আরশিযুগল প্রেম পর্ব – ৫১

আরশিযুগল প্রেম পর্ব – ৫১
# লেখনীতে — নৌশিন আহমেদ রোদেলা

আকাশে মেঘ নেই। আকাশ ভর্তি ছড়ানো ছিটানো তারাগুলো মিটমিট করে জ্বলছে। শিউলি ফুলের তীব্র সুগন্ধে চারপাশটা মৌ মৌ করছে। দক্ষিণের ব্যালকণিতে দাঁড়িয়ে থেকে শুভ্রতার হঠাৎ করেই মনে পড়ল, তাদের বিল্ডিংয়ের আশেপাশে কোথাও শিউলি গাছ নেই। রাস্তার ধারে মাঝারি আকারের কাঠগোলাপ গাছ আছে। সময় করে মাথাভর্তি ফুলও ফুটে। কিন্তু কাঠগোলাপের গন্ধ এমন নয়, অন্য রকম। শুভ্রতা শেষ কবে শিউলি গাছ দেখেছিল মনে করার চেষ্টা করল, মনে পড়ছে না। ছোট্ট বেলায় প্রায় প্রতিবছরই কিশোরগঞ্জের বাড়িটিতে বেড়াতে যেত শুভ্রতা। শরৎ এর শেষ দিকে, হিম ধরা সকালটাতে উঠোন ভরে শিউলি ফুল ঝড়ত। তখন উঠোনটাকে মনে হতো, বিশাল বড় গলিচা। শুভ্রময় গালিচা । গায়ে-মাথায় লাল টকটকে সুয়েটার আর টুপি জড়িয়ে শুভ্রতা টুপ করে গিয়ে দাঁড়াত সফেদ গালিচার ওপর। নরম, তুলতুলে ফুলের ওপর খালি পায়ে হাঁটতে কি ভীষণ ভালো লাগত শুভ্রতার! মাকে তেড়ে আসতে দেখেই দৌড়ে গিয়ে লুকাতো বিশাল শিউলি গাছটির আড়ালে। একা একা গাছটির সাথে কতশত কথা বলত সে। সেসময় গাছটির একটা নামও দিয়েছিল শুভ্রতা। এখন আর মনে নেই। মানুষ অতিব বুদ্ধিমান জীব। অপ্রয়োজনীয় বস্তু তারা মনে রাখে না। প্রয়োজন ফুরানোর সাথে সাথেই মস্তিষ্ক নিজ দায়িত্বে মুছে ফেলে অপ্রয়োজনীয় মানুষ আর স্মৃতিগুলোকে। ছোট্ট বেলা যে গাছটা শুভ্রতার খেলার সাথী ছিল সেই গাছটা আদৌ উঠোনের কোণায় আছে কিনা খেয়াল নেই শুভ্রতার। আচ্ছা! গাছটি কি কেটে ফেলা হয়েছে? শুভ্রতার কপালে হালকা ভাঁজ পড়ল। কিছু একটা মনে করার চেষ্টা করছে সে। মানুষ বড় অদ্ভূত, বড় হওয়ার দৌঁড়ঝাপে এক সময়কার ভয়াবহ প্রিয় বস্তুটাকেও চোখের পলকে ভুলে যায় তারা। এক সময়কার হাসির কারণগুলোকে অপ্রয়োজনীয় ডাস্টবিনে ফেলে রেখে, কোনো এক কালে ছোট্ট একটা না পাওয়ার দীর্ঘশ্বাসকে বয়ে বেড়ায় সারা জীবনভর। দুঃখ দুঃখ মুখ করে ভাবে, এ জীবনে কিছু পাওয়া হলো না। কিচ্ছুটি না। মানুষ খুবই দুঃখী প্রাণী। এরা নিজেদের দুঃখী ভাবতেই বেশি আনন্দিত হয়। তাদের এই দুঃখ দুঃখভাব মৃত্যুর আগমুহূর্ত পর্যন্ত বিশ্বস্ত সঙ্গীর মত থম ধরে বসে থাকে। কাছ ছাড়া হয় না। ঘরের ভেতর থেকে আসা হাসির শব্দে ভাবনায় ছেদ ঘটল শুভ্রতার। কপাল কুঁচকে আবারও সাদাফের নাম্বারে ডায়াল করল। তৃতীয়বারের মত রিং হয়ে কেটে গেল। রিসিভ হলো না। কয়েকসেকেন্ড পর সাদাফের নাম্বার থেকে ফোন আসতেই আনন্দে লাফিয়ে উঠল শুভ্রতা। খুশি হয়ে ফোনটা রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে গম্ভীর কন্ঠে বলে উঠল,

—-” হুম বলো।”

শুভ্রতা থতমত খেয়ে বলল,

—-” কি বলব?”

—-” সেটা তো তুমিই জানো।”

শুভ্রতা কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলল,

—-” আমাদের বিয়ের ডেইট পড়ে গিয়েছে, সামনের শুক্রবার।”

—-” ও আচ্ছা। ”

—-” শুধু ‘ও আচ্ছা’? তুমি খুশি হও নি?”

—-” খুশি হব না কেন?”

শুভ্রতা ক্ষুণ্ন গলায় বলল,

—-” তোমার কথা শুনে একটুও খুশি মনে হচ্ছে না তোমাকে। কন্ঠে কোনো উচ্ছ্বাস নেই। কেমন যেন খাপছাড়া।”

সাদাফ নিরস গলায় বলল,

—-” এতো উচ্ছ্বাসিত হওয়ার মতো তো কিছু দেখছি না। তুমি এখনও আমার বউ। পরের বার বিয়ে হলেও আমার বউই হবে। উচ্ছ্বসিত হওয়ার মত নতুন কিছু নেই।”

সাদাফের কথায় মুখ কালো করে ফেলল শুভ্রতা। কয়েক মুহূর্ত চুপ থেকে থমথমে গলায় বলল,

—-” আর কত রেগে থাকবে? সরি বলতে বলতে বুড়ি হয়ে যাচ্ছি। তোমার থেকে এমন ব্যবহার আর ভালো লাগছে না আমার।”

—-” তোমার ব্যবহারটা আমার কাছে এর থেকেও দমবন্ধকর লেগেছিল শুভ্রা। তুমি যা করেছ, তাতে এটা কোনো শাস্তিই না।”

শুভ্রতা চুপ করে রইল। একটা মানুষ এতটা কঠিন কি করে হতে পারে, বুঝতে পারছে না শুভ্রতা। অর্পনদের জোরদাবি বিয়ে উপলক্ষে দু’হাত ভরে শপিং করবে তারা। আর তাদের বিল মেটাবে শুভ্রতার বর অর্থাৎ সাদাফ। শুধুমাত্র এই কথাটা জানাতেই ফোন করেছিল শুভ্রতা কিন্তু মহাশয় যে হারে মুখ ফুলিয়ে আছে তাতে করে কথা বলতেই ভয় লাগছে শুভ্রতার। শুভ্রতাকে চুপ থাকতে দেখে কথা বলল সাদাফ,

—-” কথা শেষ? রেখে দেব?”

শুভ্রতা কিছু বলবে তার আগেই ঝড়ের বেগে ব্যালকণিতে এসে দাঁড়াল অর্পণ। শুভ্রতার থেকে ফোনটা ছিনিয়ে নিয়ে বলল,

—-” বহুত প্রেমকথন চলছে এখন শালীকথন চলবে। বাকি আলাপ বাসর ঘরে করিস যা।”

শুভ্রতা হাত বাড়িয়ে ফোন নেওয়ার চেষ্টা করতেই দু’পা পিছিয়ে হাত উঁচু করল অর্পণ। ততক্ষণে ব্যালকণির দরজায় এসে দাঁড়িয়েছে পুষ্পি-প্রেমা। অর্পণ পুষ্পির দিকে ফোনটা ছুঁড়ে দিয়ে দাঁত কেলিয়ে হাসল। শুভ্রতা পুষ্পির দিকে ফিরে তাকাতেই ফোনটা আবারও অর্পনের হাতে গিয়ে পড়ল। অর্পন ফোনটা কানে নিয়ে গদগদ গলায় বলল,

—-” ভাইয়া লাইনে আছেন?”

—-” মনে হচ্ছে আছি।”

অর্পন দাঁত কেলিয়ে বলল,

—-” আপনার বউ কিন্তু এখন আমাদের জিম্মায় ভাইয়া। আর আমরা খুবই মারাত্মক টাইপের শালীকা। প্রয়োজনবোধে আপনার বউকে সিন থেকে আউট করেও দিতে পারি। অসম্ভব কিছু না।”

সাদাফ হাসল। বলল,

—-” তার মুক্তিপণ হিসেবে শালীকাদের কি চাই?”

—-” ট্রিট। শপিং ট্রিট।”

—-” একসপ্তাহ আগে আমায় খুবই ভয়াবহ একটা খবর দিয়েছ তুমি অর্পি। সেই ভয়াবহ খবর শুনে অলমোস্ট হার্ট এট্যাক হয়ে যাচ্ছিল আমার। সো ট্রিট ফ্রিট হচ্ছে না।”

অর্পণ গলার স্বর নিচু করে বলল,

—-” ওকে ফাইন। আরেকটা ভয়াবহ খবর দিয়ে বিষয়টাকে সুদ বুদ করে দিচ্ছি। যদিও শুভি বিষয়টাকে চেপে যাওয়ার চেষ্টা করছিল কিন্তু আমাদের সাথে তো আর চাপাচাপি চলে না। শুভি যদিও বলবে আপনাকে তবে আমি বললেও ক্ষতি নেই। আমরা খালামনি হতে চলেছি ভাইয়া! বিয়ের আগেই দারুণ একটা নিউজ পেয়ে আমরা সবাই ভীষণভাবে চমকিত। ”

কথাটা বলে হাসল অর্পন। সাদাফ বিস্ময়ে পাথর হয়ে বসে রইল। শুভ্রতা চোখ বড় বড় করে বলল,

—-” ছি! কি বলছিস এসব?”

শুভ্রতার কথায় পাত্তা না দিয়ে আত্মবিশ্বাসী গলায় বলে উঠল অর্পন,

—-” ভাইয়া? এবারও ট্রিট না দিলে বেবি কিন্তু নানুবাড়ির নেউটা হয়ে যাবে বলে দিলাম।”

সাদাফ হেসে ফেলল। বলল,

—-” তোমরা সত্যিই সাংঘাতিক। একটা ট্রিটের জন্য অতদুর পর্যন্ত চলে গেলে?”

—-” অতদূর কই ভাইয়া? আজ বাদে কাল এই নিউজটা তো পাবেনই। আমি নাহয় একটু আগেই দিয়ে দিলাম, এতটুকুই। এতো সুন্দর একটা নিউজের জন্য কি আমরা ডাবল ট্রিট ডিজার্ভ করি না?”

—-” জ্বি অবশ্যই। কোথায় শপিং করতে চান তা আপনার ফ্রেন্ডকে জানিয়ে দেন। মি এন্ড মাই ক্রেডিট কার্ড উইল বি দেয়ার।”

সাদাফের কথায় বিকট গলায় আনন্দ ধ্বনি করে উঠল অর্পণ। সাদাফ চোখ-মুখ কুঁচকে ফোনটা কান থেকে খানিকটা দূরে সরিয়ে নিলো। ফোনটা আবারও শুভ্রতার হাতে ধরিয়ে দিয়ে হৈহৈ করে রুমের ভেতর ঢুকে গেল অর্পণ-পুষ্পি। শুভ্রতা সতর্ক গলায় বলল,

—-” এই তুমি রাজি হয়ে গিয়েছ? তোমার ধারণাও নেই এগুলো কি পরিমাণ বিচ্ছু। তোমাকে একদম ফকির বানিয়ে ছাড়বে, দেখো।”

সাদাফ হাসল। কৌতুক করে বলল,

—-” বানাক ফকির। এত সুন্দর একটা নিউজ দেওয়ার পরও ট্রিট না দিলে চলে?”

শুভ্রতা ভ্রু কুঁচকে বলল,

—-” কোন নিউজ?”

—-” এইযে, তারা খালামণি হতে চলেছে।”

শুভ্রতা লাল হল। কন্ঠে লাজুকতা ঢেলে বলল,

—-” ধুর! অর্পণের যতসব বাজে কথা।”

সাদাফ হেসে বলল,

—-” বাজে কথা কেন হবে? অসম্ভব তো ছিল না। এখন মনে হচ্ছে, নিউজটা সত্যি হলে তেমন একটা খারাপ হতো না।”

_____________________

ধানমন্ডির জিগাতলায় সিমান্ত স্কয়ারের সিক্সথ ফ্লোরে দাঁড়িয়ে আছে পুষ্পি-অর্পন। সাদাফ, শুভ্রতা,প্রেমা, পৃথা সবাই রুফটপে ফুড কোর্টে অপেক্ষা করছে। কেনাকেনা শুরুর আগে পেটপুরে খেয়ে নিতে চায় পৃথা। কোচিং থেকে সোজা এখানে আসায় খাওয়া-দাওয়া কিছু হয় নি তার। খাওয়া-দাওয়ার মাঝপথেই কোনো এক বিশেষ দরকারে নিচে নামতে হয়েছিল পুষ্পির। আর তার সঙ্গী হিসেবে ছিল অর্পন। পুষ্পির জন্য ফ্রীতে পাওয়া ট্রিটটা ভেস্তে যাওয়াশ অর্পণের মুখটা ফাঁটা বেলুনের মত চুপসে আছে। বিরবির করে পুষ্পিকে যথেষ্ট গালিও দিয়েছে। অর্পণকে রাগে ফুঁসতে দেখে হেসে ফেলল পুষ্পি। অর্পণের ডানবাহু জড়িয়ে ধরে বলল,

—-” ওমন করছিস কেন? এসব মেয়েলি জিনিস কি সাদাফ ভাইয়ের সামনে কেনা যেত?”

অর্পণ মুখ গুজ করে বলল,

—-” তাই বলে খাবারটা শেষ করে আসা যেত না?”

—-” না, যেত না। তাছাড়া, তুই এত সেন্টি খাচ্ছিস কেন বল তো? বাসা থেকে বের হওয়ার আগেও তো এত্তোগুলো ঠুসে এলি। এভাবে খেলে দুইদিন পর বেলুন হয়ে উড়ে যাবি। হালি হালি ক্রাশ খাওয়া আর হবে না। ”

অর্পন প্রতিত্তরে কিছু বলবে তার আগেই একটা জায়গায় চোখ আটকে গেল তার। কপাল কুঁচকে সরু চোখে তাকাল। ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটিয়ে হাত নাড়ল। পুষ্পি অর্পনের দৃষ্টি অনুসরণ করে সামনে তাকাতেই ফারদিনকে চোখে পড়ল। নেভিব্লু পলো শার্ট আর ডেনিম জিন্সে বেশ ভালো দেখাচ্ছে তাকে। ফারদিন খানিকটা এগিয়ে আসতেই খুশি খুশি গলায় প্রশ্ন ছুঁড়ল অর্পন,

—-” মাস্টার মশাই এখনও আমাদের শহরে? আমাদের শহরের প্রেমে টেমে পড়ে গিয়েছেন মনে হচ্ছে।”

ফারদিন হাসল। পুষ্পির হঠাৎ করেই মনে হলো, ফারদিন নামক লোকটির হাসিটা ভীষণ মিষ্টি। পুরুষ মানুষের হাসি সাধারণত মিষ্টি হয় না, সুন্দর হয়। ‘মিষ্টি’ শব্দটি পুরুষদের সাথে ঠিক যায় না। কিন্তু ফারদিনের হাসির সাথে এই শব্দটাই বেশি মানাচ্ছে। কেন মানাচ্ছে তা জানা নেই পুষ্পির। জানার প্রয়োজনও বিশেষ নেই। ফারদিন অসচেতন চোখে পুষ্পির দিকে তাকাল। আবারও দৃষ্টি ফিরিয়ে নিয়ে বলল,

—-” ‘শহরটা আপনাদের’ এই কথাটা ভুল মিস.অর্পি ফেরদৌসী। এটা আমারও শহর। চাকরীসূত্রেই ভিন শহরে বসবাস নয়ত আপনাকে ছেড়ে অন্য কোথাও যাই বলুন?”

অর্পন হাসল। পুষ্পি বিস্মিত চোখে তাকিয়ে আছে। অর্পনের থেকে কোন অংশেই কম নয় এই ভদ্রলোক। অর্পন হাসিমুখে বলল,

—-” ফ্লার্টিং! ইম্প্রেসিভ মাস্টার মশাই। আই এম ইম্প্রেসড। এই খুশিতে পুষ্পিকে আপনার নামে দান করে দেওয়া হলো। ঠুস করে বিয়ে করে নিন। বান্ধবীকে বিয়ে করলে মাঝে মাঝে আমার মুখদর্শনেরও সুযোগ পাবেন। এক ঢিলে দুই পাখি মেরে ফেলতে পারছেন, প্রস্তাবটা দারুণ না?”

কথাটা বলে চোখ টিপল অর্পন। ফারদিন ঠোঁট টিপে হাসলো। বলল,

—-” তার থেকে আপনাকে বিয়ে করে ফেললে ভালো হয় না? মুখদর্শনটা সারাদিনব্যাপী চলবে।”

অর্পণ কৃত্রিম বিরক্তি নিয়ে বলল,

—-” আরে ধুর! আমাকে বিয়ে করলে তো আর নম্র, ভদ্র, সুজলা-সুফলা বউ পাওয়া হবে না আপনার।”

অর্পনের কথায় চোখ-মুখ কুঁচকাল পুষ্পি। বিরবির করে বলল,

—-” সুজলা-সুফলা?”

অর্পণ আবারও বলল,

—-” আমাকে বিয়ে করলে তো আমাকে শালী হিসেবেও পাওয়া হচ্ছে না আপনার। সাদাফ ভাইয়ের অর্পি ফেরদৌসী নামে একটা শালী আছে আর আপনার নাই। ব্যাপারটা কেমন যেন হয়ে যায় না? তার থেকে এই পুষ্পিই বেটার অপশন। অযথা ঘাড়ে চেপে বসে আছে।”

ফারদিন হাসল। পুষ্পির রাগ এবার আকাশ ছুঁলো। অর্পণের হাতে শক্ত একটি চিমটি বসিয়ে দিয়ে রাগী চোখে তাকাল। দাঁতে দাঁত চেপে বলল,

—-” আরেকটা কথা বলবি তো খবর আছে। নির্লজ্জ মেয়ে একটা।”

পুষ্পির রাগকে পাত্তা না দিয়ে অর্পণ অত্যন্ত শান্ত গলায় বলল,

—-” ইশ! তোর বিয়ের কথা বলছি দেখছিস না? শুধু শুধু জ্বালাচ্ছিস কেন বল তো? ফারদিন সাহেব তোকেই বিয়ে করবে, নো চিন্তা।”

অর্পনের কথায় রাগে বাকরুদ্ধ হয়ে পড়ল পুষ্পি। কিছুক্ষণ লাল চোখে তাকিয়ে থেকে চোখ-মুখ ফুলিয়ে বলল,

—-” তুই আজ শ্যাষ। তোরে আমি রুফ টপ থেকে ধাক্কা দিয়ে খুন করব আজ। অসভ্য মেয়ে কোথাকার।”

কথাটা শেষ করে রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে রুফ টপের দিকে হাঁটা দিল পুষ্পি। অর্পন আর ফারদিন কয়েক সেকেন্ড সেদিকে তাকিয়ে থেকেই গলা মিলিয়ে হেসে উঠল।

শপিংমলের এক কোণায় দাঁড়িয়ে আছে সাদাফ। আপাতত আর কোণ কাজ নেই তার। শুভ্রতার বান্ধবী আর পৃথা হৈচৈ করে পোশাক পছন্দ করছে। মেয়েদের এই বিশাল গ্রুপে সাদাফের অসহায় চোখে তাকিয়ে থাকা ছাড়া অন্য কিছু করার নেই। তবে, সময়গুলো একদমই বৃথা যাচ্ছে না তার। চোখের সামনে ফোন নিয়ে আড়চোখে শুভ্রতাকে দেখে চলেছে। মেয়েটা খয়েরী রঙের সালোয়ার, কামিজ পড়েছে আজ। পিঠময় ছড়িয়ে আছে কালো রেশমী চুল। নাকের ডগায় জমে থাকা বিন্দু বিন্দু ঘামগুলো সুযোগ পেলেই নাক ফুলের সাথে
জ্বলজ্বল করে নিজের সৌন্দর্য প্রকাশ করছে। শুভ্রতার স্নিগ্ধ হাস্যময় মুখটি দেখেই সাদাফের বুক চিরে বয়ে যাচ্ছে তীব্র এক ভালো লাগা। চোখের তৃষ্ণা হয়ে উঠছে গাঢ় থেকে গাঢ়তর। প্রায় এক সপ্তাহ হতে চলেছে কাছ থেকে দেখে হয় না মেয়েটাকে। চমচমের মতো মিষ্টি গাল দুটোতে আলতো ছোঁয়ে দেওয়া হয় না। শুভ্রতা বারবারই ঘাড় ফিরিয়ে সাদাফের দিকে তাকাচ্ছিল। কালো রঙের টি-শার্টে ভীষণ স্নিগ্ধ লাগছে তাকে। শুভ্রতার ইচ্ছে করছে দৌঁড়ে গিয়ে সাদাফের পাশ ঘেঁষে দাঁড়াতে। কাছ থেকে সাদাফের গায়ের চমৎকার সেই ঘ্রাণটা নিতে। হাত বাড়িয়ে কপালে পড়ে থাকা চুলগুলোকে এলোমেলো করে দেওয়ার অদম্য ইচ্ছেও জাগছে তার। কিন্তু বান্ধবীদের জন্য সেই ইচ্ছেগুলোকে মনের মাঝেই পিষে মারতে হচ্ছে। তার বান্ধবীগুলো যে বজ্জাত দেখা যাবে, সাদাফের পাশাপাশি দাঁড়ালেই ভয়ানক কোনো কথা বলে ফেলবে। লজ্জার বাণে ক্ষতবিক্ষত করে ফেলবে তাকে। শুভ্রতা আবারও সাদাফের দিকে তাকাল। সাদাফ তাকাচ্ছে না। গভীর মনোযোগে ফোন ঘাটছে। মুহূর্তেই শুভ্রতার চোখে কৃষ্ণার্ভ ছায়া খেলে গেল। কি এত দেখছে সে ফোনে? একটা বার কি শুভ্রতার দিকে তাকানো যায় না? চোখ তুলে তাকে দেখা যায় না?

সারাদিন শপিংমলে হৈচৈ করে সন্ধ্যার দিকে বাসায় ফিরল তারা। বাসায় ফিরেই বিছানায় লম্বালম্বিভাবে শুয়ে পড়ল শুভ্রতা। চোখ-মুখে মন খারাপের কালো আভা। পাশে বসে থাকা বান্ধবীদের হৈ হুল্লোড়ে তার বিন্দুমাত্র আগ্রহ দেখা যাচ্ছে না। এক আষাঢ় কান্না ধলা পাকিয়ে গলার কাছে আটকে আছে। হাজার চেষ্টা করেও দুঃখ নামক কান্না গুলোকে গিলে ফেলা যাচ্ছে না। আহা! কি যন্ত্রণা।

#চলবে…..

[ বিঃদ্রঃ কেউ দয়া করে গল্পের জন্য অপেক্ষা করবেন না। প্রতিদিন ‘গল্প দিব না’ বলতে খারাপ লাগে। আমি যদি সময় পাই তাহলে গল্প দেব। নিজে থেকেই দেব। আপনারা অপেক্ষা করবেন না প্লিজ। আপনারা অপেক্ষা করছেন ভাবতেই খারাপ লাগে। ভালোবাসা রইল❤]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here