আর একটিবার পর্ব-১৪

0
675

#আর_একটিবার
#শোভা_আক্তার(লাভলী)
#পর্ব_১৪

সিগারেট প্রায় শেষ কিন্তু সেদিকে খেয়াল নেই শ্রাবণের। সাগরিকা রাগ করে বাসা থেকে বেরিয়েছে। সে জানে সূর্যের কাছে গিয়েছে সে। সাগরিকা খুব রাগ করেছে। কিভাবে তার রাগ ভাঙবে শ্রাবণ? বারান্দায় দাঁড়িয়ে আকাশের দিকে চেয়ে ভাবছে এসব শ্রাবণ। কল টন বাজায় শ্রাবণের হুঁশ ফিরলো। সিগারেটে এক নজর দিয়ে মাটিতে ফেলে পা দিয়ে নিভিয়ে মোবাইল হাতে নিলো। অচেনা নাম্বার ভাসছে স্ক্রিনে। রিসিভ করে কানে ধরলো,
“হ্যালো”
“আপনি কি শুধরাবেন না? না-কি এই কয়দিন ভালো হওয়ার ভং ধরেছিলেন?”
সূর্যের কন্ঠ শুনে শ্রাবণ লম্বা নিশ্বাস ফেলল। অপর পাশ থেকে সাগরিকার কন্ঠ শুনতে পেল শ্রাবণ,
“সূর্য তোকে বলেছিলাম কল করতে না? জেনে গিয়েছে আমি এই বাসায়। এখন এসে পরবে আমাকে নিতে। আমি যাব না ওই বাসায় আর ফিরে।”
সাগরিকার কান্না জড়িত কন্ঠ শ্রাবণের কলিজা ক্ষতবিক্ষত করে দিলো। ধীরে ধীরে সাগরিকা তাকে মেনে নিচ্ছিল আবার সব উলটপালট হয়ে গেল। শ্রাবণ শান্ত গলায় বলল,
“সূর্য সাগরিকার খেয়াল রেখো। তার রাগ কমলেই আমি আসবো।”
বলেই শ্রাবণ কল কেটে দিলো। আকাশের দিকে তাকিয়ে লম্বা নিশ্বাস ফেলল।
.
.
থমকে বসে আছে ইর্তেজা। মাহার এখনো জ্ঞান ফিরেনি। খুব ভয় করছে তার। মাহার জ্ঞান ফিরলে সে কি জবাব দিবে? মাহা যদি ভাবে সে গুন্ডা বদমাশ হয়ে গিয়েছে? ইর্তেজা কিভাবে মাহাকে বিশ্বাস দেয়াবে যে তার ইর্তেজা খারাপ মানুষ না। বাদশাহ এসে মাহাকে দেখে চমকে গেল। অবাক কন্ঠে বলল,
“একি! আমরা তো ভুল করে অন্য কাওকে তুলে নিয়ে আসলাম।”
ইর্তেজার কান দিয়ে এই কথা ঢুকলো না। সে এখনো তাকিয়ে আছে মাহার দিকে। বাদশাহ ইর্তেজাকে নিশ্চুপ দেখে এগিয়ে আসলো। ইর্তেজার কাঁধে হাত দিয়ে বলল,
“ইর্তেজা ভাই আপনি ঠিক আছেন?”
ইর্তেজার হুঁশ ফিরলো। বাদশাহ’র দিকে তাকাল। বেশ কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইল সে বাদশাহ’র দিকে। হঠাৎ দাঁড়িয়ে জড়িয়ে ধরলো বাদশাহকে। বাদশাহ বেশ অবাক হলো ইর্তেজার কান্ড দেখে৷ ইর্তেজা ফুপিয়ে কাঁদছে বাদশাহ বুঝতে পেরে আরো চমকালো। ইর্তেজার দিকে হাত রেখে বলল,
“কী হলো ভাই আপনি কাঁদছেন কেন?”
ইর্তেজা বাদশাহকে ছেড়ে ঘনঘন নিশ্বাস ফেলতে ফেলতে মাহার দিকে তাকাল। আবার বাদশাহ’র দিকে চেয়ে কাঁপা কাঁপা গলায় বলল,
“এই মেয়েটা কে তুমি জানো?”
“আমি তো জানি না। শ্রাবণ স্যার হয়তো জানে। কিন্তু আপনার কী হলো হঠাৎ? স্যারের সাথে কথা হয়েছে?”
“হ্যাঁ কিন্তু আমি বলি নি অন্য কাওকে তুলে নিয়ে এসেছি ভুলে।”
“স্যার তো আমাদের ১২ টা বাজিয়ে দেবে যদি জানে আমরা ভুল করে অন্য কাওকে তুলে নিয়ে এসেছি। পরে দেখা যাবে আমাদের তিনজনকেই মে’রে নদীতে ফেলে দিয়েছে।”
ইর্তেজা ভ্রু কুঁচকে বাদশাহ’র দিকে তাকিয়ে বলল,
“ওর হাত টুকরো করে ফেলবো মাহার ক্ষতি করার চেষ্টা করলে।”
“কি বললেন?”
“কিছু না, বসকে কিছু বলো না এখন। আমি দেখি কি করতে পারি।”
“কিন্তু উনি যদি এসে পড়ে?”
“আসলে আসুক।”
“আপনার হঠাৎ কি হয়েছে? আমার কেন যেন মনে হচ্ছে আপনি এই মেয়েটাকে চেনেন।”
“হুম চিনি”
“কি হয় সে আপনার?”
ইর্তেজা মাহার দিকে তাকিয়ে বলল,
“আমার সব”
“মানে? দেখুন এখন বলবেন না কিছু না। আমার মাথা কাজ করছে না। বলুন আমায়।”
ইর্তেজা মাহার দিকে তাকিয়ে থেকেই ধীরে ধীরে মাটিতে বসে বলল,
“শুনবে আমাদের কাহানী?”
বাদশাহ তার পাশে বসে বলল, “হুম”

———
❤️ ইর্তেজা ❤️ মাহা ❤️

প্রেমিকা রাগ করলে প্রেমিক তার পেছন ঘুরেফিরে তাকে মানায়। কিন্তু বন্ধু রাগ করলে তার পিছু পিছু ঘুরা দৃশ্যটা খুব কম দেখা মেলে। আধা ঘণ্টা ধরে আফজালের পিছু পিছু ঘুরছে ইর্তেজা। ইর্তেজার মনে হচ্ছে সে তার বন্ধুকে না তার প্রেমিকাকে মানাচ্ছে। আফজাল এক সময় রাগে গর্জে উঠল।
“যখন তোরে বলছিলাম এই চ্যালেন্জ ট্যালেন্জ খেলিস না তখন তো শুনিস নি আমার কথা এখন কেন আসলি?”
ইর্তেজা আশে পাশে তাকাল। সবাই তাদের দিকে তাকিয়ে আছে। আফজাল রেগে আগুন হয়ে আছে এখন। যেভাবেই হোক পরিস্থিতি সামলাতে হবে। ইর্তেজা কি বলে তাকে পটাবে বুঝতে পারছে না। এমনিতে আফজাল শান্তশিষ্ট থাকার মানুষ। সবাইকে পরামর্শ দিয়ে বেড়ায়৷ তাদের ব্যাচে আফজাল “জ্ঞানী বাবা” নামে পরিচিত। তার পরামর্শ সবসময় কাজে আসে। কিন্তু নিজের বেলায় সে কারো কথা শুনে না। তাই তো প্রতিবার বন্ধু-বান্ধবীরা শর্তক করার পরও সে ৬ বার ৬ জন মেয়ের কাছ থেকে ছ্যাকা খেয়েছে। আজ ভ্যালেন্টাইন্স ডে, গত চারদিন আগে ইর্তেজা তার এক ক্লাসমেটের সাথে বাজি ধরেছে যদি সে বাজিতে হেরে যায় তাহলে ১৪ই ফেব্রুয়ারিতে কোনো এক মেয়েকে থাপ্পড় মারতে হবে পুরো ক্যাম্পাসের সামনে। ইর্তেজা হেরে গিয়েছে। শর্ত অনুযায়ী তাকে এইটা করতেই হবে নাহলে তারা ইর্তেজার ১২ টা বাজিয়ে দেবে। ইর্তেজা দরিদ্র পরিবারের ছেলে আর তারা কোটিপতি বাবার অবাধ্য সন্তান। তাদের ভয় না পেলেও তাদের টাকা আছে অর্থাৎ তারা পাওয়ারফুল। তাই ইর্তেজা বাধ্য তাদের আদেশ মানতে। ইর্তেজা মুখ লটকে বলল,
“আমি কি জানতাম আমি পাঞ্জা খেলতে গিয়ে হারবো?”
“বলেছিলাম তাদের সিক্স প্যাক বডির সাথে তোর মশার মতো বডি পারবে না। কিন্তু শুনিস নি আমার কথা।”
“ইয়ার তুই এখন অপমান করছিস আমার।”
“আচ্ছা থাক, কি করতে হবে আমাকে এইটা বল।”
“ভাবছি কাকে থাপ্পড় মারবো। তুই কিছু একটা কর প্লিজ।”
আফজাল নিজের গালে আঙুল রেখে ডুলতে ডুলতে বলল,
“থ্রি পিস পড়ে নকল চুল পড়ে চেহারায় মেকআপ ঠোঁটে লিপস্টিক দিয়ে মেয়ে সেজে তোর সামনে দাঁড়াই তুই আমাকে থাপ্পড় মার।”
ইর্তেজা খুশিতে আত্মহারা হয়ে আফজালকে জড়িয়ে ধরে বলল,
“হোয়াট এন আইডিয়া দোস্তো আই লাভ ইউ।”
আফজাল দাঁতে দাঁত চেপে ইর্তেজাকে ধাক্কা দিয়ে বলল,
“ধুর শা’লা দূরে গিয়ে মর।”
ইর্তেজা মায়া মায়া চেহারা বানালো। আফজাল ইর্তেজাকে খুব ভালোবাসে। একদম নিজের ভাইয়ের মতো দেখে তাকে। ইর্তেজার চেহারা দেখে গলে গেল সে। ইর্তেজার কাঁধে হাত রেখে বলল,
“যা তাহলে আমি তোর জন্য মেয়ে সাজতে রাজি।”
“ধ্যাত, কত বাজে দেখা যাবে তোকে ছি ছি।”
“তো এখন আমি কি করবো?”
“তোর কোনো এক এক্সকে থাপ্পড় মারলে কেমন হয়?”
“কাকে?”
ইর্তেজা কিছুক্ষণ ভেবে বলল, “পিহু?”
“না রে, ও ব্যাথা পেলে আমি কষ্ট পাব।”
“তাহলে আফসানা?”
“না ওর গাল গুলো খুব সুন্দর। থাপ্পড় মারা মানে ওর গালে টাচ করা। একদম না।”
“পিংকি?”
“উফফ পিংকি, তার কন্ঠ আজও আমার কানে বাজে। এত সুন্দর কন্ঠের অধিকারীকে থাপ্পড় মারলে আমি মেনে নিতে পারবো না।”
“ফারজানা?”
“আমার কুচুমুচুটা, ও তো সবার থেকে কিউট ছিল। নেক্সট।”
“রাবেয়া?”
“না রে, ও খুব নাজুক। একটু ব্যাথা পেলে তিনদিন হসপিটালে ভর্তি থাকে।”
ইর্তেজা রাগে গজগজ করছে। দাঁতে দাঁত চেপে বলল, “তাহলে ভূমিকা?”
“না ও আমাকে প্রতিদিন নিজের হাতে রান্না করে খাবার এনে খাওয়াতো। হ্যাঁ আমাকে ভুলে এখন অন্য কারো জন্য রান্না করে কিন্তু ওর প্রতি ভালোবাসা এখনো কমে নি।”
ইর্তেজা রাগী ষাঁড়ের মতো রেগে আগুন হচ্ছে। আফজাল ভয়ে ঢোক গিলল। ইর্তেজা ধীরে ধীরে এগিয়ে যাচ্ছে আর সে পিছাচ্ছে। এক সময় দুজন ছুটে গেল। আফজালের স্বাস্থ্য ইর্তেজার থেকে বেশি। সে দৌড়াতে দৌড়াতে হাঁপিয়ে উঠেছে। মাঠের দিকে দৌড়ে গেল দুজন। এক সময় ইর্তেজা তাকে ধরেও ফেলল। আফজালের কলার ধরে ঝাকিয়ে ইর্তেজা বলল,
“তোর মন দেখি ৬ ঋতুর মতো। ঋতু পরিবর্তন হতে ২ মাস লাগে আর তোর ২ সেকেন্ড। আস্তাগফিরুল্লাহ্ আস্তাগফিরুল্লাহ্।”
“এভাবে বলিস না। আমার মতো বড়ো মনের মানুষ খুব কম আছে এই দুনিয়ায়।”
ইর্তেজা আফজালের কলার ছেড়ে মাথায় চড় মে’রে বলল,
“হুম তাই তো একসাথে এতজন বসবাস করে।”
আফজাল গর্বিত কন্ঠে বলল,
“আই এম সো প্রাউড অফ মি।”
ইর্তেজা কিছু বলবে তার আগেই মাঠের অন্য পাশ থেকে চিৎকার চেচামেচির শব্দ আসলো। ইর্তেজা ও আফজাল দ্রুত গেল সেখানে। গিয়ে দেখে একটা ছেলে একটার মেয়ের হাত চেপে ধরে বাজে ভাষায় কথা বলছে। তারা দুজনই ইর্তেজার ক্লাসমেট কিন্তু কখনো পরিচয় হয়নি। কেও এগিয়ে যাচ্ছে না মেয়েটাকে ছাড়াতে। আফজাল পাশের এক ছেলেকে জিজ্ঞেস করায় জানতে পারলো সেই ছেলেটা প্রপোজ করায় মেয়েটা রিজেক্ট করেছে তাই ছেলেটা বাজে ব্যবহার করছে। অতিরিক্ত বাড়াবাড়ি হচ্ছে বলে ইর্তেজা এগিয়ে গেল। ছেলেটার কলার ধরে সজোরে থাপ্পড় মেরে দূরে সরিয়ে বলল,
“বিহেভ ইওর সেলফ। রিজেক্ট করেছে বলে কি এত বাজে ব্যবহার করবে?”
ছেলেটা তেড়ে এসে ইর্তেজার কলার চেপে ধরতেই ইর্তেজা আবার থাপ্পড় দিয়ে বলল,
“এই শুটকির মতো শরীর দেখে ভেবো না তোমাকে ভয় পাবো। হাড্ডিতে ভরপুর হাত দিয়ে একটা ঘুষা খেলেই সব দাঁত পড়ে মাটিতে গড়াগড়ি খাবে।”
ছেলেটা গালে হাত দিয়ে ইর্তেজার দিকে রাগী দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। সত্যি তার গালে বেশ জোরে লেগেছে। ইর্তেজা মেয়েটার দিকে তাকিয়ে দেখে সে কাঁদছে। ইর্তেজা ঘাড় ঘুরিয়ে আবার ছেলেটার দিকে তাকিয়ে বলল,
“লাস্ট ওয়ার্নিং, এরপর থেকে কারো সাথে এমন ব্যবহার করলে ভার্সিটির মাঠেই কবর দিয়ে দিব।”
ছেলেটা হনহন করে চলে গেল। ইর্তেজা মেয়েটার দিকে তাকিয়ে বলল,
“তুমি তো আমাদের ক্লাসেরই। নাম কি তোমার?”
“আলিয়া”
আফজাল দৌড়ে এসে ইর্তেজাকে উদ্দেশ্যে করে বলল,
“তুই জানিস কি করেছিস? জানিস ছেলেটা কে?”
“হবে কোনো এক বড়োলোক বাবার বিগড়ে যাওয়া সন্তান।”
“হ্যাঁ ঠিক, রাফসান তালুকদার।”
রাফসান নাম শুনতেই ইর্তেজা চমকে উঠল। ভীতু গলায় বলল,
“চেয়ারম্যান রায়হান তালুকদারের ছেলে সে?”
“জি মিস্টার হিরো”
ইর্তেজার ভয়ে গলা শুকিয়ে যাচ্ছে। আলিয়া নামক মেয়েটা বলল,
“আপনি আমার অনেক বড়ো উপকার করলেন। ভয় পাবেন না। আমার বাবা এলাকার থানা পুলিশ। উনি চেয়ারম্যানকে চিনে। আমি আব্বুকে বলবো সব। চেয়ারম্যান তো খুব ভালো। উনি নিশ্চয়ই নিজের ছেলের দোষ বুঝতে পারবেন।”
ইর্তেজা আলিয়ার কথা শুনে মুচকি হাসলো কিন্তু মন থেকে ভয় এখনো যায় নি। বাড়িতে মা বোন ছাড়া কেও নেই। তার কারণে কি তার মা বোনেরও ক্ষতি হয়? আফজাল ইর্তেজার কাঁধে হাত রেখে বলল,
“তোর শেষ ইচ্ছে আমাকে বল। আমি নিশ্চয়ই পূরণ করার চেষ্টা করবো।”
আলিয়া হা হয়ে গেল আফজালের কথা শুনে। ইর্তেজা ছোটো ছোটো চোখ করে আফজালের দিকে তাকাল। আফজাল সরি বলেই দৌড়ে গেল। তার পিছু ধরলো ইর্তেজা। আলিয়া হা হয়ে দাঁড়িয়ে তাদের যাওয়ার পথে তাকিয়ে আছে।

দৌড়ে আফজাল তাদের ক্লাসে ঢুকলো। ইর্তেজা ঢুকতেই কারো সাথে সজোরে থাক্কা খেলো। মানুষটার সাথে একটা বক্স ছিল। হয়তো কাঁচের কিছু ছিল মাটিতে পড়ার সাথে সাথে কাঁচ ভাঙ্গার শব্দ আসলো। ইর্তেজা নিচের ঠোঁট কামড় দিয়ে ধরে মানুষটার দিকে তাকাল। মানুষটার রাগে ফুসতে ফুসতে চিৎকার করে বলল, “মাহাআআআআ”। ইর্তেজা নিজের কান চেপে ধরলো। মেয়েটার গলা না মাইক। মেয়েটা ন্যাকামো করে বলল,
“দেখ আমার শোপিস ভেঙ্গে ফেলেছে ছেলেটা।”
হঠাৎ ইর্তেজা হাতে টান অনুভব করলো। পেছনে ফিরে থমকে গেল। একটা মেয়ে বড়ো বড়ো চোখ করে রাগী দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে তার দিকে। ইর্তেজার মনে হচ্ছে তার হৃদয় ঢোলে পরিনত হয়েছে। ভেতর থেকে শব্দ এসে কানে বাজছে। মাহা নামক মেয়েটা দাঁতে দাঁত চেপে বলল,
“মাহার বন্ধু-বান্ধব মাহার জানপ্রাণ। তোর সাহস কি করে হলো বিথিকে কাঁদানোর?”
ইর্তেজা যেন শুনতে পেল না মাহার কোনো কথা। আফজাল দৌড়ে এসে এমন পরিস্থিতি দেখে ঢোক গিলল। মাহা মেয়েটা খুব ডেঞ্জারাস। আফজাল ভীষণ ভয় পায়। সে বিথিকে বলল,
“আমি মাফ চাচ্ছি আমার বন্ধুর তরফ থেকে। প্লিজ উনাকে বলুন ওকে ছেড়ে দিতে।”
বিথি আফজালের দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে বলল,
“এখন আপনার বন্ধুকে কেও বাঁচাতে পারবে না। সে জানে না আমার কত বড়ো ক্ষতি করেছে।”
“আপনার জিনিসের ক্ষতির টাকা আমি দেবো প্লিজ।”
মাহা আফজালের কথা শুনে রাগী দৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে বলল,
“ওহ হ্যালো টাকা দিয়ে বিষয় ধামাচাপা দিতে চাও? মাহার কাছে টাকার অভাব নেই। কিন্তু তোমার বন্ধুর কাছে হয়তো চোখ থেকেও নেই।”
ইর্তেজার এতক্ষণে হুঁশ ফিরলো। সে মাহার দিকে হাসিমুখে চেয়ে বলল,
“আপনি যে শাস্তি দেবেন আমি খুশি খুশি মেনে নেবো।”
আফজাল চমকে উঠল ইর্তেজার কথা শুনে। মাহা ইর্তেজার কলার ছেড়ে বিথির দিকে তাকাল। বিথি মুখ টিপে হেসে চোখের ইশারায় কি যেন বলল। মাহা বাঁকা হাসি দিয়ে ইর্তেজার দিকে তাকাল।

————

ইর্তেজা না পারছে বলতে না পারছে সইতে। ভয়ে তার হাত পা জমে যাচ্ছে। ভার্সিটির ছাদে রেলিং এ ৫ মিনিট হাঁটতে হবে ইর্তেজাকে। ১৪ তলা বিল্ডিং। একবার উপর থেকে পড়লে হাড় পর্যন্ত গুঁড়ো গুঁড়ো হয়ে যাবে। মাহা ঘড়ি দেখে বলল,
“মিস্টার ইর্তেজা আমি রেডি বলার সাথে সাথে হাঁটা শুরু করবেন, ওকে?”
আফজাল দৌড়ে এসে মাহার সামনে হাতজোড় করে বলল,
“মাফ করে দেও আমাদের। আমরা আর কখনো এমন করবো না।”
“আফজাল স্যার আপনি এত ভয় পাচ্ছেন কেন? কিছু হবে না আপনার বন্ধুর। তাই না ইর্তেজা?”
ইর্তেজা মাহার দিকে আহত দৃষ্টিতে তাকাল। মাহা খুব কষ্টে হাসি থামিয়ে রেখেছে। ছাদে এসে অনেক মানুষ জমাট হয়েছে ইর্তেজার সার্কাস শো দেখার জন্য। রাফসান তালুকদার এসে শব্দ করে হাসতে হাসতে বলল,
“এটাকে বলে ন্যয় বিচার। আমাকে থাপ্পড় মেরেছিলি। এখন অন্যের অর্ডারে আত্মহত্যা কর।”
আফজাল রাগে কটমট করছে। মাহা ইর্তেজার দিকে তাকিয়ে ইশারায় বলল রেলিং এ উঠে দাঁড়াতে। ইর্তেজার কাছে আর কোনো রাস্তা নেই। ধীরে ধীরে উঠে দাঁড়াল। রেলিং এ দাঁড়ানো যায়। কিন্তু হাঁটতে গেলে ব্যালেন্স রাখতে ভীষণ কষ্ট হবে। আর একবার ব্যালেন্স হারিয়ে ফেললে টায় টায় ফিশ।

সবাইকে ছাদে যেতে দেখে আলিয়াও হাঁটা ধরলো। সবাই বলাবলি করছে সার্কাস চলছে ছাদে। ছাদে এসে দেখে ভীষণ ভিড়। ভিড় ঠেলে গিয়ে পরিস্থিতি দেখে তার চোখ ছানাবড়া হয়ে গেল। ইর্তেজাকে রেলিং এ দাঁড়ানো দেখে আলিয়া দ্রুত মাহার দিকে এগিয়ে গিয়ে বলল,
“মাহা এসব কি হচ্ছে?”
মাহা আলিয়াকে দেখে বলল,
“কোথায় ছিলি তুই এতক্ষণ? দেখ এখন কত মজা হয়।”
“মজা? মাহা ছেলেটা পড়ে গেলে কি হবে ভেবেছিস? তুই কোটি টাকা দামের জিনিস কিনতে পারবি কিন্তু কারো প্রাণ ফিরিয়ে আনতে পারবি না।”
মাহা বিরক্ত দৃষ্টিতে বিথির দিকে তাকিয়ে বলল,
“কত তারিখ ছিল রে যেদিন ওকে আমাদের বান্ধবী বানিয়ে ছিলাম।”
“হয়তো ১০ জানুয়ারি।”
আলিয়া রাগী কন্ঠে বলল,
“তোদের ইচ্ছে হলে আমার সাথে ফ্রেন্ডশিপ ভেঙে ফেল। কিন্তু ছেলেটাকে যেতে দে। জানিস ও আমার কত বড়ো উপকার করেছে?”
“কি উপকার?”
আলিয়া তখনকার সব ঘটনা বলল মাহাকে। মাহা রাগে গজগজ করছে। রাগী দৃষ্টিতে রাফসানের দিকে তাকাল। রাফসান মোবাইল নিয়ে ইর্তেজার ভিডিও করছে। মাহা হনহন করে রাফসানের দিকে এগিয়ে গেল। আলিয়া দৌড়ে গিয়ে ইর্তেজাকে নামতে বলল। ইর্তেজা মাহাকে দেখে বলল,
“এই মেয়েটা রাফসানের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে কেন?”
“নিজের চোখেই দেখে নাও।”
রাফসান মাহাকে আসতে দেখে বোকাদের মতো তাকিয়ে রইল। মাহা গিয়ে রাফসানের মোবাইল নিয়ে দেখে বলল,
“ওমাগো রাফসান বাবু লাইভে এসেছে। এই বিথি মোবাইল ধর। এখন যা যা হবে সব যেন লাইভ হয়।”
বিথি মোবাইল নিলো। রাফসান কিছু বলার আগেই মাহা তার কলার ধরে এলোপাথাড়ি ভাবে মারতে লাগলো। আশে পাশের সবাই হাসছে। আফজাল ইর্তেজার দিকে ছুটে এসে বলল,
“ইর্তেজা চল পালাই আমরা।”
“কি বলছিস? দেখ ছেলেটা কত মার খাচ্ছে। আমাদের উচিত মাহাকে থামানো।”
“তুই রাগী ষাঁড়ের সামনে যেয়ে বিন বাজানোর কথা ভাবছিস?”
“ধুর! তুই যা তো।”
বলেই ইর্তেজা দৌড়ে গেল মাহার দিকে। আফজাল অবাক হয়ে বলল,
“আমাকে যাওয়ার কথা বলে নিজেই যাচ্ছে।”
ইর্তেজা গিয়ে মাহার হাত থেকে রাফসানকে ছাড়িয়ে বলল,
“মাহা মাফ করে দাও ওকে আমি অলরেডি ওকে শাস্তি দিয়েছি।”
“সরো সামনে থেকে। আজ ওকে মেরেই ফেলবো ও জানে না আলিয়া কার বান্ধবী। আর মাহার জন্য তার বান্ধবীরা কি।”
বলেই মাহা তেড়ে আসলো আবার। ইর্তেজা মাহার কাঁধ শক্ত করে ধরে উঁচু স্বরে বলল,
“শান্ত হও মাহা শান্ত হও।”
মাহা থামলো। ঘনঘন নিশ্বাস ফেলছে সে। রাগে চেহারায় লালচে ভাব এসেছে। আলিয়া আর আফজালও দৌড়ে আসলো। বিথি লাইভ বন্ধ করে রাফসানের হাতে মোবাইল দিয়ে দিলো। রাফসানের পুরো শরীর ব্যাথা করছে। প্রচুর মার খেয়েছে আজ। ইর্তেজাকে মাহাকে ছেড়ে বলল,
“বন্ধুদের প্রতি তোমার ভালোবাসা দেখে আমি মুগ্ধ হলাম। কিন্তু সব বিষয় এভাবে মারপিট করে সামলানো যায় না।”
মাহা কোমড়ে হাত দিয়ে ঘনঘন নিশ্বাস ফেলতে লাগলো। রাফসানের দিকে তাকাতেই রাফসান ভয়ে দৃষ্টি ফিরিয়ে নিলো। মাহা ইর্তেজার দিকে তাকিয়ে বলল,
“আমি সব সহ্য করতে পারি আমার বান্ধবীদের কষ্ট না।”
বলেই মাহা হনহন করে চলে গেল। তার পিছু পিছু বিথি আর আলিয়া দৌড়ে গেল। আফজাল ইর্তেজার কাঁধে হাত রেখে বলল,
“মেয়েটা অনেক আজব তাই না?”
ইর্তেজা মাহার যাওয়ার পথে তাকিয়ে থেকে মুচকি হেসে বলল,
“ইন্টারেস্টিং”
“ব্রো প্লিজ বলিস না তুই মেয়েটার প্রেমে পড়ে যাচ্ছিস।”
ইর্তেজা জবাব দিলো না। রাফসান ইর্তেজার পাশাপাশি এসে বলল,
“ভাই একটা সাজেশন দেই। এই মেয়ের পেছনে পরিস না। আমার থেকেও বাজে অবস্থা হবে তোর। আইয়াম্মা আমার সব হাড় হয়তো ভেঙ্গে গিয়েছে। আজই পাপাকে বলবো হসপিটাল নিয়ে গিয়ে এক্স-রে করাতে।”
ইর্তেজা রাফসানের দিকে তাকিয়ে বলল,
“আমি কারো পেছনে পরি নি। কিন্তু মাহা আমার পেছনে পরবে।”
রাফসান আর আফজাল ভালো মতো ইর্তেজাকে পা থেকে মাথা পর্যন্ত দেখলো। দুজনই লম্বা নিশ্বাস ফেলে একসাথে হাঁটা ধরলো। ইর্তেজা হা হয়ে গেল দুজনের ব্যবহার দেখে। দু’পায়ের জুতো খুলে সিটি বাজালো। রাফসান আর আফজাল থেমে পেছনে ফিরলো। ইর্তেজা জুতো নিয়ে দৌড়ে আসলো তাদের দিকে। রাফসান আর আফজাল একে অপরের দিকে তাকিয়ে একসাথে বলল, “পাগল ক্ষেপেছে পালা” বলেই দৌড়ে পালালো।

চলবে……

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here