আর একটিবার পর্ব-১২

0
711

#আর_একটিবার
#শোভা_আক্তার(লাভলী)
#পর্ব_১২

খুব ভোরে শ্রাবণের ঘুম ভাঙলো। চোখ খুলে দেখে সাগরিকা তার হাত জড়িয়ে ধরে রেখেছে। শ্রাবণ মুচকি হাসলো। সাগরিকার চুলগুলো সরিয়ে কপালে চুমু দিলো৷ সাগরিকা নড়েচড়ে শ্রাবণের আরো কাছে আসলো। শ্রাবণ সাগরিকার হাত শক্ত করে ধরে আর একটু ঘেষলো তার সাথে। তাকিয়ে আছে অপলক দৃষ্টিতে তার প্রিয়তমার দিকে। প্রতিদিন এই এক চেহারার প্রেমে পরতে হয় তার৷ সাগরিকাকে ছাড়া যেন কারো কথা সে ভাবতে পারে না। হঠাৎ তার চোখের সামনে ভেসে উঠল যখন সাগরিকার সাথে তার প্রথমবার দেখা হয়েছিল।

অতীতের কিছু অংশ……
আজকের মিটিং খুব ইম্পর্টেন্ট৷ কোটি টাকার বিষয়৷ যেভাবেই হোক শ্রাবণ এই কন্ট্রাক্ট চায়৷ রাস্তায় জ্যাম ছিল বলে অফিস আসতে দেরি হয়ে গেল। গাড়ি থেকে নামতেই শ্রাবণের চোখ গেল দারোয়ান মামার সাথে দাঁড়িয়ে থাকা একটা মেয়ের উপর। মেয়েটা কথা বলছে দারোয়ান মামার সাথে। শ্রাবণ থমকে রইল। মেয়েটা কে! সে তো কখনো তাকে এখানে দেখে নি। শ্রাবণ ধীরপায়ে হেটে গেল। দারোয়ান মামা শ্রাবণকে দেখে দাঁড়িয়ে সালাম দিলো। মেয়েটা তা দেখে ভ্রু কুঁচকে বলল,
“আপনি আবার দাঁড়ালেন? বসুন চুপচাপ। আর আজকে ছুটি নিয়ে নেন।”
“না না আম্মাজান এটা সম্ভব না।”
শ্রাবণ বলল,
“আপনাদের মাঝে কথা বলার জন্য সরি৷ আমি কি জানতে পারি এখানে কি হচ্ছে?”
“সাহেব কিছু হয়নি৷ আপনের তো আজকে মিটিং আছে। তারাতাড়ি ভেতরে যান সবাই আইসা পরছে।”
“হুম যাচ্ছি”
মেয়েটা শ্রাবণকে উদ্দেশ্য করে বলল,
“শুনেন”
শ্রাবণ তাকাল সাগরিকার দিকে। সে চিন্তিত স্বরে বলল,
“উনাকে আজ ছুটি দিয়ে দিন প্লিজ৷ জানেন উনি মাথা ঘুরিয়ে পড়ে গিয়েছিল। বয়স্ক মানুষ, এই রোদের মধ্যে দাঁড়িয়ে কিভাবে পাহারা দিবে বলুন?”
দারোয়ান মামা বলল,
“আরে আম্মাজান আমি একদম ঠিক আছি।”
মেয়েটা কিছু বলার আগেই শ্রাবণ বলল,
“তোমার আজ ছুটি। বাসায় চলে যাও। যত পর্যন্ত সুস্থ না হবে আসতে হবে না। আর চিন্তা করো না আমি বেতন কাটবো না।”
“না সাহেব আমি ঠিক আছি।”
“আহা বেশি কথা বলো না। যা বলছি চুপচাপ করো। বাসায় চলে যাও।”
মেয়েটা বলল,
“আপনাকে ধন্যবাদ আমি রিকশা নিয়ে আসি৷ মামা রিকশাতে করে বাসায় চলে যান।”
দারোয়ান মামা বলল,
“থাক আম্মাজান আমি যাইবার পারুম। আমার বাড়ি বেশি দূর না।”
শ্রাবণ বলল,
“আচ্ছা এক কাজ করো আমার গাড়ি দিয়ে চলে যাও। আমি ড্রাইভারকে বলছি তোমাকে সুস্থ সবল পৌছে দিয়ে আসতে।”
“না না সাহেব লাগবো না।”
মেয়েটা ধমকের স্বরে বলল,
“চুপ থাকুন আপনি। আপনার সাহেব ঠিক বলছে। আর আপনিই তো বললেন বাড়ি বেশি দূর না। তার মানে ১০ মিনিটের মধ্যে আসা যাওয়া হয়ে যাবে।”
দারোয়ান মামা কিছু বলল না৷ শ্রাবণ মুচকি হাসলো। সে আজ পর্যন্ত কোনো মেয়ের প্রতি এত ভালোলাগা অনুভব করে নি। শ্রাবণ ড্রাইভারকে ডেকে বলল দারোয়ান মামাকে বাসায় দিয়ে আসতে৷ ড্রাইভার তাই করলো। মামা যেতেই মেয়েটা বলল,
“আপনি খুব ভালো, ধন্যবাদ আপনাকে।”
“ভালো তো আপনিও। নাহলে কেও এত চিন্তিত হতো কারো জন্য। এনি ওয়েজ, উনি আপনার কি হয়?”
“কিছু না”
“অচেনা মানুষের জন্য এত চিন্তা, আই এম ইমপ্রেস।”
“অচেনা হলেও মানুষ তো।”
শ্রাবণের মুখে হাসি ফুটে উঠল। তখনই একটা ছেলে দৌড়ে আসলো। তার হাতে পানির বোতল। ছেলেটাকে শ্রাবণ চিনে। ২ মাস আগে জয়েন করেছে অফিসে। তার নাম আজমাইন হোসেন৷ আজমাইন শ্রাবণকে সালাম দিয়ে মেয়েটাকে উদ্দেশ্য করে বলল,
“সাগরিকা দারোয়ান মামা কোথায়? ঠান্ডা পানি নিয়ে আসলাম উনার জন্য।”
সাগরিকা! নামটা শ্রাবণের বেশ পছন্দ হলো। কিন্তু সে বুঝতে পারছে না আজমাইনের সাথে তার কি সম্পর্ক। সাগরিকা বলল,
“বাসায় চলে গিয়েছে। জানো আজমাইন উনি খুব ভালো। মামাকে নিজের গাড়িতে করে বাসায় পাঠিয়েছে।”
“ভালো তো হবেনই। বলেছিলাম না আমার স্যার খুব ভালো। উনিই আমার স্যার শ্রাবণ আহমেদ।”
সাগরিকা মুচকি হেসে বলল,
“আজমাইন আপনার খুব প্রশংসা করেছে। আপনাকে ধন্যবাদ ওকে চাকরি দেয়ার জন্য।”
শ্রাবণ জবাবে মুচকি হাসলো। সাগরিকাকে দেখে সে ভুলে গিয়েছে যে তার মিটিং আছে। আজমাইন বলল,
“তুমি এখন কলেজে যাও খুব দেরি হয়ে গিয়েছে। আমি রিকশা নিয়ে আসি।”
সাগরিকা মাথা নাড়াল। আজমাইন দৌড়ে গেল রিকশা নিয়ে আসতে। শ্রাবণ সাগরিকার দিক থেকে চোখ সরাচ্ছে না। বিষয়টা সাগরিকা খেয়াল করলো। তার খুব অস্বস্তি হচ্ছে শ্রাবণের চাহনি দেখে। আজমাইন রিকশা নিয়ে এসে সাগরিকাকে নিয়ে গেল। তাকে রিকশায় বসিয়ে শ্রাবণের দিকে হেটে আসলো। শ্রাবণ চলে যাওয়া রিকশার দিকে তাকিয়ে থেকে বলল,
“মেয়েটা তোমার কি হয় আজমাইন?”
আজমাইন হাসিমুখে বলল,
“গার্লফ্রেন্ড, ইন শাহ আল্লাহ খুব জলদি আমরা বিয়ে করবো।”
বিয়ের কথা শুনে শ্রাবণ আজমাইনের দিকে তাকাল। আজমাইন তাকিয়ে আছে হাসিমুখে শ্রাবণের দিকে। শ্রাবণ এই কথার কোনো জবাব দিলো না। সে আবার তাকাল সেই রিকশার দিকে। রিকশা খুব দূরে চলে গিয়েছে। শ্রাবণ লম্বা নিশ্বাস ফেলে আজমাইনের উদ্দেশ্যে বলল,
“আশা করছি আমাকে বিয়েতে দাওয়াত দেবে।”
“নিশ্চয়ই স্যার, আপনি আসলে আমরা ভীষণ খুশি হবো।”
“আসবো, কারণ আমি না আসলে তো বিয়েই হবে না।”
আজমাইন শ্রাবণের কথার মানে বুঝলো না। শ্রাবণ মুচকি হেসে অফিসের ভেতরে চলে গেল। সেদিন সারারাত শ্রাবণ ঘুমাতে পারে নি। সাগরিকার হাসিমুখ বার বার চোখের সামনে ভেসে উঠছিল। সেদিন সে মনে মনে ভেবে নেয়। যেভাবেই হোক, সে সাগরিকাকে নিজের করেই ছাড়বে।

বর্তমান…..
শ্রাবণের চোখের সামনে সাগরিকা তুড়ি বাজাতেই শ্রাবণের হুঁশ ফিরলো। সাগরিকা ভ্রু কুঁচকে বলল,
“আমার হাত ছাড়ো ফ্রেশ হতে যাবো।”
“আর কিছুক্ষণ এভাবে থাকা যায় না?”
“যায়, কিন্তু ইমারজেন্সি। আমার যেতে হবে।”
শ্রাবণ হেসে সাগরিকার হাত ছাড়লো। সাগরিকা বিছানা ছেড়ে নেমে চুল বাঁধতে বাঁধতে বলল,
“ইর্তেজাকে আসতে বলো। আজ ভার্সিটি যাব।”
“তুমি এখনো অসুস্থ।”
“আলহামদুলিল্লাহ আমি সুস্থ। তুমি ওকে কল দাও।”
শ্রাবণ চিন্তায় পরলো। আজ তো ইর্তেজা তার জরুরি কাজ করবে। শ্রাবণ বসে রইল।
.
.
বাসায় এসে ইর্তেজা বোনের ঘরে গেল। ইরিনা উঠে গিয়েছে। ইর্তেজা খাটে বসে বলল,
“পায়ে বেশি ব্যথা লাগে নি তো?”
“না, ঠিক আছি এখন।”
“ভালো যে সাঈদ এসে পরেছিল।”
সাঈদের নাম শুনে ইরিনা মাথা নিচু করে ফেলল। ঝর্ণা আসতেই ইর্তেজা উঠে দাঁড়াল। ইরিনার জামা বদলে দেবে ঝর্ণা৷ ইর্তেজা ঘর থেকে বেরিয়ে রান্নাঘরে গেল। নাশতা অলরেডি তৈরী। সে প্লেটে সাজিয়ে টেবিলের উপর রাখলো। চেয়ার টেনে বসে রইল। পকেট থেকে খামটা বের করে ছবিটা আবার দেখলো। সে এই ভদ্রমহিলাকে চেনে। কিন্তু কোথায় দেখেছে বা কিভাবে চেনে কিছু মনে করতে পারছে না। ইরিনা আসতেই ইর্তেজা ছবি খামে রেখে আবার পকেটে ভরে নিলো। প্রতিদিনের মতো বোনের সাথে নাশতা করে সে ঘরে আসলো। এসে দেখে তার মোবাইল বাজছে খাটের উপর। ভুলে রেখে চলে গিয়েছিল। শ্রাবণ কল করছে। দ্রুত রিসিভ করলো,
“আসসালামু আলাইকুম বস”
“ওয়া আলাইকুমুস সালাম। কোথায় তুমি?”
“বাসায়”
“যে কাজটা বলেছি সেটা কখন করবে?”
“বাদশাহ খবর নিয়েছে তাদের বাড়িতে কারো বিয়ে। ভদ্রমহিলা যখন পার্লারে যাওয়ার জন্য বের হবে মাঝপথে আমরা তাকে তুলে নেব।”
“ঠিক আছে, এখন বাসায় আসো সাগরিকা ভার্সিটি যাবে।”
“ম্যাম সুস্থ হয়েছে”
“বলল তো যাবে। আমি না করছি কিন্তু শুনছে না। অকারণে রাগ করবে তাই জোর করছি না। তুমি আসো।”
“জি বস এখনই আসছি।”
ইর্তেজা ইরিনার সাথে দেখা করে বাসা থেকে বের হলো। কেন যেন ভয় হচ্ছে তার। কিডন্যাপ করা কি উচিত হবে? যদি পুলিশের চক্করে পড়ে যায়? ইরিনাকে সে বলেছে এমন কোনো কাজ করবে না যাতে সে কষ্ট পায়। যদি ইরিনা এই বিষয়ে জানতে পারে খুব কষ্ট পাবে।ইর্তেজা লম্বা নিশ্বাস ফেলল।
.
.
সাগরিকা মুখ গোমড়া করে রেখেছে। শ্রাবণ চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে সাগরিকার দিকে তাকাল। সাগরিকার চেহারা দেখে না হেসে পারলো না। সাগরিকা বিরক্ত ভাব নিয়ে শ্রাবণের দিকে তাকিয়ে বলল,
“আমি কী জোঁকার? হাসছো কেন?”
“কিউট লাগছে তোমাকে। রাগ করো না ইর্তেজা এসে পরবে।”
“এই ছেলেটাকে কেন তুমি কাজে রাখলে বলো তো। ফ্যাক্টরিতে ছিল ভালো ছিল। আমার ঘাড়ে চাপিয়ে দিলে। ধ্যাত ভার্সিটির ক্লাসও শুরু হয়ে গিয়েছে।”
“আচ্ছা থাক, আমি বলেছিলাম আজ যেতে হবে না। আমার শুনো নি। নেও, নিয়তি তোমাকে আটকে দিলো।”
সাগরিকা ভেংটি কাটলো। শ্রাবণ শব্দ করে হেসে উঠল। কিছুক্ষণের মধ্যে ইর্তেজা আসলো। সাগরিকা রাগে ফুঁসছে তাকে দেখে। ইর্তেজা সালাম দিয়ে মাথা নিচু করে বলল,
“সরি ম্যাম, আসলে…”
“বাহানা চাই না। যাও আমার চোখের সামনে থেকে।”
শ্রাবণ বলল,
“এভাবে কারো সাথে ব্যবহার করতে নেই। আমিই ওকে দেরি করে কল দিয়েছিলাম৷ তারাতাড়ি দিলে সময়ের মতো আসতে পারতো।”
সাগরিকা বিরক্ত হয়ে উঠে চলে গেল নিজের ঘরে। ইর্তেজা লম্বা নিশ্বাস ফেলে শ্রাবণের দিকে তাকিয়ে বলল,
“সরি বস”
“সমস্যা নেই, ভালো হয়েছে আজ ও যাবে না। আমি বাসায় আছি ওর জন্যই।”
“ভালো লাগলো আপনাকে এত পরিবর্তন দেখে। খুব তারাতাড়ি ম্যাম আপনাকে মন থেকে কবুল করবে।”
“ইন শাহ আল্লাহ, আজকাল ওর ব্যবহার অনেক পরিবর্তন হয়েছে আমার প্রতি। কিন্তু খুব ভয় হয় জানো৷ প্রতিদিন সকাল ভাবি আজ যদি সাগরিকা সব সত্য জেনে যায়? বুকের ভেতরটায় জ্বালাপোড়া হয় খুব।”
“সব ঠিক হয়ে যাবে বস। একদিন আপনি নিজ থেকেই ম্যামকে সব বলে দিয়েন। দেখবেন উনি ক্ষমা করে দেবেন।”
“হুম, আচ্ছা অনেক কথা হলো বসো তুমি।”
ইর্তেজা বসলো শ্রাবণের পাশে।
.
.
১০২ ডিগ্রি জ্বর নিয়ে বিছানায় পড়ে আছে সাঈদ। হঠাৎ এত জ্বর কেন আসলো বুঝতে পারছে না। কলেজে কল দিয়ে বলেছে আজ আসতে পারবে না। মা স্যুপ আর ঔষধ খাইয়ে গিয়েছে তবুও শরীর কাঁপছে জ্বরে। শুয়ে থাকতেও ভালো লাগছে না তার। খুব ইচ্ছে করছে ইরিনাকে দেখতে৷ কিছুক্ষণ পর মা আসলো আবার। সাঈদের মাথার পাশে বসে কপালে হাত রাখলো। সাঈদ চোখ খুলে মাকে দেখে মায়ের পায়ের উপর মাথা রাখলো। মা তার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। সাঈদ বলল,
“বাবা কোথায় মা?”
“কাজে গিয়েছে। বলেছে আজ তারাতাড়ি ফিরবে। তোর জ্বর না কমলে হসপিটাল নিয়ে যাবে।”
“আমি ঠিক আছি। আচ্ছা একটা কথা জিজ্ঞেস করি?”
“কর”
“আব্বু তোমার থেকে কত বছর বড়ো?”
“প্রায় ৯ বছর”
“আচ্ছা আম্মু পুরুষদের কেন বয়সে বড়ো হতে হয় কোনো নারীকে বিয়ে করার জন্য৷ এমন কি হতে পারে না নারী বয়সে বড়ো আর পুরুষ ছোটো।”
“কেন হতে পারে না? বয়সে বড়ো নারীকে বিয়ে করা জায়েজ। আমাদের ধর্মে এতে মানা নেই। কিন্তু আমাদের সমাজ এই জিনিসটা খুব বাজে নজরে দেখে।”
“সমাজ এমন কেন আম্মু? কেন অন্যের স্বাধীনতা কেড়ে নেয়?”
“আসলে নিয়ম বললে ভুল হবে। এটা মানুষের দৃষ্টিভঙ্গির উপর নির্ভর করে। আচ্ছা তুই হঠাৎ এই বিষয় কেন জিজ্ঞেস করলি?”
“আমার বুক ভারী হয়ে আছে আম্মু। মনে অনেক কথা জমে আছে যা তোমাকে বলতে চাই। কিন্তু খুব ভয় করে।”
“আমি তোর মা হই। মা কখনো সন্তানদের খারাপ পরামর্শ দেয় না। যা বলতে চাস বল।”
“একজনকে ভালোবাসি”
মা সাঈদের কথা শুনে খুব খুশি হলেন। সাঈদ মায়ের দিকে তাকিয়ে বলল,
“সে আমার থেকে বয়সে বড়ো”
মায়ের হাসি উড়ে গেল সাঈদের কথা শুনে। কি বলবে ভেবে পাচ্ছে না। সাঈদ লম্বা নিশ্বাস ফেলে বলল,
“জানি না আমার ভালোবাসার পরিনতি কি। কিন্তু আম্মু তাকে আমি নিজের করে পেলে কখনো কষ্ট দেবো না। সমাজের সাথে লড়াই করে হলেও তাকে আগলে রাখবো।”
সাঈদের চোখ গড়িয়ে পানি পরলো। মা তাকিয়ে আছে সাঈদের দিকে।
.
.
“ইর্তেজা তোমার বোন কেমন আছে?”
সাগরিকার প্রশ্নে ইর্তেজা মাথা তুলে তাকাল। বিস্কিটে কামড় বসিয়ে বলল,
“আলহামদুলিল্লাহ ম্যাম ভালো আছে আপু।”
“শ্রাবণ বলেছিল তোমার বোন হাঁটাচলা করতে পারে না। উনার চিকিৎসা করাচ্ছো?”
“জি, আগের থেকে অনেক উন্নতি হয়েছে আপুর। এখন মাঝে মধ্যে পা নাড়াতে পারে।”
“ইন শাহ আল্লাহ সুস্থ হয়ে যাবে”
শ্রাবণ ফোনে কথা বলছিল। কথা শেষ করে মোবাইল রেখে বলল,
“অফিস থেকে কল এসেছে।”
সাগরিকা বিরক্ত হয়ে বলল,
“এখন অফিস যাওয়ার প্ল্যান করছো না তো?”
শ্রাবণ আহত দৃষ্টিতে তাকাল সাগরিকার দিকে। সাগরিকার আবার রাগ হলো৷ মুখ ঘুরিয়ে ফেলল সাথে সাথে। ইর্তেজা বিষয়টা দেখে বলল,
“আপনারা যদি সবসময় এভাবেই একে অপরের সাথে রাগ অভিমান করতে থাকেন সম্পর্কে আরো ফাটল ধরবে। কম্প্রোমাইজ ইজ ভেরি ইম্পর্ট্যান্ট।”
সাগরিকা থতমত খেয়ে গেল ইর্তেজার কথা শুনে৷ শ্রাবণ হেসে বলল,
“ঠিক বললে। আচ্ছা আমি কোথাও যাবো না। আমি কম্প্রোমাইজ করলাম।”
ইর্তেজা মুচকি হাসলো শ্রাবণের কথা শুনে। সাগরিকা বলল,
“ইর্তেজা তুমি পড়াশোনা কতটুকু করেছো?”
ইর্তেজা কিছু বলার আগেই শ্রাবণ হেসে বলল,
“এটা কেমন প্রশ্ন করলে তুমি? ভুলে গেলে ইর্তেজা ফ্যাক্টরিতে সুপারভাইজার ছিল?”
সাগরিকার মাথায় গোলমাল হচ্ছে। সে তো ভেবেছিল ইর্তেজা তেমন পড়াশোনা করেনি। ইর্তেজা হেসে বলল,
“আমি অনার্স কমপ্লিট করতে পারি নি। শেষ বর্ষে ভর্তি হতে পারি নি কারণ আপুর এক্সিডেন্ট আর আম্মুর ইন্তেকাল হয়েছিল বলে।”
বলেই ইর্তেজা মাথা নিচু করলো। অনার্সের কথা মাথায় আসতেই মাহার চেহারা ভেসে উঠল ইর্তেজার চোখের সামনে। সেদিন এক্সিডেন্ট না হলে তার জীবন খুবই সুন্দর থাকতো। না মা ছেড়ে যেত না বোন প্যারালাইজ হতো আর না মাহাকে হারাতো। ইর্তেজা বুক ভারী হয়ে আসলো। ঢোক গিলে আর ঘনঘন নিশ্বাস ফেলে নিজেকে শান্ত করার চেষ্টা করছে। সাগরিকা বলল,
“ইর্তেজা, তুমি সবসময় ভালোবাসা নিয়ে খুব সুন্দর সুন্দর কথা বলো। আমার কেন মনে হয় তুমিও এক সময় কারো প্রেমিক ছিলে।”
ইর্তেজা সাগরিকার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বলল,
“ঠিক ভাবলেন। ছিলাম এক কালে কারো প্রেমিক।”
“কোথায় সে এখন?”
“হয় তো অন্য কারো স্ত্রী”
শ্রাবণ বিরক্ত হয়ে বলল,
“আজকাল কার বেশির ছেলে মেয়েরা এমন। প্রেম করে একজনকে বিয়ে করে আর একজনকে। একটু বেশি টাকা পয়সা ওয়ালা মানুষ দেখলেই লোভে জিভ বেরিয়ে আসে। ভুলে যাও এমন লোভী মেয়েকে।”
ইর্তেজার মাথায় রক্ত উঠে গেল। হাতমুঠো শক্ত করে রাগী দৃষ্টিতে তাকাল শ্রাবণের দিকে৷ শ্রাবণের সেদিকে খেয়াল নেই। সে ইর্তেজার প্রাক্তন প্রেমিকার সম্পর্কে যা তা বলে যাচ্ছে। সাগরিকা ইর্তেজার চাহনি দেখলো। ইর্তেজা খুব কষ্টে রাগ সামলাচ্ছে। সাগরিকা শ্রাবণকে বাঁধা দিয়ে বলল,
“আচ্ছা থাক এবার চুপ থাকো। যে এখন নেই তাকে নিয়ে এত কথা বলতে হবে না।”
“বুঝাচ্ছি ইর্তেজাকে। এমন মেয়ে আমি অনেক দেখেছি। এ রকম মেয়ে আর বাজারে থাকা ….”
শ্রাবণের কথা শেষ হওয়ার আগেই ইর্তেজা তেড়ে এসে শ্রাবণের কলার চেপে ধরলো। চিল্লিয়ে বলল,
“আমার মাহার সাথে কোনো বাজারের মেয়ের তুলনা করলে তোকে এখানেই মেরে টুকরো করে ফেলব শ্রাবণ আহমেদ।”
হঠাৎ করে পরিস্থিতি এমন ভয়ংকর হয়ে যাবে সাগরিকা কল্পনাও করেনি। সে চেষ্টা করছে ইর্তেজার হাত থেকে শ্রাবণকে ছাড়ানোর। কিন্তু ইর্তেজা নিজের সর্বোচ্চ শক্তি দিয়ে শ্রাবণকে ধরে রেখেছে। শ্রাবণ নিজেকে ছাড়ানোর জন্য ইর্তেজা পেটে লাথি মেরে দিলো। ইর্তেজা সোফায় ছিটকে পরলো। শ্রাবণ রাগে হনহন করতে করতে এগিয়ে গিয়ে ইর্তেজার কলার ধরে দাঁড় করিয়ে কষিয়ে থাপ্পড় দিলো। ইর্তেজাও পাল্টে শ্রাবণের গলা চেপে ধরে বলল,
“আমার মাহার সম্পর্কে আর একটা বাজে কথা বললে ভালো হবে না।”
সাগরিকা দৌড়ে এসে দুজনকে ছাড়ালো। শ্রাবণ রাগে আবার এগিয়ে গেল। সাগরিকা দ্রুত তাকে বাঁধা দিয়ে বলল,
“আমাকে কেও বাজারের মেয়ের সাথে তুলনা করলে তোমার কেমন লাগবে শ্রাবণ?”
শ্রাবণ থমকে গেল। চোখ ঘুরিয়ে ইর্তেজার দিকে তাকাল। ইর্তেজা ধপ করে সোফায় বসে মাথা নিচু করে ঘনঘন নিশ্বাস ফেলতে লাগলো। মাথা এখনো ঝিমঝিম করছে তার। রাগে ইচ্ছে করছে আশে পাশে যা আছে সব ভেঙ্গে ফেলতে। সাগরিকা এক নজর ইর্তেজাকে দেখে শ্রাবণের দিকে তাকিয়ে বলল,
“আমরা জানি না তারা আলাদা কিভাবে হয়েছে। মেয়েটা কে চিনি না। তাই তার সম্পর্কে না জেনে এসব বলা কি ঠিক?”
“আমি.. আমি বুঝতে পারি নি, সরি।”
ইর্তেজা মাথা তুলে শ্রাবণের দিকে অশ্রু চোখে তাকিয়ে বলল,
“আমার মাহা এমন না। এমন না আমার মাহা।”
ইর্তেজা উঠে চলে গেল। বুক ছিঁড়ে যাচ্ছে তার কান্নায়। সাগরিকা তাকিয়ে আছে ইর্তেজার যাওয়ার পথে। শ্রাবণ সোফায় বসে বলল,
“ভুল হয়ে গেল আমার। তোমার সম্পর্কে কেও এসব বললে আমিও এমন করতাম।”
সাগরিকা শ্রাবণের দিকে তাকিয়ে শ্রাবণের মাথায় হাত রাখলো। শ্রাবণ মাথা তুলে সাগরিকার দিকে তাকাল৷ সাগরিকা শ্রাবণের চুলে হাত বুলিয়ে চোখের ইশারায় বলল শান্ত হতে। সাগরিকা আবার দরজার দিকে তাকাল। মাহা, তার কেন যেন মনে হচ্ছে সে নামটা কোথাও শুনেছে।

চলবে……

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here