আরশিযুগল প্রেম❤পর্ব- ১১

# আরশিযুগল প্রেম❤পর্ব- ১১
# লেখিকাঃ নৌশিন আহমেদ রোদেলা ❤

রবীন্দ্র সরোবরের ডানদিকে বান্ধবীদের সাথে দাঁড়িয়ে গল্প করছিলো শুভ্রতা ৷ গল্পের বিষয়বস্তু — “বাসন্তী রঙের পাঞ্জাবিতে আনোয়ার স্যারকে গবেট লাগছে নাকি হ্যান্ডসাম “। শুভ্রতা, তনয়া, পুষ্পি আনোয়ার স্যারকে পুরোদমে গবেট প্রমাণ করার চেষ্টা চালালেও প্রমা তাতে মহা ক্ষিপ্ত। স্যারকে নিয়ে এমন অহেতুক মজা একদমই পছন্দ হচ্ছে না তার। স্যারের প্রতি প্রমার এই সহানুভূতি গুরু সম্মান জনিত কারণে নয়। ক্রাশ জনিত কারণে। সেই ফার্স্ট ইয়ার থেকে স্যারের উপর ক্রমাগত ক্রাশ খেয়ে আসছে সে। আর সেমিস্টার শেষ হতেই তা চক্রবৃদ্ধি আকারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। আনোয়ার স্যার দেখতে আহামরি কিছু নয়। গায়ের রং কালো। শুভ্রতার ভাষায় ভয়ানক কালো। তবুও ঘুরে ফিরে স্যারের উপরই প্রমার পিছলে পড়াটা বন্ধু জগতে ব্ল্যাক হোলের মতোই ব্ল্যাক রহস্য। স্যারের প্রতি প্রমার এই ভয়ানক টানকে তনয়া বেশ ভালো একটা নাম দিয়েছে। তার ধারণা, খুব শীঘ্রই লায়লা-মজনুর মতো প্রমা-আনোয়ার নিয়েও একটা লাভ স্টোরির উদয় হবে। যার নাম হবে, ” The black History”। তাদের গল্পের মাঝেই স্টেজের সামনের দিকে আনোয়ার স্যারকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে হালকা কাশলো পুষ্পি। প্রমাকে আরেকটু রাগিয়ে দেওয়ার জন্য সুর তোলে গান ধরলো সে,

—” প্রমার কালাচান যখন
হলুদ পাঞ্জাবি পইড়া –
স্টেজের সামনে দিয়া হাইট্টা যায়..
আহা! বুকটা ফাইটা যায়।
আমার বুকটা ফাইট্টা যায়।”

পুষ্পির গানটা কানে যেতেই চোখ গরম করে তাকালো প্রমা। সাথে সাথেই হাসিতে ফেঁটে পড়লো তনয়া। তনয়ার হাসিটা বরাবরই বেশি। একবার হাসি শুরু করলে দুনিয়া অন্ধকার করে হাসতে লেগে যায় সে। শুধুমাত্র এই হাসির জন্যই ডিপার্টমেন্টে হাইস্ট র‍্যাগ খেয়েছে সে। শুধু তাই নয়। নিস্তব্ধ ক্লাসে হঠাৎই তনয়া দমফাটা হাসিতে ফেঁটে পড়ায় চার বান্ধবীকেই ক্লাস থেকে বহিষ্কৃত হতে হয়েছে বহুবার। এবারও তাই হলো। তনয়া হাসির ধামকে হেলে গিয়ে পড়লো শুভ্রতার গায়ে। শুভ্রতাও অল্পবিস্তর হাসছিলো। তনয়ার হঠাৎ এভাবে এলিয়ে পড়াটা ঠিক সামলে উঠতে পারলো না সে। দু’পা পিছিয়ে গিয়ে ধাক্কা লেগে গেলো কারো গায়ে। বাম পা টা গিয়ে পড়লো পেছনে থাকা আগুন্তকের ডান পায়ে। আচমকা এমন একটা ঘটনায় থতমত খেয়ে গেলো শুভ্রতা। “আকস্মিকতা” শব্দটা বরাবরই তার স্বভাব বিরোধী। কোনো এক অদ্ভুত কারণে আকস্মিক বিষয়গুলোতে সহজ হয়ে উঠতে পারে না সে। হাজারো জড়তা যেন টেনে খিঁচে আঁকড়ে ধরে থাকে তাকে। শুভ্রতার বিভ্রান্তিকর পরিস্থিতিতেই পা ধরে লাফিয়ে উঠলো আগুন্তক। দাঁতে দাঁত চেপে বলে উঠলো,

—” আরে? চোখে দেখেন না নাকি? উফ! একে তো দশ ফিট আকারের হিল পড়েছে তারওপর লাফালাফি। আপনারা তো হিল দিয়েই মর্ডার করে ফেলবেন ম্যাডাম।”

শুভ্রতা জিহ্বা দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে নিয়ে চোখ পিটপিট করে তাকালো। পাশ থেকে কড়া গলায় বলে উঠলো পুষ্পি,

—” তো? আপনার চোখ কোথায় ছিলো মিষ্টার? যেচে যেচে মর্ডার হতে আসলেন কেন শুনি? এই ভীড়ের মাঝে দু’একটা পাড়া খাওয়া কোনো ব্যাপার না। নিজের রাস্তা মাপুন যান….”

পুষ্পির ডানহাতটা খামচে ধরে অসহায় চোখে তাকালো শুভ্রতা। ফিসফিস করে বললো,

—” থাম না দোস্ত। প্লিজ! প্লাবলিক প্লেসে সিনক্রিয়েট কেন করছিস? ছে…”

এটুকু বলতেই থেমে গেলো শুভ্রতা। তাদের পাশে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষটির গভীর চোখের চাহনী দেখে
হঠাৎই বিহ্বল হয়ে পড়লো সে। সাদাফ আর তার বন্ধুরা লেকের দিকে যাচ্ছিলো। হঠাৎই এমন দূর্ঘটনায় দাঁড়িয়ে পড়তে বাধ্য হলো তারা। আর এই দূর্ঘটনার মূল কেন্দ্রবিন্দু শুভ্রতাকে দেখে অবাকও হতে হলো তাকে। বাসন্তী পাড়ের টকটকে লাল শাড়ি পড়েছে সে। ঠোঁটে লাল লিপস্টিক, চোখে গাঢ় কাজল, কপালে ছোট্ট কালো টিপ, খোঁপায় মোড়ানো ফুল আর মাথায় ক্রাউন। সব মিলিয়ে যেন ফুলে ফুলে খেলে ওঠা প্রকৃতির রাণী। শুভ্রতার চাপা বোঁচা নাকটাই কেন জানি অদ্ভুত ভালোলাগাই মুগ্ধ করছে সাদাফকে। বারবারই মনে হচ্ছে, নাহ্, শুভ্রতাকে গ্রিকদের মতো খাঁড়া নাকে মানাতো না…. একদমই না। সেই প্রথম থেকেই রাকিবের ঝগড়া আর শুভ্রতার হতবিহ্বল মুখটা খেয়াল করছিলো সে। শুভ্রতাকে তার দিকে তাকাতে দেখেই চোখ ফেরালো সাদাফ। রাকিবের দিকে তাকিয়ে বললো,

—” ছাড় না দোস্ত। ঘুরতে এসে মেয়েদের সাথে লেগে বসলে চলে? মাইয়া মানুষ… ছেড়ে দে। ইচ্ছেকৃতভাবে তো করে নি। এক্সিডেন্টলি হয়েছে। চল তো।”

সাদাফের এই কথাটাও ঠিক হজম হলো না পুষ্পির। ফোঁস ফোঁস করে বলে উঠলো,

—” হোয়াট ডু ইউ মিন বাই মাইয়া মানুষ? মাইয়া মানুষ বলে কি বুঝাতে চাইছেন আপনি? হ্যাঁ?”

সাদাফ ভ্রু কুঁচকে তাকালো,

—” মাইয়া মানুষ বলতে মেয়ে মানুষ বোঝাতে চাচ্ছি। আজকালকার মেয়েদের আই-কিউ যে এতোটা খারাপ জানা ছিলো না আমার। এই চল তো।”

কথাটা বলে একমুহূর্ত দাঁড়ালো না সাদাফ। মেয়ে নামক প্রাণীদের সাথে অযথা কথা বাড়ানোটা একদমই পছন্দ নয় তার। রাকিবও দাঁত কেলিয়ে হেসে সাদাফের পিছু হাঁটা দিলো। সাদাফ যে তার সাইড নিয়ে মেয়েদের হারিয়ে দিয়েছে তাতেই সে চরম খুশি। পুষ্পি রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে সাদাফের গোষ্ঠী উদ্ধার করলেও শুভ্রতার মাঝে কোনো ভাবান্তর দেখা গেলো না। অন্যসময় হলে যে শুভ্রতা রাগের আগুনে ঝলসে যেতো সে আজ চুপ! ব্যাপারটা কিছুতেই মানতে পারছে না পুষ্পি। শুভ্রতা রাগ লাগা আর না লাগার মাঝামাঝি দু’ মনা হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। সাদাফের কথাগুলোকে বিভিন্নভাবে বিশ্লেষণ করছে সে। শুভ্রতার ভাবনার মাঝেই গানের জন্য নাম ঘোষণা করা হলো। তনয়া আর প্রমা ব্যস্ত হয়ে তাড়া দিতেই স্টেজের দিকে এগিয়ে গেলো চারজন।

“ওরে গৃহবাসী
খোল্,
দ্বার খোল্,
লাগল যে দোল।

স্থলে জলে বনতলে
লাগল যে দোল।”

এটুকু গাইতেই স্টেজ থেকে কিছুটা দূরে বন্ধুদের সাথে গল্পে মেতে থাকা সাদাফের দিকে চোখ পড়লো শুভ্রতার। লাল-কালো রঙের মিশ্রণে একটা পাঞ্জাবি পড়ে আছে ছেলেটি। পাঞ্জাবির হাতা গোটাতে গোটাতে বন্ধুদের আসরে ঠোঁটের কোনে হাসি মেখে বেখেয়ালি চোখে স্টেজের দিকে তাকালো সে। ডানহাতে কপালে পড়ে থাকা চুলগুলো ঠিক করার চেষ্টা চালাতেই হাতের সাদা বেল্টের ঘড়িটা রোদের আলোতে ঝলমল করে উঠলো তার । কয়েক সেকেন্ড তাকিয়েই আবারও অবহেলা ভরা চোখে বন্ধুদের দিকে তাকিয়ে গল্পে মশগুল হয়ে পড়লো সে। সাদাফের এমন খাপছাড়া ভাবে একঝাঁক অভিমান এসে জমা হলো শুভ্রতার মনে। নিজের এই অভিমানে নিজেই অবাক হলো শুভ্রতা। সাদাফের কাছ থেকে কিছু এক্সপেক্ট করাটা যে তার সাজে না তা মুহূর্তেই উপলব্ধি করলো সে। তবুও কেন জানি এক পাহাড় অভিমান এসে ভীড় করতে লাগলো তার মনে। মনে হতে লাগলো, তার এই অভিমানটা ন্যায্য। অসাধারণ এক সত্য। সাদাফ কেন বাসন্তী রঙের পাঞ্জাবি পড়লো না তা ভেবে অভিমানটা যেন আরো শতগুণে পূর্ণ হলো। নিজের এই বাচ্চামো আর গুরুত্বহীন অভিমানগুলোকে মূল্যহীন দামে ভাসিয়ে দিয়ে ভারী মন নিয়ে আবারও গানের দিকে মন দিলো সে…

“দ্বার খোল্,
দ্বার খোল্॥

ওরে গৃহবাসী খোল্,
দ্বার খোল্,
লাগল যে দোল।

স্থলে জলে বনতলে
লাগল যে দোল।

দ্বার খোল্,
দ্বার খোল্॥

রাঙা হাসি
রাশি রাশি
অশোক পলাশে,
রাঙা নেশা মেঘে
মেশা প্রভাত-আকাশে……”

শুভ্রতার গাওয়া প্রতিটি লাইনই যেন সাদাফের কানের পর্দায় আলতো দোলা দিয়ে মনের গভীরে গিয়ে পৌঁছাচ্ছিলো। বন্ধুদের সাথে গল্পে মেতে থাকলেও সম্পূর্ণটা মনোযোগই যেন পড়ে ছিলো স্টেজের ওই ফুলপরিটার আশপাশে। সাদাফ মনে-প্রাণ দিয়ে টেনেও যেন ফেরাতে পারে নি সে মন। তাই মনের বদল মুখ ফিরিয়েছে সে। শুভ্রতার সংস্পর্শ থেকে নিজেকে খুব কৌশলে সরিয়ে রাখার চেষ্টা করছে সে। শুভ্রতা যদি অন্যকারো সাথেই জুটি বাঁধতে চায় তাহলে বোকার মতো তাকে ভেবে সময় নষ্ট করতে রাজি নয় সাদাফ। আরাফের বিয়ের পর প্রায় একসপ্তাহ পর দেখা হলো তাদের। এই একসপ্তাহ শুভ্রতাকে এক মুহূর্তের জন্যও ভাবে নি সাদাফ। অথচ আজ? এই এক মুহূর্তের চাহনীতেই যেন ভেঙে যাচ্ছে সব দেয়াল। কিসের এই আকর্ষন সাদাফের? কিসের এতো মায়া? সাদাফের চিন্তায় ব্যাঘাত ঘটিয়ে কথা পাড়লো রাকিব,

—” দোস্ত? লম্বা মাইয়াটাকে ভালোই লাগতাছে। বিয়ে করাই যায় কি বলো?”

রাকিবের কথায় স্টেজের দিকে তাকালো সাদাফ। পাশ থেকে বিদ্রুপের স্বরে বলে উঠলো মাহিন,

—“ওই মাইয়া রে বিয়ে করলে তোর জীবন শেষ বন্ধু। মাইয়ার কথায় কি কারেন্ট দেখলা তো? জীবন তামা তামা বানাই ফেলবো। তবে, সাদাফ হইলে করতে পারে। সাদাফের যা রাগ…. এক ধমকেই বউ টাইট।”

মাহিনের কথায় হাসলো সাদাফ। রাকিব সাদাফের কাঁধ ঝাঁকিয়ে বলে উঠলো,

—” আমিও কম যাই না মিয়া। ট্রাই তো করতে দে আগে। ধানিলংকাকে একটু বাজিয়েই দেখি বন্ধু। দেখতে এক্কেবারে মডেল লাগতাছে। বন্ধু ট্রাই করবা নি?”

সাদাফ কাঁধ থেকে হাত সরিয়ে দিয়ে বললো,

—” খবরদার হেল্প চাবি না। না আমাকে ফাঁসাবি। এসব ধানিলংকা আমার প্রয়োজন নেই। আমি বন্ধু জন্ম থেকেই ঝাল কম খাই।”

__________________

ছাঁদের রেলিং এ পা ঝুলিয়ে বসে আছে শুভ্রতা। সূর্যটা পশ্চিম আকাশে হেলে পড়েছে সেই কখন। ক্লান্ত পাখিরাও ডানা মেলে উড়ে চলেছে ঘরের মায়ায়। নিচের রাস্তা দিয়ে হেঁটে চলেছে ব্যস্ত পথচারী। এই ব্যস্ত জনতায় দু’একজন বৃদ্ধ-বৃদ্ধা আছেন। যাদের কোনো ব্যস্ততা নেই। বন্ধী খাঁচা থেকে বেরিয়ে অযথায় হাঁটাহাঁটি করছেন তারা। কয়েক পা এগিয়েই দম ফুরিয়ে যাচ্ছে তাদের। থেমে গিয়ে টেনে টেনে দম নিয়ে আবারও হাঁটছেন। পা নাঁচিয়ে নাঁচিয়ে শুভ্রতা তাদের এই একঘেয়েমী কার্যকলাপই দেখে চলেছে সেই কখন থেকে। মনটা একদমই ভালো নেই তার। নিজের উপর আজ খুবই বিরক্ত সে। সেই সাথে রাগান্বিতও। তার বিরক্তি ও রাগের একমাত্র কারণ হলো সাদাফ। সাদাফকে কিছুতেই ভাবতে চাইছে না সে। যে ছেলে তাকে গুরুত্বই দিচ্ছে না তাকে কেন ভাববে সে? কিন্তু মন তা মানে না। এই নিয়ে গুণে গুণে মাত্র চারবার দেখা হয়েছে তাদের। তবুও খুবই অল্প সময়ের ছিলো সেই সাক্ষাৎ। কখনো শুধু একটু চোখাচোখি আর কখনো দু- একটা কথা, ব্যস! এই কয়েকদিনে আরো কতো ছেলের সাথে কথা হয়েছে তার। কই? তাদের কাউকে তো একবারও মনে পড়ে না তার। তবে, সাদাফের সাথে বলা ছোট ছোট কথাগুলোও কেন এতো ঘটা করে মনে পড়ে তার? তার ভাবনাটা কেন বারবারই সুখময় বিষে পুড়িয়ে তুলে তার মন? পহেলা বসন্তে স্টেজ থেকে নেমে মনে মনে কতো খুঁজেছে তাকে। অথচ, সাদাফ একটি বার তার খোঁজটা পর্যন্ত নিলো না? কেন নিলো না? এই ছোট্ট একটা ব্যাপারে শুভ্রতার যে কান্না পেয়ে যাচ্ছিল তা কি সে জানে? এই ছোট্ট অবহেলা সইতে না পেরে নিজের প্রিয় ডায়েরিটাকে ছিন্নভিন্ন করেছে শুভ্রতা… সেটাও যে সাদাফের অজানা। পহেলা ফাল্গুনের পর আজ পনের দিন হতে চললো কোনো দেখা সাক্ষাৎ নেই তাদের। অথচ, তাকে দেখার জন্যই শুভ্রতার কতো পাগলামি। সাদাফের সাথে হঠাৎ দেখা হয়ে যাওয়ার আশায় বিনা প্রয়োজনেই অদ্ভুত সব বাহানায় বনানী হয়ে এখানে সেখানে গিয়েছে শুভ্রতা। প্রতিবার ব্যর্থ হয়ে নিজের উপরই রাগ দেখিয়ে রাতের খাওয়া বন্ধ করেছে সে। সাদাফের জন্য করা অদ্ভুত সব পাগলামোগুলো শুভ্রতার আত্মসম্মানে আঘাত হানছে ক্রমাগত। সেই আঘাত তাকে পুড়চ্ছে, রাগাচ্ছে,অভিমানী করছে। দিন শেষে আবারও পাগল করে তুলছে।

#চলবে,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here