— সবাই বিয়ে করে সংসার করতে।কিন্তু আমি বিয়ে করছি সতীন এর সেবা করতে! নিজের ভালোবাসা প্রমান করতে ! অদ্ভুত না? অদ্ভুত হলেও সত্যি আমি সব জেনেও রাজী!! এই বিয়ে করতে!! ইনফেক্ট আমি নিজেই বলেছি স্তব্ধ কে আমার এই বিয়েতে কোনো প্রবলেম নেই!!
— কি বলছিস এসব টিয়া??? তোর মাথা ঠিক আছে??? সে তোকে প্রায় ৫ বছর আগে রিজেক্ট করে গিয়েছে! শুধু যায় নি বিয়ে করে কানাডায় সেটেল হয়েছে ওখানেরি এক মেয়ে বিয়ে করে!! এখন সেই মেয়ে অসুস্থ তাই তোকে বিয়ে করছে তার স্ত্রীর সেবা করতে!! আর তুই ও ধৈ ধৈ করে রাজী হয়ে গেলী কেনো???
— পিউউ প্লিজ!! শোন আমার……..
— তুই শোন আমার কথা টিয়া!! তুই শিক্ষিত একটা মেয়ে!! বুদ্ধিমতী আর সব বুঝিস তুই!! তুই জানিস সে তোকে ইউজ করছে শুধু মাত্র আর কিছু নয়!! তোর সামনে খুব ভালো ফিউচার টিয়া বিয়ে টা ভেঙেদে এখনো সময় আছে প্লিজ!!
.
টিয়া শাড়ীর আঁচলে ভিজা চোখ মুছে বললো!
.
— তুই সব ঠিক বলছিস পিউউ কিন্তু আমি আর এখন বিয়ে টা ভাঙতে পারবোনা!! আর সে আমায় কথা দিয়েছে আমায় সে ভালোবাসতে চেষ্টা করবে!!!এবং সে আমার ভালোবাসার প্রমাণ চেয়েছে। তাকে বিয়ে করে তার স্ত্রীর সেবা করলেই নাকি তা প্রমাণ হবে। যে আমি তাকে সেই ভার্সিটির লাইফে সত্যি ভালোবাসতাম…..
.
টিয়াকে হাত দিয়ে থামিয়ে দিলো পিউউ।সে আর এই হাবিজাবি শুনতে চায়না নিজের চোখ মুছে! সে তার অতিপ্রিয় এই বান্ধবী টিকে বললো!
.
— তুই নিজেও জানিস এই কথা সে কতটুকু রাখবে!! যে ছেলে ১ বছর তোর করা তার জন্য পাগলামো দেখেও তোকে ভালোবাসেনি!! সে আদৌ তোকে কোনোদিন ভালোবাসবে সেটা মনে হয় না আমার!! কারণ ঐটা ভার্সিটি কালের কথা কতটা বছর চলে গিয়েছে। সব বদলে গিয়েছে সে বিবাহিত আর……..। থাক সে সব কথা আমি দোয়া করি সে জেনো তার কথা রাখে!!তোকে ভালোবাসে!!
.
পিউ উঠে টিয়ার ঘর থেকে বেরিয়ে গেলো। কাঁদতে থাকা টিয়া বেশ কিছুক্ষণ পিউউকে পিছু ডাকল!!
.
— পিউ যাস না!! আমি দুঃখিত আমি তোর কথা রাখতে পারছিনা!! পিউ, এই পিউ শোন না???
.
না পিউ টিয়ার ডাক শুনেনি! টিয়ার আর বাইরে যেতে ইচ্ছে করলোনা এই মুহূর্তে!! টিয়া বুঝতে পারলো পিউ চলে গেছে তার বাসা থেকে! পিউউ এবার দিগুণ কষ্টে কাঁদতে লাগলো শব্দ করে!! টিয়া নিজেই ভাবছে!! সে কতটা ডেস্পারেট হয়ে উঠছে স্তব্ধ কে পেতে!! তাই সে স্তব্ধ বিবাহিত জেনেও রাজী হয়ে গেলো তাকে বিয়ে করতে!!
.
স্তব্ধ সেই সদ্য কলেজে উঠা টিয়ার ক্রাশ ভালোবাসা দুইটাই। টিয়া অনেক পাগলামি করেছিলো ভার্সিটিতে স্তব্ধকে পেতে কিন্তু না। টিয়া তার মনের কথা স্তব্ধকে বললে স্তব্ধ টিয়াকে রিজেক্ট করে দেয়। ভার্সিটির সিনিয়র থাকায় খুব অপমান ও করে টিয়াকে। তারপর টিয়া নিরব হয়ে যায়৷ আর স্তব্ধ সেও যেমন গায়াব হয়ে যায় ভার্সিটিতে আর দেখা যায়নি তাকে!! টিয়া তাকে খুজেও পায়নি!!
.
কিন্তু দুদিন আগে কই থেকে নিজেই দেখা করে টিয়ার সাথে স্তব্ধ। সে প্রমাণ চায় ভালোবাসার। টিয়া হতবুদ্ধি হয়ে রাজী হয়ে যায় প্রমাণ দিতে৷
.
স্তব্ধ বলে তাকে বিয়ে করতে হবে এবং তার প্রথম স্ত্রীর সেবা করতে হবে তবেই টিয়া তার ভালোবাসা প্রমাণ করতে পারবে। বিনিময়ে স্তব্ধ টিয়াকে ভালোবাসতে চেষ্টা করবে।
.
টিয়া স্তব্ধ কে পেতে রাজী হয়ে যায় স্তব্ধ কে প্রমাণ দিতে!! প্রিয় মানুষ টাকে নিজের করে পেতে কিন্তু আদৌ কি সে নিজের করে পাবে কখনো স্তব্ধকে ভেবে পেলোনা টিয়া!! তার ভীষণ কান্না হচ্ছে!! অসহায় লাগছে নিজেকে বড্ড!! সে আবেগে মরিয়া হয়েছে ভুল সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছে তা বুঝতে পারলেও৷ টিয়া বিয়ে ভাঙতে চায় না।
.
টিয়ার কান্নার মাঝেই তার মা রুমে ঢুকলো। তিনি টিয়াকে এভাবে হাটু মুড়ে কাঁদতে দেখে। কিঞ্চিত কপাল কুচকালো! টিয়া মাকে দেখে কান্না সংযত করলো যথাসম্ভব!! আর চুপ করে মাথা নিচু করে বসে রইলো বেডেই!! সে জানে এখন তার মা তাকে দুটি কথা হলেও শুনিয়ে যাবে!!
.
তার কারণ আছে অবশ্যই টিয়ার মা মেয়ের উপর ভীষণ রাগ!! তার মেয়ে শিক্ষিত, দেখতে সুন্দর, চঞ্চল হাসিখুশী একটা মেয়ে কোনকিছু তেই টিয়ার কমতি নেই ছোট বড় সবাইকে টিয়া সম্মান করে কথা বলে পড়াশোনায় ভালো !! কিছুদিন পড় ভালো চাকরী ও হবে!! তাহলে কি এমন মেয়ের জন্য একটা ভালো অবিবাহিত পাত্র তারা পাবেন না?? কিন্তু না তার মেয়ে বিয়ে করছে একটা বিবাহিত ছেলেকে!! আর এখন টিয়াকে এভাবে কাদতে দেখে বেশ রাগী হলো টিয়ার মা নাফিছার!! উনি তেড়ে মেয়ের কাছে গিয়ে ক্রুদ্ধ হয়ে বললেন!
.
— এই কাঁদছিস কেনো?? হ্যাঁ নিজের ইচ্ছায় একটা বিবাহিত ছেলেকে বিয়ে করছিস!! অন্য মেয়ের সতীন হচ্ছিস!! তার ঘর ভাঙছিস ছিঃ লজ্জা হচ্ছেনা?? এখন কাদিস কেনো?? বিয়ের পড় কাদিস!! যখন দেখবি নিজে যার জন্য সব ত্যাগ করেছিস!! নিজের পরিবার ত্যাগ করছিস একসময় সেই তোর পাশে নেই!! ফেলে চলে গেছে। মিলিয়ে নিস মায়ের কথা!!
.
আর ও নানান কিছু কড়া কথা তিনি বলে চলে গেলেন রাগে গাঁ থরথর করে কাঁপছে নাফিছার!! কি বোকা তার মেয়ে!! মেয়েতো বোকা কিন্তু মান সম্মান তার যাচ্ছে সে কি করে মেয়ের এমন যায়গায় বিয়ে দিয়ে!! লোকজনের সামনে যাবেন!! যখন কেউ বলবে ছেলে বিবাহিত কেনো নাফিছা?? কি লজ্জা কি লজ্জা কি উত্তর দিবেন তিনি তখন??
.
ভেবেই তিনি দিগুণ রেগে জিনিষপত্র ছুঁড়ে বিকট সব আওয়াজ করে কাজ করতে লাগলেন!!
আজ বাসায় ছোট খাটো আয়োজন করেই টিয়া আর স্তব্ধ ওর বিয়ে হবে বিয়েতে টিয়া তার একমাত্র বান্ধবী পিউউ কেই শুধু বলেছিলো সে ও চলে গেলো!! এখন শুধু টিয়া ও তার মা, বাবা,ভাই, আর স্তব্ধ এবং শুধু কাজী ই এই বিয়েতে উপস্থিত আর কেউ না।
এটাও স্তব্ধ এরি ইচ্ছা!! কারণ সে নাকি এসব পছন্দ করেনা। আর সে সম্পূর্ণ একা আসবে বিয়ে করতে। তার ফ্যামিলির কেউ সাথে আসবেনা এবংকি কোনও বন্ধু ও না!!
.
টিয়ার পরিবার ও মেয়ের জেদের কারণে এই বিয়েতে রাজী হলেও। আত্তীয়সজন কাউকে জানায়নি। মেয়ে বিবাহিত ছেলেকে বিয়ে করছে বলে তাদের জানাতে লজ্জা করছে!!
.
শুক্রবার জুম্মার নামাজের পড় স্তব্ধ টিয়াকে মেসেজ করে জানিয়ে দেয় সে আসছে!! টিয়া তার মাকে জানিয়ে দেয় সেই কথা। টিয়া নিজেকে সামলে নিয়েছে!! না সে আর পিছপা হবে না সে বিয়ে করবে যাই হোক শেষটা দেখবে টিয়া এর ইতী কি হয়!!
.
স্তব্ধ সাধাসিধে একটা সাধা ধবধবে পাঞ্জাবি সাথে হোয়াইট প্যান্ট পড়ে এসেছে!! চুল গুলো কপাল বেয়ে পড়ে আছে! নামাজ পড়ে আসায় জেনো আরো নিষ্পাপ লাগছে।কিন্তু স্তব্ধের নাকটা অস্বস্তিতে লাল হয়ে আছে। হাতে দামী ঘড়ি পায়ে দামী সু!! স্তব্ধ আসার পড় নাফিছা স্তব্ধ এর দিকে তাকিয়েই ছিলেন শুধু!! ছেলেকে দেখে তিনি বিশ্বাস ই করতে পারছিলেননা স্তব্ধ বিবাহিত!! কারণ স্তব্ধ এতোই হ্যান্ডছাম আর ফিট!! একটা সাধারণ পাঞ্জাবিতে কোনো ছেলেকে এতো সুদর্শন লাগতে পারে স্তব্ধকে না দেখলে বুঝতেন না নাফিছা!! স্তব্ধকে দেখে তার মাথায় ঢুকলো কেনো তার মেয়ে এতো পাগল এই ছেলের জন্য! কেনো এই ছেলের আশায় তার মেয়ে আজ অব্ধি কোনো পাত্রপক্ষ এর সামনে যায় নি। সত্যি বলতে জামাতা হিসিবে স্তব্ধকে ভালোলেগেছে পছন্দ হয়েছে নাফিছার কিন্তু ছেলে বিবাহিত তাই। স্বভাব সূলভ মতন তিনি রেগেই ছিলেন। নাফিছা এড়িয়ে চললো বিয়ের সকল নিয়ম থেকে সাথে টিয়ার বাবা রফিক ও। শুধু টিয়ার ভাই আরাফ ছিলো বিয়ের সব নিয়মে।
.
বিয়ে হয়ে যায় তাদের অনেক অনেক অস্বস্তির মধ্যে। বিদায় নেয় টিয়া কেঁদেকেটে।নাফিছাও রাগ বাদ দিয়ে মেয়েকে ধরে কেঁদে দোয়া করে দেন। টিয়ার বাবা ও ভাই ও। এসবের মধ্যে স্তব্ধ ছিলোনা। সে আগেই গিয়ে নিজের গাড়ীতে বসে আছে। টিয়া সবার থেকে বিদায় নিয়ে গিয়ে স্তব্ধের পাশে বসে। আর সাথে সাথেই গাড়ী চলতে লাগে স্তব্ধ নিজেই ড্রাইভ করছে। টিয়া স্তব্ধের দিকে একবারো তাকায়নি। না স্তব্ধ তাকিয়েছে। টিয়া অন্য পাশ ফিরে নিঃশব্দে কাঁদছে!! সেটা স্তব্ধ বুঝলেও কিছু বলার প্রয়জোন বোধ করছেনা!!
.
অবশেষ স্তব্ধের দুতালা একটি ডুপ্লেক্স বাড়ীতে গিয়ে উঠে তারা!! স্তব্ধ অনেক কৃপা করে টিয়াকে তার রুম দেখিয়ে দেয়!এমন টাই স্তব্ধের দিকে তাকিয়ে টিয়ার মনে হলো!
.
— উপড়ের সাইডের রুম টা তোমার জন্য ঠিক করা আছে!!
.
এটুকু বলেই চলে যেতে ধরে স্তব্ধ। কিন্তু টিয়ার কথায় তার দিকে ঘুরে তাকায় স্তব্ধ!!
.
— এবাসায় ছাদ আছে নিশ্চয়???
— হ্যাঁ আছে!! কেনো???
— আমি কি যেতে পাড়ি কোন প্রবলেম না হলে???
— অবশ্যই!! গোঁ!!
.
আর অপেক্ষা করলো না টিয়া ধুপধাপ পা ফেলে শিরি বেয়ে ছাদে চলে গেলো। টিয়ার যাওয়ার দিকে স্তব্ধ তাকিয়েই রইলো কিছুক্ষণ তার পর নিজের রুমে ঢুকে গেলো! টিয়ার কাহিনী দেখার টাইম নেই তার স্ত্রী কে খাইয়ে ঔষধ দিতে হবে রাতের!!
.
টিয়া ছাদে গিয়ে নিরবে আকাশের দিকে তাকিয়ে রইলো!! মৃদুবাতাশে টিয়ার চুল গুলা উড়ছে থেকে থেকে!! প্রায় ২ ঘণ্টার মতন ছাদে থেকে টিয়া স্তব্ধের দেখানো ঘরে গেলো!! টিয়া রুমে চোখ বুলালো!! খুব সুন্দর রুম টা পরিপাটি করে রাখা!! রুমে একটা বিশাল বেড! রুমের একদম মোধ্যে রাখা। আরেক সাইডে ড্রেসিং আরেক সাইডে একটা বড় আলমারি! আর বেডের ঠিক সামনে একটা সোফা। আর এক সাইডে বারান্দা ব্যাস এটুকুই কিন্তু খুব সুন্দর রুম টা !! টিয়া বারান্দায় দাঁড়ালো কিছুক্ষণ!! তারপর রুমে এসে ড্রেসিং এর সামনে দাঁড়ালো!! লালটুকটুকে একটা শাড়ী পড়নে টিয়ার! সকালে পিউ তাকে তৈরী করে দেয় শাড়ীটা পড়িয়ে!! কিন্তু পিউ তার বিয়েতে থাকলো না। ভেবেই কান্না পেলো। তাও নিজেকে সামলে!! টিয়া নিজেকে দেখছে আয়নায়!! সুন্দর ই লাগছে তাকে!! আজ নিয়ম অনুযায়ী টিয়া স্তব্ধের বাসর রাত। টিয়া আশা করলো স্তব্ধ একবার তাকে দেখতে আসবে। তাই নিজেকে এক্টু ঠিকঠাক করে নিলো নিজেকে। কান্না করে নাজেহাল করে রেখেছে চোখ মুখের!!
.
৩ টা বিষ বাজে স্তব্ধ আশেনি টিয়ার কাছে একটি বারের জন্যেও না।অপেক্ষা করতে করতে টিয়ার চোখ বারবার ভরে আস্তে চাইছে তাও নিজেকে সামলে আস্তে আস্তে। রুম থেকে বেরুলো সে৷ স্তব্ধের রুমের কাছে এসেই টিয়া দেখলো দরজা খুলাই এবং হাল্কা ফাঁক করা। তাই টিয়া এক্টু উঁকি দিলো আর দেখলো। স্তব্ধ ঘুমে বিভোর তার স্ত্রী কে জরিয়ে ধরে। আর টিয়া ভাবছিলো স্তব্ধ যাবে তার কাছে কি অদ্ভুত!!
.
টিয়া এই দৃশ্য দেখে দৌড়ে পাশের রুমে নিজের রুমে চলে গেলো। মুখে আঁচল চেপে কাঁদতে লাগলো সে চিৎকার করে!!
.
— কেনো আল্লাহ তুমি আমার এই কি পরিক্ষা নিচ্ছো!! আমি কিভাবে এসব দেখে ঠিক থাকবো?????
.
টিয়া ভাবতে লাগলো সে সব যতো সহজ ভেবেছে সব এতো সহজ নয়!! ভালোবাসার মানুষকে তার স্ত্রীর সাথে দেখার কম কষ্টের না!! আর স্তব্ধ তো তাকে ভালোবাসা দূর পছন্দ ও করেনা!! এখন টিয়ার মনে হচ্ছে সে এই বিয়ে করে বলির পাঠা হয়েছে। খুব বড় ভুল করেছে টিয়া খুব বড় ভুল স্তব্ধ তাকে কোনদিন ভালোবাসবেনা কোনদিন না। স্তব্ধ তাকে ঠকাবে খুব নিষ্ঠুর ভাবে৷
.
.
#আলোয়_অন্ধকার🍁
#Roja_islam
#part 1
Roja Islam