুভূতি আসেনি। খাবার খেতে খেতে নাজিমুদ্দিন গভীরভাবে অনুভব করে সে উত্তেজনা। নিজের ছেলেকে সে অনুভূতি থেকে বরখাস্ত করতে ইচ্ছে হলোনা তার। সে হামিদকেও খেতে সাধলে হামিদ সম্পূর্ণ মানা করে দিলো। নাজিমুদ্দিন একপ্রকার জোর করেই খাবারটা হামিদের মুখে দিতেই হামিদ কোনোরকমে মুখ থেকে সেটাকে ফেলে বমি করতে শুরু করে। নাজিমুদ্দিন মাতাল হলেও তার মনে হতে থাকে এখানে কিছু একটা ঘাপলা আছে কিন্তু নাজিমুদ্দিনকে ভুল প্রমান করে দিয়ে সেই বিরিয়ানি চারুই মুখে তুললো। নাজিমুদ্দিন আর কোনোরকম ঝামেলা করতে চাইলো না। এমন উত্তেজনাময় খাবার সে আর কোথায় পাবে? হামিদের থেকে এই ম*দের নাম জেনে সেটা খেয়ে মাতাল হয়েই তারপর থেকে বিরিয়ানির খাবে বলে নাজিমুদ্দিন ঠিক করলো। সত্যিই অন্যরকম এক অনুভূতি! বিরিয়ানি খাওয়া শেষ হতেই আরো এক গ্লাস ম*দ গ্লাসে ঢেলে সেটাকে এক চুমুকে শেষ করলো নাজিমুদ্দিন। এখন সম্ভবত সে সম্পূর্ণ মাতাল অবস্থায় রয়েছে। সুযোগ বুঝে হামিদুর জিজ্ঞেস করলো,
– বস কে বাপজান?
– অভি!
{গল্পের আসল লেখিকা শুভ্রা আহমেদ প্রিয়া}
অভি নামটা শুনে হামিদ আর চারুর কেমন অবস্থা হলো তা নাজিমুদ্দিন বুঝতে পারলো না। একে একে মাতাল অবস্থায় হামিদ এবং চারুর সকল প্রশ্নের উত্তর দিতে লাগলো সে। তখনই কিছু একটা হলো, চারু হঠাৎই খুব আক্রমণাত্মক হয়ে উঠলো। সে ছুড়ি হাতে তুলে দেয়, নাজিমুদ্দিন মাতাল হলেও তার বুঝতে অসুবিধা হলোনা এখানে কিছু একটা হতে চলেছে,
– কি রে তুই কি করতাছস?
– বল তো কি করি?
– ওইটা নামা।
– আজ আমার হাতে পতন ঘটবে আরেক অসুরের।
– মানে? কি চাস তুই?
– তোর মৃ*ত্যু।
চারু আবারও হাতে তুলে নিলো ছু*ড়িটা কিন্তু নাজিমুদ্দিনের কথা শুনে এক মূহুর্তের জন্য থমকে গেলো সে,
– বাপের মৃ*ত্যু চাস? এইগুলা চাইতে হয়না। কৃষ্ণ পাপ দিবো।
– কিহ! কি বললে তুমি?
– কি কইছি?
– কে পাপ দিবে?
– কৃষ্ণ! কৃষ্ণ পাপ দিবো। কৃষ্ণের একটা রাধা আছে জানস? আমারও একখান রাধা আছে। রাধা দেবী সারদা! নামডা সুন্দর না? আমি তারে কত নামে ডাকি তার হিসাব নাই। রাধা রানী, সারদা দেবী কত নাম তার! আমি অনেক ভালোবাসি আমার রাধা রানীরে। তারে নিজের হাতে খু*ন করছি ঠিকই কিন্তু আমি তারে অনেক ভালোবাসি। আইজও ভালোবাসি!
চারু এক মূহুর্তের জন্য স্তম্ভিত হয়ে হামিদের দিকে তাকালো। হামিদও একইভাবে স্তম্ভিত হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
– চারু, ও কি কয় এইগুলা? রাধা রানী সারদা কে?
চারু উত্তর দিতে পারেনা হামিদের প্রশ্নের। কি উত্তর দেবে সে? এই প্রশ্নের উত্তর তো সে নিজেই জানেনা। তাছাড়া নাজিমুদ্দিন হঠাৎ রাধা কৃষ্ণের নামই বা কেনো নিলো? চারুকে করা প্রশ্নের উত্তর দিলো স্বয়ং নাজিমুদ্দিন নিজেই,
– সারদা আমার বউ। তোদের বড় মা। ও-ই আমার একমাত্র আসল বউ। পরে আমার জন্য ধর্ম পরিবর্তন কইরা মুসলমান হইছে। মুসলমান না হইলে আমাগো বিয়াডা হইতো না। হামিদ, বুঝছস নি বাপ, ওই ঘরে কিন্তু তোর দুইডা বড় ভাই আছে। ওরাই আমার আসল পরিচয়ে আছে। ওরা এহন কই থাকে জানস নি? আমেরিকা থাকে আমেরিকা। বড় বড় পদে চাকরি করে। দেখলেই আমার বুকটা জুড়ায়া যায়।
চারুর হাত থেকে ছু*ড়িটা পড়ে যায়। হামিদও স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো। কোনোমতে নিজেকে সামলে নিয়ে প্রশ্ন করলো,
– আপনে সত্যিই কাউরে ভালোবাসেন?
– হ বাসি তো। অনেক ভালোবাসি।
– সে আপনের জন্য নিজের ধর্ম ছাইড়া আইসা পড়লো?
– ও একা ধর্ম ছাড়ছে নি? আমিও তো ধর্ম পাল্টায়া মুসলমান হইছি। মুসলিম হওনের পর আমার নতুন নাম হয় সুবহান আর তোর বড় মায়ের নাম আমি দেই, রাহেলা খানম নেহা। সুন্দর হইছেনা নামডা?
– আপনে জন্মগত মুসলমান না?
– না, এমনকি আমার ধর্মে যদি সারদারে বিয়া করনের নিয়ম থাকতো তাইলে আমি মুসলমানও হইতাম না।
হামিদের মাথা ঘুড়তে লাগলো। একসাথে এতগুলো ধাক্কা ও সহ্য করতে পারছিলো না। হামিদ কোনোমতে একটা চেয়ারে বসে পড়লো। গলা দিয়ে স্বর বের হতে চাইলো না তাও বহু কষ্টে উচ্চারণ করলো,
– আপনে এইভাবে প্ল্যান কইরা আমাগো আর আমাগো মায়েরে ঠকাইলেন?
– এইসব আমার প্ল্যান নাকি? এইগুলা তো সব বসের মাথার কারসাজি। আমি তো শুধু ভালোবাসছি আমার সারদা দেবীরে।

★★★

রামনগর নামে বেশ বড়সড় একটা গ্রামে জন্মগ্রহণ করে নাজিমুদ্দিন ওরফে বিশ্বজিৎ। বিশ্বজিৎ নামটা তার মা মারা যাওয়ার আগেই ঠিক করে রেখে গিয়েছিলো। গ্রামে হিন্দু মুসলিম উভয় সম্প্রদায় বসবাস করলেও সেখানে সংখ্যাগরিষ্ঠ ছিলো হিন্দুধর্মাবলম্বী, তথাপি হিন্দু মুসলমানের মাঝে কখনো কলহ বাধেনা। সবাই মিলেমিশেই থাকতে পছন্দ করে। তন্মধ্যে সম্ভ্রান্ত এক ব্রাহ্মণ পরিবারের ছেলে বিশ্বজিৎ ওরফে নাজিমুদ্দিন। বিশ্বজিৎকে জন্ম দিতে গিয়ে মারা যান তার মাতা লক্ষী দেবী। সময়টা অনেকদিন আগের। সেসময়ে বিশ্বজিতের বাবা সহ পরিবারের সকলে মনে করতে লাগলো তাদের পরিবারের এ ছেলেটি অপয়া। জন্মের পরেই নিজের মা-কে খেয়েছে সে। অবশ্য বংশের প্রদীপ ভেবে হয়তো এ কথা কেউ মনে রাখতো না। তবে হিমালয় পর্বতে পঞ্চাশ বছর সাধনা করা ত্যাগী এক সাধুপুরুষ এসে নাকি বিশ্বজিতের ঠাকুরদা হরিদাসকে বলেছিলো, তাদের বংশে এমন এক পুত্র জন্মাবে যে তাদের বংশের সব মান সম্মান শেষ করে সম্পদ লুটে নিয়ে এ পরিবারকে পথের ফকির করে ছাড়বে। জন্মের পর থেকেই পরিবারের অনিষ্ট সে করবে। বিশ্বজিৎ জন্মের পরেই তার মা মারা যায় বিধায় সকলের মনেই তাকে নিয়ে সংসয় ডানা বাধতে থাকে। তার করা ছোট ছোট ভুলকেও সবাই আড়চোখে দেখতো। কখনো কোনো শুভ কাজে বিশ্বজিতের অংশ নেওয়া মানে ছিলো বিরাট এক অমঙ্গল হবে এখানে তাই বিশ্বজিতকে প্রায় সকল ধরনের শুভকাজেই পাশ কাটিয়ে রাখা হতো। কোনো পূজায় তাকে কোনো দায়িত্ব দেওয়া হতো না। কারো বিয়ে ঠিক হলে সে বিয়ে মিটে না যাওয়া অবধি তাকে মণ্ডপে নিয়ে যাওয়া হতো না। তার খাওয়া দাওয়া সম্পর্কেও বাড়ির কেউ খুব সচেতন ছিলো না। এইসব সহ্য করতে করতে বিশ্বজিৎ হয়ে উঠে একধরনের জেদি, প্রতিহিংসাপরায়ণ ছেলে। মাত্র এগারো বছর বয়সে বাড়ির সকলের উপর জেদ করে তেরো বছর বয়সী বড় দাদাকে নিয়ে বেড়িয়ে পড়ে সে বাড়ি থেকে। এই পৃথিবীতে একমাত্র তার দাদা-ই তাকে কিছুটা ভালোবাসতো। আর কারোর ভালোবাসা কখনো পায়নি বিশ্বজিৎ।
দাদাকে নিয়ে নতুন লড়াই শুরু হয় বিশ্বজিতের। না ছিলো কোনো খাবার আর না ছিলো মাথা গোজার জন্য একটু ঠাই। প্রথমেই চুরি চামারি করে পেট চালাতে থাকলেও একসময় তার আশ্রয় হয় বসের কাছে। দু’ভাই বেশ ভালোই চলতে থাকে। থাকার জায়গা পাওয়া যায়, খাবার পাওয়া যায় ভালো। বিছানায় নিত্যদিনের নতুন নতুন সুন্দরী নারী। মেয়েদের প্রেমের জালে ফেলা, লোকঠকানো এসবই যেনো তাদের প্রতিদিনের কার্যাবলীর মধ্যে গিয়ে পড়ে। বিদেশে নারী পাচারের কাজ তখনও শুরু হয়নি তবে দেশেই তাদের বেশ কয়েকটি লাইসেন্স বিহীন পতিতালয় ছিলো। সেখান থেকে প্রত্যেকেই অনেক বেশি টাকা উপার্জন করা শুরু করলো। বিশ্বজিতের কাজ মূলত ছিলো সেইসব পতিতালয়ের জন্য নতুন নতুন সুন্দরী নারী খোজা। বিনিময়ে টাকা আর নারী দুটোই তার ছিলো। বিশ্বজিতই মূলত সেখানে সবচেয়ে বেশি কাজ করে উপার্জন করেছে। ধীরে ধীরে সেই বসের খুবই ঘনিষ্ঠ হয়ে উঠলো সে। তার হাত ধরেই প্রথমে বিদেশে নারী পাচারের কাজটা সংঘটিত হয়। প্রথমেই প্রায় ১০০ নারী সে বিদেশে পাচার করে। বস প্রচন্ড খুশি হয়ে তাকে মোটা অংকের টাকা দিলো। অনেকদিন ধরেই বাড়িতে ফেরা হয়নি ভেবে বিশ্বজিত ঠিক করলো এইবার সে গ্রামে ফিরে যাবে এবং কিছুদিন থেকে আসবে। হাতে টাকাপয়সাও বেশ ভালো মাপেরই ছিলো। এরপরই বিশ্বজিৎ ফিরলো তার নিজ গ্রামে। প্রায় আট বছর পর সে সেখানে ফিরলো। গ্রামের চেহারা বদলেছিলো। পরিবারের সকলের ব্যাবহারেও কিছুটা পরিবর্তন এলেও তারা একবারও বিশ্বজিতকে থেকে যেতে বলে না একেবারে। বিশ্বজিৎ কয়েকদিনের জন্য ঘুরতে এসেছে এতেই তারা খুশি। বেশি থাকলে আবার সমস্যা। বিশ্বজিত অবশ্য কিছু মনে করলো না। সে এসেছিলো এখানে হাওয়া বদল করতে। এখানে থাকার কোনো ইচ্ছেই তার নেই। শহরের এত সুযোগ সুবিধা ছেড়ে সে গ্রামে পড়েই বা থাকবে কি জন্য? বিশ্বজিত হাটতে হাটতে তাদের বাড়ির দক্ষিণ দিকে চলে গেলো। এখানে দুটো পুকুর আছে। একটায় মেয়েরা স্নান করে। আরেকটা সোজা গঙ্গা নদীর সাথে গিয়ে মিলেছে। সেটাকে অবশ্য পুকুর বলা যায়না। এই পরিবারের পুরুষেরা যেকোনো পূজোয় বা শুভ কাজে এখানে গঙ্গাস্নান করে। পূজা বা অন্যান্য শুভ কাজ ছাড়া বাড়ির পুরুষমানুষদের এ অংশে আসা নিষিদ্ধ।
প্রায় সন্ধ্যা হয়ে এসেছে। এসময় কেউ স্নান করতে আসবেনা তাই বিশ্বজিত বাড়িটা ঘুরে দেখার উদ্দেশ্যে দক্ষিণ দিকের পুকুরপাড়ের কাছে এলো তবে তার ধারণাকে মিথ্যা প্রমাণ করেই পুকুর পাড়ে দেখা গেলো এক কিশোরীকে। বয়স আর কত হবে? এই ১৫-১৬, দুধে আলতা ফর্সা গায়ের রঙে ভেজা শাড়ি লেপ্টে আছে। পেটের কাছ থেকে শাড়িটি একপাশে সরে গিয়ে নাভি বেড়িয়ে এসেছে তবে মেয়েটির মাঝে সেটাকে ঠিক করার হেলদোল দেখা গেলোনা। বাড়ির এই অংশে কখনো কোনো পুরুষমানুষ আসেনা তাই বোধহয় সে ঠিক করলোনা তবে একজোড়া পুরুষ মানুষের চোখ তাকে এমনভাবে দেখছে সেটা সম্ভবত সে কল্পনাও করতে পারেনি। বিশ্বজিত এক ধ্যানে তাকে দেখে গেলেও মেয়েটার মাঝে হেলদোল দেখা গেলোনা। স্নান শেষ করে মেয়েটা পুকুর পাড়ে উঠে এলো। মেয়েটা সম্ভবত খুব বেশি বিশ্বাসী এখানে কেউ আসবেনা তাই চারপাশে না তাকিয়েই সে নিজের শাড়ি খুলতে শুরু করলো। সম্পূর্ণ শাড়ি খোলা হয়ে গেলে শরীরে রইলো শুধু পেটিকোট আর ব্লাউজ। ধীরে ধীরে সেগুলোকেও সে খুলে নিলো। বিশ্বজিতের নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আসতে চাইলো। জীবনে অনেক নগ্ন নারী শরীর সে দেখেছে কিন্তু এই মেয়েটার মাঝে সবকিছুই কেমন বিশেষ। তার শরীরের প্রতিটি বিশেষ অঙ্গই তাকে খুব করে কাছে টানছে। বিশ্বজিত বহু কষ্টেও নিজেকে সামলাতে পারছেনা। সে মনে করার চেষ্টা করছে বহু সুন্দরী নারীর সাথে তার বিশেষ মুহুর্ত গুলোর কথা তবে কোনো সুন্দরী নারীই বোধহয় এই কিশোরীর রূপের ধারের কাছে যেতে পারবেনা। মেয়েটা ধীরে ধীরে এইবার নিজের সকল জামাকাপড় পড়ে নিয়ে বেড়িয়ে গেলো পুকুরপাড় থেকে তবে নিজের অজান্তেই সে বিশ্বজিতকে আটকে নিলো নিজেরই ভিতর। মেয়েটি বের হওয়ার কিছুক্ষণের মাঝেই একপ্রকার লুকিয়েই বিশ্বজিত বের হলো সেখান থেকে। কেউ দেখলেই সমস্যায় পড়তে হবে। সেখানে থাকা অবস্থায় দু’দিন সে কারোর সাথেই তেমন পরিচিত হয়নি। শুধু বিশ্রামই নিয়েছে কিন্তু প্রতিদিনই পুকুরপাড়ে এসে মেয়েটির স্নানের দৃশ্য দেখতে সে ভুল করেনি। বিশ্বজিতের সম্পূর্ণ দুটো দিন কেটেছে সেই মেয়েটিকে নিয়ে কল্পনা করেই। স্বপ্নে প্রায় প্রতিরাতেই বিছানায় তার সঙ্গী ছিলো এই মেয়েটি তবে মেয়েটি কে সে সম্পর্কে তখনও কোনো ধারণাই ছিলোনা তার।

টানা দুইদিন বিশ্রাম নেওয়ার পর সে পুরোপুরি ঘর থেকে বের হলো। এর মাঝে অনেকেই ওর সাথে দেখা করতে এলেও সন্ধ্যার সময় ছাড়া সে এক মূহুর্তের জন্যেও বাড়ি থেকে বের হয়নি। এই দুইদিনে মেয়েটাকে নিয়ে বিশ্বজিৎ কত কল্পনা জল্পনা করেছে তার ইয়াত্তা নেই। এখনো সম্ভবত বের হতো না যদি না, মেয়েটা কে তা জানতে হতো। ঘর থেকে বের হওয়ার পরেই বিশ্বজিতের ঠাকুরদা হরিদাস তাকে একে একে সকলের সাথে পরিচয় করাতে লাগলো তবে সেই মেয়েটি এখানের কোথাও ছিলো না। তবে কি মেয়েটা এই পরিবারের কেউ নয়? এমনটা তো হওয়ার কথা নয়, এই পুকুরে তো শুধু বাড়ির মেয়েরাই স্নান করে। সবার সাথে আলাপচারিতা শেষে বিশ্বজিত নিজের পরিবার সম্পর্কে নতুন অনেক কিছুই জানলো তাছাড়া পুরোনো অনেক কথাও সে ভুলে গিয়েছিলো। বিশ্বজিতের পরিবার মূলত যৌথ পরিবার। শুধু যৌথ পরিবারই নয়, বেশ বড়সড় যৌথ পরিবার। তাদের বাড়িটাও বিশাল। অবশ্য বিশাল না হলে এত মানুষের থাকার জায়গা হতো না। তার ঠাকুরদা হরিদাসের ছিলো আরো দু’ভাই। তারা তিন ভাই এখানে যৌথ পরিবারে থাকে। হরিদাসের আট ছেলেমেয়ে। তিন মেয়ে আর পাঁচ ছেলে। সকলেরই বিয়ে হয়ে গেছে। বিশ্বজিতের বাবাই ছিলো বড় সন্তান। বিশ্বজিতের এক পিসি বিধবা, তিনি বাবার বাসাতেই নিজের মেয়েকে নিয়ে থাকেন, আরেক পিষি অসুস্থ থাকে বিধায় সেও নিজের বাপের বাড়িতে এসে পড়ে থাকে তার মেয়েকে নিয়ে। শশুড় শাশুড়ী এমন বউ ঘরে রাখতে তেমন ইচ্ছুক না আর আরেক পিষির বিয়ে হয়েছে পাশের গ্রামে সম্ভ্রান্ত এক ব্রাহ্মণ পরিবারের। তিন বোনের মাঝে তিনিই একমাত্র সুখে আছেন। আর বিশ্বজিতের সব কাকাই পুরোহিত। স্ত্রী, পুত্র, কন্যা নিয়ে ভালোভাবে আছেন। তেমনি হরিদাসের আর দুই ভাইদের জীবনও এমন। এই তিন যৌথ পরিবার একসাথে থাকায়ই মূলত বাড়িটা এমন বিশাল এবং ব্রাহ্মণ হওয়ায় গ্রামের সবাই তাদের মান্য করে চলে। বিশ্বজিতের বাবা দ্বিতীয় বিয়ে করেননি আর। তিনি বাকিটা জীবন একাই কাটাবেন বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। বিশ্বজিত সবার সাথে একটু কথাবার্তা বলে বাড়ি থেকে বের হলো। বাড়ির পেছন দিকে একটা খুব বড় কৃষ্ণচূড়া গাছ আছে। লাল থোকা থোকা ফুল সম্পূর্ণ ছেয়ে রেখেছে গাছটাকে। এখানে প্রায় বারোমাসই ফুল ফোটে। নিচে দুজন মেয়ে বসে সেই ফুল কুড়াচ্ছে। একজনকে চেনে বিশ্বজিত। সে তার ছোট পিষির মেয়ে। অসুস্থ থাকায় যিনি বাবার বাড়িতে থাকেন। মেয়েটার নাম প্রতিমা। আরেকটা মেয়ে হলো সেই অপরূপ সুন্দরী যার চিন্তাভাবনায় বিভোর বিশ্বজিত। এখনো মেয়েটার সাথে পরিচয় হয়নি তার। সে এগিয়ে গেলো মেয়ে দু’টোর দিকে। প্রতিমার বয়স হবে বারো কি তেরো। মেয়েটা বিশ্বজিতকে দেখে বেজায় খুশি হলো,
– দেহো সারদা দি কে আসছে!
– কে?
সারদা একপলক তাকালো বিশ্বজিতের দিকে৷ মুখটা তার কাছে নতুন। আগে কখনো এই সুন্দর ছেলেটাকে সে দেখেনি। বিশ্বজিতও বুঝতে পারলো মেয়েটার নাম সারদা।
– এইহানে কি করো প্রতিমা?
– ফুল কুড়াইতে আসছি দাদা। তুমি ফুল নিবা?
– না থাক। তোমরা কুড়াও।
– এইটা কে প্রতিমা? (সারদা)
– আরে সারদা দি তুমি ওনারে চেনো নাই? উনি বিশ্বজিত দা। তোমারে না কইছিলাম শহর থেইকা বিশ্বজিত দা আসছে। আজ তো সবার সাথে পরিচয় করানো হইছে। তুমি ওইহানে ছিলা না তাই মনে হয় এখনো চিনো নাই।বিশ্বজিৎ দা তুমি সারদা দি রে চিনছো তো?
বিশ্বজিত না বোধক মাথা নাড়লো।
– সারদা দি হইলো গিয়া তোমার বড় পিষির মাইয়া। বুঝছো?
বিশ্বজিত হ্যাঁ বোধক মাথা নাড়লেও ভিতর থেকে একটা দীর্ঘশ্বাস বেড়িয়ে এলো। তার ধর্মে পিষতুতো বোনকে বিয়ে করা যায় না। বিশ্বজিতের অবশ্য খুব একটা ভাবান্তর হলোনা। সে আগেই জানতো এমন কিছু হতে পারে, মেয়েটা যেহেতু তার বাড়িরই মেয়ে। সারদা তার বিধবা পিষির মেয়ে এইটা নিয়ে বিশ্বজিতের কোনো সমস্যা নেই। তবে সমস্যা হবে এ বাড়ির মানুষদের। বিশ্বজিত নিশ্চিত সে কোনো না কোনো ভাবে সামলেই নেবে তাছাড়া যে ধর্ম সে মানেই না সে ধর্মের কর্ম করে কি লাভ? বিশ্বজিতের মনেই হয়না দুনিয়ায় সৃষ্টিকর্তা বলতে কিছু আছে। তাই শুধু শুধু সেই সৃষ্টিকর্তার ভয়ে ভালোবাসা ছেড়ে দিতে হবে কেনো?
– প্রতিমা।
– হুম।
– আমি তো অনেক দিন পরে গ্রামে আসলাম। তোমরা কি আমারে এই গ্রামটা ঘুরায়া দেখাইবা?
– কিন্তু আমাগো তো একা একা গ্রামে ঘোরা বারন। (সারদা)
– আরে এক কই, বিশ্বজিত দা তো আমাদের সাথেই আছে। চলো যাই। (প্রতিমা)
– কিন্তু প্রতিমা মা যদি বকা দেয় তহন?
– আরে তোমরা তো আমার সাথে যাইতাছো। পিষি বকবো ক্যান?
কিছুটা ইতস্তত করে সারদাও রাজি হয়ে গেলো গ্রামে ঘুরতে। অনেকদিন যাবতই গ্রামে একটু মন মতো ঘোরা হয়না। বাড়ি থেকে কিছুটা দূরে যেতেই বিশ্বজিতের ছোট পিষির সাথে দেখা হলো। তিনি গ্রামের উত্তর দিকে গিয়েছিলেন পূজোর ফুল আনতে।
– কি রে তোরা কই যাইতাছস?
– বিশ্বজিৎ দা গ্রামটা দেখতে চাইতাছিলো তাই তারে গ্রাম দেখাইতে নিয়া যাইতাছি। (প্রতিমা)
– তোরা? তোরা মাইয়া মানুষ কি দেহাবি? আমি বরং ভিতর থেইকা কাউরে পাঠায়া দেই। তারা বিশ্বজিতরে ঘুরায়া দেখাইবো। তোরা অন্দরে যা।
– থাক না পিষি, ওরাই যাক। ওরাও তো কতদিন ধইরা গ্রাম দেহেনা। তাছাড়া ওরা তো একা যাইতাছে না, আমি নিয়া যাইতাছি।
– কিন্তু তুই নিজেই তো কিছু চিনস না তাছাড়া এইটা তো ছোট খাটো গ্রাম না বাজান। তুই ক্যামনে,,
– তুমি চিন্তা কইরো না পিষি, সন্ধ্যা নামার আগেই আমরা বাসায় চইলা আসমু।
– আচ্ছা তাইলে যা আর শুইনা রাখ, শশানের দিকে যাবি না। দুইজনেই লায়েক মাইয়া, চোখ পড়লে ঝামেলা।
– কি কও লায়েক? ওরা দুইজনেই তো বাচ্চা মাইয়া।
– তোর ছোট বইন দেইখা তোর কাছে বাচ্চা মনে হয়। দাদার কাছে বোনেরা ছোটই অয়। সারদার তো বিয়াই হইতাছেনা বয়স বেশি হইয়া গেছে বইলা। এইবার ১৬ তে পা দিলো।
বিশ্বজিত বিরবির করে কিছু একটা উচ্চারণ করলো তবে তা কি সেই ঠিক বোঝা গেলো না। সম্ভবত সারদাকে বোন বলাটা তার পছন্দ হয়নি।
বিশ্বজিত সারদা আর প্রতিমাকে নিয়ে গ্রাম ঘুরতে বের হলো। আরো কিছুটা সামনে যেতেই কিছু লোকের দেখা মিললো। সম্ভবত এখানের গ্রামবাসী। তারা সারদা, প্রতিমা আর বিশ্বজিতকে নমষ্কার জানালো। সারদা আর প্রতিমাও নমষ্কার জানালো।
– আপনেরা কই যাইতাছেন মা? এহনো দুপুর গড়ায় নাই। এই ভরদুপুরে ঘোরাঘুরি করলে তো তেনাদের নজর লাগে।
– বিশ্বজিত দা শহর থেকে আসছেন। তারে গ্রামটা ঘুরায়া দেখাইতাছি।
– বিশ্বজিৎ দাদা বাবু! উনি আচার্য্য গণেশ ঠাকুরের ছেলে না?
সারদা মাথা নেড়ে হ্যাঁ জানালো। লোকগুলো আবারও নমষ্কার জানালো বিশ্বজিতকে। বিশ্বজিতও হাত জোর করে তার প্রতিউত্তর করলো। লোকগুলোর কথাবার্তায় মনে হচ্ছিলো তারা ওদের বেশ সম্মান জানাচ্ছে৷ ওরা তিনজনই তাদের চেয়ে বয়সে বেশ ছোট তাও এত সম্মান? কিছুক্ষণ পর পর এমন কোনো না কোনো মানুষের সাথে দেখা হচ্ছে আর তারা প্রত্যেকেই বেশ সম্মান নিয়ে কথা বলছে তাদের সাথে।
– কি ব্যাপার সারদা, গ্রামে দেহি সবাই তোমাগো অনেক সম্মান করে।
– আমরা ব্রাহ্মণ তো তাই। গ্রামের মানুষ ব্রাহ্মণ পরিবারের মাইয়া গো দেবীর মতো মানে।
– তাই নাকি?
– হুম। সামনে শস্য খেত আছে। ওইহানে যাইবেন দাদা?
– দাদা ডাইকো না। আমার নাম বিশ্বজিৎ।
– আপনে তো আমার বড়। তার ওপর আবার আমার আত্মীয়। আপনেরে দাদা না ডাকলে কারে ডাকমু?
– যারেই ডাকো, আমারে ডাইকো না।
প্রতিমা ছোট মানুষ। দুজনের হাটার গতির সাথে তাল মেলাতে না পেরে সে কিছুটা পিছিয়ে পড়েছিলো অবশেষে আর না পেরে দৌড়ে এসেই তাদের ধরলো,
– তোমরা কি গো? আমারে একা রাইখা আসতাছো ক্যান?
– কই একা ফালায়া আসলাম? (সারদা)
– তুমি আর কথা বইলো না সারদা দি। তুমি খুব খারাপ। বিশ্বজিত দা!
– হুম।
– আম খাইবা?
– কই পামু?
– মিনাদের বাড়িতে মস্ত এক আম গাছ। অনেক মিষ্টি আম। লুকায়া আনমু।
– একদম না। ব্রাহ্মণ হইয়া চুরি করবি? কৃষ্ণ পাপ দিবো। (সারদা)
– উফ সারদা দি, তুমি এই কথা আর কত বলবা বলো তো? কিচ্ছু হইবো না। তোমরা একটু বসো আমি যামু আর আসমু। কিচ্ছু হইবো না। আজ ওদের বাসায় কেউ নাই৷ ইচ্ছামতো আম নিয়া আসমু। তোমরা কিন্তু আমারে রাইখা যাইয়ো না।
{গল্পের আসল লেখিকা শুভ্রা আহমেদ প্রিয়া}
প্রতিমা দৌড়ে ছুটে গেলো একটা বাড়ির দিকে। বিশ্বজিত আর সারদা এইবার একদম একা।
– সারদা!
– হুম।
– তুমি প্রতিদিন সন্ধ্যায় স্নান করো ক্যান?
– আপনে ক্যামনে জানলেন?
বিষ্ময়ে প্রশ্ন করলো সারদা। বিশ্বজিতও কিছুটা ঘাবড়ে গেলো। এমন প্রশ্ন সে করতে চায়নি। কোনোমতে নিজেকে সামলে উত্তর দিলো,
– আসলে, আমি তোমারে দক্ষিণ দিকে যাইতে দেখছিলাম। ওইহানে তো সবাই স্নান করতেই যায়। তাই মনে হইলো তুমি সন্ধ্যায় ওইহানে স্নান করো।
– আমি সন্ধ্যাবেলা একটা পূজা করি। ওই পূজা করার আগে পবিত্র হইয়া নিতে হয়। তাই আমি গোসল কইরা পূজায় বসি।
– ওহ। একটা কথা বলি তোমারে?
– কি কথা?
– তুমি না অনেক সুন্দর সারদা।
কথাটা বলার সাথে সাথে বিশ্বজিতের চোখের সামনে ভেসে উঠলো অপূর্ব সুন্দর সেই নগ্নদেহ। চোখ দিয়েই যে দেহের সাথে প্রতিদিন মিলিত হয় সে। সারদা বুঝতেও পারলো না এই সুন্দর কথাটার মাঝে কেমন ঘৃণ্য মনোভাব লুকায়িত ছিলো। বিশ্বজিতের কথায় লজ্জায় রক্তিম হয়ে উঠলো তার দুই গাল। মনে মনে নিজেকেই ধমক দিলো, “এখানে লজ্জা পাওয়ার কি আছে? দাদা হিসেবেই শুধুমাত্র বিশ্বজিত তার প্রসংসা করেছে।”
– কিছু কইবা না সারদা দেবী?
– আপনে আমার চেয়েও বেশি সুন্দর।

_______________________

To Be Continued…
®শুভ্রা আহমেদ প্রিয়া

➡️ এইযে শুনুন, আপনি সেই না যে এখনো পেইজটা লাইক ফলো করেননি এমনকি গল্প পড়েও কোনো রিয়েক্ট কমেন্ট করেন না?🤨 আজকের টার্গেট মনে আছে তো?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here