আরশিযুগল প্রেম❤পর্ব- ৩১

আরশিযুগল প্রেম❤পর্ব- ৩১
# লেখিকাঃ নৌশিন আহমেদ রোদেলা ❤

________________

বছর ঘুরে আবারও এসেছে বর্ষাকাল। রাত-দিন অন্ধকার করে বৃষ্টি হচ্ছে। এয়ারপোর্টের লনে দাঁড়িয়ে সেদিকেই তাকিয়ে আছে শুভ্রতা। এমন একটি বর্ষার রাতেই সাদাফের সাথে দেখা হয়েছিল তার। খুব সাধারণ ছিল সেই সাক্ষাৎ। কিন্তু সময়ের পালা বদলে সাধারণ বিষয়টিই হয়ে উঠেছিল অসাধারণ এবং অদ্ভুত। কাঁচের দরজার বাইরের সেই ঢালা বর্ষণের প্রতিটি ফোঁটায় ফোঁটায় শুভ্রতা দেখতে পায়, বিগত একটি বছরের স্মৃতি। হাসি, কান্না আর হাজারও অনুভূতি। আকাশের করুণ গর্জন, রাস্তায় কাঁদা পানি সবই যেন গেয়ে চলেছে তাদের বিবাহিত জীবনের বছর পূর্তির গল্প। শুভ্রতা দীর্ঘশ্বাস ফেলে চোখ সরিয়ে নিল। আজ আনিমুল হকের হজ্জে যাওয়ার দিন। একটু আগেই ফ্লাইটে উঠেছেন আনিমুল হক। চারদিকের ভারী বর্ষণ যেন তারই বিদায়ের শোকে কাতর। শুভ্রতা এদিক ওদিক তাকাল। কিছুক্ষণ আগেও এয়ারপোর্টটা জনাকীর্ণ ছিল, এখন তা শান্ত। সবার চোখে-মুখেই কেমন একটা দুঃখ দুঃখ ভাব। ওয়েটিং রুমের পাশেই দাঁড়িয়ে ছিলেন শফিক সাহেব। শুভ্রতাকে তাকাতে দেখেই চওড়া হাসি হাসলেন তিনি। শুভ্রতার দিকে এগিয়ে এসে অপ্রস্তুত ভঙ্গিতে বললেন,

—-” বাবা এই ব্যাগটা ফেলে গেছে রে শুভি। আমার হাতেই ছিল। যাওয়ার সময় যে ট্রলিতে তুলে দিবো, সে খেয়াল ছিল না। কি সাংঘাতিক ব্যাপার বল তো? দিন দিন বুড়ো হয়ে যাচ্ছি রে।”

শফিক সাহেবের ডানহাতে কালো রঙের ছোট্ট একটি ব্যাগ। এই ব্যাগটিতে কুরআন, তসবি, জায়নামাজ এই জাতীয় জিনিসগুলো গুছিয়ে দিয়েছিলেন রাদিবা। আনিমুল হকের রোজ সকালে ঘন্টাখানেক কুরআন তিলওয়াত করার অভ্যাস। মাঝে মাঝে রাত জেগেও কুরআন তিলওয়াত করেন তিনি। তাই এই ব্যাগটা সবসময় তার সাথেই থাকে। আজ কি মনে করে ছোট ছেলেকে এই ব্যাগ বহনের দায়িত্ব দিয়েছিলেন তিনি। আর তাতেই বেঁধেছে বিপত্তি। শুভ্রতা হেসে বলল,

—-” দিন দিন মানুষ বুড়োই হয় চাচ্চু। দিন দিন কাউকে বাচ্চা হতে দেখেছো কখনও?”

শফিক সাহেব হাসলেন,

—-” বেশ লজিক্যাল কথা বলেছিস তো শুভি। তবে, Jules Renard বলেছিলেন, ‘ It’s not how old you are, it’s how you are old. ‘ সেই হিসেবে নিজেকে বৃদ্ধ হিসেবে মেনে নিতে একদমই রাজি নই আমি। ব্যাচেলার পুরুষরা সবসময়ই যুবক থাকে। তাদেরকে বুড়ো বলা চলে না। ‘চিরকুমার’ শব্দটা শুনিস নি? অনেকটা ওই টাইপ।”

শুভ্রতা আবারও হাসল। শফিক সাহেবের সাথে কথায় পেরে ওঠা তার কর্ম নয়। শুভ্রতার ধারণা শফিক সাহেব পৃথিবীর অসাধারণ মানুষগুলোর একজন। যার কাছে সব প্রশ্নেরই মজার মজার ব্যাখ্যা থাকে। তারসাথে থাকে অদ্ভুত সব তথ্য। শফিক সাহেব হাতের ব্যাগটা কাঁধে তুলে নিয়ে শুভ্রতার দিকে তাকালেন। ভারী চশমায় ঢাকা চোখদুটো তার চকচক করছে। তার মুখভঙ্গিই বলে দিচ্ছে, এই মুহূর্তে ব্যাচেলর পুরুষদের যুবক বলা উচিত নাকি অনুচিত তার ওপর ভিত্তি করে বিশাল ব্যাখ্যা দিতে চলেছেন তিনি। শুভ্রতা শফিক সাহেবের মনোভাবটা বুঝতে পেরে অসহায় দৃষ্টিতে তাকাল। প্রায় সাথে সাথেই পেছন থেকে ডেকে উঠলো শুভ্রব,

—-” ছোটাচ্চু? গাড়ি পেয়ে গিয়েছি , জলদি এসো। আরেকটু বৃষ্টি হলেই রাস্তায় পানি জমে বিশ্রী অবস্থা হবে।”

শফিক সাহেবের কপাল কুঁচকে এলো। এমন একটা সেনসেটিভ আলোচনার মাঝে শুভ্রবের কথা বলাটা একদমই পছন্দ হচ্ছে না তার। শফিক সাহেবকে চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে আবারও তাড়া দিল শুভ্রব। শুভ্রতা ঠোঁট চেপে হেসে বললো,

—-” চল চাচ্চু। দেরি হয়ে যাচ্ছে। ”

শফিক সাহেব হঠাৎই ভীষণ ব্যস্ততা নিয়ে বললেন,

—-” হ্যাঁ চল। গাড়িতে যেতে যেতে এই ব্যাপারে বিশদ ব্যাখ্যা দিবো তোকে।”

এয়ারপোর্টের ছাউনি থেকে গাড়িতে উঠতে উঠতেই অনেকটা ভিজে গিয়েছে শুভ্রতা। ওড়না, আর কাঁধের দিকটা ভিজে যাওয়ায় কেমন শীত শীত লাগছে । মাঝে মাঝেই কেঁপে উঠছে শরীর। দু’হাতে বাহু চেপে সিটে গা এলিয়ে আছে শুভ্রতা। চাচ্চুর ভয়ঙ্কর সব ব্যাখ্যা থেকে বাঁচতে বেশ কিছুক্ষণ ঘুমের ভাব ধরেও পড়েছিল সে। গাড়িটা ধানমন্ডি ঢুকে তাদের বাসার পথে নামতেই চোখ মেলে তাকিয়েছে শুভ্রতা। গাড়ির কাঁচ বেয়ে নেমে আসা বৃষ্টির পানি দেখতে খারাপ লাগছে না তার। এই দু’এক ঘন্টার বৃষ্টিতেই রাস্তায় হাঁটু সমান পানি হয়েছে। কিছু পথশিশু সেই পানিতেই ঝাঁপাঝাপি করছে। প্রত্যেকের মুখেই ঝুলে আছে সুখ সুখ হাসি। বাচ্চাদের বৃষ্টিবিলাস দেখতে দেখতেই এক জায়গায় চোখ আটকে গেলো শুভ্রতার। সামনের একটা দোকানেই পরিচিত কাউকে দেখতে পাচ্ছে সে। মুহূর্তেই তীক্ষ্ণ হয়ে এলো শুভ্রতার দৃষ্টি। পার্স থেকে ফোনটা বের করে জলদি ম্যাসেজ পাঠাল,

—-” তুমি ধানমন্ডি?”

ওপাশ থেকে তাৎক্ষনাৎ উত্তর এলো,

—-” হ্যাঁ। তোমাদের বাসা থেকে কিছু দূরে একটা দোকানে দাঁড়িয়ে আছি। তুমি কি বারান্দায় দাঁড়াবে?”

শুভ্রতা কোনোরকম চিন্তা না করেই উত্তর দিল,

—-” আমি আসছি।”

ফোনটা পার্সে ঢুকিয়ে কয়েকবার উদ্দেশ্যহীনভাবে এদিক ওদিক তাকাল শুভ্রতা। দ্রুত চিন্তা করতে চেষ্টা করছে সে। কিছুক্ষণ চুপচাপ বসে থাকার পর হুট করেই বলে উঠল,

—-” ভাইয়া? আমাকে এখানেই নামিয়ে দিয়ে যাস তো। আমি একটু পুষ্পিদের বাসায় যাবো। একটা নোট নেওয়ার ছিলো। খুব ইম্পোর্টেন্ট।”

—-” এই বৃষ্টির মাঝে? পাগল টাগল হয়েছিস নাকি?”

শুভ্রতা অধৈর্য গলায় বলল,

—-” আস্ত একটা পাগল আমার সামনে বসে থাকতে, আমার পাগল হওয়ার কি প্রয়োজন? বেশি ঢং না করে আমায় নামিয়ে দে প্লিজ। এখান থেকে রিক্সা করে চলে যাবো আমি।”

—-” এই বৃষ্টিতে রিক্সা কই পাবি? রাস্তায় কেমন পানি জমেছে দেখেছিস?”

—-” তুই যতটা ভাবছিস ততটাও বৃষ্টি হচ্ছে না ভাইয়া। আর একটু ভিজলে কিছু হয় না। পুষ্পির বাসায় গিয়ে চেঞ্জ করে নিলেই হবে। নামিয়ে দে না, প্লিজ।”

শুভ্রতাকে এই বৃষ্টিতে একা নামিয়ে দেওয়ার তিল পরিমান ইচ্ছে না থাকলেও চাচ্চুর সম্মতিতে নামিয়ে দিতে বাধ্য হলো শুভ্রব। নিজের হাতে থাকা ভেজা ছাতাটা শুভ্রতার হাতে দিয়ে চোখ রাঙিয়ে বলল,

—-” তোর জন্য যদি আম্মুর কাছে আমায় বকা শুনতে হয় তাহলে তুই শেষ!”

শুভ্রতা মুখ ভেঙিয়ে সরে দাঁড়াল। তাকে পাশ কাটিয়ে দ্রুত গতিতে এগিয়ে গেলো শুভ্রবদের নীল রঙা টেক্সি।

_____________________

ধানমন্ডীর একটি কনফেকশনারি শপের সামনে দাঁড়িয়ে আছে সাদাফ। শুভ্রতাকে বার বার কল দিয়েও পাওয়া যাচ্ছে না। ম্যাসেজের রিপ্লাইও দিচ্ছে না। আচ্ছা? মেয়েটা সত্যি সত্যিই এখানে চলে আসবে না তো? যদিও বৃষ্টিটা কমে এসেছে তবুও এমন একটা দিনে, বাসা থেকে কি বলে বের হবে মেয়েটা? সাদাফ চিন্তিত ভঙ্গিতে শুভ্রতার নাম্বারে ডায়াল করল। শুভ্রতার কলটা রিসিভ না হলেও স্বয়ং শুভ্রতা এসে দাঁড়াল তার সামনে। সাদাফ উদ্বিগ্ন গলায় বলল,

—-” কি দরকার ছিল আসার? আমিই যেতাম তোমার বাসার নিচে।”

শুভ্রতা জবাব না দিয়ে মিষ্টি হাসলো। ছাতা ভাঁজ করতে করতে বলল,

—-” ব্রাউন শার্টে ভীষণ সুন্দর লাগছে তোমায়।”

সাদাফ হাসল,

—-” তোমার কাছে আমায় সবসময়ই সুন্দর লাগে। আচ্ছা? ফ্রী তুমি? রাস্তার যা অবস্থা হাঁটা তো সম্ভব নয়। কোনো রেস্টুরেন্টে বসবে?”

—-” আমি তো অলওয়েজ ফ্রী কিন্তু তোমার অফিস?”

সাদাফ জবাব না দিয়ে শুভ্রতার ডানহাতটা চেপে ধরে কনফেকশনারি শপ থেকে বেরিয়ে এলো। কিছুক্ষণ পর নিজ থেকেই বলল,

—-” অফিস ভালো লাগছিলো না। তাই কয়েক ঘন্টার জন্য লিভ নিয়ে বেরিয়ে এসেছি।”

এটুকু বলে থামল সাদাফ। ফুটপাতের ওপর দাঁড়িয়ে রাস্তায় জমে থাকা পানির দিকে তাকাল,

—-” তোমাকে মনে পড়ছিল। এতবার ফোন দিলাম ধরলে না কেন?”

শুভ্রতা অপরাধী দৃষ্টিতে তাকাল। মৃদু গলায় বলল,

—-” এয়ারপোর্টে ছিলাম। আজ দাদুর ফ্লাইট ছিলো। এতো ভীরবাট্টায় ফোনের দিকে খেয়াল করা হয় নি।”

সাদাফ জবাব দিল না। এদিক-ওদিক তাকিয়ে কিছু একটা খুঁজছে সে। শুভ্রতা তার দৃষ্টি অনুসরণ করে সামনে তাকাল। কিছু দেখতে না পেয়ে ভ্রু কুঁচকে বলল,

—-” রিক্সা খুঁজছ?”

সাদাফ সামনে দৃষ্টি রেখেই বলল,

—-” উহুম। মানুষ খুঁজছি। আশেপাশে পথচারী নেই বললেই চলে।”

শুভ্রতা কপাল কুঁচকে বলল,

—-” মানে? মানু…”

শুভ্রতাকে কথা শেষ করতে না দিয়ে হুট করেই তাকে কোলে তুলে নিল সাদাফ। শুভ্রতা চমকে উঠে কলার খামচে ধরল। মৃদু আর্তনাদ করে বলল,

—-” পড়ে যাব। কি করছ? নামিয়ে দাও প্লিজ। কেউ দেখবে।”

সাদাফ ‘ডোন্ট কেয়ার’ ভাব নিয়ে বলল,

—-” কেউ দেখবে না। আশেপাশে মানুষ চোখে পড়ছে তোমার? পাঁচ/দশ মিনিট হাঁটলেই একটা রেস্টুরেন্ট। এইটুকু সময় তোমায় নিশ্চিন্তে কোলে নিয়ে হাঁটতে পারবো। তুমি তো খুবই হালকা। ভাত-টাত খাও না নাকি?”

কথাটা বলে বাচ্চাদের মতো হাওয়ায় ছুঁড়ে আবারও লুফে নিল সাদাফ। শুভ্রতা ভয়ে চাপা আর্তনাদ করে বলল,

—-” পাগল হয়ে গেছ নাকি আজ? পাঁচ/দশ মিনিটের রাস্তা হেঁটে যেতে পারব আমি। নামিয়ে দাও। একবার পা পিছলে পড়লে কি সাংঘাতিক ব্যাপার হবে ভেবে দেখেছ?”

সাদাফ শব্দ করে হাসল। হাসিমুখেই বলল,

—-” এই পানি পেরিয়ে যাবে কিভাবে? ড্রেস ভিজবে। এখন প্রেমিক হিসেবে আছি যত পার খাটিয়ে নাও। দু’মাস পড়ে পুরোদমে হাসবেন্ড হয়ে যাবো। তখন আর প্রেমিকপুরুষ সাজতে পারব না।”

শুভ্রতা মুচকি হেসে দু’হাতে সাদাফের গলা জড়িয়ে ধরল। সাদাফের চওড়া বুকে মাথা গুঁজে মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো। রাস্তার জমে থাকা পানিতে ঝপাঝপ শব্দ তুলে নিঃসংকোচে হাঁটতে লাগল সাদাফ। পানির শব্দ আর সাদাফের হৃদপিণ্ডের গর্জন দুয়ে মিলে এক সম্মোহনী সুরে গেঁথে গেল শুভ্রতার সারা সংসার।

ধানমন্ডির ৪ নং রোডের একটি রেস্টুরেন্টে বসে আছে সাদাফ-শুভ্রতা। তারা রেস্টুরেন্টে প্রবেশ মাত্রই শুরু হয়েছে ঢালা বর্ষণ। আরেকটু হলেই ভিজে চুপচুপে হত দু’জনে। সাদাফ শার্টের কলার ঝাড়তে ঝাড়তে মেন্যু কার্ডের দিকে ইশারা করে বলল,

—-” কি খাবে?”

শুভ্রতা চেয়ারে ঠেস দিয়ে বসে এদিক ওদিক তাকাল। সাদাফের দিকে এক নজর তাকিয়ে বলল,

—-” তোমার যা ইচ্ছে। ”

—-” প্রতিবার তো আমার ইচ্ছেতেই খাও। আজ বরং তোমার ইচ্ছেতে খাবো। তাছাড়া, আজ তুমি স্পেশাল গেস্ট।”

শুভ্রতা ভ্রু কুঁচকে তাকাল,

—-” স্পেশাল গেস্ট মানে? তোমার মাথায় কি চলছে বল তো?”

সাদাফ মৃদু হাসল। মেন্যু কার্ডটা ঠেলে দিয়ে বলল,

—-” অর্ডার দাও।”

শুভ্রতা জেদ ধরে বলল,

—-” উহুম। আগে বল কাহিনিটা কি?”

—-” কোনো কাহিনি নেই। অর্ডার কর।”

শুভ্রতা মুখ ফুলিয়ে বলল,

—-” কাহিনী তো কিছু একটা আছেই। তোমার চোখ-মুখ দেখেই বুঝা যাচ্ছে। তুমি ব্যাপারটা খোলাসা না করলে একটা দানাও পেটে ঢুকবে না আমার, ট্রাস্ট মি!”

সাদাফ হাসলো। হাস্যোজ্জল কন্ঠে বলল,

—-” এতো ধৈর্য্যহারা কেন বল তো তুমি?”

—-” আমি ধৈর্যহারায়। তোমার মতো কৌতুহলহীন ভাবে বসে থাকতে পারি না আমি। এবার তো বল?”

—-” বলছি তার আগে মেন্যু থেকে কিছু একটা অর্ডার দাও। যত তাড়াতাড়ি অর্ডার দেবে তত তাড়াতাড়ি জানতে পারবে।”

শুভ্রতা আগ্রহ নিয়ে সাদাফের দিকে তাকাল। সাদাফের কথা অনুযায়ী চটজলদি অর্ডারও দিয়ে দিল। চোখদুটো উত্তেজনায় চিকচিক করছে তার। চোখ-মুখে উত্তেজনা যেন ঠিকরে পড়ছে। বাচ্চাদের মতো আগ্রহী দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে সাদাফের কথাগুলো শোনার জন্য। কিন্তু সাদাফ কিছু বলল না। হঠাৎ করেই ফোন নিয়ে ভীষণ ব্যস্ত হয়ে পড়ল সে। শুভ্রতা কিছু বলবে , কিছু বলবে করতে করতেই টেবিলে খাবার দিয়ে গেল ওয়েটার। শুভ্রতা বিরক্ত চোখে তাকাতেই টেবিলের মাঝ বরাবর ছোট্ট একটা পেস্ট্রি কেক চোখে পড়ল। কেকটা দেখে যতটা না অবাক হলো তার থেকেও বেশি অবাক হল কেকের ওপর ছোট্ট লেখাটা দেখে। শুভ্রতা চোখ বড় বড় করে সাদাফের দিকে তাকাল। সাদাফ ফোনটা পাশে রেখে মৃদু হাসল। টেবিলের ওপর খানিকটা ঝুঁকে গিয়ে ফিসফিসিয়ে বলল,

—-” হ্যাপি এনিভার্সারি শুভ্রাণী।”

শুভ্রতা ডানহাতে মুখ চেপে অবিশ্বাস্য দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো। বিরবির করে বলল,

—-” তোমার মনে ছিল?”

শুভ্রতার বামহাতটা নিজের হাতে নিয়ে হাতের কব্জিতে জড়িয়ে দিল একটি লকেট। নরম গলায় বলল,

—-” এনিভার্সারি গিফ্ট। গলায় পরিয়ে দিতে পারলাম না বলে সরি। নিজে নিজেই পরে নিও।”

শুভ্রতা টলমলে চোখে হাসল। সাথে সাথেই হেসে উঠল চোখের ভেতরকার আস্ত এক সমুদ্র।

—-” মা তোমাকে দেখতে চায়। পৃথা তো রীতিমতো লাফাচ্ছে। তোমার কোনো সমস্যা না থাকলে দেখাই?”

শুভ্রতা অবাক হয়ে বলল,

—-” কিভাবে? ছবিতে?”

—-” উহুম।”

শুভ্রতা ভ্রু কুঁচকাল। সচেতন চোখে চারপাশটা দেখে নিয়ে বলল,

—-” তাহলে কি সরাসরি? কোনভাবে উনারা কি এই রেস্টুরেন্টে আছেন?”

সাদাফ হেসে ফেলল। উঠে গিয়ে শুভ্রতার পাশের চেয়ারে বসল। ফোনটা সামনে ধরে বলল,

—-” এইভাবে।”

সাদাফের কথা শেষ না হতেই স্ক্রিনে মিষ্টি একটি চেহারা ভেসে উঠল। মেয়েটা উচ্ছ্বাসিত কন্ঠে বলল,

—-” মাশাআল্লাহ ভাবি। তুমি দেখতে কি মিষ্টি! ভাইয়া? একদম ফার্স্টক্লাস চয়েজ তোর। ভাবি? আমি পৃথা। তোমার একমাত্র ননদ। আমি তোমায় তুমি করে বলছি বলে রাগ করো নি তো? আমি বাকি দুই ভাবি কেও তুমি করেই বলি।”

শুভ্রতা কিছু বলবে তার আগেই বলে উঠলো পৃথা,

—-” দাঁড়াও মাকে ডাকছি আমি। মা তো তোমায় দেখে একদম চমকে যাবে।”

শুভ্রতা ছোট্ট নিঃশ্বাস ফেলল। পৃথা যে খুবই মিশুক এবং চঞ্চল মেয়ে তা এই কয়েক সেকেন্ডের কথাতেই বুঝে গিয়েছে সে। পাশ থেকে ফিসফিস করে বলে উঠল সাদাফ,

—-” বাসায় আমাদের বিয়ের কথাটা বলিনি শুভ্রা। ওরা বিষয়টা পজিটিভলি নিবে না বলেই বলি নি। তারা জানে তুমি আমার গার্লফ্রেন্ড। মনের ভুলেও বিয়ের কথাটা বলে ফেল না, ওকে?”

শুভ্রতা মাথা নাড়ল। হঠাৎ করেই খেয়াল করল ভীষণ নার্ভাস লাগছে তার। গলাটাও শুকিয়ে এসেছে। আচ্ছা? সাদাফের মায়ের শুভ্রতাকে পছন্দ হবে তো? উনার সামনে উল্টাপাল্টা কিছু করে ফেলবে না তো? শুভ্রতার এবার ভয়ও লাগছে, ভীষণ ভয়!

#চলবে….

[ আমার লেখায় জানায়, অজানায় অনেক বানান ভুল হয়। অনেক সময় চোখে পড়ে না। অনেক সময় বুঝতে পারি না। তাই পাঠকদের কাছে অনুরোধ আমার ভুলগুলো ধরিয়ে দিয়ে আমাকে সুধরে দিবেন প্লিজ। কিছুদিন যাবৎ রি-চেইক করা হচ্ছে না। আসলে ‘এক মুঠো রোদ’ টা এমনভাবে মাথায় ঘুরছে যে এদিকে মন আসছে না। পাঠকদের কাছে সহযোগীতা এবং প্রাসঙ্গিক মন্তব্য আশা করছি। ভালোবাসা ❤ ]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here