কিনারে তুই পর্ব : ৪৮ শেষ পর্ব

0
4943

মনের কিনারে তুই
লেখিকা:Tarin Niti
পর্ব:৪৮ (শেষ পর্ব)

ইশা গোসল করে একটা শাড়ি পড়ে আয়নার সামনে এসে ভেজা চুলগুলো ছেড়ে দে।তারপর চোখে কাজল টেনে আরিয়ান ওয়াশরুম থেকে বের হওয়ার আগে নিচে চলে যায়।
নিচে গিয়ে দেখে ওর মা আর বড়আম্মু কিচেনে নাস্তা বানাচ্ছে।ইশা মিষ্টি হাসি সেদিকে যায়। ইশার ভেজা চুল দেখে ইশার মা আর আরিয়ানের মা একজন আরেকজনের দিকে তাকিয়ে তৃপ্তির হাসি দে।ইশা গিয়ে ওর মাকে বলে,

“আম্মু আজকে আমি নাস্তা বানাই?”

“তুই পারবি?”

“কেনো? আমি কি পারিনা নাকি? আগে তো বানিয়েছি”

“তা হঠাৎ আমার মেয়েকে আজকে রকম সংসারী সংসারী লাগছে কেনো?”

মায়ের কথা শুনে ইশা মুচকি হাসে। আরিয়ানের মা হেসে বলে,
“আচ্ছা ঠিক আছে আমরা পরোটা গুলো বানাচ্ছি।ভাজিটা তুই কর।পারবি তো?”

“হ্যাঁ বড়আম্মু একশবার পারবো”

ইশা শাড়ির আঁচল টা কোমরে গুঁজে কাজে লেগে পড়ে।
আরিয়ান ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে ইশাকে দেখতে পায় না।আরিয়ান ব্যালকনিতে যায় সেখানে ইশা নেই। নিশ্চয়ই নিচে চলে গিয়েছে!এই মেয়েটা এরকম কেনো? কোথায় একটু রোমান্স করবে তা না পালিয়ে বেড়াচ্ছে!
আরিয়ান তোয়ালে দিয়ে ভেজা চুলগুলো মুছে নিচে চলে যায়।বাগানে আরিয়ানের বাবা ইশার বাবাকে হাঁটতে সাহায্য করছে। ইশা সেখানেও নেই! আরিয়ান ভাবছে মেয়েটা গেলো কই?
তারপর আরিয়ান মাকে জিজ্ঞেস করবে বলে কিচেনে এসে দেখে ইশা কোমরে শাড়ির আঁচল গুঁজে রান্না করছে।আরিয়ান অবাক চোখে ইশার দিকে তাকায়।ইশাকে পাকা গিন্নি লাগছে।আরিয়ান কিচেনে গিয়ে ফ্রিজ থেকে আপেল নিয়ে খেতে খেতে বলে,

“বাব বাহ আজকে তিন রমণী একসাথে কিচেনে! আমাদের কিচেনটা ধন্য হলো”

আরিয়ানের মা হেঁসে বলে, “এই একদম ফাইজলামি করবি না”

“আমি ফাজলামি কই করলাম?আমি তো তোমাদের প্রশংসা করলাম”
তারপর আরিয়ান ইশার দিকে তাকিয়ে বলে,
“তা উনি যে আজকে রান্না করছে,খাওয়া যাবে তো?”

আরিয়ানের কথা শুনে ইশা কোমরে হাত দিয়ে বলে,
“আপনার কি মনে হয় আমি রান্না করতে জানিনা?”

“না কখনো রান্না করতে দেখিনি তো তাই বললাম”

“আম্মু তুমি উনাকে বলে দাও আমি কত ভালো রান্না করতে পারি হুহ..”

ইশা মা হেসে বলে, “আরিয়ান চিন্তা করো না।ইশা রান্না করতে পারে, খাওয়া যাবে”

“তাহলে তো ভালোই। আজকে বউয়ের হাতের রান্না খাবো”

তখন আরিয়ানের মা বলে, “কেনো রে মায়ের হাতের রান্না ভাল লাগেনা?”

“আরে মা কি বলছো তুমি এসব?তোমার রান্নাতো বেস্ট”

“হয়েছে আর পাম দিতে হবে না”

আরিয়ান ঠোঁট উল্টিয়ে বলে, “আরে পাম দিচ্ছি না তো।সত্যি কথা বললেও দোষ!”

খাবার টেবিলে ইশা সবাইকে খাবার দে। ইশা এতদিন এ বাড়ির মেয়ে ছিলো কিন্তু আজকে নিজেকে বউ বউ লাগছে।সবাইকে দিয়ে নিজেও বসে পড়লো।
যদিও ইশা আগে রান্না করেছে তবুও আজকে প্রথমে এই বাড়িতে রান্না করলো। ইশার খুব টেনশন হচ্ছে।কিন্তু ইশাকে টেনশন থেকে মুক্তি দিয়ে সবাই ইশার খাবারের প্রশংসা করে।এমনকি আরিয়ানও।ইশা একটা তৃপ্তির হাঁসি দে।
নাস্তা শেষে ইশা সব কিছু গুছিয়ে উপরে আসে ভার্সিটির জন্য রেডি হতে।এসে দেখে আরিয়ান ও তৈরি হচ্ছে। ইশা কে দেখে আরিয়ান বলে,

“আজকে ভার্সিটিতে যাবে?”

“হুম,আজকে ইম্পরট্যান্ট একটা ক্লাস আছে”

“একটা কথা বলবো?”

ইশা আরিয়ানের দিকে তাকিয়ে বলে, “হুম বলেন”

আরিয়ান ইশাকে একবার পরখ করে তারপর বলে, “আজকে শাড়ি পড়ে ভার্সিটিতে যেও।শাড়িতে তোমাকে দারুন লাগে”

আরিয়ানের কথা শুনে ইশা লজ্জা মিশ্রিত মুখে হেসে দে।তারপর বলে, “আচ্ছা ঠিক আছে”

ইশা একটা আকাশী রঙের শাড়ি পড়ে। আরিয়ান নিজ হাতে ইশার চুলগুলো বেনি করে দেয়।তারপর ইশার চোখে কাজল দিয়ে দে। ইশা বসে বসে আরিয়ানের পাগলামি দেখছে আর হাসছে।আরিয়ানের সেদিকে কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই ও তো এক মনে ইশাকে সাজাতে ব্যস্ত।
রেডি হয়ে আরিয়ান আর ইশা মা-বাবাকে বলে বেরিয়ে যায়। আর কিছুদিন পর দুজনের পরীক্ষা আরিয়ানের অনার্স ফোর্থ ইয়ারের ফাইনাল পরীক্ষা আর ইশার ফার্স্ট ইয়ার ফাইনাল পরীক্ষা।ওরা দুইজনেই পড়াশোনা নিয়ে অনেক সিরিয়াস।

ভার্সিটিতে এসে গাড়ি থামলে ইশা আরিয়ানের দিকে তাকায়। আরিয়ান মুচকি হেসে ইশার দু গালে হাত রেখে ইশার কপালে চুমু খায়।ইশাও মুচকি হেসে গাড়ি থেকে নেমে নিজের ক্লাসে চলে যায়।

ক্লাসে গিয়ে ইশা রাইমার পাশে বসে।রাইমা আর রিহানের সম্পর্কটা খুব ভালোই যাচ্ছে।ওরা দুজন দুজনকে খুব ভালোবাসে।রিহান পড়াশোনা শেষ করে রাইমাকে বিয়ে করতে চায়।রাইমার পরিবার রিহানের মতো ভালো ছেলেকে কখনো রিজেক্ট করবে না। তাই ওদের সম্পর্কে কোনো বাধাও নেই।

ভার্সিটিতে ইশা আর রাইমা দুষ্টুমি করলে এখন বেশিরভাগ পড়াশোনা নিয়ে কথা হয়।ওরা দুজনই পড়াশোনার প্রতি খুব আগ্রহ। ইশা রাইমার পাশে বসে ওর আর আরিয়ানের কথা বলে।সব শুনে রাইমা হা হয়ে যায়।তারপর উত্তেজিত হয়ে বলে,

“তারমানে তোদের সব ঠিক হয়ে গিয়েছে?ইশু আমি কত খুশি তোকে বলে বোঝাতে পারবো না।এতদিনে তোদের সম্পর্কটার একটা নাম হল”

ইশা মাথা নীচু করে মুচকি হেসে বলে, “হুম”

রাইমা ইশাকে জড়িয়ে ধরে বলে, “ইশা আমি আজকে খুব খুশি”
ইশাও হেসে রাইমাকে জড়িয়ে ধরে।তারপর ওরা আরো অনেক্ষন কথা বলে।

.
ক্লাস শেষে ইশা একা একা বাসায় আসে।আরিয়ান আর ওর আলাদা আলাদা টাইমে ক্লাস শেষ হয়।ভার্সিটিতে একসাথে আসলেও যাওয়া হয় আলাদা আলাদা। আরিয়ানের বাবা বলেছিল ছুটির পর ইশার জন্য গাড়ি পাঠিয়ে দেবে। কিন্তু ইশা তাতে বারণ করেছে।
দুপুরের দিকে ইশা বাসায় এসে গোসল করে নামাজ পড়ে। তারপর ওর মা আর বড় আম্মুর সাথে বসে বসে গল্প করে। তখন ইশার বাবা আস্তে আস্তে হেঁটে ওদের কাছে আসে। ইশার বাবা এখন হাঁটতে পারে।তবে একদম পুরোপুরি ঠিক হতে আর কিছুদিন সময় লাগবে। ইশা অনেকক্ষণ গল্প করে রুমে চলে আসে।

দুটোর দিকে আরিয়ান বাসায় আসে এসে সোজা ওয়াশরুমে ঢুকে যায়। ইশা তখন ব্যালকনিতে ছিল। আরিয়ান মাথা মুছতে মুছতে ওয়াশরুম থেকে বাহির হয়।তারপর দেখে ইশা ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে আছে।আরিয়ান গিয়ে ইশাকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে।ইশা আবাক হয়ে বলে,

“কখন আসলেন?”

“অনেকক্ষণ.. এসে গোসলও করেছি। তুমি টের পাওনি”

“না,,আওয়াজ শুনিনি তো”

আরিয়ান হালকা হেসে বলে, “লাঞ্চ করেছো?”

“না। আপনার জন্য অপেক্ষা করছিলাম”

আরিয়ান ইশার হাত ধরে বলে, “ওকে তাহলে চলো”

আরিয়ানা আর ইশা নিচে গেলে সবাই একসাথে লাঞ্চ করে।
রাত্রে দুজন একসাথে পড়াশোনা পড়ে।ইশার পড়াশুনার কোনো সমস্যা হলে আরিয়ান ওকে দেখিয়ে দেয়।ওদের ভালোবাসা দিনগুলো খুব ভালো ভাবেই কাটছে।

.
রাত্রে ডিনার করে আরিয়ান ব্যালকুনিতে রাখা দোলনায় বসে।আর ইশা আরিয়ানের কোলে আরিয়ান একটা চাদর দিয়ে ইশাকে জড়িয়ে রাখে।ইশা আরিয়ানের বুকে মাথা রেখে চুপচাপ আকাশ দেখতে ব্যাস্ত। অনেকক্ষণ পর আরিয়ান বলে,

“ইশা পরীক্ষা শেষে আমরা ঘুরতে যাবো”

ইশা সেভাবেই বসে থেকে বলে, ” কোথায়? ”

“তুমি কোথায় যেতে চাও?”

“আমার তো ছোটবেলা থেকেই সিলেট যাওয়ার অনেক ইচ্ছা।কিন্তু কখনো যাওয়া হয়নি।বাবার এক্সিডেন্টের পড়তো যাওয়ার ইচ্ছা থাকলেও কাউকে বলিনি”

“তাহলে আমরা সিলেটই যাবো”

ইশা উৎফুল্ল হয়ে বলে, ” সত্যি?”

আরিয়ান ইশাকে আরো ভালোভাবে জড়িয়ে ধরে বলে, “হুম..”

কিছুক্ষণ পর আরিয়ান ইশার হাতে একটা ব্রেসলেট পড়িয়ে দে।এটা সেই ব্রেসলেট যেটা ইশা আর আরিয়ান মেলায় কিনেছিলো।আরিয়ানের হাতে এখনো ইশার নামের প্রথম অক্ষর “আই” লেটার লেখা ব্রেসলেট টা আছে।আরিয়ান ওটা কখনো খোলেনি।কিন্তু ইশা!ওই যে আরিয়ান ওদের ভালোবাসা অস্বীকার করার পর ব্রেসলেট টা খুলে আলমারিতে রাখে এখনো দেখেনি। ইশা অবাক হয়ে বলে,

“আপনি এটা কোথায় পেলেন?”

আরিয়ান হেসে বলে,
“তোমাদের বাসা থেকে জিনিসপত্রগুলো আনার সময় তোমার আলমারিতে পেয়েছিলাম।আমার ওই ভুলের কারণে তুমি এটা খুলে রেখে ছিলে তাইনা?যাক তবুও তা ফেলে দাও নি!”

“প্লিজ এভাবে বলবেন না আসলে ঐদিন আমার খুব রাগ হয়েছিলো। তাই খুলে রেখেছিলাম”

“আজকে তো আর রাগ নেই এখন পড়ে ফেলো”

ইশা আরিয়ানের নামের প্রথম অক্ষর “এ” লেটার লেখা ব্রেসলেটটা ওর হতে পারে নে।তারপর বলে,

“আর কখনো খুলবো না,প্রমিস ”

আরিয়ান হেসে ইশাকে নিজের সাথে জড়িয়ে ধরে।ইশাও চুপচাপ আরিয়ানের বুকে মাথা রাখে।আরিয়ানের বুকটাই তো ইশার সবচেয়ে শান্তির জায়গা!আরিয়ান আর ইশা দুজন দুজনকে ভালোবাসে মুড়িয়ে রেখেছে।ওদের ভালোবাসার সাক্ষী জোছনা রাতের ওই চাঁদ,কতগুলো তারা আর রাতের নিশাচর পাখিগুলো!

সমাপ্ত

(এটা আমার লেখা প্রথম গল্প। জানি না গল্পটা কেমন কেমন হয়েছে,সুন্দরভাবে লিখতে পেরেছি কিনা।
তবে আমি চেষ্টা করেছি।আমি জানি নতুন
হওয়ার কারনে আমার গল্প বেশি কেউ পড়েনি।
তবে যারাই পড়েছে এই শেষ পর্বে তাদের সবার রিয়েক্ট আর কমেন্ট দেখতে চাই।আর হ্যাঁ আজকে তো আর কেউ next লিখবেন না, তো গল্পটা কেমন হয়েছে জানাবেন ❤❤)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here