আর একটিবার পর্ব-১

0
4230

“আজ থেকে তুমি আমার স্ত্রীর বডিগার্ড। তোমার ডিউটি হবে ১৪ ঘন্টার। তোমার ডিউটি চলাকালীন তোমার ম্যাম কোথায় যায় না যায় প্রত্যেক মুহূর্তের খবর তুমি আমাকে দেবে। তো বলো, তুমি কি সত্যি এই কাজটি করতে ইচ্ছুক?” কিছুক্ষণ মাথা নিচু রেখে ইর্তেজা ভাবছে হ্যাঁ বলবে কিনা। কিন্তু তার এই চাকরিটা খুব প্রয়োজন। বাড়িতে থাকা প্যারালাইজ বোনের চিকিৎসা না করালে কখনো নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারবে না তার বোন। ইর্তেজাকে চুপ থাকতে দেখে শ্রাবণ আহমেদ ঘড়ির দিকে তাকাল। বিরক্তি কন্ঠে বলল- “তোমার সাথে বসে থাকার সময় আমার কাছে নেই। তারাতাড়ি বলো তুমি রাজি কিনা।” শ্রাবণের মুখে এই কথা শুনে ইর্তেজা তার দিকে তাকিয়ে বলল- “আমি রাজি, আমাকে ঠিক কি কি করতে হবে?” শ্রাবণ চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়াল। ধীরপায়ে হেটে গিয়ে জানালার পাশে দাঁড়িয়ে আকাশের দিকে তাকাল। তার চোখে রাগ, অভিমান স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। চোখ বন্ধ করে বলল- “আমার মনে হচ্ছে সাগরিকা আমাকে ধোঁকা দিচ্ছে।” ইর্তেজা ভ্রু কুঁচকে বলল- “কিন্তু বস, আপনি তো বলেছিলেন উনি আপনাকে খুব ভালোবাসে।” “আমি তাকে ভালোবাসি কিন্তু সে আমাকে না। আরনআমার ভালোবাসা তার জন্য পিঞ্জিরা। আর সে এই পিঞ্জিরা থেকে মুক্ত হতে চায়।” এইটুকু বলে শ্রাবণ চোখ খুলে ইর্তেজার দিকে তাকিয়ে ভেজা কন্ঠে বলল- “তাকে আমি অনেক ভালোবাসি। পারি না নিজের থেকে দূর করতে৷ তাকে যেভাবেই হোক আমি সবসময় আমার পাশে চাই। যদি কোনোদিন জানতে পারি ও অন্য কারোর ভালোবাসার সাথে জড়িত। নিজের হাতে তাকে মেরে ফেলবো কিন্তু অন্য কারো হতে দেবো না।” . . কাজল খুঁজে পাচ্ছে না সাগরিকা। রাগে তার মাথা গরম হয়ে গিয়েছে। হনহন করে ঘর থেকে বের হয়ে ড্রইংরুমে আসলো। চিৎকার করে বাসার সব সার্ভেন্টকে ডাকলো। সবাই মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে। নির্দোষ হয়েও তারা এখন শত শত অপবাদের শিকার হবে। সাগরিকা সবার দিকে চোখ বুলিয়ে বলল- “আমার নতুন ব্র্যান্ডের কাজল কে চুরি করেছে? সত্যি সত্যি জবাব দাও নাহলে জীবন থেকে হাত ধুয়ে বসবে সবাই।” সবার চেহারায় ভয়ের ছাপ ফুটে উঠলো। তারা জানে সাগরিকা নিজেই কোথাও রেখে ভুলে গিয়েছে। কিন্তু এই কথাটা বললে সাগরিকা তাদের কাজ থেকে বের করে দেবে। সবাই প্রতি সপ্তাহে ৩ হাজার টাকা করে বেতন পায়৷ সবার পরিবার আছে। সংসার চালানোর জন্য টাকা প্রয়োজন। কাজ না থাকলে পেট চলবে না। সাগরিকা কারো কাছ থেকে উত্তর পেল না। আরো রেগে উঠলো সে। দাঁতে দাঁত চেপে বলল- “২ মিনিট সময় দিলাম। সবাই এখনই আমার বাসা থেকে বের হও। এক সেকেন্ডও তোমরা আর দাঁড়াবে না। যাও বলছি, যাও সবাই।” সাগরিকার চিৎকার চেচামেচিতে বাড়ি গমগম করছে। প্রত্যেক সার্ভেন্টের শেষ ভরসা এখন তাদের বস শ্রাবণ আহমেদ। সবাই মনে মনে দোয়া করছে শ্রাবণ যাতে এখন এসে পড়ে। ভালো মানুষদের দোয়া কবুল হতে সময় লাগে না৷ তখনই বাহির থেকে গাড়ির হর্ণের আওয়াজ আসলো। সবার যেন প্রাণ ফিরলো। দ্রুত পায়ে হেটে শ্রাবণ বাড়িতে প্রবেশ করলো। সাগরিকাকে আগুনের গোলা হতে দেখে সে হাসলো। হেটে গিয়ে সাগরিকার সামনে দাঁড়াল। সাগরিকার চেহারা লাল হয়ে আছে। মেয়েটা এত সুন্দর যে শ্রাবণ বার বার তার প্রেমে পড়ে। কিন্তু সে তো একটা শান্তশিষ্ট মেয়ের প্রেমে পড়েছিল। সাগরিকা বিয়ের পর এত রাগী হয়ে যাবে সে কল্পনাও করেনি। হয়তো সে মন থেকে এই বিয়েটা মানতে পারেনি এখনো তাই এমন হয়ে গিয়েছে। শ্রাবণকে দেখে সাগরিকা মাথা নিচু করে ঘনঘন নিশ্বাস ফেলতে লাগলো। শ্রাবণ সব সার্ভেন্টকে ইশারায় বলল যার যার কাজে চলে যেতে। সাগরিকার রাগ কম হওয়ার নাম নিচ্ছে না। শ্রাবণ শক্ত করে সাগরিকাকে বুকের মাঝে টেনে নিলো। সাগরিকা হাতমুঠো করে রেখেছে। শ্রাবণ সাগরিকার মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বলল- “আমার মায়াবী কথায় কথায় এত রাগ করে কেন হুম? কী হয়েছে বলো আমাকে।” শ্রাবণ সাগরিকার দিকে তাকাল। সাগরিকা রাগী দৃষ্টিতে শ্রাবণের দিকে তাকিয়ে বলল- “তোমার বাড়িতে চোর ডাকাতের অভাব নেই। আমার ব্র্যান্ডের কাজল পাচ্ছি না।” “ব্যস এইটুকু ব্যাপার? এখনই চলো শপিং করতে যাই। তোমার যা যা লাগবে কিনে নিও।” সাগরিকা নিজেকে ছাড়িয়ে কিছুটা দূরে গিয়ে বলল- “এখন আমি কোথাও যাব না। আগামীকাল আমার এক্সাম আছে তাই পড়তে যাচ্ছি।” “অ্যাজ ইওর উইশ” শ্রাবণ সাগরিকার কাছে গিয়ে তার কপালে আলতো করে চুমু দিলো। সাগরিকার গা ঘিনঘিন করছে। সে দ্রুত নিজের ঘরে চলে গেল। শ্রাবণ তাকিয়ে রইলো সাগরিকার যাওয়ার পথে। . . ফার্মেসি থেকে ঔষধ কিনে ইর্তেজা বাসায় গেল। তার বোন ইরিনা চেয়ারে বসে আলু কাটছে। ইর্তেজা এমন দৃশ্য দেখে দ্রুত গিয়ে ইরিনার হাত থেকে ছুরি নিয়ে রাগী কন্ঠে বলল- “আপু তোমাকে কতবার বলেছি কাজ করবে না।” ইরিনা ইর্তেজাকে দেখে মুচকি হাসলো। ইর্তেজা তার পায়ের সামনে হাঁটু গেড়ে বসে বলল- “যতদিন পর্যন্ত তুমি আবার আগের মতো সুস্থ না হচ্ছো একটা কাজ পর্যন্ত করবে না।” ইরিনা ইর্তেজার গালে হাত দিয়ে মুচকি হেসে বলল- “সারাদিন খাটে শুয়ে থাকতে কার ভালো লাগে বল? আর আমার তো শুধু পা প্যারালাইজ হয়েছে। এমনিতে আমি আলহামদুলিল্লাহ অনেক সুস্থ আছি।” ইর্তেজা ইরিনার পায়ে মাথা রেখে বলল-“আমি যেভাবেই হোক তোমাকে সুস্থ করে তুলবো। এর জন্য আমাকে যা করতে হবে আমি করবো।” ইরিনা ইর্তেজার মাথায় আলতো করে হাত রেখে মুচকি হাসলো। পরেরদিন….. পরীক্ষা শুরু হতে আরো দেড় ঘন্টা বাকি৷ সাগরিকা বই হাতে নিয়ে ঘরের এই কোনা থেকে ওই কোনায় যাচ্ছে আর একা একা বিড়বিড় করছে৷ তার বিড়বিড়ের শব্দ শুনে শ্রাবণের ঘুম ভাঙলো। সে উঠে বসে সাগরিকাকে দেখে হাসলো। মেয়েটা যে এমন সাইকো। সে জানলে কখনো প্রেমে পড়তো না। কিন্তু এই মেয়েটার প্রেমে পড়ে সে ভুল করেনি। শ্রাবণ খাট থেকে নেমে সাগরিকার সামনে গিয়ে দাঁড়াল। সাগরিকা তাকে দেখে বিরক্ত হয়ে তার পাশ কাটিয়ে চলে যেতে নিলো। তার আগেই শ্রাবণ তার হাত ধরে নিজের বরাবর নিয়ে আসলো। সাগরিকা নিজের হাত ছাড়িয়ে রাগী কন্ঠে বলল- “কি হয়েছে? সমস্যা কি তোমার? দেখতে পারছো না আমি পড়ছি?” “তিনটা প্রশ্ন করলে। তো বলো আগে কোনটার উত্তর চাও?” সাগরিকা বিরক্ত হয়ে খাটে বসে বইয়ের দিকে তাকিয়ে বলল- “তোমার নাশতা বানিয়ে টেবিলে রেখেছি। অফিস যাওয়ার আগে নাশতা করে নিও।” শ্রাবণ নিঃশব্দে হাসলো। গিয়ে সাগরিকার পাশে বসে বলল- “তুমি খুব আজব। এত রাগ আমার প্রতি তবুও আমার খেয়াল রাখো। আমার জন্য খাবার বানাও। অফিসে যাওয়ার আগে জামা বের করে দাও। অসুস্থ হলে যত্ন নাও। সাগরিকা, সত্যি কি আমাকে ঘৃণা করো?” সাগরিকা শ্রাবণের দিকে তাকিয়ে বলল- “হ্যাঁ করি, তোমাকে দেখলে আমার খুব রাগ হয়। কিন্তু কি করবো বলো। তোমাকে ছাড়া আমি বাঁচতেও পারবো না মরতেও পারবো না।” “কিন্তু কেন? তুমি তো আমাকে ভালোবাসো না।” “না বাসি না, তোমার যত্ন নেয়ার কারণ হলো আমাদের সম্পর্ক। সম্পর্কে তুমি আমার স্বামী হও। বিয়ে আমাদের যেভাবেই হয়েছে, হয়েছে তো।” বলেই সাগরিকা উঠে দাঁড়াল। শ্রাবণ তাকিয়ে আছে তার দিকে। সাগরিকা চোখ বন্ধ করে লম্বা নিশ্বাস ফেলে নিজেকে শান্ত করলো। শ্রাবণের দিকে তাকিয়ে বলল- “আজ আমাকে তারাতাড়ি ভার্সিটি যেতে হবে। ড্রাইভারকে কল দিয়ে বলো তারাতাড়ি আসতে।” শ্রাবণ চোখের ইশারায় ঠিক আছে প্রকাশ করলো। সাগরিকা গিয়ে আলমারি থেকে জামা বের করে বাথরুম চলে গেল। শ্রাবণ মুচকি হেসে উঠে দাঁড়াল। হেটে গিয়ে বালিশের পাশ থেকে মোবাইল নিয়ে ইর্তেজাকে কল করলো। . . বোনের জন্য নাশতা বানাচ্ছে ইর্তেজা। বাবা তাদের ছোটোবেলাই মারা গিয়েছে। মা ছিলো, কিন্তু একটা এক্সিডেন্টে উনিও মারা যান এখন তার বোন প্যারালাইজ হয়ে যায়৷ তখন থেকে বাড়ির সব কাজ ইর্তেজা ও একজন কাজের মানুষ আছে, দুজন মিলে করে। হঠাৎ কল টন বাজলো৷ কাজ সব রেখে ইর্তেজা মোবাইল হাতে নিলো। বস কল করেছে। কল রিসিভ করে কানে ধরলো- “আসসালামু আলাইকুম বস” “ওয়ালাইকুম আসসালাম, কোথায় তুমি?” “আপুর জন্য নাশতা বানাচ্ছি। আমাকে কিছুক্ষণ সময় দিন আমি আসছি।” “তারাতাড়ি আসো তোমার ম্যামের আজ পরীক্ষা। দেরি হলে তোমার সাথে সাথে আমার মাথাও খেয়ে ফেলবে।” “জি বস আমি এখনই আসছি।” কল কেটে তারাহুরো করে নাশতা বানিয়ে বোনের ঘরে গেল। তার বোন উঠেনি এখনো। নাশতা খাটের এক পাশে রেখে বাহিরে আসলো। মোবাইল নিয়ে কাজের লোককে কল করার আগেই দরজায় টোকা পরলো। গিয়ে দরজা খুলে ইর্তেজা নিশ্চিন্তের নিশ্বাস ফেলল। প্রতিদিনের মতো কাজের লোক ঝর্ণাকে সব বুঝিয়ে দিয়ে নিজের ঘরে গিয়ে তৈরী হয়ে বাসা থেকে বেরিয়ে গেল। ১৫ মিনিটের রাস্তা ৭ মিনিটে পাড় করে পৌঁছালো। ড্রইংরুমে শ্রাবণ বসে খবরের কাগজ পড়ছে। ইর্তেজা দৌড়ে গিয়ে তার সামনে দাঁড়িয়ে ঘনঘন নিশ্বাস ফেলতে লাগলো। শ্রাবণ ইর্তেজাকে দেখে ভ্রু কুঁচকে বলল- “কি হয়েছে তোমার?” “গুড মর্নিং বস, কিছু হয়নি। দৌড়ে আসলাম তো তাই ক্লান্ত লাগছে।” “বসো, পানি পান করে নাও।” শ্রাবণ ইর্তেজার দিকে গ্লাসে পানি ঢেলে এগিয়ে দিলো। ইর্তেজা সোফায় বসে গ্লাস হাতে নিতেই উপর থেকে একটা ল্যাপটপ পরলো। তাও ইর্তেজার হাতের উপর। গ্লাস ভেঙে ইর্তেজার হাতে ঢুকে গিয়েছে। শ্রাবণ আর ইর্তেজা দুজনই চমকে উঠে দাঁড়াল। তারা উপরের দিকে তাকিয়ে দেখে সাগরিকা উপর থেকে রাগী দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে তাদের দিকে। শ্রাবণ রাগান্বিত হয়ে বলল- “এই কেমন বেয়াদবি সাগরিকা? দেখো কি করেছো ওর হাতের অবস্থা।” সাগরিকা দ্রুত পায়ে হেঁটে নিচে আসলো।ইর্তেজা তার আহত হাত ধরে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে। সাগরিকা হেটে গিয়ে ইর্তেজার বরাবর দাঁড়িয়ে বলল- “এই সেই বডিগার্ড যাকে আমার পেছনে লাগিয়েছো তুমি?” “ও তোমার খেয়াল রাখবে।” “খেয়াল? বললেই তো হয় তোমার চামচামি করবে এই ছেলে। তোমাকে একটা কথা স্পষ্ট বলে দিই। এই ছেলেকে আমি কখনো আমার সাথে এলাও করবো না।” শ্রাবণ শক্ত করে সাগরিকার হাতের কব্জি ধরে নিজের বরাবর নিয়ে আসলো। সাগরিকা ব্যাথায় নিজের হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করছে৷ শ্রাবণ দাঁতে দাঁত চেপে বলল- “তোমাকে ভালোবাসি, তাই কিছু বলি না। নিজের লিমিটে থাকো।” বলেই শ্রাবণ এক ঝটকায় সাগরিকার হাত ছেড়ে দিলো। সাগরিকা অবাক দৃষ্টিতে নিজের হাতের দিকে তাকাল। আঙুলের দাগ বসে গিয়েছে। শ্রাবণ দ্রুত নিজের ঘরে গেল ঔষধ নিয়ে আসার জন্য। সাগরিকা কিছুক্ষণ নিজের হাতের দিকে তাকিয়ে থেকে রাগী দৃষ্টিতে ইর্তেজার দিকে তাকাল। ইর্তেজা এখনো মাথা নিচু করে রেখেছে। সাগরিকা দাঁতে দাঁত চেপে বলল- “তোমার আসার সাথে সাথে শ্রাবণ আমার সাথে খারাপ ব্যবহার করলো। তোমাকে বের করার জন্য আমার করার করবো।” . . খাটে বসে নাশতা খাচ্ছে ইরিনা। ইর্তেজা তার থেকে ৩ বছরের ছোটো। ছোটো ভাই তার জন্য এত কষ্ট করে সে চেয়েও কিছু করতে পারছে না। হঠাৎ বাহিরে দরজা ঠকঠক করার শব্দ আসলো। কাজের লোক গিয়ে দরজা খুলে দেখে একটা ছেলে এসেছে। অচেনা কাওকে ঢুকতে দিতে মানা করেছে ইর্তেজা। ছেলেটা চারদিকে চোখ বুলিয়ে কাজের লোকের দিকে তাকিয়ে বলল- “আসসালামু আলাইকুম, আমি ইর্তেজার বন্ধু সাঈদ। ইর্তেজা বাসায় আছে?” “ইর্তেজা ভাই বাইত নাই। আপনে অহন যান। ভাই আইলে আমি কমুনি।” “আচ্ছা, ইরিনা মানে ওর বোন বাসায় নেই?” কাজের লোক আমতা আমতা করছে। কি বলবে সে বুঝতে পারছে না। তখনই ভেতর থেকে ইরিনার কন্ঠ আসলো- “ঝর্ণা, কে এসেছে?” ইরিনার কন্ঠ শুনে সাঈদ কাজের লোককে পাশ কাটিয়ে দ্রুত ভেতরে গেল। কাজের লোক অনেক চেষ্টা করেও তাকে থামাতে পারছে না। ইরিনার ঘরের দরজার সামনে গিয়ে সাঈদ দাঁড়াল। দুবার কাশলো। পুরুষের কন্ঠ শুনে ইরিনা দ্রুত ওড়না গায়ে দিয়ে বসলো। ইরিনা দেখার চেষ্টা করছে সে এসেছে। কাজের লোক ঘরের ভেতরে এসে বলল- “আপা দেহেন আমি হেরে কইলাম বাইত নাই ইর্তেজা ভাই। কিন্তু এই শুনলোই না।” “কার কথা বলছো?” সাঈদ ধীরপায়ে এগিয়ে আসলো। সাঈদকে দেখে ইরিনা হেসে বলল- “সাঈদ? আমি কী সত্যি সাঈদকে দেখছি?” সাঈদ মুচকি হেসে ভেতরে আসলো। ইরিনাকে দেখে সাঈদ স্তব্ধ হয়ে গিয়েছে। ইরিনা কাজের লোকের দিকে তাকিয়ে বলল- “ও সাঈদ, ইর্তেজা আর সাঈদ ছোটোবেলার বন্ধু। তুমি দ্রুত গিয়ে ওর জন্য নাশতা নিয়ে আসো।” কাজের লোক যেতেই ইরিনা সাঈদের দিকে তাকাল। সাঈদকে চুপচাপ দেখে বলল- “কোথায় হারালে?” সাঈদের ধ্যান ভাঙলো। মুচকি হেসে বলল- “কোথাও না, কেমন আছেন আপনি?” “আলহামদুলিল্লাহ, সাঈদ ওখানে চেয়ার রাখা আছে। প্লিজ কষ্ট করে নিয়ে বসো।” সাঈদ মুচকি হেসে আলমারির পাশ থেকে চেয়ার নিয়ে এসে বসলো। ইরিনাকে দেখে সাঈদ কথা খুঁজে পাচ্ছে না। কী বলবে সে ইরিনাকে? তার যে দুনিয়া থমকে যায় মেয়েটাকে দেখলে। . . ব্যাথা হাত নিয়েই গাড়ি চালাচ্ছে ইর্তেজা। ব্যান্ডেজ করেও লাভ হয়নি। রক্তাক্ত হয়ে গিয়েছে ব্যান্ডেজ। সাগরিকা রাগান্বিত হয়ে বলল- “এই হ্যালো, গাড়ির স্পিড এত কম কেন? আমার এক্সাম আজ। দ্রুত চালাও।” “ম্যাডাম আপনার পরীক্ষা ১১ টায়। আর এখন ১০ টা ১৫ বাজছে। আপনি চিন্তা করবেন না আমি সময়ের….” “একদম চুপ, প্রচুর কথা বলো তুমি। পরীক্ষা দিতে যাচ্ছি তাই মাথা গরম করতে চাই না।” ইর্তেজা চুপ হয়ে গেল। এই মেয়েকে বোঝানো আর লাঙলে গিয়ে পা মারা এক সমান। সাগরিকা ভাবছে কিভাবে এর থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। শ্রাবণ আজ প্রথমবারের মতো তার সাথে খারাপ ব্যবহার করেছে। সাগরিকা কিছুতেই এটা মানতে পারছে না। ইর্তেজার প্রতি রাগ, ঘৃণা জমে গিয়েছে তার মনে। ইর্তেজা আয়না দিয়ে সাগরিকাকে দেখলো। সাগরিকা তার দিকে রাগী দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। ইর্তেজা মুচকি হেসে সামনের দিকে তাকাল। সাগরিকা বেকুব হয়ে গেল। ইর্তেজা হাসলো কেন? চলবে…..

#আর_একটিবার #

শোভা_আক্তার(লাভলী) #পর্ব_১ [অনেকদিন অপেক্ষা করানোর পর গল্প নিয়ে হাজির হলাম। এত অপেক্ষা করানোর জন্য আমি ক্ষমাপ্রার্থী। প্রথম পর্ব তাই ছোটো করে দিলাম। ভুল ধরিয়ে দেয়ার অনুরোধ রইল❤️ হ্যাপি রিডিং❤️]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here