আরশিযুগল প্রেম❤পর্ব- ১৭

# আরশিযুগল প্রেম❤পর্ব- ১৭
# লেখিকাঃ নৌশিন আহমেদ রোদেলা ❤

পাহাড়ী বনু বাতাসে উম্মাদের মতো উড়ে চলেছে শুভ্রতার চুল। শুভ্রতা বাসের জানালার দিকে খানিকটা ঝুঁকে এসে তাকিয়ে আছে বাইরে। অসংখ্য পাহাড়, গাছ-পালা, আঁকাবাঁকা রাস্তা আর এই মনোমুগ্ধকর বাতাসে রীতিমতো পাগল হয়ে যাচ্ছে সে। মনে হচ্ছে, সব কিছুকে আটকে রেখে যদি প্রতিটি জিনিসকে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখতে পেতো। সবই যে দেখার আগেই দৌড়ে পালাচ্ছে। কোনটা রেখে কোনটা দেখবে শুভ্রতা? ছোট্ট বেলা থেকেই ভয়ঙ্কর সব জঙ্গল, পাহাড়ে ঘুরে বেড়ানোর শখ তার। যেখানে প্রকৃতির রেখা হবে স্বচ্ছ, সুনিপুণ। চারদিকে থাকবে বন্য সবুজ। কিন্তু ব্যস্ত পরিবারের চাপে কখনোই পাহাড়ে আসা হয় নি তার। পূরণ হয় নি সেই সুপ্ত ইচ্ছেটাও। শুভ্রতা দু’চোখ বুজে গাঢ় শ্বাস টেনে নিলো। সাথে সাথেই নাকে গিয়ে লাগলো তীক্ষ্ণ মিষ্টি গন্ধ। শুভ্রতা চোখ মেলে আবারও সারি সারি পাহাড়ের উপর চোখ রাখলো। তবে কি এটা পাহাড়ের গন্ধ? সাদাফ পাশের সিটে বসে শুভ্রতার বাচ্চামোগুলো দেখছিলো। এই সামান্য পাহাড়গুলো দেখেই মেয়েটা এতোটা পাগল হচ্ছে তাহলে পাহাড়ের গহীনে গেলে কি হবে তার? শুভ্রতার মাঝে “অল্প” শব্দটির যে প্রভাব আছে তাতে বরাবরই মুগ্ধ হয় সাদাফ । মেয়েটা অল্পে রেগে যায়, অল্পে খুশি হয়, বিস্মিত হয়, অবাক হয় আবার অল্পেই কষ্ট পায়। মূলত, মেয়েটার মাঝে অল্পের ছড়াছড়ি। নিজের ভাবনায় নিজেই হাসলো সাদাফ। দেড়- দু’ঘন্টা পথ অতিক্রম করার পর হঠাৎই থেমে গেলো বাস। বাসের সামনের পাহাড়ি মোড়টাতে একটি নষ্ট ট্রলি এসে দাঁড়িয়ে আছে বলেই এই জ্যাম। মোড়টা এতোটাই সরু যে দুটো গাড়ি একসাথে যাওয়া একেবারেই অসম্ভব। যাত্রার পথে এমন একটা গোলযোগে খানিক বিরক্ত হলো সাদাফ। একবার ঘড়িতে চোখ বুলিয়ে শুভ্রতাকে নিয়ে বাস থেকে নেমে দাঁড়ালো। মেমপ্রে কে নামতে দেখেই বলে উঠলো সাদাফ,

—” এমনিতেই তো দেরি হয়ে গেছে মেমপ্রে। আজ কি শেরকর পাড়া পর্যন্ত পৌঁছাতে পারবো? সাথে কিন্তু তোমার এই আপু আছেন। আর যায় হোক, রাতে ট্রেকিং করা সম্ভব হবে না। তাছাড়া বোর্ডিং পাড়া থেকে শেরকর পাড়া রাস্তাটুকুও খুব একটা সুবিধার নয়। খাঁদ আর পাহাড়ে ভরপুর। রাতের আঁধারে অনভ্যস্ত ট্রেকারদের জন্য টু মাচ রিস্কি।”

মেমপ্রে মৃদু হাসলো। ডান হাতে পড়া সিলভার রংয়ের ঘড়িটিতে চোখ বুলিয়ে নিয়ে বললো,

—” ১২ টা বাজে সাদাফ দাদা। গাড়ি নষ্ট না হলে দুটো নাগাদ থানচি বাজার পৌঁছে যেতাম। তবে আধাঘন্টার মাঝে গাড়ি ছাড়লে আড়াইটার দিকে থানচি বাজার পৌঁছে যাবো। ওখান থেকে শেরকর পাড়া পৌঁছাতে রাত আটটার মতো তো বাজবেই।”

সাদাফের কপালে সূক্ষ্ম চিন্তার ভাঁজ পড়লো। চিন্তিত ভঙ্গিতে বললো,

—” তাহলে তো ঝামেলা হয়ে গেলো মেমপ্রে। পাহাড়ে রাত আটটা মানে অনেক রাত। এই রাতে শুভ্রতাকে নিয়ে তোমাদের পাড়ার পাহাড়ে ট্রেকিং করা অসম্ভব রকম রিস্কি হবে। একে তো খাঁড়া পাহাড়। তারওপর খাঁদ আর জোঁক টোকের ঝামেলা তো আছেই।”

মেমপ্রের মুখেও চিন্তার ছাপ পড়লো। কিছুক্ষণ ভেবে বললো,

—” তাহলে কি থানচি বাজারে আজ থাকবেন দাদা? কাল ভোরে রওনা দিলে বারোটা নাগাদ শেরকর পাড়া পৌঁছে যাবো। এছাড়া তো আর কোনো উপায় নেই দাদা।”

সাদাফ মৌন থেকে কিছু ভাবলো। সাথে সাথেই বাস থেকে ডাক পড়লো দু’মিনিটের মাথায় বাস ছাড়বে। সামনের ট্রলি সরিয়ে ফেলা হয়েছে। সাদাফ বাসের দিকে এগুতে নিয়েও থমকে দাঁড়ালো। ওদের থেকে কিছুটা দূরে পাহাড়ের কিনারায় দাঁড়িয়ে আছে শুভ্রতা। ওদের পাশ থেকে কখন যে ওখানটাই গিয়ে দাঁড়িয়েছে শুভ্রতা, কে জানে? সাদাফ দ্রুত পায়ে সেদিকে এগিয়ে গিয়ে শুভ্রতার পাশে গিয়ে দাঁড়ালো। তাড়া দিয়ে বলে উঠলো,

—” চলুন শুভ্রতা। বাস ছাড়বে এখনি।”

শুভ্রতা উত্তর দিলো না। কাঁপা কাঁপা হাতে সামনের দিকে ইশারা করলো। সাদাফ একবার সামনে তাকিয়ে আবারও শুভ্রতার দিকে চোখ ফেরালো। মেয়েটার শরীর হালকা মৃদু কাঁপছে। সাদাফ কিছু বলার আগেই জড়ানো জিহ্বা নিয়ে বলে উঠলো শুভ্রতা,

—” এ এতো মেঘ কেন? আর এই মেঘেরা এতো সুন্দর কেন?”

সাদাফ হেসে বললো,

—” বাস ছাড়ার সময় হয়ে গেছে শুভ্রতা। এর থেকেও ভয়ানক সৌন্দর্য অপেক্ষা করছে আপনার জন্য। চলুন।”

শুভ্রতা পা বাড়ালো না। চুপচাপ একদৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো দূরের ওই মেঘ আর পাহাড়ের প্রেম নিবেদন খেলায়। ঘন সাদা মেঘ কি অদ্ভুত ভাবে ডুবিয়ে রেখেছে বাহারি পাহাড়ের চূড়া। যেন কোনো অবুঝ কিশোরীকে পরম আবেশে বুকে আগলে রেখেছে তার পাগলাটে প্রেমিক। শুভ্রতার মনে হচ্ছে,ওখান থেকে চোখ ফেরালেই যেন সেই শ্বাসরুদ্ধকর প্রেমনিবাস থেকে বহিষ্কৃত হবে সে। হারিয়ে ফেলবে অমূল্য ওই সৌন্দর্য! শুভ্রতাকে নড়তে না দেখে দ্বিধা ভরে শুভ্রতার ডানহাতটি ধরলো সাদাফ। হাতে হালকা ঝাঁকি দিয়ে বললো,

—” চলুন শুভ্রতা। দেরি হচ্ছে তো।”

সাদাফের বলা কথাটুকু যেন কান পর্যন্ত পৌঁছালো না শুভ্রতার। সাদাফের পিছু পিছু শুধু ভাবলেশহীন ভাবে হাঁটতে থাকলো সে। আরো দু’ঘন্টা চলার পর থানচি বাজারে এসে পৌঁছালো সাদাফ-শুভ্রতা। বাস থেকে নেমেই তাড়াহুড়ো করে ঘড়ি দেখলো সাদাফ —- ২ঃ৪৫। বলি পাড়া বিজিবি ক্যাম্পে নাম এন্ট্রি করাতে গিয়েও বেশ খানিকটা সময় নষ্ট হয়েছে তাদের। ফর্মের সাথে কার্ডের ফটোকপি দেওয়ার সময় শুভ্রতার কার্ডটাই খুঁজে পাচ্ছিলো না শুভ্রতা। আর সেটা খুঁজতেই প্রায় দশ-পনেরো মিনিট সময় নষ্ট হয়েছে। নয়তো আরো খানিকটা আগেই থানচি বাজারে এসে পৌঁছাতে পারতো তারা। এখন দুপুরের খাবার খেয়ে ট্রেকিং শুরু করলে রাত দশটার আগে শেরকর পাড়া অব্দি পৌঁছাতে পারবে না তারা। সাদাফ আর মেমপ্রের জন্য ব্যাপারটা খুব স্বাভাবিক হলেও শুভ্রতার জন্য হবে তা ভয়াবহ। ৫-৬ ঘন্টা মেয়েটা একটানা হাঁটতে পারবে কিনা তাই তো এক বড় প্রশ্ন। শুভ্রতা সাথে না থাকলে এবারও তাজিংডং এর চূড়া হতে ঘুরে আসতো সাদাফ। কিন্তু আজ থানচি থেকে গেলে তা কি আর সম্ভব হবে? সাদাফ গোপনে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললো। ক্ষুধায় অনেকটাই নেতিয়ে পড়েছে শুভ্রতা। বাসে থাকা লাস্ট একঘন্টা সময়টুকুতে শুভ্রতা খানিক অসুস্থ হয়ে পড়েছিলো। তাছাড়া সাদাফ নিজেও বেশ ক্ষুধার্ত। শুভ্রতা আর মেমপ্রেকে নিয়ে থানচি বাজারের একটি খাবার দোকানে ঢুকলো সাদাফ। সেখানে গরুর মাংস, সাঙ্গু নদীর পাবদা মাছ আর সাদা ভাত পাওয়া যায়। মেমপ্রে আর সাদাফ পেট পুড়ে খেলেও শুভ্রতা কাছে সবই বিষের মতো লাগলো। খাবার মুখে দিতেই গা গুলিয়ে আসতে লাগলো তার। থানচি বাজার থেকে শুভ্রতার জন্য ট্রেকিং শু, শুকনো খাবার আর কিছু প্রয়োজনীয় জিনিস কিনে নিয়ে রেস্ট হাউজ খুঁজতে ব্যস্ত হয়ে পড়লো তারা। প্রায় এক ঘন্টার খুঁজাখুঁজির পর শুভ্রতাকে নিয়ে থাকার মতো রেস্টহাউজ সন্ধান পাওয়া গেলো। দুটো রুম ভাড়া নিয়ে একটিতে শুভ্রতা আর অন্যটিতে মেমপ্রে আর সাদাফের থাকার ব্যবস্থা হলো। যার যার রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়েই বিছানা নিলো সবাই। শরীরটা অত্যন্ত ক্লান্ত লাগছে শুভ্রতার। এই বাস জার্নিটা কেন জানি একদমই নিতে পারে না সে। সাদাফ বিছানায় গা এলালেও তেমন একটা শান্তি পেলো না। শুভ্রতা যে তখন কিছুই খেতে পায় নি তা বেশ বুঝতে পেরেছে সে। শুভ্রতার আবারও ক্ষুধা লেগেছে কি না কে জানে? ক্লান্ত শরীরটাকে বিছানা থেকে টেনে তুলে, গায়ে শার্ট চড়িয়ে আবারও থানচি বাজারের দিকে রওনা দিলো সে। বাজার থেকে খাবার এনে শুভ্রতার দরজার সামনে দাঁড়াতেই একরাশ দ্বিধা আকঁড়ে ধরলো তাকে। শুভ্রতা যদি ঘুমিয়ে থাকে? এই অসময়ে কাঁচা ঘুমটা ভাঙা কি ঠিক হবে সাদাফের? বেশ কয়েকবার দু’মনা করেও দরজায় কড়া নাড়লো সাদাফ। তিনবার কড়া নাড়ার পরও যখন কোনো সাড়া পাওয়া গেলো না তখন ফেরার জন্য পা বাড়ালো সাদাফ। ঠিক তখনই “খট” করে শব্দ হলো দরজায়। সাদাফ দু’পা পিছিয়ে দরজার দিকে তাকাতেই আলুথালু বেশী শুভ্রতাকে চোখে পড়লো তার। একটা কালো ফতুয়া আর প্লাজু পড়ে আছে শুভ্রতা। হালকা ভেজা চুলগুলো এলোমেলো হয়ে আছে পুরো মাথা জুড়ে। নাকের পাশে তেলতেলে প্রলেপ পড়েছে। ঘুমের কারণে ঠোঁট আর চোখ দুটো খানিকটা ফুলে উঠেছে। এই অবস্থাতেও তাকে অসম্ভব রকম সুন্দর লাগছে সাদাফের কাছে। শুভ্রতার এই ঘুমন্ত মুখটাই যেন চম্বুকের মতো আকর্ষণ করছে তাকে। সাদাফ যে ধীরে ধীরে শুভ্রতার ভয়ানক প্রেমে জড়িয়ে পড়ছে তা তার এই কারণে অকারণে অপ্রতিরোধ্য আকর্ষনেই বুঝে যাচ্ছে সে। সাদাফ গোপন দীর্ঘশ্বাস ফেলে সচেতন চোখে তাকালো। শুভ্রতা ঘুমুঘুমু মিষ্টি গলায় বললো,

—” আপনি? কিছু দরকার?”

শুভ্রতার এই ঘুমুঘুমু কন্ঠ শুনে আবারও একদফা ধাক্কা খেলো সাদাফ। নিজেকে সামলে নিয়ে বললো,

—” তখন তো খেতে পারেন নি। তাই খাবার নিয়ে এলাম। কাল প্রচুর হাঁটতে হবে। দয়া করে খাবারটা খেয়ে নিবেন। আর সাথে যে মেডিসিনগুলো রাখা আছে ওগুলোও খেয়ে নিবেন। কাল সকাল ছয়টার দিকে বেরুচ্ছি আমরা। ওকে?”

শুভ্রতা চোখ পিটপিট করে তাকিয়ে বাচ্চাদের মতো মাথা নাড়লো। মুহূর্তেই ভ্রু কুঁচকে এলো সাদাফের। শুভ্রতার মাথা দোলানো দেখে শুভ্রতার গাল টেনে দেওয়ার মতো অবিশ্বাস্যকর চিন্তা মাথায় আসছে তার। সাদাফ খাবারের প্যাকেটটা দ্রুত শুভ্রতার হাতে ধরিয়ে দিয়ে নিজের ঘরে ফিরে এলো। এমন অদ্ভুত অদ্ভুত চিন্তায় দিনকে দিন কেমন অতিষ্ঠ হয়ে উঠছে সে। সবকিছু কেমন যেন গোলমেলে আর উল্টো হচ্ছে। শুভ্রতাকে না ভাবতে চাইলেও আরো বেশি করে ভাবছে। শুভ্রতার কাছে না আসতে চাইলেও আরো কাছাকাছি আসছে। সাদাফের মনে হচ্ছে , কোনো এক অদৃশ্য শক্তি যেন নিজের সর্বস্ব দিয়ে শুভ্রতার দিকে ঠেলে দিচ্ছে তাকে। শুভ্রতার মায়ায় জড়াতে বাধ্য করছে। যে মেয়েটাকে প্রথম দেখাই কোনো অনুভূতিই জাগে নি সেই মেয়েটিকেই দিনকে দিন অসম্ভব রূপবতী মনে হচ্ছে। তবে কি এটা প্রকৃতির কোনো ষড়যন্ত্র?

_________________

গভীর ঘুমের মাঝেও হালকা মৃদু ডাক কানে আসছে শুভ্রতার। মনে হচ্ছে কেউ তাকে ডাকছে। ডাকতে ডাকতে ক্লান্ত হয়ে আবারও নতুন উদ্যমে ডেকে চলেছে। আচ্ছা? শুভ্রতা কি স্বপ্ন দেখছে? ঘুমের মাঝেই এসব আকাশ-পাতাল চিন্তা করে চোখ মেলে তাকালো শুভ্রতা। হঠাৎ ঘুম ভেঙে নিজের অবস্থানটা ঠিক বুঝতে পারলো না সে। রুমের ছাদ, দেয়াল, বিছানা সবই যেন অপরিচিত। শুভ্রতা কপাল কুঁচকে উঠে বসলো। দরজার বাইরে করাঘাতের সাথে সাথে সাদাফের কন্ঠ কানে আসতেই নিজের অবস্থানটা চট করে মাথায় খেলে গেলো তার। এটা তো রেস্টহাউজের রুম। শুভ্রতা দ্রুত পায়ে বিছানা থেকে নেমে দরজা খুললো। সাদাফ ক্লান্ত ভঙ্গিতে তাকিয়ে বললো,

—” থেংক গড দরজাটা খুলেছেন। প্রায় আধাঘন্টা ধরে ডাকছি। কারো ঘুম এতোটা গভীর হতে পারে তা আমার চিন্তারও বাইরে ছিলো। আমি আরো ভাবছিলাম, কি না কি হয়ে গিয়েছে আপনার।”

শুভ্রতা অপ্রস্তুত ভঙ্গিতে হাসলো। মুখ কাঁচুমাচু করে বললো,

—” সরি! আসলে কাল একটু টায়ার্ড ছিলাম তো তাই।”

—” হুম। বুঝতে পারছি। জলদি তৈরি হয়ে নিন। প্রায় সাড়ে ছয়টা বাজতে চললো। শুকনো খাবার খেয়েই রওনা হতে হবে আমাদের। রাতে যে বৃষ্টি হলো এরপর পাহাড়ের গা যে কতোটা পিচ্ছিল হতে পারে আপনি কল্পনাও করতে পারবেন না। আমি আর মেমপ্রে দু’জনেই অভ্যস্ত কিন্তু আপনার জন্য সমস্যা হয়ে যাবে। ধীরে ধীরে এগোতে হবে বলে সময়ও বেশি লাগবে। সো, তাড়াতাড়ি তৈরি হোন।”

শুভ্রতা অবাক হয়ে বললো,

—” রাতে বৃষ্টি কখন হলো?”

সাদাফ হেসে ফেলে বললো,

—” আপনি তো সন্ধ্যা থেকেই ঘুমোচ্ছেন। বৃষ্টির সন্ধান কোথায় পাবেন? এতো ঘুমোন কি করে বলুন তো?”

শুভ্রতা লাজুক হেসে মাথাটা হালকা নিচু করে আবারও সাদাফের দিকে তাকালো। সাথে সাথেই চোখ দুটো যেন আটকে গেলো তার। হালকা নীল শার্টে খুবই স্নিগ্ধ লাগছে সাদাফকে। হয়তো সকালের মলিন আলোর জন্যই এই স্নিগ্ধতা। তবুও কেন জানি সাদাফ থেকে চোখ সরাতে পারলো না শুভ্রতা। সাদাফের বলা সব কথায় তার কানের আশপাশ থেকেই ঘুরে যেতে লাগলো। ব্রেন পর্যন্ত পৌঁছালো না। এক পর্যায়ে সাদাফের তীক্ষ্ণ ডাকে ঘোর থেকে বেরিয়ে সচেতন চোখে তাকালো সে। সাদাফ কপাল কুঁচকে বললো,

—” আপনি ঠিক আছেন শুভ্রতা? কি দেখছেন?”

শুভ্রতা একটা ঢোক গিললো। নিজের এমন নির্লজ্জ কাজে লজ্জায় লাল হয়ে উঠলো সে। সাদাফের কথার কোনো উত্তর না দিয়েই ঠাস করে দরজাটা লাগিয়ে দিলো সে। সাদাফ শুভ্রতার এমন বিহেভিয়ারে বেশ অবাকই হলো। কয়েক সেকেন্ড চুপচাপ দাঁড়িয়ে থেকে নিজের রুমের দিকে পা বাড়ালো। দরজা লাগিয়েই সারা রুমময় অস্থিরতা নিয়ে পায়চারী করতে লাগলো শুভ্রতা। কিছুদিন যাবৎ নিজের সব কাজকর্মেই ভয়ানকরকম রেগে যাচ্ছে সে। সাদাফের দিকে এমন বেহায়ার মতো তাকিয়ে থাকা নিয়েও ভীষণ রাগ লাগছে তার। কি দরকার ছিলো ওভাবে তাকিয়ে থাকার? সাদাফ নিশ্চয় খুব বাজে মেয়ে ভাবছে তাকে। আর তাকিয়ে যখন ফেলেছিলোই তখন যুক্তিসংগত কিছু না বলে দরজাটা কেন লাগিয়ে দিতে হলো? এখন নিশ্চয় বাজে মেয়ের সাথে সাথে বেয়াদবও ভাবা হচ্ছে তাকে। শুভ্রতার নিজের মাথার চুল নিজেরই টেনে ছিঁড়ে ফেলতে ইচ্ছে করছে। পা ছড়িয়ে কাঁদতে ইচ্ছে করছে। সেই প্রথম থেকে কারণে অকারণে সাদাফের সামনেই হেনস্তা হতে হচ্ছে তাকে। সাদাফ নিশ্চয় তাকে আত্মমর্যাদাহীন মেয়ে ভাবছে। কথাগুলো ভাবতেই মনটা বিষিয়ে এলো শুভ্রতার। অদ্ভুত এক অনুভূতি, আত্মসম্মানবোধ এসবের টানাপোড়েনে মন নামক বস্তুটা যেন রক্তাক্ত হয়ে চলেছে তার। ভীষণ ভীষণ রাগ লাগছে আবার কষ্টও হচ্ছে। সাদাফের কলার ধরে নিজের খুব কাছে টেনে এনে বলতে ইচ্ছে করছে, ” কেন এতো জ্বালাচ্ছেন আমায়? আমি যে জ্বলে পুড়ে যাচ্ছি সেদিকে একটাবারও দৃষ্টি পড়ছে না কেন আপনার? কেন?”

#চলবে….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here