আর একটিবার পর্ব-২০

0
669

#আর_একটিবার
#শোভা_আক্তার(লাভলী)
#পর্ব_২০

সাঈদ মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে। কলেজের প্রত্যেক স্যার ম্যাডামরা তার দিকে তাকিয়ে আছে। সাঈদ চোখ ঘুরিয়ে জেসমিনের দিকে তাকাল। সে তার ক্লাসের এক ম্যামকে জড়িয়ে ধরে কাঁদছে। জেসমিনের বাবা অর্থাৎ প্রিন্সিপাল স্যার এখনো আসে নি কলেজ। একজন স্যার ঘৃণিত কন্ঠে বলল,
“আমার লজ্জা করছে। নিজের স্টুডেন্টদের সাথে কেও এমন জঘন্য কাজ করে?”
সাঈদ তার কথা শুনে রাগী কন্ঠে বলল,
“জেসমিন সবাইকে সত্য কথা বলো নাহলে ভালো হবে না বলে দিচ্ছি।”
জেসমিন ম্যামের দিকে তাকিয়ে কাঁদতে কাঁদতে বলল,
“দেখলেন ম্যাম কেমন ব্যবহার করছে আমার সাথে? আমাকে মিথ্যে কথা বলতে বলছে।”
সাঈদ তেড়ে যেতে নিলো। তখনই একজন স্যার এসে সাঈদকে ধাক্কা দিয়ে বলল,
“খবরদার, আমাদের সামনে নোংরামি করার চেষ্টা করলে এখানেই মে*রে মাটিতে পুঁতে ফেলবো।”
সাঈদ চিৎকার করে বলল,
“আমি তার সাথে কিছু করি নি আপনারা কেন বিশ্বাস করছেন না? ও প্রিন্সিপাল স্যারের মেয়ে বলে আপনারা ওর হয়ে কথা বলবেন? অথচ আপনারা জানেন আমি কেমন মানুষ।”
এক শিক্ষিকা বললেন,
“না, আমরা আপনাকে এখনো চিনি নি। চিনলে তো ভালোই হতো। একটা মেয়ের সম্মান নিয়ে খেলা করতে পারতেন না।”
সাঈদ অবাকের উপর অবাক হচ্ছে। এনারাই সেই মানুষ যারা সাঈদের প্রশংসা করে ক্লান্ত হতেন না। জেসমিন কাঁদতে কাঁদতে বলল,
“আমাকে উনি প্রেমের প্রস্তাব দিয়েছেন৷ আমি না বলায় আমার সাথে…”
এইটুকু বলে আবার কাঁদতে লাগলো। সাঈদ অবাক হয়ে বলল,
“তুমি এত নিচে নেমে গেলে জেসমিন?”
তখনই এক স্যার সাঈদের কলার ধরে বলল,
“নিচে তো তুই নামলি। তোর ছোটো বোনের বয়সি এক মেয়ে সে। আরে তুই কি বুঝবি এক মেয়ের সম্মানের সম্পর্কে রে*পিস্ট কোথাকার।”
সাঈদ নিজেকে ছাড়িয়ে বলল,
“আমি তার সাথে কিছু করি নি”
সেই স্যার কিছু বলতে যাবে তার আগেই প্রিন্সিপাল স্যার আসলেন।
“থামুন আপনারা”
সবাই স্যারকে দেখে সরে দাঁড়ালেন। জেসমিন দৌড়ে গিয়ে তার বাবাকে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কাঁদতে লাগলো। সাঈদ হাতমুঠো শক্ত করে মাথা নিচু করে রেখেছে। তার ঘৃণা লাগছে খুব। জেসমিন বাবার দিকে তাকিয়ে কিছু বলার আগেই বাবা বললেন,
“আপনারা প্লিজ বাহিরে যান আমি সাঈদের সাথে একা কথা বলতে চাই।”
একজন স্যার বললেন,
“ওকে স্যার, প্লিজ ও আপনার প্রিয় ছাত্র ছিল বলে ছেড়ে দেবেন না।”
সবাই এক এক করে চলে গেল অফিস রুম থেকে। জেসমিন যেতে নিলো কিন্তু বাবা তার হাত ধরে বলল,
“তুমিও থাকো। তোমার সাথেও কথা আছে।”
জেসমিন ঢোক গিলল। প্রিন্সিপাল স্যার দরজার বন্ধ করে এগিয়ে গেলেন। নিজের চেয়ারে বসে জেসমিনের উদ্দেশ্যে বললেন,
“সাঈদ কি করেছে তোমার সাথে সব বলো আমায়।”
জেসমিন আমতা আমতা করে বলল,
“উনি..উনি আমায় প্রে..প্রেমের প্রস্তাব দি..দিয়েছিলেন। আমি উ..উনাকে খুব সম..সম্মান করি বলে কাওকে কি..কিছু বলি নি। আজ..আজ আবার প্রপোজ করায় আ..আমি হুমকি দি..দিয়েছি যে আব্বুকে ব..বলে দিবো। এটা বলায় উনি… ”
“হয়েছে, সাঈদ এখন তুমি বলো।”
জেসমিন উঁচু স্বরে বলল,
“উনার কথা শুনতে চাচ্ছো? এখন বানিয়ে বানিয়ে আমার নামে বাজে কথা বলবে।”
“চুপ থাকো তুমি। সাঈদ তুমি বলো।”
সাঈদ মাথা নিচু রেখেই বলল,
“আমি ওর সাথে কিছু করি নি স্যার।”
“আব্বু ও মিথ্যে বলছে।”
প্রিন্সিপাল স্যার উঠে দাঁড়িয়ে জেসমিনের দিকে এগিয়ে গেল। জেসমিন ভয়ে এদিক সেদিক দেখছে। উনি পকেট থেকে মোবাইল বের করে একটা ভিডিও অন করে জেসমিনের হাতে দিলো। পার্কিং প্লেসে যা যা হয়েছে সব মোবাইলের স্ক্রিনে ভাসছে। জেসমিন কাঁপতে শুরু করলো। সাঈদ মাথা উঁচু করে প্রিন্সিপাল স্যারের দিকে তাকাল। প্রিন্সিপাল স্যার জেসমিনের হাত থেকে মোবাইল নিয়ে বলল,
“আমাদের পুরো কলেজে সিসিটিভি ক্যামেরা লাগানো। তোমার কি মনে হয় কারো নামে মিথ্যে অপবাদ দেবে আর আমি বিশ্বাস করে নিবো তুমি আমার মেয়ে বলে?”
জেসমিন মাথা নিচু করে ফেলল। সাঈদ চোখ গড়িয়ে পানি পরছে। প্রিন্সিপাল স্যার তার দিকে তাকাতেই সাঈদ চোখ মুছে মাথা নিচু করে ফেলল। স্যার তার দিকে হেটে এসে হাতজোড় করে বললেন,
“মাফ করে দিও সাঈদ।”
সাঈদ দ্রুত স্যারের হাত ধরে বলল,
“স্যার প্লিজ, প্লিজ আমাকে আর লজ্জিত করবেন না। আমার খুব কষ্ট হচ্ছে যে। জীবনে প্রথম আমার লজ্জা করছে আপনার সামনে দাঁড়িয়ে। আজ যদি আপনি প্রমাণ না পেয়ে জেসমিনের কথায় বিশ্বাস করে নিতেন। আত্ম*হ*ত্যা করতে হতো আমার।”
“আল্লাহ না করুক। তুমি কেমন মানুষ আমি জানি। আমার তো ওকে নিজের মেয়ে বলতে লজ্জা করছে।”
জেসমিন ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠল। প্রিন্সিপাল স্যার ধমকের স্বরে বললেন,
“একদম চুপ। খবরদার ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইল করবে না তুমি। আমার ঘৃণা হচ্ছে তোমাকে দেখে। একবারো এটা ভাবলে না সবাই সত্যিটা জেনে গেলে তোমার বাবার মানসম্মান মাটিতে মিশে যাবে?”
জেসমিন ফুপাতে ফুপাতে বলল,
“তো উনি কেন আমার কথায় রাজি হলেন না? আমি উনাকে অনেক ভালোবাসি।”
সাঈদ হাতমুঠো শক্ত করে মুখ ঘুরিয়ে ফেলল। স্যার হনহন করে এগিয়ে গিয়ে জেসমিনের গালে সজোরে থাপ্পড় মেরে বললেন,
“চুপ বেয়াদব মেয়ে। নিজের বয়স দেখেছো একবার? লজ্জা করে না নিজের বাবার সামনে এসব বলতে?”
জেসমিন গালে হাত দিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছে। সাঈদ জেসমিনের দিকে তাকিয়ে বলল,
“ভালোবাসা এভাবে হাসিল করা যায় না। আমাকে তোমার ভালো লাগে বলে ভাবছো তুমি আমাকে ভালোবাসো? এটাকে ভালোলাগা বলে ভালোবাসা না।”
“তাহলে কি আমাকে আপনার ভালো লাগে না?”
“আমার উপর এত বড়ো অপবাদ দেয়ার পর তুমি এটা আমাকে জিজ্ঞেস করছো জেসমিন?”
“মাফ করে দিন আমায়। আপনি আমাকে থাপ্পড় দেয়ায় আমার খুব রাগ হয়েছিল।”
“তুমি আমাকে জড়িয়ে ধরেছিলে। আপনি তোমার শিক্ষক হই জেসমিন। আমি তোমাকে কখনো ওই নজরে দেখি নি।”
জেসমিন কিছুটা এগিয়ে এসে বলল,
“আমাকে ভালোবাসা যায় না?”
প্রিন্সিপাল স্যার চেয়ারে বসে মাথা নিচু করে ফেললেন। নিজের মেয়ের কান্ড দেখে উনার লজ্জা লাগছে। সাঈদ জেসমিনের দিকে নরম স্বরে বলল,
“এক মনে শত জনকে জায়গা দেয়া যায় না জেসমিন। আমি অন্য কাওকে ভালোবাসি।”
জেসমিন নিজের জামা আঁকড়ে ধরলো। সাঈদ প্রিন্সিপাল স্যারের দিকে তাকিয়ে বলল,
“স্যার আমাকে পারমিশন দিন। আমি আর এই কলেজে থাকতে চাই না।”
প্রিন্সিপাল স্যার সাঈদের দিকে তাকিয়ে বললেন,
“আমি এতটাই লজ্জিত যে, তোমাকে থামাতেও পারবো না। পারলে ক্ষমা করে দিও আমায়।”
সাঈদ স্যারের সামনে হাঁটু গেড়ে বসে বলল,
“আপনি আমাকে যে শিক্ষা দিয়েছেন সেটা কখনো ভুলবো না।”
স্যার সাঈদের মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন,
“ঠিক এই শিক্ষা আমার মেয়েও দিয়েছিলাম। কিন্তু সে সেটা অনেক আগেই ভুলে গিয়েছে হয়তো।”
জেসমিন মাথা নিচু করে কাঁদছে। সাঈদ সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে জেসমিনের দিকে তাকিয়ে বলল,
“মানুষ ভুল থেকেই সঠিক কাজ শিখে। আমি ক্ষমা করে দিয়েছিলাম তাকে। জেসমিন ডাক্তার হতে চায় তাই না? দেখবেন ও একদিন আপনার গর্বের কারণ হবে।”
জেসমিন মাথা তুলে সাঈদের দিকে তাকাল। সাঈদ মুচকি হেসে আবার স্যারের দিকে তাকিয়ে বলল,
“আসি স্যার, আপনাকে ধন্যবাদ।”
বলেই সাঈদ হাঁটা ধরলো। জেসমিনের ডাকায় থেমে গেল। ঘাড় ঘুরিয়ে দেখে জেসমিন কান ধরে রেখেছে। মাথা নিচু করে বলল,
“আই এম সরি”
“নারীদের জন্য সম্মান সবচেয়ে বড়ো সম্পদ। এটাকে খেলা মনে করো না কখনো। আসি, ভালো থেকো।”
দরজা খুলে বাহিরে গেল সাঈদ। সবাই একজোট হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। সাঈদ মাথা নিচু করে হাঁটা ধরলো। তখনই পেছন থেকে কেও একজন ডাকলো তাকে। পেছনে ফিরে দেখে সেই স্যার যে তার কলার ধরেছিল। উনি অপরাধী কন্ঠে বললেন,
“আমরা সিসিটিভি ফুটেজ চেক করেছি। মাফ করে দিও আমাদের।”
“বিষয় যখন একটা মেয়ের সম্মানের ছিল আপনার জায়গা আমি থাকলে ঠিক এমনই রিয়েক্ট করতাম।”
“তুমি সত্যি চলে যাচ্ছো কলেজ থেকে।”
“আজকের দিনটা আমার জীবনের এক কালো অতীত হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমি এখানে থাকলে বার বার এদিন মনে পরবে। আমি যত দ্রুত সম্ভব ভুলে যেতে চাই। আসি ভালো থাকবেন আপনারা।”
সাঈদ ঘুরে আবার হাঁটা ধরলো। বুক এখনো ভারী হয়ে আছে তার৷ মন ভরে কাঁদতে পারলে ভালো লাগতো তার।
.
.
ক্ষুধায় পেট ব্যাথা করছে মাহার। ইর্তেজা এখনো আসেনি। চেয়ার ছেড়ে দাঁড়িয়ে পায়চারি করতে লাগলো। বাদশাহ দরজার পাশে চেয়ারে বসে মোবাইল টিপছে। মাহাকে দেখে বলল,
“আপু কিছু লাগবে আপনার?”
মাহা বাদশাহ’র কথা শুনে থেমে গেল। এদিক সেদিক দেখে বলল,
“আমার সাথে কথা বলছো?”
“হ্যাঁ, আপনি ছাড়া তো আর কোনো আপু নেই এখানে।”
“বাহ আই এম ইমপ্রেস। কিড*ন্যাপাররা এত ভালো হয় আগে জানা ছিল না।”
“আপনাকে তো অত্যাচার করার জন্য নিয়ে আসি নি আমরা। একটা কাজের জন্য নিয়ে আসা হয়েছে। হয়ে গেলেই আপনাকে আপনার বাসায় আমরা নিজে গিয়ে দিয়ে আসবো।”
“আচ্ছা তোমাদের বস এর মাথায় কি কোনো সমস্যা আছে? মানে কিড*ন্যাপ করিয়ে জায়গা কেনার বিষয়টা মাথার উপর দিয়ে গেল।”
“আয়মান খলিলের কাছ থেকে যখন স্যার জমি কিনতে চেয়েছিল সে না করে দেন। শুধু না করেন না স্যারকে যা তা বলে অপমান করে। স্যার মাথা গরম রাখার মানুষ। রাগের বশে উল্টা পাল্টা চিন্তা ভাবনা করেন। উনি উনার স্ত্রীর জন্য ভালো মানুষ হতে চান। নতুন কাজ শুরু করবে ভেবেছে। তাই উনার এই জায়গাটা দরজার।”
“এই জায়গাই কেন? দুনিয়াতে জায়গার অভাব?”
“কারণ হচ্ছে আয়নার খলিল উনাকে অপমান করেছে। তাই উনার জেদ এই জায়গাই লাগবে।”
“ওওও এখন বুঝলাম। আচ্ছা একটা কথা জিজ্ঞেস করি? প্রমিজ করো ইর্তেজাকে বলবে না।”
“বলেন”
“ইর্তেজা কি বিয়ে করেছে?”
“তা তো জানি না। কিন্তু ইর্তেজা ভাই কার সাথে যেন কথা বলে ফোনে।”
মাহা ভাবলো সেও কয়েকবার খেয়াল করেছে ইর্তেজাকে। তার মানে কি সে ইর্তেজার বউ? আবার প্রেমিকাও হতে পারে। মাহার ভেতরে অস্থিরতা কাজ করছে। তখনই ইর্তেজা আসলো। মাহাকে হারিয়ে থাকতে দেখে চোখের সামনে তুড়ি বাজাল। মাহা চমকে উঠে ইর্তেজার দিকে তাকাল। থমকে গেল কিছুক্ষণের জন্য। ইর্তেজার ঘন দাঁড়ি উঠেছে। খুল গুলো এলোমেলো। আগে থেকে একটু মোটা হয়েছে। মাহার আফসোস হলো সে আর ইর্তেজা শুটকি, কাঁচা মরিচ, লম্বা বাঁশ বলে রাগাতে পারবে না। ইর্তেজা বলল,
“চলো বাসায় যাবে।”
মাহার মন খারাপ হয়ে গেল। চলে যাবে বাসায়? চলে গেলে তো আর দেখা পাবে না ইর্তেজার। ইর্তেজা বাদশাহ’র দিকে তাকিয়ে বলল,
“বস কল দিলে সত্যি কথা বলে দিও।”
“স্যার খুব রাগ করবে কাজ পুরো না হলে।”
“আমি আছি তো। আমি বস’কে যেভাবেই হোক এই জায়গা নিয়ে দেবো।”
ইর্তেজা মাহার দিকে তাকিয়ে বলল,
“আমি বাহিরে যাই তুমি আসো।”
বলেই ইর্তেজা বাহিরে গেল। বাদশাহ লম্বা নিশ্বাস ফেলে মাহাকে বলল চলে যেতে। মাহা আশে পাশে চোখ বুলিয়ে দ্রুত গোডাউন থেকে বের হলো। বাহিরে এসে শান্তির নিঃশ্বাস ফেলল। সামনে তাকিয়ে দেখে ইর্তেজা ঘুরে দাঁড়িয়ে আছে। তার হাতে সিগারেট। মাহা দাঁতে দাঁত চেপে ধরলো। এখনো সিগা*রেট খাওয়ার নে*শা যায় নি তার। হনহন করে এগিয়ে গিয়ে বলল,
“আশা করছি তোর কিডনি গুলো ঠিক আছে।”
ইর্তেজা ঘাড় ঘুরিয়ে মাহার দিকে তাকাল। মাহার রাগী দৃষ্টি দেখে মুচকি হাসলো। সিগারেট মাটিতে ফেলে নিভিয়ে বলল,
“হুম ঠিক আছে। আচ্ছা রিকশা নেবো না-কি হেটে যাবি।”
“রিকশা নে আমি হাঁটতে পারবো না।”
ইর্তেজার হাসি উড়ে গেল। বিরক্ত হয়ে বলল,
“ভাবলাম বলবি হেটে যাওয়ার কথা। আমার কাছে টাকা নেই ভাড়া দিতে পারবো না।”
“আজব তো তুই জানিস না যেন আমি হাঁটতে পারি না? একটু মধ্যে ক্লান্ত হয়ে যাই।”
“অলস কোথাকার। হাঁট চুপচাপ।”
বলেই ইর্তেজা হাঁটা ধরলো। মাহা হা হয়ে গেল ইর্তেজার কান্ড দেখে। সেও দৌড়ে গেল তার পেছনে।
.
.
ইরিনা নিজের পায়ের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসছে। সে তার আঙুল নাড়াতে পারছে। ইর্তেজা থাকলে অনেক খুশি হতো। কিছুক্ষণ আগে তার ইর্তেজার সাথে কথা হয়েছে। সন্ধ্যার পর ফিরবে। ঝর্ণা আসলে ঘরে।
“আপা সাঈদ ভাই আইসে।”
সাঈদ এসেছে শুনে ইরিনার মন আরো ভালো হয়ে গেল। সাঈদ ঝর্ণার পাশ কাটিয়ে ঘরে আসলো। আজ সাঈদ পারমিশনও নেয় নি। মাথা নিচু করে এসে খাটে বসলো। ইরিনা তাকিয়ে আছে তার দিকে। সাঈদকে দেখে স্বাভাবিক মনে হচ্ছে না। সাঈদ মাথা নিচু রেখেই ঝর্ণাকে বলল একগ্লাস ঠান্ডা পানি নিয়ে আসতে। ঝর্ণা গেল পানি নিয়ে আসতে। ইরিনা বলল,
“কি ব্যাপার? ঠিক আছো তুমি?”
সাঈদ জবাব দিলো না চুপচাপ বসে আছে। ঝর্ণা পানি নিয়ে আসলো। সাঈদ গ্লাস নিয়ে ঝর্ণাকে বলল চলে যেতে সে কিছু কথা বলতে চায় ইরিনার সাথে। ঝর্ণা চলে গেল। সাঈদ তিন নিশ্বাসে পানি শেষ করে গ্লাস রাখলো। ভেতর থেকে ঠেলে কান্না বের হতে চাচ্ছে। ইরিনার সামনে কান্না করা কি ঠিক হবে তার? ইরিনার ভয় করতে শুরু করলো। সাঈদের হঠাৎ কি হয়েছে সে বুঝতে পারছে না। ইরিনা আবার বলল,
“কি হয়েছে সাঈদ? তুমি চাইলে আমাকে বলতে পারো।”
সাঈদ ইরিনার দিকে তাকাল। চোখ দুটো তার লাল হয়ে আছে। ইরিনার ভয় বাড়লো। সাঈদ লম্বা নিশ্বাস ফেলল। তার চোখের কোনায় পানি জমে চোখ টলমল করছে। চোখ নিচু করে ইরিনাকে সব বলল। ইরিনা থতমত খেয়ে বসে আছে। সাঈদ শেষে হাতমুঠো শক্ত করে বলল,
“আমি বিদেশ থেকে এসেছি। তবুও নিজের চরিত্র খারাপ হতে দেই নি। আর আজ আমার উপর এত বড়ো অপবাদ দিলো একজন।”
সাঈদ নিচের ঠোঁট কামড় দিয়ে ধরে কেঁদে দিলো। ইরিনার কলিজা মোচড় দিয়ে উঠল সাঈদের কান্না দেখে। সাঈদ গালে হাত রেখে কান্না জড়িত কন্ঠে বলল,
“সাঈদ অপবাদ দিলেও তুমি নির্দোষ প্রমাণ হয়েছো। মহান আল্লাহ তায়ালা ভালো মানুষদের সাথে কখনো খারাপ হতে দেন না।”
“যদি নির্দোষ প্রমাণ না হতাম আমার আত্ম*হ*ত্যা করতে হতো।”
ইরিনা সাঈদের হাত জড়িয়ে ধরে কাঁধে মাথা রেখে কেঁদে উঠে বলল,
“প্লিজ এসব বলো না। তোমার কিছু হয়ে গেলে আমি..” ইরিনা সাথে সাথে প্রসঙ্গ পাল্টে বলল “তোমার আম্মু আব্বুর কি হবে বলো।”
সাঈদ ইরিনার দিকে তাকাল। তার এখন শান্তি অনুভব হচ্ছে। ইরিনা খেয়াল করলো সে সাঈদকে ধরে রেখেছে। দ্রুত ছেড়ে চোখ মুছে বলল,
“এসব পরিস্থিতিতে আবার পরলে কখনো হার মানবে না বুঝলে? নিজের ও আল্লাহর উপর ভরসা রাখবে সবসময়।”
সাঈদ চোখ মুছে মাথা নাড়াল। লম্বা নিশ্বাস ফেলে বলল,
“আমি আম্মু আব্বুকে কখনো এই কথা বলতে পারবো না। উনারা অনেক কষ্ট পাবেন। খুব অস্থির লাগছিল আমার। আপনার সাথে শেয়ার করে শান্তি লাগছে।”
ইরিনা মাথা নিচু করলো। সাঈদের ইচ্ছে করছে ইরিনাকে নিজের মনের কথা বলতে। কিন্তু তার মনের ভয় তো কাটে নি। ইরিনা যদি রাগ করে। আচ্ছা ইরিনা কি তাকে ভাই ভাবে? সাঈদের খুব বিরক্ত লাগছে। যাকে নিজের জানপ্রাণ দিয়ে ভালোবাসে সে যদি ভাই মনে করে কেমন লাগে তখন। ইরিনা সাঈদের চেহারা দেখে বলল,
“আবার কি হলো? হঠাৎ রেগে যাচ্ছো মনে হয়।”
সাঈদ ইরিনার দিকে বিরক্ত হয়ে তাকিয়ে বলল,
“ধরুন আপনি কাওকে ভালোবাসেন কিন্তু সে মানুষটা আপনাকে নিজের বোন মনে করে তখন আপনি কি করবেন?”
ইরিনা সাঈদের প্রশ্ন শুনে মনে মনে বলল, “এটা জিজ্ঞেস করার কি আছে? আমি তো সহ্য করেই যাচ্ছি। যাকে ভালোবাসি সে বড়ো বোন মনে করে আমায়।”
কিন্তু মুখে বলল,
“আমার তো কিছুই করার নেই। হঠাৎ এই প্রশ্ন করলে কেন? নিশ্চয়ই যাকে পছন্দ করো সে তোমাকে ভাইয়া ডাকে।”
“ভাইয়া তো ডাকে না। কিন্তু আমি জানি সে আমাকে ভাই মনে করে।”
ইরিনার মন খারাপ হলো। যদিও সে জানে সাঈদ ও তার কোনো ভবিষ্যত নেই তবুও এই অপরাধী মন মানে না। ইরিনা হাসিমুখে বলল,
“আমি দোয়া করবো তুমি যাতে তাকে পাও।”
সাঈদ ইরিনার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলো।
.
.
শ্রাবণের সামনে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে বাদশাহ। শ্রাবণ রাগে ফুঁসছে। সাগরিকা ট্রে তে করে চা নিয়ে এসে টি টেবিলের উপর রাখলো। সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে বলল,
“বাদশাহ চা খাবে?”
বাদশাহ ভয়ে হ্যাঁ না কিছুই বলতে পারছে না। শ্রাবণ রাগে গজগজ করতে করতে বলল,
“ওকে চায়ের সাথে বি*ষ মিশিয়ে দাও।”
“আহা শ্রাবণ। ও ছোটো মানুষ ওকে বকছো কেন?”
“ও ছোটো? বড়ো বড়ো ক্রা*ইম পর্যন্ত করতে পারবে জানো তুমি?”
“নিজের সাথে ওকে রেখে নিজের মতো বানিয়ে ফেলেছো। ও তো সূর্য থেকেও ২/৩ বছর ছোটো হবে। বাদশাহ বসো আমি চা দিচ্ছি।”
শ্রাবণ ধপ সোফায় বসে বলল,
“এখন আমি ভালো মানুষ কিভাবে হবো?”
সাগরিকা চা ঢালছিল কাপে শ্রাবণ কথা শুনে চমকে উঠল। কিছুক্ষণ থমকে থেকে ফিক করে হেসে দিলো। শ্রাবণ বিরক্ত হয়ে বলল,
“হেসো না আমি এখন রেগে আছি।”
সাগরিকা চেষ্টা করেও হাসি বন্ধ করতে পারছে না। শ্রাবণ এক সময় ধমকের স্বরে বলল,
“চুপ থাকো বলছি।”
সাগরিকা উল্টো ধমক দিয়ে বলল,
“তুমি মুখ বন্ধ রাখো। আমি হাসবো তোমার কি?”
“আচ্ছা হাসো সমস্যা নেই।”
শ্রাবণ চুপসে গেল। বাদশাহ’র খুব হাসি আসছে। সাগরিকা ভেংচি কেটে বাদশাহ কে বলল বসতে। কিন্তু বাদশাহ বলল সে চলে যাবে এখন। সাগরিকা অনেক জোড় করলো কিন্তু বাদশাহ শ্রাবণের কাছ থেকে পারমিশন নিলো চলে যাওয়ার। শ্রাবণ অগ্নি দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে তার দিকে। সাগরিকা তা দেখে বলল,
“খবরদার এভাবে তাকাবে না ওর দিকে। যেতে দাও ওকে। ভালো মানুষরা বাজে ব্যবহার করে না।”
সাগরিকার কথা শুনে শ্রাবণ জোরপূর্বক হাসি দিয়ে বলল,
“তুমি যেতে পারো বাদশাহ।”
বাদশাহ সুযোগ পেয়ে যত দ্রুত পারলো পালালো। সাগরিকা শ্রাবণের পাশে বসে বলল,
“তোমার ওই জায়গাই কেন লাগবে বলো তো।”
শ্রাবণ সাগরিকার দিকে তাকাল। এক নজর দেখে আবার মাথা নিচু করে ফেলল। সাগরিকা শ্রাবণের শার্টের কলার ঠিক করে বলল,
“আমাকে বলা যাবে না?”
শ্রাবণ সাগরিকার দিকে তাকিয়ে বলল,
“আমি বলেছিলাম তোমাকে যে আমি একটা অনাথ আশ্রমে থাকতাম তাই না?”
“হুম, তারপর?”
“আমি কিছুদিন ধরে ভাবছিলাম সেই অনাথ আশ্রমে ডোনেশন দেবো।”
“এটা তো খুব ভালো কথা। কিন্তু সেই জায়গার সাথে তোমার আশ্রমের কি সম্পর্ক?”
“আয়মান খলিল সেই অনাথ আশ্রম ভেঙ্গে ফেলেছে। সে সেই জায়গা উঁচু দামে বিক্রি করতে চায়। আমি অনেক টাকা অফার করেছি তাকে৷ কিন্তু সে আমাকে অনেক অপমান করেছে। আমি কসম খেয়েছি ওই জায়গা কিনেই ছাড়বো।”
সাগরিকা অবাক হলো ভীষণ। সে তো শ্রাবণের এমন রূপ আগে কখনো দেখেনি। শ্রাবণ মন খারাপ করে বলল,
“আমি আবার সেই অনাথ আশ্রম বানাতে চাই। কিছুদিন আগে প্রথমবার একটা গরীবের সাহায্য করেছি টাকা দিয়ে। তার মুখের হাসিটা দেখে খুব শান্তি লাগছিল। হঠাৎ মনে পড়ে যায় আমিও একসময় কারোর কাছ থেকে সাহায্য পেয়ে এভাবে হাসতাম।”
সাগরিকার মনে হচ্ছে দুনিয়ার সকল সুখ তার মনে এসে ঠাই নিয়েছে। সে শ্রাবণের বুকে মাথা রাখলো। অনেক কিছু বলতে ইচ্ছে করছে তার কিন্তু সুখ তার গলা চেপে ধরেছে। সুখের কান্না আসছে তার। শ্রাবণ সাগরিকার দিকে তাকিয়ে তাকে ডাকলো। সাগরিকা চোখ তুলে শ্রাবণের দিকে তাকাল। শ্রাবণ মুচকি হেসে বলল,
“আজকাল তোমার ব্যবহার দেখে আমি মুগ্ধ হচ্ছি।”
“কেন?”
“হঠাৎ এত ভালোবাসা আমার প্রতি।”
“হয়তো ভালোবেসে ফেলেছি তোমায়।”
শ্রাবণ চমকে তাকাল সাগরিকার দিকে। সাগরিকা সোজা হয়ে বসে বলল,
“চা দেবো?”
শ্রাবণ হেসে দিলো। সাথে সাগরিকাও হাসলো।
.
.
রাস্তা খুব তারাতাড়ি শেষ হয়ে গেল মনে হচ্ছে। বাসার খুব কাছাকাছি এসে পড়েছে মাহা ও ইর্তেজা। মাহার ইচ্ছে করছে ইর্তেজার হাত ধরে আবার সেই জায়গায় ফিরে যেতে। ইর্তেজা আশে-পাশে ছিল বলে তার ভেতর এক প্রকার শান্তি ছিল। এখন গিয়ে এক বিশাল অশান্তির শিকার হতে হবে। ইর্তেজা দাঁড়াল। সাথে মাহাও। ইর্তেজার দিকে তাকিয়ে বলল,
“দাঁড়ালে যে?”
ইর্তেজা চোখের ইশারায় মাহাকে ডান দিকে দেখতে বলল। মাহা তাকিয়ে দেখে তার বাসা এসে পড়েছে। মন খারাপের শেষ পর্যায়ে পৌঁছে গেল সে। ইর্তেজা বলল,
“আসি তাহলে।”
মাহা ইর্তেজার দিকে তাকিয়ে বলল,
“আমি ভেতরে গিয়ে কি বলবো?”
“তা তো জানি না। আমি ভেতরে যাব তোমার সাথে?”
“তোমাকে দেখে যদি তারা বাজে কিছু ভেবে বসে?”
“আমিও এটা ভাবছিলাম।”
“আচ্ছা আমি সামলে নেবো।”
“তাহলে চলে যাই আমি।”
মাহা ইর্তেজার দিকে শান্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল। ইর্তেজা মাহাকে এক নজর দেখে হাঁটা ধরলো। তার কিছুই বলার নেই মাহাকে। মাহা ইর্তেজার যাওয়ার পথে তাকিয়ে রইল। ইর্তেজা চলে গেল। সত্যি চলে গেল। আবার তাকে ছেড়ে চলে গেল। মাহা চোখের পানি মুছে মেইন দরজা ঠেলে ভেতরে ঢুকলো। দারোয়ান মামা তাকে দেখে বলল,
“আম্মাজান, কই ছিলেন আপনে? বড়ো সাহেব পাগলের মতো খুঁজছে আপনেরে।”
“চাচু রেগে আছে তাই না?”
দারোয়ান মামা হ্যাঁ সূযোগ মাথা নাড়াল। মাহা লম্বা নিশ্বাস ফেলে এগিয়ে গেল। ভেতরে গিয়ে দেখে বাড়ির দরজা খোলা। বাড়ির ভেতরে প্রবেশ করে চমকে উঠল। সায়ান বসে আছে। সায়ান চায়ের কাপ রেখে দরজার দিকে তাকাল। মাহা দাঁড়িয়ে আছে। সায়ান উঠে দাঁড়াল। উঁচু স্বরে হেসে বলল,
“বাহ, তুমি দেখি খুব নির্লজ্জ। অন্য কারোর সাথে রাত কাটিয়ে এসে আবার ফিরে আসলে?”
মাহার শরীর ঘিনঘিন করছে সায়ানের কথা শুনে। সায়ানের কথা শুনে মাহার চাচু আর চাচী দ্রুত আসলো। চাচী মাহাকে দেখে দৌড়ে গিয়ে জড়িয়ে ধরলো। মাহা শান্তির নিঃশ্বাস ফেলল। এই মানুষটা আছে বলেই সে সাহস করে এসেছে। চাচী মাহাকে ছেড়ে গালে হাত রেখে কাঁদতে কাঁদতে বলল,
“মামনি কোথায় ছিলি তুই? তুই ঠিক আছিস তো?”
মাহা হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়াল। মাহার চাচু রাগে চিল্লিয়ে বলল,
“তোর সাহস কি হলো আমার বাড়িতে পা রাখার? তোর কারণে আমার কত লজ্জিত হতে হয়েছে জানিস? পালাতে হলে আরো আগে পালাতি নিজের বিয়ের দিনই কেন?”
মাহার গলা দিয়ে শব্দ বের হচ্ছে না। চাচী রাগী কন্ঠে বলল,
“চুপ থাকবেন আপনি? আপনারা কেন ওর সাথে এমন করেন বলেন তো? এমনও তো হতে পারে ও কোনো বিপদে ছিল। আমি বলেছিলাম আপনাকে কেও একজন আমাকে মাথায় ভারী কিছু দিয়ে মারায় আমি জ্ঞান হারিয়েছিলাম।”
মাহা চাচীর দিকে তাকাল। চাচী আবার মিথ্যে বলেছে তার জন্য। সায়ান মাহার দিকে এগিয়ে আসলো। মাহা কাঁপছে ভয়ে। সায়ান শান্ত কন্ঠে বলল,
“কোথায় ছিলে মাহা?”
মাহা সায়ানের দিকে তাকাল। কি বলবে ভেবে পাচ্ছে না। সায়ান উঁচু স্বরে আবার জিজ্ঞেস করলো। মাহা এবারও জবাব দিলো না। সায়ান রাগে কটমট করতে করতে সজোরে মাহার গালে চড় মেরে দিলো। চাচী কিছু বলার আগেই মাহার চাচু বলল তাদের মাঝে না বলতে। স্বামীর সামনে উনিও বাধ্য। মাহা নিঃশব্দে চোখের জল ফেলছে। সায়ান মাহার বাহু চেপে ধরে বলল,
“তোর মতো মেয়েকে আমি বিয়ে করতে রাজি হয়েছি এটা তোর সৌভাগ্য।”
মাহা ব্যাথায় ছটফট করছে। তখনই কেও একজন ভেতরে প্রবেশ করলো। সবাই সেখানে তাকাল। চাচী অবাক হয়ে বলল, “ইর্তেজা?”

চলবে…….

[ব্যস্ত ছিলাম বলে গল্প দিতে দেরি হলো। লিখার পর এডিট করার সময় পাই নি। ভুল ত্রুটি ক্ষমা করে দিয়েন]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here