আরাধনায় বিহঙ্গ জীবন পর্ব ২১

0
389

আরাধনায় বিহঙ্গ জীবন
.
২১ পর্ব
.
চোখবুঁজে খানিক্ষণ দাঁড়িয়ে রইল অন্তরা।
পুরো শরীরজুড়ে কেমন ওম। কেউ যেন তাকে উষ্ণ ছোঁয়ায় পুর্ণাঙ্গ নারী করে তুলেছে। মননে, শরীরে নারী। কোনো এক দৈব ইশারায় কি-না কে জানে, তার কাছে মনে হলো বেলা অনেক হয়ে গেছে। মানব জীবন বড্ড ছোট। এখানে হেলায় বেলা কাটানোর সুযোগ খুবই কম। অন্তরার মনের এইসব তুমুল পরিবর্তন জিসান জানে না। অথচ সেদিন থেকেই সন্ধ্যায় অন্তরা জিসানের হয়ে গেছে। সর্বক্ষণ অপেক্ষায় থেকেছে মানুষটা আবার তার সঙ্গে কবে সাক্ষাৎ করবে। হাওর-বিল সাঁতরে এসে আবার বলবে, ‘অন্তরা, আমি তোমার মতামত জানতে এসেছি।’
অন্তরা চিঠির দিকে আবার চোখ বুলালো। তারপর অস্ফুটে বলল, ‘আমি পাগল না জিসান। সত্যিই পাগল ছাড়া কেউ তোমাকে প্রত্যাখ্যান করতে পারে না৷ যে মানুষটি জীবনের ঝুঁকি নিয়ে আমার জন্য আজও অপেক্ষায় আছে তাকে আমি প্রত্যাখ্যান করতে পারি না।’

অন্তরা চিঠি ভাজ করে বুকের দিকে কামিজের ফাঁকে লুকিয়ে নিল। তারপর চুপিচুপি রান্নাঘর থেকে চলে গেল ছাদে। সতর্কভাবে চারদিকে তাকিয়ে চিলেকোঠার দেয়ালে হেলান দিয়ে আরাম করে বসে চিঠি থেকে সময় নিয়ে নাম্বার তুলে কল দেয়। রিং হচ্ছে। খানিক বাদেই ওপাশে জিসানের গলা শোনা গেল।
— ‘অন্তরা?’

— ‘হ্যাঁ।’

— ‘এতো তাড়াতাড়ি কল দেবে ভাবিনি।’

— ‘আপনার ভাবনার বাইরে দুনিয়ায় কতকিছু হয়।’

— ‘বাব্বাহ, ভালোই তো বলেছো।’

— ‘কিন্তু আপনার মুখে তো ভালো কথা নাই।’

— ‘মানে কি! আমি খারাপ কখন বললাম?’

— ‘চিঠিতে যে অনেক বকাঝকা করলেন।’

— ‘করবো না? তোমাকে পড়ানোর সময় মতামত জানতে চেয়েছি তুমি এড়িয়ে গেছো। একদিন উল্টাপাল্টা স্বপ্ন দেখে ভোরে আমার মাথা আউলা হয়ে গেছে। নামাজেও গেলাম না। তুমি এসে ডাকার পর ইমোশনাল হয়ে কি করেছি সেটার জন্য তুমি কতকিছু বলে চলে গেলে। এরপর থেকে আর দেখা নেই। পড়তেও আসো না। এদিকে আমার মাথা নষ্ট। চেয়ারম্যানের কাছে দিয়ে দিলাম বিয়ের প্রস্তাব। প্রত্যাখ্যান করা হলো। তবুও তোমার দেখা নাই। আমাকে লজিং থেকে বিদায় করে দেওয়া হলো। তবুও তোমার দেখা নাই। সেদিন রাতে গিয়েও ধরা পড়ে গেলাম। এরপর থেকেও তোমার সাক্ষাৎ পাই না। আচ্ছা তুমি হঠাৎ রাতে বাড়িতে পালিয়ে আমার কাছে চলে আসতে পারতে না?’

— ‘আপনি অনেক ঝগড়াটে।’

— ‘কি হলো তোমার গলা এরকম শোনাচ্ছে কেন?’

— ‘জানি না।’

— ‘আচ্ছা রেকর্ড করতে পারবে তো? শোন, তোমার একটা আইডিয়া আছে না কখন ওরা আড্ডা দেয়। ঠিক এর আগে ঘরের ডাস্টবিন বা কোনো একটা জায়গায় মোবাইল রেখে চলে আসবে। প্রায় সময় দেখবে মোবাইল রেখে আসছো কিন্তু ওরা বৈঠকখানায় আসেনি। আবার প্রায় সময় বসবে কিন্তু অন্য প্রসঙ্গে কথা বলে আড্ডা-টাড্ড দিয়ে চলে গেছে। তবুও তুমি কিছুদিন লেগে থাকবে। হঠাৎ একদিন এই প্রসঙ্গে কথা বলবেই। ঠিকাছে?’

— ‘হু, ঠিকাছে। রেকর্ড করা যাবে। তারপর কি করবো জনাব?’

— ‘তুমি কি ফাজলামোর মুডে আছো?’

— ‘না তো।’

— ‘তাহলে জনাব বললা কেন?’

— ‘জানি না। এখন বলুন রেকর্ড করার পর কি হবে।’

— ‘রেকর্ড করার পর তুমি জাস্ট আমাকে জানাবে হয়ে গেছে। এরপরই তোমার সুযোগ সময় মতো টাইম বলবে। আমি সিক্তাকে তোমাদের বাড়ির সামনে পাঠাব। আমি চলে যাবো লঞ্চঘাটে। তুমি মোবাইল নিয়ে একেবারে রেডি হয়ে বেরিয়ে পড়বে। সিক্তা আমার কাছে তোমাকে দিয়ে মোবাইল নিয়ে বাড়ি চলে যাবে। আর ওইদিনই আমরা দু’জন গ্রাম ছেড়ে পালাবো।’

— ‘বাবা।’

— ‘কি হলো, ভয় পাচ্ছ?’

— ‘আগে অনেক ভয় পাইতাম কিন্তু কিছুদিন হল পাই না।’

— ‘ভালো, ভয় পেয়ে লাভ নাই।’

— ‘আচ্ছা আমরা পালিয়ে গিয়ে কি করবো?’ কথাটা বলে অন্তরার ফিক করে হাসি চলে এলো৷ সে এক হাতে মুখ চেপে নিজেকে সামলে নিল।

— ‘আচ্ছা তুমি কি রসিকতা করছো? না-কি সত্যিই কিছু বুঝতে পারছো না?’

— ‘যা বলছেন তা বুঝতে পারছি। কিন্তু যা বলেননি সেটা তো বুঝি না।’

— ‘কি বলিনি?’

— ‘এইযে এতো কাহিনির পর গ্রাম ছেড়ে পালিয়ে যাব। তারপর কি হবে?’

— ‘এই তুমি হাসছো মনে হচ্ছে? এতো সাহস তোমার কোনদিন হল? এখন ফোন রাখো তো। কেউ দেখে ফেললে কি হবে বুঝতে পারছো? সব প্ল্যান কিন্তু মাটি হয়ে যাবে। রাখছি এখন।’

ওপাশ থেকে ফোনটা কেটে গেল। অন্তরা উদাস মনে গাছের উপর দিয়ে আকাশে তাকাল। মনটা খারাপ হয়ে গেছে। আরও কিছুক্ষণ কথা বললে কি এমন হতো?মানুষটা শুধু কাজের কথাই বললো। আচ্ছা কাজের কথায় কি মন ভরে? কাজে পেট ভরতে পারে, অকাজে ভরে মন।

ঘরে আগুন লাগার পর থেকে জিসানের এখন থাকার খুব অসুবিধা হচ্ছে৷ রাতে ফার্মেসি ঘরে পাটি বিছিয়ে থাকে। দিনে আবার সেটা তুলে ফেলতে হয়। কারণ ছোট্ট ঘরে পিয়াস বারংবার এসে কাস্টমারদের ঔষুধ দেয়। সে বাইরে হাঁটাহাঁটি করে সময় কাটায়। অন্তরার কলের অপেক্ষায় ছটফট করে। ক’দিন থেকে নিজেকে কেমন উটকো ঝামেলা মনে হচ্ছে। গতকাল ময়নুল সাহেবের সঙ্গে দেখা করে এসেছে৷ মামলার পরিচালনার জন্য নতুন আরেকজন উকিলও পাওয়া গেছে৷ কিন্তু অন্তরার এখান থেকে আশানুরূপ কিছু পাওয়া যাচ্ছে না। জিসানকে ফোনে জানিয়েছে রুমে মোবাইল রাখা কোনো সমস্যাই না। পালঙ্কের নিচে সে দু’দিন সন্ধ্যার আগে মোবাইল রেখে এসেছে। কিন্তু একদিন ওরা বৈঠকে আসেনি। আরেকদিন কেন জানি রেকর্ডই হয়নি। কাল সে রেকর্ড কীভাবে করতে হয় ফোনে বুঝিয়ে দিয়েছিল। এখন ফোন কলের অপেক্ষা করছে। দুপুরের এই সময়টাতেই অন্তরা বেশি কল দেয়। বসে আছে বাড়ির পেছনের পুকুর পাড়ে। পাশে একটা লাটিম গাছ। চারদিকে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পড়ে আছে লাটিম। সে একটা লাটিম ছুড়ে মারলো পুকুরে মাঝখানে। ফোনটা তখনই বেজে উঠলো৷
— ‘হ্যালো, অন্তরা বলো।’

— ‘আজ রেকর্ড হয়েছে। কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ কিছুই না। ইজাজ মেম্বারের কথা একটু আধটু বলছে আর এমনি হাবিজাবি গল্পগুজব।’

— ‘ও আচ্ছা। এগুলো থাকুক৷ কিছুই ডিলিট দিবে না।’

— ‘আচ্ছা।’

— ‘কেমন আছো?’

— ‘আমি তো সব সময় যেমন থাকি৷ আপনার জন্য সমস্যা৷ কত কষ্টে আছেন। এখন কোথায়, আপনার সেই লাটিম গাছের নিচে?’

— ‘হ্যাঁ।’

— ‘সারাক্ষণ পুকুর পাড়ে বসে থাকেন৷ আর মহিলারা গোসলে এলে দেখেন?’

— ‘ধুরো, এই টাইমে কেউ গোসলে আসে না। সিক্তা অনেক আগেই গোসল করে চলে গেছে।’

— ‘আচ্ছা রাখি এখন। চাচা আসছেন দেখা যাচ্ছে ছাদ থেকে।’

লাইন কেটে গেল। জিসান আবার পুকুরের মাঝখানে আরেকটা লাটিম ছুড়ে মারে।

পরেরদিন একই সময়ে জিসান অপেক্ষা করছে ফোন কলের জন্য। হঠাৎ বেজে উঠলো মোবাইল।
— ‘হ্যালো।’

ওপাশ থেকে ভয়ার্ত গলায় অন্তরা বলল,
— ‘জিসান কাল রাত থেকে আমার হাত-পা কাঁপছে। মানুষ এতো ভয়ানক হয় কি করে? রেকর্ড হয়েছে। সবকিছু নিয়ে একের পর কথা বলেছে ওরা। এখন কি করবে?’

জিসান দাঁড়িয়ে গেল,
— ‘কি রেকর্ড হয়েছে?’

— ‘সবই হয়েছে৷ চাচা রেকর্ডে আখলাছুরকে বলছেন প্রত্যক্ষদর্শী সাক্ষী থাকলে ভালো হতো। আখলাছুর বলছে কাজের মহিলা দাওয়াতের কথা বলতেই রাজি ছিল না। মিথ্যে সাক্ষী দেওয়ানো এতো সহজ না-কি? তারপর আরেকটা জায়গায় চাচা বললেন ইমামকে মারায় কাজের কাজ হইছে না হইলে বিরাট ঝামেলা ছিল। এরকম সবকিছুই আছে রেকর্ডে। এখন তাড়াতাড়ি বলো কি করবে। এখানে আমার ভয় করছে অনেক।’

জিসান খানিক ভেবে বলল,
— ‘এখন কি তুমি পালানোর জন্য প্রস্তুত আছো? কেউ কি বাড়িতে নাই?’

— ‘কেউ বাড়িতে নাই। চাচি শুধু নিজের ঘরে শুয়ে আছে৷ কিন্তু আমার অনেক ভয় করছে।’

— ‘অন্তরা ভয় পেও না। আমি এখনই সিক্তাকে বোরকা পরিয়ে তোমাদের বাড়ির সামনে পাঠাচ্ছি। তুমি ফোনে আমার সঙ্গে যোগাযোগ রাখবে। এখন রাখি রেডি হও তুমি।’

ফোন রেখে জিসান তাড়াতাড়ি এলো সিক্তার রুমে। পিয়াস শুয়ে আছে। সেতারা বেগম আর সিক্তা রান্না ঘরে।
— ‘পিয়াস সিক্তাকে ডাকো। অন্তরা রেকর্ড করে কল দিয়েছে।’

কথাবার্তা শুনে সিক্তা আর সেতারা বেগম চলে এসেছেন। পিয়াস এখন মোটামুটি সুস্থ। উত্তেজনায় সে দাঁড়িয়ে গেল।
— ‘এখন কি করবে?’

জিসান সিক্তার দিকে তাকিয়ে বলল, ‘বোরকা পরে নাও তাড়াতাড়ি। তুমি চেয়ারম্যানের বাড়ির সামনে থাকবে। অন্তরা মোবাইল নিয়ে বের হচ্ছে। আমি লঞ্চ ঘাটে আগে চলে যাচ্ছি। তুমি অন্তরাকে আমার কাছে দিয়ে বাড়ি চলে আসবে।’

পিয়াস বলল, ‘আমি বা মা কেউ একজন ওর সঙ্গে যাই?’

— ‘তুমি তো যেতেই পারবে না। আর আন্টিও বোরকা পরে গেলে দু’জন এক সঙ্গে দেখলে সন্দেহ করবে কেউ। তুমি বরং আমার সঙ্গে লঞ্চঘাটে চলো। সিক্তাকে নিয়ে চলে আসবে। ওর একা আসতে ভয় লাগতে পারে।’

সিক্তা এদের কথাবার্তার ফাঁকেই বোরকা পরে নিয়েছে। জিসানকে বলল,
— ‘আমি যাচ্ছি, আপনি লঞ্চঘাটে থাকবেন।’

সে বেরিয়ে গেল। পিয়াসের কেমন ভয় ভয় করছে সিক্তার জন্য। জিসানের সঙ্গে পিয়াসও লঞ্চঘাটের উদ্দ্যশ্যে বেরুলো। সে গেলে সিক্তা একা আসতে হবে না লঞ্চঘাট থেকে।
..

অন্তরার হাত-পা কাঁপছে। কি করবে গুছিয়ে ঠিক চিন্তা করতে পারছে না। হ্যাঁ বোরকা পরে নিতে হবে। কিন্তু তার বোরকা নেই। সায়মারটা ছোট হবে। তবুও সেটা পরে ফেলে। নেকাব নেই সায়মার। খানিক ভেবে কালো বড় একটা ওড়না ভালোভাবে পেঁচিয়ে নিল। মোবাইল কি করবে? সেটা শক্ত করে হাতের মুঠোয় নিয়ে উঠানে বেরুলো। আচমকা সামনে এসে পড়ে গেল বক্কর আলী। সে হাঁপাচ্ছে।
অন্তরার দিকে তাকিয়ে বলল,
— ‘বইন তাড়াতাড়ি আমার সঙ্গে রান্নাঘরের দিকে চলো। এদিকে যেও না।’

অন্তরা থরথর করে কাঁপছে। কি হচ্ছে, কি বলবে কিছুই বুঝতে পারছে না।
— ‘আরে বইন তোমার ফোনালাপ শুনেছি। আজকে তুমি পালাচ্ছো তাও জানি। আমি পাহারা দিচ্ছিলাম চেয়ারম্যান আর আখলাছুরকে। ওরা এতোক্ষণ চা’র হোস্টেলে ছিল এখন এইদিকেই আসতেছে। আমার পেছন পেছন চলো ভয় নাই।’

অন্তরা দ্বিধাদ্বন্দে ভুগছিল। মাথা যেন ফাঁকা হয়ে গেছে। শেষ পর্যন্ত বক্কর আলীর সঙ্গে রান্নাঘরের দিকে গেল।
এদিকে রাশেদা বেগম ঘর থেকে চেঁচাচ্ছেন, ‘কে রে এতো ফুসুরফুসুর করে ঘরে? কে?’

অন্তরাকে রান্নাঘরে নিয়ে বক্কর আলী বলল, ‘আমার লগে নাওয়ের চাবি আছে হাওর দিয়ে পালাতে হবে।’

— ‘কিন্তু জিসান তো লঞ্চঘাটে অপেক্ষা করছে।’

— ‘সমস্যা নাই৷ আমরা বাড়ি থেকে হাওর দিয়ে বের হয়েই ফোনে যোগাযোগ করা যাবে মাস্টারের লগে। এদিকে যাওন রিস্ক। চেয়ারম্যান কাউকে ফোন দিয়ে রাস্তায় আটকিয়ে ফেলতে পারবে৷ তাছাড়া এখন বাড়ির দিকেই আসতেছে। মহাবিপদ তাড়াতাড়ি আসো আমার সঙ্গে।’

অন্তরার গলা শুকিয়ে যাচ্ছে। কি করবে কি করা উচিত কিছুই বুঝতে পারছে না। সে বক্কর আলীর সঙ্গে নাওয়ে উঠে গেল।

এদিকে সিক্তা অপেক্ষা করতে করতে অস্থির। এখনও অন্তরা বের হচ্ছে না কেন সে বুঝতে পারছে না৷ হঠাৎ তাকিয়ে দেখলো কয়েকজন এ রাস্তার দিকেই আসছে। বীমার ফাইলটা ওদের দিকে রেখেই সে হাঁটা দিল। খানিক দূরে গিয়ে দেখল ওরা চেয়ারম্যানের বাড়ির দিকেই ঢুকে গেছে।

চেয়ারম্যান সিগারেটে শেষ টান দিয়ে বললেন, ‘আখলাছুর এই মাইয়াটা এখানেই তো দাঁড়িয়ে ছিল?’

— ‘হ্যাঁ চেয়ারম্যান সাব। এইটা বীমার মহিলা মনে হয়।’

— ‘ওহ। কিন্তু কেমন যেন উঁকিঝুঁকি মারছিল মনে হচ্ছে।’

— ‘গিয়ে কথা বলবো না-কি?’

— ‘না থাক।’

তারা কথা বলতে বলতে বাড়িতে ঢুকে বৈঠক খানায় যায়। চেয়ারম্যান মাঝে মাঝে গরম পানি দিয়ে গোসল করেন। গরম পানি বসানোর জন্য অন্তরাকে বলতে রান্না ঘরে গিয়ে দেখেন সেখানে নাই। সায়মার ঘর খোঁজেন। বাথরুমেরও দরজা খোলা। ডাকতে ডাকতে ছাদে যান। কোথাও নেই। মাথায় হঠাৎ অন্যকিছু খেলে গেল। বৈঠক খানায় এসে ওদেরকে জানালেন। মতিন আর আখলাছুর রাস্তার দিকে বের হলো। উঠোনের মাথায়ই পেল নেকাব পরা একটি মেয়ে৷
— ‘এই মেয়ে কে তুমি? এতোক্ষণ যাবত এখানে উঁকিঝুঁকি মারছো যে?’

— ‘আমি বীমার মহিলা।’

আখলাছুরে খানিক ভেবে বলল,
-‘তাহলে চলুন। এ বাড়ির চাচি বীমা করবেন।’

সিক্তার কেমন যেন ভয় ভয় করছিল। সে আমতা-আমতা করে বলল, – ‘না অন্যদিন আসবো এদিকে।’

মতিন হাতে ধরে টেনে বলল, ‘আরে আসেন চাচি বীমা করতে চাইছেন কয়েকদিন থেকে।’

সিক্তা না পেরে তাদের সঙ্গে যায়। ঘরে যেতেই হাত জাপ্টে ধরে বলল, ‘এতোক্ষণ থেকে এখানে উঁকিঝুঁকি মারছিলে নেকাব তুলেন দেখি কিসের মহিলা।’

চেয়ারম্যানও এতোক্ষণে এসে গেলেন। মতিন মিয়া টান দিয়ে নেকাব তুলে অবাক হয়ে তাকায়,
— ‘আরে এ তো ময়নুল সাহেবের ছেলে বউ।’

চেয়ারম্যান অবাক হয়ে বললেন,
— ‘মেয়েটি তো অনেক সুন্দর। কিন্তু এখানে বীমার মহিলা সেজে কেন এলো?’

আখলাছুর ধমক দিয়ে বলল,

— ‘এই মেয়ে তুমি এখানে কোন উদ্দ্যশ্যে এসেছো বলো?’

সিক্তা কি বলবে ভেবে পাচ্ছিল না। তার কান্না পাচ্ছে। হাত মোচড়াচ্ছে।

খানিক বাদেই চেয়ারম্যানের ইশারায় পুরো বাড়ির দরজা বন্ধ করা হয়। আখলাছুর সিক্তার মুখ চেপে ধরে। চেয়ারম্যান আর মতিন মিয়া টেনে হেঁচড়ে বৈঠক খানায় নিয়ে যায় সিক্তাকে। হাত-পা বেঁধে মুখে কাপড় ঠেসে দেয়। রাশেদা বেগম সেই কখন থেকে চেঁচাচ্ছেন, ‘শুনি ঘরে আজ এতো হৈহল্লা কিসের? কতক্ষণ থেকে যে চিল্লাচ্ছি কেউ কি শুনে না?’
…চলবে…
লেখা: জবরুল ইসলাম

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here