কিনারে তুই পর্ব : ৪৭

0
3550

মনের কিনারে তুই
লেখিকা: Tarin Niti
পর্ব: ৪৭

আরিয়ান আর ইশার বিয়ের এক সপ্তাহ হয়ে গিয়েছে।এই এক সপ্তাহে সবকিছু স্বাভাবিক হয়ে গেলেও ইশা স্বাভাবিক হতে পারেনি।ইশা এখনও আরিয়ানকে মন থেকে স্বামী হিসেবে মানতে পারছে না।ইশা জানে আরিয়ান ইশাকে অনেক ভালোবাসে, এমনকি অনেক কেয়ারও করে।সব সময় ইশাকে দেখে রাখে।ইশার কোনো কষ্ট হলে আরিয়ান পাগল হয়ে যায়।
ইশা এখন আরিয়ানের রুমে আরিয়ানের সাথেই থাকে। ঐদিন একসাথে ঘুমানোর পরদিন ইশা আবার নিজের রুমে চলে যায় কিন্তু আরিয়ান আবার জোর করে আরিয়ানের রুমে নিয়ে আসে।তাই ইশা আর উপায় না পেয়ে আরিয়ানের রুমেই থাকে।
আরিয়ান প্রতিদিনই ইশাকে জড়িয়ে ধরে ঘুমায়।ইশাও চুপচাপ আরিয়ানের বুকে মাথা রেখে শুয়ে থাকে। ইশা আস্তে আস্তে আরিয়ানের প্রতি দুর্বল হয়ে পড়ছে। দুর্বল তো আগেও ছিলো এখন আরো বেশি হচ্ছে। আরিয়ানের এতো ভালোবাসা কেয়ার ইশা ফিরিয়ে দিতে পারবে না।

প্রতিদিনের মত আজকেও ডিনার করে ইশা আরিয়ানের রুমে আসে। নানা আরিয়ানের রুম না! এখন তো এটা ওদের দুজনের রুম।ইশা রুমে এসে দেখে আরিয়ান কোলের উপর ল্যাপটপ রেখে খাটের সাথে হেলান দিয়ে আধশোয়া হয়ে ল্যাপটপে কি যেন করছে। ইশা ওয়াশ রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে আসে।তারপর আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে চুলগুলো বেণি করে ব্যালকনিতে যায়।
অনেকক্ষণ ব্যালকনিতে থাকার পর রুমে এসে দেখে আরিয়ান এখনো ল্যাপটপে মুখ গুঁজে আছে। ইশা বিরক্তি নিয়ে বলে,

“আপনি ঘুমাবেন না ঠিক আছে।কিন্তু আমারতো ঘুম পাচ্ছে। লাইটটা প্লিজ অফ করুন”

আরিয়ান ইশার দিকে তাকিয়ে বলে, “তোমার ঘুম পাচ্ছে আগে বলবে তো। আসো আসো”

আরিয়ান ল্যাপটপ রেখে ইশার হাত ধরে ইশাকে খাটে নিয়ে বসায়। তারপর উঠে গিয়ে লাইট অফ করে দে।লাইট অফ হওয়ার সাথে সাথে ইশা শুয়ে পড়ে।আরিয়ান এসে বেডে ইশার পাশে শুয়ে পড়ে।তারপর ইশাকে টেনে ওর বুকে নিয়ে জড়িয়ে ধরে। ইশা কিছু বলে না,চুপচাপ থাকে।কারণ এটা ওর অভ্যাস হয়ে গিয়েছে।
অনেকক্ষণ পর আরিয়ান ইশার কোমর জড়িয়ে ধরে। ইশা তখন ঘুম পাচ্ছে বললেও ওর কিন্তু ঘুম আসছে না।আরিয়ানের স্পর্শগুলো আস্তে আস্তে।গভীর হতে থাকে।ইশা বারবার কেঁপে ওঠছে।
ইশা কিছু বলছে না দেখে আরিয়ান ইশাকে পাশের বালিশে শুইয়ে দিয়ে ইশার গলা মুখ ডুবিয়ে দেয়। আরিয়ানের এক হাত ইশার ঘাড়ে আরেক হাত ইশা কোমরে।ইশা একদম বরফের মত শক্ত হয়ে গিয়েছে নড়াচড়া শক্তিটাও পাচ্ছে না।
এতদিন একসাথে ঘুমালেও আরিয়ান কখনো এরকম করেনি।আরিয়ান ইশার ঘাড়ে কিস করে।ইশা আবার কেঁপে ওঠে।
আরিয়ান ইশার ঘাড় থেকে মুখ তুলে নেশাক্ত চোখ ইশারা চোখের দিকে তাকিয়ে বলে,

“ইশা,,ক্যান আই কিস ইউর লিপস?”

ইশার মনের মধ্যে দিয়ে ঘূর্ণিঝড় বয়ে যাচ্ছে। ইশা আগে কখনো আরিয়ানের এরকম আচরণ এর সাথে পরিচিত হয়নি। ইশা আমতা আমতা করে বলে,
“আপনি..”

আরিয়ান ইশাকে থামিয়ে দিয়ে বলে,
“আজকে প্লিজ বাধা দিও না”

তারপর ইশাকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে আরিয়ান ইশার ঠোঁটে ঠোঁট ডুবিয়ে দেয়। ওদের ফাস্ট লিপ কিস!এর আগেও একবার সুযোগ এসেছিল। কিন্তু ঐদিন লাইব্রেরিতে ইশা আরিয়ানকে কিস করার সময় স্যার দেখে ফেলে।
আরিয়ান পাগলের মতো ইশার ঠোটে করছে।ইশার কোনো রিয়্যাকশন নেই।না আরিয়ানকে বাধা দিচ্ছে আর না আরিয়ানের সাথে রেসপন্স করছে!
ইশা বাধা দিচ্ছে না দেখে আরিয়ানি ইশার ওরনাটা টা খুলে ফেলে। তারপর আস্তে আস্তে ইশার জামার চেনটা খুলতে গেলে ইশার হুঁশ আসে। ইশা আর কিছু না ভেবে আরিয়ানকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেয়।
আরিয়ান ইশাতে মগ্ন ছিল তাই হঠাৎ ধাক্কা একটু দূরে সরে যায়।আরিয়ানের রাগ উঠে কিন্তু নিজেকে শান্ত করে ইশার কাছে এসে ইশা গালে হাত রেখে বলে,

“ইশা কেনো এরকম করছো?আমরাতো স্বামী-স্ত্রী তাই না?”

“প্লিজ আমার কিছুদিন সময় লাগবে!”

“তোমার আর কত সময় চাই? তুমি তো আমাকে ভালোবাসো,তাহলে মেনে নিতে পারছে না কেনো? আমি তোমাকে আজকেই চাই! ইশা,, আই নিড ইউ”

আরিয়ানের আকুতি মাখা কণ্ঠ শুনে ইশাট বুকটা ধ্বক করে ওঠে। আরিয়ান বাচ্চাদের মত ইশার কাছে আবদার করছে। ইশা ওর গাল থেকে আরিয়ানের হাতটা সরিয়ে দে।আরিয়ান ইশার দিকে তাকিয়ে থেকে তাচ্ছিল্য হেসে বলে,

“ঠিক আছে তুমি যেদিন চাইবে সেদিনই আমরা এক হব।তারা আগে তোমাকে আমি টাচ ও করবো না।আই প্রমিস”

তারপর আরিয়ান ওঠে ফ্লোর থেকে ইশা ওরনাটা নিয়ে ইশার দিকে ছুড়ে মেরে ব্যালকনিতে চলে যায়।ইশা চোখের কোনা দিয়ে ফোটা জল গড়িয়ে পড়ে।ও কেনো আরিয়ানকে মেনে নিতে পারছে না!
ইশা ভাবে আরিয়ান হয়তো একটু অভিমান করেছে একটু পর চলে আসবে।কিন্তু অনেকক্ষণ হয়ে গেল আরিয়ান রুমে আসে না।ইশা ওরনাটা ভালোমতো গায়ের জরিয়ে গুটিগুটি পায়ে হেঁটে ব্যালকনিতে যায়।গিয়ে দেখে আরিয়ান সিগারেট টানছে।ইশা আগে কখনো আরিয়ানকে সিগারেট খেতে দেখেনি।হ্যাঁ আরিয়ান মাঝে মাঝে সিগারেট খায় কিন্তু ইশার সামনে কখনো খায়নি।ইশা নিঃশব্দে গিয়ে আরিয়ানের পেছনে দাঁড়ায়।আরিয়ান ইশার উপস্থিতি টের পেয়ে বলে,

“এখানে কেন এসেছো?যাও ঘুমিয়ে পড়ো”

ইশা স্মিত হাসে। ইশা নিঃশব্দে এলেও আরিয়ান ঠিক ওর উপস্থিতি বুঝতে পেরেছে। ইশা বলে,

“আপনি ঘুমাবেন না?”

“ভালো লাগছে না।আমি একটু পর আসছি,তুমি যাও”

ইশা কিছু বলতে গিয়েও থেমে যায়। তারপর রুমে এসে বেডে শুয়ে পড়ে।প্রায় ঘণ্টাখানেক পর আরিয়ান রুমে আসে। আরিয়ান ভাবে ইশা হয়তো ঘুমিয়ে পড়েছে কিন্তু ইশার চোখে ঘুম নেই।
আরিয়ান নিঃশব্দে ইশার পাশে শুয়ে পড়ে।তখন ইশা বলে,

“আজকে আমাকে জড়িয়ে ধরে ঘুমাবেন না?”

আরিয়ান ইশার উল্টো দিকে মুখ ঘুরিয়ে শুয়েছিল।ইশার কথা শুনে ইশার দিকে তাকায়।তারপর বলে,

“বলছিলাম না তুমি যতদিন না বলবে আমি তোমাকে টাচ ও করবো না”

আরিয়ান আবার আগের মত শুয়ে পড়ে।ইশা হঠাৎ কি হয়!ও আরিয়ানকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে।আরিয়ান একটু অবাক হলেও সেভাবেই শুয়ে থাকে। ইশা বলে,
“রাগ করেছেন? ”

“না”

“অভিমান করেছেন?”

“না”

“তাহলে এরকম করছেন কেন?”

“কি করছি?”

“আমার দিকে তাকান”

আরিয়ান ইশার দিকে ফিরে।ইশা কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে আরিয়ানের ঠোঁটে আলতো করে কিস করে। আরিয়ান অবাকের শীর্ষে চলে গেছে।আরিয়ানের ভাবনাতেও ছিলো না ইশা এরোকম কিছু করতে পারে।
“একবার না বলেছি তাই বলে দূরে সরে যাবেন?আর একবার কি।কাছে টানা যায় না নাকি?”

“দেখো ইশা আমি রাগ অভিমান কিছু করিনি।তুমি যদি আমার মন রাখার জন্য আমার কাছে আসতে চাও তাহলে প্লিজ এরকমটা করোনা”

“আমি কিছু শুনতে চাই না। আমি আপনাকে চাই”

“সকালে উঠে আমাকে ব্লেম করবে”

“না করবো না”

“সত্যি তো?”

“হু..”

আরিয়ান আর এক মুহূর্ত দেরি না করে ইশা ঠোঁটে ঠোঁট ডুবিয়ে দেয়।ইশাও আরিয়ানের সাথে রেসপন্স করে।দুজনে দুজনকে সমানতালে কিস করে যাচ্ছে। আরিয়ানের স্পর্শ আরো গভীর হচ্ছে।আজকে ওদের ভালোবাসা পূর্ণতা পেলো। আরিয়ান এতদিন যে রাতটার অপেক্ষায় ছিল।আরিয়ানের এখনো সবকিছু স্বপ্ন মনে হচ্ছে। হয়তো ইশাও অপেক্ষায় ছিলো এরকম একটা রাতের..!

.
সূর্যের আলো মুখে পড়তে ইশার ঘুম ভেঙ্গে যায়। ঘুম ভেঙ্গে ইশা নিজেকে আরিয়ানের বুকে আবিষ্কার করে। সাদা চাদরের মধ্যে দুজন,গায়ে একটা সুতোও নেই। ইশার কেন জানি লজ্জা লজ্জা লাগছে।ইশা লজ্জিত মুখে আরিয়ানের বুকে মুখ লুকায়।ইশার নাড়াচাড়ায় আরিয়ানের ঘুম ভেঙ্গে যায়।ঘুম থেকে উঠার আরিয়ান একটা বাঁকা হাসি দিয়ে বলে,

“কালকে রাত্রে মন ভরে নি?আরো আদর চাই?”

ইশা লজ্জায় কিছু বলতে পারছেন আরিয়ানের বুকে মুখ গুঁজে মুচকি হাসে।আরিয়ান এখনও ইশাকে জড়িয়ে ধরে আছে। ইশা আরিয়ানের বুক থেকে মাথা তুলে চারদিক তাকিয়ে বলে,

“মনে হচ্ছে অনেক বেলা হয়ে গিয়েছে। ছাড়ুন উঠতে হবে ”

“আরিয়ান ঘুমু ঘুমু কন্ঠে বলে, “আরেকটু থাকো না”

“এমনিতে আজকে দেরি হয়ে গেছে।বাবা মা কি ভাববে, ছাড়ুন তো আমার গোসল করতে হবে”

আরিয়ান দুষ্টু হেসে বলে, ” তাহলে চল একসাথে যাই”

“না”

“ইশা তুমি এখনো লজ্জা পাচ্ছো? কালকে রাতের কথা কি ভুলে গেলে?”

“আপনি কথায় কথায় লজ্জা দিবেন না তো?”

“হাহাহা…” আরিয়ান ইশাকে কোলে তুলে নেয়।

চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here