আর একটিবার পর্ব-২৫

0
1108

#আর_একটিবার
#শোভা_আক্তার(লাভলী)
#পর্ব_২৫

সাঈদ চেয়ার লাগিয়ে খাটের পাশেই বসে মোবাইল টিপছে। আড়চোখে ইরিনাকে দেখে আবার মোবাইলের দিকে তাকাল। ইরিনা চুলে হাত খোঁপা করছে। সাঈদ গান ধরলো,
“কন্যা রে, কন্যা রে-
বাঁকা চুলেতে খোঁপা,
আর বাঁইধো না রে।
ঐ চুলেতে জাদু আছে রে,
আমার ঘুম আসেনা রাতে
একলা ঘরে রে।”
ইরিনা থেমে গেল। চোখ ঘুরিয়ে সাঈদকে দেখলো। সে মোবাইলের দিকে তাকিয়ে গান গাইছে। ইরিনা আর খোঁপা করলো না। খোলা চুল রেখে খাটের সাথে হেলান দিলো। সাঈদ ইরিনার দিকে তাকিয়ে বলল,
“আমি তো এইভাবেই গান গাইছিলাম। তুমি তো সিরিয়াস হয়ে গেলে।”
ইরিনা চোখ ছোটো ছোটো করলো। সাঈদ হেসে আবার বলল,
“সরি, দুষ্টুমি করছিলাম।”
“তোমার কি মনে হচ্ছে না আজ একটু বেশিই দুষ্টুমি করছো?”
“আব্বুকে প্রায়ই দেখি আম্মুর সাথে এমন দুষ্টুমি করে। শুনেছি এটা না-কি ভালোবাসা প্রকাশ করার নিয়ম।”
“ভালোবাসা প্রকাশ করার আরো অনেক নিয়ম আছে।”
“তুমি কিভাবে প্রকাশ করবে তোমার ভালোবাসা?”
“আমি ভালোবাসা টালোবাসা বুঝি না।”
সাঈদ হেসে উঠে গিয়ে ইরিনার পায়ের কাছে বসলো। ইরিনা তা দেখে চেষ্টা করছে পা সরানোর। কিন্তু পারছে না। সাঈদ ইরিনার দিকে তাকিয়ে বলল,
“আমি তোমাকে ভালোবাসার আগে তোমার সম্মান করি। একবার নিজের মনের কথা বলে তো দেখো। কসম খেয়ে বলছি পুরো দুনিয়ার বিরুদ্ধে গিয়ে তোমার পাশে দাঁড়াব।”
ইরিনা তাকিয়ে রইল সাঈদের দিকে। সে কি বলবে এই ছেলেটাকে? পুরো দুনিয়ার আগে তো তার মা বাবা এই সম্পর্কের বিরুদ্ধে চলে যাবে। সাঈদ ঘড়ির দিকে তাকিয়ে বলল,
“তোমার তো পা মালিশের সময় হয়েছে। আমি তেল গরম করে নিয়ে আসি।”
বলেই সাঈদ উঠে দাঁড়াল। ইরিনা থতমত খেয়ে বলল,
“লাগবে না, বসো চুপচাপ।”
“তুমি চুপচাপ বসো। ভবিষ্যতে আমাদের বিয়ে হলে আমারই তো করতে হবে এসব।”
“আর যদি না হয়?”
“আমি এমনটা ভাবছি না।”
বলেই সাঈদ ড্রেসিং টেবিলের উপর থেকে তেলের বোতল নিয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে গেল। ইরিনা বসে নখ কামড়াতে লাগলো। সাঈদের কান্ড দেখে তার মাথা কাজ করছে না। এই ছেলেটা বিপদ ডেকে আনবে তার মন বলছে।
.
.
ইর্তেজা মাথায় হাত দিয়ে চোখ বন্ধ করে বসে আছে। শ্রাবণকে ঘুমের ইনজেকশন দিয়ে ঘুম পাড়াতে হয়েছে। মাহা ইর্তেজার জন্য চা নিয়ে আসলো। ইর্তেজার পাশে বসতেই ইর্তেজা মাহার দিকে তাকাল। মেয়েটাকে দেখে তার ক্লান্তি কিছুটা দূর হলো। মাহা কাপ এগিয়ে দিলো ইর্তেজার দিকে। ইর্তেজা কাপ নিয়ে বলল,
“আমার কারণে তুমি কত কিছু সহ্য করছো।”
“তুমি আর আমি কি আলাদা? আমাদের দেহ আলাদা হলেও প্রাণ একই।”
“তুমি আর তোমার মুগ্ধকর ফিল্মি ডায়লগ। ঘায়াল হয়ে গেলাম।”
মাহা হেসে ইর্তেজার গালে হাত দিয়ে কপালে চুমু দিলো। ইর্তেজার ইচ্ছে করছে সব ভুলে মাহার বাহুডোরে কিছুক্ষণ আবদ্ধ হয়ে থাকতে। মাহা ইর্তেজা কপালে থাকা চুল গুলো ছুঁয়ে বলল,
“তুমি এত ভালো কেন ইর্তেজা? আমাকে সবাই জিজ্ঞেস করতো আমি কেন তোমাকেই বেছে নিয়েছিলাম নিজের জন্য। আমি জবাব দিতে পারতাম না। কারণটাই তো জানতাম না। আজ বুঝলাম কেন আমি তোমাকে ছাড়া আর কাওকে ভালোবাসতে পারি নি।”
ইর্তেজা মাহাকে ধরে বুকের সাথে জড়িয়ে ধরে বলল,
“তোমাকে ভালোবাসার শত কারণ আছে। জানো, তুমি না ফিরে আসলে আমি হয়তো এতদিনে সাগরিকাকে মন দিয়ে বসতাম।”
মাহা ভ্রু কুঁচকে সোজা হয়ে বসে ইর্তেজার দিকে তাকাল। ইর্তেজা জানতো মাহা এমনই রিয়্যাকশন দেবে। ইর্তেজা হেসে চায়ের কাপে চুমুক বসালো। মাহা ভ্রু কুঁচকে বলল,
“এর মানে কি?”
ইর্তেজা মাহাকে সব বলল। সাগরিকার প্রতি মায়া, তার প্রতি হঠাৎ করে ভালো লাগা কাজ করা মনে। কিছু বাদ রাখলো না। মাহা ভেংচি কেটে বলল,
“তোকেও সেই ছেলেদের কাতারে ফেলা দরকার।”
“এই! আমি বাজে মানুষ না কিন্তু। সাগরিকার প্রতি শুধু ভালো লাগা কাজ করে। তুমি তো আমার ভালোবাসা।”
“ওহো তাই? প্রমাণ দেখাও যে আমি ছাড়া আর কেও নেই তোমার মনে।”
“হসপিটালে আছি আমরা। তুমি বললে এখনই ডাক্তারকে ডেকে আমার হৃদয় অপারেশন করে বের করে দেখাই। আমার মনে শুধুমাত্র তোমার বসবাস।”
“হয়েছে হয়েছে, ফ্লপ মুভির সস্তা ডায়ালগ দিয়ে লাভ নেই।”
ইর্তেজা শব্দ করে হেসে উঠল।
.
.
সাগরিকা খাটের বসে হাঁটুতে মুখ গুঁজে রেখেছে। পুরো ঘর অন্ধকার৷ পুরো শরীর তার কাঁপছে। ভয় করছে খুব। তার জীবন এত কঠিন কেন হয়ে গেল বুঝতে পারছে না। সূর্য দরজার খুলে দেখে সাগরিকা এখনো বসে আছে আগের মতো। সূর্য এগিয়ে গেল। সাগরিকার পাশে বসতেই সাগরিকা চমকে মাথা তুলে তাকাল। সূর্যকে দেখে সাগরিকা লম্বা নিশ্বাস ফেলল।
“কি হয়েছে তোমার? এমন করছো কেন? খাবারও খাওনি এখনো।”
“ক্ষু..ক্ষুদা নেই”
“তুমি কি না খেয়ে নিজেকে মা*রার প্ল্যান করছো? আত্ম*হ*ত্যা করলে কি সব সমাধান হয়ে যাবে?”
“আ..আমাকে কি পাগ..পাগল কুকুর কামড়িয়েছে? আমি কেন আত..আত্ম*হ*ত্যা করবো?”
সূর্য সাগরিকার হাত নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে বলল,
“শ্রাবণ তোমাকে অনেক ভালোবাসে আমি জানি। কিন্তু আপু, তুমি ওর সাথে থাকতে পারবে না। তুমি মানসিক অশান্তিতে ভুগবে।”
“আমি জানি, তাই তো তাকে ছেড়ে চলে এসেছি।”
“শ্রাবণ সুস্থ হলে ওকে কোর্টে নিয়ে যাওয়া হবে। তার শা*স্তি খুব ভয়ংকর হতে পারে। তুমি নিজেকে শক্ত রাখার চেষ্টা করো। আমি চাই না আমার বোন তার শা*স্তির সম্পর্কে জানার পর ভেঙ্গে পরুক।”
“ফাঁ*সি হয়ে যাক। আমার কি? আমি আর ওর কথা ভাবছি না।”
“তাই? তাহলে তাকে ছেড়ে আসার পর থেকে নিজেকে বন্দী করে রেখেছো কেন?”
“তোর থেকে লুকাবো না। আমার সত্যি খুব কষ্ট হচ্ছে। বুঝতে পারছি না কিভাবে নিজেকে এই কষ্ট থেকে মুক্ত করবো। আত্ম*হ*ত্যা মহাপাপ না হলে এক মুহূর্তের জন্যও ভাবতাম না।”
“আপু, আমার জন্য হলেও তোমাকে বাঁচতে হবে।”
সাগরিকা সূর্যের দিকে তাকাল। এই মানুষটা ছাড়া আর কেও নেই এখন তার জীবনে। ছোটো ভাইকে নিজের সন্তানের মতো বড়ো করেছে। নিজে ভেঙ্গে পরলে ওকে কে সামলাবে। সাগরিকা চোখের পানি মুছে সূর্যের হাত ধরে বলল,
“আমার কিছু হবে না। আমার বেঁচে থাকার কারণ তো এখন শুধুমাত্র তুই।”
“তাহলে আমার কথা শোনো। কিছু খেয়ে নাও। ডাক্তার কিছু লিখে দিয়েছে কিনে নিয়ে এসেছি আমি। সেগুলোও তো খেতে হবে।”
সাগরিকা মাথা নাড়াল সূর্যের কথা শুনে। সূর্য মুচকি হেসে সাগরিকার হাতে চুমু দিয়ে বিছানা থেকে নেমে ঘর থেকে বের হলো। সাগরিকা ঘনঘন নিশ্বাস ফেলছে। এত কষ্ট সে আগে কখনো অনুভব করেনি। মনে হচ্ছে ম*রে গেলে এই কষ্ট থেকে মুক্তি পেতে পারতো।
.
.
মাহা আর ইর্তেজা বাসায় ফিরে আসলো। বাহিরের দরজা খোলাই ছিল। ইর্তেজা ভ্রু কুঁচকে মাহার দিকে তাকিয়ে বলল,
“সাঈদ হয়তো চলে গিয়েছে। শা*লা দরজাটাও বন্ধ করেনি। আপু হয়তো একা ঘরে।”
“আচ্ছা তুমি শান্ত হও। ইন শাহ আল্লাহ আপু ঠিক আছে।”
মাহা আর ইর্তেজা ইরিনার ঘরে গেল। গিয়ে দুজনই থমকে গেল। ইরিনা খাটে ঘুমিয়ে আছে। আর সাঈদ মাটিতে বসে ইরিনার হাত মুঠোয় নিয়ে মুঠোর উপর গাল ঠেকিয়ে চোখ বন্ধ করে রেখেছে। দৃশ্যটা দেখে ইর্তেজার ভালো লাগলো না। মাহা ইর্তেজার দিকে তাকাল। ইর্তেজার চাহনি দেখেই মাহা আন্দাজ করতে লাগলো ইর্তেজার মনে কি চলছে৷ মাহা ইর্তেজার হাত ধরে টেনে বাহিরে নিয়ে গিয়ে বলল,
“কি হয়েছে তোমার? রাগ হচ্ছো কেন?”
“সাঈদ এভাবে আপুর হাত ধরে রেখেছে কেন?”
“আসো কল্পনা করি, আমি খুব অসুস্থ। তুমি সারাদিন আমার সেবা করলে। আমি শুয়ে থাকতে থাকতে ঘুমিয়ে পরলাম। তুমি চুপচাপ মাটিতে বসে আমার হাত ধরে আমার দিকে তাকিয়ে রইলে। তাকিয়ে থাকতে থাকতে তুমিও ঘুমিয়ে পরলে। হাও রোমান্টিক না?”
ইর্তেজা বিরক্ত হয়ে বলল,
“মাথা খারাপ হয়ে গিয়েছে তোমার? কি আজে বাজে বলছো বলো তো?”
“ইর্তেজা, একটা কথা বলার আছে তোমায়।”
“কি কথা?”
মাহা অপ্রস্তুত হলো। বলবে ইর্তেজাকে? এমনিতেই সে খুব টেনশনে আছে সাগরিকা আর শ্রাবণের বিষয় নিয়ে। মাহার ভাবসাব দেখে ইর্তেজা মাহার হাত ধরে বলল,
“আমাকে বিশ্বাস করিস তো?”
মাহা হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়াল। ইর্তেজা মুচকি হেসে মাহার কপাল ছোঁয়া চুল সরিয়ে বলল,
“তাহলে বলে ফেল যা বলতে চাচ্ছিস।”
“আগে ওয়াদা কর, শোনার পর বাজে ব্যবহার করবি না সাঈদ ভাইয়ার সাথে।”
“মাহা, বলবি কি না?”
“বলছি বলছি, আসলে.. আসলে ইর্তেজা, সাঈদ ভাইয়া আর আপু একে অপরকে ভালোবাসে।”
এক নিশ্বাসে কথাটা বলে মাহা লম্বা নিশ্বাস ফেলল। মাহার কথা শুনে ইর্তেজার চোখ বড়ো বড়ো হয়ে গেল। কিছুক্ষণ অবাক হয়ে তাকিয়ে থেকে বলল,
“তোর কি মাথা খারাপ হয়ে গিয়েছে? সাঈদ আপুকে নিজের বড়ো বোনের নজরে দেখে।”
“আস্তাগফিরুল্লাহ্ বল, দুজন ভালোবাসার মানুষকে তুই ভাই বোন বানাচ্ছিস।”
“মাহা দেখ, আমি জানি তুই মজা করছিস। কিন্তু আমার মোটেও ভালো লাগছে না।”
“আমাকে দেখে কি পাগল মনে হয় তোর? আমি এই বিষয় নিয়ে মজা করবো কেন?”
“আমি বিশ্বাস করতে পারছি না।”
তখনই দরজার পাশ থেকে সাঈদের কন্ঠ ভেসে আসলো,
“এটাই সত্যি ইর্তেজা”
ইর্তেজা আর মাহা দরজার দিকে তাকাল। সাঈদ ইরিনার ঘর থেকে ধীরপায়ে বের হয়ো এসে ইর্তেজার সামনে দাঁড়াল। ইর্তেজার রাগ হচ্ছে খুব। সে এই বিষয়টা ভালো নজরে দেখতে পারছে না। সাঈদ মাহার দিকে তাকিয়ে বলল,
“মাহা যা বলছে সব সত্যি। আমি সত্যি উনাকে খুব ভালোবাসি।”
বলেই সাঈদ ইর্তেজার দিকে তাকাল। ইর্তেজা রাগে গজগজ করছে। সাঈদ ইর্তেজার চেহারা দেখে মাথা নিচু করে বলল,
“তোর বন্ধুত্ব হারানোর ভয়ে বলি নি তোকে।”
ইর্তেজা কিছুটা শান্ত হলো। তবুও তার ভালো লাগছে না। সাঈদ ইর্তেজার দিকে আবার তাকাল। ইর্তেজা বলল,
“আপু তোর বন্ধুর বড়ো বোন। এটা জানার পরও কেন?”
সাঈদ জবাব দিতে পারছে না। মাহা এক মাঝে বলল,
“ইর্তেজা, ভালোবাসা অনুভূতির উপর রাজত্ব চালানো যায়? তুমি কি ইচ্ছে করে আমাকে ভালোবেসেছো? ভালোবাসা তো হঠাৎ করেই হয়ে যায়।”
ইর্তেজা মাহার দিকে তাকিয়ে আছে রাগে চিল্লিয়ে বলল,
“তাই বলে কি নিজের বন্ধুর বড়ো বোনকে ভালোবেসে বসবে?”
হঠাৎ চিৎকার শুনে ইরিনার ঘুম ভেঙ্গে গেল। ধরফরিয়ে উঠে বসলো সে। বাহিরে কি হচ্ছে বুঝতে পারছে না। সে ইর্তেজাকে ডাকলো। ইরিনার ডাক শুনে ইর্তেজা একবার রাগী দৃষ্টিতে সাঈদকে দেখে ঘরে গেল। মাহা সাঈদকে বলল,
“চিন্তা করবেন না। হঠাৎ শুনেছে তো তাই তার মাথা খারাপ হয়ে গিয়েছে। আপুও আপনাকে ভালোবাসে এটা জানার পর ঠিক রাজি হয়ে যাবে।”
সাঈদ মাথা নিচু করে ফেলল। মাহাও গেল ইর্তেজার পেছন। ইরিনাকে দেখে ইর্তেজা শান্ত হওয়ার চেষ্টা করলো৷ মাহাও আসলো। ইর্তেজা আর মাহাকে দেখে ইরিনা বলল,
“তোরা ঝগড়া করছিলি? মাহা, কিছু বলেছে ও তোমায়?”
মাহা কি বলবে বুঝতে পারছে না। ইর্তেজা কিছু কদম এগিয়ে গিয়ে বলল,
“আপু একটা কথা জিজ্ঞেস করি তোমায়?”
“হ্যাঁ কর”
“তুমি সাঈদকে ভালোবাসো?”
হঠাৎ এই প্রশ্ন শুনে ইরিনার মাথা শূন্য হয়ে গেল। ওড়না চেপে ধরে মাথা নিচু করে ফেলল। অস্থিরতা হচ্ছে ভেতরে। ইর্তেজা এগিয়ে গিয়ে ইরিনার পাশে বসে বলল,
“আপু, সত্যি বলো আমায়।”
ইরিনা মাথা তুলে ইর্তেজার দিকে তাকাল। কিছু বলতে পারছে না। কেও যেন গলা চেপে ধরে রেখেছে৷ সাঈদ আসলো ভেতরে। সাঈদকে দেখে ইরিনা আরো এলোমেলো হয়ে গেল। কি বলবে সে এখন? ইর্তেজা আবার বলল,
“আপু তুমি বলছো না কেন?”
ইরিনা ইর্তেজার দিকে তাকিয়ে বলল,
“সাঈদ আমার ছোটো ভাইয়ের বন্ধু আমি কিভাবে ওকে ভালোবাসতে পারি?”
সাঈদ হাতমুঠো শক্ত করে মুখ ঘুরিয়ে ফেলল। মাহা অবাক হয়ে গেল ইরিনার কথা শুনে। ইর্তেজা দাঁড়িয়ে মাহার দিকে তাকিয়ে বলল,
“মিথ্যে বললি কেন তুই আমায়?”
মাহা ইরিনার দিকে তাকিয়ে বলল,
“আপু আপনি সত্যিটা কেন লুকাচ্ছেন?”
“চুপ থাক মাহা। আমার বোন আমাকে কখনো মিথ্যে কথা বলে না।”
বলেই সাঈদের দিকে তাকাল। সাঈদ মুখ ঘুরিয়ে ইর্তেজাকে দেখে আবার ইরিনার দিকে তাকাল। ইরিনা সাঈদের চাহনি দেখে মাথা নিচু করে ফেলল। সাঈদ লম্বা নিশ্বাস ফেলে ঘর থেকে বের হতে নিলো। ইর্তেজা গিয়ে সাঈদের পথ আটকে বলল,
“কোথায় যাচ্ছিস তুই?”
সাঈদ মাথা নিচু রেখেই বলল,
“চলে যাচ্ছি”
“তোর সাহস কি করে হলো আমার বোনের দিকে নজর দেয়ার?”
ইর্তেজার রাগ দেখে ইরিনার বুক কাঁপছে। ঠিক এই ভয়ের কারণেই সে ইর্তেজাকে আগে বলেনি। সাঈদ বলল,
“মাফ করে দিস। ওয়াদা করছি আর কখনো এই বাসায় আসবো না।”
ইর্তেজা সাঈদের কলার ধরে বলল,
“তোর জান টেনে নিয়ে নেবো আবার আমার চোখের সামনে আসলে।”
ইর্তেজার চিৎকার করে ইরিনা বলল,
“ইর্তেজা ছাড় সাঈদকে।”
“আপু থামাবে না খবরদার। ওর সাহস কি করে হলো তোমার দিকে বাজে নজরে দেখার?”
“বাজে নজর? সাঈদ কখনো আমাকে বাজে নজরে দেখেনি ইর্তেজা। সে তো সবসময় আমাকে সম্মান করেছে। আমরা অনেক সময় একা ঘরে বসে আলাপ করেছি। সবসময় মাথা নিচু করে আমার সাথে কথা বলতো।” তোর পর যদি আমি সবচেয়ে বেশি কাওকে বিশ্বাস করতে পারি সে হলো সাঈদ।”
ইর্তেজা সাঈদের কলার ছেড়ে বলল,
“আমাকে কি নিজের শত্রু মনে করো তুমি? আর তোমার কি মনে হয় আমি বুঝতে পারি না আমার বোন আমাকে সত্যি বলছে না-কি মিথ্যে?”
মাহা আর সাঈদ অবাক হয়ে ইর্তেজার দিকে তাকাল। ইরিনা কিছুই বুঝতে পারছে না। ইর্তেজা সাঈদের দিকে তাকিয়ে বলল,
“ছোটোবেলা থেকে সাঈদকে চিনি। ও তোমাকে কেন, কোনো মেয়েকেই বাজে নজরে দেখতে পারে না।”
সাঈদের গলায় কান্না আটকে গেল। ইর্তেজা ইরিনার দিকে তাকিয়ে বলল,
“আমাদের মা বাবা নেই। একে অপরের সাথেই নিজের সুখদুঃখ শেয়ার করতে হয়। আমি সবসময় আমার মনের কথা তোমাকে বলেছি। তোমার মনের কথা আমাকে কেন বলো নি আপু? আমি কি তোমার ভাই না।”
ইরিনা মাথা নিচু করে কেঁদে উঠল। ইর্তেজা গিয়ে ইরিনার পাশে বসে বলল,
“সরি সরি অতিরিক্ত ইমোশনাল স্পিচ দেয়ার জন্য। আচ্ছা এখন কান্না বন্ধ করো, নাহলে আমিও কান্না করে দেবো।”
ইরিনা মাথা তুলে ইর্তেজার কান ধরে টেনে বলল
“অসভ্য কোথাকার। তোর কারণে কান্না করতে হলো আমার।”
“আউচ! আপু ব্যাথা পাচ্ছি।”
ইরিনা ছেড়ে দিলো। ইর্তেজা কান ডলতেদ ডলতে বলল,
“আমি জানতাম আমি হাজারবার জিজ্ঞেস করলেও তুমি সত্যিটা বলতে না। তাই ছোট্টখাট্টো ফিল্ম করতে হলো।”
বলেই ইর্তেজা সাঈদের দিকে তাকাল। সাঈদ ধীরপায়ে হেটে এসে ইর্তেজার সামনে দাঁড়াল। ইর্তেজার কলার ধরে টেনে দাঁড় করিয়ে বলল,
“শা*লা তোর লজ্জা করে না হবু দুলাভাইয়ের কলার ধরতে?”
ইর্তেজা সাঈদের গালে আস্তে করে চড় মে*রে বলল,
“কি বললি আবার বল।”
সাঈদ হা হয়ে গেল ইর্তেজার কান্ড দেখে। ইর্তেজা হেসে বলল,
“এই থাপ্পড়টা তোকে সবসময় মনে করাবে তুই কার বোনকে বিয়ে করতে চলেছিস।”
সাঈদ হেসে ইর্তেজাকে জড়িয়ে ধরলো। ইরিনা মুগ্ধ হয়ে তাদের দিকে তাকিয়ে আছে। মাহা দ্রুত এসে ইরিনাকে জড়িয়ে ধরলো। ইরিনার লজ্জা লাগছে। সত্যি কি তার বিয়ে হবে সাঈদের সাথে? তার যেন বিশ্বাস হচ্ছে না। সাঈদ ইর্তেজাকে ছেড়ে ইরিনার দিকে তাকাল। ইরিনা লজ্জায় চোখ ফিরিয়ে নিলো। মাহা চিন্তিত হয়ে বলল,
“ভাইয়া, আপনার আম্মু আব্বু?”
সবাই মাহার কথা শুনে সাঈদের দিকে তাকাল। সাঈদ সবার চাহনি দেখে বলল,
“উনাদের একমাত্র ছেলে আমি। আমি জানি উনারা মানবেন।”
ইরিনা বলল,
“তাহলে উনারা যত পর্যন্ত না মানবেন তুমি এই বাসায় আসবে না।”
“হোয়াট? এটা ঠিক না।”
ইর্তেজা বলল,
“কি ঠিক না? আমার বোন যা বলবে তোর তাই করতে হবে।”
সাঈদ মায়া মায়া চেহারা বানিয়ে ইরিনার দিকে তাকাল। ইরিনা হেসে মুখ ঘুরিয়ে নিলো। সাঈদ লম্বা নিশ্বাস ফেলল।

————

সময় ঘনিয়ে যাচ্ছে নিজের মতো। শ্রাবণ এখন সুস্থ। সেদিন পর থেকে সাগরিকাকে একবারো দেখেনি। শরীর সুস্থ হলেও মন খুব অসুস্থ। একবার সাগরিকাকে দেখতে পেলে শান্তি অনুভব করতো। বাথরুম থেকে বেরিয়ে শ্রাবণ বিছানায় বসলো। ইর্তেজা ডাক্তারের সাথে কথা বলছে। ডাক্তার চলে যেতেই ইর্তেজা শ্রাবণের দিকে তাকাল। মানুষটা আর আগের মতো নেই। খুব চুপচাপ থাকে। ইর্তেজা শ্রাবণের কাছে এসে বলল,
“আজ শেষ চেকআপ হবে। তারপর তোমাকে ডিসচার্জ করে দিবে।”
“হুম থানায় নিয়ে যাবে।”
ইর্তেজা জবাব দিলো না। শ্রাবণ ইর্তেজার দিকে তাকাল। ইর্তেজা এই কয় মাস তার অনেক খেয়াল রেখেছে। শ্রাবণ দাঁড়িয়ে ইর্তেজার কাঁধে হাত রেখে বলল,
“তোমাকে যত ধন্যবাদ দেবো তত কম।”
“ধন্যবাদ দিয়ে আমাকে ছোটো করবেন না বস।”
শ্রাবণ ইর্তেজাকে জড়িয়ে ধরলো। শ্রাবণের চোখ গড়িয়ে পানি পরলো। ইর্তেজাকে ছেড়ে চোখ মুছে বলল,
“আমি যখন শুনেছিলাম তোমার ভালোবাসার মানুষটাকে ফিরে পেয়েছো ভেবেছিলাম তোমার বিয়ের সব ব্যবস্থা আমি করাবো। হয়তো আর সম্ভব না।”
ইর্তেজা এই কথার কি জবাব দেবে বুঝতে পারছে না। তখনই ডাক্তার এসে বলল শ্রাবণের চেকআপের সময় হয়েছে। ইর্তেজা বাহিরে যাওয়ার জন্য হাঁটা ধরলো। শ্রাবণের ডাকে ইর্তেজা থামলো। শ্রাবণ মুচকি হেসে বলল,
“আমাকে কারাগারে নিয়ে যাওয়ার আমার সাথে দেখা করতে যাবে তো?”
ইর্তেজা জবাবে শুধু হাসলো।

চেকআপ, রিটেস্ট সব কমপ্লিট। শ্রাবণ পুরোপুরি সুস্থ। পুলিশের জিপ হসপিটালের বাহিরে দাঁড় করানো। শ্রাবণ বসে শার্টের বোতাম পরছে। ইর্তেজা চুপচাপ একপাশে দাঁড়িয়ে আছে। শ্রাবণ তৈরী হয়ে দাঁড়াল। ইর্তেজাকে দেখে বলল,
“যদি সম্ভব হয় সাগরিকাকে মানিয়ে নিয়ে এসো। আমি একবার তাকে দেখতে চাই।”
ইর্তেজা মাথা নাড়াল। একজন পুলিশ এসে শ্রাবণের হাতে হ্যান্ডকাফ পড়িয়ে দিলো। শ্রাবণ তার হাতের দিকে তাকাল। সেদিন থেকেই সে নিজেকে প্রস্তুত রেখেছিল এই দিনটার জন্য। আজ সত্যি এসে পরলো দিনটা৷ কষ্ট হচ্ছে তার। তার শা*স্তি কি হতে পারে? আজীবন কারাদণ্ড না-কি ফাঁ*সি?

চলবে…….

[আপনারা কি বলেন? শ্রাবণের শা*স্তি কেমন হলে ভালো হয়?]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here