আলোয় অন্ধকার🍁পর্ব-৫

0
2615

#আলোয়_অন্ধকার🍁
#Roja_islam
#part 5
টিয়া জ্ঞান ফিরলে সে জানতে পারে মাহিনকে রাস্তায় মৃত পাওয়া যায়৷ আর তাকে অজ্ঞান অবস্থায়৷ তবে টিয়াকে বেশী জিজ্ঞাসা বাদ করা হয় না ওখানে ঠিক কি হয়েছিলো তা নিয়ে৷ কারণ সবাই ভাবে নেয় কোন গাড়ীর ধাক্কায় মাহিন মারা যায় রাস্তায়। আর টিয়া এসব দেখেই জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। সবার ধারণা ঠিকি ছিলো কিন্তু টিয়া জানত ওখানে ঠিক কি হয়েছিলো!! কিন্তু কাউকে এসব বলে কিছুই হবেনা তা টিয়া ভালোই বুঝতে পারছিলো৷ তাই সে গুম মেরে গিয়েছিলো শুধু এটাই ভাবত স্তব্ধ এই কাজ কেনো করলো? কেনো?
.
টিয়া ঐদিনের ঘটনার পর ভীষণ অসুস্থ ছিলো অনেক দিন কিছুতেই নরমাল হতে পারছিলো না টিয়া৷ মাহিনের মৃত্যু থেকে স্তব্ধ কি করে এই কাজ করলো সেটা মানতে পারছিলোনা টিয়া। তাছাড়া ও টিয়া রাতে বাজে স্বপ্নের শিকার হত রাতে ঘুমের মধ্যে কেদে উঠতো কারণ টিয়ার মনে হতো মাহিন মৃত অবস্থায় তাকে ধরতে আসছে। এসব কিছু থেকে কাটিয়ে উঠে টিয়ার। প্রায় ৪/৫ মাস লেগেছিলো তার নরমাল হতে।
.
তারপর টিয়া আস্তে আস্তে ভার্সিটি যাওয়া শুরু করে। তাও রাস্তায় চলার ভয়ে যেতে চাইতোনা টিয়া তার মনে হতো স্তব্ধ আবার তাকে ফলো করবে আর তার সামনেই কাউকে ভয়ংকর ভাবে মেরে ফেলবে। তখন পিউ টিয়ার পাশে দাড়াঁয়৷ পিউ নিজে এসে বাসা থেকে টিয়াকে নিয়ে ভার্সিটি যেতো। আস্তে আস্তে টিয়া পুরোপুরি নরমাল হয়!! কিন্তু তার মাথায় সব সময়ি স্তব্ধের ব্যাপার টা চলতো কেনো স্তব্ধ এসব করলো??
.
ঐ ঘটনার প্রায় ৩ বছর চলে যায় এর মধ্যে স্তব্ধ কে আর দেখেনি টিয়া কিন্তু তিন বছ পর অদ্ভুত ঘটনা নাই ঘটে টিয়ার সাথে। এই ঘটনা ঘটে টিয়া স্তব্ধের বিয়ের ঠিক ৪ দিন আগে। আর সব বদলে যায় টিয়ার জীবন এ।
.
টিয়া ক্যাম্পাসে বসে ছিলো তখনি। টিয়ার সামনে আসে প্রত্যয় যে কিনা স্তব্ধের বন্ধু এবং টিয়ার সিনিয়র। ভার্সিটি সচারাচর তাদের দেখা যায় না কারণ স্তব্ধদের ভার্সিটি লাইফ সেই কবেই শেষ। টিয়া যখন স্তব্ধকে খুজতো তখন তার কোনও ফ্রেন্ড কে পায় নি এটা জিজ্ঞেস করতে স্তব্ধ কোথায় তারা জানে কিনা৷ আর সেই স্তব্ধের বন্ধু এতো বছর পর হঠাৎ করে টিয়ার সামনে এসে তাকে কফিশপে যেতে বলায়। টিয়া অবাকি হয়। তাও ভয়ে ভয়ে যায় দেখা করতে প্রত্যয় এর সাথে কারণ টিয়ার কিছু জিজ্ঞেস করার আছে প্রত্যয় কে। দুইজন ভার্সিটির সামনেই একটা কফিশপে বসে মুখোমুখি। কিন্তু ৩০ মিনিট হয়ে যায় প্রত্যয় না কথা বলছে না টিয়ার দিকে তাকাচ্ছে।প্রত্যয় এক মনে ফোন গুতাচ্ছে মাথা নুইয়ে! তা দেখে টিয়া ভয় ডর বাদ দিয়ে বিরক্তি স্বরে বললো।
.
— ভাইয়া 30 মিনিটস গন!! কিছু তো বলুন কেনো ডেকেছেন আমায় এখানে??
— ভাইয়া?? কে তোমার ভাইয়া?? সিনিয়র হলেই ভাইয়া হয়ে যায় কেউ?? তাহলে তো পৃথিবীর সবাই বোনকে বিয়ে করে?? তা কি ঠিক!!
.
হঠাৎ প্রত্যয় এর কড়া গলার আজব কথা শুনে টিয়া হতবিহ্বল হতবুদ্ধি হয়ে বললো। .
— ভাইয়া এসব কি বলছেন আপনি??
.
আবারো প্রত্যয় টিয়ার মুখে ভাইয়া শুনে রেগে ফেটে পরলো। কড়া গলায় বললো।
.
— আবার ভাইয়া!! আই লাভ ইউ ড্যাম ইট!! ডোন্ট কল মি ভাইয়া এগেইন গট ইট!!
.
টিয়া প্রথমেই হতবিহবল হতবুদ্ধি ছিলো এবার জেনো মাথায় আকাশ ভেঙে পড়লো। টিয়া ফ্যাল ফ্যাল করে আশেপাশে তাকাতে লাগলো। টিয়া বুঝতে পারছেনা প্রত্যয় এর কথায় তার রিয়েকশন কি হওয়া উচিৎ?? কিন্তু টিয়ার প্রত্যয় এর এই বিহেভিয়ার একটু পছন্দ হয়নি। তাই টিয়া প্রত্যয় কে কিছু না বলেই না ভেবেই!! ব্যাগ হাতে নিয়ে উঠে দাড়াঁয় যাওয়ার জন্য। তাতে রেগে টেবিলে হাত রেখে মাথায় হাত দিয়ে বসে থাকা প্রত্যয় আবার মুখ খুললো।
.
— টিয়া সিট আই সে!! আমার কথা আছে তোমার সাথে!!
.
টিয়া কি ভেবে বসে বললো।
.
— আমি আপনাদের এই গ্রুপ টাকে কোনদিন বুঝতেই পারিনি। আসলে তাতে আমার দোষ নেই আমি বুঝার টাইম টাই তো পাইনি??? আপনারা এমন কেনো এতো আজব ভয়ংকরী ?? আর স্তব্ধকে ও কি করে ও ? কেনো করে জানেন আপনি?? আমি এগুলা জিজ্ঞেস করতে এখানে এসেছি আপনার আজব কথা শুনতে নয়!! আর আপনি ভালো করেই জানেন আমি স্তব্ধকেই……
.
এই টুকু বলেই থেমে যায় টিয়া৷ আর বলা হয় তো ঠিক হবেনা বললে নিজের প্রতি নিজেরি ঘৃণা হবে টিয়ার। টিয়ার চুপ হয়ে যাওয়ায় হাল্কা হেসে প্রত্যয় বলে উঠে।
.
— তুমি স্তব্ধকেই ভালো বাসো তাই তো?? কিন্তু একটা খুনিকে ভালোবাসো বলতে লজ্জা পাচ্ছো তাই তো???
.
টিয়া প্রত্যয় এর কথায় অবাক হয়ে তার দিকে ভালো ভাবে তাকিয়ে বললো।
.
— আপনি জানেন স্তব্ধ খুনি?? সে কেনো করে খুন?? কেনো মারলো সেই ছেলেটাকে আমার সামনে স্তব্ধ আমি কি ক্ষতি করেছি তার ??
.
— কেনো করে খুন জানিনা কিন্তু খুন করে স্তব্ধ সেটা জানি!!
.
— মানে?? আপনি মিথ্যে বলছেন আপনি জানেন প্লিজ বলুন আমায়!! আমি জানতে চাই কেনো স্তব্ধ এই কাজ করলো কেনো?? আমি এখনো রাতে ঠিক করে ঘুমুতে পারিনা….. রাতে স্বপ্নে আসে মাহিন । আপনারা সবাই সব জানেন আমি জানিনা শুধু বলুন আমায় প্লিজ কে সে???
.
প্রত্যয় বাঁকা হেসে বললো।
.
— কে সে তা না হয় তুমি নিজেই ওর থেকে জেনে নিও??
.
টিয়া অবাক হয়ে বললো,
— কি ভাবে জানবো ওর থেকে ৩ বছরে আর দেখিনি স্তব্ধকে কোথায় পাবো অকে!!
.
— সে নিজেই আসবে তোমার কাছে তুমি শুধু ওর কথায় রাজী হবে ও যা বলবে সব টায় রাজী হয়ে যাবে। আর একটা গেইম খেলতে হবে …………….!
.
টিয়া অবাক হয়ে বললো,
.
— গেইম??
.
— ইয়েস কি গেইম খেলবে সেটা বলতেই আমি এসেছি……….
.
.
.
টিয়া বাকি টুকু ভাবার আগেই কই থেকে ডেনিয়াল এসে তাকে আবারো কোলে তুলে নিলো। টিয়া চমকে তার ভাবনা থেকে বেরিয়ে বললো৷
.
— আমি নিজেই যেতে পারবো নামান প্লিজ!!
.
কিন্তু কে শোনে কার কথা ডেনিয়াল কোনও কথায় পাত্তা না দিয়ে টিয়া যেই রুমে ছিলো সেই রুমে নিয়ে বেডে বসিয়ে দিয়ে তার সামনে৷ আঙুল তুলে শাশিয়ে বললো।
.
— লিসেন তুমি যদি আমার কথা মতন না চলো৷ তো তোমাকে এখানে বন্দি করে রাখা হবে!! সেটা নিশ্চয়ই ভালো লাগবে না তোমার? তাই আমি যে ভাবে বলি সে ভাবে চললে!! তুমি নরমালি থাকতে পারবে এখানে। মাথায় ঢুকিয়ে নাও সেটা।
.
টিয়া ভাবলেসহীন ভাবে শুনলো ডেনিয়ালের কথা। কিন্তু সে ভাব এমন নিলো তার ডেনিয়ালের কথা কিছুই আশে যায় না। বেডে একটু সুন্দর করে বসে টিয়া বললো৷
.
— আমার খুব খিদে পেয়েছে। আপনার বাসায় খাবার হবে আমার খাওয়ার মতন!! সেই কখন থেকে না খাইয়ে রেখেছেন।
.
টিয়ার কথায় ডেনিয়াল হতবুদ্ধি হয়ে গেলো। তবে এটা বুঝতে পারলো সে। টিয়া তাকে কঠিন অপমান করেছে। কিছুক্ষণ টিয়ার দিকে তাকিয়ে চিৎকার করে উঠলো।
.
— ক্রিশ্চানন ন ন ন ন ন ন ন!!
.
এতো জরে চিৎকার করায় টিয়া খানিকটা লাফ দিয়েই উঠলো তাও নিজেকে সামলে নিলো সাথে। কারন টিয়া ঠান নিয়েছে তার মনের অবস্থা সে আর কাউকে বুঝতে দিবে না! তাই সে নিজেকে শক্ত করে নিয়েছে। ডেনিয়াল এর ডাকে ক্রিশ্চান নামের লেডি সার্ভেন্ট টা হন্তদন্ত হয়ে ছুটে রুমে এসে বললো।
.
— ইয়েস স্যার!!
.
মেটার কথা টিয়ার মনে হলো মেয়েটা স্কুলের প্রেজেন্ট দিতে দৌড়ে এসেছে। মিস হয়ে গেছে ৫০ টা জরিমানা দিতে হবে৷ ডেনিয়ালের কথা টিয়ার ভাবনায় ছেদ পরে।
.
— ম্যাম কে ডিনার করিয়ে দিতে বলেছিলাম না?? দাও নি কেনো??
.
— স্যা…..
.
— শাট আপ!! যাও ডিনার নিয়ে আসো ম্যামের জন্য!!
.
মেয়েটা চলে গেলো দৌড়ে। ডেনিয়াল চোখ রাঙিয়ে টিয়ার দিকে তাকিয়ে বললো।
.
— আমার বাসায় খাবার আছে!! আপনি প্লিজ খেয়ে নিয়ে উদ্ধার করবেন!!
.
বলেই হন হন করে ডেনিয়াল চলে গেলো। টিয়ার ডোন্ট ক্যায়ার ভাব নিয়ে বসে রইলো যদিও মেয়েটার জন্য খারাপ লাগছে তার জন্য এই কিডনাপার লোক কথা শুনালো মেয়েটাকে। একটু পড় মেয়েটা খাবার আনলে মেয়েটার সাহায্যে টিয়া চেঞ্জ করে। খাবারের মধ্যে হামলে পরলো এক প্রকার। কারণ টিয়া সেই প্রত্যয়ের সাথে দেখা হওয়ার পর থেকে চিন্তায় খেতে পারেনি!! আজ জেনো সব খিদে একবারে পেয়েছে টিয়াকে। চেটে পুটে সব খেয়ে নিচ্ছে টিয়া। টিয়ার খাওয়া দেখে লেডি সার্ভেন্ট হা করে তাকিয়ে থাকতে দেখে টিয়া জোরপূর্বক হেসে বললো।
.
— টু ম্যাচ হাঙরি ইউ নো!!
.
মেয়েটা হেসে বললো৷
— সরি ম্যাম ! আপনি খান ??
.
.
টিয়া খেয়ে নিলে সার্ভেন্ট মেয়েটা চলে যায় টিয়া শুয়ে পড়ে কিন্তু মাঝ রাতে ঘটে বিপত্তি৷ গা কাপিয়ে জ্বর আসে তার একে স্ট্রেস তার উপর নতুন আবোহাওয়া তারপর উপর টিয়া অনেক ক্ষণ পানিতে ভিজে ছিলো। টিয়া জ্বরে কাদতে লাগলো। কিন্তু সাউন্ডপ্রুফ রুমের বাইরে তার কান্না যাচ্ছে না। আর টিয়া জ্বরের ঘোরে আরো আজেবাজে স্বপ্ন দেখতে লাগলো ভয়ে জ্বরে টিয়া চোখ বন্ধ করে ফুপিয়ে কেদে যাচ্ছে। কেউ নেই দেখার মত তাকে।
.
.
.
এদিকে টিয়ার বাসা থেকে আরাফ টিয়াকে দেখতে এসে বোন কে না পেয়ে চিল্লাচিল্লি করে যায় স্তব্ধের সাথে৷ স্তব্ধ কোন উত্তর দিতে পারে নি। কি দিবে ভেবেই পায়নি সে ৷ টিয়ার আরফের এক কথা তার বোন কে বের করে দিতে না হয় সে পুলিশের কাছে যাবে। এসব বলে আরাফ বেরিয়ে যায় স্তব্ধের বাড়ী থেকে। সেই থেকে টিয়ার বাসায় খাওয়াদাওয়া বন্ধ এক মাত্র মেয়ের খোজ নেই তারা কি ভাবে ঠিক থাকবে??

.
আস্তে আস্তে টিয়া নিখোঁজ সেটা সবাই জেনে যায় পাড়া প্রতিবেশী আত্তীয়সজন সবাই কানাঘুষা শুরু করে টিয়াকে নিয়ে। তাদের ধারনা টিয়া পালিয়ে গেছে স্তব্ধকে ছেরে। পাড়া প্রতিবেশীর এই ধারণায় টিয়ার পরিবার আরো আহত হচ্ছে প্রতিনিয়ত। এদিকে পিউ সব শুনে সিদ্ধান্ত নেয় স্তব্ধের সাথে কথা বলবে সে। টিয়ার কিছু হতে দিবে না পিউ বের করবেই বান্ধবী কে স্তব্ধকেও ছাড়বেনা পিউ!!কারণ পিউ জানে বর ছেড়ে পালাবার মতন মেয়ে টিয়ানা।তার মানে নিশ্চিত স্তব্ধ ই টিরা সাথে কিছু করেছে। আর পিউ সেটা বের করেই ছাড়বে……!
.
স্তব্ধ দাড়িয়ে আছে ছাদে। আজ স্তব্ধের বুকে মাত্রাতিরিক্ত জ্বালা করছে কেনো জেনো?? কারণ টা জানা নেই স্তব্ধের কিন্তু স্তব্ধ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে বুকের এই চিনচিন জ্বালাপোড়া কমানোর জন্য। একটার পর একটা সিগারেট পুড়িয়ে যাচ্ছে স্তব্ধ সকাল থেকে বেশ কয়টা সিগারেট এর প্যাকেট শেষ করেছে স্তব্ধ। হঠাৎ পেছন থেকে নিজের নাম শুনে পিছনে তাকায় স্তব্ধ………
.
.
চলবে?

[ এই যে শুনে যান 💁 একজন ও যদি নেক্সট কমেন্ট করেন গল্পে আমি সত্যি বলছি ডাইরেক্ট বল্ক দিবো! সাইলেন্ট ভাবে গল্প পড়ে চলে গেলেও আমি পড়ে দেখে তাকে বল্ক দিবো! রেসপন্স করুন! গঠন মূল্যক কমেন্ট করুন যেনো আমার লিখার উৎসাহ বাড়ে! সাইলেন্ট ভাবে গল্প পড়ে চলে যাবেনা। হ্যাপি রিডিং😘]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here