#আলোয়_অন্ধকার🍁
#Roja_islam
#part 6
স্তব্ধ দাড়িয়ে আছে ছাদে। আজ স্তব্ধের বুকে মাত্রাতিরিক্ত জ্বালা করছে কেনো জেনো?? কারণ টা জানা নেই স্তব্ধের কিন্তু স্তব্ধ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে বুকের এই চিনচিন জ্বালাপোড়া কমানোর জন্য। একটার পর একটা সিগারেট পুড়িয়ে যাচ্ছে স্তব্ধ সকাল থেকে বেশ কয়টা সিগারেট এর প্যাকেট শেষ করেছে স্তব্ধ।
.
স্তব্ধকে দেখে বুঝা যাচ্ছেনা তার ভেতরে চলছেটা কি?? তাকে একদম সুস্থ স্বাভাবিক!! আর সব সময় এর মতন ছাড়ুই দেখাচ্ছে। স্তব্ধ ওর খুব বাজেই একটা সভাব আছে!! সে প্রয়োজনেও খুব কম কথা বলে!! যেমন কথা বললে তার কথা ফুরিয়ে যাবে। আস্ফি স্তব্ধের পিছনে দাড়িয়ে এসব ভাবছিলো। মনে মনে এসব ভেবে কাধ ঝাকিয়ে একটা দীর্ঘ শ্বাস ফেললো।কারণ এতোগুলো বছর ধরে চিনে স্তব্ধকে আস্ফি কিন্তু কোনদিন এটা বুঝতে পারেনি স্তব্ধের মনে কি আছে? কি চলছে? স্তব্ধ কখন খুশী থাকে? কখন মন খারাপ থাকে?
.
এসব কিছুই আস্ফি ধরতে পারেনা! শুধু স্তব্ধ রেগে থাকলেই আস্ফি বুঝতে পারে যে কেউ মরতে চলেছে স্তব্ধের হাতে এই টুকুই অনেকটা মনে করে আস্ফি। কারণ অন্যকেউ এই টুকুও বুঝতে পারেনা স্তব্ধকে৷ আকাশ পাতাল ভেবে আস্ফি ডাক দেয় স্তব্ধকে৷
.
— স্যার???
.
স্তব্ধ পিছন না ফিরেই বললো,
— কত দিন বলেছি তোকে আস্ফি?
.
আস্ফি মন খারাপ করে উত্তর দিলো,
— সরি ভাই… আসলে….
.
স্তব্ধ ভণিতা না করে বললো,
— কে এসেছে??
.
আস্ফি অবাক হলো স্তব্ধ বুঝলো কি করে কেউ এসেছে? নিজেকে সামলে বললো,
— পিউ এসেছে টিয়া…..
.
আস্ফির কথা শেষ না হতেই স্তব্ধ বললো,
— নিচে যা আসছি….আর হ্যাঁ ওকে বসতে বল!!
.
আস্ফি কাধ ঝাকিয়ে বললো,
— ঠিক আছে।
.
আস্ফি নিচে চলে গেলো !! স্তব্ধ কি ভেবে আরেকটা সিগারেট শেষ করলো দাড়িয়ে থেকে! শেষে একটা গভীর টান দিলো সিগারেটে তারপর সেটা নিচে ফেলে পা দিয়ে পিষে আগুন নিভিয়ে। অগ্রসর হলো নিচে যাওয়ার দিকে৷
.
.
পিউ বসে আছে ! ড্রইং রুমে সোফায় গুটিসুটি মেরে৷ সে এসেছে তো শেরনি সেজে স্তব্ধের সাথে কথা বলতে। কিন্তু এই স্তব্ধ নামক সিনিয়রকে দেখলে জংগলের বাঘ দেখার মতন ভয় করে পিউ এর!!
.
সত্যিই তো বাঘই তো মনে হয় আল্লাহ স্তব্ধকে লাস্ট মোমেন্টে মনে হয় ইচ্ছে হয়ে ছিলো তাই বাঘ থেকে এই স্তব্ধ নামক বাঘকে মানুষ বানিয়ে দিয়েছে৷ কিন্তু আচার আচরণ সেই ভয়ংকর জংগলের বাঘদের মতনই রয়ে গেছে! কথা গুলো ভেবেই পিউ ছিঃ ছিঃ করলো নিজেকে কারণ কোনও মানুষকে নিয়ে এসব ভাবা ঠিক নয়! আল্লাহ সবাইকে ভালো বানিয়েছেন ! কিন্তু সে আর কি বা ভাবতে পারে এই সিনিয়রকে নিয়ে।
.
ভার্সিটিতে ১ বছর দেখেছে পিউ স্তব্ধকে একদিন ও হাসতে দেখেনি দূর থেকে ও না। যে খানে স্তব্ধের বন্ধুরা আড্ডা মারত সেখানেও স্তব্ধকে চুপ করে বসে থাকতে দেখা যেতো অদ্ভুত এই ছেলে আগে থেকেই কেমন জেনো বুঝা দায়! এই স্তব্ধ খানকে! কিন্তু পিউ এটা বুঝে পায় না। তার সহজ সরল বান্ধবী টা এই ভয়ংকর বাঘ টাইপ ছেলের প্রেমে কি ভাবে পরল। যদিও স্তব্ধ ভয়ংকর সুন্দর বাঘ থুক্কু ছেলে তাও এমন গুমরা মুখো, তিতা মানুষ এর প্রেমে কেউ পরে?? তাও জেনে শুনে যে স্তব্ধ এক নাম্বার ছাড়ু ! ভেবে পায়না পিউ টিয়া কেনো এই ছেলেকে এতো ভালোবাসতো আর এই সিনিয়র তার বান্ধবীকে এতোই কেনো কষ্ট দিতো! টিয়াকে কি একটু ভালোবাসা যেতোনা। টিয়া তো দেখতে শুনতে ও খারাপ ছিলোনা তবে? স্তব্ধ এতটা রাগী জেনেও টিয়া তার ভালোবাসা প্রকাশ করেছিলো স্তব্ধের সামনে। তাতে ভয়ংকর ক্ষেপে যায় স্তব্ধ খুব অপমান করে টিয়াকে সে। সেদিন থেকে স্তব্ধকে দেখতে পারেনা পিউ কারণ টিয়া কতটা কষ্ট পেয়েছিলো স্তব্ধের এই বিহেভিয়ারে সেটা শুধু পিউ জানে। আর কেউ না টিয়া তিন দিন না খেয়েছিলো৷ খাবেই কেমনে অপমান পেট ঠেসে দিয়েছিলো স্তব্ধ টিয়ার…… কেদে কেটে মাস খানেক রুম বন্দি ছিলো…
.
পিউ এর এসব ভাবনার মধ্যেই স্তব্ধ ঝড়ের গতিতে এসে পিউ এর বসা সোফার সামনের সোফায় বসে পরে মুখোমুখি। এভাবে ঝড়ের বেগে আসায় পিউ জেনো আরো ভয় পেয়ে যায়! সে এমনি ভয়ে ছিলো কিভাবে কথা শুরু করবে ! পিউ হকচকিয়ে তাকিয়ে রয় স্তব্ধের দিকে। স্তব্ধ ফোনের দিকে তাকিয়ে বসেই থাকে সোফায় কিছু বলে না। পিউ স্তব্ধকে একটু ও না বুঝলেও এটা জানে স্তব্ধ নিজে থেকে তার সাথে মরে গেলেও কথা বলবে না। আসলে বলবেনা বললেও ভুল হবে স্তব্ধ এমনি নিজ থেকে কথা সে কম বলে থাকে। আর পিউ সেটা ঠিকি জানে তাই। কিছুক্ষণ চুপচাপ থেকে নিজেকে শক্ত করলো পিউ৷ তাকে ভয় পেলে চলবেনা বান্ধবীর মত বোন টার জন্য হলেও কথা বলতে হবে স্তব্ধের সাথে। বলতেই হবে কোথায় টিয়া তাকে এনে দিতে….! ভেবেই বললো!
.
— ভাইয়া টিয়া কোথায়??
.
স্তব্ধ এবার ফোন রেখে উঠে দাড়িয়ে বলে,
— সময় হলে পেয়ে যাবে ওকে!! বাড়ী যাও!!!
.
স্তব্ধের দাড়ানোতে পিউ ও দাড়িয়ে বললো,
— পেয়ে তো যাবো ঠিক আছে!! কিন্তু কি করেছেন ওর সাথে আর সময়!! কখন সময় হবে??
.
স্তব্ধ পিউ এর প্রশ্নে কিছু বললো না গট গট করে চলে গেলো বাড়ীর বাইরে! পিউ তার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইলো শুধু তার পা কাপছে। কথা গুলো বলে স্তব্ধকে!! পিউ সন্ধ্যা করেই এসেছিলো স্তব্ধের বাসায়। এখন রাত হয়ে গেছে। পিউ স্তব্ধকে চলে যেতে দেখে নিজেকে সামলে ব্যাগ হাতে নিলো চলে যাবে বলে। আর থেকে লাভ নেই এখানে বসে থেকে উত্তর দিবে না স্তব্ধ। বুঝতে বাকি নেই পিউ এর সে হাটতে শুরু করে…
.
এর মধ্যে বাড়ী পাওয়ার চলে গেলো সব অন্ধকার হয়ে গেলো। পিউ ভয়ে জরোসরো হয়ে দাড়িয়ে পরলো। মেইন ডোর এর সামনে এসে। পিউ তাও মেইন ডোর থেকে বেরুবে৷ তার মনে হলো সে পারছেনা সামনে যেতে। শুধু পা টাই আগে শরীর সামনে নিতে পারছেনা। পিউ ফিল করলো তার কোমর কেউ দু হাতে চেপে ধরে আছে পিউ চিৎকার দিবে তার আগেই। হাত দুটো তার কোমর টেনে পিছনের দেয়ালে ঠেকালো।সে দেয়ালে মিশে গেলো সাথে সাথে। আর কোমর ধরা ব্যাক্তি এক হাতে তাকে দেয়ালে চেপে ধরে অন্য হাতে মুখ চেপে ধরলো। পিউ চোখ খিচে বন্ধ করে রাখলো ভয়ে! পিউ এর চোখে পানি চলে এলো। সামনে থাকা ব্যাক্তি বললো।
.
— শশশশ! একদম চুপ না হয় একদম মেরে ফেলবো….
.
পিউ ছেলে কণ্ঠ শুনে চোখ পিটপিট করে খুলে তাকালো দেখার জন্যকে সামনে? কে তাকে এভাবে ধরে আছে??? কিন্তু সব অন্ধকার থাকায়। আর ছেলে মুখ চেপে ধরে রাখায় পিউ কিছু দেখলও না বলতেও পারছেনা। শুধু উম্ম উম্ম করছে সে। কিছু সময় চলে যায় এভাবেই। তাই পিউ শান্ত হয়ে যায়। তাতে ছেলেটা ওর মুখ ছেড়ে জরিয়ে ধরে পিউকে শক্ত করে। ঘারে ছেলেটা নিশ্বাস পরছে পিউ এর তাতে যেনো পিউ বোবা বনে গেলো। সে এবার চিৎকার করতে বাধা না পেয়েও কিছু বলতে পারছেনা!! পিউকে এতো শান্ত দেখে ছেলেটা এবার তাকে ছেড়ে দুই হাতে পিউ এর গাল চেপে ধরলো। আর আস্তে আস্তে নিজের মুখ নিয়ে যেতে লাগলো পিউ এর ঠোঁটের কাছে। পিউ ছেলেটার উদ্দেশ্য বুঝতে পেরে চিৎকার করতে যাবে তার আগেই ছেলেটা তার চিকন ঠোঁটে তার ঠোঁট চেপে ধরে শক্ত করে। সাথে সাথে পিউ ফুপিয়ে কেঁদে উঠে। তাতে ছেলেটা বিরক্ত হয়ে একহাতে পিউ এর কোমর ধরে অন্য হাতে আরো জোরে গাল চেপে ধরে পিউকে নিজের সাথে আরো মিশিয়ে। পিউ এর ঠোঁট এর স্বাদ নিতে থাকে। পিউ এর যেনো মাথায় কিছু ঢুকছেনা সে কি করতে এসেছে আর কি হচ্ছে তার সাথে। সে স্বপ্ন দেখছে না তো? ভেবেই রাগ হয় পিউ এর সে এতো জঘন্য স্বপ্ন কেনো দেখবে এখন?? পিউ দুই হাতে ধাক্কাতে থাকে ছেলেটাকে কিন্তু কিছুতেই ছাড়াতে পারছেনা নিজেকে। ছেলেটা পিউ এর ঠোঁটেই ব্যাস্ত…………..
.
.
.
স্তব্ধ কার ড্রাইভ করছে এলোপাতাড়ি কিছুক্ষণ গাড়ী চালিয়ে নির্জন একটা জায়গায় গাড়ী থামায় স্তব্ধ তারপর নিজের ফোন বের করে কল লাগায় কাকে যেনো। তারপর ফোন কানে রেখে বলে উঠে!!
.
— টাইম আপ রাইয়ান আমার সব আরো ফার্স্ট চাই!!
.
ওপাশে থাকা ব্যাক্তি ঘাবড়ে বলে উঠে,
— স্যার….. ওয়া..ন মান্থ লাগ…বেই!!
.
চিৎকার করে উঠে স্তব্ধ,
— জাস্ট শাট আপ!! আমার ফার্স্ট চাই?? লিংকন স্যার কে আমার কথা বলো!! কাজ হয়ে যাওয়া চাই না হয় কি হবে ভালোই জানো তুমি! মাইন্ড ইট!!
.
ঐপাশ থেকে হ্যালো হ্যালো করছে ব্যাক্তিটি এখনো। কিন্তু স্তব্ধ ফোনটা গাড়ীতেই সোজরে আছাড় মারে ফলে লাইন ডিসকানেক্ট,হয়ে ফোন টা গাড়ীর এক কোণায় পড়ে যায় ।
.
দুহাতে স্তব্ধ তার মাথা চেপে ধরে!! সিটে গা এলিয়ে দিয়ে স্তব্ধ কিছু ভাবতে থাকে চুপ করে! তবে সেটা কি? সেই শুধু জানে!! হঠাৎ স্তব্ধ লোকচক্ষুর আড়ালে অন্ধকার গাড়ীতে নির্জন যায়গায় সোজা হয়ে বসে সিটে বাঁকা হাসে। এই হাসির রহশ্য স্তব্ধ নিজে ছাড়া আর…. কেউ জানে না। কেউ না……
.
.
আমেরিকা,
টিয়া বেডে আধ শোয়া বসে আছে। ডেনিয়াল মেডিসিন হাতে টিয়ার পাশে বেডে বসে আছে। ডেনিয়ালের বিরক্তির শীর্ষে রাগে তার চোয়াল শক্ত হয়ে আছে!! টিয়ার দিকে এভাবে তাকিয়ে আছে ডেনিয়াল যেমন চোখ দিয়েই ভষ্ম করে দিবে টিয়াকে । কিন্তু ডেনিয়ালের অগ্নিমূর্তির রূপ দেখেও তাতে টিয়ার কোন রিয়াকশন বুঝা গেলো না। টিয়া ডোন্ট ক্যায়ার ভাব নিয়ে বললো।
.
— আপনি যাই করুন!! আমি মেডেসিন খাবোনা এন্ড দ্যাটস ফাইনাল!
.
ডেনিয়াল কি ভেবে বাঁকা হেসে বললো,
— অহ ওকে, ইটস ড্যাজেন ম্যাটার! ল্যাট ইট গো!
.
বলেই ডেনিয়াল ঔষধ গুলো পাশের টেবিলে রেখে দিলো!! তাতে টিয়া বিশ্বযুদ্ধজয় করা হাসি দিলো। তার ঔষধ খেতে হবেনা ভেবে৷ কিন্তু তার এই হাসি বেশি ক্ষণ রইলোনা ডেনিয়ালের কোথায়। .
— কিসস মি!! মিস???
.
টিয়া চোখ বড় বড় করে মৃদু চিৎকার করে বললো,
— কিহহহহহহ??
.
.
চলবে!
[ আমি গল্প লিখি আর আমার দুই বিরাল এর বাচ্চা তাকিয়ে থাকে খুচাখুচি করে কেমন টা লাগে 😑ডিস্টার্ব এর চোটে বেশী বড় হয় নি!! কিন্তু বড় দেওয়ার ইচ্ছা ছিলো কারণ কালকে শুক্রবার গল্প দিবো না। তোমরা জানোই আমি শুক্রবার গল্প দেই না তাও বলে দিলাম। আর হ্যাঁ গঠন মূল্যক মন্তব্য করতে ভুলবা না। অনেকেই কালকে বলার পরেও নেক্সট লিখেছে কাল ব্লক দেইনি দেখেনি ভেবে আজ থেকে নেক্সট দেখা মাত্র ব্লক দিবো। কষ্ট হয় গল্প লিখতে আর তোমরা নেক্সট লিখে আমাকে বিরক্ত করবা তা হবেনা😴]